শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু

যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তা' আলার যিনি সকল সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা।

মুহাম্মদ (সাঃ)-আল্লাহর রাসূল

মুহাম্মদ (সাঃ)-সকল মানুষের জন্য উদাহরন, সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ, ও আল্লাহর রাসুল

আল কোরআন - মহান আল্লাহ প্রদত্ত কিতাব

এ সেই কিতাব যাতে কোনই সন্দেহ নেই। পথ প্রদর্শনকারী পরহেযগারদের জন্য,

আমাদেরকে সরল পথ দেখাও

আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।

আল্লাহ নিতান্ত মেহেরবান ও দয়ালু

সে সমস্ত লোকের পথ, যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ। তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।

Labels: ,

✦সুরা আল কাহাফ এর সিক্রেট✦

কখনো কি ভেবেছেন কেন মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সঃ) আমাদেরকে প্রতি শুক্রবার সুরা আল কাহাফ পরতে বলেছেন।

চলুন আজ তা জানার চেস্টা করি ইনশাআল্লাহ..

এই সুরাতে চারটি কাহিনী রয়েছে, যাতে রয়েছে মোরাল বা শিক্ষনীয় বিষয়, চলুন তবে দেখাযাক এবং বাঝার চেস্টা করি সেই গল্প গুলো আমাদের কি বোঝাতে চেস্টা করছে।

১) গুহার লোকেরা: এটা একটি ঘটনা কয়েক জন যুবকের যারা এক অবিস্বাসীদের শহরে বসবাস করতো, তাই তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে আল্লাহর জন্য তারা হিজরত করবে বা দেশান্তরে যাবে এবং তারা চলে যায় এবং আল্লাহ তাদের কে দয়া করেন সাহাজ্য করেন দেখুন আল্লাহ বলেন সুরা কাহাফ সুরা নং১৮ আয়াত নং ১৬: "তোমরা যখন তাদের থেকে পৃথক হলে এবং তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের এবাদত করে তাদের থেকে, তখন তোমরা গুহায় আশ্রয়গ্রহণ কর। তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের জন্যে দয়া বিস্তার করবেন এবং তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের কাজ কর্মকে ফলপ্রসু করার ব্যবস্থা করবেন। "

আল্লাহ তাদের কে গুহাতে সুর্য হতে রক্ষা করেন এবংন যখন তারা জেগে ওঠে তখন তারা দেখতে পায় সম্পুর্ন শহর বিস্বাসীদের । সুর্য হতে রক্ষা বিষয়ে আরো বিস্তারিত ডাঃ নার্গিস পারভীন কুরআন কি বিজ্ঞানময় ? পোস্ট টা অবশ্যই পড়বেন অসাধারন পোস্ট টি পাবেন এখানে
Click This Link

মোরাল/শিক্ষা: ধর্মবিশ্বাসের উপর পরিক্ষা


২) দুটি বাগানের মালিক আয়াত ৩২ হতে ৪৫
এই ঘটনাটি দু ব্যক্তির উদাহরণ যাদের আল্লাহ বাগানের মালিক করেছেন, এর মাঝে এক ব্যক্তি আল্লাহর শুকুর করেনি এবং সে কেয়ামত, পরকাল ও আল্লাহ সর্ম্পকেও সন্দেহ করে। অতপর তার বাগান ধবংস হয়- এবং সে দুঃখপ্রকাশ ও অনুশোচনা করে কিন্তু ততক্ষনে অনকে দেরি হয়ে গিয়েছে তাই তার দুঃখপ্রকাশ কোন কাজে আসেনি।

মোরাল/শিক্ষা: সম্পদের উপর পরিক্ষা

৩) মুসা (আঃ) এবংন খিদির (আঃ)/ জ্ঞানী ব্যক্তি আয়াত ৬৫ থেকে ৮২

যখন মুসা (আঃ) সে কিগ্গেস করা হলো-" এ পৃথিবীতে কে সবচেয়ে জ্ঞানী মানুষ? তিনি বললেন আমি কিন্তু আল্লাহ মুসা (আঃ) কে এমন এক লোকের সাথে সাক্ষাত করেলেন যাকে আল্লাহ রহমত দান করেছিলেন ও দিয়েছিলেন এক বিশেষ জ্ঞান যা সচরাচর দেখা যায় না এবং আমরা অনেকে যা বিস্বাস করতে পারিনা যে মানুষ অনেক কিছু জানতে পারে যা তার আয়ত্তাধীন নয়।

মোরাল/শিক্ষা: জ্ঞানের পরিক্ষা

৪) যুলকারনাইন সম্পর্কে আয়াত ৮৩-১০২

যুলকারনাইন সম্পর্কে বলা আছে যে তিনি ছিলেন মহান শক্তিধর শাসক যাকে আল্লাহ জ্ঞান ও ক্ষমতা দান করেন। যুলকারনাইন পৃথিবীর সুযদয় স্থান হতে সুর্যাস্থল স্থান পর্যন্ত তিনি ভ্রমন করেন এবং তার সামর্থ অনুযায়ী দান ও সাহাজ্য করতে থাকেন । তিনি ইয়াজুজ ও মাজুজ যা সমস্যা করছিলো সেটা মোকাবেলা করেন এবং সেই এলাকার লোকদের সাহাজ্যে বিশাল এক সুদৃঢ় প্রাচীর নির্মাণ করে দেন।

মোরাল/শিক্ষা: ক্ষমতার পরিক্ষা

এই সুরার মাঝের দিকে আল্লাহ ইবলিস \শায়তান সর্ম্পকে বলেন যাকেও এই সকল পরিক্ষা করা হয় দেখুন আয়াত ৫০ "যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বললামঃ আদমকে সেজদা কর, তখন সবাই সেজদা করল ইবলীস ব্যতীত। সে ছিল জিনদের একজন। সে তার পালনকর্তার আদেশ অমান্য করল। অতএব তোমরা কি আমার পরিবর্তে তাকে এবং তার বংশধরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করছ? অথচ তারা তোমাদের শত্রু। এটা জালেমদের জন্যে খুবই নিকৃষ্ট বদল। "

চলুন এবার দেখি বর্তমান সময়ে সুরা কাহাফ আমাদের জন্য কি ভাবে সম্পর্কিত:

আমদের জীবনে সবাইকে চারটি বিষয়ে পরিক্ষা দিতে হয়।

১। ধর্মবিশ্বাসের উপর পরিক্ষা
২। সম্পদের উপর পরিক্ষা
৩। জ্ঞানের পরিক্ষা
৪।ক্ষমতার পরিক্ষা

প্রথমত আমাদের ধর্মবিস্বাসে যা আছে সেটা কি আমরা মানি পালন করি আল্লাহর হক যেমন নামাজ, রোজা, হজ্জ, যাকাত, কুরবানি, জিকির এবং মানুষের হক যেমন অন্যের প্রতি ভালোব্যবহার, সর্বোত্তম সাহায্য, একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা , প্রাপ্য অধিকার দান, এবং শান্তি কামনা করা ও শান্তি বজায় রাখা ইত্যাদি কতটুকু আমরা করছি সেটার পরিক্ষা।

আমাদের সম্পদের ব্যবহার, সেটার সুষম বন্টন, সম্পদে যাদের হক পরিবার, ভাই বোন, ও গরীব অসুস্থ ও দুস্থ লোকের জন্য দান সেটা আমরা কতটুকু করি কিভাবে আয় করি কিবাভে ব্যায় করি সকল কিছুই পরিক্ষা আল্লাহর পক্ষ হতে

আমাদের জ্ঞানের পরিক্ষা আমরা যা জানি সেটা কি ভাবে কাজে লাগাই সেটা দিয়ে কিভাবে অনে্যর উপকার ,করি ও সমাজের শান্তি ও উন্নয়নে এই জ্ঞান কতটুকু কাজে লাগাই, জ্ঞান কোন কাজে ব্যবহার করি এসকলও পরিক্ষা।

ক্ষমতা আল্লাহ সবাইকে দেন না আর যাকে দেন তাকে পরিক্ষা করেন সে তার ক্ষমতা কিভাবে কাজে লাগাচ্ছে বা ব্যবহার করছে।

এখন এসকল পরিক্ষার কথা জানলাম তবে পরিক্ষায় ভালো করার ফমুলাটাও জানি চলুন দেখি:

সারভাইভাল কিট ১: ভালো সাহচর্য্য. ভালো বন্ধু ভালো পরিবেশ
সুরা কাহফ আয়াত ১৮ "আপনি নিজেকে তাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখুন যারা সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে আহবান করে এবং আপনি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনা করে তাদের থেকে নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নেবেন না। যার মনকে আমার স্মরণ থেকে গাফেল করে দিয়েছি, যে, নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং যার কার্য কলাপ হচ্ছে সীমা অতিক্রম করা, আপনি তার অনুগত্য করবেন না।"

সারভাইভাল কিট ২ : এ পৃথিবীর সর্ম্পকে জানা
সুরা কাফহ আয়াত ৪৫ "তাদের কাছে পার্থিব জীবনের উপমা বর্ণনা করুন। তা পানির ন্যায়, যা আমি আকাশ থেকে নাযিল করি। অতঃপর এর সংমিশ্রণে শ্যামল সবুজ ভূমিজ লতা-পাতা নির্গত হয়; অতঃপর তা এমন শুস্ক চুর্ণ-বিচুর্ণ হয় যে, বাতাসে উড়ে যায়। আল্লাহ এ সবকিছুর উপর শক্তিমান।"


সারভাইভাল কিট ৩: নিরহঙ্কারী ও ধৈর্য্যশীল হন
আয়াত ৬৯ "মূসা বললেনঃ আল্লাহ চাহেন তো আপনি আমাকে ধৈর্য্যশীল পাবেন এবং আমি আপনার কোন আদেশ অমান্য করব না। "

সারভাইভাল কিট ৪: আন্তরিকতা
আয়াত ১১০ "বলুনঃ আমি ও তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের ইলাহই একমাত্র ইলাহ। অতএব, যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন, সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার এবাদতে কাউকে শরীক না করে। "

সারভাইভাল কিট ৫: আল্লাহতে ভরসা করুন, তার দেয়া কোরআন পড়ুন জানুন বুঝুন ও প্রচার করুন।
আয়াত ২৭: আপনার প্রতি আপনার পালনকর্তার যে, কিতাব প্রত্যাদিষ্ট করা হয়েছে, তা পাঠ করুন। তাঁর বাক্য পরিবর্তন করার কেউ নাই। তাঁকে ব্যতীত আপনি কখনই কোন আশ্রয় স্থল পাবেন না।

সারভাইভাল কিট ৬: আল্লাহর সকল কর্তৃত্ব এবং কুকুর সহ সকল প্রানী মানুষের কল্যানে তৈরি
আয়াত ১৮: তুমি মনে করবে তারা জাগ্রত, অথচ তারা নিদ্রিত। আমি তাদেরকে পার্শ্ব পরিবর্তন করাই ডান দিকে ও বাম দিকে। তাদের কুকুর ছিল সামনের পা দুটি গুহাদ্বারে প্রসারিত করে। যদি তুমি উঁকি দিয়ে তাদেরকে দেখতে, তবে পেছন ফিরে পলায়ন করতে এবং তাদের ভয়ে আতংক গ্রস্ত হয়ে পড়তে।"

সারভাইভাল কিট ৬: শেষ বিচারের কথা স্বরন করুন যাতে বিপথগামী না হন
আয়াত ৪৮-৪৯ "তারা আপনার পালনকর্তার সামনে পেশ হবে সারিবদ্ধ ভাবে এবং বলা হবেঃ তোমরা আমার কাছে এসে গেছ; যেমন তোমাদেরকে প্রথম বার সৃষ্টি করেছিলাম। না, তোমরা তো বলতে যে, আমি তোমাদের জন্যে কোন প্রতিশ্রুত সময় নির্দিষ্ট করব না।

আর আমলনামা সামনে রাখা হবে। তাতে যা আছে; তার কারণে আপনি অপরাধীদেরকে ভীত-সন্ত্রস্ত দেখবেন। তারা বলবেঃ হায় আফসোস, এ কেমন আমলনামা। এ যে ছোট বড় কোন কিছুই বাদ দেয়নি-সবই এতে রয়েছে। তারা তাদের কৃতকর্মকে সামনে উপস্থিত পাবে। আপনার পালনকর্তা কারও প্রতি জুলুম করবেন না।

লেখাটির বিষয়বস্তু Tag / Keyword: আল কোরআনসুরা কাহফসুরা নং ১৮কোরআনের শিক্ষাকোরআনে ঘটনাকোরআনে কাহীনি,

0 comments
Labels:

Nouman Ali Khan - Popular Discourse Against Islam

0 comments
Labels: , ,

কুরআন কি বিজ্ঞানময় ?



কুরআন কে বলা হয়েছে বিজ্ঞানময় কুরআন । অনেক কিছুই কিন্তু আমাদের বুঝে আসেনা । আমাদের বুঝে না এলেই সেটা মিথ্যা এরকম একটা গ্রুপ মনে করে ।আমিও মনে করতাম ।

আমিও কুরআন নিয়ে ব্যাপক সংশয়ে ছিলাম । তো কুরআনে একটা মাত্র আয়াত দেখে আমি ইসলাম গ্রহণ করি ,মানে হল এটা মেনে নিয়েছি আমার জ্ঞানের মধ্যে কমন পড়ুক আর না পড়ুক কুরআন আল্লাহর বাণী ।

আমার জ্ঞান খুব সীমিত । আমি যদি মেডিক্যালে না পড়তাম তাহলে এটা আমি ধরতে পারতাম না । তবু আমার আবিষ্কৃত কুরানের বিজ্ঞানময় অর্থ নিয়ে আজকের পোস্ট । তাহলে শুরু করি ? আপনাদের জানাই কোন সে আয়াত যা দেখে আমি মুসলিম হয়েছিলাম ।

কিছু গুহার অধিবাসীদের নিয়ে এই আয়াত। চারিদিকে বৈরী পরিস্থিতি তৈরী হওয়ায় কিছু যুবক গুহায় আশ্রয় নেয় আর আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করে । আল্লাহর সাহায্য তারা পান ।
" আপনি কি গুহার অধিবাসী ও রাকিমের অধিবাসীদের আমার বিস্ময়কর নিদর্শন মনে করেন ?"( কাহফ ৯)

হ্যাঁ , আমি মনে করি । যুবকদেরকে লুকিয়ে রাখার জন্য সেই গুহায় ৩০৯ বছর ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয় । "অতঃপর তাদেরকে কয়েক বছর পর্যন্ত ঘুমন্ত অবস্থায় রাখলাম ।" (কাহফ ১১)
"তারা তাদের গুহায় ৩০৯ বছর পর্যন্ত অবস্থান করছিল' (কাহফ ২৫)


তো কি ঘটল সেখানে ? পাঠকের বোধগম্য করার জন্য এইবার এক ধরনের রোগীর চিকিৎসা পদ্ধতি বলি । আপনারা স্ট্রোকে প্যারালাইসিসের রোগী দেখে থাকবেন । এরা নিজেরা নড়তে চড়তে পারেন না । যদি একভাবে পড়ে থাকে তবে তাহলে প্রেশার পয়েন্টে ঘা হয়ে যায় । বেডসোর বলি আমরা সেই ঘা কে । এই বেড সোর প্রিভেন্ট করার জন্য পাশ ফিরিয়ে দিতে হয় । আর ঘণ্টায় ঘণ্টায় পার্শ্ব পরিবর্তন করতে হয় । দীর্ঘদিন মরার মত ঘুমিয়ে থাকলে ও একই কাহিনী । ৩০৯ বছর ঘুমিয়ে থাকলে তাদের ও বেডসোর হওয়ার সম্ভাবনা । কিন্তু তাদের হলনা । তাদেরকেও সাইড চেইঞ্জ করানো হত ।
কুরআনে এই সায়েন্টিফিক ব্যাপারটি যেদিন আমি প্রথম দেখেছি আমি চমকে গেছি ।
"অতঃপর তাদেরকে কয়েক বছর পর্যন্ত ঘুমন্ত অবস্থায় রাখলাম ।" (কাহফ ১১) "তারা তাদের গুহায় ৩০৯ বছর পর্যন্ত অবস্থান করছিল' (কাহফ ২৫)
" আর তাদের কে আমি পার্শ্ব পরিবর্তন করাতাম " (কাহাফ ১৮)

সাইড চেইঞ্জের বিষয়টির উল্লেখ দেখে আমি চমকে গেছি । যতবার দেখি ততবারই চমকে যাই । উহ , এত সুস্পষ্ট বিজ্ঞান ময় কুরআন । তারপরেতো আর অবিশ্বাস করা যায়না । বিষয়টি উল্লেখ করার কারণ ই হয়ত যেন চিকিতসক সমাজকে চিন্তার সুযোগ করে দেওয়া ।

জ্যোতির্বিদ্যা সম্পর্কে যত টুকু বলা আছে সেটা আমি বুঝতে পারিনি ।"আর উদয় কালে সূর্যকে তাদের গুহা থেকে ডান দিকে হেলতে দেখবে আর যখন অস্ত যায় তখন তা বাম দিক দিয়ে অতিক্রম করে , অথচ তারা সে গুহার প্রশস্ত স্থানে থাকে । এটি আল্লাহর নিদর্শন । " (কাহাফ ১৭ )

এটা এন্টেনার উপর দিয়ে গেছে । তবে এন্টেনার উপর দিয়ে গেলেই যারা মনে করে সবই মিথ্যা আর সেটা তারা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে । ভালই লাগে তদের কে দেখলে জগতে আমার থেকে অবুঝ কেউ আছে এটা দেখে শান্তি পাই ।( শয়তানী হাসি )

আমি মনে করি বাতাস না দেখলেও বাতাস আছে । তেমনি যা বুঝতে পারছিনা কেউ না কেউ তা বুঝে ।

আর যে আয়াত দেখে আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি তা দেখে অন্যরা গ্রহণ করবে এটা আমি মনে করিনা ।একই জিনিস দেখে কেউ হয়ত ঠিক পথে যায় আর কেউ হয়ত আরো বিপথে চলে যায় ।" তিনি এর দ্বারা অনেককেই বিপথগামী করেন এবং অনেককেই সৎ পথে পরিচালিত করেন । "(বাক্বারা/২৭) " আল্লাহ যাকে হেদায়েত দান করেন সে-ই হেদায়েত প্রাপ্ত হয় , যাকে তিনি বিপথগামী করেন , সে তার পথপ্রদর্শক অভিভাবক পাবেনা । " ( কাহাফ ১৮)

৩০থেকে ৪০ বছর বয়সটাই হয়ত এমন মন খোঁজ করে আধ্যাত্মিকতার। অনেককে হয়ত ভাল ভাবে আসতে বললে আসেনা , তাদের জন্য নানা রকম বিপদ আপদ দিতে হয় ।তারা হল ত্যাড়া গ্রুপ । আমিও ত্যাড়া গ্রুপের সদস্য । চরম বিপদ আপদে পড়ে আমিও প্রশান্তির খোঁজ করতে গেছিলাম ।
কিন্তু সবই সত্য জেনে ও আমার প্রতিদিনের অ ধঃপতন দেখে নিজেরই খারাপ লাগে । ডিজিটাল আমল নামা থাকলে বুঝে নিতাম কত টুকু পাপ পূণ্য অর্জন করেছি । হায়রে দীর্ঘশ্বাস শুধু। এ জীবন শুধু পরীক্ষা ক্ষেত্র । আর কিছু না । তাই চেষ্টা করে যাই ভাল থাকার ভাল রাখার ।

শুধু বলি " হে আমার রব ভুলগুলোর জন্য পাকড়াও করবেন না । হে রব ! আমাদের উপর বোঝা দিবেন না পূর্ববর্তীদের ন্যায় ; হে আমাদের রব ! ক্ষমতার বাইরে কোন গুরুভার আমাদের উপর দিবেন না । আমাদের পাপ মোচন করুন ,ক্ষমা করুন , দয়া করুন , আপনি ই আমাদের একমাত্র অভিভাবক । (বাক্বারা ২৮৭)

Written by-না পারভীন

0 comments
Labels: ,

ইসলাম বনাম দাসপ্রথা: কিছু ভুল ধারনা এবং ভুল বোঝাবুঝির অবসান।

মুসলিম তারুণ্যের মনে ইসলাম সম্পর্কে প্রশ্ন বা সন্দেহ জাগাতে কমিউনিস্টদের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হচ্ছে এই বিষয়টি। তারা বলে “ যদি ইসলাম মানবতার ধর্ম এবং সবসময়ের জন্য প্রযোজ্য হতো তবে এটি দাস প্রথার অনুমোদন দিত না। এটি প্রমান করে যে ইসলাম সবসময়ের জন্য নয়। কেবল মাত্র অতিতের কিছু সময়ের জন্য এটি কার্যকারী ছিল , এটি তার লক্ষ্য অর্জন করেছে। বর্তমান সময়ের জন্য প্রযোজ্য নয়।

 “ আমাদের মুসলিম তরুণরা এই চক্রান্তের শিকার হয়। তাদের মনে প্রশ্ন জাগে কেন ইসলাম দাস প্রথার অনুমোদন দেয়, এই ধর্মটি আল্লাহ্‌র প্রেরিত, এতে কোনো সন্দেহ নেই, এতেও কোনো সন্দেহ নেই যে এই ধর্মটি বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ সবসময়ের জন্যই প্রযোজ্য। কিন্তু ইসলাম কিভাবে দাসপ্রথা স্বীকার করে নেয়? যে ধর্মটি সবার জন্য সমান, যে ধর্মটি জাতী, বর্ণ, ধনী গরীব সবার জন্য একি জীবন ব্যবস্থার কথা বলে সেটা কিভাবে দাসপ্রথা অনুমোদন দেয় এবং এর জন্য আইন তৈরি করে? তবে কি আল্লাহ্‌ মানুষকে মালিক এবং দাস এই দুই পর্যায়ে বিভক্ত করেছেন? তিনি কি চান কিছু মানুষকে দাস হিসেবে ক্রয় বিক্রয় করা হবে, পন্যের মত? কিন্তু তিনি নিজেই তো বলেছেন যে সব মানুষ আদম এবং হাওয়া হতে সৃষ্টি, সব মানুষ সমান।

যদি আল্লাহ্‌ মানুষে মানুষে বিভেদ পছন্দ না করেন তবে কেন তিনি এই প্রথা কোরআনে নিষিদ্ধ করেননি? এক কথায় আজকের মুসলিম তরুণরা জানে এবং বিশ্বাস করে যে ইসলাম সত্য ধর্ম, কিন্তু তাদের মনের কোনে মাঝে মাঝে এসব প্রশ্ন উঁকি দিয়ে যায়। অনেকটা কোরআনে বর্ণিত ইব্রাহিম (আঃ) এর কথামত।

 আর স্মরণ কর, যখন ইব্রাহীম বলল, হে আমার পালনকর্তা আমাকে দেখাও, কেমন করে তুমি মৃতকে জীবিত করবে। বললেন; তুমি কি বিশ্বাস কর না? বলল, অবশ্যই বিশ্বাস করি, কিন্তু দেখতে এজন্যে চাইছি যাতে অন্তরে প্রশান্তি লাভ করতে পারি।আল কোরআন (২:২৬০)

কমিউনিজম মুসলিম তরুণদের মনে এসব সন্দেহের সৃষ্টি করে এবং এসব সন্দেহ পরিস্কার হবার সুযোগ না দিয়েই তাদেরকে এই সিদ্ধান্তে নিয়ে আসতে চায় যে, ইসলাম পুরনো এবং বাতিল জীবন ব্যবস্থা, এটি বর্তমান সময়ের সাথে খাপ খায় না।

কমিউনিস্টরা, যারা নিজেদের বিজ্ঞান্মনস্ক বলে দাবি করেন, মানুষকে বুঝাতে চায় যে তারা মানব সমাজের অমোঘ, অমোচনীয় সত্য আবিষ্কার করেছে যা কখনো সন্দেহ এবং প্রশ্নের সম্মুখীন হবে না। তারা প্রচার করে যে, মানুষের জীবন কিছু নির্দিষ্ট অর্থনৈতিক দশার মধ্যে দিয়ে গমন করে। এই দশা গুলো হচ্ছে ১ম কমিউনিজম, দাসপ্রথা, সামান্ততন্র, পুঁজিবাদ এবং ২য় কমিউনিজম ( যাকে মানব ইতিহাসের শেষ পর্যায় হিশেবে গণনা করা হয়)। তাদের মতে মানব ইতিহাসের বিভিন্ন ঘটনা, চিন্তা, নিয়মানুবর্তিতা, শৃঙ্খলা ইত্যদি বিভিন্ন অর্থনৈতিক অবস্থার বা অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রতিফলন মাত্র। তাদের মতে শুধুমাত্র একটি জীবন ব্যবস্থাই সব সময়ের জন্য প্রযোজ্য হতে পারে না।
ইসলাম পৃথিবীতে এসেছিল এমন একটা সময়ে যখন দাসপ্রথা বিলুপ্ত হচ্ছিল এবং সামান্ততন্ত্র শুরু হচ্ছিল। ইসলাম নিজস্ব কিছু আইন কানুন, নিয়ম শৃঙ্খলা, জীবন বিধান নিয়ে আসলো যা পূর্বের এবং পরের ( দাসপ্রথা এবং সামান্ততন্ত্র) দুটির মধ্যে সমন্বয় সাধন করে। এই কারনেই ইসলাম দাস প্রথা এবং সামান্ততন্ত্র দুটোকেই অনুমোদন দিয়েছিল। কারন ইসলাম অর্থনৈতিক উন্নয়নের কনো পর্যায়ের কথাও চিন্তা করেনি আবার এমন নতুন কোনো ব্যবস্থাও আনতে চায়নি যার সাথে মানুষ পুরোপুরি অবগত নয়।
২১ শতকের বর্তমান পৃথিবীতে দাড়িয়ে যদি কেউ এই দাসপ্রথা নিয়ে ভাবে তখন দাসদের উপর বর্বরতা অত্যাচার, দাসদের সাথে নিষ্ঠুর ব্যবহার ( বিশেষ করে তৎকালীন রোমান সম্রাজ্যের চিত্র) এসব চিত্র তার চোখে ভেসে উঠবে। এসবকে জঘন্যতম অপরাধ হিসেবেই বিবেচনা করবে সে। সে ভাববে, কিভাবে ধর্ম এসব ব্যাপার অনুমোদন দেয়? কিভাবে ইসলাম শান্তির ধর্ম হয়েও এমন নিষ্ঠুর দাসপ্রথার অনুমোদন দেয় যেখানে ইসলাম মানুষকে দাসত্ব থেকে মুক্তির কথা বলে? এসব প্রশ্ন তাকে দ্বিধান্বিত করবে।

আসুন একটু ভাবি, ভেবে দেখি ইতিহাস এ সম্পর্কে আমাদের কি বলে। ইতিহাস যে নিষ্ঠুর, বর্বর দাসপ্রথার কথা বলে তার বেশিরভাগই রোমান সম্রাজ্যের, যা ইসলামের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। রোমান সম্রাজ্যের সময়কালে দাসরা পন্য হিসেবে বিবেচিত হতো। তাদের মানুষ বলে গন্য করা হতো না। তাদের কোনো অধিকার ছিল না। তাদের যা আদেশ করা হতো তাই করতে তারা বাধ্য থাকত। তারা ছিল যুদ্ধবন্ধি। এসব যুদ্ধ কনো মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে হতো না। শুধুমাত্র রাজ্য জয় করে নিজের অধিকারে রাখার জন্য এসব যুদ্ধ হতো। এসব দাসরা রোমান জনগণের জন্য কাজ করত আর রোমানরা আরাম আয়েশে দিন কাটাত। দাসদের দিয়ে তারা ক্ষেত খামারে কাজ করাত। এসব কাজ করার সময় দাসদের পায়ে শিকল বাঁধা থাকত যাতে তারা পালিয়ে যেতে না পারে। তাদের উপযুক্ত পরিমান খাদ্য দেয়া হতো না। বেঁচে থাকার জন্য যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই দেয়া হতো খেতে।

রোমানরা ভাবত যে দাসরা অন্যান্য পশুপাখির মত শুধুমাত্র তাদের সেবা করার জন্যই জন্মেছে। দাসদের থাকার জায়গা হতো অন্যান্য গৃহপালিত পশুর সাথে অন্ধকার এবং দুর্গন্ধময় স্থানে। রোমানদের মনোরঞ্জনের জন্য দাসদের হিংস্র পশুর সাথে লড়াইয়ে নামতে হতো যা রোমানদের কাছে খেলা হিশেবে বিবেচিত হতো। শুধু রোমান সম্রাজ্যই নয়, পারস্য, ভারত এবং অন্যান্য দেশেও দাসদের ভাগ্য প্রায় একিই রকম ছিল। দাসদের জীবনের কনো মূল্য ছিলনা। তাদের হত্যা করা অপরাধ হিশেবে গন্য করা হতো না।

পৃথিবীর অবস্থা এমনই ছিল যখন ইসলাম দৃশ্যপটে আসে। ইসলাম তখন মানবতার বানী নিয়ে আসে। ইসলাম মালিক ও দাস উভয়কেই একথা বলে “ তোমরা উভয়ই সমান। যে তার দাসকে হত্যা করবে আমরা তাকে হত্যা করব। যে তার দাসের নাক কর্তন করবে আমরা তার নাক কর্তন করব। যে তার দাসের সাথে ভাল ব্যবহার করবে আমরা তার সাথে ভাল ব্যবহার করব।

ইসলাম বলে মানুষে মানুষে কনো ভেদাভেদ নেই।ইসলাম বলে “
 "And be good to the parents and to the near of kin and the orphans and the needy neighbor of (your) kill and the alien neighbor and the companion in a journey and the wayfarer and those whom your right hand possesses; surely Allah does not love him who is proud, boastful" (iv: 36).” 

“Your slaves are your brothers..so he who has a brother under him should feed him and clothe him as he himself feeds and dresses; do not ask them to do things which are beyond their power and if you do ask them to do such things then help them (Al-Hadith.)".


ইসলাম প্রথমে দাসের প্রতি মালিকদের আচরন এবং ব্যবহার বদল করতে চেষ্টা করে। চেষ্টা করে দাসদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদল করতে। এর ফলে দাসরা আর ব্যবসার বস্তু বা পন্য হিশেবে বিবেচ্য হল না। তারা তার মালিকের মতই মানুষ হিসাবে বিবেচ্য হতে থাকল। ইসলাম প্রথমে দাস এবং মালিকের মধ্যে সম্পর্ককে ভাতৃত্বে বদল করল। তারপর পর্যায়ক্রমে দাসদের মুক্তির কথা বলল। ইউরোপের অনেক বিখ্যাত লেখক এবং পণ্ডিত ইসলামের এই সফলতা স্বীকার করে নেয় এবং এর প্রশংসা করে। ইসলামের এই চেষ্টার ফলশ্রুতিতে দাসরা আস্তে আস্তে মালিকের পরিবারের একজন সদস্য হয়ে পড়ল।

মহানবী (সঃ) মুসলিমদের দাসদের সাথে আদেশের সূরে কথা বলতে নিষেধ করেন। তিনি তাদের সাথে নম্র ভাষায় কথা বলতে বলেন যাতে তারা নিজেদের ঐ পরিবারের একজন মনে করতে পারে এবং তাদের হীনমন্যতা দূর করতে পারে। তিনি বলেন “ নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ তোমাকে তাদের মালিক বানিয়েছেন। যদি তিনি চান তবে তুমি তাদের পর্যায়ে থাকতে পার। “ ইসলাম মালিক এবং দাসদের মানবতার বন্ধনে আবদ্ধ করে। ইসলাম দাস ও মালিকদের মধ্যে সমান অধিকারের কথা বলে।

ইসলামের প্রথম পর্যায়ে দাসদের অধিকার, দাসদের প্রতি ব্যবহার, সমাজে দাসদের অবস্থান ইত্যদি ব্যাপার সঠিক করে। কিন্তু শুধু এতেই থেমে থাকেনি। প্রথমে দাসদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদল করে। এরপর ক্রমান্বয়ে তাদের মুক্তির পথে এগোয়। দুটি পদ্ধতিতে এই দাসত্ব থেকে মুক্তির উপায় বের করে ইসলাম।

এই পদ্ধতি দুটি হচ্ছেঃ 
১। মালিকদের স্বেচ্ছায় তাদের অধিনস্ত্য দাসদের মুক্তি দানে উৎসাহ প্রদান। (Al Itq)
২। লিখিত চুক্তির মাধ্যমে। (Mukatabah),


প্রথম পদ্ধতিতে ইসলাম মালিকদের কোনরূপ শর্তারোপ না করে দাস মুক্তি দিতে উদ্বুদ্ধ করে। এক্ষেত্রে প্রথমেই মহানবী (সঃ) তাঁর অধিনস্ত সব দাসদের মুক্তি দেন। সাহাবীরাও তাকে অনুসরন করেন। আবুবকর (রাঃ) প্রচুর অর্থ ব্যয় করেন মালিকদের কাছ থেকে দাস ক্রয় করতে এবং পরে তাদের মুক্তি দেন। মহানবী (সঃ) বদর যুদ্ধের বন্ধীদের এই শর্তের দ্বারা মুক্তি প্রদান করেন যে, যদি তাদের প্রত্যকে ১০ জন মুসলিমকে লেখতে এবং পড়তে বা অন্য কোন উপকারে আসতে পারে তবে তারা মুক্ত। ইসলাম সে সময় ভুলবশত কনো লোকের হত্যার প্রায়শ্চিত্ত হিশেবে একজন দাসকে মুক্তি এবং ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে জরিমানা স্বরূপ অর্থ দেয়ার আইন প্রনয়ন করে। ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারি যে ঐ সময়ে বা এর পূর্ববর্তী বা পরবর্তী সময়ে আর কনো জাতীতে এত প্রচুর সংখ্যক দাস মুক্তির ঘটনা ঘটেনি যেমনটা ইসলামের অধিনস্ত জাতি সমুহে হয়েছিল। তাই ইসলামকে বলা হয় মানবতার ধর্ম।

দ্বিতীয় পর্যায়ে ইসলাম মালিক এবং দাসদের মধ্যে একটি লিখিত চুক্তির মাধ্যমে দাস মুক্তির ব্যবস্থা করে। এক্ষেত্রে দাসরা তার মালিকের সাথে একটি নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ যোগানের চুক্তিতে মুক্তি লাভ করে।দাস যখনি চুক্তির পরিমান অর্থ মালিককে দিতে পারবে তখনই মালিক তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য থাকবে। নতুবা দাস এর প্রতিকার চাইতে পারবে বিচারালয়ে। যে সময় কোনো দাস মুক্তির দাবি করবে নির্ধারিত অর্থের বিনিময়ে, সে সময় থেকে মালিক দাসের কাছ থেকে অর্থের সমপরিমাণ কাজ আদায় করতে পারে অথবা দাসকে বাহিরে অন্যান্য কাজ করে অর্থ উপার্জনের সুযোগ দিতে বাধ্য থাকবে। ঠিক এই নিয়মটিই ইসলামের নিয়ম চালু হওয়ার ৭০০ বছর পর ১৪০০ শতকে ইউরোপে দাস মুক্তির ক্ষেত্রে চালু হয়েছিল। ইসলাম এই আইন করে ঐসব দাসদের মুক্তির উপায় করে দেয় যারা মালিকের দয়ার জন্য অপেক্ষা না করে নিজ উদ্যেগে মুক্তি পেতে ইচ্ছুক। শুধু তাই নয়, ইসলাম এমন দাসদের সাহায্যের জন্য যাকাত বা বায়তুল মাল থেকে অর্থ দানের ব্যবস্থা করে। এভাবে আস্তে আস্তে ইসলাম তৎকালীন সমাজ থেকে দাস প্রথার বিলোপ ঘটিয়েছিল। ইসলামের এই মহৎ এবং মানবিক নিয়মগুলো পরবর্তীতে ইউরোপে দাস মুক্তির ক্ষেত্রে প্রভাবক হিশেবে কাজ করেছিল, যা অনেক বিখ্যাত পণ্ডিত তাদের লেখায় স্বীকার করে গেছেন।

অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন যে কেন ইসলাম মানবতার ধর্ম হয়েও এত পর্যায়, পদ্ধতি এবং সময় নিল, মালিকদের বিনা শর্তে তাৎক্ষনিক দাস মুক্তির আদেশ না দিয়ে? এর উত্তরের জন্য আমাদের তখনকার সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক অবস্থার কথা বিবেচনা করতে হবে। যখন ইসলাম আসলো তখন দাসপ্রথা পুরো পৃথিবীর সমাজ এবং অর্থনীতির আবিচ্ছেদ্য অংশ হিশেবে বিবেচিত হতো। খুব কম লোকই তখন এর খারাপ দিক নিয়ে ভাবত বা এর বিলোপের কথা ভাবত। তাই দাসপ্রথা বিলোপের আগে দাসদের প্রতি সমাজ এবং মালিকদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের প্রয়োজন ছিল। তাই ইসলাম প্রথমে সমাজে দাসদের অবস্থান এবং অধিকার সমুন্নত করার পদক্ষেপ নেয়। এরপর আস্তে আস্তে তা বিলোপ করার দিকে অগ্রসর হয়। তাই ইসলামে এই প্রথা বিলোপ করতে মহানবীর জীবনকাল থেকেও বেশি সময় লেগেছিল।

যেহেতু তাঁর জীবনকালেই কোরআন অবতীর্ণ হয় সে কারনেই কোরআন এবং হাদিসে দাসপ্রথা নিষিদ্ধ করে কোনো কথা নেই। কিন্তু এটি থাকবেই বা রাখতেই হবে এমন কিছুও বলা নেই। বরং দাসদের মুক্তির কথাই বলা হয়েছে অনেকবার। সে কারনেই মহানবীর মৃত্যুর কিছু সময় পর ইসলামী বিশেষজ্ঞরা একত্রিত হয়ে দাস প্রথা নিষেধের আইন প্রণয়ন করেন। এতে কোরআনের বা হাদিসের কোনো কথার বিরুদ্ধে যাওয়া হয়নি। এই ঐক্যমতের ভিত্তিতে ইসলামী আইন বা নিয়ম সম্পর্কে সিদ্ধান্তে আসার পদ্ধতি কেই ইজমা বলা হয়। ঠিক একই রকম ব্যাপার ঘটে মদ্যপানের নিষেধের আইনের ক্ষেত্রেও। কোরআনে প্রথমে মদ্যপানের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরা হয় এবং একে এড়িয়ে যেতে বলা হয়। এরপর যখন উপযুক্ত সময় আসলো তখন কোরআনে মদ্য পান হারাম বলে আয়াত নাযিল হলো। আল্লাহ্‌ তখনিই নিসেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন যখন উপযুক্ত সময় এসেছিল। আল্লাহ্‌ সর্বজ্ঞ। যদি মহানবীর জীবনকালেই তৎকালীন সামাজিক অবস্থা উপযুক্ত পর্যায়ে পৌঁছাত তখন আল্লাহ্‌ অবশ্যই কোরআনে দাস প্রথা নিষেধ করে দিতেন।


যখন আমরা বলি ইসলাম সকল মানুষের এবং সকল সময়ের জন্য এবং এটি সব ভাল এবং সুন্দর জিনিস গ্রহন করে যা সুস্থ এবং সুন্দর জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় তখন এই কথাটি দ্বারা এটা বুঝানো হয় না যে এতে সবসময়ের সব কিছু, সকল রিতিনিতি বলা আছে। এমনটা কখনোই নয়। ইসলামে ঐসব ব্যাপারের পুংখানপুঙ্খ বিবরন এবং দিকনির্দেশনা দেয় যেসব মৌলিক এবং গুরুত্বপূর্ণ মানবিক ব্যাপারগুলো সবসময়ের জন্যই প্রযোজ্য এবং অপরিবর্তনীয়। ইসলাম মানুষের ঐসব গুরুত্বপূর্ণ অপরিবর্তনীয় ব্যাপার গুলোর নির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা দেয়। ইসলাম চেয়েছে মানুষকে কিছু সাধারণ দিকনির্দেশনা দিতে যার দ্বারা মানুষ ভবিষ্যতের উন্নতির পরিকল্পনা করতে পারে। ঠিক এই ব্যাপারটিই করেছে ইসলাম দাসপ্রথার ক্ষেত্রে। এটি প্রথমে দাসদের অধিকার সমুন্নত করে এবং পরবর্তীতে দাসদের মুক্তির পথ ঠিক করে দেয় যাতে নিকট ভবিষ্যতে এই নিষ্ঠুর প্রথা সমূলে উৎপাটিত হয়।

ইসলাম কোনো যাদুর কাঠির ছোঁয়ায় মুহূর্তেই সমস্যা দূর করেনি। একটি পদ্ধতি অনুসরণ করেছে যাতে মানুষ আস্তে আস্তে সভ্য এবং সুন্দর জীবন লাভ করে। ইসলামের এই শিক্ষা আমাদের অনেক তথাকথিত ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো জানেন না বা মেনে চলেন না। তারা চান হথাত করে সমাজে ইসলামী নিয়ম কানুন প্রতিষ্ঠা করতে। হঠাত পরিবর্তন ঘটাতে। কিন্তু তা সম্ভব নয়। জোর করে কোনো মানুষকেই নিয়ম কানুন মেনে চলতে বাধ্য করা যায় না। মানুষকে আগে ইসলামের লক্ষ্য,উদ্দেশ্য এবং সুফল সম্পর্কে অবগত করতে হবে যাতে মানুষ নিজে থেকেই তা গ্রহন করে। এরপর আসে আইন কানুনের প্রচলন যা মানুষকে তার কু প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। কিন্তু এই ব্যাপারটি আমাদের অনেকেই উপলব্ধি করতে পারেন না। উনারা চান হঠাত পরিবর্তন।

যদি এমনটাই হতো তাহলে আল্লাহ্‌ অবশ্যই আল্লাহ্‌ নিজেই মানুষের মনকে ভাল করে দিতেন যাতে মানুষ খারাপের সংস্পর্শে না আসতে পারে। তিনিই সেই ক্ষমতার অধিকারী, সর্বশক্তিমান এবং সর্বজ্ঞ। কিন্তু তিনি কখনোই তার সৃষ্ট নিয়মের বাহিরে যেয়ে কিছু করেন না। তাই ইসলাম প্রথমে সমাজকে এমন অবস্থায় নিয়ে আসে যার ফলে পরবর্তীতে ইসলামে দাসপ্রথা নিষিদ্ধ হয়। হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এবং তাঁর সাহাবীরা এমন সব অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত রেখে গিয়েছিলেন যা পরবর্তীতে দাস প্রথা বিলপে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। ইসলাম সমাজ থেকে দাস প্রথা দূর করার সাথে সাথে মানুষের মন থকেও এই প্রথা দূর করেছিল। ইসলাম আব্রাহাম লিংকনের মতো শুধুমাত্র আদেশ যারি করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি। এমন ব্যবস্থা করেছে যাতে দাসরা সমাজের এবং রাষ্ট্রের একজন মানুষ হিসেবে প্রতিষ্টিত এবং পরিগণিত হয়। তারা যাতে সমাজের সাধারণ মানুষের মতই অধিকার ভোগ করে সে ব্যবস্থাই করেছে ইসলাম।

কিন্তু এতসব কিছুর পরও ইসলামের সমালোচকরা ইসলামে দাসপ্রথার অনুমোদন নিয়ে সমালোচনায় ব্যাস্ত থাকে।তারা এটা জানেনা বা জানলেও স্বীকার করেনা যে ইসলাম ইউরোপের ৭০০ বছর পূর্বে দাস প্রথাকে সমূলে উৎপাটন করেছিল। কারন তাদের ধারনা অনুযায়ী, ইসলামের প্রশংসা করা মানেই তো পুরনো ধ্যান ধারণার অনুসারী হয়ে যাওয়া, আধুনিক সমাজ থেকে ছিটকে পরা বা তথাকথিত আধুনিক মানুষদের চোখে হাস্যকর হওয়া। আবার তারাই জোর গলায় বলেন তারা নাকি সত্যের পূজারি। সত্যিই অদ্ভুত। যা সত্য তা সত্যই থাকবে। যতই এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হোকনা কেন। আল্লাহ্‌ কোরআন এবং ইসলামের সৃষ্টি করেছেন এবং তিনিই এর রক্ষাকর্তা। এবং একসময় এসব মিথ্যা এবং ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ইসলাম জয়ী হবেই। এতে কোনো সন্দেহ নেই।

ধন্যবাদ সবাইকে এত বড় একটি লেখা পড়ার জন্য। আমি যথাসম্ভব ছোট করার চেষ্টাই করেছি যাতে সংক্ষেপে কথা গুলো বলা যায়।

Written by-মেহেদী আনোয়ার

0 comments
Labels: ,

মুসলিমরা কি অমুসলিমদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে পারেনা?

বর্তমান বিশ্বে ইসলাম বিরোধীরা, ইসলাম বা মুসলিমদেরকে ‘হেট মঙ্গার’ জাতি বলে প্রচার করছে! বলা হচ্ছে যে, মুসলিমরা অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি মনে-প্রাণে ঘৃণা-বিদ্বেষ পোষণ করে। এর জন্য নাকি আল-কোরআনে স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া আছে, যা একজন মুসলিমকে অবশ্যই পালন করতে হবে! আর তাদের অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে তারা যে সকল আয়াত তুলে ধরেন সেগুলোর মধ্যে সূরা আল-মায়েদার ৫:৫১ আয়াত উল্লেখযোগ্য (যে ভাবে বর্তমানে বাংলায় অনুবাদ আছে)-

হে মুমিনগণ! তোমরা ইহুদী ও খৃষ্টানদের বন্ধু এবং অভিভাবক রূপে গ্রহণ করো না। তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু এবং অভিভাবক। এবং তোমাদের মধ্যে যে কেহ তাদের [বন্ধু এবং অভিবাবকরূপে] গ্রহণ করবে, সে তাদেরই একজন হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ অন্যায়কারীকে [সুপথে] পরিচালিত করেন না। (কোরআন ৫:৫১)

উপরের আয়াতে বাংলা অনুবাদে অনুবাদকগণ 'বন্ধু' ও 'অভিভাবক' শব্দ দুটি ব্যবহার করেছেন। কিন্তু মূল আরবীতে এই শব্দ দুটির প্রতিশব্দ রূপে একটি শব্দ দেওয়া হয়েছে, আর তা হল 'আউলিয়া।' সাধারণতঃ সবাই জানেন যে- আরবীতে ‘বন্ধু’ শব্দের সরল প্রতিশব্দ হল ‘সাদিক’, কিন্তু গভীরভাবে খেয়াল করুন, আল্লাহপাক কোরআনের এই নির্দিষ্ট আয়াতগুলোতে ‘সাদিক’ ব্যবহার না করে ‘আউলিয়া’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। কিন্তু সাদিককে 'সাদিক' না বলে 'আউলিয়া' শব্দটি ব্যবহার করা হল কেন?

এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে আমাদের ‘আউলিয়া’ শব্দটির অর্থ জানতে হবে। আরবী ‘অলি’ (অভিভাবক) শব্দ বহুবচনে ‘আউলিয়া’ হয়েছে। তাহলে দেখি ‘অলি’ শব্দটি বলতে কী বুঝায়? আমাদের দেশে বিয়ে-সাদির সময় বলা হয়ে থাকে বর বা কনের অলি কে? তখন জবাব দেওয়া হয়- যদি কনে বা বরের বাবা থাকেন, তাহলে বলা হয়- কনে বা বরের বাবাই অলি। যদি বাবা না থাকেন, চাচা/মামা বা অন্য কেউ থাকেন, তখন বলা হয়- অমুক কনে বা বরের অলি। এখানে ‘অলি’ মানে ‘অভিভাবক’ বা ‘তত্বাবধায়ক’ কাউকে বুঝানো হয়। অলি’র বহুবচন আউলিয়া- মানে অভিভাবকগণ বা তত্বাবধায়কগণ। এই আয়াতের নাজিলের প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে বিবেচনা করলে যে কেউ বুঝতে পারবে এই আয়াতে 'আউলিয়া' শব্দ দ্বারা 'নিরাপত্তাদানকারী' বুঝাচ্ছে। যেমন রাসুল সাঃ এর নিরাপত্তাদানকারী ছিলেন উনার চাচা আবু তালিব, যার কারণে মক্কার কাফিরগণ রাসুলের কোন ক্ষতি করতে পারে নাই। তবে এই আউলিয়া শব্দের প্রয়োগ আরো ব্যাপক, এই একই শব্দ দিয়ে আমরা ৪টি শব্দের প্রতিরূপ পেতে পারি যেমন- মিত্র (allies), বন্ধু (friend), অভিভাবক (guardian) ও নিরাপত্তাদানকারী (protectors)। এবং অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এই চারটি প্রতিশব্দের যে কোন একটি বা একত্রে চারটি প্রতিশব্দকে প্রয়োগ করা যাবে।

এবার আল-কোরআনের সূরা মুমতাহিনার ১৩ নং আয়াত দেখা যাক-

হে বিশ্বাসীগণ! যে সম্প্রদায়ের প্রতি আল্লাহ্‌ রুষ্ট হয়েছেন, তোমরা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করো না। ইতিমধ্যে তারা পরলোক সম্বন্ধে নিরাশ হয়েছে, যেমন নিরাশ হয়েছে অবিশ্বাসীরা কবরস্থদের বিষয়ে। (কোরআন ৬০:১৩)


এখানে দেখুন আল্লাহ বলছেন- লা তাতাওয়াল্লু (তাতাওয়াল্লু শব্দটি এসেছে আউলিয়া থেকে) কাওমান (কওম)। আল্লাহ এখানে স্পষ্ট করে শুধু সম্প্রদায়ের সাথে মিত্রতা না করতে বলছেন, কিন্তু এখানে ব্যক্তিগতভাবে কোন ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির সামাজিক বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করছেন না। এক সম্প্রদায় আরেক সম্প্রদায়ের সাথে বন্ধুত্ব নয় মিত্রতার বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে।

আমি মনে করি সর্বক্ষেত্রে অনুবাদ আমাদের রেফারেন্স হতে পারেনা, অনুবাদ যদি মূল ভাবকে যথার্থ ভাবে প্রকাশ করতে না পারে তাহলে আমাদের মূল আরবী শব্দটিকে গ্রহণ করতে হবে। এর জন্য ইসলামি বিশেষজ্ঞরা সব সময় অনুবাদের সাথে মূল আরবীকে মিলিয়ে দেখার উপদেশ দিয়ে আসছেন। এজন্য আমি মনে করি উপরোক্ত আয়াতে মিত্র/ নিরাপত্তাদানকারী প্রতিশব্দ ব্যবহার করা হলে সঠিক হবে, যা ইংরেজিতে Allies/Guardian বুঝায়।



অতএব, উপরোক্ত দুটি আয়াত থেকে দেখা যায় যে, এখানে বাংলায় বন্ধুকে অভিভাবক/নিরাপত্তাদানকারী হিসাবে দেখানো হয়েছে (৫:৫১) এবং এই নির্দেশ নিছক ব্যক্তি পর্যায়ে নয়, এটি দেওয়া হয়েছে সম্প্রদায়গতভাবে (৬০:১৩)। তাই স্বাভাবিকভাবে আরবীতে বন্ধু বলতে যে শব্দ (সাদিক) ব্যবহার করা হয়, উপরোক্ত দুটি আয়াতের একটিতেও তা ব্যবহার করা হয়নি!
[এই প্রবন্ধটি আজ ভোরে পোস্ট করেছিলাম- ২৪টি মন্তব্য, ৭ জনের ভাললাগা ১৬/১৭ প্রিয়তে নেওয়া আর ২৫০ এর উপর পঠিত ছিল। কিন্তু আজ দুপুরে ব্লগে এসে দেখি পোস্ট সরিয়ে ফেলা হয়েছে! অবাক হলাম বুঝতে পারলাম না কেন আমার এই পোস্টকে ড্রাফটে পাঠিয়ে দেওয়া হলো! এডমিনের কাছে জানতে চেয়ে ইমেল দিয়েছিলাম। জবাব পাই নাই। তাই ঘটনাটি কি বুঝতে পারছিনা। তাই আবার রিপোস্ট করলাম। যারা কমেন্ট করেছিলেন তাদের কমেন্ট মুছে যাবার জন্য দূঃখিত!!]


এবার দেখা যাক ঐ আয়াতের ঐতিহাসিক প্রক্ষাপট- অর্থাৎ কখন, কোথায় এবং কী প্রয়োজনে নাজিল হয়েছিল। আপনারা জানেন- ইতিহাসে উল্লেখ আছে যে- কীভাবে মুসলিমদেরকে তাদের সহায়, সম্পদ, ভিটেমাটি ফেলে জন্মভূমি থেকে দেশান্তরী হতে হয়েছিল। সেই দেশান্তরী মানুষদের তখন মদিনাবাসীদের মধ্য থেকে বেশ কিছু মানুষ মদিনাতে আশ্রয় দিয়েছিল। মুসলিমরা আশ্রয় নেবার সাথে সাথে ঐ নগরীর অন্যান্য জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের সহিত একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। ঐ চুক্তিতে এই মর্মে শর্ত ছিল যে- এই নগরের যে কোন গোত্র ও ধর্মীয় গোষ্ঠী যদি বহিরাগত শক্তি দ্বারা আক্রান্ত হয়, তাহলে সবাই মিলে তা প্রতিহত করতে হবে। এবং এই শান্তিচুক্তির অধীনের কেউ কখনো চুক্তি ভুক্ত গোত্রের কোন দুশমনদেরকে সাহায্য করতে পারবেনা। চুক্তি ভুক্ত গোত্রগণ একে অপরের সহিত যুদ্ধও করতে পারবেনা।



এই শান্তি চুক্তি মদিনার অন্যান্য গোত্র সহ মদিনার ইহুদীদের সাথেও ছিল। কিন্তু ইহুদীদের মধ্যে বানু কাইনুকাইরা মুসলিমদের সাথে চুক্তি ভঙ্গ করে যুদ্ধ বাধিয়েছিল। ইসলাম-পূর্ব সময় থেকে মদিনার কোন কোন মুশরিক গোত্রের সাথে এই ইহুদী বানু কাইনুকাদের মৈত্রীতা ছিল। তাই ঐ মিত্রতার শর্ত ছিল- কাইনুকাইরা আক্রান্ত হলে তাদের মিত্ররাও এদের রক্ষা করতে এগিয়ে যেতে হবে। যেহেতু ইসলাম গ্রহণের ফলে মদিনার সকল মুশরিক গোত্র এক মুসলিম মিল্লাতে অঙ্গীভূত হয়ে যাওয়ার কারণে তাদের পূর্বকৃত মিত্রতা অকার্যকর হয়ে যায়। আর এই অবস্থায় আল-কোরআনের এই আয়াত দিয়ে আল্লাহ নও-মুসলিমদের কী করতে হবে তার স্পষ্ট নির্দেশ বলে দিয়েছেন। কাজেই আমার দৃষ্টিকোণ থেকে এই আয়াত নাজিলের প্রেক্ষাপটে একটি অনুবাদ এভাবে হতে পারে-


হে মুমিনগণ! তোমরা ইহুদী ও খৃষ্টানদেরকে তোমাদের মিত্র এবং নিরাপত্তা প্রদানকারী (Protectors) রূপে গ্রহণ করো না। তারা পরস্পর পরস্পরের মিত্র এবং নিরাপত্তা প্রদানকারী। এবং তোমাদের মধ্যে যে কেহ তাদেরকে গ্রহণ করবে, সে তাদেরই একজন হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ অন্যায়কারীকে পরিচালিত করেন না

বাংলা ব্লগগুলোতে দেখা যায় যে- যে কেউ তার উদ্দেশ্য পূর্ণ হয় এমন আয়াত পেলে তৎক্ষণাত তুলে নিয়ে আসেন। কিন্তু এটি কোরানিক সুনান নয়। আল-কোরআনের কোন এক আয়াত পড়েই কেউ তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা। আল-কোরানের অনেক আয়াত আছে যেগুলোর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট থাকে, তাই একাধিক আয়াতকে সামনে এনে বিচার বিশ্লেষণ করে তবেই সিদ্ধান্তে আসতে হয়। ঐতিহাসিক সেই প্রেক্ষাপটকে উপেক্ষা করলে মূল অর্থ পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে অনুবাদকের চেয়ে ইসলাম বিরোধীদের অজ্ঞতাই বেশী দায়ী। কিন্তু সেই অজ্ঞতাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেবার পরও একে নিয়ে চর্বিত-চর্বণ কপটতার শামিল। দুঃখজনক হলো এটাই ব্লগগুলোতে আজকাল অনেকে করছে।



যেহেতু এই একটি আয়াত নিয়ে ইসলাম বিদ্বেষীরা যখন তখন ইসলামকে ‘হেট মঙ্গার’ ধর্ম প্রমাণ করতে লেগে যায়, তাই আমি এই আলোচনা আমার শিরোনামের আলোচ্য সূচির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চেষ্টা করেছি। তবে একজন সঠিক মুসলিম জানেন যে- একজন অমুসলিমদের প্রতি একজন মুসলিমের সম্পর্ক কেমন হবে, তার স্পষ্ট দিক-নির্দেশনা আল্লাহ পাক আল-কোরআনে দিয়ে রেখেছেন! বাস্তব সত্য হচ্ছে যে- নানাবিধ প্রতিকূলতার জন্য পৃথিবীর প্রতিটি ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির, সম্প্রদায়ের সাথে সম্প্রদায়ের, রাষ্ট্রের সাথে রাষ্ট্রের বন্ধুত্ব গড়ে উঠেনা। কিন্তু তার মানে এই নয় যে- বন্ধুত্ব নেই বলে তারা পরস্পরের দুশমন হয়ে যায়। বন্ধুত্ব অনেক প্রকার হতে পারে। ব্যক্তিক, সামাজিক, ব্যবসায়িক, পেশাভিত্তিক, রাষ্ট্রিক ও আন্তর্জাতিক। তবে যদি ধরে নেয়া হয় যে- এই আয়াত দ্বারা ব্যক্তি কেন্দ্রিক বন্ধুত্বকে নিষেধ করা হয়েছে, তবে সেই বন্ধুত্বটি হবে আত্মিক বন্ধুত্ব, আর আত্মিক বন্ধুত্বের জন্য অবশ্য বেশ কিছু শর্ত পূরণ হবার দাবি রাখে।



ব্যক্তি, সম্প্রদায়, রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব বজায় সম্পর্কে আল-কোরআনে আল্লাহ আমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন যে- যে সব অমুসলিম, ব্যক্তি, সম্প্রদায়, রাষ্ট্র, ও আমাদের সাথে ভাল ব্যবহার করবে, আমরা যেন তাদের সাথেও ভাল ব্যবহার করি। যারা জানেন না- তাদের জানার জন্য আমি এখানে তার উল্লেখ করছি। উপরের বহুল আলোচিত আয়াতের কিছু পরের আয়াত নং ৫৭-৫৮ তে আল্লাহ পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন, কাদের সাথে এক জন মুসলিম বন্ধুত্ব করতে পারবে বা পারবেনা-

হে মুমিনগণ, আহলে কিতাবদের মধ্য থেকে যারা তোমাদের ধর্মকে উপহাস ও খেলা মনে করে, তাদেরকে এবং অন্যান্য কাফেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করো না। আল্লাহকে ভয় কর, যদি তোমরা ঈমানদার হও। আর যখন তোমরা নামাযের জন্যে আহবান কর, তখন তারা একে উপহাস ও খেলা বলে মনে করে। কারণ, তারা নিবোর্ধ। (৫:৫৭-৫৮)

উপরের আয়াতের আলোকে যদি দেখি তাহলে শুধু ইহুদি নাসারা নয়, যারা যেখানেই হোক এমনকি এই ব্লগেও আমার ধর্মকে উপহাস করে, আমাদের রাসুলকে নিয়ে খারাপ উক্তি করে, আমাদের বিশ্বাসকে ভ্রান্ত বলে, আর সে যদি মুসলিম মা-বাবা'র সন্তানও হয়ে থাকে কিংবা আমার আপন ভাই হয়ে থাকে তার সাথেও আমাদের আত্মিক সম্পর্কযুক্ত বন্ধুত্ব হতে পারেনা।



আর যদি কোন ইহুদি-নাসারা কিংবা নাস্তিক যিনি আমার ধর্ম, আমার বিশ্বাস, আমার রাসুল, আমার কিতাব নিয়ে নীরব থাকেন, কোন ধরণের নেগেটিভ আচরণ না করেন, তাহলে আত্মিক না হলেও সামাজিক বন্ধুত্ব করতে আপত্তি থাকার কথা নয়। এই নীতি ব্যক্তিক, সামাজিক, রাষ্ট্রিক ও আন্তর্জাতিক সকল ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।



সূরা আল-মুমতাহিনার ৯ নং আয়াতে আল্লাহ নিষেধ করেন-

আল্লাহ কেবল তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেন, যারা ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেছে এবং বহিস্কারকার্যে সহায়তা করেছে। যারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করে তারাই জালেম। (৬০:৯)

আবার একই সূরার ৮ নং আয়াতে আল্লাহ বলে দিয়েছেন কাদের সাথে সু-সম্পর্ক রাখা যাবে-

ধর্মের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি এবং তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেনি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদেরকে ভালবাসেন। (৬০:৮)

উপরোক্ত আয়াত দ্বারা- পানি থেকে তেল যেমন আলাদা হয়ে থাকে, তেমনি অমুসলিমদের সাথে সু-সম্পর্ক রাখা আর না রাখার নির্দেশ স্পষ্ট হয়ে গেছে। একজন স্বল্প জ্ঞানী লোকও বুঝতে পারবেন যে- এই আয়াতগুলোর আলোকে আল্লাহ অতি ক্ষুদ্র এক মানব গোষ্ঠিকে বুঝাচ্ছেন- যারা নিজেরাই হেট মঙ্গার, ইসলাম বিদ্বেষী, অসহিষ্ণু, ইসলামের কুৎসারটনাকারী, মুসলিমদের প্রতি জোর-জবরদস্তকারী, ও সন্ত্রাসী প্রকৃতির। কোরআনের এই আয়াতগুলোতে কোনভাবেই পৃথিবীর যে কোন মতবাদে বিশ্বাসী ভাল, সভ্য ও শান্তিকামী মানুষদের বুঝানো হয়নি।
বর্তমান বিশ্বে ইসলাম বিরোধীরা, ইসলাম বা মুসলিমদেরকে ‘হেট মঙ্গার’ জাতি বলে প্রচার করছে! বলা হচ্ছে যে, মুসলিমরা অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি মনে-প্রাণে ঘৃণা-বিদ্বেষ পোষণ করে। এর জন্য নাকি আল-কোরআনে স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া আছে, যা একজন মুসলিমকে অবশ্যই পালন করতে হবে! আর তাদের অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে তারা যে সকল আয়াত তুলে ধরেন সেগুলোর মধ্যে সূরা আল-মায়েদার ৫:৫১ আয়াত উল্লেখযোগ্য (যে ভাবে বর্তমানে বাংলায় অনুবাদ আছে)-

হে মুমিনগণ! তোমরা ইহুদী ও খৃষ্টানদের বন্ধু এবং অভিভাবক রূপে গ্রহণ করো না। তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু এবং অভিভাবক। এবং তোমাদের মধ্যে যে কেহ তাদের [বন্ধু এবং অভিবাবকরূপে] গ্রহণ করবে, সে তাদেরই একজন হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ অন্যায়কারীকে [সুপথে] পরিচালিত করেন না। (কোরআন ৫:৫১)

উপরের আয়াতে বাংলা অনুবাদে অনুবাদকগণ 'বন্ধু' ও 'অভিভাবক' শব্দ দুটি ব্যবহার করেছেন। কিন্তু মূল আরবীতে এই শব্দ দুটির প্রতিশব্দ রূপে একটি শব্দ দেওয়া হয়েছে, আর তা হল 'আউলিয়া।' সাধারণতঃ সবাই জানেন যে- আরবীতে ‘বন্ধু’ শব্দের সরল প্রতিশব্দ হল ‘সাদিক’, কিন্তু গভীরভাবে খেয়াল করুন, আল্লাহপাক কোরআনের এই নির্দিষ্ট আয়াতগুলোতে ‘সাদিক’ ব্যবহার না করে ‘আউলিয়া’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। কিন্তু সাদিককে 'সাদিক' না বলে 'আউলিয়া' শব্দটি ব্যবহার করা হল কেন?

এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে আমাদের ‘আউলিয়া’ শব্দটির অর্থ জানতে হবে। আরবী ‘অলি’ (অভিভাবক) শব্দ বহুবচনে ‘আউলিয়া’ হয়েছে। তাহলে দেখি ‘অলি’ শব্দটি বলতে কী বুঝায়? আমাদের দেশে বিয়ে-সাদির সময় বলা হয়ে থাকে বর বা কনের অলি কে? তখন জবাব দেওয়া হয়- যদি কনে বা বরের বাবা থাকেন, তাহলে বলা হয়- কনে বা বরের বাবাই অলি। যদি বাবা না থাকেন, চাচা/মামা বা অন্য কেউ থাকেন, তখন বলা হয়- অমুক কনে বা বরের অলি। এখানে ‘অলি’ মানে ‘অভিভাবক’ বা ‘তত্বাবধায়ক’ কাউকে বুঝানো হয়। অলি’র বহুবচন আউলিয়া- মানে অভিভাবকগণ বা তত্বাবধায়কগণ। এই আয়াতের নাজিলের প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে বিবেচনা করলে যে কেউ বুঝতে পারবে এই আয়াতে 'আউলিয়া' শব্দ দ্বারা 'নিরাপত্তাদানকারী' বুঝাচ্ছে। যেমন রাসুল সাঃ এর নিরাপত্তাদানকারী ছিলেন উনার চাচা আবু তালিব, যার কারণে মক্কার কাফিরগণ রাসুলের কোন ক্ষতি করতে পারে নাই। তবে এই আউলিয়া শব্দের প্রয়োগ আরো ব্যাপক, এই একই শব্দ দিয়ে আমরা ৪টি শব্দের প্রতিরূপ পেতে পারি যেমন- মিত্র (allies), বন্ধু (friend), অভিভাবক (guardian) ও নিরাপত্তাদানকারী (protectors)। এবং অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এই চারটি প্রতিশব্দের যে কোন একটি বা একত্রে চারটি প্রতিশব্দকে প্রয়োগ করা যাবে।

এবার আল-কোরআনের সূরা মুমতাহিনার ১৩ নং আয়াত দেখা যাক-

হে বিশ্বাসীগণ! যে সম্প্রদায়ের প্রতি আল্লাহ্‌ রুষ্ট হয়েছেন, তোমরা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করো না। ইতিমধ্যে তারা পরলোক সম্বন্ধে নিরাশ হয়েছে, যেমন নিরাশ হয়েছে অবিশ্বাসীরা কবরস্থদের বিষয়ে। (কোরআন ৬০:১৩)


এখানে দেখুন আল্লাহ বলছেন- লা তাতাওয়াল্লু (তাতাওয়াল্লু শব্দটি এসেছে আউলিয়া থেকে) কাওমান (কওম)। আল্লাহ এখানে স্পষ্ট করে শুধু সম্প্রদায়ের সাথে মিত্রতা না করতে বলছেন, কিন্তু এখানে ব্যক্তিগতভাবে কোন ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির সামাজিক বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করছেন না। এক সম্প্রদায় আরেক সম্প্রদায়ের সাথে বন্ধুত্ব নয় মিত্রতার বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে।

আমি মনে করি সর্বক্ষেত্রে অনুবাদ আমাদের রেফারেন্স হতে পারেনা, অনুবাদ যদি মূল ভাবকে যথার্থ ভাবে প্রকাশ করতে না পারে তাহলে আমাদের মূল আরবী শব্দটিকে গ্রহণ করতে হবে। এর জন্য ইসলামি বিশেষজ্ঞরা সব সময় অনুবাদের সাথে মূল আরবীকে মিলিয়ে দেখার উপদেশ দিয়ে আসছেন। এজন্য আমি মনে করি উপরোক্ত আয়াতে মিত্র/ নিরাপত্তাদানকারী প্রতিশব্দ ব্যবহার করা হলে সঠিক হবে, যা ইংরেজিতে Allies/Guardian বুঝায়।



অতএব, উপরোক্ত দুটি আয়াত থেকে দেখা যায় যে, এখানে বাংলায় বন্ধুকে অভিভাবক/নিরাপত্তাদানকারী হিসাবে দেখানো হয়েছে (৫:৫১) এবং এই নির্দেশ নিছক ব্যক্তি পর্যায়ে নয়, এটি দেওয়া হয়েছে সম্প্রদায়গতভাবে (৬০:১৩)। তাই স্বাভাবিকভাবে আরবীতে বন্ধু বলতে যে শব্দ (সাদিক) ব্যবহার করা হয়, উপরোক্ত দুটি আয়াতের একটিতেও তা ব্যবহার করা হয়নি!



এবার দেখা যাক ঐ আয়াতের ঐতিহাসিক প্রক্ষাপট- অর্থাৎ কখন, কোথায় এবং কী প্রয়োজনে নাজিল হয়েছিল। আপনারা জানেন- ইতিহাসে উল্লেখ আছে যে- কীভাবে মুসলিমদেরকে তাদের সহায়, সম্পদ, ভিটেমাটি ফেলে জন্মভূমি থেকে দেশান্তরী হতে হয়েছিল। সেই দেশান্তরী মানুষদের তখন মদিনাবাসীদের মধ্য থেকে বেশ কিছু মানুষ মদিনাতে আশ্রয় দিয়েছিল। মুসলিমরা আশ্রয় নেবার সাথে সাথে ঐ নগরীর অন্যান্য জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের সহিত একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। ঐ চুক্তিতে এই মর্মে শর্ত ছিল যে- এই নগরের যে কোন গোত্র ও ধর্মীয় গোষ্ঠী যদি বহিরাগত শক্তি দ্বারা আক্রান্ত হয়, তাহলে সবাই মিলে তা প্রতিহত করতে হবে। এবং এই শান্তিচুক্তির অধীনের কেউ কখনো চুক্তি ভুক্ত গোত্রের কোন দুশমনদেরকে সাহায্য করতে পারবেনা। চুক্তি ভুক্ত গোত্রগণ একে অপরের সহিত যুদ্ধও করতে পারবেনা।



এই শান্তি চুক্তি মদিনার অন্যান্য গোত্র সহ মদিনার ইহুদীদের সাথেও ছিল। কিন্তু ইহুদীদের মধ্যে বানু কাইনুকাইরা মুসলিমদের সাথে চুক্তি ভঙ্গ করে যুদ্ধ বাধিয়েছিল। ইসলাম-পূর্ব সময় থেকে মদিনার কোন কোন মুশরিক গোত্রের সাথে এই ইহুদী বানু কাইনুকাদের মৈত্রীতা ছিল। তাই ঐ মিত্রতার শর্ত ছিল- কাইনুকাইরা আক্রান্ত হলে তাদের মিত্ররাও এদের রক্ষা করতে এগিয়ে যেতে হবে। যেহেতু ইসলাম গ্রহণের ফলে মদিনার সকল মুশরিক গোত্র এক মুসলিম মিল্লাতে অঙ্গীভূত হয়ে যাওয়ার কারণে তাদের পূর্বকৃত মিত্রতা অকার্যকর হয়ে যায়। আর এই অবস্থায় আল-কোরআনের এই আয়াত দিয়ে আল্লাহ নও-মুসলিমদের কী করতে হবে তার স্পষ্ট নির্দেশ বলে দিয়েছেন। কাজেই আমার দৃষ্টিকোণ থেকে এই আয়াত নাজিলের প্রেক্ষাপটে একটি অনুবাদ এভাবে হতে পারে-


হে মুমিনগণ! তোমরা ইহুদী ও খৃষ্টানদেরকে তোমাদের মিত্র এবং নিরাপত্তা প্রদানকারী (Protectors) রূপে গ্রহণ করো না। তারা পরস্পর পরস্পরের মিত্র এবং নিরাপত্তা প্রদানকারী। এবং তোমাদের মধ্যে যে কেহ তাদেরকে গ্রহণ করবে, সে তাদেরই একজন হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ অন্যায়কারীকে পরিচালিত করেন না

বাংলা ব্লগগুলোতে দেখা যায় যে- যে কেউ তার উদ্দেশ্য পূর্ণ হয় এমন আয়াত পেলে তৎক্ষণাত তুলে নিয়ে আসেন। কিন্তু এটি কোরানিক সুনান নয়। আল-কোরআনের কোন এক আয়াত পড়েই কেউ তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা। আল-কোরানের অনেক আয়াত আছে যেগুলোর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট থাকে, তাই একাধিক আয়াতকে সামনে এনে বিচার বিশ্লেষণ করে তবেই সিদ্ধান্তে আসতে হয়। ঐতিহাসিক সেই প্রেক্ষাপটকে উপেক্ষা করলে মূল অর্থ পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে অনুবাদকের চেয়ে ইসলাম বিরোধীদের অজ্ঞতাই বেশী দায়ী। কিন্তু সেই অজ্ঞতাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেবার পরও একে নিয়ে চর্বিত-চর্বণ কপটতার শামিল। দুঃখজনক হলো এটাই ব্লগগুলোতে আজকাল অনেকে করছে।



যেহেতু এই একটি আয়াত নিয়ে ইসলাম বিদ্বেষীরা যখন তখন ইসলামকে ‘হেট মঙ্গার’ ধর্ম প্রমাণ করতে লেগে যায়, তাই আমি এই আলোচনা আমার শিরোনামের আলোচ্য সূচির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চেষ্টা করেছি। তবে একজন সঠিক মুসলিম জানেন যে- একজন অমুসলিমদের প্রতি একজন মুসলিমের সম্পর্ক কেমন হবে, তার স্পষ্ট দিক-নির্দেশনা আল্লাহ পাক আল-কোরআনে দিয়ে রেখেছেন! বাস্তব সত্য হচ্ছে যে- নানাবিধ প্রতিকূলতার জন্য পৃথিবীর প্রতিটি ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির, সম্প্রদায়ের সাথে সম্প্রদায়ের, রাষ্ট্রের সাথে রাষ্ট্রের বন্ধুত্ব গড়ে উঠেনা। কিন্তু তার মানে এই নয় যে- বন্ধুত্ব নেই বলে তারা পরস্পরের দুশমন হয়ে যায়। বন্ধুত্ব অনেক প্রকার হতে পারে। ব্যক্তিক, সামাজিক, ব্যবসায়িক, পেশাভিত্তিক, রাষ্ট্রিক ও আন্তর্জাতিক। তবে যদি ধরে নেয়া হয় যে- এই আয়াত দ্বারা ব্যক্তি কেন্দ্রিক বন্ধুত্বকে নিষেধ করা হয়েছে, তবে সেই বন্ধুত্বটি হবে আত্মিক বন্ধুত্ব, আর আত্মিক বন্ধুত্বের জন্য অবশ্য বেশ কিছু শর্ত পূরণ হবার দাবি রাখে।



ব্যক্তি, সম্প্রদায়, রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব বজায় সম্পর্কে আল-কোরআনে আল্লাহ আমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন যে- যে সব অমুসলিম, ব্যক্তি, সম্প্রদায়, রাষ্ট্র, ও আমাদের সাথে ভাল ব্যবহার করবে, আমরা যেন তাদের সাথেও ভাল ব্যবহার করি। যারা জানেন না- তাদের জানার জন্য আমি এখানে তার উল্লেখ করছি। উপরের বহুল আলোচিত আয়াতের কিছু পরের আয়াত নং ৫৭-৫৮ তে আল্লাহ পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন, কাদের সাথে এক জন মুসলিম বন্ধুত্ব করতে পারবে বা পারবেনা-

হে মুমিনগণ, আহলে কিতাবদের মধ্য থেকে যারা তোমাদের ধর্মকে উপহাস ও খেলা মনে করে, তাদেরকে এবং অন্যান্য কাফেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করো না। আল্লাহকে ভয় কর, যদি তোমরা ঈমানদার হও। আর যখন তোমরা নামাযের জন্যে আহবান কর, তখন তারা একে উপহাস ও খেলা বলে মনে করে। কারণ, তারা নিবোর্ধ। (৫:৫৭-৫৮)

উপরের আয়াতের আলোকে যদি দেখি তাহলে শুধু ইহুদি নাসারা নয়, যারা যেখানেই হোক এমনকি এই ব্লগেও আমার ধর্মকে উপহাস করে, আমাদের রাসুলকে নিয়ে খারাপ উক্তি করে, আমাদের বিশ্বাসকে ভ্রান্ত বলে, আর সে যদি মুসলিম মা-বাবা'র সন্তানও হয়ে থাকে কিংবা আমার আপন ভাই হয়ে থাকে তার সাথেও আমাদের আত্মিক সম্পর্কযুক্ত বন্ধুত্ব হতে পারেনা।



আর যদি কোন ইহুদি-নাসারা কিংবা নাস্তিক যিনি আমার ধর্ম, আমার বিশ্বাস, আমার রাসুল, আমার কিতাব নিয়ে নীরব থাকেন, কোন ধরণের নেগেটিভ আচরণ না করেন, তাহলে আত্মিক না হলেও সামাজিক বন্ধুত্ব করতে আপত্তি থাকার কথা নয়। এই নীতি ব্যক্তিক, সামাজিক, রাষ্ট্রিক ও আন্তর্জাতিক সকল ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।



সূরা আল-মুমতাহিনার ৯ নং আয়াতে আল্লাহ নিষেধ করেন-

আল্লাহ কেবল তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেন, যারা ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেছে এবং বহিস্কারকার্যে সহায়তা করেছে। যারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করে তারাই জালেম। (৬০:৯)

আবার একই সূরার ৮ নং আয়াতে আল্লাহ বলে দিয়েছেন কাদের সাথে সু-সম্পর্ক রাখা যাবে-

ধর্মের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি এবং তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেনি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদেরকে ভালবাসেন। (৬০:৮)

উপরোক্ত আয়াত দ্বারা- পানি থেকে তেল যেমন আলাদা হয়ে থাকে, তেমনি অমুসলিমদের সাথে সু-সম্পর্ক রাখা আর না রাখার নির্দেশ স্পষ্ট হয়ে গেছে। একজন স্বল্প জ্ঞানী লোকও বুঝতে পারবেন যে- এই আয়াতগুলোর আলোকে আল্লাহ অতি ক্ষুদ্র এক মানব গোষ্ঠিকে বুঝাচ্ছেন- যারা নিজেরাই হেট মঙ্গার, ইসলাম বিদ্বেষী, অসহিষ্ণু, ইসলামের কুৎসারটনাকারী, মুসলিমদের প্রতি জোর-জবরদস্তকারী, ও সন্ত্রাসী প্রকৃতির। কোরআনের এই আয়াতগুলোতে কোনভাবেই পৃথিবীর যে কোন মতবাদে বিশ্বাসী ভাল, সভ্য ও শান্তিকামী মানুষদের বুঝানো হয়নি।

Written by-মুনিম সিদ্দিকী

0 comments
Labels: ,

বেঞ্চমার্ক মুহাম্মদ (স):। লাইফ ইজ বিউটিফুল। ট্রাই করেই দেখুন না। প্লিজ!

জন্মের আগেই তিনি বাবাকে হারান। মা ও চলে যান ৬ বছর হতে না হতে। শেষ সম্বল দাদাও ওপারে পাড়ি জমান ৮ম বছরে। দরিদ্র চাচার ঘরে শেষ আশ্রয়। একই কস্ট যাদের বুকে আছে তারা এভাবে ভাবতে পারেন যে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষটির শুরুটা এমনই ছিল। এতটাই শুন্য। সমাজের এমনতর শিশুটির প্রতি হাতটা বাড়িয়ে দিন। হয়তো সে ও বড় কিছু হবে। চাচা হলে পরম মমতায় কোলে নিন অনাথ ভ্রাতুস্পুত্র/ত্রীটিকে। তার জমি-জমা কেড়ে নেয়ার চক্রান্ত্ বাদ দিন।

তিনি শুয়ে বসে চাচার ঘরে খাননি। একপাল ছাগল/দুম্বা চড়াতেন। হেল্প করতেন নানানভাবে। সিরিয়ার দিকে ও হজের সময় চাচার ব্যবসায় লেগে গেছেন কৈশোরেই। আমাদের কৈশোরও অল্প-বিস্তর এমনটি হতে পারে। মাকে একটু হেল্প। বাবার আয়ের সাথে দুটো টাকার যোগ। জগতটাকে চেনা। হতে পারে ক্ষুদ্র ব্যবসা বা চাকরী। যখন যেখানে যেভাবে পারা যায়।

কৈশোরেই ছেলেটি আল-আমিন উপাধি পেয়ে যায় পাড়ার লোকদের কাছে। তজ্জন্য নবী বা রাসুল হবার দরকার পড়েনি। স্কুল-গামী কিশোরিদের শিষ দেয়া বা নিছক বোকা সোকা ভাল ছাত্র হবার চেয়ে Active ভাল ছেলে- সৎ, সাহসি হিসেবে নাম ফুটলে দোষ কি?

বিশিস্ট ব্যবসায়ী খাদিজার ব্যবসায়িক ফার্মে ম্যনেজার হিসেবে যোগ দিয়ে তিনি অল্প সময়েই সৎ, দক্ষ, ব্রিলিয়ান্ট অফিসার হিসেবে চিহ্নিত হয়ে যান।পরে খাদিজা (র) সমস্ত ব্যবসার দায়িত্বই তাকে দিয়ে দেন। এমনকি জীবনাটাও একসাথে কাটানোর প্রস্তাব পাঠান। আমরা যারা অন্যের ব্যবসা প্রতিস্টানে কাজ করছি তাদের কাছে এর চেয়ে ভালো Example কি হতে পারে?

ব্যবসার মালিকানা হাতে পেলে তিনি হলেন Employer. জগৎবাসীর কাছে এর চেয়ে ভাল বস্‌ আর কে হতে পারে? আমরা যারা বস্‌ আছি তারা অনায়াসেই মুহাম্মদ (স) কে ভালো বসের উপমা হিসেবে নিতে পারি। পরবতীকালে উনার রাজনৈতিক কর্মীদের কাছে উনি কেমন নেতা ছিলেন তাও আমরা জানি। ফালতু কথা, মিথ্যাচার, বেইনসাফি, বেঈমানির নেতাগিরির কালচারটা বাদ দিয়ে আমরাতো তাঁর মত নেতা হতে পারি। যে পার্টিই হোকনা কেন। অন্তত: কর্মিদের কাছে।

তিনি ছিলেন স্বামী, পিতা, দাদা, চাচা সবই। কেমন আচরণ করেছেন আত্নীয়কুলের সাথে। দুধ-মা হালিমা বা দুধভাইর সাথে। আমরা কেমন করি? মেকিভ্দ্রতার খোলস ছেড়ে আমরা চাইলে তেমন হতে পারি।

তিনি অনেকের প্রতিবেশি ছিলেন। দূর কোন বনবাদাড়ে থাকতেন না। ঢাকা শহরে আমার প্রতিবেশিরা কেমন আছে? তারা কি খায়? গ্রামান্চলের প্রতিবেশি সম্পর্কই বা কেমন? রেষারেষির অনল বা আধহাত সীমানা গন্ডগোলের চক্র থেকে চাইলে আমরা বেরুতে পারি। মনটা ভাল থাকবে।

তিনি মেহমান হতেন। তবে অল্প সময়ের জন্য। বে আক্কেলের মত দিনের পর দিন আত্নী্য় বাড়িতে পড়ে থাকতেননা। গৃহকর্তার সামর্থ্যমত আপ্যায়নে পরমতৃপ্ত হতেন। 'বোরহানি বা ডিম ছিলনা' বলতে বলতে বিয়েবাড়ি ত্যাগের ঘৃন্যতা ছিলনা উনার মধ্যে। আসুন আমরা তেমন হই।

মেহমান আসত তার কাছে। প্রায়ই। এমনকি রাতে বিছানা নস্টকরে চলে যাওয়ার রেকর্ডও আছে। রাগ করেননি। কৃত্রিম হাসি দাতে চেপে 'খেয়ে গেলে ভাল হতোনা' ধরনের ভন্ডামি করেন নি। ধনী আর দরিদ্র ভেদে বিহেভ করেননি। আসুন বিষয়টা শোধরাই।

মুসলিম ছাড়াও ইহুদি, খ্রিস্টান, পৌত্তলিক নানাবিধ অনুসারিদের সাথে তিনি চলাফেরা, উঠাবসা, লেনদেন করেছেন। কারও বিন্দুমাত্র সম্পদ লুট করেন নি। মানুষের অধিকারের প্রতি চরমতর শ্রদ্ধা দেখিয়েছেন। হিন্দুর জমি, বসত ভিটা, দোকান লুট করে যেসব মুসলিম 'লেকচার' দেন তাদেরজন্য ডাবলঘৃনা। এমনকি ভিন ধর্মানুসারীদের নুন্যতম 'হেয়' চোখে দেখাও ঘোরতর অপরাধ।

মুহাম্মদ (স) সৈনিক, সেনাপতি, রাজনৈতিক, বিরোধিদলীয় নেতা, সরকার প্রধান, রাস্ট্রপ্রতি, ইমাম, মুসল্লি, পথচারী, কয়েদি, জেলার, লোনদাতা, লোনগ্রহীতা, বক্তা, শ্রোতা অসংখ্য চরিত্রে 'অভিনয়' করেছেন। ধনাঢ্যতা, দারিদ্র্য, নিপিড়ীত, ক্ষমতাবান সব ধরনের সময় পেয়েছেন। আমরাও এর কোন একটি সময় বা চরিত্র পার করছি।

অনুসরন করতে চাইলে পুরোটাই তার কাছে পাওয়া যাবে। কেননা মুহাম্মদ (স) পেশাদার কোন নান, পাদ্রী, মাওলানা, ঠাকুর, পীর, দরবেশ ছিলেননা, তিনি ছিলেন হাজারো মানুষের মাঝে, আমাদের মত সুখে কিবা দুখে, শৈশবে, যৌবনে এবং বাধর্ক্যে। সদা। ফলো করলে শান্তি পাবেন।

Written by -পাললিক মন

0 comments
Labels: ,

রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে হযরত ওমর (রাঃ) কেমন ছিলেন নিচের লাইনগুলো পড়লেই বুঝতে পারবেন...

ইসলামী রাষ্ট্রের শাসক হিসেবে হযরত ওমর (রাঃ) এর কিছু বিখ্যাত উক্তিগুলো দেয়া হলঃ
❥ তোমাদের শাসক হিসেবে আমি হলাম সে ব্যক্তির মত, যেমন কিছু লোক একত্রে সফর করার সময় টাকা-পয়সাগুলো একজনের হাতে জমা দিয়ে বলে যে- তোমাকে আমাদের প্রয়োজনাদি মেটানোর দায়িত্ব দেওয়া হলো।
দায়িত্বপ্রাপ্ত সে ব্যক্তির কি খরচের ব্যাপারে তারতম্য করার সু্যোগ আছে? তেমনি খিলাফতের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রেও কারও প্রতি তারতম্য করার অধিকার আমার নেই।

❥ আল্লাহর শপথ করে বলছি- আমি বাদশাহ নই যে, জনগনকে গোলাম বানিয়ে রাখব। আমি আল্লাহর একজন বান্দা মাত্র। আমাকে শাসনকার্য পরিচালনার দায়িত্বভার অর্পণ করা হয়েছে। এটি একটি আমানত, আমার দায়িত্ব হল জনগনের সুখ-শান্তি ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা । যদি এ দায়িত্ব ঠিকমত পালন করতে পারি, তবেই আমার কৃতকার্যতা। আর যদি আমি শাসন কর্তৃত্বকে নিজের ইচ্ছাধীন করে নিই এবং জনগনকে তাদের প্রয়োজনের জন্য আমার পেছনে হাঁটাহাঁটি করতে বাধ্য করি, তবে আমার ফলশ্রুতি হবে জঘণ্য।

❥ দূরবর্তী নদীতীরে চর্মরোগগ্রস্ত একটি ছাগী যদি মালিশ করার মত একটু তেলের অভাবে কষ্ট পায়, তবে হাশরের দিন সে সম্পর্কেও রাষ্ট্রপ্রধানকে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে।

❥ কোন ব্যক্তি যদি ঋণ পরিশোধ করতে অপারগ হয়ে পড়ে, তবে সে ঋণ পরিশোধ করার দায়িত্ব সরকারী কোষাগারকে বহন করতে হবে।

❥ বাকিতে ক্রয় করে যে পোষ্যপালন করেছে, সে ব্যক্তি যদি ধনবান ও অপরাধী না হয়ে থাকে, তবে তার সে ধার সরকারী কোষাগার থেকে পরিশোধ করে দাও।

❥ কারও কোন প্রয়োজন থাকলে আমার কাছে এসো। আল্লাহ আমাকে তোমাদের সকলের কোষাগারের রক্ষক ও বণ্টনকারী বানিয়েছেন।

❥ রাষ্ট্রের কোষাগারে যা আছে, তা জনগনের আমানত এবং তাদের কল্যানের জন্যই সঞ্চিত। যে পর্যন্ত জনগণের প্রয়োজন পূর্ণ না হবে, সে পর্যন্ত আমাদেরকে খরচ করতে হবে। যদি কোষাগার শূন্য হয়ে যায়, তবে কষ্টের জীবন সকলে মিলে ভাগ করে নেব।

❥ শাসকরা যখন বিগড়ে যায় তখন জনগনও বিগড়াতে শুরু করে। সর্বাপেক্ষা ইতর সে ব্যক্তি যার প্রভাবে তার অধীনস্থদের মধ্যে অনাচার বিস্তার লাভ করে।

❥ যে তোমার সামনে দোষ ধরে সেই প্রকৃত বন্ধু, আর যে সামনে প্রশংসা করে সেই শত্রু ।

❥ যে আমার দোষ দেখে অনুগ্রহ করে তা আমাকে জানায় তাঁর প্রতি আল্লাহর করুণা অশেষ ধারায় বর্ষিত হোক।

তথ্য সূত্র- "বিশ্বনবী (সাঃ) ও চার খলিফার জীবনী"
মূল লেখকঃ আল্লামা তালিবুল হাশেমী
অনুবাদঃ মরহুম হাফেজ মুফতী মোহাম্মদ নূর উদ্দিন এর বই থেকে নেয়া হয়েছে।

0 comments
Labels: , ,

রাসূল (সাঃ) এর সাথে বিয়ের সময় আয়শা (রাঃ) র বয়স ৬ বছর ছিল এটা এক বিরাট ঐতিহাসিক ভ্রান্তি।

রাসুল (সাঃ) এর সম্বন্ধে বলা হয় তিনি হযরত আয়েশা (রাঃ) কে আয়েশার ৬ বছর বয়সে বিয়ে করেছিলেন। অথচ আমি অনুসন্ধান করে দেখতে পেলাম রাসূল (সাঃ) এর সাথে বিয়ের সময় হযরত আয়শা (রাঃ) র বয়স মাত্র ৬ বছর ছিল এটা মস্তবড় এক ঐতিহাসিক ভ্রান্তি।

সহীহ বুখারী, মুসলিম সহ অনেক হাদীস গ্রন্থে হযরত আয়েশা (রাঃ) র বয়স নিয়ে যে রেফারেন্স এসেছে তা হাইসাম (বা হিসাম) বিন উরওয়াহ কর্তক বর্নিত একটি হাদিসেরই উৎস এবং এটা সম্বন্ধে সংশয় প্রকাশ করবার মতো যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

তার মধ্যে প্রথম কারণ হলো হাদীসের কোন বিষয়বা রাসুল (সাঃ) এর জীনযাপন পদ্ধতি কোনভাবেই আল কোরআনের বক্তব্যের সাথে সাংঘর্ষিক হতে পারেনা। কাজেই বিবাহযোগ্য বয়সের বিষয়ে আল কোরআনের যে নির্দেশ, এই ঘটনা তার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তাহলে? উত্তর একটাই, এই হাদীসটা সঠিক নয়, সঠিক হতেই পারেনা।

যা হোক, এবারে আসি ঐতিহাসিক সত্যগুলো নিয়েঃ

রাসুল (সাঃ) এর সাথে আয়েশা (রাঃ) র বিয়ে হয় ৩য় হিজরী সনের সাওয়াল মাসে যা ইংরেজী ৬২৩-৬২৪ সাল।

যদিও বলা হয় হযরত আয়েশা (রাঃ)র জন্ম ৬১৪ খৃষ্টাব্দে কিন্তু সহীহ বুখারীতে এসেছে আল কোরআনের ৫৪ তম অধ্যায় নাজিল কালে আয়েশা (রাঃ) একজন কিশোরী (Jariyah) বয়স্কা ছিলেন। উল্লেখ্য ৫৪তম উক্ত অধ্যায় নাযিল হয় ৬১২ খৃষ্টাব্দের দিকে। সে হিসাবে হযরত আয়েশার বয়স তখন ১০ বছর হলেও ৬২৩-৬২৪ খৃষ্টাব্দ সালে তাঁর বয়স কোনভাবেই ২০ বছরের নিচে নয়।

(Sahih Bukhari, kitabu'l-tafsir, Arabic, Bab Qaulihi Bal al-sa`atu Maw`iduhum wa'l-sa`atu adha' wa amarr)

অধিকাংশ বর্ণনাকারির মতে হযরত আয়েশা (রাঃ) বদরের যুদ্ধ (৬২৪ খৃষ্টাব্দে) ও ওহুদের যুদ্ধে (৬২৫ খৃষ্টাব্দে) অংশগ্রহন করেছেন। উল্লেখ্য যে রাসুল (সাঃ) এর বাহিনীতে ১৫ বছর এর কম বয়স্ক কেউ গ্রহনযোগ্য ছিলনা এবং তাদের ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। সুতরাং সেসময় যে হযরত আয়েশার বয়স ৬ বা ৯ ছিলনা তা বলাই বাহুল্য।

A narrative regarding Ayesha's participation in the battle of `Uhud is given in Bukhari, (Kitabu'l-jihad wa'l-siyar, Arabic, Bab Ghazwi'l-nisa' wa qitalihinna ma`a'lrijal; that all boys under 15 were sent back is given in Bukhari, Kitabu'l-maghazi, Bab ghazwati'l-khandaq wa hiya'l-ahza'b, Arabic).

অধিকাংশ ইতিহাসবিদ মতে হযরত আয়েশার বোন আসমা ছিলেন তাঁর চেয়ে দশ বছরের বড়। ইতিহাস থেকে জানা যায় আসমা ৭৩ হিজরী সনে যখন মৃত্যুবরণ করেন তাঁর বয়স ছিল ১০০ বছর। সে হিসাবে ১লা হিজরীতে তাঁর বয়স হয় ২৭ বছর। তাহলে সে হিসেবে হযরত আয়েশার বয়স যে তখন ১৭ র কম ছিলনা তা বোঝা যায়। তাহলে ৬২৩-৬২৪ খৃষ্টাব্দ তাঁর বয়স ১৮/১৯ বছর।
(For Asma being 10 years older than Ayesha, see A`la'ma'l-nubala', Al-Zahabi, Vol 2, Pg 289, Arabic, Mu'assasatu'l-risalah, Beirut, 1992. Ibn Kathir confirms this fact, [Asma] was elder to her sister [Ayesha] by ten years" (Al-Bidayah wa'l-nihayah, Ibn Kathir, Vol 8, Pg 371, Arabic, Dar al-fikr al-`arabi, Al-jizah, 1933). For Asma being 100 years old, see Al-Bidayah wa'l-nihayah, Ibn Kathir, Vol 8, Pg 372, Arabic, Dar al-fikr al-`arabi, Al-jizah, 1933). Ibn Hajar al-Asqalani also has the same information: "She [Asma (ra)] lived a hundred years and died in 73 or 74 AH." Taqribu'l-tehzib, Ibn Hajar Al-Asqalani, Pg 654, Arabic, Bab fi'l-nisa', al-harfu'l-alif, Lucknow).

প্রখ্যাত ঐতিহাসিক আল তাবারী র বই থেকে পাওয়া যায় হযরত আবু বকর (রাঃ) র চার সন্তান ছিলেন যাঁরা সকলেই ইসলামপূর্ব যুগে জন্মগ্রহন করেন। (ইসলামপূর্ব যুগ ৬১০ খৃষ্টাব্দ শেষ হয়)। তাহলে নিশ্চয়ই হযরত আয়েশা (রাঃ) র জন্ম ৬১০ খৃষ্টাব্দ এর পূর্বে। সে হিসাবেও তিনি বিবাহের সময় ৬/৯ বছর বয়স্কা ছিলেন না।

Tarikhu'l-umam wa'l-mamlu'k, Al-Tabari, Vol 4, Pg 50, Arabic, Dara'l-fikr, Beirut, 1979).

আরেক প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ইবনে হাইসাম থেকে জানা যায় হযরত আয়েশা (রাঃ) হযরত উমর ইবন আল খাত্তাব (রাঃ) এর বেশ আগে ইসলাম গ্রহন করেন। (উমর ইবন আল খাত্তাব (রাঃ) ৬১৬ খৃষ্টাব্দে ইসলাম গ্রহন করেন)। আবার হযরত আবু বকর (রাঃ) ইসলাম গ্রহন করেন ৬১০ খৃষ্টাব্দে। সুতরাং হযরত আয়েশা (রাঃ) ও ৬১০ এর কাছাকাছি সময়েই ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন। তার অর্থ আবারো দাঁড়ায় যে তিনি ৬১০ খৃষ্টাব্দের আগেই জন্মগ্রহন করেছিলেন এবং কোন ধর্ম গ্রহন করবার নূন্যতম বয়স (৬/৭ হলেও) তাঁর ছিল। তাহলে ৬২৩-৬২৪ সালে তার বয়স প্রায় ১৮-২০ হয়।
(Al-Sirah al-Nabawiyyah, Ibn Hisham, vol 1, Pg 227 – 234 and 295, Arabic, Maktabah al-Riyadh al-hadithah, Al-Riyadh)

হাম্বলি মাযহাবের ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল তাঁর মুসনাদ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন বিবি খাদিযাহ (রাঃ) র মৃত্যুর পরে (৬২০ খৃষ্টাব্দ) হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জন্য খাউলাহ নামের একজন ২টা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসেন। যার মধ্যে হযরত আয়েশার (রাঃ) র কথা উল্লেখ করবার সময় একজন পূর্ণবয়স্ক যুবতী হিসেবেই উল্লেখ করেন কোন ছোট্ট শিশু হিসেবে নয়।

(Musnad, Ahmad ibn Hanbal, Vol 6, Pg 210, Arabic, Dar Ihya al-turath al-`arabi, Beirut).

আবার ইবনে হাযর আল আসকালানি র মতে হযরত ফাতেমা (রাঃ) আয়েশা (রাঃ) র থেকে ৫ বছর বড় ছিলেন। আর ফাতেম (রাঃ) র জন্মের সময় রাসুল (সাঃ) এর বয়স ছিল ৩৫ বছর। সে হিসেবে আয়েষা (রাঃ) র জন্মের সময় মুহাম্মদ (সাঃ) এর বয়স ৪০ হবার কথা। আর তাঁদের বিয়ের সময় আয়েশা (রাঃ) ৬/৯ না বরং ১৪-১৫ বছর বয়স হবার কথা।

(Al-isabah fi tamyizi'l-sahabah, Ibn Hajar al-Asqalani, Vol 4, Pg 377, Arabic, Maktabatu'l-Riyadh al-haditha, al-Riyadh,1978)

ওপরের আলোচনার মূল বিষয়বস্তু হলো হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সাথে বিয়ের সময় যে ৬/৯ বছরের শিশু ছিলেননা সেটাই দেখানো। আর কোন হাদীস যদি আল কোরআনের নির্দেশনার সাথে অসামন্জস্যপূর্ণ হয় তাহলে নিশ্চিতভাবেই সেই হাদীসের ওপর ভরসা রাখা যুক্তিযুক্ত না। তা সে বুখারী মুসলিম বা সমস্ত সিহাহ সিত্তাহতেই থাকুকনা কেন। আর এই বৈপরিত্য ধরবার জন্য নিজেদের বিবেককেও ব্যাবহার করা উচিত সকল মুসলমানের।

খোদ আল কোরআনেও যেখানে বিবাহ যোগ্য বয়সের বিষয়ে প্রাপ্তবয়সকে ইঙ্গিত করা হয়েছে সেখানে মহানবী (সাঃ) নিজে কিভাবে তার বিপরীতে যেতে পারেন?
--------------------------
Written by -গুপী গায়েন

0 comments
Labels: , ,

রসুল সা. এর চারের অধিক বিয়ে প্রসংগঃ ইউসুফ আল কারদাওয়ী

প্রশ্নঃরাসুল সা. নয়টি বিয়ে করেছেন,অথচ অন্য মুসলমানের জন্য চারটির বেশি বিয়ে করা নাজায়েজ। এর কারণ কি? সন্তোষজনক জবাব দেবেন আশা করি।

উত্তরঃ জাহেলী যুগে একাধিক বিয়ের ক্ষেত্রে কোন বাধা নিষেধ বা কোন সীমারেখা ছিলো না। প্রাচীনকালে প্রায় সর্বত্রই স্বামীদের একাধিক স্ত্রী ছিলো। একজন পুরুষ যত ইচ্ছা বিয়ে করতে পারতো।

ইসলাম এই রীতি বন্ধ করে দিয়েছে এবং চারটির বেশি বিয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। যেসব সাহাবার চারের অধিক স্ত্রী ছিলো, রাসুল সা. তাদের বলেছেন, তাদের মধ্যে চারজন বাছাই করে রাখো,অন্যদের তালাক দিয়ে দাও।

ইসলাম একাধিক বিয়ের অনুমোদন শর্ত সাপেক্ষে দিয়েছে। সকল স্ত্রীর সাথে একই রকমের ব্যবহার এবং একই সুবিচার করতে হবে। কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

" যদি তোমাদের এই ভয় হয় যে, তোমরা ( একের অধিক হলে) ইনসাফ করতে পারবে না, তাহলে (তোমাদের জন্য) একজনই যথেষ্ট।" (আন নিসাঃ আয়াত ৩)।

তবুও আল্লাহ তায়ালা রাসূল সা. কে সকল মানুষের তুলনায় একটি বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন। চারজন স্ত্রী রেখে অন্যদের তালাক দেয়ার আদেশ তাঁকে দেয়া হয়নি। তবে এরপর বিয়ে করতে নিষেধ করা হয়েছে, যদি কোন নারীকে পছন্দ হয় তবুও। আল্লাহর এই নিষেধের কথা নিম্নোক্ত আয়াতে বলা হয়েছেঃ

'' (হে নবী) এরপরে তোমার জন্যে এটা বৈধ নয় তুমি তোমার (বর্তমান) স্ত্রীদের বদলে (অন্য নারীদের গ্রহ ণ করে ) নেবে, যদিও সেসব নারীদের সৌন্দর্য তোমাকে আকৃষ্ট করে।" (আহযাবঃ ৫২)

চারজন স্ত্রী রখে অন্যদের তালাক দেওয়ার আদেশ আল্লাহ তায়ালা রাসুল সা. কে দেননি। তাঁকে এই আদেশ থেকে আলাদা রাখা হয়েছে। এর কারণ হচ্ছে, রাসুল সা. এর স্ত্রী হওয়ার ফলে উল্লেখিত মহিলারা বিশেষ সামাজিক মর্যাদা লাভ করেছেন। রাসুল সা. এর স্ত্রী হওয়ার কারণে তারা সমগ্র মুসলমানের মা হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

" আল্লাহর নবী মোমেনদের কাছে তাদের নিজেদের চাইতেও বেশি প্রিয়।, নবীর স্ত্রীরা হচ্ছে তাদের মা (সমান)।" (আহযাবঃ ৬)

মুসলমানদের মা হওয়ার বন্ধনের কারণে তাদের বিয়ে করা যেকোন মুসলমানের জন্য হারাম বা নিষিদ্ধ। আল্লাহ তায়াল বলেন,

" তোমাদের কারো জন্যই এটা বৈধ নয় যে, তোমরা আল্লাহর রাসুলকে কষ্ট দেবে- (না এটা তোমাদের জন্য বৈধ যে,) তোমরা তারপর কখনও তাঁর স্ত্রীদের বিয়ে করবে, এটা আল্লাহ তায়লার কাছে একটি বড় (অপরাধের) ব্যাপার।'' (আহযাবঃ ৫৩)।

চিন্তা করে দেখুন রাসুল সা. যদি চারজন স্ত্রী রেখে অন্যদের তালাক দিতেন তবে তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীদের বাকী জীবন অন্যকোন পুরুষের সাথে নিষিদ্ধ হতো। ফলে বাকী জীবন তাদেরকে স্বামীবিহীন অবস্থায় কাটাতে হতো। রাসুল সা. এর সাথে বিয়ের কারণে তারা যে সামাজিক মর্যাদার অধিকারী হয়েছিলেন, তালাকের পর সে মর্যাদা থাকতো না। এর অর্থ হচ্ছে কোন অপরাধ না করেও তারা শাস্তি ভোগ করতেন এবং বঞ্চনার স্বীকার হতেন। তাছাড়া যদি তাঁকে এ আদেশ মেয়া হত যে, আপনি চারজন স্ত্রী রেখে বাকী স্ত্রীদের তালাক দিন তবে রাসুল সা. এর জন্যে কঠিন সমস্যার সৃষ্টি হতো। কারণ তিনি কাকে রেখে কাকে তালাক দিবেন ? তার দৃষ্টিতে সকল স্ত্রী ছিলেন সমান। শুধু তাই নয়, চারজন রেখে বাকীদের সামাজিক মর্যাদাহানি হতো। তারা মু সলমানদের মা হওয়ার যে গৌরবলাভ করেছিলেন সেই গৌরব থেকে বঞ্চিত হতেন।

এ কারণে তাঁর সকল স্ত্রী বহাল থাকা ছিল যুক্তির দাবী। তবে পরবর্তীতে অন্য কোন নারীকে বিয়ে করতে রাসুল সা. কে আল্লাহ তায়ালা নিষেধ করেছেন। এ সম্পর্কে ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।

এখানে একটা তা স্পষ্ট করা দরকার যে, রাসুল সা. যাদের বিয়ে করেছিলেন, তাদের কারো রুপে আকৃষ্ট হয়ে বা যৌন কামনার বশবর্তী হয়ে করেননি। পাশ্চাত্যের লেখকরা যদিও রাসুল সা. এর শানে বেয়াদবের মত এরকম গোস্তাখিপূর্ণ কথা উল্লেখ করেছে। কিন্তু চিন্তা করে দেখুন, রাসুল সা. পঁচিশ বছর বয়সে প্রথম বিয়ে করেছিলেন। হযরতখাদীজা রা. ছিলেন সেই সময় রাসুল সা. এর পনের বছরের বয়োজ্যেষ্ঠ। তাছাড়া ইতিপূর্বে দু'বার তাঁর বিয়ে হয়েছিল এবং সন্তানও হয়েছিল। তবুও বিবি খাদিজার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং চমতকার প্রীতিপূর্ণ জীবন যাপন করেন।
হযরত খাদিজা রা. এর ইন্তেকালের পর রাসুল সা. তার প্রসংগে সবসময় ভাল কথা বলতেন এবং তার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করতেন।

হযরত খাদিজা রা. এর মৃত্যূর পর রাসুল সা. অন্যান্য বিয়ে করেছিলেন। ৫৩ বছর বয়সে রাসুল সা. হযরত সাওদা বিনতে জামায় রা. কে নিজ সন্তানের দেখাশুনা এবং ঘর সংসারের দায়িত্ব পালনের প্রয়োজনে বিয়ে করেন। হযরত আবু বকর রা. এবং হযরত ওমর রা. এর সাথে সম্পর্ক অধিকতর মজবুত করার উদ্দেশ্যে আয়েশা রা. এবং হাফসা. রা.কে বিয়ে করেন। একই উদ্দেশ্যে ওসমান রা. এবং আলী রা. কে নিজ কন্যাদের সাথে বিয়ে দেন। চিন্তা করে দেখুন তো, এটা কি কাকতালীয় ব্যাপার ছিলো যে, রাসুল সা. এর ওফাতের পর উল্লেখিত চারজনই পরে খেলাফতের দায়িত্ব পালন করেন।

হযরত হাফসা বিধবা ছিলেন। তার অতোটা রুপ সৌন্দর্যও ছিল না। হযরত আয়েশার সাথে বিয়ের সময় তার বয়স এত কম ছিল যে, সেই বয়সে তার সাথে যৌন সম্পর্ক স্াপন কষ্টকর চিন্তা ছাড়া কিছু ছিলো না।

উম্মে সালমা রা. বিধবা হন এবং ধৈর্যের সাথে বৈধব্যকাল অতিবাহিত করেন। তার ধৈর্যের কারণে আল্লাহ তায়ালা পুরস্কার স্বরুপ রাসুল সা. এর স্ত্রী হওয়ার সৌভাগ্য দান করেন। জুওয়াইয়া বিনতে হারিস রা. কে রাসুল সা. এ উদ্দেশ্যে বিয়ে করেছিলেন যে, বিয়ের পর জুওয়াইয়ার কওমের লোক ইসলাম গ্রহণ করবে। আবু সুফিয়ানের কন্য উম্মে হাবিবাকে এ জন্য বিয়ে করেছিলেন যে, উম্মে হাবিবা হাবশায় হিজরত করার পর তার স্বামী মুরতাদ হয়ে গিয়েছিল এবং মৃত্যুবরণ করেছিলো। উম্মে হাবিবার কষ্ট লাঘবের জন্য রাসুল সা. তাকে বিয়ে করেন। তা চাছাড়া এ বিয়ের আরেকটি উদ্দেশ্য ছিলো ইসলামের প্রতি আবু সুফিয়ানের শত্রুতা হয়তো কিছুটা কমে যাবে।

বিস্তরিত এ আলোচনায় বোঝা যায় যে, রাসুল সা. এর প্রতিটি বিয়ের পিছনেই ছিল মহত উদ্দেশ্য। রুপ সৌন্দর্য, অর্থ সম্পদ বা যৌন কামনা তাড়িত বিয়ে একটিও ছিলো না। একত্রে চারজন স্ত্রীর অধিক রাখা যাবে না- এই বিধান জারি হওয়ার আগে রাসুল সা. ওই বিয়েগুলো করছিলেন। এই বিধানের পরে রাসুল সা. একটি বিয়েও করেন নি। তবে তাঁর স্ত্রী হিসেবে যারা ছিলেন তাদের কাউকে তালাক দেননি। এর কারণ উপরে উল্লেখ করা হয়েছে।

রাসুল সা. এর একাধিক বিয়ের অন্যতম প্রধান কারণ ছিলো, ইসলামের প্রচা প্রসারে সহায়তা করা। আরও একটি উদ্দেশ্য ছিলো, তাঁর স্ত্রীরা তাঁর জীবন চরিত সম্পর্কে বেশি সংখ্যক মানুষকে অবহিত করতে পারবে। এতে সন্দেহ নেই যে, স্ত্রীরা স্বামীদের যতটা কাছাকাছি থাকেন অন্য কেউ ততটা থাকতে পারেন না।

রাসুল সা. একাধিক বিয়ে করে স্ত্রীদের সামনে নিজের বাস্তব জীবনের নমুনা পেশ করেন। স্ত্রীরা যেন সেসব মানুষকে জানাতে পারেন। রাসুল সা. বলেন আমার সম্পর্কে লোকদেরকে জানাও।

হযরত আয়েশা রা. রাসুল সা. এর জীবন সম্পর্কে লোকদেরকে বিস্তরিত অবগত করেছেন। স্বামী স্ত্রীর একান্ত ও বিশেষ সম্পর্কের কথাও তিনি গোপন করেননি।

-------------------------------------- লেখাটি 'ফতোয়া' নামক বই থেকে নেয়া। জনাব কারযাভীর বিভিন্ন প্রশ্নোত্তরের বাংলায় সংকলন করেছেন হাফেজ মুনির উদ্দিন আহমদ। বইটি প্রকাশ করেছে আল কোরআন একাডেমী লন্ডন। কাটাবনের বইয়ের দোকানগুলোতে পেতে পারেন।

0 comments
Labels: ,

ধর্মের ব্যপারে জোরজবরদস্তি নেই। কিন্তু তাহলে কেন যুদ্ধ আর কখন সন্ধি

ধর্মের ব্যপারে জোরজবরদস্তি নেই-
আল-কোরআন-

সূরা আল বাক্বারাহ (মদীনায় অবতীর্ণ
(০২:২৫৬) অর্থ- দ্বীনের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি বা বাধ্য-বাধকতা নেই। নিঃসন্দেহে সুপথ প্রকাশ্যভাবে কুপথ থেকে পৃথক হয়ে গেছে। এখন যে ‘তাগুৎ' কে মানবে না এবং আল্লাহতে বিশ্বাস স্থাপন করবে, নিশ্চয় সে এমন সুদৃঢ় হাতল ধারণ করে নিয়েছে যা ভাঙবার নয়। আর আল্লাহ সবই শুনেন এবং জানেন।

সূরা ইউনুস (মক্কায় অবতীর্ণ)
(১০:৯৯) অর্থ- আর তোমার প্রতিপালক যদি চাইতেন, তবে পৃথিবীতে যারা রয়েছে, তাদের সবাই ঈমান আনত সমবেতভাবে। তবে কি তুমি ঈমান আনার জন্য মানুষের উপর জবরদস্তি করবে?
(১০:১০০) অর্থ- আর কারও পক্ষে ঈমান আনা সম্ভব নয়, যতক্ষণ না আল্লাহর হুকুম হয়। পক্ষান্তরে যারা বুদ্ধি প্রয়োগ করে না (অনুধাবনের চেষ্টা করে না), তাদের তিনি কলুষ-লিপ্ত করেন।

সূরা আল-ফুরকান (মক্কায় অবতীর্ণ)
(২৫:৫৬) অর্থ- আমি আপনাকে সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপেই প্রেরণ করেছি।
(২৫:৫৭) অর্থ- বলুন, আমি তোমাদের কাছে এর কোন বিনিময় চাই না, সুতরাং যে ইচ্ছা করে, সে তার পালনকর্তার পথ অবলম্বন করুক।

সূরা ক্বাফ (মক্কায় অবতীর্ণ)
(৫০:৪৫) অর্থ- তারা যা বলে, তা আমি সম্যক অবগত আছি। আপনি তাদের উপর জোরজবরদস্তিকারী নন। অতএব, যে আমার শাস্তিকে ভয় করে, তাকে কোরআনের মাধ্যমে উপদেশ দান করুন।
…………………………………………………………

কেন যুদ্ধ আর কখন সন্ধি?
আল-কোরআন-

সূরা আল বাক্বারাহ (মদীনায় অবতীর্ণ)
(০২:১৯০) অর্থ- আর লড়াই কর আল্লাহর পথে তাদের সাথে, যারা লড়াই করে তোমাদের সাথে। তবে কারও প্রতি বাড়াবাড়ি করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালংঘনকারীদের পছন্দ করেন না।

(০২:১৯১) অর্থ- আর তাদেরকে হত্যাকর যেখানে পাও সেখানেই এবং তাদেরকে বের করে দাও সেখান থেকে, যেখান থেকে তারা তোমাদেরকে বের করেছে। বস্তুতঃ ফেতনা ফ্যাসাদ বা দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করা হত্যার চেয়েও কঠিন অপরাধ। আর তাদের সাথে লড়াই করো না মসজিদুল হারামের নিকটে যতক্ষণ না তারা তোমাদের সাথে সেখানে লড়াই করে। অবশ্য যদি তারা নিজেরাই তোমাদের সাথে লড়াই করে, তাহলে তাদেরকে হত্যা কর। এটাই তো অবিশ্বাসীদের পরিণাম।

(০২:১৯২) অর্থ- আর তারা যদি বিরত থাকে, তাহলে তো আল্লাহ অত্যন্ত দয়ালু।
(০২:১৯৩) অর্থ- আর তোমরা তাদের সাথে লড়াই কর, যে পর্যন্ত না ফেতনার অবসান হয় এবং আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু যদি তারা নিবৃত হয়ে যায়, তাহলে অত্যাচারী ছাড়া কারও উপর কোন হস্তক্ষেপ করবে না।

(০২:১৯৪) অর্থ- সম্মানিত মাসই সম্মানিত মাসের বদলা। আর সম্মান রক্ষা করারও বিনিময় রয়েছে। বস্তুতঃ যারা তোমাদের উপর জবরদস্তি/আক্রমণ করে, তোমরাও তাদের উপর জবরদস্তি/আক্রমণ করবে, যেরূপ জবরদস্তি/আক্রমণ তারা করেছে তোমাদের উপর। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রাখ, যারা পরহেযগার/ধর্মপরায়ণ, আল্লাহ তাদের সাথে রয়েছেন।

সূরা আন নিসা (মদীনায় অবতীর্ণ)

(০৪:৮৮) অর্থ- অতঃপর তোমাদের কি হল যে, বিশ্বাসঘাতকদের সম্পর্কে তোমরা দু’দল হয়ে গেলে? অথচ আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে ঘুরিয়ে দিয়েছেন তাদের মন্দ কাজের কারনে! তোমরা কি তাদেরকে পথ প্রদর্শন করতে চাও, যাদেরকে আল্লাহ পথভ্রষ্ট করেছেন? আল্লাহ যাকে পথভ্রান্ত করেন, তুমি তার জন্য কোন পথ পাবে না।

(০৪:৮৯) অর্থ- তারা চায় যে, তারা যেমন অবিশ্বাসী, তোমরাও তেমনি অবিশ্বাসী হয়ে যাও, যাতে তোমরা এবং তারা সব সমান হয়ে যাও। অতএব, তাদের মধ্যে কাউকে বন্ধু-রূপে গ্রহণ করো না, যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহর পথে হিজরত করে চলে আসে। কিন্তু যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় (বিশ্বাসঘাতকতা করে), তবে তাদেরকে গ্রেফতার কর এবং যেখানে পাও হত্যা কর। তাদের মধ্যে কাউকে অভিভাবক এবং সাহায্যকারী রূপে গ্রহণ করবে না।

(০৪:৯০) অর্থ- কিন্তু তাদের ছাড়া- যারা এমন সম্প্রদায়ের সাথে মিলিত হয় যে, তোমাদের মধ্যে ও তাদের মধ্যে চুক্তি আছে অথবা তোমাদের কাছে এভাবে আসে যে, তাদের অন্তর তোমাদের সাথে, এমনকি স্বজাতির সাথেও যুদ্ধ করতে অনিচ্ছুক। যদি আল্লাহ ইচ্ছে করতেন, তবে তোমাদের উপর তাদেরকে প্রবল করে দিতেন। ফলে তারা অবশ্যই তোমাদের সাথে যুদ্ধ করত। অতএব যদি তারা তোমাদের থেকে পৃথক থাকে, তোমাদের সাথে যুদ্ধ না করে এবং তোমাদের সাথে সন্ধি করে, তবে আল্লাহ তোমাদেরকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কোন পথ রাখেননি।

(০৪:৯১) অর্থ- অবশ্য তুমি আরও এক সম্প্রদায়কে পাবে, যারা তোমাদের কছে ও স্বজাতির কাছেও শান্তি চায়। যখনই তাদেরকে ফ্যাসাদের/বিপর্যয়ের প্রতি মনোনিবেশ করানো হয়, তখনই তারা পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়, অতএব তারা যদি তোমাদের থেকে নিবৃত্ত না হয়, তোমাদের সাথে সন্ধি না রাখে এবং স্বীয় হস্ত সংবরণ না করে, তবে তোমরা তাদেরকে গ্রেফতার কর এবং যেখানে পাও হত্যা কর। আমি তাদের বিরুদ্ধে তোমাদেরকে প্রকাশ্য যুক্তি-প্রমাণ দান করেছি।

সূরা আল-আনফাল (মদীনায় অবতীর্ণ)
(০৮:৫৫) অর্থ- সমস্ত জীবের মাঝে আল্লাহর নিকট তারাই সবচেয়ে নিকৃষ্ট, যারা অবিশ্বাস করেছে এবং আর ঈমান আনেনি।

(০৮:৫৬) অর্থ- তাদের মধ্যে যাদের সাথে তুমি চুক্তিতে আবদ্ধ, তারা প্রতিবার নিজেদের কৃতচুক্তি লংঘন করে এবং সাবধান হয় না।

(০৮:৫৭) অর্থ- সুতরাং তোমরা যদি কখনো তাদেরকে যুদ্ধে পেয়ে যাও, তবে তাদের এমন শাস্তি দাও, যেন তাদের উত্তরসূরিরা তাই দেখে পালিয়ে যায়; তাদেরও যেন শিক্ষা হয়।

(০৮:৫৮) অর্থ- তবে কোন সম্প্রদায়ের ধোঁকা দেয়ার ব্যাপারে যদি তোমাদের আশংকা হয়, তবে তাদের চুক্তি তাদের দিকেই ছুঁড়ে ফেলে দাও এমনভাবে, যেন হয়ে যাও তোমরা ও তারা সমান। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধোঁকাবাজ, প্রতারককে পছন্দ করেন না।

(০৮:৬১) অর্থ- আর যদি তারা সন্ধি করতে আগ্রহ প্রকাশ করে, তাহলে তুমিও সে দিকেই আগ্রহী হও এবং আল্লাহর উপর ভরসা কর। নিঃসন্দেহে তিনি শ্রবণকারী; পরিজ্ঞাত।

(০৮:৬২) অর্থ- পক্ষান্তরে তারা যদি তোমাকে প্রতারণা করতে চায়, তবে তোমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনিই তোমাকে শক্তি যুগিয়েছেন স্বীয় সাহায্য ও বিশ্বাসীদের দ্বারা।

(০৮:৬৩) অর্থ- আর প্রীতি স্থাপন করেছেন তাদের অন্তরে। যদি তুমি সবকিছু ব্যয় করে ফেলতে, যা কিছু রয়েছে যমীনের বুকে, তাদের অন্তরে প্রীতি স্থাপন করতে পারতে না। কিন্তু আল্লাহ তাদের মনে প্রীতি স্থাপন করেছেন। নিঃসন্দেহে তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

(০৮:৬৪) অর্থ- হে নবী, আপনার জন্য এবং যে বিশ্বাসীরা আপনার সাথে রয়েছে তাদের সবার জন্য আল্লাহ্ই যথেষ্ট।

সূরা আত তাওবাহ (মদীনায় অবতীর্ণ)
(০৯:০৪) অর্থ- তবে মুশরিকদের (অংশীবাদীদের) সাথে তোমরা চুক্তিতে আবদ্ধ হাবার পরে যারা তোমাদের ব্যাপারে কোন ত্রুটি করেনি এবং তোমাদের বিরুদ্ধে কাউকে সাহায্যও করেনি, তাদের সাথে কৃত চুক্তিকে তাদের দেয়া নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত পূরণ করবে। অবশ্যই আল্লাহ সাবধানীদের পছন্দ করেন।

(০৯:০৫) অর্থ- অতঃপর নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে মুশরিকদের হত্যা কর যেখানে তাদের পাও, তাদের বন্দী কর এবং অবরোধ কর। আর প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের সন্ধানে ওঁৎ পেতে বসে থাক। কিন্তু যদি তারা তওবা করে, নামায কায়েম করে, যাকাত আদায় করে, তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

(০৯:০৬) অথৃ- আর মুশরিকদের কেউ যদি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তবে তাকে আশ্রয় দেবে, যাতে সে আল্লাহর বাণী শুনতে পায়, অতঃপর তাকে তার নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেবে। এটি এজন্যে যে তারা অজ্ঞ লোক।

(০৯:১২) অর্থ- আর তারা যদি চুক্তিতে আবদ্ধ হবার পর তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে এবং বিদ্রুপ করে তোমাদের দ্বীন সম্পর্কে, তবে অবিশ্বাসীদের প্রধানদের সাথে যুদ্ধ করবে। কারণ, এদের প্রতিজ্ঞা প্রতিজ্ঞাই নয়, যাতে তারা ফিরে আসবে।

(০৯:২৯) অর্থ- তোমরা যুদ্ধ কর ঐ লোকদের সাথে, যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে না, আল্লাহ ও তাঁর রসূল যা নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন তা নিষিদ্ধ করে না এবং সত্য-ধর্ম অনুসরণ করে না, যতক্ষণ না আনুগত্যের নিদর্শন স্বরূপ তারা ‘জিযিয়া’ প্রদান করে।

(০৯:৩৬) অর্থ- নিশ্চয় আল্লাহর বিধান ও গননায় মাস বারটি, আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে, তন্মধ্যে চারটি নিষিদ্ধ। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান; সুতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না। আর মুশরিকদের সাথে তোমরা যুদ্ধ করবে সমবেতভাবে, যেমন তারাও তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে সমবেতভাবে। আর মনে রেখো, আল্লাহ সাবধানীদের সাথেই রয়েছেন।

(০৯:১২৩) অর্থ- হে বিশ্বাসীগণ, তোমাদের নিকটবর্তী অবিশ্বাসীদের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাও এবং তারা তোমাদের মধ্যে কঠোরতা অনুভব করুক আর জেনে রাখ, আল্লাহ সাবধানীদের সাথেই রয়েছেন।

0 comments
Labels:

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম- হিন্দু মুসলমানের কাছে অপমানিত হয়ে তিনি যা করতেন-

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি আইনসভার প্রার্থী হয়েছেন। ভোট চাইছেন মানুষের কাছে। গিয়ে হাজির হলেন এক মৌলভীর বাড়িতে। কবিকে দেখে আঁতকে উঠলেন মৌলভী।
এ কি! আপনি তো কাফের! কাফেরকে তো ভোট দেয়া যায় না! মৌলভীর কথায় সায় দিচ্ছেন তার সাথীরা।

কবি এমন ভয়ানক কথা শুনেও শান্ত। তিনি স্থির গলায় বললেন, মৌলভী সাহেব! কাফির বলেছেন তাতে দুঃখ নেই। এর চেয়েও কঠিন কথা আমি শুনেছি। শুনতে হয়েছে অনেক জঘন্য কথাবার্তাও। তবে আপনার বাড়িতে যখন এসেছি, আপনাকে একটি কবিতা না শুনিয়ে চলে যাই কিভাবে?

কবি নজরুল তার আবৃত্তির ডালা খুলে বসলেন। তিনি শোনাচ্ছেন তার বিখ্যাত কবিতা ‘মহররম'। কবির ভরাট গলায় সে কি উচ্চারণ! এক অপার্থিব আবেগ ও হৃদয়ছোঁয়া বেদনার পরিবেশ তৈরী হলো সবার মনে। মৌলভী তমিজুদ্দীন এবং তার সাথীদের মাথা নত হয়ে এল। তার অবনত চোখে তাকিয়ে থাকলো কবির দিকে। এই কি নজরুল! কি অপূর্ব তার কবিতা। কত গভীরে এর বেদনা! আহা! এমন করে তো আর কেউ কবিতা শোনাতে পারে না। মৌলভী সাহেব এবং তার সাথীরা অভিভূত। তাদের বিস্ময়ের নীচে চাপা পড়ে গেল সব অভিমান ও সন্দেহ। তার অনুতপ্ত। কবিকে তারা বরণ করলেন পরম আদর যতেœ।


জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। বন্ধুদের জন্য পাগলপ্রাণ। এক হিন্দু বন্ধুর আমন্ত্রণে তার বিয়ের আসরে গিয়ে হাজির হলেন কবি। আহারের আয়োজন। কবিও খেতে বসলেন। কন্যাপক্ষের বাড়িতে অনেক বড় আয়োজন।
বরযাত্রীদের সবাই অপেক্ষায়। কিন্তু খাবার আসছে না। খবর এসেছে, বরপক্ষের সাথে একজন মুসলমান এসেছেন কেন? অন্দরমহলের মেয়েরা খাবার পরিবেশনে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। মুসলমানকে বিদায় করতে হবে। হোক তিনি কবি নজরুল। তাতে কি?

নজরুলকে সাথে নিয়ে যাওয়া বন্ধুরা লজ্জায় লাল হয়ে গেলেন। তারা তো কোনদিন নজরুলের ধর্ম দেখে বন্ধু হননি। অভিমানী নজরুল বেশ কষ্ট পেলেন মনে। হিন্দুদের এমন সংকীর্ণ আচরণ আর জাতের কদর্য রূপ দেখে ব্যথিত হলেন তিনি। মনের ক্ষোভ নিয়ে লিখে ফেললেন কবিতা, তারপর সেটি সবাইকে শুনিয়ে দিলেন। কবিতার সূচনা অংশ- জাতের নামে বজ্জাতি সব জাত জালিয়াৎ খেলছে জুয়া/ ছুঁলেই তোর জাত যাবে? জাত ছেলের হাতের নয়তো মোয়া।’

মুসলমান কবি নজরুলের মুখে এমন অগ্নিজ্বালা প্রতিবাদ শুনে সবার মাথা নীচু হয়ে এল। অভিমানী নজরুল তার কবিতা শুনিয়ে চলে এলেন সেই বিয়েবাড়ী থেকে। মলিনমুখে তিনি পা বাড়ালেন বাসার উদ্দেশে।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে দাওয়াত করে নোয়াখালী এনেছেন একজন হেডমাস্টার। নজরুলের সভায় মানুষ আসছে দলে দলে। চলে এসেছেন মৌলভী সাহেবরাও। যতদূর চোখ যায়, শুধু সাদা টুপির সারি। মানুষে ভরে গেছে সভাস্থলের চারপাশ।

এ বিরাট জনসমুদ্রে দল বেঁধে দাঁড়িয়ে গেলেন কয়েকজন মৌলভি। তাদের সম্মিলিত কন্ঠের এক দাবি, এ সভায় নজরুলকে গান করতে দেওয়া হবে না। কোনভাবেই এ সম্ভব না।’ আশেপাশের অনেক মানুষও তাদেরকে সমর্থন জানাচ্ছেন। কয়েকজন প্রভাবশালী লোক মৌলভী সাহেবদেরকে অনুরোধ করলেন, নজরুলকে কয়েকটি গান গাইতে দেয়ার জন্য। তারা কিছুতেই রাজি হচ্ছেন না। এলাকাবাসীর উপর মৌলভী সাহেবদের প্রভাব অনেক বেশি। তারাও মৌলভীদের পক্ষে। হেডমাস্টার সাহেব এমন পরিস্থিতিতে কেঁদে ফেললেন সবার সামনে। নিজের এলাকায় নজরুলকে নিয়ে এ অপমান তিনি মেনে নিতে পারছেন না।

কবি নজরুল ইসলাম বসে আছেন মঞ্চে। এবার তিনি উঠে দাঁড়ালেন। সুগঠিত দেহে বলিষ্ঠ চেহারা, চোখে মুখে তার ঝিলিক। তিনি সবাইকে থামালেন। নিরব হয়ে এল চারপাশ। তিনি তার ভরাট কন্ঠে সবাইকে বললেন, আমার অনুরোধ- একটি মাত্র গান গাইবো আমি। যদি তা ভালো না লাগে, যদি আমার গান আপনাদের মত ও পথের বিপরীত হয়, তবে নিজেকে তুলে দিবো আপনাদের হাতে, যা খুশি আপনারা করবেন তখন। ’
নজরুলের এমন কথায় থেমে গেল সবাই। মৌলভী সাহেবরা রাজি হলেন। একটা গান শোনা যেতে পারে। এর বেশি নয়। তারপর সভা শেষ করে ফেলতে হবে।

কবি তার পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে গান ধরলেন। মনের সবটুকু আবেগ ও তেজ ঢেলে দিলেন তার কন্ঠে। তিনি গাইলেন, বাজিছে দামামা বাঁধরে আমামা/শির উঁচু করি মুসলমান....’। উপস্থিত শ্রোতাদের ধ্বনিতে কেঁপে উঠলো সভার আশপাশ। কবির গানের তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়লো আকাশে বাতাসে, ঢেউ উঠলো জনসমুদ্রে। গানটির শব্দ ও কথার যাদুতে বিমুগ্ধ মৌলভী সাহেবরাও উঠে দাঁড়িয়ে গেলেন। তাদের গলা থেকে ভেসে আসছে- মারহাবা! মারহাবা!! আরে, এতো গান নয়। গজল। গজল। এ গজলের সুর মানুষের রক্তে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে, এ গজল নাজায়েজ হয় কিভাবে? আমরা যে আরও শুনতে চাই। কবি সাব! আরও একখানা গাইতে হবে।
কবি নজরুল তো এরই অপেক্ষায় ছিলেন। জনতার চেহারা এবং আপত্তিকারীদের মনমর্জি তিনি বেশ ভালোভাবেই জানেন। তিনি বললেন, আর না। আমি ক্লান্ত। বিশ্রাম নিতে হবে।

বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো ভেসে আসছে আওয়াজ। অধৈর্য মৌলভী সাহেবদেরও নাছোড় দাবী- আর অন্তত একটি হলেও শোনাতে হবে। মরুভূমির পিপাসা তাদের বুকজুড়ে। মানুষের এ আবেগ আর মৌলভীদের এমন বিগলিত দাবীর কাছে হার মানলেন নজরুল।
তিনি বললেন, তবে তাই হবে। তারপর শুরু হল তার গান। সুরের তরঙ্গদোলায় ভাসছে শ্রোতারা। মাথা নেড়ে নেড়ে দুলছেন মৌলভী সাহেবরা। কবির শব্দঝংকারে উন্মাতাল হয়ে উঠলো পরিবেশ। নোয়াখালীর মানুষদের ভাবসাগরে জোয়ারের পর জোয়ার উঠেছে। গলা ছেড়ে কবি গাইছেন তার সব আবেগমাখা গান-গজল। একাধারে পাঁচ ঘন্টা কবি নজরুল গেয়ে শোনালেন তার অমর গানগুলো। হৃদয়ছোঁয়া তার সেইসব ছন্দ মোহিত করে ফেলেছে সবাইকে। ক্লান্ত পরিশ্রান্ত কবি যখন চলে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালেন, বিমুগ্ধ শ্রোতারা সবাই মিলে দাঁড়িয়ে গেলেন কবির সম্মানে। কবি হেঁটে চললেন তার জন্য নির্ধারিত বিশ্রামখানায়। অনেক হয়েছে। আজ আর নয়।

Written by-মানব ও মানবতা

0 comments
Labels: , ,

একজন নাস্তিককে মোকাবেলা বা উত্তর দেয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় কি?

ধরা যাক আপনি একজন ধর্মভীরু মুসলিম। আপনি দেখছেন একজন নাস্তিক সমানে আপনার ধর্মকে আঘাত করছে, যাচ্ছে তাই ভাষায় গালি গালাজ করছে।

আপনি তখন বিন্দুমাত্র উত্তেজিত না হয়ে শান্ত মাথায় তাঁকে কিছু তথ্য দিতে পারেন।

শোনো ভাই , ইসলাম ধর্ম অন্যান্য ধর্মের তুলনায় নতুন হলেও এর বয়েস প্রায় ১৪০০ বছর হয়ে গেছে। এটি এখন এই পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম। এটি পালন করেন পৃথিবীর প্রতি চারজনে একজন এখন মুসলিম। পৃথিবীর প্রায় ৫০ টি দেশ এখন মুসলিম প্রধান দেশ।

এই রকম একটি বিশ্বজনীন ধর্ম বা তাঁর নবীকে আপনারা ৮৪ জন ব্লগার কেন, ৮৪,০০০ ব্লগার মিলেও গালাগালি দিয়ে কিছু করতে পারবেন না। তবে আপনি গালাগালি দিতে চাইলে চালিয়ে যান আমার কোন অসুবিধা নেই। আমি আমার নবীর আদর্শ অনুসরণ করি। তাঁর পথে যে ব্যক্তি কাঁটা বিছিয়ে রাখতেন, তাঁকে আমাদের নবী সেবা করেছেন।

তাই আপনার কোন ক্ষতি করা তো দূরের কথা, আপনার কোন বিপদ হলে আমি সবার আগে এগিয়ে আসবো। আপনি অসুস্থ হলে আমি প্রাণপনে চেষ্টা করবো আপনাকে সেবা করতে।

আজকের এই পৃথিবীতে কতজন মুসলিমের কাছে আমরা এই উদারতা, এই মানবতা আশা করি। আজকে মুসলিমদের ব্র্যান্ড ইমেজ হচ্ছে গলা কাট, বোমা মার। মুখে শান্তির ধর্ম ইসলাম বলে চাপাতি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে জবাই করা।

তাই আমাদের দেশে মুসলমানদের মধ্যে প্রচুর ধার্মিক, কিন্তু ধার্মিক হলেই কি মানবিকতা বিসর্জন দিতে হবে? এ কোন ধর্মের শিক্ষা? এই শিক্ষা তো হযরত মোহাম্মদ (সঃ) দিয়ে যান নি। তাহলে কি রহস্যময় কারণে মুসলমানরা আজকে এত উগ্র, ভায়োলেন্ট এক গোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে!

কারণটা খুব একটা রহস্যময় নয় আমার কাছে।

আজকের পৃথিবীতে মুসলিমদের মধ্যে শিক্ষার হার হচ্ছে ৩৮%, তাঁর মানে হলো প্রায় প্রতি তিন জন মুসলমানের মধ্যে দুইজন অশিক্ষিত। আমরা মতে এই একটা তথ্যই যথেষ্ট বোঝানোর জন্য আজকের বিশ্বে মুসলমানদের এই নৈরাশ্যজনক চিত্রের জন্য।

আপনি কটা মুসলিম প্রধান দেশ আজকে দেখাতে পারবেন যারা জ্ঞান-বিজ্ঞান আর উন্নতির শিখরে অবস্থান করছে? আজ যদি আরব দেশে তেল না পাওয়া যেতো তাহলে এই সব ধনকুবের শেখ, আমীর রা কোথায় থাকতো? কোথায় থাকতো পেট্রোডলারের টাকায় কেনা ক্যাডিলাক, মার্সিডিজ? দেখা যেতো এখনও তাঁরা মরুভূমির ঠা ঠা রোদে উটের পিঠে এক তাঁবু থেকে আরেক তাঁবুতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই দেশগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়, কলকারখানা সবই চলে বিদেশ থেকে জনশক্তি আমদানী করে।

আরেকটি মুসলিম প্রধান দেশ যার উন্নতিকে মডেল হিসাবে অনেক মুসলিম মনে করেন, সেই মালেশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নতির পিছনে সেখানকার চাইনিজ অধিবাসীদের অবদান সবচেয়ে বেশী। মালেশিয়ার অর্থনীতির প্রায় ৭০ ভাগ তাঁরা নিয়ন্ত্রণ করে।

অথচ আজকের মুসলিম বিশ্বের এই শোচনীয় অবস্থা থেকে বুঝতেই পারা যাবে না যে আজ থেকে হাজার বারোশো বছর আগে চিত্রটি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন।

আপনি কি জানেন সেই সময়টিতে মুসলিম শাসিত স্পেনের কর্ডোবাতে যখন স্ট্রীট ল্যাম্প ছিলো, সুরম্য অট্টালিকা এবং রানিং ওয়াটার ছিলো তখন লন্ডন, প্যারিস এই সব শহরগুলোতে লোকজন বলতে গেলে কুড়েঁ ঘরে বাস করছে।

স্পেনের কর্ডোবা, টলেডো, গ্রেনাডা এই শহরগুলো ছিলো এক একটি জ্ঞান বিজ্ঞানের সূতিকাগার। এখানে মুসলিম শাসকের রাজত্বে মুসলমান, ইহুদী আর খ্রীষ্টান স্কলাররা একসাথে হয়ে কাজ করতো। তাদের সবচেয়ে বড় অবদান যেটি সেটি হলো গ্রীক এবং রোমান যত জ্ঞানের আধার সেগুলো তারা ট্রান্সলেট করে নিয়ে আসছিল আরবী এবং অন্যান্য ইউরোপীয়ান ভাষায়। তারপর ব্রিটিশ পন্ডিত মাইকেল স্কট যখন স্পেনে আসলো তিনি এইগুলো ইংল্যান্ড, ফ্রান্স এবং ইউরোপের অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে দিলেন। এই জ্ঞান-ভান্ডার পরে ইউরোপের রেঁনেসা জাগাতে সাহায্য করে যেটি ইউরোপ বা পাশ্চাত্যের জ্ঞান বিজ্ঞানে এগিয়ে আসতে বিরাট ভূমিকা রেখেছে।

আজকে যেমন হার্ভার্ড, এম আই টী, অক্সফোর্ড, কেমব্রীজ নামগুলো জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চার উৎকর্ষতার শীর্ষে, তেমনি এক সময়ে মুসলিম বিশ্ব ছিল জ্ঞান চর্চার নেতৃত্বে। আর কেনই বা তা হবে না। জ্ঞান চর্চা ইসলাম ধর্মে সব সময় উৎসাহিত করা হয়েছে। হযরত মোহাম্মদ স্বয়ং বলে গেছেন যে জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রয়োজন হলে সুদূর চীন দেশেও যাও।

তখনকার মুসলমানরা নবীর বাণীতে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল। সেই যুগের জ্ঞান বিজ্ঞান মূলত গ্রীক আর রোমান সভ্যতা লদ্ধ জ্ঞান। মুসলিমরা এই জ্ঞান খুব দ্রুত করায়ত্ত করে ফেললো। অন্যদিকে সেই যুগের খ্রীষ্টানরা গ্রীক আর রোমান সভ্যতা বর্জন করে চলতো কারণ গ্রীক রোমানরা ছিল প্যাগান বা দেব-দেবী উপাসক। কিন্তু মুসলিমদের মধ্যে সেই উদারতা এবং জ্ঞান আহরনের তৃষ্ণা ছিল। তাই আমরা অষ্টম শতাব্দীতে দেখি আমরা আধুনিক মুসলিম আর গোঁড়া খ্রীষ্টানকে। ফলাফল যা হবার তাই, আজকের পুরো উলটো। মুসলিমরা জ্ঞান বিজ্ঞান, শৌর্যে-বীর্যে এগিয়ে গেল আর খ্রীষ্টানরা পড়ে রইলো অন্ধকার যুগে।

আজকে পাশার দান কেন পালটে গেল? উত্তর তো খুবই সহজ। যখন থেকে মুসলিম বিশ্ব জ্ঞান চর্চা থেকে দূরে সরে আসলো তখন থেকেই তাঁদের পতনের শুরু।

0 comments