শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু

যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তা' আলার যিনি সকল সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা।

মুহাম্মদ (সাঃ)-আল্লাহর রাসূল

মুহাম্মদ (সাঃ)-সকল মানুষের জন্য উদাহরন, সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ, ও আল্লাহর রাসুল

আল কোরআন - মহান আল্লাহ প্রদত্ত কিতাব

এ সেই কিতাব যাতে কোনই সন্দেহ নেই। পথ প্রদর্শনকারী পরহেযগারদের জন্য,

আমাদেরকে সরল পথ দেখাও

আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।

আল্লাহ নিতান্ত মেহেরবান ও দয়ালু

সে সমস্ত লোকের পথ, যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ। তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।

Labels: , , , ,

আপনার যদি কোন মেয়ের দিকে অশালীনভাবে তাকানোতে সমস্যা না থাকে ?




আপনার যদি কোন সমস্যা না থাকে কোন মেয়ের দিকে তাকানোর প্রতি, অশালীনভাবে তাকানোতে, অর্থাৎ আপনি তারদিকে সম্মানের সাথে তাকাচ্ছেন না, আপনি যেন তাকে পশু বা মাংসপিণ্ড মনে করছেন, যদি এই আপনার মনোভাব হয়, তার মানে এই যে, আপনার নিজের মায়ের প্রতি, নিজের বোনের প্রতি, নিজের স্ত্রীর প্রতি, নিজের কন্যার প্রতি আপনার কোন শ্রদ্ধাবোধ নেই। তারাও নারী। আপনি কখনই চাইবেন না যে মানুষ তাদের দিকে অশোভন ভাবে তাকাক। আর আপনি যার দিকে তাকাচ্ছেন তিনিও কারো কন্যা, কারো বোন বা কারো মা। তাই সাবধান হউন।

এমনকি উনাদের যদি নিজেদের জন্য শ্রদ্ধা নাও থাকে, কখনও অমুসলিম নারীদের নিজেদের প্রতি সম্মানবোধ থাকেনা, তাই তারা কখনো কখনো ‪#‎অশালীন‬ পোশাক পরে, এমনকি মুসলিমরাও অশোভন পোশাক পরে থাকে। কিন্তু আপনারতো নিজের প্রতি এবং আপনার পরিবারের নারীদের প্রতি সম্মানবোধ আছে, তাই আপনি নিজের দৃষ্টিকে নত করুন। অবশ্যই করুন।

আর এটা খুবই ঘৃণ্য ব্যাপার যে, পুরো পরিবারে সবাই একসাথে বসে মুভি দেখে, আর যখন কোন আপত্তিকর দৃশ্য আসে, তখন মা আর মেয়ে তাদের স্বামী আর ভাইদের সাথে একসাথে তা দেখে – “ওহ, এইটা মাত্র একটা খারাপ দৃশ্য, এইটা এমন কিছু না”। এটা খুবই ন্যাক্কারজনক, এটা কোন মুসলিম পরিবারের আচরণ হতে পারেনা। এই ধরণের অশ্লিলতায় আমাদের বিরক্তি হওয়া উচিৎ। আমাদের এর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। এটা আমাদের সমাজের একটা বিশাল সমস্যা, আমাদের সমাজে অনেক ভাল ব্যাপার আছে, অনেক অনেক ভাল দিক আছে। কিন্তু এটা এমন একটা ব্যাপার যা আমাদের তরুণদের ধ্বংস করে দিচ্ছে। অশ্লিলতার অতিরিক্ত প্রকাশ। কোন এক মেয়ে যদি আপনাকে মেসেজ পাঠায়, “আমি তোমার ফেসবুক ফ্রেন্ড হতে চাই”। ঠিক আছে। কিন্তু আমি চাইনা। না। যাও তোমার ভাইয়ের সাথে ফ্রেন্ডশিপ কর। তোমার কি বাবা নেই? সে কি তোমার সাথে বন্ধুভাবাপন্ন নয়? তোমার কেন অন্য বন্ধু দরকার?

আমি খুব গুরুত্ব দিয়ে বলতেসি, আমি খুবই জোর দিচ্ছি, আপনারা এটাকে মজা মনে করবেন না। “ওহ, কি সুন্দর ছবি...” – এইটা আপনার জাহান্নামেরও টিকেট। আপনি আপনার চরিত্র নষ্ট করছেন। আপনি কি এমন কোন মেয়ে কে বিয়ে করবেন যার সাথে আর ১০০ ছেলের যোগাযোগ আছে। “হ্যাঁ, ও দেখতে বেশ সুন্দর, ওহ, তুমি অই মেয়েকে বিয়ে করেছ, আচ্ছা, আচ্ছা বেশ ভাল”। আপনার পরুষত্ব কোথায়? মুসলিমদের লজ্জাশীলতা থাকা উচিৎ, পুরুষ ও নারী উভয়েরই। এবং আমাদের নারীদের, কারও আপনার স্ত্রীর দিকে তাকানোর কথা না, কে ছাড়া?- আপনি। তার সৌন্দর্য আপনি ছাড়া আর কারও উপভগ করার কথা না। আপনার বিরক্ত হওয়া উচিৎ যদি কেউ আপনাকে এসে বলে “মাশাল্লাহ, আপনার স্ত্রী খুবই সুন্দর দেখতে”। এটাতে আপনার বিরক্ত লাগবে – তাই না? আমাদের এমন বিরক্তিই লাগা উচিৎ যখন আমরা মাহ্রাম নয় এমন কারও দিকে তাকাব। আমাদের মধ্যে লজ্জাশীলতা থাকতে হবে। আমি জানিনা এইটা কোথায় গেল। আজকাল এইটা মনে হয় ছুটি কাটাচ্ছে। অনেক মুসলিমের জন্যই সত্যি যে, তাদের শালিনতাবোধ ছুটি কাটাচ্ছে।

নিজের লজ্জাশীলতাকে ফিরিয়ে আনুন। এটা খুবই জরুরি, নাহলে আপনার পরিবার ধ্বংস হয়ে যাবে। আপনার বিয়ে সুখকর হবেনা, আর নিশ্চিতভাবেই আপনার বাচ্চারাও ভালভাবে গড়ে উঠবে না, যদি আপনার মধ্যে শালীনতাবোধ না থাকে। আপনার মাঝে অবশ্যই ‪#‎লজ্জাশীলতা‬ বা ‪#‎শালীনতাবোধ‬ থাকতে হবে।



আর টেলিভিশন এ যে নোংরা জিনিষ দেখান হয়, যা আপনারা দেখে থাকেন, আপনারা জানেন যে, মহানবী (সাঃ) আমাদের সাবধান করেছেন যে, তারা এমন কাপড় পড়ে যেন মনে হয় তারা কোন কাপড় পড়েনাই (শালীনভাবে), তিনি আমাদের এমন সময়ের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। “ওহ এইটা শুধু পিজি-১৩ মুভি, ঠিক আছে আমরা এইতাতে যেতে পারি, এটা শুধুই পিজি-১৩। অথবা এইটাতে শুধু একটা খারাপ দৃশ্য আছে, এইটা এমন খারাপ কিছু না”। “আপনি কি চান? আমরা কি করি? আমরা কি মুভিও দেখতে পারবনা? আমার বাবা আর মা আমাকে কিছুই করতে দেয়না”। “আমার জীবন এ দুঃখ ছাড়া কিছুই নেই, কারন আমি এইটা দেখতে পারিনাই ...... যাইহোক”। তাইনা? নিজের উপর নিয়ন্ত্রন আনুন। নিজেকে সবসময় বিনোদনের মধ্যে রাখার উপর নিয়ন্ত্রন আনুন। আপনি একজন মুক্ত মানুষ। টেলিভিশন আর মুভি এর বাইরেও জীবন আছে । আর who.com বা বিভিন্ন ওয়েবসাইট এর বাইরেও আছে। এইসব কিছুর বাইরেও জীবন আছে। এখনও বাইরে অক্সিজেন আছে, আপনার জীবন বেঁচে থাকবে, আমার কথা বিশ্বাস করুন। আপনি এইসব বাদ দিয়েও বেঁচে থাকবেন, বরং সুখেই থাকবেন।

আর যেহেতু আমি আপনাকে বলছি আপনি কি করবেন না, তাহলে আমাকে এটাও বলতে হবে যে আপনি কি করবেন, তাই না? মানে আপনি যদি এসব কিছু না করেন, তাহলে আপনি কি করবেন? খেলাধুলার জন্য সময় বের করুন। বাইরে যান, জগিং বা এরকম কিছু করুন। স্বাস্থ্যকর কোন অভ্যাস করুন, আমি বলছি না যে আপনাকে ধর্মীয় কোন কাজ করতে হবে, আমি এই মুহুরতে আপনাদের কাছ থেকে তা আশাও করিনা, কিন্তু আমি এটা আশা করি যে আপনি এমন কিছু করছেন যা আপনাকে খারাপ মানুষে পরিনত করছেনা। আপনারা কি বুঝতে পারছেন যে আমি কি বলতে চাচ্ছি? কমপক্ষে খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকুন। কমপক্ষে খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকুন।

যারা বয়স্ক আছেন তাদের কে বলছি। আপনাদের থেকে একটু সময় নিচ্ছি। যদি এমন হয় যে আমাদের তরুনেরা মসজিদে আসছে, কিন্তু তারা ইসলাম নিয়ে কিছুই শিখছে না, তারা এইখানে শুধু বসে আছে, পিজা খাচ্ছে বা এমনি কথা বলছে, হয়ত কোন ভিডিও গেম নিয়ে কথা বলছে। আমি খুবই আনন্দিত যে তারা এটা করছে, কারন তারা যদি এইখানে এইটা না করত, খুব সম্ভবত বাসায় তারা আর খারাপ কিছুই করত। তাই দয়াকরে এমন বলবেন না যে, “এই, বাচ্চারা এইখানে কি করছে?” দয়া করে এমন বলবেন না। তাদের কে এইখানে থাকতে দিন। কারন এখানে না থাকলে তারা আরও খারাপ কিছুই করবে। অন্তত তারা কোন ক্ষতি করছে না। তারা বাইরে অন্য যে কিছুর চেয়ে এইখানে ভাল আছে। আপনারা কি বুঝতে পারছেন আমার কথা? আমাদের তরুণদের কাছ থেকে সবচেয়ে ভাল আচরণ আশা করবেন না, কারন আপনারাই তাদের সেভাবে গড়ে তোলেননি। তাই, আপনারা কিভাবে তাদের থেকে এটা আশা করেন? আপনারা তাদের পাবলিক স্কুলে পাঠিয়েছেন, তারা নিজে থেকে যায়নি। আপনারা পাঠিয়েছেন, তাদেরকে প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা করে অশালীন পরিবেশে ছেড়ে দিয়েছেন, আর যখন তারা এমন আচরণ করেনা, যেমন তাবিইন রা করতেন, তখন আপনি বলেন, “তারা কিভাবে এইটা করতে পারল?”। আপনি কিভাবে এইটা চিন্তা করেন? বাস্তবে আসুন, বাস্তবিক ভাবে চিন্তা করুন। এটাই বাস্তবতা। আমি নিবেদিতভাবে সমাজের বয়স্কদের বলছি, মসজিদে তরুণদের সাথে ভাল ব্যবহার করুন। তাদেরকে ভালভাবে গ্রহন করুন, তাদেরকে বের করে দিবেন না।

আর আমি নিবেদিতভাবে তরুণদের বলছি, আমার শেষ পরামর্শ শালীনতা নিয়ে, তারপর আমি শেষ করব ইনশাল্লাহ। আমি কথা দিচ্ছি, এটাই শেষ। সত্যি সত্যি বলছি। বন্ধুত্ব করার জন্য আরও ভাল মানুষ খুজে বের করুন। আপনার বন্ধুরা যদি অশালীন হয় তাহলে আপনিও অশালীন হবেন। আর যদি আপনার বন্ধুদের মাঝে শালীনতা আর ভদ্রতা থাকে তাহলে আপনার মধ্যেও শালীনতা আর ভদ্রতা থাকবে। যদি আপনার বন্ধুরা খারাপ হয়, তাহলে তারা তাদের সাথে আপনাকেও দোজখে টেনে নিয়ে যাবে। আপনি মনে করছেন যে তারা খুব cool, কিন্তু একদিন এমন সময় আসবে যখন আপনি দেখবেন তারা আসলে খুব hot (জাহান্নামের আগুনের মত)। তখন আর এটাকে cool মনে হবেনা। আমি দোয়া করি ইনশাল্লাহ আপনারা এই পরামর্শগুলো গুরুত্তের সাথে নিবেন, আমি এত কিছু নিয়ে বলতে চাইনি, কিন্তু বলতেই হল।

আমার মনে হয় যে আমি যথেষ্ট সময় ও সুযোগ পাইনা তরুণদের পরামর্শ দেয়ার জন্য। খুব সহজে বলতে গেলে, অশ্লীলতা পরিহার করুন, নিজের ভিতরের খারাপ প্রবৃত্তির মোকাবিলা করুন, ইনশাল্লাহ আপনার লজ্জাশীলতা ফিরে আসবে। আমি দোয়া করি যেন আপনারা এই দ্বীনের নেতৃত্ব দিতে পারেন, আর এর বার্তা বহন করতে পারেন আর যখন সময় আসবে তখন শক্তিশালী, স্বাস্থ্যকর মুসলিম পরিবার গঠন করতে পারেন। আপনারাই আমাদের নেতা। আপনারা এটা চান আর না চান। আগামি দশকে আপনারাই আমাদের সমাজের নেতা হবেন। আপনারা মিলেই এই সমাজ, আপনারা মিলেই ইসলাম ইনশাল্লাহ। এই দায়িত্ব আপনাদেরই। আল্লাহ আপনাদের কে এই দায়িত্ব ঠিক ভাবে পালনের তৌফিক দান করুন ইনশাল্লাহ, আর আল্লাহ আপনাদের পিতামাতাদের আপনাদেরকে সঠিক ভাবে গড়ে তোলার সুযোগ দান করুন। আল্লাহ আপনাদেরকে ভাল বন্ধু পেতে সাহায্য করুন, আর খারাপদের থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করুন। আল্লাহ আপনাদের খারাপ অভ্যাস থেকে দূরে থাকতে সহায়তা করুন, আর অশালিনতার থেকে দূরে রাখুন। পিতামাতার সাথে কথা বলার সময় নিজের জিহ্বা সতর্ক করুন, সময় নষ্ট করা বন্ধ করুন, সালাতে নিয়মিত হউন।

আমি যদি ভাল আর সত্যি কিছু বলে থাকি তাহলে তা আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে নিয়ামত। আর যদি কোন ভুল করে থাকি, তাহলে তার দায় আমার নিজের।

সুত্র: নোমান আলী খান
Nouman Ali Khan Collection In Bangla


0 comments
Labels: , , ,

দুনিয়া মু’মিনের জন্য জেলখানা, কাফিরের জন্য বেহেশত।- কথা কি সত্য ?

“মনে করে দেখো, যখন আমি বলেছিলাম, “এই শহরে প্রবেশ করো এবং এখানে তোমরা ইচ্ছেমতো যত খুশি খাও, কিন্তু এর দরজা দিয়ে প্রবেশের সময় আমার প্রতি (কৃতজ্ঞতায়) অবনত হয়ে প্রবেশ করো এবং বলতে থাকো, “আমাদের পাপের বোঝা হালকা করে দিন!” তাহলে আমি তোমাদের দোষ-ত্রুটি-অন্যায় আচরণ ক্ষমা করে দিব এবং যারা ভালো কাজ সুন্দরভাবে করে তাদের পুরস্কার আরও বাড়িয়ে দিব। [আল-বাকারাহ ৫৮]

কু’রআনে এই কথাগুলো বার বার আসে: সুস্বাদু খাবারের কথা, জীবনকে উপভোগ করার কথা, আল্লাহর ﷻ সৃষ্টি করা এই অত্যন্ত সুন্দর পৃথিবী এবং আকাশ ঘুরে দেখা। আল্লাহ ﷻ আমাদেরকে কু’রআনে বার বার তাঁর অনুগ্রহের কথা চিন্তা করতে বলেছেন, আমাদেরকে হালাল উপায়ে জীবনকে উপভোগ করে আখিরাতে আরও বেশি আনন্দের জন্য চেষ্টা করতে বলেছেন।

কিন্তু কোনো এক অদ্ভুত কারণে অনেক মুসলিমের ভেতরে একটি ধারণা চলে এসেছে যে, যদি একজন আদর্শ মুসলিম হতে চাও, তাহলে আজকে থেকে জীবনের সব আনন্দ ছেড়ে দিয়ে, কোনোমতে চলে–এরকম একটা জীবন-যাপন করো এবং নিজেকে যত পারো কষ্টের মধ্যে রাখো। হাজার হলেও, হাদিসে আছে: “দুনিয়া মু’মিনের জন্য জেলখানা, কাফিরের জন্য বেহেশত।”(তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, সহীহ মুসলিম)

এটি একটি বহুল প্রচলিত ভুল ধারণা যে, একজন আদর্শ মুসলিম হতে হলে জীবনের সব হালাল আনন্দ, সম্পদ অর্জনের সুযোগ, উচ্চতর ডিগ্রি পাওয়ার চেষ্টা – এই সব ছেড়ে দিয়ে, গরিবের মতো জীবন যাপন শুরু করতে হবে। “সবসময় মুখ গম্ভীর করে রাখতে হবে, যেন মানুষ আমাকে দেখলেই বুঝতে পারে আমি একজন খাঁটি ঈমানদার। সস্তা, সাধাসিধে, তালি দেওয়া কাপড় পড়তে হবে, যেন আমাকে দেখলে মনে হয় আমি একজন আদর্শ সুন্নতি বান্দা। পরিবারকে নিয়ে ভুলেও রেস্টুরেন্টে খেতে যাওয়া যাবে না, যতক্ষণ না দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়ে, সবাই যাকাত দিয়ে, সব গরিব মানুষ সচ্ছল হয়ে না যাচ্ছে। দিনরাত নিজেকে বিভিন্ন ধরনের কষ্টের মধ্যে রাখতে হবে। কারণ যত বেশি কষ্ট, তত বেশি সওয়াব”— এগুলো সবই ভুল ধারণা, যা হাদিসটির বিভিন্ন ধরনের অপব্যাখ্যা থেকে এসেছে। এধরনের অপপ্রচারের কারণে আজকাল মানুষ ‘ইসলাম’ মানেই মনে করে একটি বন্দি, হতাশাকর, বিষণ্ণ জীবন ব্যবস্থা।

এই দুনিয়াতে মানুষের আত্মাকে আল্লাহ ﷻ দেহ নামের এক জেলখানায় ভরে দিয়েছেন। এই জেলখানায় থাকার অনেক নিয়মকানুন আছে। এখানে কিছু কাজ করা নিষিদ্ধ, কিছু কাজ নিয়মিত করা বাধ্যতামূলক। এই নিয়মগুলো দেওয়া হয়েছে জেলখানার সবার ভালোর প্রতি লক্ষ রেখে, জেলখানায় নিয়ম শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য। এই হচ্ছে জেলখানার প্রকৃতি। একজন মু’মিনের কাছে এই ব্যবস্থাকে একটা জেলখানার মতো মনে হতে পারে, কিন্তু এটাই বাস্তবতা এবং সে সেটা মেনে নেয়।

কিন্তু অবিশ্বাসীরা এটা বিশ্বাস করতে চায় না যে, একদিন কিয়ামত হবে, বা মৃত্যুর পরে আর কোনো জীবন আছে। তারা মনে করে: এই দুনিয়াটাই হচ্ছে তাদের বেহেশত— এখানে কোনো নিয়ম নেই, কোনো নিষেধ নেই, যখন যা খুশি তাই করা যাবে। যেহেতু তাদের কাছে এই দুনিয়াটাই হচ্ছে একমাত্র জীবন, এর পরে আর কোনো অস্তিত্ব নেই, তাই তারা এই দুনিয়াটাকে তাদের মতো করে বেহেশত বানিয়ে, যতটুকু সম্ভব আমোদ ফুর্তি করে যেতে চায়। এই দুনিয়ার মতো ক্ষণস্থায়ী একটা জায়গা, যেখানে অসুখ হয়, প্রিয়জনেরা হারিয়ে যায়, পদে পদে নানা কটু কথা, অন্যায় সহ্য করতে হয়–এটাই তাদের শেষ বেহেশত। এর পরে আর কিছু পাওয়ার আশা নেই।

এরকম একটি ধারণা মানুষকে কতখানি হতাশ করে দেয়, সেটা আমাদের মুসলিমদের পক্ষে চিন্তা করাটা কঠিন। একটা মানুষ যখন প্রতিদিন নিজেকে বোঝায়: “একদিন আমি মরে যাবো, আর এই সবকিছু হারিয়ে যাবে, আমার পরিবার আমাকে ছেড়ে চলে যাবে, আর কোনোদিন আমি তাদেরকে পাবো না; আমার সব সম্পত্তি একদিন আমার কাছ থেকে চলে যাবে, আমার অস্তিত্ব একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে, আর মাত্র কয়েকটা বছর, তারপর সব শেষ”–কি ভয়ংকর হতাশাকর পরিস্থিতির মধ্যে তাকে জীবনটা পার করতে হয়। সে তখন মরিয়া হয়ে যায় এই জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে যত বেশি করে পারে আনন্দ করে নিতে। তখন সে বন্ধু বান্ধব নিয়ে মরিয়া হয়ে ড্রিঙ্ক করে মাতাল হয়ে যায়। যৌবন শেষ হয়ে গেল, শরীর নষ্ট হয়ে গেল–এই তাড়নায় ছুটতে থেকে অশ্লীল কাজে গা ভাসিয়ে দেয়।

তারপর শরীর এবং মন ভর্তি অসুখ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের আসক্তিতে জড়িয়ে পড়ে। একসময় সে এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে, তার ভয়ংকর আসক্তির জন্য এবং জঘন্য সব স্মৃতিকে ভুলে থাকার জন্য নিজেকে অ্যালকোহলে, ড্রাগে বুঁদ করে রাখতে হয়। এদেরকে বাইরে থেকে দেখে অনেক আমোদে আছে, জীবনটা অনেক উপভোগ করছে মনে হলেও, রাতে ঘরে ফেরার পর যখন তারা একা হয়, তখন তাদের উপরে হঠাৎ করে নেমে আসে ভয়ংকর বিষণ্ণতা, অবসাদ এবং হতাশা। তাদের জীবনে আর বড় কোনো গন্তব্য নেই, বড় কোনো উদ্দেশ্য নেই। এই নষ্ট দুনিয়াটাই তাদের শেষ চাওয়া-পাওয়া।

আপনারা যদি পাশ্চাত্যের অমুসলিমদের মুসলিম হওয়ার ঘটনাগুলো পড়েন, দেখবেন তাদের ঘটনায় একটি ব্যাপার বার বার ঘুরে ফিরে আসে: তাদের অনেকেই দিনরাত ফুর্তি করত, ব্যভিচার, মদ ছিল তাদের জীবনে খুবই স্বাভাবিক একটা ঘটনা। শনি-রবিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে বারে গিয়ে সারারাত ড্রিঙ্ক করে মাতাল হয়ে আসত। তারপর যখন সোমবারে হুঁশ ফিরত, এক ভয়ংকর হতাশা, বিষণ্ণতায় ডুবে যেত। জীবনটা তাদের কাছে অসহ্য মনে হতো। নিজের কাছে নিজেকে একটা পশু মনে হতো। “জীবন কি এটাই? জীবনে কি এর চেয়ে বড় কিছু নেই? এভাবে নিজেকে শেষ করে দিয়ে কি লাভ?”—এই ধরনের প্রশ্ন তাদেরকে পাগলের মতো তাড়িয়ে বেড়াত। তাদের জীবনে কোনো সুখ ছিল না, ছিল কিছু ক্ষণস্থায়ী ফুর্তি। হতাশা, বিষণ্ণতা, অশান্তি এবং নিজেকে শেষ করে দেওয়ার একটা অসহ্য ইচ্ছাকে দমিয়ে রাখার জন্য তাদেরকে দিনরাত নিজের সাথে সংগ্রাম করতে হতো, নিজেকে মদে বুঁদ করে রাখতে হতো।


আল্লাহ ﷻ আমাদেরকে এর ঠিক উল্টোটা করতে বলেছেন। তিনি আমাদেরকে যে জীবন-বিধান দিয়ে দিয়েছেন, সেভাবে জীবন পার করলে এই দুনিয়াতেই আমরা হাসিখুশি থাকতে পারব, নিজের জীবনে, পরিবারে, সমাজে, দেশে শান্তি নিয়ে আসতে পারব। একই সাথে মৃত্যুর পরে অনন্তকাল পরিবার-পরিজন, বন্ধুবান্ধব নিয়ে অনাবিল, অফুরন্ত শান্তিতে জান্নাত উপভোগ করতে পারব। তিনি আমাদেরকে বলেননি এই দুনিয়াতে নিজেদের উপরে ইচ্ছা করে কষ্ট দিতে। বরং তিনি পৃথিবীতে অসংখ্য হালাল আনন্দের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন এবং সেগুলো উপভোগ করার নির্দেশ কু’রআনেই দিয়েছেন—

আল্লাহ তোমাদেরকে এই জীবনে যা দিয়েছেন, তা ব্যবহার করে এর পরের জীবনকে পাওয়ার জন্য চেষ্টা কর, কিন্তু সেই সাথে এই দুনিয়াতে তোমার যে প্রাপ্য রয়েছে, সেটা ভুলে যেও না। অন্যের সাথে ভালো কাজ কর, যেভাবে আল্লাহ তোমাকে কল্যাণ দিয়েছেন। এই পৃথিবীতে দুর্নীতি ছড়ানোর চেষ্টা করবে না। দুর্নীতিবাজদের আল্লাহ পছন্দ করেন না! [আল-কাসাস ২৮:৭৭]


বল, “কে তোমাদেরকে আল্লাহর সৃষ্ট সৌন্দর্য এবং ভালো-পবিত্র খাবার উপভোগ করতে মানা করেছে, যা তিনি তার বান্দাদের জন্যই তৈরি করেছেন?” বলে দাও, “এগুলো তাদেরই জন্য যারা এই দুনিয়াতে বিশ্বাস করে: কিয়ামতের দিন এগুলো শুধুমাত্র তাদেরই হবে।” এভাবেই আমি আমার বাণীকে পরিষ্কার করে দেই বুদ্ধিমান লোকদের জন্য। [আল-আরাফ ৭:৩২]


ও প্রভু, আমাদেরকে এই দুনিয়াতে কল্যাণ দিন এবং আখিরাতেও কল্যাণ দিন। আর আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করেন। [আল-বাকারাহ ২:২০১]

উপরের আয়াতগুলো এবং বাকারাহ-এর আলোচ্য আয়াতের মূলকথা একটাই: জীবনকে উপভোগ করতে হবে আল্লাহর প্রতি অনুগত থেকে, কৃতজ্ঞ থেকে এবং পাপের ব্যাপারে সবসময় সাবধান থেকে। মনে রাখতে হবে, দুনিয়াতে আমরা যা কিছুই উপভোগ করব, কিয়ামতের দিন সেগুলোর সবকিছুর হিসাব দিতে হবে। সুতরাং আমরা যেন উপভোগ করতে গিয়ে আল্লাহর ﷻ অবাধ্য না হই। এমন কিছু যেন করে না ফেলি, যেটা কিয়ামতের দিন আমাদেরকে দেখানো হলে আমরা লজ্জায় কিছু বলতে পারব না।

আমরা পৃথিবীতে আল্লাহর ﷻ তৈরি সৌন্দর্য, ভালো-পবিত্র খাবার যখন ইচ্ছে উপভোগ করতে পারি, যদি সেটা আল্লাহর ﷻ প্রতি অনুগত অবস্থায়, তাঁর দেওয়া নিয়মের মধ্যে থেকে করি, এবং একই সাথে আমরা যে সবসময় ভুল করছি, সেটার জন্য তাঁর কাছে ক্ষমা চাই। এরকম বিনীত, কৃতজ্ঞ অবস্থায় পৃথিবীতে আল্লাহর ﷻ অসাধারণ অনুগ্রহগুলো পরিমিতভাবে উপভোগ করে, জান্নাতে গিয়ে অনন্তকাল আনন্দ করার চেষ্টার মধ্যে কোনোই বাধা নেই

(সোর্স এবং আরো বিস্তারিত দেখুন এখানে- উস্তাদ নুমান আলী খানের তাফসীরের প্রেরণায় বাংলা ভাষায় অসাধারণ এই সাইট থেকে - http://quranerkotha.com/baqarah-58/ )

0 comments
Labels: , , ,

আজকে "ব্লগার" একটি গালি! ধার্মিক মানেই মৌলবাদী, সন্ত্রাসী! মুক্তমনা মানেই ভন্ড।

বাংলাদেশী অনলাইন জগতে এখন সবচেয়ে আলোচিত শব্দ হচ্ছে "মুক্তমনা।" একদল লোক শব্দটিকে গালি বানিয়ে দিয়েছে। তাদের কাছে মুক্তমনা মানেই কাফের, নাস্তিক, এদের ফাঁসি চাই। আরেকদল নিজেদের মুক্তমনা দাবি করে নিজেদের মনের পারভার্টনেস, গালাগালি, মস্তিষ্কের পায়খানা ইত্যাদি বের করে এনে অনলাইন জগৎকে দূষিত করছে। আজকে হঠাৎ করেই মনে হলো, এ নিয়েই কিছু কথা বলে ফেলি।
তাহলে একটু ঘুর পথেই মূল বিষয়ে যাওয়া যাক।

মত প্রকাশের অধিকার মানুষের জন্মগত অধিকার। মায়ের পেট থেকে সে স্বাধীন হয়েই বের হয়। তাঁকে কেউ পরাধীন বানালে সেটা মানুষ বানায়, প্রকৃতি নয়। জন্মের পর থেকেই নানান অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে সে বড় হতে থাকে। তাঁর মস্তিষ্কের ব্ল্যাংক হার্ডডিস্কে ধীরে ধীরে নানা তথ্য জমা হতে থাকে। এবং অতি স্বাভাবিক কারনেই তাঁর মনে নানান বিষয়ে নানান সময়ে নানান প্রশ্ন জেগে উঠে। কিছু কিছু বিষয়ে তাঁর একান্ত নিজস্ব মত সৃষ্টি হতে থাকে। এবং এই প্রশ্ন করার অধিকার, এবং কোন বিষয়ে মত প্রকাশের অধিকারটাই তাঁর জন্মগত অধিকার। আমাদের কাউকে ক্ষমতা দেয়া হয়নি সেই অধিকার দাবিয়ে রাখার।

এখন সেই মত প্রকাশের বা প্রশ্ন করার মাঝে একটা শালীনতা, একটা পরিমিতি বোধ থাকা প্রতিটা মানুষেরই উচিৎ। আমার হাতে রাইফেল ধরিয়ে দিলেই আমি গুলি করে যাকে তাকে মেরে ফেলতে পারিনা। এইটুকু বিবেক বোধ আমার থাকাটা জরুরী।যখনই কেউ সীমা অতিক্রম করে, তখন সেটা আর মুক্তমন থাকেনা, ফাজলামি হয়ে যায়। এখন আমাদের দেশে ঠিক যেটা চলছে।
ব্যাখ্যা করলে কিছুটা স্পষ্ট হবে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যৌবনে বাংলা সাহিত্যের প্রথম ও শ্রেষ্ঠ মহাকাব্য মেঘনাদবধ কাব্যের সমালোচনা করতে গিয়ে তাঁর "ব্লগের" উপসংহারে লিখেন, "ইহা আসলে কোন মহাকাব্যই নয়।"এখন মাইকেলের ভক্তেরা যদি রবীন্দ্রনাথের উপর ক্ষেপে গিয়ে ব্লগিং শুরু করে দেন যে "এই শালা বউদির সাথে প্রেম করে, যেখানে সেখানে প্রেম করে, লুইচ্চা ব্যাটা মহাকাব্যের কী বুঝে?" এবং অফ টপিক সমালোচনা, ব্যক্তিগত আক্রমন। সেটা আর মত প্রকাশ থাকেনা, মুক্তমনেরতো ধারে কাছেও যায় না। এইটাই ফাজলামি। আসল মুক্তমনারা রবীন্দ্রনাথের সাথে সুস্থ আলোচনায় বসবে, এবং যদি আলোচনা ফলপ্রসু না হয় তাহলে যে যার বিশ্বাস নিয়ে স্থির থাকবে। তবু ভদ্রতার সীমা অতিক্রম করবে না।
কথা প্রসঙ্গে বলে ফেলি, শেষ বয়সে রবীন্দ্রনাথ বুঝতে পেরেছিলেন যৌবনে তিনি কী ভুলটাই না করেছিলেন। তিনি তাই নিজের সমালোচনা করে বলেছিলেন, মেঘনাদবধ কাব্যের মাহাত্য বুঝার মত বয়স তখন তাঁর ছিল না।
এমনি এমনি কেউ "কবিগুরু" হয়না। বিশাল একটা কলিজা থাকা লাগে।
এখন সরাসরি পয়েন্টে আসি।

আজকাল মুক্তমনার ছদ্মবেশে মানুষ ধর্মকে সরাসরি আক্রমন করছে। ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লেখালেখি এক বিষয়, আর ফাজলামি ভিন্ন। দেশে এখন ফাজলামি চলছে বেশি। যেমন, কেউ যদি হিন্দু ধর্মের গোড়ামির সমালোচনা করতে চায়, সে বর্ণ প্রথা নিয়ে সমালোচনা করুক। "বিধবা নারীর বিবাহ শাস্ত্র সিদ্ধ নয়," "সতিদাহ প্রথা মহাপুন্যের," "ব্রাক্ষণের সঙ্গে যৌন মিলনে পাপ নেই" - ইত্যাদির বিরুদ্ধে বলুক। এবং তারচেয়ে বড় কথা, নিজে সেটা পালন করুক।
কিন্তু কৃষ্ণ, রাম, শিবদের নামে খিস্তি গাওয়ার কী মানে?এর মানে একটাই, তাদের মূল উদ্দেশ্য সমাজ সংস্কার নয়, তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য উস্কানি।ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যা সাগর নিজের পুত্রের বিয়ে এক বিধবা নারীর সাথেই দিয়েছিলেন। যতদূর জানি, ঈশ্বর চন্দ্র কোন লেখায় কোন ধর্মকে আক্রমন করে কিছু লিখেননি।

তাই আমরা দেখতে পাই, "মুক্তমনার" দাবি তোলা এইসমস্ত ব্লগাররা কখনই সমাজ বদলের জন্য তেমন মুখ্য ভূমিকা রাখেননা। তারা অনলাইনে গালাগালি আর উস্কানি নিয়ে ব্যস্ত। সোমালিয়ায় একটি এতিম শিশুকে দেখভাল করতে মাসে মাত্র তিরিশ ডলার লাগে। আমি নিশ্চিত বাংলাদেশে খরচ এর কাছাকাছিই হবে। কখনই দেখবেন না এইসব মুক্তমনাদের এইসব এতিম শিশুদের দেখভাল করতে।

আমি একবার এক মানবতাবাদী মুক্তমনাকে দেখেছিলাম রিক্সাওয়ালাকে ঠাস করে চড় মারতে। কারন সে ন্যায্য ভাড়ার চেয়ে পাঁচ টাকা বেশি চেয়েছিল। রিক্সাওয়ালার যুক্তি, সেদিন গরম বেশি ছিল।
মানুষের প্রতি মমতা এদের অনলাইন জগতেই সীমাবদ্ধ। আর পশুপাখির প্রতিতো নেই বললেই চলে।
এক সাইকোকে চিনতাম যে ক্ষধার্ত কুকুরের উপর গরম পানি ঢেলে দিয়ে খুব মজা পেত। চামড়া ঝলসে যাওয়ার যন্ত্রনায় কুকুরের চিত্কার শুনতে তার খুব ভাল লাগতো। সেই কিনা আবার নিজেকে মুক্তমনা দাবি করে মাঝে মাঝে স্ট্যাটাস দেয়।

তবে যারা আসলেই মানবতাবাদী, তাঁরা ফালতু খিস্তি আওরান না। তাঁদের মানসিকতাই ভিন্ন। এরাই অ্যাগনস্তিক, মানে হচ্ছে লজিক্যাল এবং তারচেয়েও ভদ্র, নাস্তিক। মোটেও ফাজিল নয়। আমার বন্ধু তালিকায় এদের সংখ্যা প্রচুর।
আর এইদিকে সেসব উস্কানিমূলক লেখা পড়ে মুমিন মুসলমানের রক্ত টগবগিয়ে ফুটে। তারা ঝাপিয়ে পড়ে মানুষ খুনের কাজে। এমন ভাব যেন ইসলাম বিপন্ন, এরা না মরলে ইসলামের সম্মান ধুলায় লুটাবে। নারায়ে তাকবির! আল্লাহু আকবার!

আহারে মুসলিম! আল্লাহর উপর এই তোদের ভরসা! এই তোদের রাসুলের নির্দেশ মেনে চলা?
এর ফলে পরিচিতি পাচ্ছে ইসলাম একটি সন্ত্রাসী ধর্ম। মুসলিম মানেই সন্ত্রাসী!
এদের কিছু বুঝাতে যাবেন, আপনি হবেন কাফির। আপনিও হবেন নাস্তিক।
একদিকে তথাকথিত মুক্তমনা, অন্যদিকে এইসমস্ত মূর্খ মৌলবাদী - আমাদের অবস্থা পিষ্ট হওয়া মরিচের থেকেও দফারফা।
এইবার আসা যাক আসল পয়েন্টে।

বিরাট সংখ্যক মুসলমানদের একটা বিশ্বাস আছে যে আমাদের ধর্মকে কোন রকম প্রশ্ন করা যাবেনা। যা আছে, চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে হবে। কারন ঈমানের আভিধানিক অর্থই বিশ্বাস। এবং ইসলাম শব্দের অর্থ আত্মসমপর্ন। নবীজি (সঃ) যা বলেছেন, আল্লাহ যা বলেছেন, চোখ বন্ধ করে আত্মসমর্পণ করে ফেলার নামই ঈমান।
কিন্তু কিউরিয়াস মন মাঝে মাঝেই জানতে চায়। এটা কেন হলো? ওটা কেন হলো? এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই প্রশ্ন করার অধিকার কী ইসলাম আমাকে দিচ্ছে? উত্তর হচ্ছে, আপনার পাড়ার মোল্লা হয়তো নাও দিতে পারেন, ইসলাম কিন্তু সেই অধিকার দিচ্ছে।
উদাহরণ দিচ্ছি।

আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সালুলের নাম কেউ কেউ হয়তো শুনেছেন। এই লোকটাকে বলা হতো মুনাফেক সর্দার। এক নম্বরের বিশ্বাসঘাতক। এই সেই শয়তান যে আরও অনেক অপকর্মের পাশাপাশি হজরত আয়েশার (রাঃ) নামে কুৎসা রটিয়েছিল। মানে নবীজির (সঃ) তার পারসনালপার্সোনাল শত্রুতা থাকার যথেষ্ট কারন ছিল।যেদিন সে মারা গেল, এবং সেটি ছিল ন্যাচারাল ডেথ, কোন কোপাকোপি নয়; নবীজি (সঃ) গেলেন তার জানাজায়। তিনি নিজে তার কবরে নেমে তাকে মাটিতে শুইয়ে দিলেন। নিজের গায়ের কাপড় দিয়ে তার কাফন জড়ালেন। যদি কোন বাহানায় আল্লাহ এই মুনাফেককে মাফ করেন!

ছোট নোট, নবীজির এই ক্ষমার বৈশিষ্ট্য মুক্তমনা কিংবা মৌলবাদী সন্ত্রাসীদের কারও নজরে পরবে না। এরা কাব বিন আশরাফ কাব বিন আশরাফ বলে লাফাতে থাকবে। বিরক্তিকর!  ছিদ্রান্বেষী না হয়ে যদি কেউ সত্যান্বেষী হতো, তাহলে অবশ্যই তাদের চোখে পড়তো।

তা যা বলছিলাম, নবীজির (সঃ) এহেন কর্মে অবাক হয়ে এক সাহাবী প্রশ্নই করে বসলেন, "হে আল্লাহর দূত! আল্লাহ কী আপনাকে নিষেধ করেননি এদের জন্য ক্ষমা চাইতে?"নবীজির কর্মকান্ডে প্রশ্ন করার সাহস কারোরই ছিল না। একজন বাদে। হজরত উমার(রাঃ)। যিনি ছিলেন "আল ফারুক" - সত্য মিথ্যার প্রভেদকারী। নবীজি (সঃ) তখন উত্তরে বললেন, "ইয়া উমার(রাঃ)। আল্লাহ আমাকে বলেছেন তুমি যদি সত্তুরবারও ওদের জন্য ক্ষমা চাও, তবুও আমি মাফ করবো না। তাই আমি একাত্তুরবার ক্ষমা চাইবো। যদি তিনি মাফ করেন!"
তাহলে এই ঘটনায় আমরা কী পাই? নবীজিকেও প্রশ্ন করা যায়। কেন এমন হচ্ছে? অমন কেন হচ্ছে না?
আরেকটা উদাহরণ লাগবে?

হুদায়বিয়ার সন্ধি। এখানেও প্রশ্নকর্তা সেই একই ব্যক্তি, উমার(রাঃ)।
"আপনি কী রাসূল নন? আমরা কী সৎপথে চালিত নই? ওরা কী জুলুমকারী নয়? তাহলে কেন সন্ধির এই অপমানজনক শর্তগুলো মেনে নিলেন? একে বিজয় বলছেন? কিভাবে?"
এক গাদা প্রশ্ন! বা সেই সাহাবিকেই বা আমরা কিভাবে ভুলে যাই যিনি নবীজিকে গিয়ে বলেছিলেন, "আমাকে ব্যাভিচারের অনুমতি দিন। আমি এবং মেয়েটি যদি পরস্পরের সম্মতিক্রমে ব্যভিচারে লিপ্ত হই, তাহলে কেন সেটি পাপ হবে?"কথা হচ্ছে, তিনি কী একবারও প্রশ্ন শুনে কাউকে কোপানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন?

এই গেল নবীজি। আপনারা কী জানেন আল্লাহকে পর্যন্ত প্রশ্ন করা যায়?
আদম সৃষ্টির ইচ্ছা প্রকাশ করলে ফেরেস্তাদের রিয়েকশন কী ছিল? "কেন আপনি ওদের সৃষ্টি করতে যাচ্ছেন? ওরাতো পৃথিবীতে গিয়ে ঝামেলা ছাড়া আর কিছুই করবেনা। আপনার ইবাদতের জন্য কী আমরাই যথেষ্ট নই?"
জ্বী, প্রশ্ন করার অধিকার ইসলামে আছে। তাই কেউ প্রশ্ন করলেই মারতে তেড়ে যাবেন না। নিজের সর্বোচ্চ বিদ্যা দিয়ে বুঝাবেন। না পারলে ক্ষমা চেয়ে নিবেন, এবং নিজেও সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা নিবেন। এতে আপনার নিজের জ্ঞান বাড়বে। কুপিয়ে দিলে জাহান্নামের খাতায় নিজের নামটা লেখানো ছাড়া আর কিছুই লাভ হবেনা।
এবং কে বলেছে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কখনও কিছু লেখা যাবেনা?

আপনি ইসলাম ধর্মে প্রচলিত নানান কুসংস্কারের বিরুদ্ধে কথা বলুন, সমস্যা কী? আমি নিজে কী বলছি না? পীর ব্যবসা, পীর পূজা, কবর পূজা, মাজার ব্যবসা, ঝারফুক থেকে শুরু করে ধর্মের নামে কুপিয়ে মানুষ হত্যা - সবকিছুর বিরুদ্ধেইতো লিখছি। ইসলামী রেফারেন্স দিয়ে দিয়েই লিখছি। কেউ আসুক প্রমান নিয়ে, ভুল ধরিয়ে দিক। আমি তাহলে নিজের কথা ফিরিয়ে নিব। সেটা মুক্তমনা হোক, বা কাঠমোল্লা।

আমাদের বাঙালিদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, আমরা আমাদের ভদ্রতার স্ট্যান্ডার্ড দিন দিন একদম পাতালে নামিয়ে আনছি। একটা সময়ে কেবল ভদ্রজনেরাই লেখালেখি করতেন। আফসোস! আজকে "ব্লগার" একটি গালি! আগে ধার্মিকদের দিকে মানুষ শ্রদ্ধার সাথে তাকাতো। আজকাল ধার্মিক মানেই মৌলবাদী, সন্ত্রাসী! 
Written by: মঞ্জুর চৌধুরী 

0 comments