Labels:

সুরা তাকাসুর, সুরা আসর এবং সুরা হুমাযাহ ---- সুরার নিবিড় সম্পর্ক

সুরা তাকাসুর, সুরা আসর এবং সুরা হুমাযাহ ---- এই তিনটি সুরার পরস্পরের ভেতর নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।

সুরা তাকাসুর -এ আল্লাহ'তালা বিবরণ দিচ্ছেন যে, মানবজাতি বিভ্রান্তির ভেতর আছে। দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা ও স্বার্থ পূজার কারণে মানুষ বেশী বেশী ধন-সম্পদ আহরণ, পার্থিব লাভ, স্বার্থ উদ্ধার, ভোগ, প্রতিপত্তি, ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব লাভ এবং তার মধ্যে প্রতিযোগিতামূলকভাবে একজন আর একজনকে টপকে যাওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়। আর এসব অর্জন করার ব্যাপারে অহংকারে মত্ত থাকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত। তাই যখন তারা অনুধাবন করতে পারে ততক্ষনে তাদের কবরে যাবার সময় চলে আসে। যে বিষয়টি এই সুরায় সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে তা হল, 'বিভ্রান্ত হয়ো না, বরং সময় থাকতেই সাবধান হও কারণ হাতে সময় অনেক কম'। এদিকে 'সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে' ---- এটাই হচ্ছে সুরা আসর এর মৌলিক শিক্ষা। "সময়ের কসম। মানুষ আসলে বড়ই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে"। কিন্তু এই স্বল্প সময়কে যদি মানুষ নিজ কল্যাণে কাজে লাগাতে না পারে তাহলে তার জন্য অপেক্ষা করছে ভয়াবহ সর্বনাশ। এবং এই নিদারুণ সর্বনাশের ভয়াবহতা সুস্পষ্ট বর্ণনা পাওয়া যায় সুরা হুমাযাহ -তে। এটি এই তিনটি সুরার পরস্পরের ভেতর যৌক্তিক সম্পর্ক এর একটি ধারা। 

উপরন্তু সুরা আসর এর মুখ্য নির্যাস হচ্ছে উল্লেখিত আয়াত "মানুষ আসলে বড়ই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে"। একটা সার্বজনীন বক্তব্য এই আয়াতে ফুটে উঠেছে। আর এই ক্ষতির পরিমাণ কতটা ভয়াবহ হতে পারে, এর তীব্রতা কি ভয়ংকর হতে পারে, একজন মানুষের জন্য এটা যে সর্বনিম্ন পর্যায়ের ক্ষতি ---- তার বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে সুরা হুমাযাহ -তে। অনেক স্কলারদের মতে দোযোগের আগুনের ভয়াবহতম বর্ণনা এই সুরাতে বিবৃত হয়েছে। কারণ বিশেষভাবে 'নারুল্লাহ' শব্দটির ব্যবহার।

কুরআনে একমাত্র এখানে ছাড়া আর কোথাও জাহান্নামের আগুনকে আল্লাহর আগুন বলা হয়নি। এখানে এই আগুনকে আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত করার মাধ্যমে কেবলমাত্র এর প্রচণ্ডতা ও ভয়াবহতারই প্রকাশ হচ্ছে না। বরং এই সঙ্গে এও জানা যাচ্ছে যে, দুনিয়ার ধন-সম্পদ লাভ করে যারা অহংকার ও আত্মম্ভরিতায় মেতে ওঠে তাদেরকে আল্লাহ‌ কেমন প্রচণ্ড ঘৃণা ও ক্রোধের দৃষ্টিতে দেখে থাকেন। এ কারণেই তিনি জাহান্নামের এই আগুনকে নিজের বিশেষ আগুন বলেছেন এবং এই আগুনেই পাপীদেরকে নিক্ষেপ করা হবে।
অধিকন্তু সুরা হুমাযাহ হচ্ছে জুজ আম্মাহ এর এবং ধারাবাহিকতার দিক দিয়ে কুরআনের এর সর্বশেষ সুরা যেখানে আখিরাত সম্পর্কে সরাসরি আলোচনা করা হয়েছে।

No comments:

Post a Comment