Labels: , ,

সন্তানকে কীভাবে ইসলামের শিক্ষা দিবেন (২য়পর্ব)


সাফল্য সম্পর্কে আমাদের ব্যক্তিগত ধারণা ২০,৩০,৪০ বছর আগেও যা ছিলো… মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশের জন্যেই ব্যাপারটা সত্য যে... আপনাদের মধ্যে কারও কারও হয়ত শিক্ষার ভালো সুযোগ ছিলো না, কিংবা আপনাদের বাবা মায়ের সেই সুযোগ হয়নি।তো তারা তাদের সব ধরনের প্রচেষ্টা লাগিয়ে দেয় তার বাচ্চাকে শিক্ষিত করে তুলতে। আর আপনি আপনার জীবন থেকে এই শিক্ষা পেয়েছেন তাই আপনি বলেন ‘আমার বাচ্চার জন্যে আমি সর্বোচ্চ শিক্ষা অর্জনের ব্যবস্থা রাখব’। যদিও এই ইচ্ছা পূরণ করতে গিয়ে আপনার তাকে প্রাইভেট স্কুলে পাঠাতে হয়, বাড়ি ভাড়া করতে হয়, অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নিতে হয়, অস্বস্তিকর পরিবেশে থাকতে হয়, তারপরেও তাদের সুশিক্ষার স্বার্থে আপনি তা করতে রাজি আছেন।যদিও আমার অস্বাভাবিক লোন নিতে হয়...তাকে আইভি লিগ স্কুলে কিংবা মেড-স্কুলে পাঠতে কিংবা তাকে কোন লিড প্রোগ্রামের অন্তর্ভূক্ত করতে, আমরা তা করতে রাজি আছি। কেন? কারণ আপনাদের কাছে সাফল্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ কী? আপনাদের বাচ্চার সুশিক্ষা। 

আর এখানে যারা আপনাদের সন্তান, তাদেরকে এটা বার বার বলা হয়েছে। তোমাকে শিক্ষা নিতেই হবে। তুমি একজন ব্যর্থ মানুষে পরিণত হবে যদি তুমি শিক্ষা না পাও।তোমাকে কলেজ পাস করতে হবে, এটা পাস করতে হবে , ওটা পাস করতে হবে। আর আপনি যদি ইন্দোভারতীয় অঞ্চলের হয়ে থাকেন অবশ্যই আপনি একজন ব্যর্থ মানুষ যদি আপনি ফিজিসিয়ান না হতে পারেন।আপনার এ দুনিয়া থেকে আশা করার আর কিছুই নেই।এখন আপনার জন্যে কেবল একটা দরজাই খোলা আর সেটা হলো আখিরাত।কারণ আপনি সার্জেন হতে পারেননি দেখে আপনার বাবা-মা আপনার প্রতি আর সন্তুষ্ট হবেন না। আর ডেন্টিস্ট তো একেবারেই হবেন না, ডেন্টিস্ট হওয়া তো অপমাজনক! সেটা নিয়ে চিন্তা করে সময় নষ্ট করার দরকার নেই।এই আমাদের অবস্থা!

 তবে খেয়াল করুন ফিজিসিয়ান হওয়া আমাদের একটা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর কাছে কেন এত গুরুত্বপূর্ণ? আপনি জানেন কেন? কারণ এতে সবচেয়ে বেশি টাকা আসে।এজন্যে না যে আপনি কারও জীবন বাঁচাতে পারছেন কিংবা মানবতার সাহায্য করছেন।এ ধারণার সাথে ফিজিসিয়ান হওয়ার কোন সম্পর্কই নেই! যদি ডাক্তার আর বাস ড্রাইভার দের বেতন সমান হত তবে দেশি কমিউনিটি বাচ্চাকে ডাক্তার বানানোর জন্যে এত লাফালাফি করত না! আমাদের মাঝে কোনো উৎসাহ নেই নিজেদের সন্তান কে পৃথিবীর উদ্ধারকর্তা হিসেবে দেখার।নাহ, নেই।বাবা-মা খুব খুশি হয়ে যায় যখন দেখে ছেলে ডাক্তার হয়ে ফিরেছে।কিন্তু ছেলে বলছেঃ ‘আমি তিন বছরের জন্যে Doctors Without Borders-এ (এনজিও) চলে যাব… আমি বন্যা কবলিত এলাকায় তিন বছরের জন্যে কাজ করব, এরপর আমি সোমালিয়া যাব তারপর পাকিস্তানে আর তারপর বাংলাদেশে তারপর মালয়েশিয়াতে, আমি শুধু সেবা দান করব, বেতন নিব না, কোন লাভের জন্যে কাজ করব না। তখন সেই বাবা-মা বলবে ‘ ইয়া আল্লাহ! আমরা আমাদের সব টাকা পয়সা ঢেলে দিয়েছি তোমাকে ডাক্তার বানাবার জন্যে আর এখন তুমি এসব করবে? তোমার তো সেই একই রক্তচোষা মেশিন এর অংশ হওয়া উচিত ছিলো ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি আর ফার্মাসিউটিকাল কোম্পানিগুলো যার অংশীদার।আমরা তো তোমাকে তাই বানাতে চেয়েছিলাম!

 তুমি কেন মানুষের জীবন বাঁচাবে? তোমার সমস্যা কী?’ এই হলো আমাদের অবস্থা।এদিকে আমরা ভাবি আমাদের ছেলেমেয়েদের মাঝে ঝামেলা আছে! আমাদের উচিত আয়নায় নিজেদের দেখা...আমরা আসলে কাদের তৈরি করছি?কোনো একটা ব্যাপার একদম গোড়া থেকে পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে।আমাদের কাছে সাফল্য হলো টাকা পয়সা।শিক্ষা সম্পর্কে আমাদের ধারণা হলো এমন একটা ক্যারিয়ার যাতে অনেক টাকা আসে। সবকিছুর মূলেই অর্থ-সম্পদ।আপনি যদি সফল হন, এর মানে এই যে আপনার অনেক টাকা আছে।আপনি যদি সফল হন তার মানে এই যে, আপনি শিক্ষা অর্জন করেছেন, শিক্ষা অর্জন করেছেন কোন ফিল্ডে? যেখানে আপনার একটা ভালো ক্যারিয়ার হবে, যার মানে যেখানে আপনি অনেক টাকা পয়সা পাবেন।এটাই এখন সাফল্য।সবশেষে কথা একই।এই ধারণা কিন্তু আগেকার যুগ থেকে ভিন্ন। আগে সকলের ধারণা ছিলো আপনি শিক্ষিত হয়েছেন এর মানে হচ্ছে আপনি নিজেকে বুঝেন আপনার চারপাশের জগতটাকে বুঝেন, আর আপনি পৃথিবীকে আরও সুন্দর বাসযোগ্য করে তুলার জন্যে কাজ করছেন।আর এর জন্যে কখনো আপনাকে ইতিহাস পড়তে হবে, কখনো সামাজিক বিজ্ঞান পড়তে হবে, কখনো পলিটিকাল সাইন্স পড়তে হবে। কখনো আপনার মিডিয়া নিয়ে পড়াশুনা করতে হবে, কখনো সাংবাদিকতা নিয়ে পড়াশুনা করতে হবে।

সমাজে অবদান রাখতে হলে বিভিন্ন ফিল্ডে পড়াশুনা করতে হবে।কেবল একটা ক্ষেত্র নিয়েই পড়ে থাকলে চলবে না।আর তাছাড়া সবচেয়ে সফল কমিউনিটি যে দিক থেকেই বিচার করুন না কেন, আমেরিকার সবচেয়ে সফল কমিউনিটি হলো তারাই যারা নিজেদের ছেলেমেয়েকে কেবল একটা ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ করে রাখেনি।আমার এক বন্ধু বলছিলোঃ ‘যদি স্টিভেন স্পিলবার্গ পাকিস্তানি ঘরে জন্ম নিতেন, তিনি একজন ডাক্তার হতেন’। কেন?কারণ আপনি জানেন। “তুমি ফিল্ম স্কুলে পড়তে চাও!এসবের মানে কি? তোমার সমস্যা কি? তুমি কি মেডিসিন শাস্ত্রে ফেল করেছ?’ আপনি আপনার বাবা-মায়ের ব্লাড প্রেসার বাড়িয়ে দিবেন।এখন চলুন সন্তান বড় করা সম্পর্কে অল্প কিছু কথা বলি।সবচেয়ে আগে আমাদের মানসিকতা বদলাতে হবে।তারা যদি আমাদের মাঝে সফলতার সঠিক সংজ্ঞা খুঁজে না পায়, তারা যদি আমাদের ব্যক্তিত্বে এর প্রতিফলন না দেখতে পায়, আমাদের দৈনিক কথাবার্তায়… তবে আমারাও এটা আশা করতে পারি না যে তারা সফলতার সঠিক মানে নিজে থেকে বুঝে নিয়েছে।তাদের কাছে এ দিকনির্দেশনা আমাদের পক্ষ থেকেই আসতে হবে।আমরা যা নিয়ে সব সময় কথা বলি, আমাদের কাছে যে বিষয়গুলো সব সময় গুরুত্বপূর্ণ.

..যখন স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের সঙ্গে কথা বলেন তখন বাচ্চা তা শুনতে থাকে, তাই না?সব সময়।তাদের কান সব সময় খোলা থাকে।এখন আপনারা যদি বিল সংক্রান্ত কথাবার্তা বলেন, বাড়ি ভাড়া নিয়ে কথা বলেন কিংবা আপনারা সবসময় মুভি নিয়ে কথা বলেন কিংবা অন্য পরিবার সম্পর্কে কেবল বাজে কথা বলেন...তারা কি করে না করে, এসব আলাপ-আলোচনা।তারা ভেবে নিবে যে বড়রা এমনই, আমার বাবা-মা এসব করে।এগুলোই তাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে।কিন্তু আপনি আর আপনার স্ত্রী যদি কুরআন নিয়ে কথা বলেন,আখিরাত নিয়ে কথা বলেন, অন্যের জন্যে ভালো কিছু করার কথা বলেন, কাউকে সাহায্য করার কথা বলেন...তারা আপনারটা দেখেই শিখে নিবে। আপনার তাকে লেকচার দিতে হবেনা এ ব্যাপারে, তারা কেবল আপনাকে দেখবে।সবচেয়ে কার্যকর প্যারেন্টিং সেটাই যেখানে বাচ্চাকে কোনো কাজ করাতে বাবা-মার কিছু বলতেই হয়না, তারা দেখতে দেখতে শিখে ফেলে।কারণ তারা এসবই সব সময় দেখছে।আপনাদের মাঝে অনেকেই ভাবেন যে ‘আমি যদি নোমান ভাইয়ের লেকচারে নিয়ে এসে আমার বাচ্চাদেরকে বসিয়ে শুনাতে পারি ইনশাআল্লাহ এরপরে...তারা নীতিবান হয়ে যাবে।শুধু কয়েকটা ইউটিউব ভিডিও...আর সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।’ 

এতে আসলে কোনো উপকার হবেনা।আর আপনি হয়ত এতদিনে সেটা বুঝে ফেলেছেন।আর আপনি, আপনিই হচ্ছেন আপনার সন্তানের প্রকৃত কাউন্সিলর।আমি আমার সন্তানের প্রকৃত কাউন্সিলর।আমাদের তাদের সবচেয়ে ভালো বন্ধু হতে হবে।আর এরপরের কথা হচ্ছে বিশ্বের পরিবর্তন।আপনি জানেন, পুরানো যুগে বাবা-মা আর সন্তানদের মাঝে একাট প্রকৃতজাত সম্পর্ক বিরাজ করত। কিন্তু নতুন যুগে, আব্বু দিনের বেশির ভাগ সময় কাজে থাকেন।বাসায় আসেন ক্লান্ত হয়ে।আর যে সময়ে তিনি ক্লান্ত হয়ে বাসায় আসেন, তার অধিকাংশ বাচ্চারা ঘুমিয়ে পড়েছে।আর যখন তিনি অফিসে যান, বাচ্চারা তখনো ঘুম থেকেই উঠেনি।আর তেমন যদি নাও ঘটে, তিনি হয়ত যাওয়ার আগে বাচ্চাদের ৫ মিনিটের জন্যে দেখতে পান যখন তারা ব্রেকফাস্ট করছে।তিনিও চলে যান তারাও চলে যায়।তার মানে সাত দিনের মাঝে পাঁচ দিনই বাবা আর বাচ্চার মাঝে কোনো কথোপকথন হয়না।তাও যদি হয় সেটাঃ ‘তুমি হোমওয়ার্ক শেষ করেছ?আচ্ছা, আমার জন্যে পানি নিয়ে আসো।’ এতটুকুই।এর মাঝেই সীমাবদ্ধ।তারপর আসে ছুটির দিন।কিন্তু ছুটির দিনগুলোতে এখানে দাওয়াত থাকে, ওখানে পার্টি থাকে, আপনার ১২ টা পর্যন্ত ঘুমানো লাগে, বাসায় কিছু কাজ করা লাগে ইত্যাদি ইত্যাদি।


আপনি তখনো সন্তানের সঙ্গে সময় কাটান না।তাদের সঙ্গে সত্যিকারের কথাবার্তা বলেন না।তাদের সাথে আপনার আসলে কোনো যোগাযোগ হয়না।এটাই মূল সমস্যা।আমাদের বাচ্চাদের জন্যে সময় বের করে নিতে হবে সপ্তাহের মাঝে আর সপ্তাহের শেষে।এটাই আপনার এবং আমার জন্যে কার্যকর উপদেশ।আমাদের সন্তানদের জন্যে সময় খুঁজে নিতে হবে, কেবল তাদের সাথে কথা বলার জন্যে।শুধু শুনুন তারা কি বলছে আর কথা বলুন তাদের সাথে।যদিও তারা আজগুবি কথাবার্তা বলে।আমাদের উচিত তাদের জীবনের একটা অংশ হওয়া, তাদের জীবনের একটা বড় অংশ।আপনাদের অনেকের ক্ষেত্রেই, আপনার সন্তানের কাছে আপনার একমাত্র ভূমিকা হলো আপনি বাড়ির একটা দেয়ালের মতন।এটা সব সময় থাকে কিন্তু এর সাথে কেউ কথা বলে না।আপনার একে দরকার আছে,এটা সব সময়ই থাকে আর এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ, এটা সবার বিল পরিশোধ করে।এই কারণ ছাড়া আর কোনো সম্পর্ক নেই এর সাথে।

আপনি জানেন এধরনের বাবা মায়ের সাথে কি হয়? তারা তাদের আচরণের প্রতিফল পায় যেই মুহূর্তে সন্তানেরা টিনেজার হয়।যখন তাদের ১৪/১৫ বছর বয়স হয় তারা কিছুটা স্বাধীন হয়ে যায়, ধরুন তখন তারা আপনার কাছে এসে একটা গাড়ি কিনে দিতে বলছে আর আপনি বললেনঃ ‘না!তোমার এখন কেন গাড়ি লাগবে?’... ‘ঠিক আছে! আমি আমার ফ্রেন্ডদের সাথে চলে যাচ্ছি।আমি একটা চাকরি যোগাড় করে ফেলব।আমি কিছু টাকা জমিয়ে নিজের গাড়িও নিজেই কিনে ফেলব।’ এরপর একদিন হঠাৎ করেই আপনি ছেলের কাছে শুনতে পাবেনঃ ‘
বাবা, আমি এখন আলাদা থাকছি।’
‘আলাদা থাকছ মানে?তুমি কোথায় যাবে?’
‘সেটা কোনো ব্যাপার না, আমি এখন বড় হয়েছি।’
আর এখন আপনি দৌড়ে মসজিদে আসেনঃ ইমাম সাহেব! আমাকে একটা সূরা বলে দিন, একটা দুআ বলে দিন যাতে আমার ছেলেটা ভালো হয়ে যায়।’




এভাবে কোনো সমস্যার সমাধান হয় না।যখন তাদের বয়স ১৭,১৮,১৯,২০ হয়ে গিয়েছে আপনি তখন জরুরি সঙ্কট অনুভব করলে চলবে না। তাদেরকে গড়ে তুলতে হবে আরও অনেক অনেক আগে থেকে।

এখন আমি কিছু প্র্যাক্টিকাল উপদেশ দিতে চাই সেসব অভিভাবকের জন্যে যাদের সন্তানের বয়স ১০ এর নিচে।হাত তুলুন প্লিজ, যাদের সন্তানের বয়স ১০ এর কম।আচ্ছে, খুব বেশি নেই, আলহামদুলিল্লাহ।আমিও এই দলেই আছে।আমার সবচেয়ে বড়টার বয়স ১০।তো আমাদের জন্যে আমাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হলো সন্তানকে ইসলাম শিক্ষা দেওয়া।আমাদের পক্ষ থেকে তাদের ইসলাম শিক্ষা দেওয়া।যখন নবীরা (আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) দীন শিক্ষা দিতেন, তারা সকলের জন্যে তা করতেন।


আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা যখন বাচ্চাদের ইসলাম আর কুরআন শিক্ষা নিয়ে কথা বলেছেন - বাচ্চাদের শেখার বা উপদেশ গ্রহণ করার কথা তিনি খুব কম সময়ই উল্লেখ করেছেন - কিন্তু যখনি তিনি এ সম্পর্কে বলেছেন সেটা সব সময়ই বাচ্চাদের বাবা মায়ের কাছ থেকে। কথাটা আবার খেয়াল করুন।আল্লাহ যখনই কুরআনে বাচ্চাদের সঠিক পথ প্রাপ্ত হওয়ার কথা বলেছেন, সেটা সব সময়ই বাবা- মায়ের পক্ষ থেকে হয়েছে। আর অভিভাবকের মধ্য থেকে তা সব সময়ই বাবার তরফ থেকে হয়েছে।কারণ মা তো সর্বক্ষণ বাচ্চার পাশেই থাকেন।

একজন মা কে কোনো অতিরিক্ত কষ্ট পোহাতে হয় না বাচ্চার পাশে সবসময় থাকার জন্যে কিংবা বাচ্চার সবসময় খেয়াল রাখতে কিংবা তাকে উপদেশ দিতে।একজন মা কে কখনো মা হওয়ার ব্যাপারে ট্রেইনিং নিতে হয় না, এটা প্রকৃতিগতভাবেই হয়ে থাকে।আল্লাহ তাদের মাঝে এই অনুভূতি দিয়ে রেখেছেন।অন্যদিকে বাবাদের অবস্থা শোচনীয়।আমাদের একটা ট্রেইনিং এর মধ্য দিয়ে যেতে হয় সত্যিকারের বাবা হওয়ার জন্যে।প্রকৃতিগতভাবে আমাদের মাঝে এ অনুভূতি আসে না।কেবল আপনার সন্তান জন্ম নিয়েছে বলেই, যখন একজন মা তার সন্তানকে জন্ম দেন, তার সব আবেগ-অনুভূতি বদলে যায়, মুহূর্তেই সব বদলে যায়।কিন্তু একজন বাবার ক্ষেত্রে?তিন চার দিন পার হওয়ার পর বন্ধু যখন জিজ্ঞেস করে, ‘তোমার তো শুনেছি বাবু হয়েছে’ (আপনি বলেন) ‘হ্যা, কিন্তু আমি এখনো ধরতে পারিনি কি হয়েছে!’ কেউ আপনাকে বুঝিয়ে দিলে আপনি বুঝতে পারেন ব্যাপারটা।আমি কি বলছি বুঝতে পারছেন? ‘আমি এখনো ধরতেই পারিনি কি হয়েছে।’

কারণ বাবা হওয়ার যে উপলব্ধি তা স্বভাবগত ভাবে আমাদের মাঝে আসে না।আমাদের এই অনুভূতি গড়ে তুলতে হয়, এর পিছনে শ্রম দিতে হয়, তাই না?এজন্যেই আল্লাহ বলছেন লুকমান (রা) সময় করে নিচ্ছেন, সঠিক সুযোগটা বেছে নিচ্ছেন বাচ্চার সঙ্গে কথা বলার জন্যে।আমরা দেখেছি ইয়াকুব (আ) তাঁর সন্তানদের সাথে বলছেনঃ يَا بَنِيَّ إِنَّ اللَّهَ اصْطَفَىٰ لَكُمُ الدِّينَ আমরা ইব্রাহীম (আ) কে পেয়েছি, তিনি তাঁর সন্তানদের ঠিক একই উপদেশ দিয়েছেন যা ইয়াকুব (আ) বলেছেন।খুব চমৎকার বিষয়টা।কারণ এ থেকে বুঝা যায় একজন বাবা তাঁর সন্তানের প্রতি দায়িত্ব পালন করেছেন তাঁকে শুধু এটা শিখিয়ে নয়, যে নিজেকে কিভাবে গড়ে তুলতে হবে বরং তাঁকে কিভাবে একজন বাবা হতে হবে সেটাও শিখিয়েছেন।আমরাই আমাদের সন্তানকে শিখাব কিভাবে একদিন ভালো বাবা হতে হবে।

No comments:

Post a Comment