Labels: , , ,

নাস্তিক বনাম আস্তিক

"আমি এখন ওসব ধর্মকর্ম মানিনা। আমি অনেক পড়াশোনা করেছি, এবং বুঝতে পেরেছি ওসব বোগাস।"
কথাটি যে ছেলে বলল, তাকে কিছুদিন আগেও রেগুলার মসজিদে পাওয়া যেত। সে সবকিছুই খুব সিরিয়াসলি করে। যখন মসজিদে যেত, তখন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতে পড়তো। এখন যখন নাস্তিক হয়েছে, তখন ধুমায়ে গালাগালি করবে এইটা নিশ্চিত।

অবশ্য সে একাই যে এমন বলে, এটা ঠিক না। ওর মতন ছেলেতে এখন দেশ ভরে গেছে।
"তাই? ভালইতো। তা, কী পড়াশোনা করেছিস? আমাকেও একটু জানা, তাহলে আমিও তোর মতন হয়ে যাই। কারণ আমি যত পড়াশোনা করেছি, ততই বেশি ধার্মিক হয়ে যাচ্ছি।"
"তুই আমার সাথে রসিকতা করছিস?"

"আমার গলার স্বর শুনে তাই মনে হচ্ছে? স্যরি দোস্ত। কিন্তু আমি আসলেই সিরিয়াস। আমিও জানতে চাই ঘটনা কী?"
বন্ধু আমার নিজের কন্ঠস্বর পাল্টে বলল, "আসলে মোহাম্মদের (সঃ)(যদিও সে দুরুদ পাঠ করেনি, কিন্তু আমি যেহেতু লিখছি, তাই দুরুদ পাঠ করলাম) উপর থেকে রেসপেক্ট চলে যাওয়ায় এখন আর ধর্ম মানতে ইচ্ছা করেনা।"
চোখ বড় বড় করে অবাক গলায় বললাম, "বলিস কী? পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষকে যদি তুই রেসপেক্ট না করিস, তাহলে কাকে করবি?"

"এটা একটা টিপিক্যাল পায়াস স্টেটমেন্ট। তুই নিজে আমাকে বুঝা, উনাকে রেসপেক্ট করার কোন যুক্তি আছে?"
"একটা লোক একটা চূড়ান্ত বর্বর জাতিকে মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে লাইনে নিয়ে আসলেন, তুই বলছিস তাঁকে রেসপেক্ট করার কিছু নেই?"

"বর্বর কাদের বলছিস? ইসলাম নিজে বর্বর নয়? ইসলামে বলা হয়নি মেয়েরা ছেলেদের খেলার পুতুল? স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর বেহেস্ত? মেয়েদের মারধর কর? অমুসলিমদের মাথা কেটে ফেল? কী হলো? কোথায় যাচ্ছিস? জবাব দিয়ে যা।"

আমি গিয়ে শেল্ফ থেকে কুরআন শরীফ এনে তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললাম, "এই যে তোকে কুরআন দিয়ে দিলাম। আরবি থেকে ইংলিশ বাংলা দুই ধরনেরই ট্রান্সলেশন আছে। তুই আমাকে এইসব আয়াত খুঁজে বের করে দেখা। আমি আজকেই নাস্তিক হয়ে যাব।"
"তুই বলতে চাচ্ছিস এসব ইসলামে নেই?"
"ইসলাম মানে কুরআন শরীফ। ইসলাম মানে নবীজির(সঃ) সহীহ হাদিস। এই দুইয়ের বাইরে অন্য কোন কিছুই ইসলাম নয়। বটম লাইন।"

"দাঁড়া আমি তোকে এসব বের করে দেখাবো।"
"আমি স্বানন্দে অপেক্ষায় থাকব। সুরাহ বাকারার ২৫৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ স্পষ্ট করে নির্দেশ দিয়েছেন ইসলাম গ্রহণে কারও উপর কোনরকম জবরদস্তি করা যাবে না। বিশ্বাস না হলে খুলে দেখ। একটা জিনিস মনে রাখিস, পাড়ার মোল্লা মৌলবিরা কোন একটা ফতোয়া জারি করে দিলেই সেটা ইসলাম নয়। ইসলাম শুধুমাত্র আল্লাহর বাণী এবং নবীজির হাদিসের উপর দাঁড়িয়ে আছে। এর বাইরে সব বেদাত।"
"হাদিস মানে কী? ঐ আমলে নবী, সাহাবী এবং স্কলাররা মিলে কিছু নিয়ম করে গেছেন, সেটাইতো?"
আমি চূড়ান্ত হতাস হয়ে বললাম, "ভাইরে....আগে ভাল মতন জেনে আয় হাদিস মানে কী, তারপর তর্ক করতে আসিস।"
"না, সিরিয়াসলি, হাদিস মানে কী?"

"হাদিস হচ্ছে শুধুমাত্র নবীজির (সঃ) বাণী। উনি যা বলে গেছেন, সেটাই। অন্য যে কেউ, এমন কী হযরত আবু বকরও (রাঃ) যা বলে গেছেন, সেটা হাদিস হতে পারেনা।"
"ঐ একই কথা হলো।"
"না, এক না। নবীজির(সঃ) নিজের বাণী, এবং অন্য যে কারও বাণীতে আকাশ পাতাল ব্যবধান আছে। সেটা যেকোন ব্যপারেই হোক।"
বন্ধু ইন্টারনেট ঘেটে একটা আয়াত বের করলো। সূরা নিসার চৌত্রিশতম আয়াত। অতি বিখ্যাত আয়াত। এখানেই আল্লাহ বলেছেন, বউ পেটাতে।

"এই যে, এই দ্যাখ। এখানে স্পষ্ট বলা আছে, forsake them in bed; and [finally], strike them."
এরপর সে বিজয়ীর হাসি হেসে বলল, "এখন তুই কী বলবি?"
আমিও হাসছি দেখে সে বলল, "কিরে? মুখ বন্ধ হয়ে গেলতো? কোন জবাব নেইতো?"
"হাসছি তোর বোকামি দেখে। এই হচ্ছে তোর পড়াশোনার দৌড়? হাহাহা।"
"ফাজলামি বাদ দিয়ে বল তোর কোন জবাব আছে এর এগেইনস্টে?"
"তুই পুরো আয়াতটা পড়, তাহলেই তুই তোর জবাব পেয়ে যাবি। আমাকে ব্যাখ্যা করতে হবেনা।"
"যাই বলা হয়ে থাকুক না কেন, একটা মেয়েকে পেটানো কোনভাবেই জাস্টিফায়েড না।"

"পুরো আয়াতে বলা হয়েছে, ধার্মিক মেয়েরা অবশ্যই স্বামীর প্রতি সৎ থাকবে। এবং যদি তাঁরা স্বামীর সাথে চিটিং করে, তাহলে স্বামীরা যেন প্রথমে তাঁদের চিট করতে নিষেধ করেন। তারপরও যদি তাঁরা না শোনেন, তাহলে তাঁদের শয্যাত্যাগ করেন, মানে তাঁদের সঙ্গত্যাগ করেন আর কি। এবং তারপরেও যদি তাঁরা না মানেন, তাহলেই কেবল তাঁদের আঘাত করা যাবে। এবং এখানেই হাদিস এসেছে যে সেই আঘাতটাও ব্রুটাল হতে পারবেনা। এমন হতে হবে যেন মেসওয়াক (টুথব্রাশ) দিয়ে আঘাত করলে যেমনটা হয়। তুইতো পড়াশোনা করেছিসই, নিশ্চই জানিস ইসলামে কঠোরভাবে নিষেধ আছে স্ত্রীর মুখে আঘাত করার ব্যপারে। তাঁর উপর চূড়ান্ত অসন্তুষ্ট হলে তাকে তালাক দিতে বলা হয়েছে, কিন্তু মুখে আঘাত করে তাঁর চেহারা বিগড়াতে বলা হয়নি। সে যেন আরেকটা বিয়ে করতে পারে, এই পথ যেন খোলা থাকে।"

"তুই কী করে শিওর হচ্ছিস যে টুথব্রাশ দিয়ে আঘাত করার কথা বলা হয়েছে? ওসব মনগড়া কথাওতো হতে পারে। ভাল যুক্তি আছে? এভিডেন্স আছে?"
হেসে বললাম, “তায়াম্মুম কাকে বলে জানিস?"
বন্ধু রেগে গেল।
"এখানে তায়াম্মুম আসছে কোত্থেকে? শুধু শুধু তাকে টেনে আনছিস কেন?"
"দরকার আছে বলেই টানছি। তুই জানিস তায়াম্মুম কাকে বলে?"
"অবশ্যই জানি।"
"আমাকে বল।"
"মানে? তুই আমাকে বিশ্বাস করিস না?"
"আগে করতাম। কিন্তু আজকে তোর কথাবার্তা শুনে ঠিক ভরসা পাচ্ছি না। বল দেখি, তায়াম্মুম কাকে বলে?"
বন্ধু গজগজ করতে করতে বলল, "যখন হাতের নাগালে পানি থাকেনা, তখন অজু করার জন্য পরিষ্কার মাটির ব্যবহার করার পদ্ধতিকে তায়াম্মুম বলে। হয়েছে?"
"যাক, এই প্রশ্নের উত্তর তুই পেরেছিস।"
"বলেছি না আমি যথেষ্ট পড়াশোনা করেছি?"
"অল্পবিদ্যা ভয়ংকরী বন্ধু। অশিক্ষিত মানুষই মনে করে সে যথেষ্ট পড়াশোনা করে ফেলেছে। জ্ঞানী মাত্রই বুঝতে পারে যে জ্ঞানের কোন শেষ নেই।"

"তুই আমাকে অপমান করা বন্ধ করে বল তায়াম্মুমকে কেন টেনে এনেছিস!"
"মাটিতে হাত লাগিয়ে তায়াম্মুম করতে হয়। এই 'মাটিতে হাত লাগানোর' বর্ণনায় কী Verb ব্যবহার করা হয়েছে জানিস? 'দারাবা।' সুরাহ নিসার ঐ আয়াতেও ঐ একই verb, ‘ওয়াদরিবুহুন্না।’ যার আক্ষরিক অনুবাদ করলে হবে 'তাদের প্রহার কর' বা তুই যে ইংলিশে বললি 'strike them.' এর কোনটাই কিন্তু ঠিকমতন ফিট করেনা। কারণ এটা যদি ফিট করে তাহলে বলতে হবে তায়াম্মুমের সময়ে নির্দেশ দেয়া হয়েছে মাটিকে পেটাতে। এই লজিকেই বলা হয়েছে সুরাহ নিসার চৌত্রিশ নম্বর আয়াতে বউ পিটানোর কোন নির্দেশ দেয়া হয়নি, বরং এত বড় অপরাধের পরেও বলা হয়েছে কেবল তার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে! সহজ লজিক হচ্ছে একেক ভাষায় একেকভাবে ভাব প্রকাশ করা হয়ে থাকে। অনুবাদ করে একটা আইডিয়া পাওয়া যায় মাত্র, কিন্তু শতভাগ বুঝে ফেলার দাবী করাটা হাস্যকর। এবং তার উপর কনটেকস্ট না বুঝে সরাসরি উপসংহার টানাটা নির্বুদ্ধিতা।"

"তুই এত কিছু জানিস কেমনে?"
"সেই আদিযুগ থেকেই তোর গুরুরা এবং নির্বোধ কিছু মৌলবাদীরা এই আয়াতের ভুল ব্যবহার করে ফায়দা লুটার চেষ্টা করে। তাই এ সম্পর্কে বিস্তর আলোচনা নেট ঘটলেই পাবি। আর তাছাড়া সাজিদকে চিনিস না? ঐ যে সৈয়দ রাজাউল আকমাল সাজিদ, sad but true পেজের অ্যাডমিন, আমার স্কুল জীবনের বন্ধু, সেই আমাকে আরবি verb-এর ব্যবহার সম্পর্কে বলেছে। ওকেতো চিনিসই, এসব বিষয়ে তাঁর অনেক আগ্রহ আছে। এখন তোর কাছে আমার আরেকটা প্রশ্ন আছে।"
"করে ফেল।"

কয়েক বছর আগে একটা নাটকে লম্পট চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। এবারে ঠিক সেভাবে গলার স্বর ও দৃষ্টি বদলে জিজ্ঞেস করলাম, "বন্ধু। তোমার বউ যদি আমার সাথে বিছানায় শোয়, তখন তুমি কী করবে?"
"আমি তোদের দুইজনকেই খুন করে ফেলবো।"
"কেন বন্ধু? তুমি না এই মাত্রই বললে টুথব্রাশ দিয়ে আঘাত করাও জাস্টিফায়েড না, সেখানে তুমি খুন করার কথা ভাবছো! ও মাই গড! তুমি এতো বর্বর!"
বন্ধু সাথে সাথে থতমত খেয়ে গেল।

"অন্যের বৌকে নিয়ে ফ্যান্টাসি করা খুব সহজ। নিজের বৌকে, মাকে, বোনকে সেই জায়গায় বসালেই আমাদের বিচার বদলে যায়। কুরআন সবার জন্যই সমান। এটাই ইসলাম। আল্লাহ ভাল করেই জানেন কোন স্বামী যদি জানতে পারেন তাঁর স্ত্রী তাঁর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছে, তবে তিনি কী রিয়েক্ট করতে পারেন। এই যুগেও স্বামীরা স্ত্রীদের মেরে ফেলতে চাইবেন, জাহেলি যুগের স্বামীরাতো আরও এগ্রেসিভ ছিলেন। তাই আল্লাহ বলে দিয়েছেন প্রথমে তাঁদের বুঝাতে, তারপর সেপারেট হতে। কিছুতেই কিছু লাভ না হলে তবেই ‘মৃদু’ আঘাত করা যাবে, তবু 'খুন' করা যাবেনা। কিছুতেই না। আয়াতের শেষে কিন্তু বলা আছে "যদি তাঁরা ভুল স্বীকার করে তোমার কাছে ফিরে আসে, তবে তাঁদের বিরুদ্ধে কোন রাগ পুষে না রাখতে।" তুইই বল, তুই পারবি চিটিং ওয়াইফকে ক্ষমা করে দিতে? কতটুকু বিরাট মনের অধিকারী হলে একে ক্ষমা করা সম্ভব? আল্লাহ কিন্তু সেই নির্দেশই তোকে দিচ্ছেন। তুই বলছিস ইসলাম বর্বর? তোদের চোখে আয়াতের এই অংশটা পড়ে না?"

"ইয়ে তোদের নবী যে ছয় বছরের মেয়েকে বিয়ে করে ফেললেন, সেটাকে কিভাবে জাস্টিফাই করবি?"
"হাহাহা।"
"হাসছিস কেন? হাসির কী বললাম? তুই বলতে চাস উনি তা করেন নাই?"
"অবশ্যই করেছেন। উনি যখন হজরত আয়েশাকে(রাঃ) বিয়ে করেন তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ছয় বছর। এবং সংসার শুরু করেন তারও তিনবছর পর, মানে তাঁর বয়স যখন নয় বছর।"
"এইখানে তোর কোন মন্তব্য আছে? এখনও হাসছিস?"
"আমি জানতাম, ঠিক এই প্রশ্নটাই তোর মনে আসবে। হাহাহা। এর উত্তর অনেক স্কলার অনেক সুন্দরভাবে দিয়েছেন। সেটা তোর চোখে নিশ্চই পড়েনি?"
"তুইই বল দেখি, তোর কী যুক্তি?"
"তোর মাকে যখন তোর আব্বা বিয়ে করেন, আন্টির বয়স কত ছিল?"
"জানিনা।"

"আমার নিজের মায়ের বিয়ের সময়ে বয়স ছিল আঠারো। আমার নানী যখন বিয়ে করেন তাঁর বয়স তখন তের। তাঁর মা যখন বিয়ে করেন, তাঁর বয়স এগারো। আমি একশো বছর আগের কথা বলছি না। আশি নব্বই বছর আগের কথা বলছি। বাংলাদেশের কথা বলছি, যখন দেশের ক্ষমতায় তখন ব্রিটিশ রাজপরিবার। তুই কী জানিস যে খোদ অ্যামেরিকাতেও বর্তমানে মেয়েদের বিয়ের বয়স কোন কোন স্টেটে তের, চৌদ্দ বছর? বিশ্বাস না হলে ইন্টারনেট ঘাট, নিউ হ্যাম্পশায়ারে মেয়েদের লিগাল ম্যারিটাল এজ হচ্ছে তের, নিউ ইউর্কে চৌদ্দ এবং মিসৌরিতে পনের। নবীজির(সঃ) ঘটনা আজ থেকে চৌদ্দশো বছর আগে, আরব মরুভূমিতে। তখনকার যুগে এটাই সাধারণ ব্যপার ছিল। নবীজির(সঃ) শত্রুর কোন অভাব ছিল না। কিন্তু তারা পর্যন্ত এই নিয়ে কোন প্রশ্ন তুলেনি। মানে তাদের চোখেও এটা কোন 'অপরাধ' ছিল না।

আজকের যুগের মেয়েরা রবীন্দ্রনাথের হৈমন্তী পড়েই চোখ কপালে তুলে বলে 'এতো বাচ্চা মেয়ে!' কিন্তু তখনকার যুগে এটাই নিয়ম ছিল। আমাদের দেশে এখনও মেয়েদের ক্ষেত্রে 'কুড়িতেই বুড়ি' কথাটা চালু আছে। কাজেই বাংলাদেশে থেকে, অ্যামেরিকায় থেকে, চৌদ্দশো বছর আগের মরুভূমির কালচার সম্পর্কে মন্তব্য করা খুবই অযৌক্তিক। এটা সেই যুগের ঘটনা যখন বাবারা মেয়েদের জীবিত কবর দিত। সেটাই প্রথা ছিল। ইসলাম এসে সেটা বন্ধ করেছে। দুই যুগকে এক করা আহাম্মকি। Sorry if I sound harsh, but যারা এই যুক্তি দেয়, তারা আহাম্মক! আর তাছাড়া ইসলামই একমাত্র ধর্ম যা বাল্যবিবাহ নিষেধ করে। বিশ্বাস না হলে সুরাহ নূরের ৫৯তম আয়াত পড়। সুরাহ নিসার ৬নং আয়াতেও একইভাবে বিয়ের বয়স নিয়ে বলা হয়েছে। এবং সেটা হচ্ছে শরীরে পিউবার্টি এলেই তুমি যোগ্য। আরবরা সেটাই ফলো করতো। নবীজির (সঃ) সাথে বিয়ে হওয়ায় হযরত আয়েশার (রাঃ) কোন কমপ্লেইন ছিল বলেওতো মনে পড়ে না। তিনি যথেষ্টই সুখী বধূ ছিলেন। তাঁর থ্রুতেই আমরা সবচেয়ে বেশি হাদিস পেয়েছি। যদি দুইজন মানুষ নিজেদের মধ্যে ঠিক করেন কে কাকে বিয়ে করবেন, এবং তাঁরা বিয়ে করে সুখীও থাকেন, সেখানে জোকারের মত আজাইরা নাক গলানো কী ঠিক?"
"ইয়ে, মানে আমার মনে আরও অনেক ডাউট আছে।"

"ডাউট থাকতেই পারে, সময়ের সাথে সাথে ডাউট আসাটাই স্বাভাবিক। আজকে যা নরমাল লাগছে, একশো বছর পর দেখবি সেটা নিয়েই ডাউট আসবে। কিন্তু ডাউট আসলে সেই ডাউটের উপরেই আগে ডাউট করা উচিৎ যে, কেন এমন ডাউট আসলো। মানে কেন আমার মনেই নবীজির (সঃ) বিয়ে নিয়ে ডাউট এলো, কেন একশো বছর আগে কারও মনে এলো না? এবং সেই ডাউট দূর করতে আমাকে ফিরে যেতে হবে চৌদ্দশো বছর আগে, সেই আরব মরু সভ্যতায়, তারপর সেখান থেকে উত্তর খুঁজে বর্তমানে ফিরে আসতে হবে।"
হঠাৎ বন্ধুর চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো, "ও হ্যা, মনে পড়েছে! কুরআনে বলা হয়েছে চারটা বিয়ে করতে। এই নিয়ে কী বলবি? অ্যা?"

একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললাম, "বন্ধু, আমি তোমাকে ছোটবেলা থেকেই চিনি। তুমি স্যারের সাজেশন পেয়ে পাশ করা ছাত্র ছিলে। মাঝে মাঝে পরীক্ষায় নকলও করতে। এখন দেখছি, সেই অভ্যাস তোমার এখনও রয়ে গেছে। কোন কিছুই ডিটেইলে পড়তে পারোনা।"
বন্ধু চোখ পাকিয়ে বলল, "কী বলতে চাস?"

"কুরআনে বলা হয়েছে 'যদি তুমি ন্যায় করতে পারো, তবেই কেবল দুই, তিন, অথবা চার বিয়ে করো। কিন্তু যদি তুমি ন্যায় করতে না পারো, তবে কেবল একটি বিয়ে কর।' সুরাহ নিসা, আয়াত তিন। ইসলামই একমাত্র ধর্ম যেখানে এক বিয়ের কথা বলা হয়েছে। অন্য কোন ধর্মে সেটা নেই।"

"কে বলেছে? হিন্দুরা একটাই বিয়ে করে।"
"তাই? শ্রী কৃষ্ণের কয় বউ ছিল জানিস? শ্রী কৃষ্ণ কী মুসলমান ছিলেন?"
বন্ধু আমতা আমতা করতে থাকে।
"আমি এই জন্যই কোন ধর্ম মানি না।"

"বন্ধু, আবারও বলছি, তখনকার আরব সভ্যতায় ফিরে চল। তখন পুরুষেরা ব্যবসার কাজে শহর থেকে শহরে ঘুরতো, কাজেই দেখা যেত, হয়তো রোগাক্রান্ত হয়ে মারা গেছে অথবা দস্যুর হাতে নিহত হয়েছে। এছাড়া যুদ্ধে মৃত্যু ছিল তাঁদের বেশিরভাগেরই ভাগ্য। শিকারে গিয়েও অনেকে নিহত হতেন। তাহলে দেখা যাচ্ছে পুরুষ থেকে মেয়েদের সংখ্যা স্বাভাবিকভাবেই অনেক বেশি ছিল। এত বিপুল সংখ্যক মেয়ে মানুষের দেখভাল করার জন্যই ছেলেদের চার বিয়ে পর্যন্ত করার অনুমতি দেয়া হয়েছিল।"
"মেয়েদের এমনিতেই সাহায্য করা যায়। বিয়ে করতে হবে কেন?"

"অবশ্যই মেয়েদের সাহায্য করা যায়। ইসলামই বলে যারা বিধবা নারীদের, এতিম শিশুদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন, তাঁদের স্থান জান্নাত। কিন্তু ভাই, কাকে বোকা বানাচ্ছিস? তুই নিজেও পুরুষ। সুন্দরী মেয়ে দেখলে তোরও নিয়্যত বিগড়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক। তোর কী ধারণা, একজন মহিলাকে কয়টা পুরুষ দিনের পর দিন নিঃস্বার্থভাবে সাহায্য করে যেতে পারবে? কিছু একটা বিনিময় সে চাইবেই। বাংলাদেশে যুবতী বিধবা বা ডিভোর্সীদের বাড়ির দরজায় প্রায়ই নানান বাহানায় প্রতিবেশী পুরুষেরা এসে কড়া নাড়ে। এটা আমিও যেমন জানি, তুইও জানিস। সে যুগে মেয়েদের অবশ্যই পুরুষদের উপর নির্ভর করতে হতো। তাঁদের বাইরে কাজ করার কোন সুযোগ ছিল না। যে সমাজে বিধবাদের আরেকবার বিয়ের সুযোগ দেয়া হতো না, সেই সমাজে প্রস্টিটিউজম একটা কমন ফ্যাক্ট ছিল। এখন তুইই বল, বেশ্যা হবার চেয়ে কী কারও ঘরের গৃহিনী হওয়া ভাল ছিল না? এবং ভুলে যাস না, স্বামীর উপর আল্লাহর হুকুম আছে, 'ন্যায়' করতে না পারলে দ্বিতীয় বিয়ে না করতে। এমন না যে কোন একজন বউকে আরেকজনের উপর প্রাধান্য দিতে পারবে। তাহলে তার জন্য এক বিয়েরই হুকুম আছে।”

“I am not convinced.”

"তোকে এই নিয়ে মাথা ঘামাতে কে বলেছে? তুই একটাই বিয়ে কর না। সমস্যা কী?"
সে কোন কথা বলল না।

বললাম, "আবারও বলছি বন্ধু, শর্টকাটে দুই চারটা আর্টিকেল এবং বই পড়েই নিজেকে বিরাট পন্ডিত ভেবে বসিস না। চিন্তা করতে থাক। আরও গভীরে গিয়ে পড়াশোনা করতে থাক। মনে প্রশ্ন আসলে সেই প্রশ্নকেই প্রশ্ন কর। তারপরে দেখবি অনেক কিছুর উত্তর তুই আপনাতেই পেয়ে যাবি।"

https://www.facebook.com/groups/canvasbd/

1 comment: