Labels: , , , , ,

নারীদের ঘরে নামায পড়ার হাদিসটির ব্যাখ্যা

●|● নারীদের ঘরে নামায পড়ার হাদিসটির ব্যাখ্যা ●|●

আপনারা জানেন, ধর্ম তাদের কাছে বেশ কঠোর। আমার অনেক ছাত্র/ছাত্রীরা আমার কাছে দ্বীন শিখতে আসেন। আরবি শিখতে আসেন। শায়খ আব্দুল নাসের এর কাছ থেকে ইসলামিক শরীয়াহ শিখতে আসেন। সারা আমেরিকা থেকে তারা টেক্সাসে আসেন। যখন আমি তাদেরকে শিখাই এবং তারা কিছু শিখেন, তারা বলে্ন, অনেক বোনই আছেন যারা হিজাব পরেন এবং শিক্ষার জন্য নানা জায়গায় ঘুড়ে বেড়ান। তারা কুর'আন মুখস্ত করেন। উস্তাদ, একটা হাদিস আছে যেটা আমাকে খুব কষ্ট দেয়। এটি বলতে আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে, এটাকে অন্যও বলতে পারছি না। এটি আমাকে অত্যন্ত কষ্ট দিচ্ছে। আমি বললাম, বলুন আমাকে।

যখন তিনি আমাকে হাদিসটি বললেন, আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, এটি আপনি কার কাছে শুনেছেন? কারণ, এটি কোন সামঞ্জস্যপূর্ণ হাদিস নয়। এটি কোন সামঞ্জস্যপূর্ণ আয়াতও নয়। যে ব্যক্তি এটি ব্যাখ্যা করেছেন তিনি অসামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যাখ্যা শিখাচ্ছেন। যে ব্যক্তির নিজের মধ্যে সামঞ্জস্যতা নেই, তিনি পুরো ধর্মকে একটি কলুষিত উপায়ে বর্ণনা করছেন শুধুমাত্র তার নিজস্ব মনস্তাত্ত্বিক সমস্যার কারনে। আর এর ফলে যা হয়েছে তা হল, ইসলামের এই পুরো প্রজন্মকে ইসলামের পথ থেকে ভীতির মুখে ঠেলে দিয়েছে।

যদি আপনার নিজের মধ্যে সামঞ্জস্যতা না থাকে, তখন ধর্মের মধ্যে সামঞ্জস্যতা আনার চেষ্টা করা মানে তারা ধর্মের মধ্যে তিক্ততা দেখতে পান। তারা দেখেন মানুষ ধর্ম থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।

উমাইমা (রাঃ) এর বর্ণিত যে হাদিসটি আছে, তিনি রাসূল (সঃ) এর কাছে এসে অভিযোগ করেছিলেন আসলে এটি একটি বিখ্যাত হাদিস। আমি আপনাদেরকে এর একটি অংশ বলছি। আসলে আমি শায়খ আব্দুল্লাহ আতহামীর সাথে এই হাদিসটি নিয়ে বসেছিলাম যিনি এখানেই আছেন। তিনি আমার কাছে এটি বিষদভাবে বর্ণনা করেছিলেন। আমি তাঁকে বলেছিলাম যে, আপনাকে আমাদের ক্যাম্পাসে আসতে হবে এবং আমাদের ছাত্র/ছাত্রীদেরকে এটি বুঝিয়ে বলতে হবে। তিনি কোথাও যেতে পারেন না। কাজেই আপনারা খুব ভাগ্যবান, তিনি কোথাও যেতে পারেন না। কারণ তিনি এখন এখানেই আছেন, আপনারা সত্যিই খুবই ভাগ্যবান।

যাই হোক, আমি এই হাদিসটি সম্পর্কে বলছিলাম।

এই হাদিসটি আমাদেরকে বলে যে, মহিলাদের উচিত বাড়ির একেবারে ভেতরের অংশে নামাজ আদায় করে। এবং এই হাদিসটি দিয়েই ফাতোয়া দেয়া হয় যে, মহিলাদের মসজিদে নামাজ পড়তে আসা উচিত না। তাদের নামাজ পড়া উচিত একেবারে বাড়ির ভেতরে।

পুরো হাদিসটি সম্পর্কে পড়াশোনা করার পর প্রথমত, আরও হাদিস আছে। আরও যে হাদিস আছে, সেটিতে মহিলারা রাসূল (সঃ) এর কাছে এসে অভিযোগ করেছিলেন যে, আমরা সালাতুল ফজরের জন্য মসজিদে আসি। তারা কোথা থেকে আসতেন? বাসা থেকে আল মসজিদে নববী তারা সালাতুল ফজরের জন্য আসতেন। কিন্তু আমাদের রাস্তায় নর্দমা/খাল পড়ে। তাই আমাদের কাপড় উঠিয়ে এটি পার হতে হয়। আমরা কি বাড়ীতে নামাজ পড়তে পারি? তিনি বলেছিলেন, না। বাকি পথ আসতে আসতে তোমাদের কাপড় থেকে তা ধুয়ে যাবে। তোমাদেরকে তারপরেও আসতে হবে। এবং সেটি ছিল সালাতুল ফজর। মহিলাদের হাঁটু পানি পার হয়ে মসজিদে যেতে হোত। আপনারা কেউ তো এটির উল্লেখ করেন না!

প্রসঙ্গক্রমে উমাইমা (রাঃ) এর গল্পে ফিরে যাই। এই মহিলা যাকে রাসূল (সঃ) বাড়ির একেবারে ভেতরে জায়গায় নামাজ পড়তে বলেছিলেন। যদিও তিনি মসজিদে নামাজ পড়তে চাইতেন। যখন আপনারা পুরো গল্পটি পড়বেন তখন আপনারা অনেক মজার ব্যাপার খুঁজে পাবেন গল্পটিতে। তার বৈবাহিক সম্পর্কে কিছু সমস্যা ছিল। তার স্বামী তাকে খুবই খুবই হিংসা করতেন। তার ব্যাপারে মাত্রাতিরিক্ত রক্ষণমূলক ছিলেন তিনি। উমাইমা (রাঃ) যখন নামাজ পড়তেন তখন তাঁর স্বামী তাঁকে বিরক্ত করতেন।

হ্যাঁ। রাসূল (সঃ) তাঁকে বললেন, কেননা উমাইমা (রাঃ) রাসূল (সঃ) এর কাছে অভিযোগ করেছিলেন যে, আমার স্বামী আমাকে নামাজ পড়ার সময় বিরক্ত করে। রাসূল (সঃ) তার স্বামীকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এটা কেন করছো? উত্তরে তার স্বামী বললেন, আমার স্ত্রী আমার সূরাগুলো চুরি করেছে! অন্যভাবে, তিনি যখন নামাজ পড়তেন তখন তার স্ত্রী তার কুর'আন তিলাওয়াত শুনে তা মুখস্ত করতেন। তিনি যখন এই মুখস্ত করা কুর'আনের আয়াতগুলো তিলাওয়াত করে নামাজ পড়া শুরু করলেন নিজে নিজে তখন তার স্বামী বললেন, সে নিজেই নামাজ পড়তে শুরু করেছে। আমি আর তার ইমামতী করতে পারছি না!

আসলে উমাইমা (রাঃ) যখন নিজে নিজে নামাজ পড়তে শুরু করেছিলেন, তখন তার স্বামী সেটিকে সহজভাবে নিতে পারেননি। সে নামাজে তাকে বিরক্ত করতেন। এরপর যখন উমাইমা (রাঃ) মসজিদে আসতেন, তখন সে অত্যন্ত রাগান্বিত হত। তিনি তার স্ত্রীর প্রতি এতোটাই আচ্ছন্ন ছিলেন যে, তিনি তাকে ছেড়ে কয়েক মিনিটও থাকতে পারতেন না। ব্যাপারটি হচ্ছে যখন উমাইমা (রাঃ) মসজিদে নামাজ পড়তেন, কাজেই রাসূল (সঃ) উমাইমা (রাঃ) কে বলেছিলেন, দেখো! সবার আগে তোমার উচিত তোমার বৈবাহিক সম্পর্ক রক্ষা করা। তোমাদের বৈবাহিক সম্পর্ক এই মুহূর্তে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। কাজেই তোমার উচিত বাড়িতে বেশি সময় ব্যয় করা। তোমার জন্য ভালো হবে যদি তুমি মসজিদে না আসো। প্রসঙ্গক্রমে, যেন সে তোমাকে বিরক্ত করতে না পারে, বাড়ির একেবারে ভেতরের স্থানে নামাজ পড়ো। যেন নিদেনপক্ষে তুমি শান্তি সহকারে নামাজ আদায় করতে পার। কারণ সে তোমাকে পাগল করে ছাড়ছে।

এখন আপনি যদি পেছনের ঘটনা না জানেন আর বলেন, মহিলাদের উচিত বাড়ির ভেতরে নামাজ আদায় করা। যদি কারও মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা থাকে মহিলাদের প্রতি, যখন সে বিয়ে করে এবং তার স্ত্রীকে এই হাদিসটি দেখায় কারণ সে বাড়ির ভেতরের অংশে নামাজ পড়েনি! তার কাছে দলিল আছে। তার কাছে প্রমাণ আছে। অথচ সামঞ্জস্যতা নেই!

এটি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আপনারা দেখেছেন, ব্যাপারটি মজার কিন্তু দুঃখজনকও! মানুষের জীবন দ্বীনের নামে তিক্তকর হয়ে যাচ্ছে! যে দ্বীন কিনা দুঃখ দূর করার জন্য এসেছে। এই দ্বীন যে কোন বিষয়ে মানুষকে সামঞ্জস্যপূর্ণ জীবন লাভের শিক্ষা দেয়।

ভিডিওটির ইউটিউব লিঙ্কঃ https://youtu.be/WfHaldTQPkY

No comments:

Post a Comment