Labels: , , ,

জিহ্বার সংরক্ষণ

জিহ্বার সংরক্ষণ
---
“হে মুমিনগণ, কোন পুরুষ যেন অপর কোন পুরুষকে বিদ্রুপ না করে; কেননা তারা তাদের চেয়ে উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী যেন অপর কোন নারীকেও বিদ্রুপ না করে; কেননা সে তাদের অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। তোমরা একেক অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং তোমরা একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না; ঈমানের পর মন্দ নামে ডাকা গর্হিত কাজ। যারা এ ধরণের আচরণ পরিত্যাগ করে তাওবা না করে, তারাই অত্যাচারী” (সূরা হুজুরাত-১১)

আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের একটি উল্লেখযোগ্য গিফট হল আমাদের জিহ্বা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর দেওয়া চূড়ান্ত কিছু গিফটের একটা হল এই জিহ্বার মাধ্যমে কথা বলার যোগ্যতা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সূরা আর-রাহমানে বলেন – “চূড়ান্ত দয়াময়, যিনি তোমাকে কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন”। খেয়াল করেছেন তো ভালোভাবে? আল্লাহ, এই বিশাল জগতের সৃষ্টিকর্তা, আমাদের রব, আমাদের লালন-পালনকর্তা, হাশরের মাঠে একচ্ছত্র অধিপতি---তিনি আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন আল-কোর’আন। আবার তিনি বলেন “তিনি তোমাকে ভাষা শিক্ষা দিয়েছেন” – অর্থাৎ তিনি শুধু কোরআন ই শিক্ষা দেননি বরং এর পাশাপাশি তোমাকে ভাষাও শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি দুটি জিনিস শিক্ষা দিয়েছেন- কোরআন এবং ভাষা। এর মাধ্যমেই বুঝতে পারি ভাষা আল্লাহর একটি অন্যতম দান। তাই আল্লাহ যা আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন তা দিয়ে যেন আমরা অন্যের হৃদয়কে ভেংগে না দেই, তাদের হৃদয়ে ক্ষত সৃষ্টি না করি।

এই দুটি জিনিস শিক্ষা দেওয়ায় এটা বুঝায় যে আল্লাহ তোমাকে যে কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন সেটা যেন তোমার ভাষার মাধ্যমে ব্যবহার করতে পারো। তোমার প্রত্যেকটা কথা যেন আল্লাহর কোরআনের আয়াত দ্বারা অনুপ্রাণিত হয় যা আল্লাহ তোমাকে শিক্ষা দিয়েছেন।

আমরা প্রায়শ ভুল করে ফেলি। এমন ভুল করি যে সেটার মূল্য ও পরিমাণও বুঝতে অসমর্থ হই। আমরা আমাদের বন্ধু, পরিবার বা সামাজিক যোগাযোগের সাইটে এমন সব কমেন্ট করি যা আল্লাহর দেওয়া শিক্ষার সীমা ছাড়িয়ে যায়-অথচ আমরা এটা উপলবব্ধিটুকুও করি না। অথচ আমাদের এটা উপলব্ধি করা দরকার যে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন একটা সমস্যার কথা কোরআনে বলেছেন যা সামান্য ব্যাপার নয়-অবশ্যই বড় ব্যাপার বলেই এটা আল্লাহ হাইলাইট করেছেন।

আয়াতটি লক্ষ্য করে থাকবেন, আল্লাহ মুমিনদেরকে সম্বোধন করেন ...এবং বলেন “কোন গোত্র(দল,গ্রুপ,আন্দোলন,সেক্ট)যেন অপর কোন গোত্রকে বিদ্রুপ না করে”। এখানে আরবী শব্দ ‘সাকিরা’ শব্দ কেবল ফান, ব্যঙ্গ বা কৌতুক বুঝায় না বরং এর সাথে-কারো বিরুদ্ধে তীব্র তিক্ত মন্তব্য, কাউকে আঘাত করে শ্লেষোক্তি বুঝায়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের এটা করতে নিষেধ করেছেন। অথচ আজকাল কাউকে ফান করে, ব্যঙ্গ করে বা অতি তিক্ত সমালোচনা করে কিছু বললে বা ফেইসবুকে লিখলে আমরা সেটাকে ‘বুদ্ধিজীবী’ হওয়ার আলামত মনে করি! আমরা এদেরকে অনেকেই বলি ‘আহ, সেতো ভারী ফানি লোক’, ‘সে অনেক মজা করে কথা বলে’, ‘তার ফেইসবুক ওয়াল তো মজাতে ভরা’,‘আরেহহহ, সেতো মানুষকে পচাতে ভালোই সিদ্ধহস্থ’ ইত্যাদি ইত্যাদি। অন্য মানুষরা যখন এগুলোকে সায় দিয়ে হাসির ইমো দেয়, তাকে স্বাগত জানায়, ধন্যবাদ দেয়-এগুলোর প্রত্যেকটাই ঐ ব্যক্তির ইগো-অহংকারকে আরো উগড়ে দেয় এবং এর ফলে পরবর্তীতে আরো বেশি করে হাসির কৌতুক, ফান, শ্লেষাত্মক বা ঘৃণাত্মক বিষয় নিয়ে উপস্থিত হয় যা আগেরগুলোর চাইতে আরো বাজে, নগ্ন এবং অপ্রত্যাশিত এবং আমরা এগুলোর সাথেও মিশে যায়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আয়াতে এটাই বুঝাতে চাচ্ছেন যে-এগুলো তোমাদের মধ্যকার ভার্তৃত্বের মধুর বন্ধনকে কেড়ে নেবে। ঈমানদাররা কখনই তাদের মাঝে শত্রুতা কামনা করে না বরং মিত্রতা ও মীমাংসা ব্যতীত অন্য কিছুই তারা চায় না। তাই আল্লাহর তাকওয়া ধারণ করো নিজের মাঝে যাতে আল্লাহর দয়া তোমার উপর আসে।

এই আয়াতের পূর্বের আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা নিজেদের মাঝে মীমাংসার কথা বলেছেন এবং এই আয়াতে বলেছেন কিভাবে কথা বলতে হয় এবং কি ধরণের কথা বলা যাবে না। অপমানকর কোন কমেন্ট বা ফান করা যাবে না অন্যের বিপক্ষে-তার কাজ, স্কুল, আন্দোলন, পড়া, গায়ের চামরা, খাটো-লম্বা ইত্যাদি নিয়ে(গঠনমূলক সমালোচনা তো হয় ভালোবাসা দিয়ে, উপদেশের ভাষাই সেটা বুঝাবে তা ভালবাসা নাকি বিদ্বেষ)।

এরপর দেখেন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কি চমৎকার দিক নিয়ে বলেছেন ‘হতে পারো তোমরা যাকে নিয়ে ঠাট্টা করেছ, ফান করেছ, বিদ্রুপ করেছ’ সে তোমাদের চাইতেও উত্তম।! আমরা কাউকে যখন ফান করি, বা বিদ্রুপ করি এবং এটা করি এই ভেবে যে আমরা তার থেকে উত্তম-এটা আমাদের অবচেতন,সচেতন মনে বা ধারনার মাঝে গেথেই থাকে আর একারণেই তাকে নিয়ে বিদ্রুপ করছে, তাকে বিদ্রুপের বস্তুতে পরিণত করেছ। তোমার চাইতে কেউ উত্তম, অধিক সম্মানের অধিকারী-এরকম কাউকে নিয়ে অবশ্যই তুমি বিদ্রুপাত্মক কিছু করবে না-এটাই প্রমাণ করে যে তুমি নিজের মাঝে একটা ‘শ্রেষ্টত্বের অনুভূতি’ নিয়ে আছো। অথচ আল্লাহ এই অনুভূতি নিয়ে কাউকে বিদ্রুপ করতে নিষেধ করেছেন।

আজকাল এরকম বিদ্রুপ যেন কমেডি আর বিনোদনের পর্যায়ে চলে গেছে-কারো আঞ্চলিক ভাষা নিয়ে, ড্রেসকোড নিয়ে, খাবার নিয়ে, ফেইসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে, একজন বিক্রেতা অন্য বিক্রেতার প্রডাক্টের বিদ্রুপ করে – অথচ তারাও উত্তম হতে পারে-আমাদের চাইতে-আল্লাহর কথা অনুযায়ী(কোন গোত্র যেন অপর গোত্রকে বিদ্রুপ না করে)।
এখানে আল্লাহ রাব্বুল আলামী বিশেষ করে নারীদের উল্লেখ করেছেন(কোন নারী যেন অপর কোন নারীকেও বিদ্রুপ না করে)। এর কারণ হল নারীদের বিদ্রুপ করাটা পুরুষদের থেকে ভিন্ন হয়। নারীদের সম্পর্কে যে শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে সেটা হল ‘লামজ’ তা কেবল শারীরিক চলাচলেই নির্দেশ করে না বরং চোখ ঘোড়ানো, চাহনির বিশেষ সাইন(মুখ কালো করা, ঠোট বাকা করা,) দীর্ঘশ্বাস নেওয়া, চাপা হাসি, বা দীর্ঘশ্বাসের আড়ালে ছোট্ট কমেন্ট যা তুমি নিজে শুনতে পাও কিন্তু যাকে বিদ্রুপ করছে সে শুনতে পায় না-এবং যখন সে প্রশ্ন করে তোমাকে কি বললে?– তুমি উত্তরে বল-‘আমি কিছুই না’-এসবি ‘লামজ’ এর অন্তর্ভূক্ত। কথার মধ্যে প্রকাশ পায় না কিন্তু ঘৃণার প্রকাশ করে এরকম সবই এর অন্তর্ভূক্ত।

কাউকে কিছু না বলেও তুমি তাকে অপমানিত করতে পারো আর আল্লাহ এটাও জানেন(ওয়ালা তালমিজু আনফুসাক

No comments:

Post a Comment