শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু

যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তা' আলার যিনি সকল সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা।

মুহাম্মদ (সাঃ)-আল্লাহর রাসূল

মুহাম্মদ (সাঃ)-সকল মানুষের জন্য উদাহরন, সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ, ও আল্লাহর রাসুল

আল কোরআন - মহান আল্লাহ প্রদত্ত কিতাব

এ সেই কিতাব যাতে কোনই সন্দেহ নেই। পথ প্রদর্শনকারী পরহেযগারদের জন্য,

আমাদেরকে সরল পথ দেখাও

আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।

আল্লাহ নিতান্ত মেহেরবান ও দয়ালু

সে সমস্ত লোকের পথ, যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ। তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।

Showing posts with label কাজি নজরুল ইসলাম. Show all posts
Showing posts with label কাজি নজরুল ইসলাম. Show all posts
Labels:

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম- হিন্দু মুসলমানের কাছে অপমানিত হয়ে তিনি যা করতেন-

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি আইনসভার প্রার্থী হয়েছেন। ভোট চাইছেন মানুষের কাছে। গিয়ে হাজির হলেন এক মৌলভীর বাড়িতে। কবিকে দেখে আঁতকে উঠলেন মৌলভী।
এ কি! আপনি তো কাফের! কাফেরকে তো ভোট দেয়া যায় না! মৌলভীর কথায় সায় দিচ্ছেন তার সাথীরা।

কবি এমন ভয়ানক কথা শুনেও শান্ত। তিনি স্থির গলায় বললেন, মৌলভী সাহেব! কাফির বলেছেন তাতে দুঃখ নেই। এর চেয়েও কঠিন কথা আমি শুনেছি। শুনতে হয়েছে অনেক জঘন্য কথাবার্তাও। তবে আপনার বাড়িতে যখন এসেছি, আপনাকে একটি কবিতা না শুনিয়ে চলে যাই কিভাবে?

কবি নজরুল তার আবৃত্তির ডালা খুলে বসলেন। তিনি শোনাচ্ছেন তার বিখ্যাত কবিতা ‘মহররম'। কবির ভরাট গলায় সে কি উচ্চারণ! এক অপার্থিব আবেগ ও হৃদয়ছোঁয়া বেদনার পরিবেশ তৈরী হলো সবার মনে। মৌলভী তমিজুদ্দীন এবং তার সাথীদের মাথা নত হয়ে এল। তার অবনত চোখে তাকিয়ে থাকলো কবির দিকে। এই কি নজরুল! কি অপূর্ব তার কবিতা। কত গভীরে এর বেদনা! আহা! এমন করে তো আর কেউ কবিতা শোনাতে পারে না। মৌলভী সাহেব এবং তার সাথীরা অভিভূত। তাদের বিস্ময়ের নীচে চাপা পড়ে গেল সব অভিমান ও সন্দেহ। তার অনুতপ্ত। কবিকে তারা বরণ করলেন পরম আদর যতেœ।


জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। বন্ধুদের জন্য পাগলপ্রাণ। এক হিন্দু বন্ধুর আমন্ত্রণে তার বিয়ের আসরে গিয়ে হাজির হলেন কবি। আহারের আয়োজন। কবিও খেতে বসলেন। কন্যাপক্ষের বাড়িতে অনেক বড় আয়োজন।
বরযাত্রীদের সবাই অপেক্ষায়। কিন্তু খাবার আসছে না। খবর এসেছে, বরপক্ষের সাথে একজন মুসলমান এসেছেন কেন? অন্দরমহলের মেয়েরা খাবার পরিবেশনে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। মুসলমানকে বিদায় করতে হবে। হোক তিনি কবি নজরুল। তাতে কি?

নজরুলকে সাথে নিয়ে যাওয়া বন্ধুরা লজ্জায় লাল হয়ে গেলেন। তারা তো কোনদিন নজরুলের ধর্ম দেখে বন্ধু হননি। অভিমানী নজরুল বেশ কষ্ট পেলেন মনে। হিন্দুদের এমন সংকীর্ণ আচরণ আর জাতের কদর্য রূপ দেখে ব্যথিত হলেন তিনি। মনের ক্ষোভ নিয়ে লিখে ফেললেন কবিতা, তারপর সেটি সবাইকে শুনিয়ে দিলেন। কবিতার সূচনা অংশ- জাতের নামে বজ্জাতি সব জাত জালিয়াৎ খেলছে জুয়া/ ছুঁলেই তোর জাত যাবে? জাত ছেলের হাতের নয়তো মোয়া।’

মুসলমান কবি নজরুলের মুখে এমন অগ্নিজ্বালা প্রতিবাদ শুনে সবার মাথা নীচু হয়ে এল। অভিমানী নজরুল তার কবিতা শুনিয়ে চলে এলেন সেই বিয়েবাড়ী থেকে। মলিনমুখে তিনি পা বাড়ালেন বাসার উদ্দেশে।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে দাওয়াত করে নোয়াখালী এনেছেন একজন হেডমাস্টার। নজরুলের সভায় মানুষ আসছে দলে দলে। চলে এসেছেন মৌলভী সাহেবরাও। যতদূর চোখ যায়, শুধু সাদা টুপির সারি। মানুষে ভরে গেছে সভাস্থলের চারপাশ।

এ বিরাট জনসমুদ্রে দল বেঁধে দাঁড়িয়ে গেলেন কয়েকজন মৌলভি। তাদের সম্মিলিত কন্ঠের এক দাবি, এ সভায় নজরুলকে গান করতে দেওয়া হবে না। কোনভাবেই এ সম্ভব না।’ আশেপাশের অনেক মানুষও তাদেরকে সমর্থন জানাচ্ছেন। কয়েকজন প্রভাবশালী লোক মৌলভী সাহেবদেরকে অনুরোধ করলেন, নজরুলকে কয়েকটি গান গাইতে দেয়ার জন্য। তারা কিছুতেই রাজি হচ্ছেন না। এলাকাবাসীর উপর মৌলভী সাহেবদের প্রভাব অনেক বেশি। তারাও মৌলভীদের পক্ষে। হেডমাস্টার সাহেব এমন পরিস্থিতিতে কেঁদে ফেললেন সবার সামনে। নিজের এলাকায় নজরুলকে নিয়ে এ অপমান তিনি মেনে নিতে পারছেন না।

কবি নজরুল ইসলাম বসে আছেন মঞ্চে। এবার তিনি উঠে দাঁড়ালেন। সুগঠিত দেহে বলিষ্ঠ চেহারা, চোখে মুখে তার ঝিলিক। তিনি সবাইকে থামালেন। নিরব হয়ে এল চারপাশ। তিনি তার ভরাট কন্ঠে সবাইকে বললেন, আমার অনুরোধ- একটি মাত্র গান গাইবো আমি। যদি তা ভালো না লাগে, যদি আমার গান আপনাদের মত ও পথের বিপরীত হয়, তবে নিজেকে তুলে দিবো আপনাদের হাতে, যা খুশি আপনারা করবেন তখন। ’
নজরুলের এমন কথায় থেমে গেল সবাই। মৌলভী সাহেবরা রাজি হলেন। একটা গান শোনা যেতে পারে। এর বেশি নয়। তারপর সভা শেষ করে ফেলতে হবে।

কবি তার পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে গান ধরলেন। মনের সবটুকু আবেগ ও তেজ ঢেলে দিলেন তার কন্ঠে। তিনি গাইলেন, বাজিছে দামামা বাঁধরে আমামা/শির উঁচু করি মুসলমান....’। উপস্থিত শ্রোতাদের ধ্বনিতে কেঁপে উঠলো সভার আশপাশ। কবির গানের তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়লো আকাশে বাতাসে, ঢেউ উঠলো জনসমুদ্রে। গানটির শব্দ ও কথার যাদুতে বিমুগ্ধ মৌলভী সাহেবরাও উঠে দাঁড়িয়ে গেলেন। তাদের গলা থেকে ভেসে আসছে- মারহাবা! মারহাবা!! আরে, এতো গান নয়। গজল। গজল। এ গজলের সুর মানুষের রক্তে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে, এ গজল নাজায়েজ হয় কিভাবে? আমরা যে আরও শুনতে চাই। কবি সাব! আরও একখানা গাইতে হবে।
কবি নজরুল তো এরই অপেক্ষায় ছিলেন। জনতার চেহারা এবং আপত্তিকারীদের মনমর্জি তিনি বেশ ভালোভাবেই জানেন। তিনি বললেন, আর না। আমি ক্লান্ত। বিশ্রাম নিতে হবে।

বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো ভেসে আসছে আওয়াজ। অধৈর্য মৌলভী সাহেবদেরও নাছোড় দাবী- আর অন্তত একটি হলেও শোনাতে হবে। মরুভূমির পিপাসা তাদের বুকজুড়ে। মানুষের এ আবেগ আর মৌলভীদের এমন বিগলিত দাবীর কাছে হার মানলেন নজরুল।
তিনি বললেন, তবে তাই হবে। তারপর শুরু হল তার গান। সুরের তরঙ্গদোলায় ভাসছে শ্রোতারা। মাথা নেড়ে নেড়ে দুলছেন মৌলভী সাহেবরা। কবির শব্দঝংকারে উন্মাতাল হয়ে উঠলো পরিবেশ। নোয়াখালীর মানুষদের ভাবসাগরে জোয়ারের পর জোয়ার উঠেছে। গলা ছেড়ে কবি গাইছেন তার সব আবেগমাখা গান-গজল। একাধারে পাঁচ ঘন্টা কবি নজরুল গেয়ে শোনালেন তার অমর গানগুলো। হৃদয়ছোঁয়া তার সেইসব ছন্দ মোহিত করে ফেলেছে সবাইকে। ক্লান্ত পরিশ্রান্ত কবি যখন চলে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালেন, বিমুগ্ধ শ্রোতারা সবাই মিলে দাঁড়িয়ে গেলেন কবির সম্মানে। কবি হেঁটে চললেন তার জন্য নির্ধারিত বিশ্রামখানায়। অনেক হয়েছে। আজ আর নয়।

Written by-মানব ও মানবতা

0 comments
Labels: ,

প্রিয় কবির জন্মদিন সাথে কিছু পরিসংখান আগ্রহীদের জন্য


দরিদ্র অবহেলিত কবি, আমাদের উপরে কোন ক্ষোভ রেখো না, দিতে পারিনি তোমার প্রপ্প সম্মান করেছি কতো আপমান, ক্ষমা করো মোদের, তুমি তো বিদ্রোহী এই দুর্বলদের ঘুম ভাংগাতে চেয়েছো কিন্তু আমরাতো এমনই জাতি যে জেগে ঘুমায় তাকে উঠাবে কি করে ? যে চেস্টা তুমি করে গিয়েছো আমরাও করবো সে চেস্টা ঘুম আমাদের ভাংতেই হবে জেগে ওঠতেই হবে আমাদের --

কিছু উল্লেখযোগ্য পরিসংখ্যান

১। নজরুল বাংলা ভাষায় সর্বাধিক “হামদ-নাত” এর রচয়িতা।
২। গ্রামোফোন কোম্পানী থেকে নজরুলের হামদ-নাত যখন বের হোতো, তখন মাঝে মাঝে রেকর্ডের ওপর “পীর-কবি নজরুল” লেখা থাকত।
৩। বাংলা ভাষায় যারা হামদ-নাত রচনা করে গেছেন, তাদের মধ্যে একই সাথে হিন্দু এবং ইসলাম ধর্ম উভয় বিষয়ে পারদর্শী কেউ ছিলনা, একমাত্র ব্যতিক্রম নজরুল।
৪। একাধিক আরবী-ছন্দ নিয়ে নজরুলের অসংখ্য কবিতা আছে, বাংলা ভাষার আরও এক প্রতিভাবান কবি ফররুখ আহমদ এ বিষয়ে কারিশমা দেখাতে পারেনি।
৫। ইরানের কবি হাফিজ আর ওমর খৈয়ামের যতজন ‘কবি’ অনুবাদক আছেন তার মধ্যে নজরুল একমাত্র মূল ফারসী থেকে অনুবাদ করেছেন, বাকী সবাই ইংরেজীর থেকে।
৬। “ফারসী” এবং “আরবী”তে নজরুল এর জ্ঞান ছিল পাণ্ডিত্যের পর্যায়ে।
৭। গ্রামোফোন কম্পানি থেকে “ইসলামি গান” নজরুলের পূর্বে আর কেউ গায়নি।

নজরুল জীবনের শেষ অধ্যায়

নজরুলের জীবনের একমাত্র সাক্ষাৎকার যেটা উনি ১৯৪০ সনে দিয়েছিলেন, চিরদিনের জন্য অসুস্হ হয়ে যাবার কিছুদিন আগে- সেখানে উনি বলেছিলেন, :

"মুসলমানরা যে একদিন দুনিয়াজোড়া বাদশাহি করতে সমর্থ হয়েছিল সে তাদের ইমানের বলে। আজ আমরা ইমান হারিয়ে ফেলেছি। ইমানের প্রকৃত অর্থ ‘পরিপূর্ণরূপে আত্মসমর্পন’। ভারতে রাজা-বাদশাদের দ্বারা ইসলাম জারি হয় নাই। আর মানুষের মঙ্গলের বিধান করেছেন আউলিয়া ‘পীর’ বোজর্গান। সারা ভারতে হাজার আউলিয়ার মাজার কেন্দ্র করে আজো সেই শান্তির কথা আমরা শুনতে পাই। আমি মওলানা আকরম খাঁ ও মৌলবি ফজলুর হক সাহেবকে বলেছিলাম যে, আসুন, আপনারা সমস্ত ত্যাগ করে হজরত ওমর (রাঃ) ও আবুবকরের (রাঃ) আদর্শ সামনে রেখে সমাজে লাগি, আমি আমার সব কিছু ছেড়ে কওমের খেদমতে লাগতে রাজি আছি।” --অতীত দিনের স্মৃতি, সম্পাদনা - আব্দুল মান্নান সৈয়দ পৃষ্ঠা ১৯২,১৯৩

কাজী নজরুল ইসলাম:
জন্ম: ২৪শে মে ১৮৯৯ চুরুলিয়া গ্রামে আসানসোন বরদান জেলায়, তৎকালীন ওয়েস্ট বেংগল।
মৃত্যু: ২৯ শে আগস্ট ১৯৭৬ সালে ৭৭ বছর বয়সে ঢাকা, বাংলাদেশে।

এই পোস্ট লিখতে সদালাপের এই পোস্ট হতে সাহাজ্য নেয়া হয়েছে http://www.shodalap.org/deshebideshe/13308

0 comments
Labels: ,

কাজী নজরুল ইসলাম এর ধর্ম বিশ্বাস -by দেশে-বিদেশে

কাজী নজরুল ইসলাম এর ধর্ম বিশ্বাস নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। নজরুল অসংখ্য হামদ, নাত লিখেছেন; সাথে সাথে হিন্দু ধর্ম নিয়ে অসংখ্য কবিতা, গান লিখেছেন। তাই অনেকে সন্দেহ পোষণ করেন, উনি প্রকৃতই হিন্দু ধর্ম বিশ্বাস করতেন কিনা? নিজেরা ব্যাখ্যা দেবার আগে সবচেয়ে ভালো হয় নজরুল এ বিষয়ে কী বলেছেন সেটা পর্যালোচনা করা। কেউ কোনো সাহিত্য রচনা করে থাকলে সে বিষয়ে তিনি কি বলেছেন সেই ব্যাখ্যাই সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য। সেই ব্যাখ্যার দ্বারা যদি প্রমাণিত হয় সেটা ইসলাম-বিরোধী তাহলে অবশ্যই সেটা ইসলাম-বিরোধী।
কালী পূজা
অনেকে অভিযোগ করে থাকেন নজরুল কালি পূজা করেছেন এবং অভিযোগটা আসে মুসলিমদের থেকেই। ‘অতীত দিনের স্মৃতি’ বই এর ৪২ পৃষ্ঠায় লেখক নিতাই ঘটক উল্লেখ করেছেন, “সীতানাথ রোডে থাকাকালীন কবিকে হিন্দুশাস্ত্র বিশেষভাবে চর্চা করতে দেখেছি। অনেকে বলেন কালীমূর্তি নিয়ে কবি মত্ত হয়েছিলেন- একথা ঠিক নয়। আমি কখনো তাঁকে এভাবে দেখিনি।” হিন্দুরাই বলছেন নজরুল পূজা করেননি, যদিও সেটা হয়ে থাকলে হিন্দুদেরই খুশী হবার কথা ছিল বেশী। এখানে একটি বিষয় প্রণিধানযোগ্য; তা হোলো, হিন্দুধর্ম নিয়ে পড়াশোনা করা আর কালীপূজা করা এক জিনিস নয়।
হিন্দু ধর্ম বিষয়ক লেখা
এখন আমরা দেখব নজরুল হিন্দু ধর্ম বিষয়ক কবিতা, গান কেনো লিখেছিলেন। নজরুল বলেছেন, “আমি হিন্দু-মুসলমানের মিলনে পরিপূর্ণ বিশ্বাসী। তাই তাদের কুসংস্কারে আঘাত হানার জন্যই মুসলমানী শব্দ ব্যবহার করি, বা হিন্দু দেব-দেবীর নাম নিই। অবশ্য এর জন্য অনেক জায়গায় আমার সৌন্দর্যের হানি হয়েছে। তবু আমি জেনে শুনেই তা করেছি।” [শব্দ-ধানুকী নজরুল ইসলাম, শাহাবুদ্দিন আহমদ, পৃষ্ঠা ২৩৬,২৩৭]
এখানে নজরুল স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন হিন্দু মুসলমানের মিলনের জন্য তিনি এ কাজ করেছেন। তখনকার রাজনৈতিক আবহাওয়া সম্বন্ধে যাদের ধারণা আছে তারা জানেন কি প্রচণ্ড হিন্দু মুসলিম বিরোধ তখন বিরাজমান ছিল।
১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের ১৫ ই ডিসেম্বর রবিবার কলিকাতা এলবার্ট হলে বাংলার হিন্দু-মুসলমানের পক্ষ থেকে কবি কাজী নজরুল ইসলামকে বিপুল সমারোহ ও আন্তরিকতা সহকারে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। সেখানে তিনি বলেন, “কেউ বলেন, আমার বাণী যবন, কেউ বলেন, কাফের। আমি বলি ও দুটোর কিছুই নয়। আমি শুধুমাত্র হিন্দু-মুসলমানকে এক জায়গায় ধরে এনে হ্যান্ডশেক করাবার চেষ্টা করেছি, গালাগালিকে গলাগলিতে পরিণত করার চেষ্টা করেছি। [নজরুল রচনাবলী - ৮, পৃষ্ঠা ৩, ৫]

ধর্মবিশ্বাস

কেউ হয়ত বলবেন, হিন্দু মুসলিম এর মিলনের জন্য উনি না হয় এমন লিখেছেন, কিন্তু এতে প্রমাণিত হয়না যে তিনি ইসলাম ধর্ম বিশ্বাস করতেন। হ্যাঁ কথা ঠিক। এর উত্তর নজরুল দিয়েছেন তাঁর ‘আমার লীগ কংগ্রেস’ প্রবন্ধের ৬১ পৃষ্ঠায় “আমার আল্লাহ নিত্য-পূর্ণ -পরম- অভেদ, নিত্য পরম-প্রেমময়, নিত্য সর্বদ্বন্দ্বাতীত। ‘ইসলাম’ ধর্ম এসেছে পৃথিবীতে পূর্ণ শান্তি সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে – কোরান মজিদে এই মাহাবাণীই উত্থিত হয়েছে। ···এক আল্লাহ ছাড়া আমার কেউ প্রভূ নাই। তাঁর আদেশ পালন করাই আমার একমাত্র মানবধর্ম। আল্লাহ লা-শরিক, একমেবাদ্বিতীয়ম। আল্লাহ আমার প্রভু, রসূলের আমি উম্মত, আল-কোরআন আমার পথ-প্রদর্শক। আমার কবিতা যাঁরা পড়ছেন, তাঁরাই সাক্ষী: আমি মুসলিমকে সঙ্ঘবদ্ধ করার জন্য তাদের জড়ত্ব, আলস্য, কর্মবিমূখতা, ক্লৈব্য, অবিশ্বাস দূর করার জন্য আজীবন চেষ্টা করেছি।”

১৯৪০ সালে কলিকাতায় বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতিরি ঈদ-সম্মেলনে প্রদত্ত সভাপতির অভিভাষণ নজরুল বলেছিলেন, “ইসলাম জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম বলে সকলের শ্রদ্ধা অর্জন করতে পেরেছে।" [নজরুল রচনাবলী - (৭) পৃষ্ঠা ৩৩]

এই লেখার মাধ্যমে নজরুল নিজেকে মুসলমান হিসেবে প্রকাশ করেছেন।

ইসলামের পক্ষে কলম পরিচালনা করা

মৌলভী তরিকুল আলম কাগজে এক প্রবন্ধ লিখে বললেন কোরবানীতে অকারণে পশু হত্যা করা হয়; এমন ভয়াবহ রক্তপাতের কোনো মানে নাই। নজরুল তার জওয়াবে লিখলেন ‘কোরবানী’ কবিতা। তাতে তিনি বললেন-

ওরে, হত্যা নয়, এ সত্যগ্রহ শক্তির উদ্বোধন,
দুর্বল ভীরু চুপ রহো, ওহো খামখা ক্ষুদ্ধ মন।
…..এই দিনই মীনা ময়দানে
…..পুত্র স্নেহের গর্দানে
……ছুরি হেনে খুন ক্ষরিয়ে নে
রেখেছে আব্বা ইবরাহীম সে আপনা রুদ্র পণ,
ছি,ছি, কেঁপো না ক্ষুদ্র মন।
[নজরুল স্মৃতিচারণ, নজরুল একাডেমী পৃষ্ঠা ৪৩৯ ]

ইসলামের বিপক্ষে আক্রমণ হলে সেটার প্রতিবাদস্বরূপ নজরুল কবিতা লিখেছিলেন। ব্যাপারটা বিস্ময়ের বৈকি। যে কবিকে “কাফের” ফতোয়া দেয়া হয়েছে তিনি-ই কিনা ইসলামের পক্ষে কলম ধরেছেন!!!

মুসলমানের সমালোচনা করে কবিতা লিখা

আরো একটি অভিযোগ করা হয়, সেটা হোলো নজরুল আলেমদের সমালোচনা করেছেন, যেমন:

মৌ-লোভী যত মোলভী আর মোল্লারা কন হাত নেড়ে
দেব-দেবী নাম মুখে আনে সবে তাও পাজীটার যাত মেড়ে।

এখানে মৌলভীদের নজরুল “মৌ লোভী” বলেছেন। যারা এতে অসন্তুষ্ট তাদের এই কবিতাটা হয়ত নজরে পড়েনি:

শিক্ষা দিয়ে দীক্ষা দিয়ে
…. ঢাকেন মোদের সকল আয়েব
পাক কদমে সালাম জানাই
….নবীর নায়েব, মৌলভী সাহেব।

এখানে মৌলভী সাহেবদের নজরুল সালাম জানিয়েছেন। দুটোর মধ্যে আসলে কোনো বিরোধ নেই। বর্তমান সমাজে এটাই বাস্তব। আলেমদের মধ্যেও ভালো-খারাপ দু-ধরণের পরিস্হিতি বিদ্যমান। দুটোই নজরুল ফুটিয়ে তুলেছেন। আর মুসলমানদের দোষ-ত্রুটি থাকলে সেটা বলার মধ্যে দোষের কিছু নেই। ইব্রাহিম খাঁ-র চিঠির জবাবে নজরুল সেটাই বলেছেন, “যাঁরা মনে করেন-আমি ইসলামের বিরুদ্ধবাদী বা তার সত্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করছি, তাঁরা অনর্থক এ ভুল করেন। ইসলামের নামে যে সব কুসংস্কার মিথ্যা আবর্জনা স্তুপীকৃত হয়ে উঠেছে তাকে ইসলাম বলে না মানা কি ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযান? এ ভুল যাঁরা করেন, তাঁরা যেন আমার লেখাগুলো মন দিয়ে পড়েন দয়া করে-এ ছাড়া আমার আর কি বলবার থাকতে পারে?” [ইসলাম ও নজরুল ইসলাম, শাহাবুদ্দিন আহমেদ, পৃষ্ঠা ৯৫]

আরো একটি অভিযোগ

অনেকে আরো একটি অভিযোগ করেন, নজরুল প্রথম দিকে হিন্দুদের খুশী করার জন্য হিন্দু ধর্ম নিয়ে কবিতা লিখেছেন, পরবর্তীতে মুসলমানদের খুশী করার জন্য ইসলাম বিষয়ক কবিতা লিখেছেন। বিষয়টি তথ্য বিভ্রাট ছাড়া আর কিছু নয়। নজরুলের প্রথম কাব্যগ্রন্হ অগ্নিবীণা-য় ১২টি কবিতার মধ্যে ৭টি কবিতা ইসলাম-বিষয়ক। নজরুল তাঁর সমগ্র জীবনে ছিলেন অকুতোভয়। জীবনে কখনও তিনি কাউকে খুশী করার জন্য বা কাউকে ভয় করার কারণে সত্য গোপন করেননি। সুতরাং হিন্দুদের খুশী করার জন্য নিজের নীতি বিসর্জন দিবেন এটা চিন্তাই করা যায় না। এখানে আমরা একটি পরিসংখ্যান দিয়ে দেখব নজরুল তাঁর সাহিত্য জীবনের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ইসলাম বিষয়ক লেখা লিখেছেন:

** ‘মোসলেম ভারত’-এ প্রকাশিত তাঁর প্রথম কবিতাটি ছিল ‘শাত- ইল আরব’ (মে,১৯২০)
** দ্বিতীয় কবিতা ‘খেয়াপরের তরণী’ (জুলাই ১৯২০)
** ‘কোরবানী’ ১৩২৭-এর ভাদ্রে (আগস্ট, ১৯২০)
** ‘মোহরাম’ ছাপা হয় ১৩২৭-এর আশ্বিনে (সেপ্টেম্বর ১৯২০)
** ১৯২২-এর অক্টোবরে নজরুলের যে ‘অগ্নি-বীণা’ কাব্য প্রকাশিত হয় তার ১২টি কবিতার মধ্যে ‘প্রলয়োল্লাস’, ‘বিদ্রোহী’, ‘রক্তস্বরধারিণী মা’ আগমনী’, ‘ধূমকেতু’ এই পাঁচটি কবিতা বাদ দিলে দেখা যায় বাকি ৭টি কবিতাই মুসলিম ও ইসলাম সম্পর্কিত। (১৯২২)
** আরবী ছন্দের কবিতা (১৯২৩)
** ১৯২৪-এ প্রকাশিত তাঁর ‘বিষের বাঁশীর প্রথম কবিতা ‘ফাতেহা-ই-দোয়াজ-দহম’ (আবির্ভাব-তিরোভাব) (১৯২৪)
** খালেদ কবিতা (১৯২৬)
** উমর ফারুক কবিতা সওগাতে প্রকাশিত (১৯২৭)
** জিন্জির কাব্যগ্রন্হ প্রকাশ (১৯২৮)
** রুবাইয়াত ই হাফিজ প্রকাশ (১৯৩০)
** কাব্য আমপারা (১৯৩৩)
** জুলফিকার ইসলামিক কাব্যগ্রন্হ প্রকাশ (১৯৩২)
** মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লে আলা ও যাবি কে মদিনায় নাত এ রসুল প্রকাশ (১৯৩৩)
** তওফীক দাও খোদা ইসলামে নাত এর রসুল প্রকাশ (১৯৩৪)
** মক্তব সাহিত্য প্রকাশ (১৯৩৫)
** ফরিদপুর জালা মুসলিম ছাত্র সম্মিলনীতে “বাংলার মুসলিমকে বাঁচাও" অভিভাষণ পাঠ (১৯৩৬)
** ‘সেই রবিউল আউয়ালের চাদ’ নাত এর রসুল প্রকাশ (১৯৩৭)
** ‘ওরে ও মদিনা বলতে পারিস’ নাত এর রসুল প্রকাশ (১৯৩৮)
** দীওয়ান ই হাফিজ এর ৯টি গজল অনুবাদ এবং নির্ঝর কাব্যগ্রন্হে প্রকাশ (১৯৩৯)
** নতুন চাঁদ (১৯৩৯)
** খোদার রহম চাহ যদি নবিজীরে ধর নাত এর রসুল প্রকাশ (১৯৪০)
** মরুভাস্কর ( অসুস্হ হবার পরে প্রকাশিত ১৯৫০)
** রুবাইয়াত ই ওমর খৈয়াম (১৯৫৮)

সাহিত্যিক জীবনের প্রথম (১৯২০-১৯৪১) থেকে শেষ পর্যন্ত নজরুল অজস্র ধারায় ইসলাম বিষয়ক লেখা লিখে গিয়েছেন উপরের পরিসংখ্যান সেটাই প্রমাণ করে।

কিছু উল্লেখযোগ্য পরিসংখ্যান

১। নজরুল বাংলা ভাষায় সর্বাধিক “হামদ-নাত” এর রচয়িতা।
২। গ্রামোফোন কোম্পানী থেকে নজরুলের হামদ-নাত যখন বের হোতো, তখন মাঝে মাঝে রেকর্ডের ওপর “পীর-কবি নজরুল” লেখা থাকত।
৩। বাংলা ভাষায় যারা হামদ-নাত রচনা করে গেছেন, তাদের মধ্যে একই সাথে হিন্দু এবং ইসলাম ধর্ম উভয় বিষয়ে পারদর্শী কেউ ছিলনা, একমাত্র ব্যতিক্রম নজরুল।
৪। একাধিক আরবী-ছন্দ নিয়ে নজরুলের অসংখ্য কবিতা আছে, বাংলা ভাষার আরও এক প্রতিভাবান কবি ফররুখ আহমদ এ বিষয়ে কারিশমা দেখাতে পারেনি।
৫। ইরানের কবি হাফিজ আর ওমর খৈয়ামের যতজন ‘কবি’ অনুবাদক আছেন তার মধ্যে নজরুল একমাত্র মূল ফারসী থেকে অনুবাদ করেছেন, বাকী সবাই ইংরেজীর থেকে।
৬। “ফারসী” এবং “আরবী”তে নজরুল এর জ্ঞান ছিল পাণ্ডিত্যের পর্যায়ে।
৭। গ্রামোফোন কম্পানি থেকে “ইসলামি গান” নজরুলের পূর্বে আর কেউ গায়নি।

মুজাফফর আহমদ ও নজরুল

নজরুলের তরুণ জীবনের কমুনিস্ট হয়ে যাওয়া বন্ধু কমরেড মুজাফফর আহমদ তাঁকে কমুনিজমে নিতে ব্যর্থ হন। তাঁর স্বপ্ন সফল হয়নি। ১৯৬৬ খৃস্টাব্দের ২রা আগস্ট কবি আবদুল কাদিরের কাছে লেখা এক চিঠির শেষে তিনি লিখেছেন,

"নজরুল যে আমার সঙ্গে রাজনীতিতে টিকে রইল না; সে যে আধ্যাত্নিক জগতে প্রবেশ করল তার জন্যে অবশ্য আমার মনে খেদ নেই। যদিও আমি বহু দীর্ঘ বৎসর অনুপস্থিত ছিলেম তবুও আমার মনে হয় আমি হেরে গেছি।"

তিনি আরো বলেছেন, "আমি তাকে যত বড় দেখতে চেয়েছিলেম তার চেয়েও সে অনেক, অনেক বড় হয়েছে।"
(নজরুল একাডেমী পত্রিকাঃ ৪র্থ বর্ষঃ ১ম সংখ্যাঃ পৃষ্ঠাঃ ১৬৪)

নজরুল জীবনের শেষ অধ্যায়
নজরুলের জীবনের একমাত্র সাক্ষাৎকার যেটা উনি ১৯৪০ সনে দিয়েছিলেন, চিরদিনের জন্য অসুস্হ হয়ে যাবার কিছুদিন আগে- সেখানে উনি বলেছিলেন,
"মুসলমানরা যে একদিন দুনিয়াজোড়া বাদশাহি করতে সমর্থ হয়েছিল সে তাদের ইমানের বলে। আজ আমরা ইমান হারিয়ে ফেলেছি। ইমানের প্রকৃত অর্থ ‘পরিপূর্ণরূপে আত্মসমর্পন’। ভারতে রাজা-বাদশাদের দ্বারা ইসলাম জারি হয় নাই। আর মানুষের মঙ্গলের বিধান করেছেন আউলিয়া ‘পীর’ বোজর্গান। সারা ভারতে হাজার আউলিয়ার মাজার কেন্দ্র করে আজো সেই শান্তির কথা আমরা শুনতে পাই। আমি মওলানা আকরম খাঁ ও মৌলবি ফজলুর হক সাহেবকে বলেছিলাম যে, আসুন, আপনারা সমস্ত ত্যাগ করে হজরত ওমর (রাঃ) ও আবুবকরের (রাঃ) আদর্শ সামনে রেখে সমাজে লাগি, আমি আমার সব কিছু ছেড়ে কওমের খেদমতে লাগতে রাজি আছি।” [অতীত দিনের স্মৃতি, সম্পাদনা - আব্দুল মান্নান সৈয়দ পৃষ্ঠা ১৯২,১৯৩]

কিছু উল্লেখযোগ্য স্মৃতিচারণ

দুটি ঘটনা দিয়ে আজকের লেখা শেষ করছি।

প্রথম ঘটনা:
নজরুল স্মৃতিচারণ বই-এ ৩১৭ পৃষ্ঠায় লেখক খান মুহম্মদ সালেক বলেন, “১৯৩৯ সালের ৫ আগষ্ট। কোলকাতা বেকার হোষ্টেলে নবীনবরণ অনুষ্ঠান। প্রধান অতিথি করে আনা হয়েছে তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী নলিনীরঞ্জন সরকারকে। বিশিষ্ট অতিথি ছিলেন নজরুল ইসলাম আর আব্বাস উদ্দীন। অনুষ্ঠান শেষে কবিকে চা-পানের জন্য নিয়ে যাওয়া হলো হোস্টেলের কমনরুমে। কিছু ছাত্র আমাদের ঘিরে দাঁড়িয়েছিল। তারা এক টুকরো করে কাগজ কবির সামনে ধরছে আর আবদার জানাচ্ছে কিছু লিখে দেবার জন্য। কবি একটা পেন্সিল হাতে নিলেন। তারপর একজনকে লিখে দিলেন, ‘আল্লাহু আকবর।' আর একজনকে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসলুল্লাহ।’ আবার কাউকে লিখলেন, ‘খোদাকে চেনো, খোদাকে চিনবে।’ আমিও এক টুকরো কাগজ বের করে সামনে ধরলাম। তিনি লিখলেন, ‘যারা ধৈর্যশীল খোদা তাদের সহায়।’ তাঁর এ ধরণের উক্তি থেকে মনে হয়েছিল তিনি কোন পীর-দরবেশ বা অলি আউলিয়ার কাছে বাইয়াত গ্রহণ করছেন।"

দ্বিতীয় ঘটনা:
শিল্পী আব্বাসউদ্দিন একদিন অনেক খোঁজাখুঁজি করে নজরুলকে না পেয়ে সকালে তার বাসায় গেলেন। বাসায় গিয়ে দেখলেন নজরুল গভীর মনোযোগ দিয়ে কি যেন লিখছেন। নজরুল ইশারায় আব্বাসউদ্দিনকে বসতে বললেন। আব্বাস উদ্দিন অনকেক্ষণ বসে থাকার পর জোহরের নামাজের সময় হলে তিনি উসখুস করতে লাগলেন। নজরুল বললেন, “কি তাড়া আছে, যেতে হবে?” আব্বাসউদ্দিন বললেন, “ঠিক তাড়া নেই, তবে আমার জোহরের নামাজ পড়তে হবে। আর এসেছি একটা ইসলামি গজল নেবার জন্য। গজল না নিয়ে আজ যাওয়া হচ্ছে না।” [নজরুলকে যেহেতু বাউন্ডেলে স্বভাবের কারণে পাওয়া যেত না, তাই সবাই এইভাবে লেখা আদায় করত] নামাজ পড়ার কথা শুনে নজরুল তাড়াতাড়ি একটি পরিস্কার চাদর তার ঘরের আলমারি থেকে বের করে বিছিয়ে দিলেন। এরপর আব্বাস উদ্দিন যথারীতি জোহেরর নামাজ শেষ করার সাথে সাথে নজরুল আব্বাসউদ্দিনের হাতে একটি কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বললেন, “এই নাও তোমার গজল।” আব্বাস উদ্দিন বিস্ময়ের সাথে দেখলেন তার নামাজ পড়তে যে সময় লেগেছে ঠিক সেই সময়ের মধ্যে নজরুল সম্পূর্ণ একটি নতুন গজল লিখে ফেলেছেন। নীচে গজলটি দেয়া হলো:

হে নামাজী আমার ঘরে নামাজ পড় আজ
দিলাম তোমার চরণ তলে হৃদয় জায়নামাজ।
আমি গোনাহগার বে-খবর
নামাজ পড়ার নাই অবসর
তব, চরণ-ছোওয়ার এই পাপীরে কর সরফরাজ
হে নামাজী আমার ঘরে নামাজ পড় আজ।
তোমার অজুর পানি মোছ আমার পিরহান দিয়ে
আমার এই ঘর হউক মসজিদ তোমার পরশ নিয়ে;
যে শয়তান ফন্দিতে ভাই
খোদার ডাকার সময় না পাই
সেই শয়তান থাক দূরে (শুনে) তকবীরের আওয়াজ
হে নামাজী আমার ঘরে নামাজ পড় আজ।

আমার লেখার উদ্দেশ্য এই নয় যে, নজরুল আদর্শ মুসলমান ছিলেন কিংবা তিনি অনুসরণীয়- এটা প্রচার করা। বরং আমার লেখার উদ্দেশ্য হোলো, নজরুল বিশ্বাসে সম্পূর্ণরূপে মুসলিম ছিলেন যেটা অনেকেই সঠিকভাবে জানেন না। আশাকরি উপরের আলোচনা আমাদের নতুন করে সেটাই ভাবতে শেখাবে। এরপরও অনেকে থাকবে যারা বিদ্বেষ ছড়াবে, তাদের সম্বন্ধে নজরুল বলেছেন:

উহারা প্রচার করুক হিংসা বিদ্বেষ আর নিন্দাবাদ
আমরা বলিব, “সাম্য শান্তি এক আল্লাহ জিন্দাবাদ।”
==============================================
পরিশিষ্ট: নজরুলের কিছু ইসলাম বিষয়ক কবিতা

বিষয়: ইসলাম
আল্লাহ আমার প্রভু, আমার নাহি নাহি ভয়
আমার নবী মোহাম্মদ, যাহার তারিফ জগৎময়।
আমার কিসের শঙ্কা,
কোরআন আমার ডঙ্কা,
ইসলাম আমার ধর্ম, মুসলিম আমার পরিচয়।
কলেমা আমার তাবিজ, তৌহীদ আমার মুর্শিদ
ঈমান আমার বর্ম, হেলাল আমার খুর্শিদ।
‘আল্লাহ আক্‌বর’ ধ্বনি
আমার জেহাদ বাণী
আখের মোকাম ফেরদৌস্‌ খোদার আরশ যেথায় রয়
আল্লাহ আমার প্রভু, আমার নাহি নাহি ভয়।

বিষয়: রিজিক
আহার দিবেন তিনি, রে মন
জীব দিয়েছেন যিনি
তোরে সৃষ্টি করে তোর কাছে যে
আছেন তিনি ঋণী।

বিষয়: রেসালত
চলে আন্‌জাম
দোলে তান্‌জাম
খোলে হুর পরী মরি ফিরদৌসের হাম্মাম!
টলে কাঁখের কলসে কওসর ভর, হাতে ‘আব্‌-জম-জম্‌-জাম্‌’।
শোন্‌ দামাম কামান্‌ তামাম্‌ সামান্‌
নির্ঘোষি কার নাম
পড়ে ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহে সাল্‌লাম!’
বারেক মুখে নিলে যাঁহার নাম
চিরতরে হয় দোজখ্‌ হারাম,
পাপীর তরে দস্তে যাহার, কওসরের পিয়ালা
হের আজ আরশে এলেন মোদের নবী কম্‌লীওয়ালা।

বিষয়: কালেমা শাহাদত
এসমে আজম হ’তে কদর ইহার,
পায় ঘরে ব’সে খোদা আর রসুলের দীদার
তাহার হ্রদয়াকাশে
সাত বেহেশ্‌ত ভাসে
খোদার আরশে হয় আখেরে গতি
কলেমা শাহাদাতে আছে খোদার জ্যোতি
ঝিনুকের বুকে লুকিয়ে থাকে যেমন মোতি।

বিষয়: কোরবানী
আল্লার নামে, ধর্মেরও নামে, মানব জাতির লাগি
পুত্রেরে কোরবানী দিতে পারে, আছে কেউ হেন ত্যাগী?
সেই মুসলিম থাকে যদি কেউ, তসলিম কবি তারে,
ঈদগাহে গিয়া তারি সার্থক হয় ডাকা আল্লারে।
অন্তরে ভোগী বাইরে যে যোগী, মুসলমান সে নয়,
চোগা চাপাকানে ঢাকা পড়িবে না সত্য সে পরিচয়!

বিষয়: জাকাত
দে জাকাত, দে জাকাত, তোরা দে রে জাকাত
দিল্‌ খুলবে পরে – ওরে আগে খুলুক হাত।

বিষয়: আরাফাত ময়দান
দুখের সাহারা পার হ’য়ে আমি
চলেছি কাবার পানে
পড়িব নামাজ মারেফাতের
আরাফাত ময়দানে।

বিষয়: বেহেশত
সেথা হর্দম খুশির মৌজ,
তীর হানে কালো আখির ফৌজ,
পায়ে পায়ে সেথা আর্জি পেশ,
দিল চাহে সদা দিল্‌-আফরোজ,
পিরানে পরান বাধা সেথায়
আয়, বেহেশতে কে যাবি, আয়।

বিষয়: জাগরণমূলক কবিতা
মোরা আসহাব কাহাফের মত
হাজারো বছর শুধু ঘুমাই,
আমাদের কেহ ছিল বাদশাহ
কোনো কালে তারি করি বড়াই,
জাগি যদি মোরা, দুনিয়া আবার
কাঁপিবে চরণে টালমাটাল
দিকে দিকে পুন জ্বলিয়া উঠেছে
দ্বীন ই ইসলামি লাল মশাল।


http://www.shodalap.org/deshebideshe/13308

0 comments
Labels: ,

বিদ্রোহী -কবি কাজি নজরুল ইসলাম

বিদ্রোহী

বল বীর -
বল উন্নত মম শির!
শির নেহারি আমারি, নত-শির ওই শিখর হিমাদ্রীর!
বল বীর -
বল মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি'
চন্দ্র সূর্য্য গ্রহ তারা ছাড়ি'
ভূলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া,
খোদার আসন "আরশ" ছেদিয়া
উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ব-বিধাত্রীর!
মম ললাটে রুদ্র-ভগবান জ্বলে রাজ-রাজটীকা দীপ্ত জয়শ্রীর!
বল বীর -
আমি চির-উন্নত শির!

আমি চিরদুর্দ্দম, দুর্বিনীত, নৃশংস,
মহা- প্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন, আমি ধ্বংস,
আমি মহাভয়, আমি অভিশাপ পৃথ্বীর!
আমি দুর্ব্বার,
আমি ভেঙে করি সব চুরমার!
আমি অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল,
আমি দ'লে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃংখল!
আমি মানি নাকো কোনো আইন,
আমি ভরা-তরী করি ভরা-ডুবি, আমি টর্পেডো, আমি ভীম,
ভাসমান মাইন!
আমি ধূর্জ্জটী, আমি এলোকেশে ঝড় অকাল-বৈশাখীর!
আমি বিদ্রোহী আমি বিদ্রোহী-সূত বিশ্ব-বিধাত্রীর!
বল বীর -
চির উন্নত মম শির!

আমি ঝঞ্ঝা, আমি ঘূর্ণী,
আমি পথ-সম্মুখে যাহা পাই যাই চূর্ণী!
আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ,
আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ।
আমি হাম্বীর, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল,
আমি চল-চঞ্চল, ঠুমকি' ছমকি'
পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি'
ফিং দিয়া দিই তিন দোল্!
আমি চপলা-চপল হিন্দোল!

আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা',
করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা,
আমি উদ্দাম, আমি ঝঞ্ঝা!
আমি মহামারী, আমি ভীতি এ ধরিত্রীর।
আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ণ চির-অধীর।
বল বীর -
আমি চির-উন্নত শির!

আমি চির-দুরন্ত-দুর্ম্মদ,
আমি দুর্দ্দম, মম প্রাণের পেয়ালা হর্দ্দম্ হ্যায়্ হর্দ্দম্
ভরপুর মদ।
আমি হোম-শিখা, আমি সাগ্নিক, জমদগ্নি,
আমি যজ্ঞ, আমি পুরোহিত, আমি অগ্নি!
আমি সৃষ্টি, আমি ধ্বংস, আমি লোকালয়, আমি শ্মশান,
আমি অবসান, নিশাবসান।
আমি ইন্দ্রাণি-সূত হাতে চাঁদ ভালে সূর্য্য,
মম এক হাতে-বাঁকা বাঁশের বাঁশরী, আর হাতে রণ-তূর্য্য।
আমি কৃষ্ণ-কন্ঠ, মন্থন-বিষ পিয়া ব্যথা বারিধির।
আমি ব্যোমকেশ, ধরি বন্ধন-হারা ধারা গঙ্গোত্রীর।
বল বীর -
চির উন্নত মম শির।

আমি সন্ন্যাসী, সুর-সৈনিক
আমি যুবরাজ, মম রাজবেশ ম্লান গৈরিক!
আমি বেদুঈন, আমি চেঙ্গিস,
আমি আপনা ছাড়া করি না কাহারে কুর্ণিশ!
আমি বজ্র, আমি ঈশান-বিষাণে ওঙ্কার,
আমি ইস্ত্রাফিলের শিঙ্গার মহা-হুঙ্কার,
আমি পিনাক-পাণির ডমরু-ত্রিশূল, ধর্ম্মরাজের দন্ড,
আমি চক্র ও মহাশঙ্খ, আমি প্রণব-নাদ-প্রচন্ড!
আমি ক্ষ্যাপা দুর্বাসা-বিশ্বামিত্র-শিষ্য,
আমি দাবানল-দাহ, দাহন করিব বিশ্ব!
আমি প্রাণ-খোলা-হাসি উল্লাস, - আমি সৃষ্টি-বৈরী মহাত্রাস,
আমি মহা-প্রলয়ের দ্বাদশ রবির রাহু-গ্রাস!
আমি কভু প্রশান্ত, - কভু অশান্ত দারুণ স্বেচ্ছাচারী,
আমি অরুণ খুনের তরুণ, আমি বিধির দর্প-হারী!
আমি প্রভঞ্জনের উচ্ছাস, আমি বারিধির মহাকল্লোল,
আমি উজ্জ্বল আমি প্রোজ্জ্বল,
আমি উচ্ছল জল-ছল-ছল, চল-ঊর্মির হিন্দোল্ দোল!

আমি বন্ধন-হারা কুমারীর বেণী, তন্বী-নয়নে বহ্নি,
আমি ষোড়শীর হৃদি-সরসিজ প্রেম-উদ্দাম, আমি ধন্যি।
আমি উন্মন মন উদাসীর,
আমি বিধাতার বুকে ক্রন্দন-শ্বাস, হা-হুতাশ আমি হুতাশীর!
আমি বঞ্চিত ব্যথা পথবাসী চির-গৃহহারা যত পথিকের,
আমি অবমানিতের মরম-বেদনা, বিষ-জ্বালা, প্রিয়-লাঞ্ছিত
বুকে গতি ফের!
আমি অভিমানী চির-ক্ষুব্ধ হিয়ার কাতরতা, ব্যথা সুনিবিড়,
চিত- চুম্বন-চোর-কম্পন আমি থর-থর-থর প্রথম পরশ কুমারীর!
আমি গোপন প্রিয়ার চকিত চাহনি, ছল ক'রে দেখা অনুখন,
আমি চপল মেয়ের ভালোবাসা, তা'র কাঁকন-চুড়ির কন্-কন্।
আমি চির-শিশু, চির-কিশোর,
আমি যৌবন-ভীতু পল্লীবালার আঁচর কাঁচলি নিচোর!
আমি উত্তর-বায়ু, মলয়-অনিল, উদাসী পূরবী হাওয়া,
আমি পথিক-কবির গভীর রাগিণী, বেণু-বীনে গান গাওয়া!
আমি আকুল নিদাঘ-তিয়াসা, আমি রৌদ্র রবি,
আমি মরু-নির্ঝর ঝর-ঝর, আমি শ্যামলিমা ছায়া-ছবি! -
আমি তুরিয়ানন্দে ছুটে চলি এ কি উন্মাদ, আমি উন্মাদ!
আমি সহসা আমারে চিনেছি, আমার খুলিয়া গিয়াছে
সব বাঁধ!

আমি উত্থান, আমি পতন, আমি অচেতন-চিতে চেতন,
আমি বিশ্ব-তোরণে বৈজয়ন্তী, মানব বিজয় কেতন!
ছুটি ঝড়ের মতন করতালি দিয়া
স্বর্গ-মর্ত্ত্য করতলে,
তাজি বোরবাক্ আর উচ্চৈস্রবা বাহন আমার
হিম্মত-হ্রেস্বা হেঁকে চলে!
আমি বসুধা-বক্ষে আগ্নেয়াদ্রি, বাড়ব-বহ্নি, কালানল,
আমি পাতালে মাতাল অগ্নি-পাথর-কলরোল-কল-কোলাহল!
আমি তড়িতে চড়িয়া উড়ে চলি জোর তুড়ি দিয়া, দিয়া লম্ফ,
আণি ত্রাস সঞ্চারি ভুবনে সহসা, সঞ্চরি' ভূমি-কম্প!
ধরি বাসুকির ফনা জাপটি', -
ধরি স্বর্গীয় দূত জিব্রাইলের আগুনের পাখা সাপটি'!
আমি দেব-শিশু, আমি চঞ্চল,
আমি ধৃষ্ট আমি দাঁত দিয়া ছিঁড়ি বিশ্ব-মায়ের অঞ্চল!

আমি অর্ফিয়াসের বাঁশরী,
মহা- সিন্ধু উতলা ঘুম্-ঘুম্
ঘুম্ চুমু দিয়ে করি নিখিল বিশ্বে নিঝ্ঝুম্
মম বাঁশরী তানে পাশরি'
আমি শ্যামের হাতের বাঁশরী।
আমি রুষে উঠে' যবে ছুটি মহাকাশ ছাপিয়া,
ভয়ে সপ্ত নরক হারিয়া দোজখ নিভে নিভে যায় কাঁপিয়া!
আমি বিদ্রোহ-বাহী নিখিল অখিল ব্যাপিয়া!

আমি প্লাবন-বন্যা,
কভু ধরণীরে করি বরণিয়া, কভু বিপুল ধ্বংস-ধন্যা -
আমি ছিনিয়া আনিব বিষ্ণু-বক্ষ হইতে যুগল কন্যা!
আমি অন্যায়, আমি উল্কা, আমি শনি,
আমি ধূমকেতু-জ্বালা, বিষধর কাল-ফণি!
আমি ছিন্নমস্তা চন্ডী, আমি রণদা সর্বনাশী,
আমি জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাসি!

আমি মৃণ্ময়, আমি চিন্ময়,
আমি অজর অমর অক্ষয়, আমি অব্যয়!
আমি মানব দানব দেবতার ভয়,
বিশ্বের আমি চির দুর্জ্জয়,
জগদীশ্বর-ঈশ্বর আমি পুরুষোত্তম সত্য,
আমি তাথিয়া তাথিয়া মথিয়া ফিরি এ স্বর্গ-পাতাল-মর্ত্ত্য
আমি উন্মাদ, আমি উন্মাদ!!
আমি চিনেছি আমারে, আজিকে আমার খুলিয়া গিয়াছে
সব বাঁধ!!
আমি পরশুরামের কঠোর কুঠার,
নিঃক্ষত্রিয় করিব বিশ্ব, আনিব শান্তি শান্ত উদার!
আমি হল বলরাম স্কন্ধে,
আমি উপাড়ি' ফেলিব অধীন বিশ্ব অবহেলে নব সৃষ্টির মহানন্দে।

মহা- বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত,
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল, আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না,
অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না -
বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত
আমি আমি সেই দিন হব শান্ত!
আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দিই পদ-চিহ্ন,
আমি স্রষ্টা-সূদন, শোক-তাপ-হানা খেয়ালী বিধির বক্ষ করিব-ভিন্ন!
আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দেবো পদ-চিহ্ন!
আমি খেয়ালী বিধির বক্ষ করিব ভিন্ন!

আমি চির-বিদ্রোহী বীর -
আমি বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির-উন্নত শির!

0 comments