Labels: , , ,

পর্নোগ্রাফী আত্মা ধ্বংসের হাতিয়ার

●|● পর্নোগ্রাফী আত্মা ধ্বংসের হাতিয়ার ●|●
এরপর আল্লাহ গুরুতর বিষয়টি নিয়ে বলেন। আর এই বিষয় নিয়ে বলেই আসলে আমি আমার কথা শেষ করতে চাচ্ছি। যদিও আরও অনেক কিছু নিয়েই বলা যেত। কিন্তু এই বিষয়টিকে আল্লাহ এত বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন যে বলার মত নয়!
ঠিক যেভাবে, ৩টি আয়াত রয়েছে, “শেষ-বিচারের দিন” নিয়ে। এখন পাচ্ছি,
وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ
إِلَّا عَلَىٰ أَزْوَاجِهِمْ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُومِينَ
فَمَنِ ابْتَغَىٰ وَرَاءَ ذَٰلِكَ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْعَادُونَ
(সুরাহ মাআ’রিজঃ আয়াত ২৯-৩১)
৩টি আয়াত, একই বিষয় নিয়েই, আবারও! একমাত্র অন্য আরেকটি বিষয় যা নিয়ে ৩টি আয়াত এসেছে, কী সেটা? এই তালিকায়, একমাত্র আর কোন বিষয়ে ৩টি আয়াত রয়েছে? –“শেষ-বিচারের দিন”। “শেষ বিচারের দিন এবং শাস্তি”।
আর এরপর, পরবর্তী যে বিষয় নিয়ে ৩টি আয়াত এসেছে, জানেন কী সেটা?
-“বেহায়াপনা”! আর তাদের কথা, যারা কীনা নিজেদের লজ্জাস্থান কে হেফাজত করে।

আমরা বর্তমানে বাস করছি চুড়ান্ত নির্লজ্জ এক পৃথিবীতে। এমন এক পৃথিবী, যেখানে আপনার হাতের মুঠোফোন দিয়েই যেকোন ওয়েবসাইট থেকে যেকোন ভিডিও চালানো যায় অনায়াসেই!
পর্নোগ্রাফী ইন্ডাস্ট্রি বর্তমানে একটি মাল্টি-ট্রিলিয়ন ডলারের ইন্ডাস্ট্রি!যার উদ্দেশ্য এবং কাজই হল আপনাদের প্রত্যেকেই যেন, কোন না কোনভাবে এসব নোংরামীর ভোক্তা হন, সেটা নিশ্চিত করা। এবং প্রতিটা নারী-পুরুষ ও শিশুর সামনে এইগুলো যেন উন্মোচিত হয়। আর তারা আশা করে আপনিও দেখবেন, আসক্ত হবেন এবং পরিণত হবেন আরও একজন ভোক্তায়!
এটা...এটাই হল আমাদের সমাজকে দেয়া পর্নোগ্রাফীর উপহার।এটা তৈরী করছে অমানুষ, মানুষকে পরিণত করছে পশুতে, যৌনবিকারগ্রস্ত মানুষে। এবং আপনাদের মধ্যেই দূর্ভাগ্যক্রমে কারও কারও এই আসক্তি রয়েছে এবং আপনারা এসব জঞ্জাল অনলাইনে দেখছেন। আপনারা দেখেন আবার নিজেদের বিভিন্ন মোবাইল ডিভাইস বা অ্যাপ এ সেইভ করে রাখেন এবং এই নিয়ে আপনাদের ভিতরে আর খারাপও লাগেনা। কেননা আপনারা নিজেরাই মনেমনে নিজেদের জন্য এগুলোকে গ্রহনযোগ্য ধরে নিয়েছেন। হয়ত মাঝেমধ্যে আপনার এনিয়ে একটু অনুশোচনা হয়, কিন্তু আবারও ফিরে যান এসবে।

আপনি ভাবছেন, “অন্তত, আমিতো আর কারও ক্ষতি করছিনা, অন্য কাউকেতো দেখাচ্ছিনা। নিজেই দেখছি। এটুকু ঠিকই আছে।” কিন্তু জানেন...আসলে কী হচ্ছে? ভেতরে ভেতরে আপনার আত্মা নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে! আপনার ভেতরে আর আত্মার কীছু বাকী নাই। আপনার সালাত হয়ে গেছে অন্তঃসারশূণ্য। এবং সেসময় আপনি একটুও চোখের পানি ফেলতে পারেন না, কেননা আপনার হৃদয়ে আল্লাহর ভয় এতটাই কমে গেছে। কারণ হল সেইসব নোংরামী, যা আপনি দেখে আসছেন এতদিন ধরে।তারই ফলাফল। এগুলাই আপনাকে পরিণত করেছে একটা মানুষরূপী পশুতে।যার ফলে, আপনি এখন আর স্বাভাবিকভাবে তাকাতেও পারেন না, যখন একজন নারী আপনার পাশ দিয়ে যায়- আপনি যেন দেখেন একটি মাংসপিন্ড হেঁটে যাচ্ছে।আপনি আর তাকে একজন মানুষ হিসেবে দেখতে পাননা যাঁরও রয়েছে সম্মান পাওয়ার অধিকার। আপনার দুচোখ সর্বদাই নিরীক্ষন করে বেড়াচ্ছে প্রতেককে, প্রতিটা বস্তুকে। সারাটাক্ষন আপনি হাঁ করে তাকিয়ে থাকেন, চেয়ে থাকেন, চোখ নামিয়ে নিতে আপনার রীতিমত কষ্ট হয়! যখন আপনি সাবওয়েতে কীংবা ক্যাম্পাসে,অথবা যখন কর্মক্ষেত্রে, নয়ত রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন, আপনি পারছেননা নিজেকে সংযত রাখতে। হয়ত একটা বিলবোর্ড এর দিকে তাকালেন,আপনি দ্বিতীয়বার ফিরে তাকান, তৃতীয়বার তাকান! এমন একটা সুযোগও আপনি হাতছাড়া করেন না যা দিয়ে আপনার অন্তরটা কলুষিত হয়।আপনি পরিপূর্ন ভাবে একজন আসক্ত ব্যক্তি।
তারপর কীনা আপনি বলেন, “ভাই,সালাতে(নামাযে) খুশু(মনোযোগ)আনব কীভাবে?!”
কোন দুনিয়ায় থাকেন আপনি?? কোন জগতে আপনি বাস করেন??

ভাইয়েরা আমার। বিশেষ করে ভাইদেরকেই বলছি, জানি কিছু বোনেরও এই সমস্যা রয়েছে। এটা একটা অত্যন্ত দুঃখজনক বাস্তবতা। এটা একটা যুদ্ধ। এবং এই যুদ্ধ যেকোন সামরিক যুদ্ধের চেয়েও ভয়ংকর। এটি সেই যুদ্ধ যা কীনা ধ্বংস করে দিচ্ছে আমাদের অন্তরকে।এই জিনিস আমাদের ঘর পর্যন্ত প্রবেশের পথ করে নিচ্ছে, রাস্তা বানিয়ে নিচ্ছে।
আচ্ছা, আমিও চাই আমার সন্তানদেরকে এসবের হাত থেকে যতদূর সম্ভব বাঁচাতে। কিন্তু যখন আমার সন্তান স্কুলে যায়, সেটা ইসলামিক স্কুলই হোক না কেন, খুবই উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে যে কেউ একজন, হতে পারে তাদেরই এক বন্ধু, তার আইপড কীংবা অনুরূপ কোন মোবাইল ডিভাইসে ওইসব নিয়ে এসে দেখাবে, “এই দেখ, দেখ সবাই”।
এটা খুবই বাস্তব একটা চিত্র। মোটেই কাল্পনিক কিছু নয়। এজন্য, আমাকেই আমার সন্তানদেরকে প্রস্তুত করতে হবে এই কুৎসিত-কদাকার জগত সম্পর্কে, যার মুখোমুখি তারা হবেই একসময়। এর থেকে পালানোর আর কোন পথ নেই আসলে, কোন মুক্তি নেই। এগুলো সবখানে, সব জায়গায়।

আপনারা ইসলামিক লেকচার দেখছেন ইউটিউবে, নিশ্চয়ই দেখে থাকবেন যে সেখানে যেকোন ভিডিওর পাশ দিয়েই ফলো-আপ ক্লিপগুলো দেয়া থাকে। তারমধ্যে একটা না একটা বাজে জিনিস থাকবেই, একটা কিছু নোংরা জিনিস থাকতেই হবে। আর আমার মনে হয়না এটা নিছক দুর্ঘটনা। এমন না যে, সবকিছুতেই আমি ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাই। তবুও আমি মনে করিনা এগুলো এমনি এমনিই হচ্ছে।
আর আপনাদের বেলায় আসলে কী হয়? আপনি একটা ভিডিও দেখছেন, পাশে একটা বাজে জিনিস দেখে ক্লিক করলেন, আবার আরেকটায় ক্লিক করলেন, আবার আরেকটায় ক্লিক করলেন, শেষপর্যন্ত গিয়ে ঐসব জঘন্য কিছু একটা দেখে ফেলেন। তাই হয় আপনাদের সাথে।

وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ (সুরাহ মাআ’রিজ, আয়াত ২৯)
বিশেষত, যখনই লজ্জাস্থান এর ব্যাপার আসে, তারা তা হেফাজত করে। তারা তাদের হায়া/লজ্জাবোধ কে সুরক্ষিত রাখে।
“ভাই, আমার জন্য কী সমাধান? আমার কী বিয়ে করে ফেলা উচিৎ?”
দেখলেন না, ঐদিন যেমন একজন জিজ্ঞেস করল, “আমি কীভাবে এখনই বিয়ে করতে পারি?!”
না রে ভাই, এই জিনিসের সমাধান বিয়ে নয়। আপনি যদি একজন যৌন-বিকারগ্রস্ত হয়ে থাকেন, তবে বিয়ের পরেও আপনি তাই থাকবেন। আপনার যদি এখনই লজ্জা না থেকে থাকে, বিয়ের পরেও আপনার লজ্জা থাকবেনা। সত্যি!!
আপনি ভাবছেন, বিয়ের মাধ্যমে আপনার সমস্যা শেষ হবে? না…আপনার সমস্যা বিয়ে নয়।আপনার সমস্যা আপনার আধ্যাত্মিক এবং মানসিক চিন্তাচেতনায়। আপনার সাহায্য দরকার। আপনাকে এসব বন্ধ করতে হবে। আপনার নিজেকে এভাবে কষ্ট দেয়া থামাতে হবে। নয়তো আপনার ভেতরে আর কিচ্ছু অবশিষ্ট থাকবে না।
কদিন আগেই একটা ইমেইল পেলাম, একজন টিনেজ বালক এর থেকে, যে কীনা পর্নোগ্রাফীতে আসক্ত। নামবিহীন মেইল, ১৪/১৫ বছরের টিন-এজার। সে লিখেছে, “আমি নিজেকে মেরে ফেলতে চাই, আমি পারছিনা বন্ধ করতে।আমি ১১ বছর বয়স থেকে এগুলো দেখছি। আমার বাবা-মা কিছু জানেন না”।

আমি এগুলা পড়ি আর কাঁদি। কারণ এই ছেলেতো একা নয়, এরকম লক্ষ লক্ষ মুসলিম ছেলেমেয়ের আজ এই অবস্থা। লক্ষ লক্ষ, লাখ লাখ! আমাদের ওদেরকে সাহায্য করতে হবে। যা কিছু পারি তাই করতে হবে।
এগুলোকে প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের নেই ট্রিলিয়ন ডলারের বিজ্ঞাপন ব্যবস্থা। নেই আমাদের। আর এটা আমার জন্য বলাটাও বাস্তবসম্মত হবেনা যে, এইসব ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার, ইন্টারনেট এগুলো সব হারাম! এটাই বাস্তব।এগুলো এখন অক্সিজেন এর মতই একটা স্বাভাবিক ব্যাপার।

আমরা শুধুমাত্র যা করতে পারি, তা হল, আমাদের তরুনদের সাথে এই বিষয়ে পরিপক্ব কথাবার্তা বলতে হবে এবং তাদেরকে শেখাতে হবে, কীভাবে এসব জিনিসকে মোকাবিলা করতে হয়, কীভাবে এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, এগুলোর ফাঁদে না পড়ে।

এখানে যারা প্রাপ্তবয়স্ক আছেন, ইন্ডিয়ান মুভি দেখা বন্ধ করুন ভাই! আপনি কেন এসব লেকচার এ অংশগ্রহন করছেন? কথা বলছেন সালাত(নামায)নিয়ে, সালাতের(নামাযের) গুরুত্ব নিয়ে, অথচ নিজেদের সংযম ধরে রাখতে পারছেন না! মা-মেয়ে, স্বামী-স্ত্রী, বোনেরা মিলে একসাথে যা ইচ্ছা দেখছেন, কী না দেখছেন?! আল্লাহ!!
থামুন। বন্ধ করুন এসব।
وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ

তারা তাদের লজ্জাস্থান হিফাজত করে। লজ্জাস্থান হিফাজত করা মানেই যে ব্যাভিচার/যিনা না করা তা কিন্তু নয়।এর মানে সেই সকল জিনিস (থেকে বিরত থাকা)যা আমাদের ঐ প্রলোভন এর দিকে ধাবিত করে। ঠেলে নিয়ে যায়। তারা লক্ষ্য করে, তারা রক্ষা করে।তারা জানে (কখন)তাদের সংযম-পালন আক্রমনের কবলে, তারা জানে (যখন) তাদের হায়া/লজ্জাবোধ হুমকির মুখে পড়ে। তারা বোঝে তাদের দূর্বলতা (কীসে) এবং আকাঙ্ক্ষা/চাহিদা সম্পর্কে। এই তীব্র আকাঙ্ক্ষা আল্লাহই আমাদের ভিতরে দিয়ে দিয়েছেন এবং সেটা আল্লাহ দিয়েছেন সঙ্গত কারণেই। তিনি এটা করেছেন। আর সবার মধ্যেই এই চাহিদা আছে।এটা বলতে আমার কোন দলিল এর প্রয়োজন নেই, জানি আমি।

পুরুষ মানুষ যারা এখানে আছেন, প্রতিদিন প্রতিনিয়তই আপনারা সবাই এই চ্যালেঞ্জ কে মোকাবিলা করছেন। বিশেষ করে এরকম একটা শহরে। অন্তত টেক্সাস আরেকটু বেশী রক্ষনশীল। অনেক বেশী না, কিছুটা বেশী। কিছু শহরে অন্তত এসব কুরুচিকর বিলবোর্ড বা এধরনের জিনিস বসানোর অনুমোদন দেয়া হয়না। আসলে তারা বিলবোর্ডই টাঙ্গানোর অনুমোদন দেয়না। কিন্তু সেটা হয়ত দ্রুতই বদলে যাবে, কেননা শেষপর্যন্ত যে সাম্রাজ্যবাদেরই জয় হয়!তাই না?!
কথা হচ্ছে, আপনারা এমন এক শহরে বাস করেন যেখানে সবই আপনাদের সামনে উন্মুক্ত, কোনকিছুই বাদ নেই। সবকিছুই। আর আপনাদের রীতিমত মরণ-যুদ্ধ করতে হয় নিজেদের বাঁচানোর জন্য।

এই অনুচ্ছেদটিতে এমনকী খুব বেশী বড় লক্ষ্য অর্জনের কথাও বলা হয়নি। এখানে কেবল ন্যুনতম অংশটুকুই এসেছে। আগেই বলেছি আপনাদের,তাই না? এগুলো হল ন্যুনতম, যা না হলেই নয়।আমাদের ন্যুনতম কর্তব্য হল যে আমরা যাবতীয় নির্লজ্জতা/বেহায়াপনা থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে চলবো। নিজেদের ভেতরে এই প্ররোচনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করব। আর আমি জানি, আপনাদেরই কেউ কেউ আছেন যারা এসব বন্ধ করার চেষ্টা করেছেন, তারপর আবার ফিরে গেছেন, আবারও চেষ্টা করেছেন, আবারও ফিরে গেছেন। আবার ফিরে গেছেন। বারবার ফেঁসে যাচ্ছেন এই চক্রান্তে। জানি আমি, অনেকেরই এমনটি হচ্ছে। আপনারা যুদ্ধ করে যাচ্ছেন এর সাথে। তবে হাল ছেড়ে দিবেন না।হাল ছেড়ে দিবেন না।

আর সেজন্য যা প্রয়োজন করুন...কখনও একা থাকবেন না। সবসময় ভাল বন্ধুর সাথে থাকুন। বাসার বাইরে থাকুন। অন্য কোথাও গিয়ে পড়াশোনা করুন। লাইব্রেরী চলে যান আর সেখানে পড়াশোনা করুন। এমন কোথাও চলে যান যেখানে আপনার আশেপাশে আরও মানুষ থাকবে।কারণ যখনই আপনি একা থাকেন,শয়তান আপনাকে পেয়ে বসে। আর আল্লাহর ভয় যদি আপনার জন্য যথেষ্ট না হয়, তবে অন্তত মানুষের ভয়ে যদি কাজ হয়। অন্তত নাই মামার চেয়ে তো কানা মামা ভাল?

আপনারা জানেন, এসব কথা অন্যখানে আমি আগেও বলেছি, বাবা-মায়েদেরকে আবারও বলছি, যদি আপনাদের বাসায় কম্পিউটার থেকে থাকে, দয়া করে সেটা যেন ল্যাপটপ না হয়, বাসায় ডেস্কটপ রাখুন। আর মনিটরটা যেন বিরাট বড় হয়, সবচাইতে বৃহৎ যেই মনিটরটা পাবেন! সত্যি সত্যি!! আর এটাও নিশ্চিত করবেন কম্পিউটার যেন রান্নাঘর কীংবা খাওয়ার ঘরে থাকে। বসার ঘরে ব্যবস্থা করবেন না, বাচ্চাদের ঘরে তো নয়ই,এমনকী আপনাদের শোবার ঘরেও না। খাবার ঘরে কম্পিউটার রাখবেন, একদম সব্বাই দেখতে পাচ্ছে এমন দিকে মুখ করে। তুমি হোম-ওয়ার্ক করতে চাচ্ছ?কর। মনিটর এদিকে ওদিকে ঘুরাতে পারবেনা। সবার মুখের সামনেই থাকবে।এভাবেই আপনাকে করতে হবে।বুঝলেন, এভাবেই আমাদের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
আপনার ১১ বছরের বাচ্চাকে কখনও স্মার্টফোন দিবেন না। কী ভাবছেন আপনি? ব্যাপারটা মোটেও স্মার্ট নয়।বাচ্চাদের আপনার স্মার্টফোন দিবেননা। আমি কেন এমন দেখি, যে ইসলামিক স্কুলে,ক্লাস টু বা ফাইভের বাচ্চার হাতে আইফোন! আইফোন-ফাইভ!! আমার নিজেরই তো আইফোন-ফাইভ নাই, আর তাদের কীনা আছে! কীসের জন্য? আপনার জানেন, এগুলো কত ভয়ংকর হতে পারে?
إِلَّا عَلَىٰ أَزْوَاجِهِمْ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُومِينَ

তাদের স্বামী/স্ত্রী ব্যতীত এবং তাদের অধিকারভুক্ত দাসী ব্যতীত,সেক্ষেত্রে (সংযত না হলে)দোষের কিছু নেই।আল্লাহ বলেছেন,আমাদের এসব আকাঙ্ক্ষা রয়েছে এবং আমরা সেগুলা সম্পাদন করতে পারব,পূরণ করতে পারব।কিন্তু শুধুমাত্র আমাদের বৈধ স্বামী-স্ত্রীর মাধ্যমে।কিন্তু এর বাইরে আমরা কোনকিছুই করতে পারবনা।আরেকটা ব্যাপার, যখন মানুষ ওইসব জঘন্য জিনিসে আসক্ত হয়,অবিরতভাবে ওইসব নিয়েই পড়ে থাকে এবং অতিরিক্ত বেশি পরিমানে সেসবের সংস্পর্শে থাকে, তাদের দাম্পত্য জীবন হয় দূর্বিসহ!তাদের দাম্পত্য সম্পর্ক সহজেই ভেঙ্গে যায়। ভোগ-সুখ নিয়ে তাদের নিজেদের ভেতরে একধরনের অলীক এবং অবাস্তব ধারণা গড়ে উঠে এবং তখন তারা আর নিজ স্বামী-স্ত্রীর কাছ থেকে সেই সুখ খুঁজে পায়না।ঘরে-ঘরে এগুলো নিয়ে অনেক বড় ফিৎনা হয়,পরিবার ধ্বংস হয়ে যায়,মুসলিম পরিবার!এগুলাই আমাদের বর্তমান সমাজে হচ্ছে আজকাল।

আল্লাহ তাদের সম্পর্কে বলেন,যারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে, তিনি বলেন,
“আমি বর্ণনা করছি যারা সালাত(নামায) প্রতিষ্ঠা করে”। এগুলো হচ্ছে মওসুফ-আল-মুসল্লীন,সালাত প্রতিষ্ঠাকারীর বৈশিষ্ট্য।এরপর “আল্লাজিনা…”, সব “আল্লাজিনা” গুলোর প্রত্যেকটিই হচ্ছে মুসল্লীদের এক একটি সিফাত বা বৈশিষ্ট্য। অর্থাৎ, যারা সালাত কায়েম করে,
-তারাই নিজেদের লজ্জাস্থান হেফাজত করে।
-তারাই শেষ-বিচারের দিন কে ভয় করে।
-তারাই হল সেসব মানুষ যারা নিজেদের সালাত কায়েমের ব্যাপারে নিয়মিত এবং অবিচল।
এরাই সেসব মানুষ। فَمَنِ ابْتَغَىٰ وَرَاءَ ذَٰلِكَ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْعَادُونَ (৭০:৩১)

আর যারা কীনা এই সীমার বাইরে চলে যায়, তারা মূলতঃ আগ্রাসনে লিপ্ত। এসব(নির্লজ্জ) কাজই একপ্রকার আগ্রাসন। দেখুন, যখন কীনা “আদু”(عَادُو) উল্লেখ করা হচ্ছে অথবা “আদি”(عَادِ) ।
“‘আদিন”(عَادٍ) আসছে “‘আদু”(عَادُو) থেকে, “আদা-ইয়াদু” থেকে। ঠিকাছে? “আল-আদুন”। “আল-আদাওয়া”(الْعَدَاوَةَ) আরবীতে এর মানে হল শত্রুতা। আল্লাহ বলছেন, যারাই কীনা তাদের কামনা-বাসনা চরিতার্থ করে, হালাল পথের বাইরে, বিবাহের বাইরে, যারাই সেটা করে তারাই একধরনের সক্রিয় আগ্রাসনে লিপ্ত।
প্রশ্ন হচ্ছে,কার বিরুদ্ধে এই আগ্রাসন?কেননা যখন আপনি কোন শত্রুর কথা বলেন,তাহলে মাথায় আসে সে কার শত্রু।যদি তারা শত্রুতে পরিণত হয়,তাহলে কাদের জন্য শত্রু?আল্লাহ সেটি বলেনি,উল্লেখ করেননি কোন মাফ’উল বিহি(আরবী ব্যকরনিক পরিভাষা)কীংবা কোন জার,মাজরুর।এর মানে কী হতে পারে জানেন?তারা তাদের নিজেদের শত্রু,তাদের পরিবারের শত্রু,তারা এমনকি আল্লাহর দেয়া শিক্ষার বিরুদ্ধেও শত্রুতায় লিপ্ত।বুঝতে পারছেন।এরাই হল এধরনের মানুষ।

আপনার আর আমার সবচেয়ে যে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ তা হল আমাদের অন্তর,আমাদের হৃদয়।আর এই নির্লজ্জতা আমাদের অন্তরটাকে ধ্বংস করে দেয়।নিশ্চিহ্ন করে দেয়।সবচেয়ে মূল্যবান যে জিনিসটিকে আমাকে সুরক্ষিত রাখতে হবে তা হল আমাদের ঈমান।আর এইসব নোংরা জিনিসগুলো আমাদের ঈমান কেই নষ্ট করে দিচ্ছে।আপনাদের ঈমান কে দুমড়ে মুচড়ে ছিড়ে ফেলছে!

এরকম হতে দিয়েন না আপনার সাথে,ঘটতে দিয়েন না এমনটা নিজের সাথে।আর আমি খালি আপনাকে মুখের কথা শোনাতেই পারব।আপনাকে দিয়ে কোনকিছু বন্ধ করাতে আমি পারবনা।সেটা আপনার নিজেরই নিজেকে দিয়ে করানো লাগবে।নিজেকে আপনার নিজেরই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।আপনাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, “আমার ঈমান কী আসলেই যথেষ্ট মূল্যবান আমার কাছে?আমার সালাত কী যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ আমার কাছে?...নাকি আমি এভাবেই চলতে থাকব আর ভান করব?!”

আচ্ছা,আমি আপনাদের কে “যাজুয়া’র কথা বলেছিলাম না?যখন কীনা আপনি পাপ এর সংস্পর্শে আসেন,তখন আর পুরো ব্যাপারটিকে মোকাবিলা করতে চাননা।কোনরকম এড়িয়ে যান।আর এরকম অনেকেই আসলে আছেন,যারা অনেককিছুই শোনেন,কিন্তু সেগুলো নিয়ে কাজ করেন না, খালি এড়িয়ে যান। সেক্ষেত্রে আপনিও আসলে “যাজুয়া”।আপনি মুসল্লীদের অন্তর্ভূক্ত নন। الْمُصَلِّينَ إِلَّا (৭০:২২)

“যাজুয়া”(جَزُوعً) সম্প্রদায়ের অন্তর্ভূক্ত হবেন না। “যাজু’ইন” দের দলভুক্ত হবেন না।যারা কীনা সবকিছু বাদ দিয়ে চলে।যারা কীনা তাদের সমস্যা কে মোকাবিলা করতেও চায়না।এর থেকে পালিয়ে থাকতে চায়।সবসময় (প্রলোভনের মুখে)হার মেনে নেয়, আর তারা খুব দ্রুতই সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। আর এটাই এই অনুচ্ছেদের শুরুর দিকের সুন্দর একটি ব্যাপার।“হালু’আ”(هَلُوعً) অর্থাৎ সংবেদনশীল।সাধারনতঃ আমরা প্রলোভনে সাড়া দেই।একটা ছবি দেখে আপনার একটা প্রতিক্রিয়া হয় যা আপনাকে আরেকটা ওয়েবসাইটে ঢুকতে উদ্বুদ্ধ করে যা থেকে আপনি আরেক জায়গায় চলে যান এবং সেখান থেকে অন্যত্র।প্রতিনিয়তই আপনি বিভিন্ন জিনিসের ডাকে সাড়া দিচ্ছেন।আপনাকে আসলে শিখতে হবে, কীভাবে আপনার প্রতিক্রিয়াটি সঠিক হবে।আর সঠিক প্রতিক্রিয়া তখনই আসবে যখন আমরা সালাত-কায়েমকারী দের অন্তর্ভুক্ত হব।

No comments:

Post a Comment