শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু

যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তা' আলার যিনি সকল সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা।

মুহাম্মদ (সাঃ)-আল্লাহর রাসূল

মুহাম্মদ (সাঃ)-সকল মানুষের জন্য উদাহরন, সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ, ও আল্লাহর রাসুল

আল কোরআন - মহান আল্লাহ প্রদত্ত কিতাব

এ সেই কিতাব যাতে কোনই সন্দেহ নেই। পথ প্রদর্শনকারী পরহেযগারদের জন্য,

আমাদেরকে সরল পথ দেখাও

আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।

আল্লাহ নিতান্ত মেহেরবান ও দয়ালু

সে সমস্ত লোকের পথ, যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ। তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।

Labels: , ,

উগ্রবাদিতার স্থান ইসলামে নেই

একটা ঘটনা বলি। ঘটনাটি বিখ্যাত ইসলামিক স্কলার ওস্তাদ নোমান আলী খানের নিজ কন্ঠ থেকে আমার শোনা। তাঁর গল্পে বিশ্বাস করাই যায়।

নবীজি(সঃ) তখন পূর্ণোদ্দমে ইসলাম প্রচার করছেন। দিকে দিকে সাহাবীদের দিয়ে শাহাদাতের বাণী পাঠিয়ে দিয়েছেন। মসজিদে নববীতে তাঁর অফিস।

শেষ নবীর আবির্ভাবের খবর পেয়ে একদল খৃষ্টান পুরোহিত তাঁর সাথে দেখা করতে এলো। দেখা করতে আসার মূল উদ্দেশ্য আসলে ঠিকমত যাচাই বাছাই করে দেখা যে ইনিই কি তাঁদের বাইবেলে বর্ণিত 'আসল নবী' কিনা।
নবীজি(সঃ) তাঁদের স্বানন্দে অভ্যর্থনা জানালেন। তিনি তাঁদের থাকার ব্যবস্থা মসজিদে নববীতেই করলেন। এখানে point to be noted, তাঁর সাথে দেখা করতে আসা বেশিরভাগই কিন্তু খৃষ্টান পুরোহিত। মানে তাঁরা সবাই যীশুর (ঈসা (আঃ)) পূজা করেন। তাঁদের মসজিদে নববীতে স্থান দেয়ার মানে তাঁরা মসজিদের ভিতরেই পূজা করবে।
এমন সর্বনাশা অনুমতি কে দিলেন?

স্বয়ং হযরত মুহাম্মদ, সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
আরেকটা ঘটনা বলি। এইটি আরেকজন ইসলামিক স্কলার, মুফতি মেঙ্কের কাছ থেকে শোনা। ইনি এতই বড় স্কলার যে স্বয়ং নোমান আলী খানও তাঁর ভক্ত। তাঁর রেফারেন্সের উপরে নিঃসন্দেহে ভরসা করা যায়।
একবার নবীজি(সঃ) ও সাহাবীদের আলোচনাকালে এক বেদূইনের পেশাবের বেগ পেল। আরব বেদূইনরা জংলি কিসিমের হয়ে থাকে। ভদ্রতার ধার ধারে না।

সে আলোচনা থেকে উঠে গিয়ে মসজিদের ভিতরেই এক কোণে গিয়ে পেশাব করতে শুরু করে দিল।
সাহাবীরা হায় হায় করে উঠলেন। মসজিদে নববীতে পেশাব মানেতো ইসলামের অপমান! তাঁরা তেড়ে গেলেন বেদূইনকে মারতে। হযরত মুহাম্মদ (সঃ) সাথে সাথে তাঁদের বাঁধা দিলেন। তিনি বেদূইনকে অভয় দিয়ে বললেন, সে যেন তাঁর কাজ শেষ করে।

প্রাকৃতিক ডাক এমন একটা বিষয় যা মাঝপথে উঠে আসা সম্ভব নয়। বেদূইন ঘাবড়ে গিয়েছিল। নবীজির(সঃ) অভয়বাণীতে আশ্বস্ত হয়ে সে ধীরে সুস্থে তাঁর প্রাকৃতিক কর্ম সম্পাদন করে।
তাঁর কাজ শেষ হলে নবীজি(সঃ) সাহাবীদের বলেন পানি এনে স্থানটি ভাল মত ধুয়ে ফেলতে।
তারপর তিনি বেদূইনকে বুঝালেন যে মসজিদ মুসলমানদের জন্য একটি পবিত্র স্থান। এখানে পেশাব পায়খানা করা যায় না।

Another point to be noted, নবীজির (সঃ) উপস্থিতিতেই একজন মসজিদে পেশাব করলো। নবীজি তাঁকে বিন্দুমাত্র শাস্তি দিলেন না। বরং ধৈর্যের সাথে তাঁর অজ্ঞতা দূর করলেন।
এখন আসি মূল প্রসঙ্গে।
বাংলাদেশে কয়েকটা ঘটনা সিজনালি(মৌসুমী) ঘটে।
শীতকালে শৈতপ্রবাহে গরীব মানুষ মরে।
বর্ষায় দেশ বন্যায় ডুবে যায়।
ক্রিকেট টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ দলের ভরাডুবির ঘটে।
তেমনি পূজার মৌসুমে মন্দির ভাংচুর হয়।

এখন উপরের দুই ঘটনা পড়ার পর আমাদের মনে কী প্রশ্ন জগতে পারে?
যারা মন্দির ভাংচুর করে, তারা কী নিজেদের নবীজির (সঃ) চাইতেও বেশি ধার্মিক মনে করে?
উগ্রবাদিতার স্থান ইসলামে নেই। আল্লাহ নিজেই বলেছেন কেউ যদি অন্য ধর্মের অনুসারী হয়ে থাকে, তাকে তার মত ছেড়ে দিতে।

এরা দেখি আল্লাহর কথাকেও পাত্তা দেয় না!
নবীজি(সঃ) এদের ব্যপারেই বারবার সাবধান করে বলেছিলেন, "কাফিররা ইসলামের যত না ক্ষতি করবে, তারচেয়ে বেশি ক্ষতি এরা করবে।"

আরেকটি হাদিসে নবীজি(সঃ) এদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছিলেন, "ওদের দেখলে তোমাদের মনে হবে এরা বিরাট ধার্মিক, আসলে তারাই পথভ্রষ্ট।"

যারা ধ্বংসের মাধ্যমে 'শান্তির' পথ খুঁজে, তাদের জন্যই আজকে বিশ্বে মুসলমানদেরকে 'সন্ত্রাসী' বলা হয়ে থাকে। অ্যামেরিকান এয়ারপোর্টে কারও নামের আগে পিছে 'আহমদ' বা 'মোহাম্মদ' থাকলে তাঁদেরকে একটু বেশি সুক্ষ্মভাবে সিকিউরিটি চেক করা হয়। সে যেই হোক না কেন। নবীজির (সঃ) নামের এই বদনামের জন্য শুধু এবং শুধুমাত্র এইসব মাথামোটা ছাগলগুলাই দায়ী।

বাংলাদেশে যে এখন দলে দলে মানুষ ইসলাম ত্যাগ করছে, তাদের জন্য নাস্তিকদের গালাগালি না করে এইসব উগ্রবাদীদের ধরে পেটানো উচিৎ।

লতিফ সিদ্দিকীর আজাইরা প্রলাপে আমাদের যেমন হৃদপিন্ড কাঁপে, ঠিক তেমনি মন্দির ভাংচুরে হিন্দুদেরও কলিজা ছিড়ে যায়।

একটি পিপড়ার মনেও কষ্ট দিলে যেখানে আল্লাহ শাস্তির ওয়াদা করেছেন - সেখানে এরা মানুষের মন ছিন্নভিন্ন করে!
আফসোস! যদি এদের একটুও জ্ঞান হতো!

Post written by:মঞ্জুর চৌধুরী

0 comments
Labels: , ,

‘জিহাদী মুসলিম’

"তুই ঐ কাফির নাছারাদের দেশে পড়ে আছিস কেন?"

অ্যামেরিকাপ্রবাসী জাকির অফিসের কাজের ফাঁকে বাংলাদেশনিবাসী বন্ধু সোহেলের সাথে চ্যাট করছিল।
বন্ধুর কথায় সে একটু নড়েচরে বসে।

"কেন বন্ধু? এই দেশে সমস্যা কী? ওরাতো আমার দাড়ি শেভ করতে বলছে না। আমার স্ত্রীকে হিজাব পড়তে নিষেধ করছে না। পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়তে কেউ বাঁধা দিচ্ছে না। এমনকি কাজ থেকে ব্রেক নিয়ে জুম্মার নামাজ পড়তেও আমার কোন সমস্যা হয়না। ঠিকঠাকমত রোজা রাখতে পারি, ঈদের জামাতও মিস হয়না। তাহলে শুধু শুধু ওদের গালি দিব কেন?"

সোহেল বোধয় জবাব শুনে হাসলো। সে লিখলো, "আমাদের মুসলমানদের এই এক সমস্যা। অল্পতেই খুশি। গাধার সামনে মূলা ধরার মতন। আরে, ওরা যে আমাদের মুসলিম ভাইদের মেরে সাফ করে দিচ্ছে, ইরাক, ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান ধ্বংস হয়ে গেল, এসব কিছুই তোদের চোখে পড়েনা? শুধু জামাতে নামাজ পড়তে দিয়েছে বলেই খুশিতে লেজ নাড়তে শুরু করে দিয়েছিস? নাইন ইলেভেনে তোদের বুক পুড়ে, অথচ গাজায় যে প্রতিদিন নাইন ইলেভেন হচ্ছে, সে নিয়ে তোরা নিরব। ধিক তোদের ঈমানে!"

জাকিরের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল। একটা জরুরি ফাইল নিয়ে কাজ করছিল। আপাতত ফাইলটা ক্লোজ করে রাখলো। সোহেলকে কিছু কথা না শোনালে ঠিকমতন মনোযোগ দিতে পারবেনা।

"তোর ফোন নম্বরটা দে।"
"কেন?"
"কথা আছে।"
সোহেল নম্বর দিল।
জাকির অফিস ম্যাসেঞ্জারে 'ইন আ মিটিং' স্ট্যাটাস দিয়ে ডেস্কটপ লক করে ব্রেক রুমে চলে এলো।
"হ্যালো।"
"হ্যালো বন্ধু, কি ব্যপার? হঠাৎ ফোন দিলি যে?"
"তোর সাথে কথা বলার জন্য। চ্যাটে টাইপ করলে কথাগুলি ভালমত এক্সপ্লেইন নাও করতে পারি।"
"এতে এক্সপ্লেইন করার কী আছে?"
সোহেল জাকিরের কথা উড়িয়ে দিল।

"বিদেশে গিয়ে আরাম আয়েশে থেকে তোরা দ্বীনের রাস্তা থেকে সরে গেছিস। মুসলিম মায়ের অশ্রুতে তোদের কলিজা কাঁপে না, মুসলিম ভাইয়ের রক্তে তোদের চোখ ভিজে না। তোরা দামী গাড়ি, দামী বাড়িতেই সুখী। আর অন্যদিকে ইরাকে আমাদের মুজাহিদ ভাইয়েরা দ্বীনের জন্য প্রাণ দিচ্ছে। জিহাদ চলছে ফিলিস্তিনে, আফগানিস্তানে, কাশ্মিরে, পাকিস্তানে। আর তোরা ইসলামের দুশমনদের গোলামী করছিস!"
জাকির বলল, "তোকে একটা গল্প শুনাই। সহীহ হাদিস। হুনেইয়ের যুদ্ধের ঘটনা।"
সোহেল উদাস স্বরে বলল, "শোনা..."

সোহেলের কন্ঠস্বরে মনে হলো সে শুনতে আগ্রহী না। তবু জাকির শুরু করলো,
"হুনেইয়ের যুদ্ধ জয়ের পর রসূলুল্লাহ (সঃ) যখন গণিমতের মাল বন্টন করছিলেন, তখন এক আরব বেদূইন এসে সরাসরি তাঁকে এই বলে অভিযুক্ত করে যে তার সাথে অন্যায় করা হয়েছে। রাসূল (সঃ) ন্যায্য দাবী আদায়কারী নন। সে নবীজির(সঃ) নাম উচ্চারণ করে বলেছিল,“আল্লাহকে ভয় পান, এবং ন্যায় বিচার করুন!”
"আস্তাগফিরুল্লাহ!"
সোহেল ক্ষেপে গিয়ে ইস্তেগফার করে উঠলো।

জাকির বলল, "ঠিক। রাসূলের (সঃ) সাথেকার সাহাবীরাও তোর মতই রেগে উঠেছিলেন। কিন্তু নবীজি (সঃ) ধৈর্য্যের সাথে বললেন, 'খোদ বিশ্বজাহানের মালিকের যেখানে আমার বিচারের উপর আস্থা আছে, সেখানে তুমি আমাকে অন্যায়কারী বলছো?'"
বেদূইন নবীজিকে(সঃ) গালাগালি করে চলে গেল।

সাহাবীরা চাইলেন লোকটিকে উপযুক্ত সাজা দিতে। নবীজি (সঃ) বললেন, "ওকে যেতে দাও। ওকে হত্যা করলেও ভবিষ্যতে ওর মতই আরও অনেকে আসবে। তাদের দেখলে খুব ধার্মিক বলে মনে হবে, কিন্তু আসলে তারা পথভ্রষ্ট। আমার জীবিতাবস্থায় তারা যদি আত্মপ্রকাশ করে, তবে আমিই তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবো, এবং তাদের সেভাবেই ধ্বংস করবো, যেভাবে আদ্ব জাতিকে আল্লাহ ধ্বংস করেছিলেন। তোমরা তাদের থেকে সাবধান থেকো।"
নবীজি (সঃ) এরকম দশটিরও বেশি সহিহ হাদীছে তাদের বিরুদ্ধে সাবধান করে গেছেন। কেন? কারন তারা কাফেরদের চেয়েও ইসলামের বেশি ক্ষতি করবে।"

সোহেল বলল, "তুই কী বলতে চাস?"
জাকির বলল, "বলছি, তবে তার আগে তোকে আরেকটা ইসলামী ঘটনা শুনাতে চাই। তোর সময় আছেতো?"
সোহেল বলল, "কোরআন হাদীছে শোনার সময় হবেনা? কী ভাবিস তুই আমাকে?"
"গ্রেট! হযরত আলী(রাঃ) এবং মোয়াবিয়ার মধ্যকার কনফ্লিক্টের ঘটনা তুই জানিস?"
"জানবোনা কেন?"

"গুড! তাঁদের মধ্যকার আসল ঝামেলাটা ছিল রাজনৈতিক, ইসলামিক নয়। কাজেই হযরত আলী (রাঃ) সিদ্ধান্ত নিলেন দুইনেতা একসাথে বসে ঝামেলা মিটিয়ে ফেলবেন। এতে সাধারণ মুসলিমরা খুশি হলেও ছয় হাজার মুসলমানের একটা দল হযরত আলীকে(রাঃ) গালাগালি দিয়ে দলত্যাগ করলো। তাদের দাবী ছিল, হযরত আলী(রাঃ) মোয়াবিয়ার সাথে শান্তি স্থাপনের আলোচনায় রাজী হয়ে ইসলামের পথ থেকে সরে গিয়েছেন। মানুষ কোন সমস্যার সমাধান করতে পারবেনা, শুধুমাত্র কুরআনের সেই অধিকার আছে।"

ওরা এতটাই ধর্মান্ধ হয়ে গিয়েছিল যে তারা ইসলামের চুতুর্থ খলিফাকে 'কাফির' গালি দিতেও দ্বিতীয়বার চিন্তা করেনি।
ওদের একজনতো আবার প্রস্তাব করেছিল আলীকে (রাঃ) হত্যা করবে!"
সোহেল এবারে গালি দিল।

জাকির বলল, "কিন্তু হযরত আলী (রাঃ) কী করলেন? তাদের যেতে দিলেন। বললেন, ‘তোমরা তোমাদের নিজেদের মসজিদ বানাও, নিজেদের মত ধর্ম পালন কর। আমাদের কারও ক্ষতি না করা পর্যন্ত তোমাদের কোন ক্ষতি আমরা করবো না।’ পয়েন্ট হচ্ছে, হযরত আলীও (রাঃ) কিন্তু নবীজির (সঃ) মতন তাদের যেতে দিয়েছেন। হত্যার হুকুম দেন নাই।"

সোহেল বলল, "তারপর কী হলো?"
"ওরা আলাদা হয়ে গেল। ওরাই ইসলামের প্রথম ভাঙ্গন ঘটায়। শিয়া-সুন্নি ভেদেরও আগে তারাই মুসলমানদের মধ্যে প্রথম বিভক্তি টানে। হযরত আব্বাস (রাঃ) পরে গিয়ে তাদের সাথে কথা বলেন এবং তাদের সাথে পথভ্রষ্ট এক তৃতীয়াংশ লোককে ফিরিয়েও আনতে সক্ষম হন। কিন্তু আরও চার হাজার লোক ঠিকই থেকে যায়।"
"তারা কী করে?"

এবারে সোহেলের কন্ঠে কৌতূহল টের পাওয়া যায়।
জাকির বলে, "তারা হযরত আলীর (রাঃ) সাথে থেকে যাওয়া মুসলিমদের সমালোচনা করতে থাকে। বিদ্রুপ করতে থাকে। বিভিন্ন জায়গায় হ্যারাসও করতে থাকে। একবার তারা একজন সাহাবীকে স্বপরিবারে জবাই করে হত্যা করে। কারন? তিনি বলেছিলেন, ‘হযরত আলী (রাঃ) নিঃসন্দেহে আমার এবং তোমার চেয়ে ধর্ম বেশি ভাল জানেন।’"
সোহেল এইবারও গালি দেয়।

জাকির বলে, "মজার ব্যপার কি জানিস? সাহাবী হত্যা করে ফেরার পথে দলের একজন একটি বাগানের আঙ্গুর গাছ থেকে বিনা অনুমতিতে একটি আঙ্গুর পেড়ে খেয়েছিল, এবং আরেকজন একটি খৃষ্টানের গৃহপালিত শুকর হত্যা করেছিল বলে সেই দলেরই সবাই ওদের তিরষ্কার করে। ওদের কথা হচ্ছে বিনা অনুমতিতে অন্যের সম্পদ থেকে একটি আঙ্গুর পেড়ে খাওয়াও গুনাহ, এবং অন্যের গৃহপালিত জানোয়ার হত্যাতো আরও বড় গুনাহ! তারা বাগান এবং শূকরের মালিককে ডেকে ক্ষমা চায়, এবং ক্ষতিপূরনও দেয়। ওদের এই কাজ দেখলে যে কেউ ভাববে তারা বিরাট ধার্মিক! কিন্তু মাত্রই যে তারা সাহাবী হত্যা করে এসেছে, সেটাকে কী বলবি? তাদের ফলোয়াররা কিন্তু সেটাকেও জাস্টিফায়েড মনে করে।"

"তুই কী বলতে চাস?"
"আমি বলতে চাই, কোন কিছুতেই এক্সট্রিম হওয়া উচিৎ না। আমি তোকে নবীজির (সঃ) ভবিষ্যতবাণীর কথা বললাম, তোকে হযরত আলীর (রাঃ) জীবনের ঘটনাও বললাম। একটা জিনিস লক্ষ্য কর, না নবীজি (সঃ), আর না আলী(রাঃ) তাঁদের মতবিরোধ করায় কাউকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কারা প্রথম হত্যাকান্ড ঘটালো? পথভ্রষ্টরা। যারা কট্টরপন্থী, ধর্মান্ধ। এতই অন্ধ যে সামনে নবীজি(সঃ), খলিফা, সাহাবী কাউকেই দেখতে পায়নি। ধর্মান্ধতার জন্য তারা আল্লাহরও বিপক্ষে যায় এবং সেটাও তারা দেখতে পায় না।"
সোহেল কিছু বলল না। বুঝা গেল সে কিছু একটা বুঝতে পারছে।

"ইসলামে কখনই বলা হয়না নিরপরাধ কারও রক্ত ঝরাতে। নবীজির (সঃ) স্পষ্ট হাদিস আছে, পিতার অপরাধে পুত্রকে, অথবা পুত্রের অপরাধে পিতাকে সাজা দেয়া যাবেনা। কোনভাবেই না। কিন্তু ইসলামের নামে রক্ত ঝরানেওলা সেই নবীজির (সঃ) যুগেও ছিল, এই যুগেও আছে। আফসোস যে ভবিষ্যতেও থাকবে। পুরনো উদাহরণগুলোতো দিলাম, বর্তমানের কিছু উদাহরণ দিব? জুহেইমানের গল্প শুনেছিস? ১৯৭৯ সালের বিশে নভেম্বর তারিখে সে কাবা শরীফ দখল করে ফেলেছিল। কাবাগৃহে অবস্থানকারী মানুষদের সে এক সপ্তাহের মতন জিম্মি করে রেখেছিল। মেশিনগান চালিয়ে খোদ কাবা শরীফে সে নিরপরাধ মানুষের রক্তপাত ঘটায়। কেন? তার ধারনা ছিল সে কাবা ঘর দখলের মাধ্যমে ইসলামী দুনিয়ার নেতৃত্ব নিবে। বিপথগামী মুসলমানদের সে আল্লাহর রাস্তায় পরিচালিত করবে। এই হচ্ছে তার 'শান্তির' পথ। সাধারণ মানুষের রক্ত ঝরানো! তুই ইচ্ছা করলে গুগল করে আরও বিস্তারিত জেনে নিতে পারিস।"
"তুই এদের সাথে ফিলিস্তিনি, ইরাকি, আফগানি মুজাহিদদের তুলনা করছিস কিভাবে?"

"এতে কোনই সন্দেহ নাই যে কারও দেশ আক্রান্ত হলে সেই দেশ রক্ষার জন্য জিহাদ করা ফরয। কিন্তু তার মানে এই না তুই গিয়ে অন্য দেশের সাধারণ মানুষ হত্যা করবি। অ্যামেরিকান মিলিটারী কি করলো না করলো, তারজন্য টুইন টাওয়ারের হাজারো নিরপরাধ মানুষ মারার পেছনে যুক্তি কী? শুধু মানুষ মেরেইতো ঘটনার শেষ হয়নি, কোটি মানুষের অর্থনৈতিক জীবনেও তার প্রভাব পড়েছে - সবাই নিরপরাধ ছিলেন। মার্কিন আগ্রাসী নীতির সাথে যাদের কোনই সম্পর্ক নেই। বোমা ফেটেছে বালিতে, বোমা ফেটেছে লন্ডনে, বোমা ফেটেছে বোস্টনে। নিহত মানুষদের একশো ভাগই নিরপরাধ। এইটাই কী ইসলাম? কোথায় বলা হয়েছে এইটাকে 'জিহাদ' বলে?"

"আর তাদের সরকার যে নিরপরাধ আফগানদের হত্যা করলো? ইরাকে হামলা চালালো? সেসব চোখে পড়ে না?"
"ওদের ছুতোটা কারা দিয়েছে? ওরা কী ভেবেছিল, টুইন টাওয়ার ধ্বসিয়ে দিলে অ্যামেরিকা চুপচাপ বসে থাকবে? সম্ভাব্য মার্কিন হামলা থেকে বাঁচার জন্য তাদের কোন ব্যবস্থা ছিল? ইসলাম এমন বেকুবের মত কাজ কখনও করতে বলে? আহাম্মকেরা ‘হুদায়বিয়ার সন্ধির’ ঘটনা থেকে কিছুই শিখে না। তোর ‘জিহাদী ভাইয়েরা’ কেবল মানুষ মারা পর্যন্তই চিন্তা করে। এর কনসিকোয়েন্স চিন্তা করতে পারেনা। এদের সব ধ্যান জ্ঞানই কেবল অন্যের ক্ষতি সাধন! নিজের ক্ষতির পরিমান যে কয়েকগুণ বেশি হবে, সেদিকে বিন্দুমাত্র খেয়াল নেই! আফগানিস্তানে সাধারণ মানুষ হত্যার জন্য অ্যামেরিকা যেমন দায়ী, তোর so called 'জিহাদী' ভাইয়েরাও সমান দায়ী!"
"অ্যামেরিকা যে ইরাকে যুদ্ধ ঘটালো? লিবিয়ায় সন্ত্রাস? পৃথিবীর সব মুসলমান দেশের বিরুদ্ধেই তোর দেশ লাগছে, আর দোষ কেবল মুসলমানদের?"

"ইরাকে যে যুদ্ধ হয়েছে, সেটা কোন ধর্মযুদ্ধ ছিল না। সবাই জানে যে তেলের জন্যই সেই আক্রমণ হয়েছিল। মিডল ইস্টেও অশান্তির পেছনে মূল কারন তেল। সেটা অবশ্যই নিন্দনীয়। কিন্তু তারা জিসাসের নাম নিয়ে মানুষ মেরে আসেনি। এখন ইরাকে যা ঘটছে, তোদের আই.এস ভাইয়েরা যা চালাচ্ছে, সুন্নি মুসলিম ছাড়া বাকি সবাইকে জবাই করে ফেলছে, সেটা এক কথায় নবীজির (সঃ) সেই অভিশপ্ত সম্প্রদায়ের আধুনিক সংস্করণ, যারা স্রেফ হত্যা ছাড়া আর কিছু চিন্তা করতে পারেনা। মাথামোটা এইসব মৌলবাদীরা মনে করে তাদের সাথে থাকলেই কেউ বেহেস্তে যাবে, নাহলে খুন করার অধিকার তাদের আছে। কেনরে ইবলিসের চ্যালারা, মানুষকে বেহেস্তে নেয়ার দায়িত্ব কি আল্লাহ শুধুই তোদের হাতে দিয়েছেন? সেটা আল্লাহর উপর ছেড়ে দিলে সমস্যা কোথায়? মানুষ খুনের মাধ্যমে এরা শান্তি আনতে চায়! এরচেয়ে হাস্যকর যুক্তি আর কী হতে পারে?"
"ওদের জায়গায় না গেলে তুই বুঝবি না।"
এবারে জাকিরের গলা চড়ে গেল।

"আর ওদের ভিকটিমদের জায়গায় কে যাবে? নিরীহ সাংবাদিকদের পশুর মত জবাই করে মারছে। যেখানে ইসলামে বলা হয়েছে বিনা কারনে একটি গাছ কাটাও নিষেধ, তারা সেখানে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে মানুষ জবাইকে হালাল করার চেষ্টা করে? লাভটা কী হলো? যুদ্ধবিমুখ সাধারণ অ্যামেরিকানরা এখন একজোট হয়ে সরকারের কাছে দাবী করছে ইরাক আক্রমনের জন্য। বিশ্বব্যাপী ইসলামকে 'সন্ত্রাসী ধর্ম' হিসেবে বদনাম করার পেছনে কাদের অবদান সবচেয়ে বেশি? তোদের আলকায়েদা, আই.এস টাইপের জঙ্গি গোষ্ঠীদের। আমাদের দেশেও যে আজকে এত মানুষ ইসলাম বিমুখ, তোর কী ধারনা 'রগ কাটা' জামাত শিবিরের কোনই অবদান নেই তাতে?"
“তুই বেশিই কথা বলা শুরু করেছিস।"

জাকির জানে সোহেলের বুকে শেল বিধিয়ে দিয়েছে। সোহেল কট্টরপন্থী মুসলিম। কলেজ জীবনে ছাত্র শিবির করতো। জামাত যে একাত্তুরে রাজাকার ছিল, এই সহজ সত্য স্বীকারে সে বিমুখ।

জাকির গলার দৃঢ়তা বিন্দুমাত্র না কমিয়ে বলতে লাগলো, "দরকার আছে বলেই বেশি কথা বলছি। তোদের এই এক সমস্যা, দাড়িওয়ালা কেউ কিছু বললেই লাফায় লাফায় বিশ্বাস করিস। একটুও যাচাই বাছাই করার চেষ্টা করিস না। তোদের মতের বিরোধী হলেই তোরা শুনতে চাস না। এমনকি বিরুদ্ধমতের কাউকে হত্যা করতেও পিছপা হোস না। তোকে যে দুইটা ঘটনা শুনালাম, তুইই বল, তোরা কাদের ফলো করছিস?"

"অ্যামেরিকায় থেকে থেকে তোরও মাথা গেছে। তুই বেশি পন্ডিত মনে করা শুরু করেছিস নিজেকে। ইসলাম নিয়ে তোর কোন পড়াশোনা আছে? মাদ্রাসায় গিয়েছিস কখনও? কয়টা আলেমের লেখা বই তুই পড়েছিস?"
"অ্যামেরিকায় আসায় আমার এই সুবিধা হয়েছে যে আমি অনেক অনেক বড় বড় ইসলামিক স্কলারদের লেকচার নিয়মিত শুনতে পেরেছি। নিজের ধর্ম নিয়ে আমার অনেক ভ্রান্ত ধারনা দূর হয়েছে। তোদের জন্য আফসোস হয়, তোদের ‘আলেম পীরেরা’ তোদের যাই বুঝায়, তোরাও তাই বিশ্বাস করিস।"

সোহেল তাচ্ছিল্য করে বলল, "তোদের লেকচারাররা কী? কোট-প্যান্ট পড়ে থাকে। খৃষ্টানদের পোশাক! ইসলামী পোশাকে কয়জনকে দেখা যায়?""

জাকির হেসে বলল, "এইযে তুই তোর জ্ঞানের দৌড় দেখিয়ে দিলি। আরে, পুরুষদের জন্য 'ইসলামী পোশাক' বলে পৃথিবীতে আলাদা কিছু আছে নাকি? নবীজি (সঃ) যে পোশাক পড়তেন, আবু জাহেলও সেই একই পোশাক পড়তো। সেটা ছিল আরবের সাধারন পোশাক। ইসলাম বলেছে, শরীর ঢেকে রাখতে, ব্যস। 'জোব্বা' পড়লে বেশি সওয়াব হবে, আর কোট প্যান্ট পড়লে গুনাহ - এইসব তোদের স্বল্পবিদ্যার মোল্লাদের ফতোয়া। তোদের সমস্যা হচ্ছে, তোরা সবসময়েই অতি Radical হয়ে যাস। নাশকতা করতে করতে তোরা প্রাণ দিতেও পিছপা হোস না। আফসোস! তোদের এই প্রাণত্যাগ মিথ্যা কারনে ঘটে। নবীজি (সঃ) সাবধান করে বলেছিলেন, 'ওদের ধর্মাচরণ দেখলে মনে হবে ওরা তোমাদের চেয়ে বেশি ধার্মিক, বরং তোমাদের ধর্মাচরণ তাদের থেকে শ্রেষ্ঠ হবে।' ওদের দেখে বিভ্রান্ত না হবার পরামর্শ খোদ নবীজিই (সঃ) দিয়েছেন।"
সোহেল কথা খুঁজে পায়না।

জাকিরকে টেলিফোন অপারেটর ওয়ার্নিং দেয়। তার কার্ডের টাকা শেষ হয়ে আসছে। মাত্র এক মিনিট বাকি আছে।
সে গলা নরম করে বলে, "শোন বন্ধু, ধর্ম অত্যন্ত সেনসিটিভ এবং ব্যক্তিগত একটি বিষয়। একে নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে আল্লাহ এবং নবীজিই (সঃ) নিষেধ করে দিয়েছেন। সুরাহ ক্বাফিরুন এবং বিদায় হজ্জ্বের ভাষণ আবার পড়। শুধু শুধু মনে হিংসা পুষে কী লাভ? উগ্রপন্থী মুসলিম, নন-প্র্যাকটিসিং মুসলিম, স্বল্পজ্ঞানী ফতোয়াবাজ এরা সবাইই ইসলামের জন্য চরম ক্ষতিকারক।"

"তারমানে ফিলিস্তিনের গণহত্যার কোনই প্রতিবাদ করবো না? ইরাকে চলমান ড্রোন হামলার আমরা কিছুই করবো না?"

"তুই আমাকে বল, তুই কিছু করতে পারবি? প্লেনে করে ফিলিস্তিনে গিয়ে যুদ্ধ করা তোর পক্ষে সম্ভব? কিন্তু তাই বলে তুই যদি রাস্তা থেকে একজন random সাদা চামড়ার অ্যামেরিকান ধরে জবাই করে দিস, সেটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত? তুই নিন্দা জানা। ইন্টারনেটে নিন্দা জানা, rally করে নিন্দা জানা, লেখালেখি করে নিন্দা জানা। ইসলামে স্পষ্ট বলা আছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিন্দা জানানোও জিহাদ। টাকা পয়সা দিয়ে আহত-নিহত মানুষদের সাহায্য কর। তোর পক্ষে যেসব সম্ভব এবং লজিক্যাল সেসব তুই কর। ভুলে যাস কিভাবে যে ইসলাম একটি লজিক্যাল ধর্ম, মোটেও ইমোশনাল ধর্ম নয়।"

সোহেলের কথা শোনা গেল না। কলিং কার্ডের ক্রেডিট শেষ হয়ে যাওয়ায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল।
জাকির নিজের ডেস্কে ফিরে এলো। সোহেলকে অনলাইনে পাওয়া গেল।
একটা দীর্ঘ ইসলামী লেকচার দিয়ে জাকির মোটামুটি উৎফুল্ল।

সোহেল বলল, "বন্ধু, তোর কথায় যুক্তি আছে, কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না আমার কী করা উচিৎ।"
জাকির বলল, "পড়াশোনা কর। বুদ্ধি খাটা, যুক্তির ব্যবহার কর। ইসলামে অযৌক্তিক কিছুই নেই। তোর মনে কোন প্রশ্ন জাগলে স্কলার কাউকে খোলাখুলিই জিজ্ঞেস করে উত্তর জেনে নে। ইন্টারনেটের যুগে এখন এসব খুবই সহজ ব্যপার।"
সোহেল বলল, "তুই বুঝতে পারছিস না। তুই যদি ঠিক হয়ে থাকিস, তোর কথা যদি সত্যি হয়ে থাকে, তাহলে বাংলাদেশের ধ্বংস হতে খুব বেশি বাকি নেই। উগ্রবাদ, মৌলবাদ, ধর্মান্ধতা এখন সারাদেশে ছড়িয়ে গেছে। বেশিরভাগই ভুলভাবে ইসলাম ধর্ম পালন করছে। আমরা আল্লাহর নামে নিরপরাধ মানুষ খুন করতেও দুইবার চিন্তা করিনা। আমাদের বলা হয়, এসব নাকি জিহাদের অংশ। বিভিন্ন দালিলিক প্রমাণও দেয়া হয়।"
জাকির চ্যাটেই হেসে দিল।

"হাহাহা। বন্ধু, শয়তানের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য কি জানো? সেও কিন্তু সত্য বলে, তবে আংশিক সত্য। সেটা মিথ্যার চেয়েও খারাপ। মানুষ বছরের পর ধরে পড়াশোনা করে স্কলার হয়। ওরা দুই চারটা বই পড়েই নিজেদের বিরাট পন্ডিত ভেবে বসে থাকে! আরে, ওদের কথা বিশ্বাস করার আগে তোর নিজের মনকে জিজ্ঞেস করবি ‘শান্তির ধর্ম’ ইসলামের সাথে সেটা কতটা যৌক্তিক। তারপরে কোন ইন্টারন্যাশনালি রেপুটেড স্কলারের সাথে আলোচনা করবি।"
সোহেল লিখলো, "হুমমম।"

জাকির বলল, "তোদের নিয়ত পরিষ্কার, এই ব্যপারে কোন সন্দেহ নেই। শুধু এতদিন বিপথে চালিত হয়েছিস। তোরা আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করতে চাস, পৃথিবীতে শান্তি স্থাপন করতে চাস। এরচেয়ে মহৎ কোন কাজ দুনিয়ায় হতে পারেনা। তবে একটা কথা কী, বিধর্মীদের মুসলিম বানাবার আগে আমার মনে হয় আমাদের মুসলমানদের 'মুসলিম' হওয়াটা ভীষণ জরুরী।"
সোহেল বলল, "কাজটা সহজ হবেনা।"

"নবীজি (সঃ) যদি জাহেলি যুগে ইসলাম প্রচার শুরু করতে পারেন, তাহলে তুই কেন মুসলমানদেরই সুপথে আনতে পারবি না? চেষ্টা কর, এই রাস্তায় তোর সাথে আরও অনেককেই পাবি। হয়তো একঝাক মানুষ তোর কথা শুনবে না। হয়তো এক দুইজন সঠিক রাস্তায় ফিরবে। কিন্তু ভুলে যাসনে, অসীমের গণনার শুরুটা এই ‘এক, দুই’ থেকেই হয়।"
https://www.facebook.com/groups/canvasbd/

**** তথ্য ও গল্পের সাবজেক্ট সরবরাহ, বাল্য সুহৃদ সৈয়দ সাজিদ মাহমুদ (sad but true পেজের অ্যাডমিন)

0 comments
Labels: , , ,

তাকে ইসলাম থেকে দূরে ঠেলে দেয়ার জন্য আসলে আপনি জাহান্নামী

কোন এক নাস্তিক আল্লাহকে গালি দিল। হযরত মুহাম্মদকে (সঃ) গালি দিল। আমরা মুসলমানেরা তখন কী করি? প্রথমেই মুখ দিয়ে সেই লোকটার মা বোন দাদী নানী সহ চৌদ্দ গুষ্ঠির যত নারী আছে, তাদের সবার সাথে শুয়ে যাই।
এরপরে সেও জবাবে আমাদের গুষ্ঠির নারীদের সাথে শোয়ার চেষ্টা করে।

আমাদের ঈমানী রক্ত তখন টগবগ করে ফুটতে থাকে। আমরা তখন মুখ দিয়ে হুমকি ধামকি দিতে থাকি।
এতে সে চুপ না হলে আমরা ধরে নেই এই কাফির/মুরতাদকে কুপিয়ে খুন না করলে আমি বেহেস্তে যেতে পারবো না। কাজেই রান্না ঘর থেকে মাছ কাটার বটি নিয়ে রওনা হই। যদি সেই 'মুরতাদের' ভাগ্য খারাপ হয়ে থাকে, তাহলে আমার কোপ খেয়েই তার ভবলীলা সাঙ্গ হয়।

তারপর ঘরে ফিরে খেতে বসি। মানুষ খুন করে শান্তির ধর্ম ইসলাম কায়েম করার আনন্দে তৃপ্তির ঢেকুর তুলি।
সহমতাবলম্বি ভ্রাতার 'শহীদ' হওয়ার ঘটনায় আরও ঝাকে ঝাকে লোক মুরতাদ হয়।
মুরতাদ একটি আরবি শব্দ, যারা মুসলমান পিতামাতার ঘরে জন্ম নিয়ে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে, তাদের মুরতাদ বলা হয়ে থাকে।

মৌলবাদী মুসলিম অথবা চরমপন্থী নাস্তিক, দুইজনের কেউ কী একটু ভেবে দেখেন যে ইসলাম ধর্মটা আসলে কী? তাদের দুইজনের জ্ঞাতার্থেই বলছি, ইসলাম হচ্ছে শুধুমাত্র আল্লাহর বাণী, এবং নবীজির জীবনাদর্শ - এই দুইয়ের বাইরে আর কিছুই নয়।

জামায়াতে ইসলামী উনিশশ একাত্তুরে গণহত্যা চালিয়েছে, অথবা সৌদি সরকার নারীদের অধিকার লঙ্ঘন করছে কাজেই আমি নাস্তিক হয়ে যাব - this is bullshit! জামায়াতে ইসলামীর কোন নেতা ইসলামের নবী নয়।
সৌদি আরবে মক্কা মদিনা থাকলেও তাঁদের সরকারও ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের এক স্তম্ভ নয়। কাজেই তাদের ভুলের জন্য শুধুই তাদের তিরষ্কার করা মানায়, ইসলামকে নয়।

একই সাথে, কোন এক ব্লগার নবীজিকে (সঃ) গালাগালি করলেই তাকে খুন করতে ছুটতে যাওয়াটা অনৈসলামিক।
বিশ্বাস না হলে একটা ইসলামী ঘটনা বলছি।

বিদায় হজ্জ্বের ভাষণে নবীজি (সঃ) বলেছিলেন, "আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর বাণী এবং তাঁর রাসূলের জীবনাদর্শ রেখে যাচ্ছি।" তিনি বলেছেন এই দুইটাকে আকড়ে রাখলে আমাদের আর কোন কিছু নিয়ে চিন্তা করতে হবেনা।
তাহলে নবীজির (সঃ) জীবনাদর্শে যাওয়া যাক।

একবার নবীজি (সঃ) কাবা ঘরের সামনে বসে ছিলেন। তিনি মাত্রই নতুন ধর্ম প্রচার শুরু করায় তিনি তখন মক্কা জুড়ে কাফিরদের কাছে বিরাট 'ভিলেন।'

তাঁকে যন্ত্রণা দিতেই আবু জাহেল এসে তাঁর মাথায় বালু ঢেলে দেয়। তিনি কিছু না বলে চুপচাপ বালু ঝেড়ে ফেলেন।
নবীজি কোন জবাব না দেয়ায় আবু জাহেল মজা পেল না। তাই সে নানাভাবে তাঁকে উত্যক্ত করতে থাকে। একসময়ে তাঁকে মারধর পর্যন্ত করে। নবীজি (সঃ) তারপরেও কিছু বলেন না।

হযরত হামযা (রাঃ) সম্পর্কে ছিলেন নবীজির (সঃ) চাচা এবং তিনি তখনও ইসলাম গ্রহণ করেননি। তিনি কুরাইশদের ধর্ম নিয়েও মাথা ঘামাতেন না। তিনি নিজের মতই থাকতেন। শিকার করতে খুব ভালবাসতেন।

এই ঘটনার সময়ে তিনি শিকারে ব্যস্ত ছিলেন। শিকার থেকে ফেরার পর তাঁর এক দাসী এসে তাঁকে বলেন, "ধিক তোমার পুরুষত্বে, তোমার ভাতিজাকে এসে আবু জাহেল মারধর করে গেল, অথচ তুমি তোমার শিকার নিয়ে ব্যস্ত!"
হযরত হামযা (রাঃ) নবীজিকে (সঃ) খুব স্নেহ করতেন। তাঁর মার খাওয়ার ঘটনা শুনে তিনি রেগে আগুন হলেন। ছুটে গেলেন কাবা ঘরে। সেখানে নবীজি (সঃ) না থাকলেও আবু জাহেল তখনও ছিল।
হামযা (রাঃ) এসেই আবু জাহেলের টুটি চেপে ধরেন।
"তুমি কোন সাহসে আমার ভাতিজার গায়ে হাত তুলেছো!"
হযরত হামযা (রাঃ) বিরাট বীর ছিলেন। তাঁর সামনে দাঁড়াবার সাহস কারও হয়নি।
আবু জাহেল কোন রকমে বলে, "ও প্রচার করছে আমাদের বাপ দাদার ধর্ম নাকি মিথ্যা। ও বলছে আল্লাহ নাকি এক এবং সে নাকি তাঁর নবী!"

হামযা (রাঃ) তখন চিবিয়ে চিবিয়ে বলেন, "ও যদি তাই বলে থাকে, তবে আমিও বলছি আল্লাহ এক এবং সেই আল্লাহর নবী। এখন তুমি আমাকে কী করতে পারবে? সাহস থাকে তো গায়ে হাত তুলে দেখাও!"
আবু জাহেলসহ তার সাথীরা হায় হায় করে উঠে। হযরত হামযা (রাঃ) মুসলিম দলে যোগ দেয়ায় নিঃসন্দেহে তাঁদের শক্তি বেড়ে যায়।

এর ঠিক দুই-তিন দিন পরের ঘটনা।
কাফিরদের মধ্যে বিরাট বীর উমার(রাঃ) তলোয়ার নিয়ে হাজির। সে মুহাম্মদকে (সঃ) মেরে ফেলবে।
আবু জাহেল খুব খুশি। মক্কায় উমারের(রাঃ) মত বীর খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। হামযাকে (রাঃ) ঠেকাতে উমারের(রাঃ) বিকল্প কেউ নেই। এবং হামযা (রাঃ) বধ হলে মুহাম্মদকে (সঃ) বাঁচাবার কেউ থাকবে না।

সামনে এগুবার আগে উমারের(রাঃ) সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিয়ে দেই। সে তখন সাতাশ বছরের টগবগে তরুণ। মদ্যপান, নারী আসক্তি, জুয়া ইত্যাদি সহ এমন কোন খারাপ কাজ নেই যেখানে তাঁর অরুচি আছে। তাঁর একটাই গুণের প্রশংসা করতে হয়, সেটা হচ্ছে তিনি নির্ভিক বীর।

উমারের (রাঃ) তলোয়ার হাতে আসার খবর শুনে সাহাবীরা ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। হামযা (রাঃ) তখন তাঁদের সবাইকে বলেছিলেন, "ওকে আসতে দাও। যদি তাঁর নিয়্যত ভাল থাকে, তাহলে তাঁর জন্যই ভাল হবে। আর বদ কোন মতলব থাকলে তাঁকে তাঁর তলোয়ারেই হত্যা করা হবে।"

মোটামুটি ভয়াবহ একটা লড়াই দেখার জন্য সাহাবীরা মানসিক প্রস্তুতি নিলেন।
উমার(রাঃ) এসে দরজায় দাঁড়ালেন। হামযা (রাঃ) হাতে তলোয়ার তুলে নিলেন।
কিন্তু তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে স্বয়ং নবীজি (সঃ) এগিয়ে গেলেন। হাসিমুখে তাঁকে স্বাগত জানালেন। উমার (রাঃ) তাঁর পায়ের কাছে তলোয়ার ফেলে দিয়ে বললেন, "আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া আর কোন ঈশ্বর নাই, এবং আপনিই তাঁর প্রেরিত পুরুষ।"

সাহাবীরা জয়ধ্বনি করে উঠলেন, "আল্লাহু আকবার! আল্লাহ সর্বশক্তিমান!"
দুই দিনের ব্যবধানে দ্বিতীয়বার আবু জাহেলের মাথায় হাত!
এখন ঘটনাগুলো একটু মাথা খাটিয়ে বিশ্লেষণ করা যাক।

প্রথম ঘটনায় নবীজি (সঃ) যদি আবু জাহেলকে পাল্টা চড় থাপ্পর মেরে বসতেন, এমন না যে তিনি দূর্বল ছিলেন; অথবা গালাগালিও করতেন যা কিনা নবীজির (সঃ) স্বভাবে বিন্দুমাত্র ছিল না, তাহলে কী হযরত হামযা (রাঃ) ওভাবে তেড়ে যেতেন? যদি তিনি সেখানে না যেতেন, তাহলে কী তিনি মুসলমান হতেন? উত্তরটা ভাবতে থাকুন।
হযরত উমারের (রাঃ) চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আগেই বলেছি। তিনি নবীজিকে (সঃ) হত্যা পর্যন্ত করতে চেয়েছিলেন। এই চরিত্রের কাউকে দেখলে আমরা নাক সিটকে বলি, "ব্যাটা জাহান্নামী!"
অথচ মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে আল্লাহ তাঁকে মুসলিম বানিয়েছিলেন। এবং এক সময়ে তিনি ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা পর্যন্ত নির্বাচিত হন।

আল্লাহ চাইলে কি না পারেন?
তাহলে কোন ব্লগার কী লিখলো না লিখলো সেটা আল্লাহর উপর ছেড়ে দেয়াটাই কী ভাল না?
তার যদি কোন বিষয়ে মতবিরোধ থাকে, তবে আমাদের উচিৎ তার সেই মতবিরোধ দূর করা। গালাগালি করে ঝগড়া বাড়িয়ে তাকে আরও দূরে ঠেলে দিলে কোন লাভ হবে? খুন করে ফেলারতো কোন যুক্তিই নেই। যদি কেউ পথে উমারকে (রাঃ) হত্যা করে ফেলতো, তাহলে আমরা কী হযরত উমারের (রাঃ) মতন বীর, এবং একদন আদর্শ খলিফা পেতাম? এর উত্তর নিশ্চই ভাবতে হবে না!

কাফের অথবা নাস্তিকদের উপর আমরাতো ক্ষেপিই, এমনকি মুসলমানদের মধ্যেও যদি কেউ ইসলাম নিয়ে কোন প্রশ্ন তুলে, আমরা তাকে জবাব দেয়ার পরিবর্তে রেগে মেগে গালাগালি করতে থাকি। এতে সে ইসলাম থেকে দূরে সরে যায়। দেশে যে লাখে লাখে মুরতাদ, এর একমাত্র কারণ আমাদের এই অভ্যাস।
আরেকটা ঘটনা দিয়ে শেষ করি।

একবার এক তরুণ সাহাবী নবীজির (সঃ) কাছে গিয়ে বললেন, "আমাকে জিনাহ করার অনুমতি দিন।"
জিনাহ মানে অন্য নারীর সাথে শোয়ার অনুমতি।

সবাই হায় হায় করে উঠলো। বলে কী! নবীজির(সঃ) কাছে এসেছে জিনাহর অনুমতি নিতে! সাধারণ এক মোল্লার কাছে গেলেই যেখানে 'আস্তাগফিরুল্লাহ' বলে তাকে তাড়িয়ে দেয়া হবে!
সাধারণ মোল্লার এটা বুঝার ক্ষমতাই নেই যে এতে সে জিনাহ করা থেকে বিন্দুমাত্র বিরত হবে না। বরং জিনাহ করার পাশাপাশি ইসলাম থেকেও দূরে সরে যাবে।
কিন্তু নবীজি(সঃ) পাড়ার মোল্লা ছিলেন না। তিনি সাহাবীকে শান্ত করে বললেন, "যদি তোমার মায়ের সাথে কেউ জিনাহ করে, তোমার ভাল লাগবে?"

"না।"
"যদি তোমার বোনের সাথে অন্য কেউ শুয়ে পড়ে, তোমার ভাল লাগবে?"
"না।"
"তোমার স্ত্রীর যদি আরও অন্য কারও সাথে সম্পর্ক থাকে, তোমার ভাল লাগবে?"
"না।"
"তোমার মেয়ের সাথে?"
"আমি তাকে খুন করে ফেলবো!"
"ঠিক সেভাবেই তুমি যার সাথে জিনাহ করতে চাইছ, সেও কারও মা, বোন, স্ত্রী, অথবা কন্যা। তুমি যদি কাজটা করো, তাহলে সেটা অন্যের প্রতি অন্যায় করা হবে। কাজটা করোনা।"

সাহাবী নবীজির (সঃ) কথায় সন্তুষ্ট হলেন, এবং ওয়াদা করলেন, তিনি এই কাজ করবেন না।
আমাদের মোল্লারা প্রচার করে বেড়ায় কাফের নাসারারা আমাদের শত্রু। অথচ ইসলামে বলা আছে, প্রতিটা অমুসলিমকে সম্ভাব্য মুসলিম হিসেবে আচরণ করতে। সে পুত্তলিক পুরোহিত হোক, অথবা কট্টর নাস্তিক।
কাজেই, ভিন্ন মতাবলম্বী কারও মতামত শুনে শুরুতেই তাকে গালাগালি করা শুরু করে দিবেন না। শুনুন তার কথা। আপনার যদি ভাল না লাগে, তবে অতিরিক্ত ভদ্রতার সাথে তাকে নিজের পয়েন্ট অফ ভিউ সলিড যুক্তি দিয়ে বুঝাবার চেষ্টা করুন। যদি সে না বুঝে, তাহলে তাকে আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিন। শুধু শুধু নিজের পাপের বোঝা বাড়ানো কেন?

"তুমি পর্দা করো না? তুমি জাহান্নামী!"
"তুমি নামাজ পড়ো না? তুমি জাহান্নামী!"
"তুমি নাস্তিক? তুমি জাহান্নামী!"
"তুমি সমকামী? তুমি জাহান্নামী!"

আল্লাহ কী জাহান্নামের কন্ট্রাক্ট শুধু আপনার হাতেই তুলে দিয়েছেন? তওবা বলে একটা ব্যবস্থা যে ইসলামে আছে, সেটা কী আপনি ভুলে গেছেন? আপনি কি জানেন, তাকে ইসলাম থেকে দূরে ঠেলে দেয়ার জন্য আসলে আপনি জাহান্নামী?

https://www.facebook.com/groups/canvasbd/

0 comments
Labels: , , ,

নাস্তিক বনাম আস্তিক

"আমি এখন ওসব ধর্মকর্ম মানিনা। আমি অনেক পড়াশোনা করেছি, এবং বুঝতে পেরেছি ওসব বোগাস।"
কথাটি যে ছেলে বলল, তাকে কিছুদিন আগেও রেগুলার মসজিদে পাওয়া যেত। সে সবকিছুই খুব সিরিয়াসলি করে। যখন মসজিদে যেত, তখন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতে পড়তো। এখন যখন নাস্তিক হয়েছে, তখন ধুমায়ে গালাগালি করবে এইটা নিশ্চিত।

অবশ্য সে একাই যে এমন বলে, এটা ঠিক না। ওর মতন ছেলেতে এখন দেশ ভরে গেছে।
"তাই? ভালইতো। তা, কী পড়াশোনা করেছিস? আমাকেও একটু জানা, তাহলে আমিও তোর মতন হয়ে যাই। কারণ আমি যত পড়াশোনা করেছি, ততই বেশি ধার্মিক হয়ে যাচ্ছি।"
"তুই আমার সাথে রসিকতা করছিস?"

"আমার গলার স্বর শুনে তাই মনে হচ্ছে? স্যরি দোস্ত। কিন্তু আমি আসলেই সিরিয়াস। আমিও জানতে চাই ঘটনা কী?"
বন্ধু আমার নিজের কন্ঠস্বর পাল্টে বলল, "আসলে মোহাম্মদের (সঃ)(যদিও সে দুরুদ পাঠ করেনি, কিন্তু আমি যেহেতু লিখছি, তাই দুরুদ পাঠ করলাম) উপর থেকে রেসপেক্ট চলে যাওয়ায় এখন আর ধর্ম মানতে ইচ্ছা করেনা।"
চোখ বড় বড় করে অবাক গলায় বললাম, "বলিস কী? পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষকে যদি তুই রেসপেক্ট না করিস, তাহলে কাকে করবি?"

"এটা একটা টিপিক্যাল পায়াস স্টেটমেন্ট। তুই নিজে আমাকে বুঝা, উনাকে রেসপেক্ট করার কোন যুক্তি আছে?"
"একটা লোক একটা চূড়ান্ত বর্বর জাতিকে মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে লাইনে নিয়ে আসলেন, তুই বলছিস তাঁকে রেসপেক্ট করার কিছু নেই?"

"বর্বর কাদের বলছিস? ইসলাম নিজে বর্বর নয়? ইসলামে বলা হয়নি মেয়েরা ছেলেদের খেলার পুতুল? স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর বেহেস্ত? মেয়েদের মারধর কর? অমুসলিমদের মাথা কেটে ফেল? কী হলো? কোথায় যাচ্ছিস? জবাব দিয়ে যা।"

আমি গিয়ে শেল্ফ থেকে কুরআন শরীফ এনে তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললাম, "এই যে তোকে কুরআন দিয়ে দিলাম। আরবি থেকে ইংলিশ বাংলা দুই ধরনেরই ট্রান্সলেশন আছে। তুই আমাকে এইসব আয়াত খুঁজে বের করে দেখা। আমি আজকেই নাস্তিক হয়ে যাব।"
"তুই বলতে চাচ্ছিস এসব ইসলামে নেই?"
"ইসলাম মানে কুরআন শরীফ। ইসলাম মানে নবীজির(সঃ) সহীহ হাদিস। এই দুইয়ের বাইরে অন্য কোন কিছুই ইসলাম নয়। বটম লাইন।"

"দাঁড়া আমি তোকে এসব বের করে দেখাবো।"
"আমি স্বানন্দে অপেক্ষায় থাকব। সুরাহ বাকারার ২৫৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ স্পষ্ট করে নির্দেশ দিয়েছেন ইসলাম গ্রহণে কারও উপর কোনরকম জবরদস্তি করা যাবে না। বিশ্বাস না হলে খুলে দেখ। একটা জিনিস মনে রাখিস, পাড়ার মোল্লা মৌলবিরা কোন একটা ফতোয়া জারি করে দিলেই সেটা ইসলাম নয়। ইসলাম শুধুমাত্র আল্লাহর বাণী এবং নবীজির হাদিসের উপর দাঁড়িয়ে আছে। এর বাইরে সব বেদাত।"
"হাদিস মানে কী? ঐ আমলে নবী, সাহাবী এবং স্কলাররা মিলে কিছু নিয়ম করে গেছেন, সেটাইতো?"
আমি চূড়ান্ত হতাস হয়ে বললাম, "ভাইরে....আগে ভাল মতন জেনে আয় হাদিস মানে কী, তারপর তর্ক করতে আসিস।"
"না, সিরিয়াসলি, হাদিস মানে কী?"

"হাদিস হচ্ছে শুধুমাত্র নবীজির (সঃ) বাণী। উনি যা বলে গেছেন, সেটাই। অন্য যে কেউ, এমন কী হযরত আবু বকরও (রাঃ) যা বলে গেছেন, সেটা হাদিস হতে পারেনা।"
"ঐ একই কথা হলো।"
"না, এক না। নবীজির(সঃ) নিজের বাণী, এবং অন্য যে কারও বাণীতে আকাশ পাতাল ব্যবধান আছে। সেটা যেকোন ব্যপারেই হোক।"
বন্ধু ইন্টারনেট ঘেটে একটা আয়াত বের করলো। সূরা নিসার চৌত্রিশতম আয়াত। অতি বিখ্যাত আয়াত। এখানেই আল্লাহ বলেছেন, বউ পেটাতে।

"এই যে, এই দ্যাখ। এখানে স্পষ্ট বলা আছে, forsake them in bed; and [finally], strike them."
এরপর সে বিজয়ীর হাসি হেসে বলল, "এখন তুই কী বলবি?"
আমিও হাসছি দেখে সে বলল, "কিরে? মুখ বন্ধ হয়ে গেলতো? কোন জবাব নেইতো?"
"হাসছি তোর বোকামি দেখে। এই হচ্ছে তোর পড়াশোনার দৌড়? হাহাহা।"
"ফাজলামি বাদ দিয়ে বল তোর কোন জবাব আছে এর এগেইনস্টে?"
"তুই পুরো আয়াতটা পড়, তাহলেই তুই তোর জবাব পেয়ে যাবি। আমাকে ব্যাখ্যা করতে হবেনা।"
"যাই বলা হয়ে থাকুক না কেন, একটা মেয়েকে পেটানো কোনভাবেই জাস্টিফায়েড না।"

"পুরো আয়াতে বলা হয়েছে, ধার্মিক মেয়েরা অবশ্যই স্বামীর প্রতি সৎ থাকবে। এবং যদি তাঁরা স্বামীর সাথে চিটিং করে, তাহলে স্বামীরা যেন প্রথমে তাঁদের চিট করতে নিষেধ করেন। তারপরও যদি তাঁরা না শোনেন, তাহলে তাঁদের শয্যাত্যাগ করেন, মানে তাঁদের সঙ্গত্যাগ করেন আর কি। এবং তারপরেও যদি তাঁরা না মানেন, তাহলেই কেবল তাঁদের আঘাত করা যাবে। এবং এখানেই হাদিস এসেছে যে সেই আঘাতটাও ব্রুটাল হতে পারবেনা। এমন হতে হবে যেন মেসওয়াক (টুথব্রাশ) দিয়ে আঘাত করলে যেমনটা হয়। তুইতো পড়াশোনা করেছিসই, নিশ্চই জানিস ইসলামে কঠোরভাবে নিষেধ আছে স্ত্রীর মুখে আঘাত করার ব্যপারে। তাঁর উপর চূড়ান্ত অসন্তুষ্ট হলে তাকে তালাক দিতে বলা হয়েছে, কিন্তু মুখে আঘাত করে তাঁর চেহারা বিগড়াতে বলা হয়নি। সে যেন আরেকটা বিয়ে করতে পারে, এই পথ যেন খোলা থাকে।"

"তুই কী করে শিওর হচ্ছিস যে টুথব্রাশ দিয়ে আঘাত করার কথা বলা হয়েছে? ওসব মনগড়া কথাওতো হতে পারে। ভাল যুক্তি আছে? এভিডেন্স আছে?"
হেসে বললাম, “তায়াম্মুম কাকে বলে জানিস?"
বন্ধু রেগে গেল।
"এখানে তায়াম্মুম আসছে কোত্থেকে? শুধু শুধু তাকে টেনে আনছিস কেন?"
"দরকার আছে বলেই টানছি। তুই জানিস তায়াম্মুম কাকে বলে?"
"অবশ্যই জানি।"
"আমাকে বল।"
"মানে? তুই আমাকে বিশ্বাস করিস না?"
"আগে করতাম। কিন্তু আজকে তোর কথাবার্তা শুনে ঠিক ভরসা পাচ্ছি না। বল দেখি, তায়াম্মুম কাকে বলে?"
বন্ধু গজগজ করতে করতে বলল, "যখন হাতের নাগালে পানি থাকেনা, তখন অজু করার জন্য পরিষ্কার মাটির ব্যবহার করার পদ্ধতিকে তায়াম্মুম বলে। হয়েছে?"
"যাক, এই প্রশ্নের উত্তর তুই পেরেছিস।"
"বলেছি না আমি যথেষ্ট পড়াশোনা করেছি?"
"অল্পবিদ্যা ভয়ংকরী বন্ধু। অশিক্ষিত মানুষই মনে করে সে যথেষ্ট পড়াশোনা করে ফেলেছে। জ্ঞানী মাত্রই বুঝতে পারে যে জ্ঞানের কোন শেষ নেই।"

"তুই আমাকে অপমান করা বন্ধ করে বল তায়াম্মুমকে কেন টেনে এনেছিস!"
"মাটিতে হাত লাগিয়ে তায়াম্মুম করতে হয়। এই 'মাটিতে হাত লাগানোর' বর্ণনায় কী Verb ব্যবহার করা হয়েছে জানিস? 'দারাবা।' সুরাহ নিসার ঐ আয়াতেও ঐ একই verb, ‘ওয়াদরিবুহুন্না।’ যার আক্ষরিক অনুবাদ করলে হবে 'তাদের প্রহার কর' বা তুই যে ইংলিশে বললি 'strike them.' এর কোনটাই কিন্তু ঠিকমতন ফিট করেনা। কারণ এটা যদি ফিট করে তাহলে বলতে হবে তায়াম্মুমের সময়ে নির্দেশ দেয়া হয়েছে মাটিকে পেটাতে। এই লজিকেই বলা হয়েছে সুরাহ নিসার চৌত্রিশ নম্বর আয়াতে বউ পিটানোর কোন নির্দেশ দেয়া হয়নি, বরং এত বড় অপরাধের পরেও বলা হয়েছে কেবল তার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে! সহজ লজিক হচ্ছে একেক ভাষায় একেকভাবে ভাব প্রকাশ করা হয়ে থাকে। অনুবাদ করে একটা আইডিয়া পাওয়া যায় মাত্র, কিন্তু শতভাগ বুঝে ফেলার দাবী করাটা হাস্যকর। এবং তার উপর কনটেকস্ট না বুঝে সরাসরি উপসংহার টানাটা নির্বুদ্ধিতা।"

"তুই এত কিছু জানিস কেমনে?"
"সেই আদিযুগ থেকেই তোর গুরুরা এবং নির্বোধ কিছু মৌলবাদীরা এই আয়াতের ভুল ব্যবহার করে ফায়দা লুটার চেষ্টা করে। তাই এ সম্পর্কে বিস্তর আলোচনা নেট ঘটলেই পাবি। আর তাছাড়া সাজিদকে চিনিস না? ঐ যে সৈয়দ রাজাউল আকমাল সাজিদ, sad but true পেজের অ্যাডমিন, আমার স্কুল জীবনের বন্ধু, সেই আমাকে আরবি verb-এর ব্যবহার সম্পর্কে বলেছে। ওকেতো চিনিসই, এসব বিষয়ে তাঁর অনেক আগ্রহ আছে। এখন তোর কাছে আমার আরেকটা প্রশ্ন আছে।"
"করে ফেল।"

কয়েক বছর আগে একটা নাটকে লম্পট চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। এবারে ঠিক সেভাবে গলার স্বর ও দৃষ্টি বদলে জিজ্ঞেস করলাম, "বন্ধু। তোমার বউ যদি আমার সাথে বিছানায় শোয়, তখন তুমি কী করবে?"
"আমি তোদের দুইজনকেই খুন করে ফেলবো।"
"কেন বন্ধু? তুমি না এই মাত্রই বললে টুথব্রাশ দিয়ে আঘাত করাও জাস্টিফায়েড না, সেখানে তুমি খুন করার কথা ভাবছো! ও মাই গড! তুমি এতো বর্বর!"
বন্ধু সাথে সাথে থতমত খেয়ে গেল।

"অন্যের বৌকে নিয়ে ফ্যান্টাসি করা খুব সহজ। নিজের বৌকে, মাকে, বোনকে সেই জায়গায় বসালেই আমাদের বিচার বদলে যায়। কুরআন সবার জন্যই সমান। এটাই ইসলাম। আল্লাহ ভাল করেই জানেন কোন স্বামী যদি জানতে পারেন তাঁর স্ত্রী তাঁর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছে, তবে তিনি কী রিয়েক্ট করতে পারেন। এই যুগেও স্বামীরা স্ত্রীদের মেরে ফেলতে চাইবেন, জাহেলি যুগের স্বামীরাতো আরও এগ্রেসিভ ছিলেন। তাই আল্লাহ বলে দিয়েছেন প্রথমে তাঁদের বুঝাতে, তারপর সেপারেট হতে। কিছুতেই কিছু লাভ না হলে তবেই ‘মৃদু’ আঘাত করা যাবে, তবু 'খুন' করা যাবেনা। কিছুতেই না। আয়াতের শেষে কিন্তু বলা আছে "যদি তাঁরা ভুল স্বীকার করে তোমার কাছে ফিরে আসে, তবে তাঁদের বিরুদ্ধে কোন রাগ পুষে না রাখতে।" তুইই বল, তুই পারবি চিটিং ওয়াইফকে ক্ষমা করে দিতে? কতটুকু বিরাট মনের অধিকারী হলে একে ক্ষমা করা সম্ভব? আল্লাহ কিন্তু সেই নির্দেশই তোকে দিচ্ছেন। তুই বলছিস ইসলাম বর্বর? তোদের চোখে আয়াতের এই অংশটা পড়ে না?"

"ইয়ে তোদের নবী যে ছয় বছরের মেয়েকে বিয়ে করে ফেললেন, সেটাকে কিভাবে জাস্টিফাই করবি?"
"হাহাহা।"
"হাসছিস কেন? হাসির কী বললাম? তুই বলতে চাস উনি তা করেন নাই?"
"অবশ্যই করেছেন। উনি যখন হজরত আয়েশাকে(রাঃ) বিয়ে করেন তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ছয় বছর। এবং সংসার শুরু করেন তারও তিনবছর পর, মানে তাঁর বয়স যখন নয় বছর।"
"এইখানে তোর কোন মন্তব্য আছে? এখনও হাসছিস?"
"আমি জানতাম, ঠিক এই প্রশ্নটাই তোর মনে আসবে। হাহাহা। এর উত্তর অনেক স্কলার অনেক সুন্দরভাবে দিয়েছেন। সেটা তোর চোখে নিশ্চই পড়েনি?"
"তুইই বল দেখি, তোর কী যুক্তি?"
"তোর মাকে যখন তোর আব্বা বিয়ে করেন, আন্টির বয়স কত ছিল?"
"জানিনা।"

"আমার নিজের মায়ের বিয়ের সময়ে বয়স ছিল আঠারো। আমার নানী যখন বিয়ে করেন তাঁর বয়স তখন তের। তাঁর মা যখন বিয়ে করেন, তাঁর বয়স এগারো। আমি একশো বছর আগের কথা বলছি না। আশি নব্বই বছর আগের কথা বলছি। বাংলাদেশের কথা বলছি, যখন দেশের ক্ষমতায় তখন ব্রিটিশ রাজপরিবার। তুই কী জানিস যে খোদ অ্যামেরিকাতেও বর্তমানে মেয়েদের বিয়ের বয়স কোন কোন স্টেটে তের, চৌদ্দ বছর? বিশ্বাস না হলে ইন্টারনেট ঘাট, নিউ হ্যাম্পশায়ারে মেয়েদের লিগাল ম্যারিটাল এজ হচ্ছে তের, নিউ ইউর্কে চৌদ্দ এবং মিসৌরিতে পনের। নবীজির(সঃ) ঘটনা আজ থেকে চৌদ্দশো বছর আগে, আরব মরুভূমিতে। তখনকার যুগে এটাই সাধারণ ব্যপার ছিল। নবীজির(সঃ) শত্রুর কোন অভাব ছিল না। কিন্তু তারা পর্যন্ত এই নিয়ে কোন প্রশ্ন তুলেনি। মানে তাদের চোখেও এটা কোন 'অপরাধ' ছিল না।

আজকের যুগের মেয়েরা রবীন্দ্রনাথের হৈমন্তী পড়েই চোখ কপালে তুলে বলে 'এতো বাচ্চা মেয়ে!' কিন্তু তখনকার যুগে এটাই নিয়ম ছিল। আমাদের দেশে এখনও মেয়েদের ক্ষেত্রে 'কুড়িতেই বুড়ি' কথাটা চালু আছে। কাজেই বাংলাদেশে থেকে, অ্যামেরিকায় থেকে, চৌদ্দশো বছর আগের মরুভূমির কালচার সম্পর্কে মন্তব্য করা খুবই অযৌক্তিক। এটা সেই যুগের ঘটনা যখন বাবারা মেয়েদের জীবিত কবর দিত। সেটাই প্রথা ছিল। ইসলাম এসে সেটা বন্ধ করেছে। দুই যুগকে এক করা আহাম্মকি। Sorry if I sound harsh, but যারা এই যুক্তি দেয়, তারা আহাম্মক! আর তাছাড়া ইসলামই একমাত্র ধর্ম যা বাল্যবিবাহ নিষেধ করে। বিশ্বাস না হলে সুরাহ নূরের ৫৯তম আয়াত পড়। সুরাহ নিসার ৬নং আয়াতেও একইভাবে বিয়ের বয়স নিয়ে বলা হয়েছে। এবং সেটা হচ্ছে শরীরে পিউবার্টি এলেই তুমি যোগ্য। আরবরা সেটাই ফলো করতো। নবীজির (সঃ) সাথে বিয়ে হওয়ায় হযরত আয়েশার (রাঃ) কোন কমপ্লেইন ছিল বলেওতো মনে পড়ে না। তিনি যথেষ্টই সুখী বধূ ছিলেন। তাঁর থ্রুতেই আমরা সবচেয়ে বেশি হাদিস পেয়েছি। যদি দুইজন মানুষ নিজেদের মধ্যে ঠিক করেন কে কাকে বিয়ে করবেন, এবং তাঁরা বিয়ে করে সুখীও থাকেন, সেখানে জোকারের মত আজাইরা নাক গলানো কী ঠিক?"
"ইয়ে, মানে আমার মনে আরও অনেক ডাউট আছে।"

"ডাউট থাকতেই পারে, সময়ের সাথে সাথে ডাউট আসাটাই স্বাভাবিক। আজকে যা নরমাল লাগছে, একশো বছর পর দেখবি সেটা নিয়েই ডাউট আসবে। কিন্তু ডাউট আসলে সেই ডাউটের উপরেই আগে ডাউট করা উচিৎ যে, কেন এমন ডাউট আসলো। মানে কেন আমার মনেই নবীজির (সঃ) বিয়ে নিয়ে ডাউট এলো, কেন একশো বছর আগে কারও মনে এলো না? এবং সেই ডাউট দূর করতে আমাকে ফিরে যেতে হবে চৌদ্দশো বছর আগে, সেই আরব মরু সভ্যতায়, তারপর সেখান থেকে উত্তর খুঁজে বর্তমানে ফিরে আসতে হবে।"
হঠাৎ বন্ধুর চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো, "ও হ্যা, মনে পড়েছে! কুরআনে বলা হয়েছে চারটা বিয়ে করতে। এই নিয়ে কী বলবি? অ্যা?"

একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললাম, "বন্ধু, আমি তোমাকে ছোটবেলা থেকেই চিনি। তুমি স্যারের সাজেশন পেয়ে পাশ করা ছাত্র ছিলে। মাঝে মাঝে পরীক্ষায় নকলও করতে। এখন দেখছি, সেই অভ্যাস তোমার এখনও রয়ে গেছে। কোন কিছুই ডিটেইলে পড়তে পারোনা।"
বন্ধু চোখ পাকিয়ে বলল, "কী বলতে চাস?"

"কুরআনে বলা হয়েছে 'যদি তুমি ন্যায় করতে পারো, তবেই কেবল দুই, তিন, অথবা চার বিয়ে করো। কিন্তু যদি তুমি ন্যায় করতে না পারো, তবে কেবল একটি বিয়ে কর।' সুরাহ নিসা, আয়াত তিন। ইসলামই একমাত্র ধর্ম যেখানে এক বিয়ের কথা বলা হয়েছে। অন্য কোন ধর্মে সেটা নেই।"

"কে বলেছে? হিন্দুরা একটাই বিয়ে করে।"
"তাই? শ্রী কৃষ্ণের কয় বউ ছিল জানিস? শ্রী কৃষ্ণ কী মুসলমান ছিলেন?"
বন্ধু আমতা আমতা করতে থাকে।
"আমি এই জন্যই কোন ধর্ম মানি না।"

"বন্ধু, আবারও বলছি, তখনকার আরব সভ্যতায় ফিরে চল। তখন পুরুষেরা ব্যবসার কাজে শহর থেকে শহরে ঘুরতো, কাজেই দেখা যেত, হয়তো রোগাক্রান্ত হয়ে মারা গেছে অথবা দস্যুর হাতে নিহত হয়েছে। এছাড়া যুদ্ধে মৃত্যু ছিল তাঁদের বেশিরভাগেরই ভাগ্য। শিকারে গিয়েও অনেকে নিহত হতেন। তাহলে দেখা যাচ্ছে পুরুষ থেকে মেয়েদের সংখ্যা স্বাভাবিকভাবেই অনেক বেশি ছিল। এত বিপুল সংখ্যক মেয়ে মানুষের দেখভাল করার জন্যই ছেলেদের চার বিয়ে পর্যন্ত করার অনুমতি দেয়া হয়েছিল।"
"মেয়েদের এমনিতেই সাহায্য করা যায়। বিয়ে করতে হবে কেন?"

"অবশ্যই মেয়েদের সাহায্য করা যায়। ইসলামই বলে যারা বিধবা নারীদের, এতিম শিশুদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন, তাঁদের স্থান জান্নাত। কিন্তু ভাই, কাকে বোকা বানাচ্ছিস? তুই নিজেও পুরুষ। সুন্দরী মেয়ে দেখলে তোরও নিয়্যত বিগড়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক। তোর কী ধারণা, একজন মহিলাকে কয়টা পুরুষ দিনের পর দিন নিঃস্বার্থভাবে সাহায্য করে যেতে পারবে? কিছু একটা বিনিময় সে চাইবেই। বাংলাদেশে যুবতী বিধবা বা ডিভোর্সীদের বাড়ির দরজায় প্রায়ই নানান বাহানায় প্রতিবেশী পুরুষেরা এসে কড়া নাড়ে। এটা আমিও যেমন জানি, তুইও জানিস। সে যুগে মেয়েদের অবশ্যই পুরুষদের উপর নির্ভর করতে হতো। তাঁদের বাইরে কাজ করার কোন সুযোগ ছিল না। যে সমাজে বিধবাদের আরেকবার বিয়ের সুযোগ দেয়া হতো না, সেই সমাজে প্রস্টিটিউজম একটা কমন ফ্যাক্ট ছিল। এখন তুইই বল, বেশ্যা হবার চেয়ে কী কারও ঘরের গৃহিনী হওয়া ভাল ছিল না? এবং ভুলে যাস না, স্বামীর উপর আল্লাহর হুকুম আছে, 'ন্যায়' করতে না পারলে দ্বিতীয় বিয়ে না করতে। এমন না যে কোন একজন বউকে আরেকজনের উপর প্রাধান্য দিতে পারবে। তাহলে তার জন্য এক বিয়েরই হুকুম আছে।”

“I am not convinced.”

"তোকে এই নিয়ে মাথা ঘামাতে কে বলেছে? তুই একটাই বিয়ে কর না। সমস্যা কী?"
সে কোন কথা বলল না।

বললাম, "আবারও বলছি বন্ধু, শর্টকাটে দুই চারটা আর্টিকেল এবং বই পড়েই নিজেকে বিরাট পন্ডিত ভেবে বসিস না। চিন্তা করতে থাক। আরও গভীরে গিয়ে পড়াশোনা করতে থাক। মনে প্রশ্ন আসলে সেই প্রশ্নকেই প্রশ্ন কর। তারপরে দেখবি অনেক কিছুর উত্তর তুই আপনাতেই পেয়ে যাবি।"

https://www.facebook.com/groups/canvasbd/

1 comments
Labels: ,

"বাচ্চা মারা গেছে? নিশ্চই পাপের শাস্তি!"

আপাত দৃষ্টিতে শফিক সাহেব একজন ভাল মানুষ। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। সারাদিন ছাত্র পড়িয়ে সন্ধ্যায় বাড়িতে এসে বিশ্রাম নেন। তাঁর স্ত্রীও একজন আদর্শ গৃহিনী। ঘর সামলাতে সামলাতেই তাঁর দিন চলে যায়। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালবাসার কোনই কমতি নেই, তবুও তাঁরা সুখী নন।

তাঁদের প্রথম সন্তান সাত বছর বয়সে পানিতে ডুবে মারা গেছে। দ্বিতীয় সন্তান একবছর বয়সে নিওমোনিয়ায় মারা গেল। তৃতীয় সন্তান মানসিক প্রতিবন্দ্বী। মা বাবা তাকে 'অটেস্টিক' বলে লোকজনের কাছে পরিচয় দেন। হয়তো নিজেরাও এ থেকে কিছুটা সান্তনা খুঁজেন।

এইরকম একটি পরিবারের কথা শুনলে আপনি, একজন বাঙ্গালি ‘সামাজিক প্রাণী’ হিসেবে সবার আগে কী চিন্তা করবেন?"নিশ্চই কোন পাপ করেছিলেন, যে কারণে এই শাস্তি!"আপনার কথা কী বলবো, সামাজিক প্রাণী হিসেবে আপনার কাজই হচ্ছে আলতু ফালতু কথা বলা। শফিক সাহেব এবং তাঁর স্ত্রী নিজেরাই তখন চিন্তা করবেন নিশ্চই তাঁরা জীবনে কোন বিরাট পাপ করেছেন, যে কারণে তাঁদের এমন শাস্তি দেয়া হয়েছে! তাঁরা তাঁদের স্মৃতির ডায়েরির পৃষ্ঠা প্রতিদিন উল্টে হাতড়ে বেড়াবেন, যদি কোন পাপের সন্ধান পান! কারণ স্বজ্ঞানে তাঁরাতো কোন পাপ করেননি!
অথবা ধরুন এক লোকের পরপর তিনটা সন্তান ‘মেয়ে’ হলো। তখন?

আমার শ্বশুরের দুইখানা সন্তান, এবং দুইজনই মেয়ে। তাঁকে তাঁর আত্মীয়রা সারাজীবন শুনিয়ে গেছেন (এখনও কেউ কেউ শোনান) তিনি ‘অভিশপ্ত।’ আমাকে সেদিন এক মেয়ে জানালো তাঁরা সব বোন, কোন ভাই নেই, এবং তাঁর বাবাকে আত্মীয়স্বজন তথা সমাজ বলে বেড়ায়, "পাপের শাস্তি! নাহলে ছেলে হবে না কেন?"

আরেকটা মেয়ে হাসিমুখে সেদিন বলছিল, "যেদিন আমার জন্ম হয়েছিল, আমার খালা ফুপুরা কান্নাকাটি করে হাসপাতালকে একদম মরা বাড়ি বানিয়ে ফেলেছিল! কেন মেয়ে হলো!"

আমি আবার একজনকে চিনি, যার সাত সাতজন সন্তান ছিল। বড় ছেলে মারা যায় শৈশবে, হাঁটা চলা ছেড়ে কেবল ছুটাছুটি করতে শিখেছিল বেচারা। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ছেলেও মারা যায় একদম দুগ্ধপোষ্য অবস্থায়। ইংরেজিতে যে বয়সের শিশুদের "ইনফ্যান্ট" বলে।তবে তাঁর চার মেয়েই বেঁচে ছিলেন। কিন্তু তাও আবার বেশিদিনের জন্য নয়। প্রথম তিন কন্যা সন্তানেরও কবর তাঁকেই দিতে হয়েছিল। মৃত্যুর সময়ে কেবল একজন মেয়েকেই জীবিত দেখে যেতে পেরেছিলেন। এবং সেই মেয়েও বাবার মৃত্যুর মাত্র ছয় মাসের মধ্যেই পৃথিবী ত্যাগ করেন।

এই লোকের এই ভাগ্য দেখলে "বাঙ্গালি সামাজিক প্রাণীরা" কী বলবে?

কিছু বলার আগে তাঁর পরিচয় দিয়ে দেই। তিনি হচ্ছেন, হযরত মুহাম্মদ (সঃ), পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব!
প্রতিটা সন্তানের মৃত্যুর ক্ষণে যিনি একটি কথাই বলতেন, "নিশ্চই আসমান জমিন সবকিছুর মালিক আল্লাহ। তিনি যখন যাকে যা খুশি দেবার ক্ষমতা রাখেন, এবং যখন যার কাছ থেকে যা খুশি কেড়ে নেবারও ক্ষমতা শুধুই তাঁর।"
মেয়ে সন্তান-ছেলে সন্তান নিয়ে নবীজির (সঃ) কোন পক্ষপাতিত্ব ছিল না। তিনি তাঁর কন্যাদের যেরকম স্নেহ করতেন, সেটা কিংবদন্তি হয়ে আছে। তাও আবার সেই আরব 'সভ্যতায়' যেখানে মেয়েদের জন্ম হলে পিতারাই তাঁদের নিয়ে যেতেন লোকালয়ের বাইরে, এবং তাঁদের জীবিত কবর দিয়ে আসতেন!

চৌদ্দশ বছরেও মানুষ সভ্য হতে শিখেনি। যেই দেশ মঙ্গলে যান পাঠায়, সেই দেশেই শিক্ষিত শ্রেণীর লোকজন "কণ্যা ভ্রুণ হত্যা" করে থাকে। বলছি প্রতিবেশী দেশের কথা। ব্যপারটা আশংকাজনক, কারণ তাঁদের দেশে যাই ঘটে, সেটাই কিছুদিন পরে আমাদের দেশেও ঘটে থাকে। পেটের ভিতরে অকারনে কন্যা সন্তান হত্যা করলে কী পাপ হয় না? ওদের কে বুঝাবে?

সন্তানের প্রাকৃতিক মৃত্যুতে নবীজি(সঃ) কিভাবে শক্ত থাকতে পারতেন? কারণ তিনি জানতেন তাঁর মালিক বিভিন্নভাবে তাঁকে পরীক্ষা করার ওয়াদা করেছেন। সুরাহ বাকারায় সেই মালিক (আল্লাহ) বলেছেন, "এবং আমি কিছু ভয়, ক্ষুধা, ধন-সম্পদ, জীবন এবং ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা নেব। তুমি সেসব ধৈর্য্যশীলদের সুসংবাদ দাও, যারা বিপদের সময়ে বলে, 'আমরাতো আল্লাহরই এবং তাঁর কাছেই ফিরে যাব।' এরাই তাঁরা যাদের প্রতি তাঁদের মালিকের পক্ষ থেকে বিশেষ অনুগ্রহ ও করুণা বর্ষিত হয়, আর তাঁরাই সৎ পথে পরিচালিত।" (আয়াত নং ১৫৫-১৫৭ দেখে নিতে পারেন।)

আল্লাহ প্রশ্ন ফাঁস করে দিয়েছেন! স্পষ্ট বলে দিয়েছেন তিনি কিভাবে পরীক্ষা নিবেন! কখনও আমাদের ভয় এসে গ্রাস করবে। কখনও ক্ষুধার কষ্টে চোখে অন্ধকার দেখবো! ধনসম্পদ কখনও বেড়ে যাবে, আবার কখনও সব হারিয়ে পথের ফকির হয়ে যাব। কখনও নিজে বেঁচে গিয়ে প্রিয় মানুষদের মরতে দেখবো। আমাদের পরীক্ষা দিতে হবেই। এড়ানোর কোনই উপায় নেই। আমাদের কাজ হচ্ছে মাথা নত করে মালিকের হুকুম মেনে নেয়া। ব্যস! তাইলেই পাশ!
এবং আসল কথা হচ্ছে, এছাড়া আমাদের আরতো কোন উপায়ও নেই। আমার প্রিয় কেউ মারা গেছে, তাই আমি উপরওয়ালার সিদ্ধান্তের উপর অভিমান করে 'নাস্তিক' হয়ে গেলাম! এতে কী সে ফিরে আসবে? বরং এমন দোয়া করাটাই কী ভাল নয় যে "আমার বাকি প্রিয় মানুষদের এত দ্রুত আমার কাছ থেকে কেড়ে নিও না।"

মূল প্রসঙ্গে ফেরা যাক। আমাদের দেশে একজন মানুষের একটি সন্তান মারা গেলেই, অথবা কোন দূর্ঘটনা ঘটলে, কিংবা মেয়ে সন্তান হলে আমরা দল বেঁধে 'ব্যাক বাইটিং' শুরু করে দেই, "নিশ্চই কিছু একটা করেছে....পাপের ফল!"
তাহলে নবীজির (সঃ) সাত সাত জন সন্তান কেন এত অল্প বয়সেই মারা গেল? কেন উনার বংশধর মেয়ের মাধ্যমেই প্রবাহিত হলো? উনারতো কোন পাপের রেকর্ড চোখে পরেনা!

একজন মানুষের ক্যানসার বা এইরকম ভয়াবহ কোন রোগ হলে আমরা অতি সহজেই বলে দেই, "পাপের শাস্তি!"
তাহলে আপনার প্রিয়জনদের অথবা আপনার নিজের যখন একই রোগ হয়, তখন কেন চুপ করে থাকেন?
মজার ব্যপার হলো, আমি এমন অনেককেই চিনি, যারা সারাজীবন মানুষের দূর্বলতা, মানুষের খুঁত ধরে কথা শুনিয়েছেন। মানুষের মনে আঘাত দিয়ে মজা লুটেছেন। পরবর্তী সময়ে একটা একটা করে সবকিছুই তাঁর জীবনে ঘটেছে। What goes around, comes around আর কি। তারপরেও তাঁরা শুধরান না। বিরতিহীনভাবে পরনিন্দা চালু থাকে।

যখন আমাদের প্রতিকূলে সব যেতে শুরু করে, মনে হয় আমাদের বুঝি আল্লাহ পছন্দ করেন না। অথচ একটু চোখ খুলে তাকালেই দেখতে পেতাম আমার চেয়েও অনেক খারাপ অবস্থায় লক্ষ লক্ষ মানুষ বেঁচে আছে। "সবকিছুতেই সফল" টার্মটা কেবল হিন্দি-বাংলা সিনেমার নায়কদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। বাস্তবে এর কোন অস্তিত্ব নেই।

"আমি এটা পেলাম না, ও ওটা পেয়ে গেছে!" - না ভেবে বরং এইটা ভাবুন, "আমার এটা আছে, ওর সেটা নেই!"
একজন চরম ঐশ্বর্য্যশালী ব্যক্তির সাথে মিশে দেখুন, পারিবারিক সুখ কী, তা তিনি জানেন না। টাকা পয়সার অভাব নেই জীবনে, কিন্তু স্ত্রী-পুত্র-সন্তানদের সাথে তাঁর সেইরকম বন্ধন নেই। আবার উল্টো দিকে, একজন সাধারণ মধ্যবিত্তের হয়তোবা টাকা পয়সা নেই, কিন্তু তিনি যা বলেন, তাই তাঁর সন্তানরা অতি শ্রদ্ধার সাথে পালন করে।
শফিক সাহেবের তিন সন্তানের ক্ষেত্রে যা ঘটেছে - আপনার সন্তানদের ভাগ্যে ঘটেনি বলে আল্লাহকে ধন্যবাদ জানান! এবং দোয়া করুন আপনার সন্তানের ক্ষেত্রে যেন তা না ঘটে।

আবার শফিক সাহেবের পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে বলতে গেলে, আমরা জানিনা আমাদের ভবিষ্যতে কী আছে। আল্লাহ বলেন, ভবিষ্যতের মালিক শুধুই তিনি। এবং তিনি অবশ্যই আমাদের জন্য যা ভাল, সেটাই করেন।
কে জানে, তাঁর একটা ছেলে বড় হয়ে কালা জাহাঙ্গীরকেও ছাড়িয়ে যেতে পারতো।

আপনার ছেলে দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী, এইটা বেশি কষ্টকর, নাকি আপনার ছেলে শৈশবেই মারা গেছে - এই অনুভূতি বেশি কষ্টকর? এরশাদ শিকদারের মা বেঁচে থাকলে তাঁকে প্রশ্নটা করা যেত।

কাজেই, অতীতে যা ঘটে গেছে, সেটা নিয়ে আফসোস করতে করতে নিজের বর্তমান ও ভবিষ্যতকে শুধু শুধু নষ্ট করা কেন?

আমি মৃত্যু দিয়ে উদাহরণ দিলেও, যেকোন রকমের বিচ্ছেদ কিংবা ক্ষতির জন্য উপরের কথাগুলো প্রযোজ্য।
Post Written by:মঞ্জুর চৌধুরী

0 comments
Labels: , ,

নোবেল পাওয়ার সহজতম উপায়

"এই মিয়া! তুই না বলেছিলি কুরআন শরীফ পড়লে বিপদ আপদ এড়ায় চলে? আমিতো এখন নিয়মিত কোরআন পাঠ করি। তাহলে আমি কেন রেগুলার বিপদে পড়ি?"
"তুই যে কোরআন পড়িস, সেটা কি শুধুই আরবীতে? নাকি বাংলায় অর্থ বুঝে?"
"আরবীতে। বাংলায় অর্থ বুঝে পড়তে অনেক সময় লাগে।"

হেসে বললাম, "এখানেইতো গন্ডগোল করে ফেলেছিস। কী পড়ছিস, কেন পড়ছিস কিছুই বুঝতে পারছিস না।"
"সেটা বিষয় না। বিষয় হচ্ছে, আমি ডেইলি নামাজ পড়ি। ডেইলি কোরআন শরীফ পড়ি। তারপরেও দুইদিন পরপর আমার জীবনে নানান বিপদ আসে কেন?"
"বন্ধু, আমি তোকে তিনটা গল্প শোনাবো। কোরআন শরীফ থেকে। গল্পগুলো হয়তো তুই জানিস, তারপরেও আজকে তোর মেমোরী রিফ্রেশ করার প্রয়োজন আছে।"
"গল্প শুনলে কি আমার বিপদ কাটবে?"

"অবশ্যই কাটবে। প্রথম গল্পটা হযরত ইব্রাহীমের(আঃ)। তিনি যখন ইসলাম প্রচার শুরু করলেন, তখন তাঁকে শাস্তি দেয়ার জন্য বিরাট একটা অগ্নিকুন্ড তৈরী করা হলো। তাঁকে সেই আগুনে ফেলা হবে। সেই আগুনের এতই তেজ ছিল যে তার অনেক অনেক উপর দিয়েও কোন পাখি উড়ে যেতে পারছিল না। কেমন বিপদ চিন্তা কর! এই সময়ে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) একটা কাজ করলেন, যেটাতে তাঁর বিপদ সাথে সাথে কেটে গেল।"
"কী কাজ?"

"সেটা বলছি। তার আগে হযরত ইউসুফের (আঃ) ঘটনা বলে নেই। তাঁকে তাঁর ভাইয়েরা মেরে ফেলার জন্য পরিত্যাক্ত কুয়ায় নিক্ষেপ করেছিল। সেখান থেকে তাঁকে ক্রীতদাস ব্যবসায়ীরা দাস হিসেবে বিক্রি করে দিয়েছিল। সেখান থেকে তিনি মিথ্যা অভিযোগে জেলে বন্দী হলেন। বিপদের পর বিপদ। তিনিও সেই কাজটিই করলেন, যেটা হযরত ইব্রাহীম (আঃ) করেছিলেন। এবং তাতে কাজ হলো। তাঁর বিপদও কেটে গেল!"
"কী সেটা? আয়াতুল কুরসী পড়েছিলেন?"

"বলছি দাঁড়া। আগে মূসার (আঃ) ঘটনাটাও বলে নেই। তিনি যখন তাঁর অনুসারীদের নিয়ে মিসর ছেড়ে যাচ্ছিলেন, ফিরাউনের সেনাবাহিনী তাঁদের হত্যা করতে পেছন থেকে তেড়ে আসছিল। সামনে সমুদ্র, পিছনে ফিরাউন - মূসার (আঃ) উম্মতরা বলল, 'হে মূসা (আঃ)! আজকে আমরা শেষ!' হযরত মূসাও (আঃ) তখন তাঁর পূর্ব পুরুষদের পন্থা অবলম্বন করলেন। এবং তাঁরও কাজ হলো।"
"তুই কী আদৌ বলবি কী করেছিলেন তাঁরা?"

"তাঁরা তিনজনই বিপদে ঘাবড়ে যাননি। মাথা ঠান্ডা রাখলেন। তাঁরা তাঁদের মালিকের উপর ভরসা রাখলেন। তিনিই তাঁদের বিপদ থেকে রক্ষা করলেন। বিপদে পড়াটা মোটেও চিন্তাজনক নয়, বরং বিপদে ভয় পাওয়াটাই বেশি বিপজ্জনক। তোর যদি বিশ্বাস থাকে তোকে আল্লাহ বিপদ থেকে উদ্ধার করবেন, তাহলে দেখবি, বিপদে তুই একদমই ভয় পাচ্ছিস না। ভয় না পেলেই দেখবি তুই ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করতে পারছিস। তাহলে দেখবি তোর খারাপ সময় কেটে যাচ্ছে।"

"এইসব শুনতে ও বলতে সহজ। আসল জীবনে অ্যাপ্লাই করা অনেক কঠিন।"
"তোকে তিন নবীর গল্প যখন বললাম, আমাদের নবীজির (সাঃ) ঘটনা কেন বাদ যাবে? তিনি যখন ইসলাম প্রচার শুরু করেন, তখন তাঁর আপনজনেরাই তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। তাঁকে হত্যা করতে লোক লাগায়। তিনি মদিনায় পালিয়ে যান। মদিনায় পালাবার পথে তিনি এবং তাঁর একমাত্র সঙ্গী আবুবকর (রাঃ) একটা গুহায় আশ্রয় নেন। কুরাইশরা তাঁদের অনুসরণ করে গুহা পর্যন্ত পৌছে গিয়েছিল। তাঁরা তাদের কথাবার্তা, চলা ফেরার শব্দ স্পষ্ট শুনছিলেন। হযরত আবুবকর (রাঃ) নবীজির (সাঃ) জীবন নিয়ে শঙ্কিত হলেন। নবীজি (সাঃ) তখন তাঁকে আশ্বস্ত করতে তাঁর পূর্বপুরুষদের মতই বললেন, 'সেই দুইজন ব্যক্তির কীই বা বিপদ হতে পারে যখন তাঁদের সাহায্যকারী তৃতীয়জন হিসেবে স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাল্লাহু ওয়াতাআলা পাশে থাকেন?'"
"আমীন।"

"এইজন্যই কোরআন শরীফ আরবীর সাথে সাথে বাংলায়ও পড়তে বলি। পড়লে দেখতি প্রতিটা নবী রাসূলদের কী কঠিন সময়ের মধ্য দিয়েই না আল্লাহ পার করেছেন! তাঁদের প্রত্যেককে নানান বিপদ আপদ দিয়ে তিনি পরীক্ষা করেছেন। তাঁরা প্রত্যেকেই কঠিন সময়ে ধৈর্য্য ধরেছেন। তাঁরা আমাদের মানুষদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম। যখন তাঁদেরকেই আল্লাহ কোন ছাড় দেননি, তুমি আমি সেখানে কী এমন রসগোল্লা? অবশ্যই আমাদের জীবনেও বিপদ আসবে, আমরাও অনেক কিছু পেয়ে হারাবো, আবার হারিয়ে হারিয়ে পাব। কিন্তু তাই বলে সামান্য টুকিটাকি বিপদে ঘাবড়ালে চলবে? সহজ কথা, যদি দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়, তবু হাসিমুখে যেন বলতে পারি, 'সেই দাসের কী ভয় যখন তার মালিক স্বয়ং তাঁর সাহায্যকারী!' কুরআনের অসংখ্য শিক্ষার মধ্যে এটি অন্যতম প্রধাণ শিক্ষা।"

"মজার ব্যপার কি জানিস? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও একই কথা লিখে গেছেন। 'বিপদে মোরে রক্ষা করো, এ নহে মোর প্রার্থণা, বিপদে আমি না যেন করি ভয়!' এই বাণী বিদেশীদের এতই পছন্দ হয়েছে যে তাঁকে নোবেল পর্যন্ত দিয়ে দিল।"
"হাহাহা। তাহলেই দেখ, তোকে নোবেল পাওয়ার ফর্মূলা দিয়ে দিলাম। ঠিকঠাক মত কুরআন হাদীস মেনে চল, দেখবি হয়তো কোন একদিন শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার পেয়ে গেছিস!"

Post Written by:মঞ্জুর চৌধুরী

0 comments
Labels: , ,

মন্দ সামাজিক প্রথা উদ্ভাবনকারীদের থেকে সাবধানঃ ১ম পর্ব

আমি আমার আজকের খুতবা একটা সাধারণ বিষয়ের মাধ্যমে শুরু করতে যাচ্ছি, আমি মনে করি আজকে এখানে যারা রয়েছি তারা সকলেই এই বিষয়টি বুঝি যে আমরা কম বেশি সামাজিক চাপ (সোসাইটাল প্রেশার) অনুভব করি। যখন আমরা সামাজিক চাপের কথা শুনি তখন আমরা সাধারণত মনে করি এটি অত্যন্ত বিরাট একটি বিষয়, কিন্তু এটি আমাদের জীবনের সুক্ষ্ণাতিসুক্ষ্ণ ঘটনার মধ্যেও রয়েছে। আপনাদের যাদের বাচ্চা রয়েছে তারা হয়তো অনেক সময় খেয়াল করেছেন যে আপনাদের বাচ্চাটি একটু বিশেষ রকমের পুতুল চাচ্ছে। অনেক সময় তারা এই পুতুল চায় কারণ হয়তো স্কুলের অন্য কোন বাচ্চার এইরকম একটি পুতুল রয়েছে। তারা ঐ জিনিসটিই কিনতে চায় যা অন্য লোকেদের রয়েছে। এটা হচ্ছে এক ধরনের সামাজিক চাপ। যখন আপনার বাচ্চা একটু বড় হয় তখন তারা বিশেষভাবে (সার্টেইন ওয়েতে) কাপড় পরতে চায় এবং এই বিশেষভাবে কাপড় পরার চিন্তাটা তার নিজস্ব মস্তিষ্ক থেকে আসেনি, এটা এসেছে হয়তো এমন কোন অনুষ্ঠান থেকে যা সে টিভিতে দেখেছে এবং এখান থেকে সে শিখেছে “এভাবেই কাপড় পরতে হবে”। তার মাথায় হয়তো এই জিনিসটি এসেছে এমন কারো কাছ থেকে যাকে সে স্কুলে দেখেছে বিশেষভাবে কাপড় পরে আসতে অথবা এই ধরনের অন্য কোন মাধ্যম হতে যেখান থেকে সে শিখে নিয়েছে এভাবেই কাপড় পরতে হবে। এই ধরণের জিনিসগুলোকে তখন সে নির্দিষ্ট ধরে নেয় (Defined)। তখন সে নির্দিষ্ট সেই পন্থায়ই কাপড় পরতে চায় বা নিজেকে সেইভাবেই উপস্থাপন করতে চায় অথবা সেই সুনির্দিষ্ট খেলনাটিই কিনতে চায়।

ছোট ছোট বাচ্চারা মোবাইল ফোন কিনতে চায়, তাই না? “তোমার ফোনের কি প্রয়োজন?’’ আমি জানি না, আমার বন্ধুর একটি ফোন রয়েছে, আমার কেন থাকবেনা?” পিতা-মাতারা হয়তো এই ধরনের কিছু যুক্তি শুনে থাকবেন, ‘’তার এই জিনিসটি রয়েছে, আমার কেন থাকবেনা?” যখন সে আরো কিছু বড় হয় তখন সেই সামাজিক চাপই ভিন্ন রূপে তার সামনে হাজির হয়। আপনি হয়তো আপনার গাড়ি আপনার অফিস কর্তৃক নির্ধারিত পার্কিং এর জায়গায় রেখেছেন সেই সময় দেখলেন যে আপনার অফিসের আরেক সহকর্মী আরো সুন্দর একটি গাড়ি সেই জায়গায় রাখলেন তখন আপনার মুখ থেকে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসলো “ওহ! আমিতো পিছনে পড়ে গেলাম, এই লোকটির গাড়ি কত সুন্দর! আপনি হয়তো আপনার বন্ধুর বাসায় বেড়াতে গেলেন, গিয়ে দেখলেন যে তার এলাকার পরিবেশ আপনার এলাকা থেকে উন্নত তখন আপনার মাথায় চিন্তা আসলো “আমি কখন এইরকম পরিবেশে থাকতে পারব?’’ আমাকে এইরকম পরিবেশে অথবা এর চেয়ে ভালো পরিবেশে থাকতে হবে। আমাকে ওর মত অবস্থানে পৌঁছাতে হবে’’।

আমরা সর্বদাই অন্যদের কি রয়েছে তার সাথে আমাদেরটার তুলনা করে চলেছি এবং সচেতনভাবে অথবা অবচেতনভাবে অন্যদের সাথে নিজেদের পাল্লা দেওয়ার চিন্তায় মগ্ন রয়েছি। এই জিনিসগুলোকেই আমি সামাজিক চাপ (সোসাইটাল প্রেশার) বলতে চেয়েছি; হোক সেটা আপনার পোশাক, অথবা আপনি যা কিনছেন তা, অথবা আপনি আপনার টাকা কোথায় ব্যয় করছেন তা অথবা আপনি কোন ধরনের ক্যারিয়ারের পেছনে ছুটছেন সেটি। অনেক সময় আমাদের পিতামাতাই তাদের সন্তানদের সামাজিক চাপের মধ্যে ফেলে দেন। তার ছেলেমেয়ের সেই যোগ্যতা, মেধা আছে কিনা সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করেই অনেক পিতা-মাতা বলে উঠেন, “তুমাকে অবশ্যই একজন ডাক্তার হতে হবে। কারণ ডাক্তার না হতে পারলে তুমি জীবনে ব্যর্থ হিসেবে গণ্য হবে’’। তাদের কথায় মনে হবে যে আমাদের চারপাশের যারা সফল মানুষ তারা সকলেই ডাক্তার আর এর পেছনে ছুটাই হল জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য। আমি বলছি না যে ডাক্তার হওয়া কোন খারাপ জিনিস, কিন্তু আপনার ছেলে-মেয়ে যদি ডাক্তার হয় নিজের অনিচ্ছা সত্ত্বেও, আমি কখনই তাদের পেশেন্ট(রোগী) হতে চাইব না। তাদের ডাক্তার হওয়ার পেছনের কারণ যদি শুধু থাকে তাদের মা-বাবার ইচ্ছা বা চাপ অথবা অন্য কোন সামাজিক চাপ আমি কখনই তাদের কাছে যেতে চাইবো না। এই ধরনের চাপ, এই ধরনের প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব আমাদের চারপাশে সর্বত্রই ছড়িয়ে রয়েছে। এই চাপগুলো কোন কোন ক্ষেত্রে এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে একজন মানুষ নিজেকে একজন দাস ব্যতীত ভিন্ন কিছু রূপে কল্পনা করতে পারে না। তারা আসলেই তখন আর স্বাধীন থাকে না।

এটা আসলেই হাস্যকর যে আমরা এমন এক সমাজে বাস করছি যেটি নিজেকে লিবারেল (স্বাধীন) ভেবে গর্ববোধ করে! তাই না? এটা ব্যক্তি-স্বাধীনতার জন্য গর্ববোধ করে, “আমি আমার যা ইচ্ছে তাই করতে পারব’’, “আমার যেরকম ইচ্ছা পোশাক পরতে পারব’’, “যেভাবে ইচ্ছা কথা বলতে পারব’’, “যেভাবে ইচ্ছা নিজেকে উপস্থাপন করতে পারব’’, “আমার টাকাকে যেখানে ইচ্ছা ব্যয় করতে পারব’’। এই সমাজের মানুষগুলো এবং এই সমাজ এই ধরনের জিনিসগুলো নিয়ে গর্ববোধ করে কিন্তু আপনি যদি একটি স্কুলে যান দেখবেন স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা প্রায় একইরকম ড্রেস পরে আছে (স্কুল ড্রেসের কথা বুঝানো হয়নি)। তারা সবাই প্রায় একইরকম ড্রেস পরে আছে। বিভিন্নরুচির শিশুদের সবার পোশাকও দেখবেন একইরকম। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় তারা সবাই একই ইউনিফর্ম পরে আছে। এমনকি তাদের সবার আচার-আচরণও একটি সুনির্দিষ্ট পন্থায় হতে হয় যা কিনা বেশিরভাগ মানুষের সাথেই খাপ খায়। আপনার আচরণ যদি বেশিরভাগ মানুষের সাথে না মিলে তাহলে আপনি হলেন একজন অচ্ছুৎ। তাই আমি যখন এই জিনিসগুলো নিয়ে চিন্তা করি আমি এর মাঝে কোন মুক্তি বা স্বাধীনতা খুঁজে পাই না। বরং আমি যা পাই তা হল সাংস্কৃতিক দাসত্ব বা দেউলিয়াপনা ( কালচারাল স্লেইভারি)। এই তরুণ অথবা তরুণীগুলো নিজেকে কিভাবে উপস্থাপন করবে অথবা কিভাবে কথা বলবে অথবা কীভাবে চলাফেরা করবে সেই সিদ্ধান্তটাও নিজে থেকে নিতে পারছে না। তাদের চারপাশে কি ঘটছে তার সাথে মিল রেখেই তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। অনেক সময় এটা ইচ্ছাকৃতভাবেই হচ্ছে , অনেক সময় তারা মেনেই নিচ্ছে যে এটাই হচ্ছে জীবন পরিচালনার শ্রেষ্ঠ উপায়, এটাই হল কাপড় পরার অথবা কথা বলার অথবা সময়কে কাজে লাগানোর উত্তম পন্থা, এই ধরনের গান-বাজনাতেই আমাকে আসক্ত হতে হবে অথবা এই ধরনের কাজগুলোই আমি করব।

আমি অনেক মুসলিম টিনেজারদের দেখেছি তারা যখন আমার সাথে দলবেঁধে দেখা করতে আসে তখন তাদেরকে দেখে এক দুর্ধর্ষ দল মনে হয়। কিন্তু তারা যখন আমার সাথে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলে তখন অনেকেই কেঁদে ফেলে। অনেকেই বলে “আমি এভাবে কাপড় পরতে চাইনি’’, “আমি এভাবে নিজেকে উপস্থাপিত করতে চাইনি, কিন্তু আমি যদি তা না করি আমাকে স্কুলে মার খেতে হবে’’। এটাই হল সাংস্কৃতিক দাসত্ব। এটা হল দাসত্বের একটা রূপ। এই সাংস্কৃতিক দাসত্বপনা শুধুমাত্র তরুণদের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, যেমন তারা কোন ধরনের সংগীত পছন্দ করছে, কোন ধরণের বিনোদনকে পছন্দ করছে, অথবা তারা কোন সুপরিচিত এথলেট বা সংগীতশিল্পীর মত হতে চায়; দাসত্বের এই রূপটা অধিক বয়সীদের মাঝেও ছড়িয়ে পড়েছে। তবে অধিক বয়সীদের জন্য এই সাংস্কৃতিক দাসত্বপনাটা অন্যভাবে হাজির হয়। আপনি দীর্ঘদিন ধরে আপনার সমাজে অথবা দেশে যে জিনিসগুলো দেখে আসছেন সে অনুসারেই একটি সুনির্দিষ্ট উপায়ে আপনার কাজগুলো করেন। আপনি সবসময় চান যে আপনার পরিবার ও বাচ্চারা ঐ একই উপায়ে কাজটি করুক, যদিও কাজটি খারাপ না ভালো তা আপনি কখনই ভেবে দেখেননি। এভাবেই আমরা কাজগুলো করি এবং ভাবি যে কাজটি এভাবেই করতে হবে। শেষ পর্যন্ত আমরা বিভিন্ন মাত্রায় দাসত্বপনায় ভোগা শুরু করি।

এই বিষয়কে সামনে রেখে আমি আপনাদের সম্মুখে সুরা আল-আ’রাফ এর একটি শক্তিশালী আয়াত তুলে ধরতে চাই যেখানে রাসূল (সাল্লাল্লাহু) ওয়া সাল্লাম এর ভূমিকা ও একটি দায়িত্ব সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। তবে আমার বক্তব্য এই আয়াতকে কেন্দ্র করে নয়। আমি আমার বক্তব্যকে সুরা বাকারার দুটি আয়াতকে কেন্দ্র করে সাজিয়েছি। তারপরও আমি সুরা আরাফের একটি আয়াতের মাধ্যমে এটি শুরু করতে যাচ্ছি। আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্ল আহলে কিতাবদের (ইহুদি, খ্রিস্টান) বিষয়ে আলোচনা করছেন যারা জানত যে তাদের কিতাবগুলোতে রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লামের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এর আগমনের ভবিষ্যতবাণী তাদের কিতাবগুলোতে রয়েছে এবং আল্লাহ এই আয়াতে তার সাক্ষ্য দিচ্ছে। আমি আয়াতের এই অংশটি এড়িয়ে যাব তবে আয়াতের যে অংশে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভূমিকা সম্পর্কে বলা হয়েছে সে অংশ সম্পর্কে আপনাদের কিছু বলব। আল্লাহ বলেন “يَأْمُرُهُمْ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَاهُمْ عَنِ الْمُنكَرِ وَيُحِلُّ لَهُمُ الطَّيِّبَاتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْخَبَائِثَ.. “তিনি তাদেরকে ভালো কাজের আদেশ দেন, তিনি তাদেরকে খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেন। তিনি তাদের জন্য ভালো ও পবিত্র কাজগুলোকে অনুমোদন করেন এবং নোংরা কাজকে তাদের জন্য নিষিদ্ধ করে দেন’’। এটি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি প্রধানতম দায়িত্ব যে তিনি আমাদেরকে ভালো কাজের আদেশ দেবেন, খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে বলতে বলবেন, ভালো কাজগুলোর দ্বার(পথ) আমাদের জন্য উন্মুক্ত করে দেবেন এবং খারাপ কাজগুলোর দ্বার আমাদের জন্য বন্ধ করে দেবেন। এরপর পরই আল্লাহ অত্যন্ত শক্তিশালী কিছু কথা বলেছেন, ““وَيَضَعُ عَنْهُمْ إِصْرَهُمْ وَالأَغْلالَ الَّتِي كَانَتْ عَلَيْهِم..” 


“এবং তাদের থেকে বোঝা সরিয়ে নেবেন”, এই অংশটা ভালো করে শুনেন। “এবং তাদের কাছ থেকে বোঝা সরিয়ে নেবেন”। إصْر” অর্থ হল ভারী বোঝা। এর আরেকটি অর্থ হল চুক্তি । তাই এই দুই অর্থকে যদি আমরা সমন্বয় করি তবে এই শব্দের অর্থ দাঁড়ায় “একটি ভারী বা বৃহৎ চুক্তি” এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসেছেন তাদের নিকট থেকে এই বোঝা সরিয়ে নিতে এবং সরিয়ে নিতে “الأَغْلال”কে, যার অর্থ হল শিকল যে শিকল দ্বারা হাত অথবা গলা পেঁচিয়ে বেঁধে ফেলা হয়। আপনার নিশ্চয়ই জানেন কোন ধরনের মানুষদের এভাবে শিকল দিয়ে পেঁচানো হয়। ঠিক? হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন কয়েদী বা কারাবন্দীদেকে এভাবে শিকল দিয়ে পেঁচানো হয়। একজন কারাবন্দীর হাতে ও গলায় শিকল দিয়ে বাঁধা হয়। আল্লাহ তা’আলা বলছেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসেছেন মানুষের বোঝা ও হাত ও গলার শিকল সরিয়ে নেওয়ার জন্য যে শিকল ও বোঝা কারণে সে দাস হয়ে রয়েছে। কি ধরনের শিকল তাহলে এগুলো? আসুন জেনে নিই।

ইসলামের প্রথম যুগের মানুষদের উদ্বেগের বিষয় সীমাবদ্ধ ছিল কোন জিনিস হালাল, কোনটি হারাম, কোন জিনিসটি আমাদের করতে হবে, আর কোন জিনিস থেকে বিরত থাকতে হবে এদের মধ্যে। এইগুলো ছিল তাদের কাছে মুখ্য বিষয়, অন্য সবকিছুই ছিল গৌণ বা অপ্রধান। কিন্তু যতই সময় সামনের দিকে এগুলো এই উম্মাহ, এই সমাজ এবং এতে বিদ্যমান চাপগুলো পরস্পরের সাথে মিশ্রিত হওয়া শুরু হল। এখন আপনাকে শুধু আল্লাহ কি বলছেন তা মেনে চললেই হচ্ছে না, আপনার সমাজ কি বলছে তাও মানতে হচ্ছে। আপনার উপর আরোপিত হচ্ছে অধিক শিকল, আরোপিত হচ্ছে অধিক বোঝা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসেছেনই এই সকল বোঝা ও সকল শিকল সরিয়ে নেওয়ার জন্য। আমরা মনে করি সামাজিক চাপকে মেনে নিলে আমাদের জীবনযাত্রা সহজ হয়, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটা আমাদের জীবনকে আরো কঠিন করে তুলে। মানুষ কোন সুনির্দিষ্ট প্রথা অনুসারে চললে তার জীবন কীভাবে কঠিন হয়ে তার একটি উদাহরণ এখন আমি আপনাদের সম্মুখে উপস্থাপন করব।

আমি পাকিস্তানে জন্ম গ্রহণ করেছি এবং আমি জানি এটা পাকিস্তানের অনেক বড় একটা সমস্যা। আমাদের দেশে বিবাহ অনুষ্ঠানে অনেক বেশি টাকা খরচ করানো হয়। বিবাহগুলো হয় অত্যধিক ব্যয়বহুল যদিও অনেক পরিবারের পক্ষে এতো খরচ বহন করা সম্ভব হয় না। পরিবারগুলো এইরকম বিবাহ অনুষ্ঠান আয়োজন করতে সক্ষম না সত্ত্বেও শুধুমাত্র সামাজিক চাপের কাছে মাথা নত করে এই ধরনের বিবাহের আয়োজন করে। আপনি যদি তাদের জিজ্ঞেস করেন আপনারা এগুলো কেন করছেন?, আপনারা কেনো এতো টাকা ঋণ করে এমন ব্যয়বহুল বিবাহের আয়োজন করছেন? তখন তারা কি বলে জানেন? তারা বলবে আমার কাজিন তার বিয়েতে এতো টাকা খরচ করেছে, তার বিয়েতে বিরাট অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে; আমি যদি না করি তাহলে আমি ওর কাছে মুখ দেখাবো কি করে। আমি আমার আত্মীয়, প্রতিবেশীদের কাছে মুখ দেখাবো কি করে? আপনি কি আমাকে শুধু মাসজিদে গিয়েই বিয়ে করতে বলেন? ইত্যাদি ইত্যাদি। সমাজের কাছে মুখ দেখাতে হবে! এটা এ জন্য নয় যে আপনাকে আপনার দ্বীন এই ধরনের কাজ করার কথা বলছে। তাহলে কে বলেছে? সমাজ, সমাজের মানুষ। চিন্তা করুন একটি তরুণ দম্পতি নতুন বিয়ে করেছে এবং তাদের বিবাহ-উত্তর জীবন শুরু করতে হচ্ছে বিরাট ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে। আসলে তরুণ হলে তারা ভাগ্যবানই, কারণ আমি যে জায়গা থেকে এসেছি সেখানে সাধারণত তাদেরকে ত্রিশের আগে বিবাহ দেওয়া হয় না। তারা এমন একটা অনুষ্ঠানের জন্য এই ঋণের বোঝা মাথায় নিয়েছে যে অনুষ্ঠান তিনদিন পর কেউ মনে রাখবে না। সমাজের মানুষের অযৌক্তিক কিছু চাহিদা মেটানো ছাড়া তারা এই ধরনের কর্মকাণ্ড আর কিছুর জন্যই হচ্ছে না। “মানুষ কি বলবে। উর্দুতে “লোক কেয়া কাহেঙ্গে’’। “মানুষ কি বলবে যদি আমরা এটা না করি’’। কত উদ্বেগ মানুষ বলবে এই সম্পর্কে! এই ধরনের প্রবণতা আপনাকে শুধু সমস্যাতেই নিমজ্জিত করবে।

অপরদিকে দেখুন আল্লাহ কি বলছেন

"يُريْد اللهُ اَنْ يُخَفِّفَ عَنْكُمْ,

“আল্লাহ আপনার বোঝা হালকা করতে চান” দীনের উদ্দেশ্যও তাই। আপনি আপনার চারপাশে এমন লোকদের পাবেন যারা তাদের সামাজিক প্রথার দাস হয়ে রয়েছে, দাস হয়ে রয়েছে সামাজিক চাপের। এই ধরনের লোকজনই ইসলাম সম্পর্কে বলে যে ইসলাম হল খুবই কঠিন, কঠোর। কিন্তু মজার কথা এই যে তারা যদি ইসলামের একটি ছোট মূলনীতিও মেনে চলত তাদের জীবন হত অনেক সহজ। দ্বীন তাদের জীবনকে কঠিন তো করতই না, বরং অনেক সহজ করে দিত। তারা যে জিনিসগুলোকে অনুসরণ করছে সেগুলো তাদের জীবনকে একটার পর একটা সমস্যায়ই নিমজ্জিত করছে কেবল। এগুলো তাদের জীবনকে কঠিন করে তুলছে, যদিও তারা তা বুঝতে পারছে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসেছেন তাদের কাছ থেকে এই বোঝাগুলো তুলে নেবার জন্যই।

এই বোঝা এবং শিকলের আরো একটি অর্থ রয়েছে এই আয়াতে। আমরা যখন একটা নির্দিষ্ট সামাজিক প্রথা অনুসরণ করি তখন আমাদের শিশুরাও কিন্ত আমাদের কাছ থেকে এই জিনিসগুলো শিখে যেমন করে আমরা আমাদের পিতামাতার কাছ থেকে এগুলো শিখেছিলাম। এভাবে যখন আমরা বিচার দিবসে মহান আল্লাহ তা’লার সামনে দাঁড়াবো তখন আমাদের সামনে থাকবে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের লোকেরা যারা শুধুমাত্র সামাজিক চাপের ফলে আল্লাহর আদেশ অমান্য করেছে এবং তাদের সাথে আমাদেরকেও শিকল দিয়ে বেঁধে ফেলা হবে। আমাদেরকেও তাদের সাথে শিকল দিয়ে বেঁধে ফেলা হবে, তাদের বোঝা হবে আমাদের বোঝা কারণ আমরাই সেই প্রথা বা ট্রেন্ডটি প্রতিষ্ঠা করেছি, আমরাই তাদের সেই পথে পরিচালিত করেছি। তারা পৃথিবীতে যা করেছে তার জন্য আমাদেরকেও জবাব দিতে হবে। তাদেরকে তাদের কাজের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। কিন্তু আমাদের জবাবদিহি করতে আমাদের নিজেদের কাজের জন্য ও তাদের সবার কাজের জন্য। সুবহানাল্লাহ! আসলেই এটা অনেক বড় সমস্যা! এই কারণে ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম একজন সচেতন পিতা হিসেবে দোয়া করেছিলেন এবং আমাদেরকেও তা শিখিয়ে দিয়েছেন- وَجَعَلْنا لِلْمُتَّقينَ اِماما’’ “মুত্তাকিদের মধ্যে থেকে আমাদের জন্য ইমাম বানিয়ে দাও’’। কারণ বিচার দিবসে আমরা এমন মানুষের সাথে শিকলবদ্ধ হতে চাই না যারা বিপথগামী হয়ে গেছে, যারা আমাদের দুর্ভাগ্যের অতল গহ্বরে নিমজ্জিত করবে।

অনুবাদ করেছেন – নুমান আহমেদ


0 comments
Labels: , ,

মানসিক শান্তির সন্ধানে

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

[উস্তাদ নুমান আলী খানের কুর'আনিক জেমস (Quranic Gems) সিরিজের ঊনত্রিশতম পর্বের বাংলা ভাবার্থ। দ্রুত অনুবাদ করার কারণে কিছু ভুল-ত্রুটি থাকাটা স্বাভাবিক। আমার এই অনিচ্ছাকৃত ভুল আশা করি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। যা কিছু কল্যাণকর তার সম্পূর্ণই আল্লাহ্‌র তরফ থেকে, আর যা কিছু ভুল সেটি সম্পূর্ণ আমার। আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিন আমার সেই ভুলগুলো মার্জনা করুন। তিনি পরম ক্ষমাশীল, অসীম দয়ালু। আল্লাহ্‌তালা আমাদের সকলকে কুর'আনের আয়াতসমূহ বুঝে পড়ার তৌফিক দান করুন এবং সঠিক মর্মার্থ বুঝে সেই ভাবে জীবনকে পরিচালিত করার মত হিকমাহ, সাহস ও ধৈর্য দিক। আমিন।]

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্‌র; যিনি এই বিশ্বগজতের প্রতিপালক। সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক তাঁর বার্তাবাহক মুহাম্মদ (সাঃ), তাঁর পরিবার-পরিজন ও সঙ্গী-সাথীদের প্রতি।

আল্লাহ্‌ বলেনঃ "প্রকৃতপক্ষে তারাই শান্তি ও নিরাপত্তার অধিকারী এবং তারাই সঠিক পথে পরিচালিত, যারা নিজেদের ঈমানকে যুলমের সাথে (শিরক এর সাথে) মিশ্রিত করেনি।" (সূরা ৬: আল-আন’আম, আয়াত:৮২)

এই আয়াতটির পূর্বের আয়াতের সাথে সম্পৃক্ততা রেখে আমরা ঐ সম্প্রদায়ের মাঝে তুলনা করব যে কারা শান্তি অর্জন করবে।

আজ আমরা তাদের নিয়ে আলোচনা করব যারা জীবনে শান্তি অর্জন করবে, অভ্যন্তরীণ শান্তি, আত্মার শান্তি। আমাদেরকে জীবনে অনেক কিছুর মধ্য দিয়ে যেতে হয় - আবেগ, ক্লান্তি, অবসাদ, হতাশা, দুঃখ কষ্ট রাগ দুশ্চিন্তা......

এতসবের মাঝে থেকে কীভাবে আমরা শান্তি অর্জন করব?

এই আয়াত থেকে তা শিখব।

বিশ্বাস এবং শান্তির মাঝে সম্পর্ক রয়েছে, মানসিক এবং শারীরিক শান্তি।

যারা সত্যিকার অর্থে ঈমান এনেছে, বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং তাদের সেই ঈমানের ছদ্মবেশে কোন খারাপ কাজ করেনি তাদের জন্যই আছে শান্তি। (ঈমান অর্থ বিশ্বাস স্থাপন, ছোটবেলা থেকে স্কুলের ধর্ম বইয়ে পড়ে আসছি ঈমান আনা মানে আল্লাহ্‌র উপর বিশ্বাস স্থাপন এবং যেহেতু আমরা জন্মগত ভাবে মুসলিম এবং আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস করি তাই আমরা মনে করি আমরা ঈমান এনেছি। ঈমান আনা বলতে এখানে বোঝানো হয়েছে আল্লাহ্‌র উপর বিশ্বাস স্থাপন করে, আল্লাহ্‌র শাস্তির ভয় করে, আল্লাহর উপর ভরসা করে, আল্লাহ্‌ আমাদের যা বিধান দিয়েছেন তাই আমাদের জন্য সর্বোত্তম - এই কথাকে মনেপ্রাণে আঁকড়ে ধরে, এই কথার গভীরতা উপলব্ধি করে, আল্লাহ্‌র জন্য আল্লাহ্‌র নাম নিয়ে শরীয়াতের পথে আসা, আল্লাহ্‌ যা নিষেধ করেছেন তা থেকে দূরে সরে আসা।)

খারাপ কাজ শুধুমাত্র পৃথিবীর বুকে বিশৃংখলা অথবা যার সাথে অবিচার বা অত্যাচার করা হল শুধু তাঁর দুর্ভোগ ডেকে আনে না, যে অনাচার করে তাঁর মানসিক শান্তিও নষ্ট করে।

আল্লাহ্‌ চমৎকারভাবে এই আয়াতে আমাদের তা বলে দিলেন।

এবং সাথে আল্লাহ্‌ এটাও বলেছেন যে যারা নিজেদের অপরাধ থেকে দূরে রাখতে পারে, কারো প্রতি অবিচার-অত্যাচার করে না, শান্তি তাদেরই প্রাপ্য, তারাই শান্তি অর্জন করবে। সুবহানাল্লাহ!

যুদ্ধ থেকে আসা সৈনিক, যারা যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখেছে, নিজেরা তাতে অংশ নিয়েছে, অথবা তারই কোনো আপনজন যুদ্ধের পাশবিকতায় অংশ নিয়েছে এবং সে তার নিরব সাক্ষী অধিকাংশ সময় তারা হয় আত্মহত্যা করে, অথবা দুঃস্বপ্ন দেখে। তারা ঘুমাতে পারে না, কারো সাথে সুস্থ-স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে না।

শুধুমাত্র শারীরিক দুর্ভোগ নয়, যুদ্ধের কারণে তাদের ভেতর যে মানসিক ঝড় বয়ে যায় যুদ্ধে তারা যে বর্বরতা, নৃশংসতা করেছে বা কর্তৃপক্ষের চাপে করতে বাধ্য হয়েছে তা তাদের মনকে ধ্বংস করে দেয়। তাদের আর কোন মানসিক শান্তি থাকে না, এই অবস্থায় তারা আর বেঁচে থাকতে পারে না।

অন্যায়-অপরাধ মানে যারা শুধু সন্ত্রাসী তারা নয়, বিনোদন জগৎ, সংগীতের জগৎ, সেলেব্রেটি, যেকোনো ব্যক্তি যার এসব ইন্ড্রাস্টির সাথে সম্পৃক্ততা আছে যা পাপাচার করে, তাদের সত্যিকার অর্থে মাদকের উপর নির্ভর করে জীবনযাপন করতে হয় সুস্থিরতার জন্য। নতুবা তারা নিজের এবং অন্যদের মাঝে ত্রাস সৃষ্টি করে। মানিয়ে চলার জন্য তারা বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে চলে যায়।

আল্লাহ্‌ বলেন, যারা আল্লাহ্‌র উপর সত্যিই বিশ্বাস স্থাপন করে, তারা আল্লাহ্‌র রাস্তায় এমন শান্তি খুঁজে পায় যা তারা কোন ক্লাব, পার্টি, ড্রাগ, অ্যালকোহল কোন কিছুতে পায়না।

বিনোদনের জন্য আমরা মুভির পর মুভি, মুভির পর মুভি দেখে যাই, কিন্তু এটি আসলে আমাদের ভিতরকে তছনছ করে দেয়, এরপর আমরা যা করি তা হল ওই শূন্যস্থান পূর্ণ করার জন্য অন্য কোন বিনোদনের আশ্রয় খুঁজি আর এভাবেই এ প্রক্রিয়া থেমে থাকে না ।

একসময় আমরা এসব বাদ দেবার সিধান্ত নেই এবং মসজিদে যাই এবং আমাদের সেই কাঙ্ক্ষিত শান্তি খুঁজে পাই। অনেক দিন এই শান্তি থেকে দূরে থাকার কারণে আমরা টের পাই এতদিন আমাদের ভিতর কী বিষাক্ত ধারা বয়ে চলছিল আমাদের আত্মার মাঝ দিয়ে। এখন এই বিষ বের হয়ে যায় পবিত্র কুরআনের সুমধুর শব্দে, সবার সাথে একটুখানি মাটিতে হাত রেখে নিজেকে সমর্পণ করার মাধ্যমে, একটু দেখি চিন্তা করে এই কয়েক মুহূর্ত আমাদের মাঝে কি আলোড়ন সৃষ্টি করে। অনেকদিন ধরে বাসি-পচা খাবার খেতে থাকলে হঠাৎ করে স্বাস্থ্যকর খাবার মুখে রুচিকর লাগে না। তেমনি অনেক দিন পর মসজিদে গেলে মন বসে না, মনে হয় কতক্ষণে বের হব। বিশেষ করে তরুণ সমাজ, এরা হয় মোবাইল অথবা অন্য কোন ডিভাইস নিয়ে আছে অথবা এট সেটা করছে, কারো মাঝে কোনো শান্তি নেই। ঈমান সেই শান্তিটাই আমাদের দেয়, শান্তি, সুস্থিরতা। আমরা আর কোন তাড়াহুড়া, বিরক্তির মাঝে থাকি না। আমরা এতটাই শান্তির মাঝে থাকি যে আমাদের আর কোন চোখের, কানের, ব্রেনের জন্য আলদা করে শান্তির পিছে ছোটা লাগে না। আমরা অনাবিল শান্তির মাঝে বিরাজ করি, মানসিক শান্তি। সুবহানাল্লাহ!

কিন্তু কোন ওয়াদা ছাড়া এই শান্তি চলে যেতে পারে। তাই আল্লাহ্‌ বলেন, আল্লাহ্‌র প্রতি ভালো কাজের ওয়াদা করতে, তাহলে এই শান্তি বিরাজমান থাকবে।

অন্যত্র আল্লাহ্‌ বলেন, আল্লাহ্‌র রাস্তায় থাকা মানুষের হৃদয় শান্তিতে ভরপুর থাকে।

জগতের প্রত্যেকটি মানুষ শান্তির পিছে ছোটে, মানসিক শান্তির সন্ধানে থাকে। ‘কিছু একটা’ তাঁকে সার্বক্ষণিক যন্ত্রণা দেয়। সে ভাবে আমি যদি এটা পেতাম তাহলে আমি সুখি হতাম। যদি এই পরিমাণ টাকা থাকত, যদি ঐ মেয়ে আমার জীবনে থাকত, যদি আমি এই বাড়িটা থাকত, যদি আমার এই গাড়িটা থাকত, আমার ওই ডিভাইস থাকত ভিডিও গেমস্...... তাহলে আমি সুখি হতাম। কিন্তু কতক্ষণ সেই সুখ থাকে? একসময় আমাদের আর সেটা ভালো লাগে না এবং আমরা নতুন কিছুর পিছে পড়ি, আমরা সন্তুষ্ট হই না। সন্তুষ্টি আছে এই আয়াতে যা আল্লাহ্‌ আমাদের শিক্ষা দেন। এই আয়াত ইব্রাহীম (আঃ) এর সময়ে অবতীর্ণ হলেও এই আয়াত কালজয়ী, এই সময়ের জন্যও প্রযোজ্য। সুবহানাল্লাহ।

"যারা সত্যিকার অর্থে ঈমান এনেছে, বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং তাদের সেই ঈমানের ছদ্মবেশে কোন খারাপ কাজ করেনি তাদের জন্যই আছে শান্তি।"

আমরা ঈমান এনে মুসলিম হলেই শান্তি খুঁজে পাব না। হয়ত আমরা আমাদের বিশ্বাসটাকে অন্যায় দ্বারা প্রতিস্থাপিত করে দিয়েছি, আমাদের এই অপরাধ করা বন্ধ করতে হবে, জীবন থেকে এসব অনাচার বাদ দিতে হবে এবং আল্লাহ্‌ ইন-শা-আল্লাহ আমাদের সেই কাঙ্ক্ষিত শান্তি প্রদান করবেন। আল্লাহ্‌ আমাদের আত্মাকে শান্তি প্রদান করুন এবং আমাদের প্রকৃত মুমিন বান্দায় পরিণত করুন। আমিন।

--- :: --- :: ---

অনুবাদ করেছেনঃ ফারিহা ফারি

নোটটির লিঙ্কঃ http://goo.gl/hRkwj3


ইউটিউব লিঙ্কঃ
https://www.youtube.com/watch?v=lQ-MHlRHdxw&feature=youtu.be

0 comments
Labels: , ,

Bangla Dubbed || কুরআনের ভাষাগত মু'জিযা - মক্কা নাকি বাক্কা?

আরেকটি চমৎকার তুলনা হতে পারেঃ মক্কা আর বাক্কা।

মক্কার এই দুটি নাম কি আগে কখনো শুনেছেন আপনারা? দুটি নামই একবার করে এসেছে কুরআনে। কুরআনে আল্লাহ আযযা ওয়া জাল মক্কা শব্দটি ব্যবহার করেছেন সূরা মুহাম্মাদে। আবার সূরা আল ইমরানে ব্যবহার করেছেন বাক্কা শব্দটি।ইতিহাসগতভাবে শব্দ দুটি মক্কা শহরটিরই ভিন্ন দুটি নাম মাত্র। অনেকে বলে থাকেন যে বাক্কা ছিল প্রাথমিক সময়ের নাম আর মক্কা পরবর্তী সময়ের।

তবে ভাষাতাত্ত্বিকদের মত এই যে, মক্কা হল শহরটির মূলনাম আর বাক্কা হল এর ডাকনাম। বাক্কা শব্দটি এসেছে আরবি ক্রিয়াপদ “বাক” থেকে, যার অর্থ “জনাকীর্ণতা”। প্রচুর লোকের সমাগমে ভিড় সৃষ্টি হওয়া, আধুনিক আরবিতে যাকে বলা হয়ে থাকে “আল-ইজদিহাম”।

এখন দেখা যাক, সূরা ইমরানে বাক্কা শব্দটি ব্যবহার হয়েছে, যেখানে শব্দের শুরুতে উপস্থিত “বা” ধাতুটির উৎপত্তি “ভিড়” শব্দটি থেকে। এখানে যেই আয়াতগুলো রয়েছে সেগুলো মূলত হজ্জের আয়াত - “ওয়া লিল্লাহি আলান নাসি হিজ্জুল বায়িত”। হজ্জ শব্দটির সাথে কীসের চিন্তা মাথায় আসে? লোক সমাগম, ভিড়। তাহলে হজ্জের প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে উপযুক্ত শব্দ কোনটি? বাক্কা। কিন্তু সূরা মুহাম্মাদের উল্লেখিত অংশে হজ্জের কোন কথাই নেই, তাই সেখানে এসেছে মূল শব্দটি - মক্কা। সুবহান আল্লাহ!

আমাদের জন্য মক্কা, বাক্কা তো একই শব্দ, একটার জায়গায় আরেকটা তো ব্যবহার করাই যায়। শব্দ দুটি একই জিনিসের দুটি ভিন্ন নাম বটে, তবে কুরআনে শব্দ দুটির ভিন্ন প্রয়োগ এর পুঙ্খানুপুঙ্খতার মানদণ্ডে যে মাত্রা যোগ করেছে তা কুরআনের অপ্রতিদ্বন্দ্বীটার আরেকটি প্রমাণ ছাড়া আর কিছুই নয়। মানুষ যখন কথা বলে তখন এরকম পরিপূর্ণ সূক্ষ্মতা বজায় রাখতে পারে না। এভাবে সে চিন্তাই করতে পারে না।


0 comments
Labels: , ,

Bangla Dubbed || কুর'আনের ভাষাগত মু'জিযা - ইয়াসরিব নাকি মদীনা?

স্ক্রীনে দেখানো দুটো নামই আপনারা জানেন, ইয়াথরিব এবং মদীনা। দুটোই কি একই শহরের নাম? অবশ্যই।

কুরআন মদীনা শহরের কথা বলার সময় "মদীনা" শব্দটি বহুবার ব্যবহার করেছে। স্ক্রীনে আপনাদের জন্য অন্তত সেরকম তিনটি আয়াত দেখানো হয়েছে। কিন্তু কুরআন মাত্র একবার "ইয়াথরিব" শব্দটি ব্যবহার করেছে। শুধুমাত্র সুরা আহযাবে, ব্যস! কুরআনের অন্য কোথাও "ইয়াথরিব" শব্দটি ব্যবহার করা হয় নি। দুটোই কিন্তু মদীনারই নাম।

তর্কের খাতিরে ধরে নেয়া যেতে পারে, দুটোই তো একই জিনিস, তাই না? তাহলে আমি কেন ইয়াথরিব শব্দটি বদলে মদীনা লিখতে পারি না? অথবা মদীনার না বলে ইয়াথরিব বলি না? তোমরা বারবার বল, কুরআনের শব্দচয়ন পুরোপুরি পারফেক্ট। তোমরা তো জানই ইয়াথরিব আর মদীনা দুটোই একই জিনিস। তাহলে কেন ইয়াথরিবের বদলে মদীনা কিংবা মদীনার বদলে ইয়াথরিব ব্যবহার করা যাবে না? কতটুকুই আর হেরফের হবে তাতে? এই সামান্য পরিবর্তনে কি আসে যায়?

এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে আমাদের ইতিহাসের দিকে একটু তাকাতে হবে। রাসুল (স) মদীনায় আসার আগে মদীনার নাম কি ছিল? ইয়াথরিব। রাসুল (স) আসার পর তাকে যখন সবাই একবাক্যে নেতা বলে ঘোষণা দিল, তখন শহরটার নাম হল “মদীনাতুন্নাবী” বা “নবীর (স) শহর”। সংক্ষেপে “শহর”। তাহলে মদীনা শব্দটি কিসের সংক্ষিপ্ত রূপ? “নবীর (স) শহর” শব্দটির। আর আসল নাম “ইয়াথরিব”। অথবা আপনারা এভাবেও ভাবতে পারেন যে, রাসুল (স) আসার আগে শহরটির নাম ছিল ইয়াথরিব, আর উনি আসার পর এর নাম হল মদীনা।

মজার ব্যাপার হল, সুরাতুল আহযাব, সুরা নম্বর ৩৩ এ আসলে মদীনা এবং ইয়াথরিব, দুটোই ব্যবহার করা হয়েছে, একই সুরাতে। আরও মজার ব্যাপার হল, সুরাতুল আহযাব একটি মাদানী সুরা। মাদানী সুরার ব্যাপারে আমরা কি জানি? রাসুল (স) সেসময় কোথায় ছিলেন? মদীনাতে। তাহলে তখন শহরটাকে কি বলা হত? মদীনা, কিন্তু এখানে আমরা “ইয়াথরিব” শব্দটি দেখতে পাচ্ছি। ধাঁধাঁটা ধরতে পারছেন তো? ব্যাপারটা হল, মদীনা শব্দটি “মদীনাতুন্নাবী” বা “নবীর (স) শহর” এর সংক্ষিপ্ত রূপ। যখন মদীনাকে শত্রুরা চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলল, তখন কিছু ইহুদী গোত্র একসাথ হল।

তারা এসে উহুদ যুদ্ধের পরাজয়ের পর কুরাইশদের বোঝাল মদীনার দিকে দল বেঁধে আবার আসতে। তারা ছোট ছোট গোত্রগুলোর সাথে জোট বেঁধে বিশাল এক সেনাবাহিনী তৈরি করে মদীনাকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলল। প্রায় সপ্তাখানেক ধরে মদীনা শহরকে একরকম বন্দী করে রাখা হল।
অবস্থা আরো খারাপের দিকে গেল ভেতরে থাকা কিছু মানুষের জন্য, ভেতরে কিছু মানুষ ছিল যারা শুধু নামেই মুসলিম ছিল, কিন্তু তাদের হৃদয়ে ইসলাম ছিল না। তাদেরকে কি বলা হয়? মুনাফিক বা ভন্ড, তাই না?

রাসুল (স) আসার আগে মুনাফিকরা কোন শহরের নেতা ছিল? তারা ছিল ইয়াথরিবের নেতা। রাসুল (স) আসার পর তারা তাদের নেতৃত্ব ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল। কারণ স্বভাবতই মুসলিমদের নেতা কে? মুহাম্মদ (স)।

এখন যখন মদীনাকে কাফেররা চারদিক থেকে ঘিরে ফেলেছে, তখন তারা এটার সুযোগ নিয়ে বলল, দেখ সবাই, মুহাম্মদের নেতৃত্ব আমাদের কোথায় নিয়ে এসেছে। তাই তারা বলল, "ওয়া ক্বলু, ইয়া আহলা ইয়াথরিব লা মুক্বামা লাকুম"। মানে হল, "হে ইয়াথরিবের লোকজন, তোমাদের যাওয়ার আর কোন জায়গা বাকি নেই"। "ফারজি'য়ু" "চল আমরা ফিরে যাই"। কিসে ফিরে যাই? শহরটাকে আবার ইয়াথরিব করে ফেলি। রাসুল (স) নেতৃত্বে আসার আগে যেমনটা ছিল, ঠিক তেমনটায়।

আপনারা কি বুঝতে পারছেন যে "ইয়াথরিব" শব্দটা ব্যবহার করে তারা কি প্রকাশ করল? তাদের আসল আনুগত্য কাদের প্রতি। কারণ, যদি তারা রাসুল (স) কে তাদের নেতা বলে আসলেই মেনে নিত, তাহলে তারা কোন শব্দটা ব্যবহার করত? মদীনা। তাই, শুধুমাত্র এই একটা শব্দ ব্যবহার করে, আল্লাহ সেই শব্দটা ধরেছেন, কুরআনে সেটাকে প্রকাশ করেছেন এবং আমরা সেখান থেকে তাদের আসল উদ্দেশ্য কি সেটা বুঝতে পারি, যেটা হল, "একদিন শহরটা আবার ইয়াথরিব হয়ে যাবে, মদীনা আর থাকবে না।"

এই ব্যাপারটা আরো স্পষ্ট আর পরিষ্কার হয়, যখন আমরা অন্য আরেকটি সুরায় যাই। সুরাতুল মুনাফিকুন, যে সুরাতে কাদের কথা বলা হয়েছে? মুনাফিকদের, ভন্ডদের। মুনাফিকদের নিয়ে সুরাটা অনেক ইন্টারেস্টিং। সুরাটা শুরু হয়েছে মুনাফিকদের রাসুল (স) এর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা দিয়ে। মুনাফিকরা তাদের স্বভাব থেকে সরে গিয়ে রাসুল (স) এর প্রতিদ আনুগত্য দেখানোর জন্য বলত, "ইযা যাকাল মুনাফিকুন কালু নাশশাহাদা ইন্না কালা রাসূলুল্লাহ" - "মুনাফিকরা যখন আপনার কাছে আসে, তারা বলে, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি, কোন সন্দেহ নেই আপনিই নিশ্চিত ভাবে আল্লাহর রাসুল"।

মুসলমানদের রাসুল (স) কে প্রতিবার এটা বলতে হত না, শুধুমাত্র মুসলমান হবার সময় বললেই হত, তাই না? যখন সে ইসলাম গ্রহণ করে শুধু তখন সেটা বলা দরকার। আর বাকী সময়গুলোতে দরকার নেই কারণ, সে জানে যে তিনি আল্লাহর রাসুল।

কিন্তু আপনি যদি সেটা না ভেবে আপনার মনে অন্য কিছু থাকে, তখন আপনি সেটাকে পূরণ করা চেষ্টা করবেন, ঠিক একটা বাচ্চা যেভাবে বলে, আমি কিন্তু করি নি। আর শুনে আপনি বলেন, তুমি কি কর নি? এটা আসলে অপরাধবোধ থেকে বলা। তাদের অপরাধী বিবেক তাদেরকে বারবার বলতে বাধ্য করে, "আমরা আসলেই বিশ্বাস করি যে আপনি আল্লাহর রাসুল।" এই সুরাতে তারা বাইরে বাইরে রাসুল (স) এর প্রতি আনুগত্য দেখানোর জন্য বলেছে, "লা ইররাযানা ইলাল মাদিনাহ লা ইয়ুখরি জান্নাহ আজ্জু মিনাল আজাল" - "তারা বলেছে, আমরা যখন "মদীনা"তে ফিরে যাব।" কারণ তারা তাদের আনুগত্য দেখানোর চেষ্টা করছিল।

কিন্তু সুরাতুল আহযাবে যখন রাসুল (স) এর বিপদের সময় আসল, তাদের মুখ থেকে ভুল শব্দটা বেরিয়ে আসল, আর তাদের আসল আনুগত্য কাদের প্রতি, সেটা প্রকাশ পেয়ে গেল।


0 comments
Labels: , ,

মূসা (আঃ) এর নাম, একটি মৃত ভাষা ও কুর'আনের মু’জিযা

মূসা (আঃ) এর নাম, একটি মৃত ভাষা ও কুর'আনের মু’জিযা

মূসাকে হিব্রু ভাষায় 'মুশেহ' বলা হয়... মূসা বলা হয় না। এই মুশেহ এর প্রথমাংশ ‘মু’ এর অর্থ হল আরবী ‘মা’(=পানি) এর মত। মূসা অর্থ পানি, আর এক্ষেত্রে ইহুদিরা বলে মূসা শব্দটি হিব্রু।

আমি বলি মূসা শব্দটি হিব্রু নয়। এটা হিব্রু শব্দ হতে পারে না। অথচ ইহুদিরা এটাকে হিব্রুই বলে। আমি বলিঃ

<> বলুন তিনি কোথায় জন্মগ্রহন করেছিলেন?
- মিশরে।
<> তিনি কোথায় বড় হয়েছিলেন?
- ফিরাউনের প্রাসাদে।
<> তাঁর দায়িত্বে কে ছিল?
- ফিরাউন।
<> তাহলে একজন নতুন শিশুকে কে নামকরণ করবে? যে দায়িত্বে আছে সে নাকি চাকর-বাকরেরা?
- অবশ্যই দায়িত্বরত ব্যক্তি।
<> তাহলে দায়িত্বরত ব্যক্তিরা কার ভাষায় নামরকণ করবে প্রভূর ভাষায় নাকি চাকরদের ভাষায়?
- অবশ্যই প্রভূদের ভাষায়। আর প্রভূদের ভাষা ছিল মিশরীয়, হিব্রু নয় ((ফিরাউনের রাজ্য মিশর, আর তার ভাষা মিশরীয়)।

কিন্তু সমস্যাটা কোথায় জানেন? রাসূল (সাঃ) এর জন্মের ৩০০০ বছর পূর্বে মিশরীয় ভাষা বিলুপ্ত হয়েছিল। কেউ মিশরীয় ভাষা জানত না। সুতরাং রাসূল (সাঃ) এর সময়ে কেউ যদি জিজ্ঞেস করত ‘মূসা’ অর্থ কী? কেউ বলতে পারত না। (আমরা না হয় আধুনিক যুগে বাস করি এবং এজিপ্টলজি বা মিশরীয় হায়ারুগ্লিফিক্স আবিষ্কারের কারণে এখন অর্থ বের করতে পারব, কিন্তু রাসূল সা এর সময়ে এটা জানা অসম্ভব ছিল)।

মূসা এর অর্থ কী এটা জানার আগে চলুন দেখি কুর'আন কী বলে। সূরা কাসাস এর ৯নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,

০ لَا تَقْتُلُوهُ عَسَى أَن يَنفَعَنَا أَوْ نَتَّخِذَهُ وَلَدًا وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ

অর্থঃ "...তাকে হত্যা করো না। এ আমাদের উপকারে আসতে পারে অথবা আমরা তাকে নতুন পুত্র হিসেবে গ্রহন করে নিতে পারি।"

‘মূসা’ শব্দটি মিশরীয় ভাষায় বলা হয় ‘নতুন জন্মপ্রাপ্ত’। তার মানে লক্ষ্য করেছেন? নিশ্চয় আল্লাহ কুর'আনে ‘মূসা’ শব্দের অনুবাদ করেছেন ‘وَلَدًا’ বা ‘নতুন জন্মপ্রাপ্ত শিশু’ হিসেবে অর্থাৎ 'মূসা = নতুন জন্মপ্রাপ্ত শিশু’, অথচ রাসূল (সাঃ) এর সময় মিশরীয় ভাষা ছিল মৃত।

কিন্তু কুর'আন (আল্লাহর কুদরত) ঠিকই জানে কী এর অর্থ এবং ঠিক মিশরীয় শব্দের আরবী অনুবাদ আল্লাহ ব্যবহার করেছেন একজন নিরক্ষর ব্যক্তির মাধ্যমে অথচ সেই ভাষা তখন কেউই জানত না !!!

আসিয়া তাকে মূসা নামে ডেকেছিলেন তাঁকে আর কুর'আন সেই নামের অর্থেই ডেকেছে আরবীতে অথচ তখন ঐ ভাষা ছিল মৃত। কী সুন্দরভাবেই না আল্লাহ তাঁর বাণীর অলৌকিকতা প্রকাশ করেন !!!

সুবহানআল্লাহ।
-------------------------

উৎসঃ কুর'আন এর ৩০টির উপর ভাষাতাত্ত্বিক মু'জিযার টাইপোগ্রাফি সংকলন (30+ Stunning Dazzling Miracles of The Holy Quran Kinetic Typography)।

0 comments
Labels: , ,

Bangla Dubbed || কুর'আনের ভাষাগত মু'জিযা - শুয়াইব (আঃ)

শুয়াইব (আঃ), আপনারা জানেন তিনি একজন নবী, ঠিক? এখন নবী (আঃ) হিসেবে তাঁর নাম কুর'আনে বহুবারে এসেছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “ওয়া ইলয়া মাদিয়ানা আখা’খুম শুয়াইবা” মাদিয়ানের নিকট আমি প্রেরণ করেছিলাম তাদের ভাই শুয়াইবকে (আঃ)। এখন একটা কথা বলে রাখি, কোন জাতির কাছে শুয়াইব (আঃ) কে প্রেরণ করা হয়েছিল? মাদিয়ান.. ঠিক? এখন মাদিয়ান একই সাথে দুটি জিনিস কে বোঝায়, ঠিক আছে?

মাদিয়ান দুইটি অর্থ বহন করে। মাদিয়ান একই সাথে একটা জায়গার নাম আবার একই সাথে এটি একটি জাতির নাম। ঐ জাতিটিকে মাদিয়ান বলা হয়, আবার তাদের জায়গা কেও মাদিয়ান বলা হয়। এবং আল্লাহ বলেন মাদিয়ানের নিকট আমি প্রেরণ করেছিলাম তাদের ভাই শুয়াইবকে (আঃ)। সূরা শু’রায়, ২৬তম সূরা, আল্লাহ তায়ালা আমাদের বিভিন্ন নবী-রাসূলদের ঘটনা বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, “Idh qaala lahum akhuhum Lootun; idh qaala lahum akhuhum Saalihun; idh qaala lahum akhuhum Hoodun; idh qaala lahum akhuhum Noohun”- যখন তাদের ভাই নুহ (আঃ) কে তাদেরকে বললো। এর পরের বর্ণনায় আরেক নবীর কথা বলা হয়। যখন তাদের ভাই সালিহ (আঃ) কে বললো, তার নিজের জাতির কাছে। তারপর আসেন হুদ (আঃ)।

যখন তাদের ভাই হুদ (আঃ) তাদেরকে বললো। তারমানে সালিহ, হুদ, নুহ এবং লুত (আঃ) – চারজনের বেলায়ই বলা হলো তাদের ভাই, তাদের ভাই, তাদের ভাই। পঞ্চম স্থানে শুয়ায়ব (আঃ) এর কথা বলা হচ্ছে। আল্লাহ বলেন – যখন শুয়াইব তাদেরকে বললো। এখানে তিনি শুধু বললেন “ইয কালা লাহুম শুয়াইবুন” যখন শুয়াইব তাদেরকে বললো। একই সূরায় আগের সব নবীদের সাথে কী বলা হয়েছিল? তাদের ভাই নুহ, তাদের ভাই সালিহ, তাদের ভাই লুত, তাদের ভাই হুদ। কিন্তু যখন শুয়াইব (আঃ) এর কথা বলা হলো তখন বলা হলো শুধু শুয়াইব - এখানে ভাই কথাটির উল্লেখ নাই। আরো মজার ব্যাপার হলো কুর'আনের অনান্য জায়গায় আল্লাহ বলেন “ওয়া ইলাইয়া মাদিয়ানা” আগে যেভাবে বলা হয়েছে, “ওয়া ইলাইয়া মাদিয়ানা আখাহুম শুয়াইবা”। মাদিয়ানের কাছে, বিশেষ ভাবে, আমি তাদের ভাই শুয়াইবকে প্রেরণ করেছিলাম। যে সূরায় সবাইকে তাদের নিজ জাতির ভাই হিসেবে বলা হচ্ছে, তখন স্বাভাবিক ভাবেই শুয়াইব (আঃ) এর ব্যাপারে আমরা কী দেখবো বলে আশা করা উচিত? তাদের ভাই।

কিন্তু “ভাই” শব্দটি এখানে বাদ দেয়া হলো। শুধু তাঁর বেলাতেই বাদ দেয়া হলো। আর বাকি সবার বেলায় থাকলো, আরো মজার ব্যাপার হলো এর একটু আগেই, মনে আছে? যে জাতির কাছে তাঁকে পাঠানো হয়েছিল, তার নাম কি ছিল? মাদিয়ান। তাদের আরেকটি নাম ছিলো “আসহাবুল আইকা”। এটা একটু বড় নাম। “আস হাবুল আইকা” মানে হলো "আল-আইকার জাতি"। আইকা হলো একটা বিশাল গাছ, যেটা তারা পূজা করতো। সেই গাছটার নাম হলো আইকা। তাই তাদেরকে এই ধর্মীয় নামেও ডাকা হতো।

তাদের ধর্মীয় পরিচয় হলো আল-আইকার জাতি। ঘটনা হলো তিনি (শুয়াইব (আঃ)) মাদিয়ানেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন, যেটা মাদিয়ান শহরের ভেতরেই অবস্থিত এবং মাদিয়ান জাতির তত্ত্বাবধানেই ছিলেন, ঠিক? আরবদের একটা অংশ। তারমানে জাতিগত এবং স্থানগত দু’দিক থেকেই তিনি তাদের ভাই, তাই আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি তাদের কাছে পাঠিয়েছিলাম তাদের ভাই শুয়াইবকে।

কিন্তু যখন আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে মাদিয়ানের জাতি না বলে তাদেরকে আল-আইকার, সেই গাছের পরিচয়ে বর্ণনা করছেন, তারমানে আল্লাহ তায়ালা তখন তাদের ধর্মের ব্যাপারে কথা বলছেন, অর্থাৎ যখন তাদের ধর্মের ব্যাপার আসছে, তখন কি তিনি তাদের ভাই? না, অবশ্যই না। এজন্যে যখন আল্লাহ তাদেরকে তাদের ধর্ম দিয়ে যখন বর্ণনা করেছেন আল্লাহ বলেন – যখন শুয়াইবকে তাদের কাছে পাঠানো হয়েছিলো – কোনো ‘ভাই’ নেই। এই নির্দিষ্ট প্রসঙ্গে, ‘ভাই’ শব্দটি বর্জন করে এখানে কী বোঝানো হয়েছে? বোঝানো হয়েছে যে, যখন কারো দ্বীন এর পার্থক্য থাকে তখন তাদের মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধ থাকতে পারে না, এটি চলে যায়। খুবই গভীর এবং নিখুঁত শব্দচয়ন। যে কারণে সূরা শু’রাতে একের পর এক “আখিহুম, আখিহুম, আখিহুম, আখিহুম” বলার পর হঠাত করে এক জায়গায় আর "আখিহুম" বলা হয়নি। নিখুঁত শুদ্ধতা এবং আপনারা দেখতে পেলেন কী জন্যে এটা করা হয়েছে। এটা ছিল প্রথম উদাহরণ।


0 comments
Labels: , , , ,

সালাতে খুশু - একটি সহজ ও কার্যকরী নসীহা

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

[উস্তাদ নুমান আলী খানের লেকচার অবলম্বনে অনুবাদ]

আপনি যদি কোন ভিআইপি কারো সাথে দেখা করতে যান, তখন সর্বাপেক্ষা উত্তম পোশাক পরিধান করেন, কোন গুরুত্বপূর্ণ মিটিং এ গেলে উত্তম পোশাক পরেন, কোন অনুষ্ঠানে গেলেও উত্তম পোশাক পরেন। সালাতে কার সাথে দেখা করতে যান আপনি ভাবতে পারেন? আপনার রবের সাথে দেখা করতে যান, তাঁর সাথে কথা বলতে যান, তাঁর সাথে আপনার কথোপকথন হয়। তাহলে সালাতে কেন ভালো ও উত্তম পোশাক পরিধান করেন না? এটা কি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় না?

আপনিই তো বলেন যে সালাতে মন ধরে রাখতে পারি না, সালাতে ও সালাতের বাইরে খুশু (একাগ্রতা, নিমগ্নতা, ভয়) আসে না। দেখুন আল্লাহ কীভাবে বলেছেন সালাতের ব্যাপারেঃ

“হে আদম সন্তান, প্রত্যেক মাসজিদে (সালাত ও সালাতের সময়) সুন্দর পোশাক-পরিচ্ছদ গ্রহন করো।” (সূরা আরাফঃ ৩১)

খুশুর মাধ্যমে আপনার মধ্যে প্রশান্তি ও একাগ্রতার একটা বীজ এই পোশাকেই নিহিত রয়েছে। কীভাবে?

আপনি যখন একটি বিশেষ পোশাক পরিধান করবেন একজন বিশেষ কারো জন্য, তখন নিশ্চয়ই আপনার মন এই পোশাকের সাথে সেই বিশেষ কারো জন্যই নিমগ্ন থাকবে। তাহলে আপনি যখন পৃথিবীর কারো জন্য নয়, একমাত্র আল্লাহর জন্য একটি বিশেষ পোশাক পরিধান করবেন তখন কি অন্যদিকে আপনার মন চলে যেতে পারে? না, পারে না। কারণ এই পোশাক পরিধানের একটাই লক্ষ্য, সেই লক্ষ্যের দিকেই আপনার মন একাগ্রভাবে নিমগ্ন। এভাবে সালাতের ভেতরে একাগ্রতা ও নিমগ্নতা আনতে পারেন। তাহলে চিন্তা করে দেখুন আল্লাহ কেন সালাতে উত্তম পোশাক পরিধান করতে বলেছেন, তাঁর সাথে প্রশান্তির অনুভূতি জাগানোর জন্য, তাঁর সাথে উত্তম কথোপকথনের মাধ্যমে প্রশান্তি অর্জনের জন্য।

আরেকটি বিষয় হল আমরা সালাতের বাইরেও এই খুশু পাই না, আল্লাহর ভয় কাজ করে না; কারণ এই সালাতের ভেতরেই রয়েছে। সালাত যেহেতু যাবতীয় মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে, আর যদি না রাখে তবে নিশ্চয়ই আমার সালাতে সমস্যা আছে। তাহলে সমস্যা কোথায়? কেন আমি আমার চক্ষুকে খুশুর মাধ্যমে সালাতের বাইরে অবনত করতে পারি না?

এখানেও পোশাকেই একটা ওষুধ আছে। চিন্তা করুন, আপনি একটি সুন্দর পোশাক পরিধান করে, মাথায় টুপি বা পাগড়ি দিয়ে সালাত আদায় করলেন, বা মেয়েরা তাদের মত উত্তম পোশাক পরিধান করে সালাত আদায় কর। সালাত থেকে আপনি যখন এই পোশাক নিয়ে বের হবেন, তখন কি পারবেন এই পোশাক ও টুপি পড়ে অন্য ছেলে বা মেয়ের দিকে তাকাতে? নাহ, কারণ এই পোশাকই আপনাকে বাধা দিবে। কারণ এই পোশাক একজন বিশেষ কারো জন্য। তাহলে আল্লাহর জন্য যখন এই পোশাক পরিধান করে তাঁর সাথে দেখা করতে যাই, তাঁর আদেশ-নিষেধ মানতে যাই, এই একই পোশাক পড়ে কি আমি তাঁর বিরোধিতা করতে পারব? না, পারব না।

এভাবেই আল্লাহর জন্য, তাঁর আদেশে উত্তম পোশাক পড়তে পারলে আমাদের ভেতরেও খুশু আসবে ইন-শা-আল্লাহ।

-- উস্তাদ নুমান আলী খানের সূরা আরাফের তাফসীর ও লেকচার থেকে।

0 comments
Labels: , ,

আমাদের জীবনের অবস্থা কেমন?

আপনি নতুন বিয়ে করেছেন, রাস্তা দিয়ে আপনার স্ত্রীকে নিয়ে যাচ্ছেন। হঠাৎ করে তিনি হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলেন। আপনি দ্রুত গিয়ে তুললেন, সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, "আমি কখনই তোমার কিছুই হতে দেব না, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি!"

নতুন বিবাহের মধ্যে এরকম ভালোবাসাই থাকে.. .এরকম আবেগের মধ্য দিয়েই আমরা যাই... এভাবে আমাদের জীবনের অনেকগুলো স্তর থাকে... বিবাহের প্রাথমিক অবস্থা থেকে সন্তান-নাতি-নাতকুর বয়স পর্যন্ত।

আমাদের জীবনের অবস্থা কেমন? ছোটবেলার খেলা নিয়েই পড়ে থাকি, কিছুটা বড় হলে পড়ালেখা ধরি, আর কিছুটা বড় হলে আমাদের মধ্যে স্মার্টনেস আসা শুরু করে, মেয়ে বা ছেলে দেখলেই একটু সাজুগুজু করার চেষ্টা করি, ভাব নেই। আরো একটু বড় হলে পড়ালেখা কখন শেষ হবে, একটা সার্টিফিকেট পাবো এই চিন্তা করি। চাকরি এবং এরপরে বিয়ে, স্বামী-স্ত্রীর আনন্দ... এভাবে আর কিছু দিন, সন্তান-সন্তুতি... এরপর নাতী-নাতকু... এভাবে জীবনের শেষপ্রান্তে এসে হাজির হই। আমাদের সেই ছোট্ট জীবন থেকে জীবনের শেষপ্রান্তে এসে হাজির হই। শেষে আর কিছুতেই মজা পাই না, আমাদের জীবনের রঙ শেষ হয়ে আসে, জীবনের রঙ পাল্টাতে শুরু করে।

জীবনের শেষপ্রান্তে এসে আপনার স্ত্রীকে নিয়ে যদি আবার সেই একই রাস্তা দিয়ে হেঁটে যান এবং আপনার স্ত্রী হঠাৎ হোঁচট খেয়ে পড়ে যান তখন বলেন, "কী সমস্যা তোমার, তোমাকে নিয়ে কি রাস্তায়ও বেড়োনো যাবে না?" সেই প্রাথমিক বিবাহিত অবস্থার ভালোবাসা আজ নেই, জীবনে ভালোবাসা আজ পীতবর্ণ ধারণ করেছে, ধূসর রঙ ধারণ করেছে।

এভাবেই আমাদের জীবনও একই অবস্থা দিয়ে যায়। ছোট্ট শিশু, কৈশর, যৌবন, বৃদ্ধাবস্থা... এভাবে আমাদের জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। এই ক্ষণস্থায়ী জীবন থেকে চিরস্থায়ী জীবনের দিকে। ঠিক আল্লাহ এই উপমাকেই এখানে চিত্রায়িত করেছেন এভাবে... আমাদের ক্ষণস্থায়ী পার্থিব জীবন, যেন আমরা এখানে এভাবে পড়ে না থাকি, আমরা যেন ধোঁকায় পড়ে শাস্তিযোগ্য না হই। আমাদের সফলতার জন্য আল্লাহ আমাদের সতর্ক করে দিলেন আমাদের চোখের সম্মুখে দেখা একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত দিয়ে। আল্লাহ বলেন,

"তোমরা জেনে রাখ, পার্থিব জীবন ক্রীড়া-কৌতুক, সাজ-সজ্জা, পারস্পারিক অহমিকা এবং ধন ও জনের প্রাচুর্য ব্যতীত আর কিছু নয়, যেমন এক বৃষ্টির উপমা, যার দ্বারা উৎপন্ন সবুজ ফসল কৃষকদেরকে চমৎকৃত করে, এরপর তা শুকিয়ে যায়, ফলে তুমি তাকে পীতবর্ণ দেখতে পাও, এরপর তা খড়কুটা হয়ে যায়। আর পরকালে আছে কঠিন শাস্তি এবং আল্লাহর মাগফিরাত ও সন্তূষ্টি। পার্থিব জীবন প্রতারণার উপকরণ ছাড়া কিছু নয়।" [সূরা আল-হাদীদঃ ২০]

--------------------------------------------------------------------------

উস্তাদের Happiness Fun and Pleasure লেকচার থেকে অনুপ্রাণিত।

0 comments
Labels: , , , ,

ইসলামের দাওয়াহ অন্যের কাছে পৌছানো- কী দিয়ে ?

অনেকেই আমরা দাওয়াহকে হালকা করে দেখি। আমরা কি জানি...

রাসূল (সা) এর দাওয়াহর বা মানুষকে ইসলামের প্রতি আহবানের জন্য একটা অন্যতম বড় মূলনীতি ছিল, যা তাঁকে শক্তি যোগান দিতো - সেটা ছিল তাঁর চরিত্র। তিনি সৎ ছিলেন, সবার নিকট বিশ্বস্ত ছিলেন, সবাই তাঁকে সত্যবাদী হিসেবে জানতো। তাঁর বুদ্ধিমত্তা ছিল, সমাজ তাঁর উপর আস্থা রাখতো, সবাই তাঁর উপর বিশ্বাস রাখতো। আমাদের ব্যক্তিগতভাবে যদি এসব যোগ্যতা না থাকে বা সমাজে যদি আমাদের এসব গুণাবলী না থাকে, তাহলে আমরা সমাজে উচ্চ আদর্শের কথা বলতে পারবো না।

একজন ব্যক্তি প্রতিদিন অফিসে দেরি করে আসে, তাহলে সে যতই নিয়মানুবর্তিতার বিষয়ে কথা বলুক না কেন, সেটার কোন মূল্য নেই, সেটা অর্থহীন। এটা এক প্রকার কৌতুকে পরিণত হয়।

অথচ দিনশেষে আমাদেরকে কোন উচ্চ আদর্শের কথা প্রচার করতে হবে। ইসলামের প্রতি আহবান করা বা দাওয়াহ যদি আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য হয় তবে এর মধ্যে ন্যায়বিচার, নৈতিকতা, নৈতিক আদর্শ, মানবতার প্রতি আন্তরিকতা - এগুলো যদি আমরা প্রদর্শন না করি আমাদের নিজেদের মধ্য দিয়ে এবং আমরাই যদি এমন হই যে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করি সর্বশেষে, ধৈর্য ধারণ করি সবার পরে - অর্থাৎ এসব প্রাথমিক ও মৌলিক গুণাবলী প্রকাশে আমরা অন্যদের চাইতে দেরিতে করি তাহলে কীভাবে আমাদের উচ্চ আদর্শের কথা ফলপ্রসূ হবে? অথচ রাসূল (সা) এর এসব গুণাবলীকে যে কেউ মূল্যায়ন করতো, এমনকি তাঁর এসব গুনাবলীকে ইসলামের পূর্বে ও পরেও কুফফাররা ব্যাপকভাবে মূল্যায়ন করতো। ইসলাম আসার পূর্বেই রাসূল (সা) এর এসব বৈশ্বিক গুণাবলী ছিল। এসব গুণাবলীর অধিকারী হতে মুসলিম হতে হয় না।

আপনার যদি এসব গুণাবলী না থাকে, তবে দাওয়াহর কথা ভুলে যান — আপনি কী দিয়ে দাওয়াহ দিবেন? এগুলো হল দাওয়াহ দেওয়ার মূল উপাদান।

আমাদের উদ্দেশ্য হল ইসলামের দাওয়াহ অন্যের কাছে পৌছানো, কাউকে ইসলামে ভিড়ানো নয়। আর এজন্য আমাদেরকে এসব গুণাবলী দিয়েই দাওয়াহ দিতে হবে।

------------------------------------------------------------------------------

উস্তাদের "How To Give Dawah" লেকচার হতে অনুপ্রাণিত

0 comments
Labels: , , ,

যতই জ্ঞানী হবেন ততই বিনয়ী হবেন

আমাদের মধ্যে কিছু লোক আছেন যারা বিভিন্ন সেমিনার, প্রোগ্রাম বা হালাকায় যান এবং বিভিন্ন ধরণের জ্ঞানার্জন করেন। তারা মনে করেন তারা এগুলো জানেন এবং মনে করেন যে এগুলো দিয়ে অন্যদের সাথে ডিবেট করা যাবে। তারা অন্যদের ব্যাপারে বলতে থাকেন "ঐ ব্যক্তি তো বুঝেই না, এই আয়াত, হাদীস, প্রমাণ, রেফারেন্স জানেনই না"। এভাবে অনেক রেফারেন্স আপনি জানেন কিন্তু এগুলো ব্যবহার করছেন আপনার বিপরীত পক্ষকে বলের মত ছুড়ে ফেলার জন্য। আপনি এসব জ্ঞানার্জন করছেন অন্যকে ডিবেটে পরাজিত করার জন্য।

সুতরাং আপনি যেই জ্ঞানার্জন করছেন তা ‘বিনয়ী বা বিনম্র’ হওয়ার জন্য নয় বরং ‘বিনয়ী বা বিনম্রভাবকে দূরীভূত করার জন্য’।

অথচ এটা বিশ্বাসীদের নয়, বরং অবিশ্বাসীদের বৈশিষ্ট্য। অবিশ্বাসীরা জ্ঞানার্জন করে নিজেদের নামের পাশে টাইটেল যোগ করার জন্য এবং দেখে থাকবেন তারা সাধারণত তাদের নাম বলার আগেই বলে বসেন 'আমি ডক্টর, এমফিল, এই টাইটেল, সেই টাইটেল' ইত্যাদি ইত্যাদি। এভাবে বুঝাতে চায় যে আমার জ্ঞান আপনার চাইতে বেশি। এটা সকলের জন্য সত্য না হলেও অনেকের জন্যই সত্য।

কিন্তু ইসলামী দ্বীনি পদ্ধতি হল আপনি যতই জ্ঞানী হবেন ততই বিনয়ী হবেন। কিন্তু আপনার জ্ঞান যদি জাজমেন্টাল হয়, অন্য স্কলারদের প্রতি বিরোধী বক্তব্য দেওয়ার জন্য হয়, তবে এটা অবিশ্বাসীদের চাইতে কি তফাৎ হল?

নিজেদের এভাবে বড় ভাবার কারণ কি জানেন? - তাওহীদের অভাব। যেখানে আল্লাহ থাকে না সেখানে তাওহীদের পরিবর্তে ভিন্ন কিছু প্রতিস্থাপিত হয় - আপনার ইগো বা অহংকার সেই স্থান দখল করে। অথচ আপনার জানা উচিৎ ছিলঃ

“প্রত্যেক জ্ঞানবান ব্যক্তির উপর আছে অধিকতর জ্ঞানী সত্তা।” [সূরা ইউসুফঃ ৭৬]

-------------------------------------------------

- উস্তাদ নুমান আলী খানের ‘Intellectual Humility’ লেকচার হতে

0 comments
Labels: , , ,

শয়তানের পথভ্রষ্টতা থেকে বাঁচার উপায়

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

[উস্তাদ নুমান আলী খানের সূরা আরাফের ১৭ নং আয়াতের তাফসীর থেকে অনুপ্রাণিত]

"অতঃপর আমি অবশ্যই (পথভ্রষ্ট করার উদ্দেশ্যে) আমি তাদের সম্মুখ দিয়ে, পেছন দিক দিয়ে, ডান দিক দিয়ে এবং বাম দিক দিয়ে তাদের কাছে আসব। আর আপনি তাদের অধিকাংশকেই কৃতজ্ঞ বান্দারূপে পাবেন না।" (সূরা আরাফঃ ১৭)

শয়তানকে যখন আদম আলাইহিস সালাম এর ব্যাপারে আল্লাহর আদেশ মান্য করল না, আল্লাহর আদেশের বিরোধিতা করল, অহংকার করল আল্লাহর আদেশের ব্যাপারে একজন মানুষের প্রতি, তখন আল্লাহ শয়তানকে বললেন বেরিয়ে যাও এখান থেকে, তুমি পাপী, তুমি আমার আদেশ মানোনি।

তখন শয়তান শপথ করে বলল আমি অবশ্যই, অবশ্যই আপনার বান্দাদেরকে পথভ্রষ্ট করার জন্য তাদের পথে বসে থাকব যতক্ষণ না আমি তাদের পথভ্রষ্ট করতে পারি।

এখানে ১৭ নং আয়াতে তার আক্রমনের কথা তার নিজের ভাষায়ই আল্লাহ বলেছেন সে শয়তান প্রচন্ড শপথ করে বলল, যতক্ষণ লাগুক না কেন সে বসে থাকবে সৎ বান্দাদের পথে এবং আক্রমণ করবে ৪টি দিক দিয়ে — ডান, বাম, সম্মুখ ও পেছন দিক দিয়ে।

এখানে কেবল একটি দিক বাদ রয়ে গেছে। তা হল ‘উপরের দিক’। কেন উর্ধ্ব বা উপরের দিক বাদ?

স্কলাররা বলেছেন কারণ এটা হল ‘ওহী’ আসার দিক, ‘আল্লাহর বাণীর দিক’, ‘আল্লাহর দিক’। আর ‘ওহী’ বা আল্লাহর বাণীকে শয়তান কিছুই করতে পারে না, শয়তান আল্লাহর বাণীকে ধারণ করে, এমন ব্যক্তিকে পথভ্রষ্ট করতে পারে না।

যেহেতু শয়তান চতুর্দিক থেকে আঘাত করবে বলেছে এবং একটি দিক দিয়ে সে পারবে না সে নিজেও জানত, কারণ আল্লাহর ক্ষমতার কাছে তার ক্ষমতা টিকবে না, তাই আমরা যদি আল্লাহর কাছে চাই (দোয়া করি), আল্লাহর বাণীর দিকে ফিরে যাই (কুর'আনের কাছে), আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি (আল্লাহর পানে চেয়ে), আসমানের দিকে আল্লাহর পানে আশ্রয় চাই, তবে শয়তান এই দিক দিয়ে কখনই আক্রমন করতে পারবে না আর আমরাও শয়তান থেকে বেঁচে থাকতে পারব, তার ধোঁকা থেকে বেঁচে থাকতে পারব।

সুতরাং যত পারুন দুআ করতে থাকুন, ঐ আসমান থেকে আসা কুর'আন পড়তে থাকুন, ঐ আসমানের মালিকের নিকট সালাতের মাধ্যমে চাইতে থাকুন কারণ শয়তান এদিক দিয়ে কোন আক্রমন করতে পারে না।

ইবলিস কোন কোন দিক থেকে মানুষের কাছে আসবে এইভাবে বলে দিয়েছিল...

"এরপর তাদের কাছে আসব তাদের সামনের দিক থেকে, পেছন দিক থেকে, ডান দিক থেকে এবং বাম দিক থেকে।" (সূরা আল-আ'রাফঃ ১৭)

একটি দিক বাদ গেল - উপর থেকে। তার মানে, উপর থেকে যা মানুষের জন্য আসে ঐ ব্যাপারে শয়তান অসহায়। যেমন কুরআন।

এই আয়াতে কিছুক্ষণ পর আল্লাহ আরেকটি জিনিসের কথা বলেছেন যেটি উপর থেকে আসে। আর সেটি হলঃ

"হে বনী-আদম আমি তোমাদের জন্যে পোশাক অবর্তীণ করেছি।" (সূরা আল-আ'রাফঃ ২৬)

সুবহানাল্লাহ, পোশাকও আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ। এই ব্যাপারে একটু গাফলতি করলে শয়তান সুযোগ পেয়ে যায়। সেই গাফলতিটি কী? পোশাকের শালীনতার ব্যাপারে ইসলামের বিধানসমূহ উপেক্ষা করা।

0 comments
Labels:

সুরা তাকাসুর, সুরা আসর এবং সুরা হুমাযাহ ---- সুরার নিবিড় সম্পর্ক

সুরা তাকাসুর, সুরা আসর এবং সুরা হুমাযাহ ---- এই তিনটি সুরার পরস্পরের ভেতর নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।

সুরা তাকাসুর -এ আল্লাহ'তালা বিবরণ দিচ্ছেন যে, মানবজাতি বিভ্রান্তির ভেতর আছে। দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা ও স্বার্থ পূজার কারণে মানুষ বেশী বেশী ধন-সম্পদ আহরণ, পার্থিব লাভ, স্বার্থ উদ্ধার, ভোগ, প্রতিপত্তি, ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব লাভ এবং তার মধ্যে প্রতিযোগিতামূলকভাবে একজন আর একজনকে টপকে যাওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়। আর এসব অর্জন করার ব্যাপারে অহংকারে মত্ত থাকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত। তাই যখন তারা অনুধাবন করতে পারে ততক্ষনে তাদের কবরে যাবার সময় চলে আসে। যে বিষয়টি এই সুরায় সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে তা হল, 'বিভ্রান্ত হয়ো না, বরং সময় থাকতেই সাবধান হও কারণ হাতে সময় অনেক কম'। এদিকে 'সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে' ---- এটাই হচ্ছে সুরা আসর এর মৌলিক শিক্ষা। "সময়ের কসম। মানুষ আসলে বড়ই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে"। কিন্তু এই স্বল্প সময়কে যদি মানুষ নিজ কল্যাণে কাজে লাগাতে না পারে তাহলে তার জন্য অপেক্ষা করছে ভয়াবহ সর্বনাশ। এবং এই নিদারুণ সর্বনাশের ভয়াবহতা সুস্পষ্ট বর্ণনা পাওয়া যায় সুরা হুমাযাহ -তে। এটি এই তিনটি সুরার পরস্পরের ভেতর যৌক্তিক সম্পর্ক এর একটি ধারা। 

উপরন্তু সুরা আসর এর মুখ্য নির্যাস হচ্ছে উল্লেখিত আয়াত "মানুষ আসলে বড়ই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে"। একটা সার্বজনীন বক্তব্য এই আয়াতে ফুটে উঠেছে। আর এই ক্ষতির পরিমাণ কতটা ভয়াবহ হতে পারে, এর তীব্রতা কি ভয়ংকর হতে পারে, একজন মানুষের জন্য এটা যে সর্বনিম্ন পর্যায়ের ক্ষতি ---- তার বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে সুরা হুমাযাহ -তে। অনেক স্কলারদের মতে দোযোগের আগুনের ভয়াবহতম বর্ণনা এই সুরাতে বিবৃত হয়েছে। কারণ বিশেষভাবে 'নারুল্লাহ' শব্দটির ব্যবহার।

কুরআনে একমাত্র এখানে ছাড়া আর কোথাও জাহান্নামের আগুনকে আল্লাহর আগুন বলা হয়নি। এখানে এই আগুনকে আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত করার মাধ্যমে কেবলমাত্র এর প্রচণ্ডতা ও ভয়াবহতারই প্রকাশ হচ্ছে না। বরং এই সঙ্গে এও জানা যাচ্ছে যে, দুনিয়ার ধন-সম্পদ লাভ করে যারা অহংকার ও আত্মম্ভরিতায় মেতে ওঠে তাদেরকে আল্লাহ‌ কেমন প্রচণ্ড ঘৃণা ও ক্রোধের দৃষ্টিতে দেখে থাকেন। এ কারণেই তিনি জাহান্নামের এই আগুনকে নিজের বিশেষ আগুন বলেছেন এবং এই আগুনেই পাপীদেরকে নিক্ষেপ করা হবে।
অধিকন্তু সুরা হুমাযাহ হচ্ছে জুজ আম্মাহ এর এবং ধারাবাহিকতার দিক দিয়ে কুরআনের এর সর্বশেষ সুরা যেখানে আখিরাত সম্পর্কে সরাসরি আলোচনা করা হয়েছে।

0 comments