শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু

যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তা' আলার যিনি সকল সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা।

মুহাম্মদ (সাঃ)-আল্লাহর রাসূল

মুহাম্মদ (সাঃ)-সকল মানুষের জন্য উদাহরন, সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ, ও আল্লাহর রাসুল

আল কোরআন - মহান আল্লাহ প্রদত্ত কিতাব

এ সেই কিতাব যাতে কোনই সন্দেহ নেই। পথ প্রদর্শনকারী পরহেযগারদের জন্য,

আমাদেরকে সরল পথ দেখাও

আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।

আল্লাহ নিতান্ত মেহেরবান ও দয়ালু

সে সমস্ত লোকের পথ, যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ। তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।

Showing posts with label নুমান আলী খান. Show all posts
Showing posts with label নুমান আলী খান. Show all posts
Labels: , ,

ক্ষমার মাস রামাদান - যখন তারা আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, তখন আমি একদম কাছে

●|● ক্ষমার মাস রামাদানঃ পর্ব ০৫ ●|●
এক্ষেত্রে তারা হচ্ছে আল্লাহর দাস। এমন হতে পারে এরা হয়তো আল্লাহর ইবাদত করেই না, কিন্তু তারপরও তারা ইবাদ। এখন তারা কার কাছে জিজ্ঞাসা করেছিল, দেখি আপনাদের মনোযোগ কেমন আছে, তারা কি আল্লাহর কাছে সরাসরি জিজ্ঞাসা করেছিল নাকি রাসূল (সাঃ) এর কাছে জিজ্ঞাসা করেছিল। তারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে জিজ্ঞাসা করেছিল। এখন আমি অর্থ টা আবার বলি, যখন তারা আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে তাহলে তাদেরকে বল, আমি নিকটে। আয়াতে কিন্তু বলা হয়নি তাদেরকে বল, আয়াতে বলছে ‘ফাইন্নি কারীব’, যখন তারা আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, তখন আমি একদম কাছে, তখন আমি একদম কাছে। কোন জিনিসটা বলা হয়নি? তাদেরকে বল, ফাকুল্লাহুম ইন্নি কারীব। কিন্তু এখানে কোন ফাকুল্লাহুম নেই, কোন তাদেরকে বলও নেই। কেন? লোকজন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে জিজ্ঞাসা করতে এসেছিল, হয় না আমাদের সময়ে লোকজন আলেমের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে আল্লাহ কি আমার দুয়া শুনবে? আমার অনেক ভুল হয়, আমার অনেক নামাজ বাদ গেছে, আল্লাহ কি তারপরও আমার দুয়া শুনবে? আল্লাহ কি আমাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে? এগুলো মানুষ আলেমকে জিজ্ঞাসা করে, আর ওই ক্ষেত্রে সাহাবীরা রাসুলুলাহ (সাঃ) কে জিজ্ঞসা করেছিলেন। আল্লাহ নিজেই সরাসরি উত্তর দিলেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে দিয়ে বলালেন না। উনি রাসূলুল্লাহ(সাঃ) কে দিয়ে নয়, উনি আপনার সাথে, আমার সাথে সরাসরি কথা বলা শুরু করেছেন। ফাইন্নি কারীব। আমি কাছেই। আমি এত কাছে যে আমি তোমার সাথে কথা বলছি। আমি এমনকি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কেও বলছি না তোমার সাথে কথা বলতে, আমি সরাসরি তোমার সাথে কথা বলবো। এখানেই কুরআনের সৌন্দর্য।
লোকজন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে আসলো জিজ্ঞাসা করতে আর আল্লাহ বলেননি যে আপনি ওদেরকে গিয়ে বলুন, বরং উনি ঠিক করলেন যে উনি নিজেই বলবেন। আমি খুব কাছে, তুমি আমাকে বিশ্বাস কর না? কেন আমি বললাম তুমি বিশ্বাস কর না? বললাম ইন্নি শব্দটার কারণে, ইন্নি মানে বাংলায় অবশ্যই, কোন কিছু নিঃসন্দেহে বোঝাতে ইন্নি ব্যবহার হয়। তাই কেউ যদি কোন ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে তখন ইন্না ব্যবহার করা হয়। আল্লাহ এখানে বলছেন কক্ষনোই আমি কাছে নেই এই সন্দেহ করো না।। কেন তুমি সন্দেহ করছ যে আমি কাছে নেই। কেন তুমি ভাবছ যে আমি তোমার থেকে দূরে সরে যাব, তুমি আমার থেকে সরে গেছ, আমি না, তুমি সরেছো। তুমি আমার অবাধ্য হয়েছ, তুমি আমাকে ভালবাসা বন্ধ করেছো, আমি কক্ষনো তোমাকে ভালবাসা বন্ধ করিনি। তুমি দূরে সরেছো, আমি সবসময় কাছেই ছিলাম। আবার কারীব শব্দটাও, কারীব হচ্ছে ইসম সিফাহ, যার অর্থ আমি সবসময় আছি, পুরো বাক্যটা দাঁড়ায় অবশ্যই আমি সবসময় আছি কাছেই, আমার দাস এটা জানুক। আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে আলাহর কতগূলো নাম আছে? অন্তত ৯৯ টি। কত সুন্দর সুন্দর নাম আল্লাহর। তাই যখন মানুষ জিজ্ঞেস করল আল্লাহ সম্পর্কে, তখন তাদেরকে আল্লাহর কোন নামটা বলা সবচেয়ে বেশি জরুরী? উনার কোন গুনটা? যে উনি একদম কাছেই। কেন? কারণ যখন উনি কাছে আছেন আমাদের জন্য উনার সাথে কথা বলা সহজ হয়। কেউ যখন দূরে থাকে তখন আমরা তার সাথে কথা বলিনা। আর কেউ যখন কাছে থাকে আপনি তার সাথে কথা বলতে পারেন, যখন কেউ কাছে থাকে আপনি তাকে সম্মান পারেন।
আচ্ছা, এখানের কয়জন বাচ্চা স্কুলে আছে? ৪ জন। বাকীরা কি করে? আচ্ছা যাই হোক, যদি আপনি স্কুলে থাকেন আর টিচার ক্লাসরুমের বাইরে দিয়ে হেঁটে যায়, তখন কি আপনার আচরণে কোন পরিবর্তন আসে? নাকি আসে না? মিথ্যা বলবেন না আপনি মসজিদে আছন। বাইরে গিয়ে মিথ্যে বলুন...না না আমি মজা করছি। যখন টিচার কাছে থাকে আপনার ব্যবহার এরকম হয়, ধরুন আপনি একটি পরীক্ষা দিচ্ছেন, টিচার হেঁটে বেড়াচ্ছেন, আপনি কি আপনার পরীক্ষার খাতা একটু ঢেকে ফেলেন না? এমনকি ছাঁয়া দেখলেও কেঁপে উঠেন। বিশেষত যদি উনি আপনার টেবিলে হাত রাখে আর আপনার খাতারদিকে তাকিয়ে একটু ‘হুমম’ করেন ... মালাকুল মাউত (যমদূত) মনে হয়। আমি আমার স্টুটেন্ডদের সাথে এরকম করি, কারণ আমি তাদেরকে মানসিকভাবে টর্চার করতে পছন্দ করি। এটাই টিচিং এর সবচেয়ে বড় মজা, আপনি তাদেরকে নিয়ে খেলতে পারেন। আল্লাহ বলছেন যদি আমার দাস আমার সম্পর্কে জানতে চায় তাহলে বলুন আমি একদম কাছেই আছি। কেউ যখন কাছে থাকে আপনি অন্য রকম আচরণ করেন, আপনি যখন আশেপাশে পুলিশ অফিসার দেখেন আপনি অন্যরকম আচরণ করেন। আপনি যখন দেখেন আপনার বস আশে পাশে আছে আপনি ভিন্ন আচরণ করেন, যখন জানেন টিচার কাছে, আপনি ভিন্ন আচরণ করেন, যখন আপনি দেখেন আপনার মা আশেপাশে আছে আপনি তখন আপনার বন্ধুদের সাথে ভিন্ন ভাবে কথা বলেন, যখন সে অন্য রুমে যায় তখন হয়তো আপনি বন্ধুর মুখে ঘুষি মারেন বা এই ধরনের কিছু করেন, কাছে থাকলে ভিন্নভাবে কথা বলেন। যখন আপনি অনুধাবন করবেন যে আল্লাহ নিকটে তখন আপনি সবসময়ের জন্য একদম ভিন্ন মানুষ হয়ে যাবেন। কারণ উনি সবসময় কাছে, ফাইন্নি কারীব। এখন উনি যদি সবচেয়ে কাছেই হন, এরপর উনি কি বলছেন? ‘উজিবু’ আরবিতে আজাবা মানে, উত্তর দেওয়া। এছাড়াও আরেকটি শব্দ আছে, ইস্তেজাবা, কুরআনের অন্য এক জায়গায় আল্লাহ বলেছেন - فَاسْتَجَابَ لَهُمْ رَبُّهُمْ তিনি আজাবা লাহুম বলেননি, তিনি বলেছেন ফাস্তাজাবা লাহুম। তাদের প্রভু তাদের ডাকে সাড়া দিলেন। তাহলে দেখা যাচ্ছে দুইটা শব্দ আছে আরবীতে আজাবা, আর ইস্তেজাবা। আজাবা দিয়ে বুঝায় যেটা সাথে সাথে হবে, যখন আপনি কোন দেরী করার ছাড়াই কাউকে জবাব দেন সেটাকে বলা হয়, ইজাবা। আর যখন আপনি সময় নিয়ে জবাব দেন সেটাকে বলা হয় ইস্তেজাবা। আল্লাহ বলছেন উজিবু এর মানে উনি কিভাবে দুয়ার উত্তর দেন? সাথে সাথে। কেউ কেউ দুয়া করে আর বলে, কখন আল্লাহ জবাব দিবেন? কখন আল্লাহর সাহায্য আসবে? আমি অসুস্থ, কখন আল্লাহ আমাকে সুস্থ করবেন? আমি চাকরী পাচ্ছি না, কখন আল্লাহ আমার চাকরী দিবেন। আমার বিয়ে হচ্ছে না, কখন আল্লাহ আমার বিয়ে দিবেন। আমার মা একের পর এক বিয়ের প্রস্তাব নাকচ করছে, কখন আল্লাহ তার অন্তর টা পরিবর্তন করবেন। এর নাক লম্বা, তার চোখ বেশি ছড়ানো, এ জানেনা কিভাবে ঠিক মত চা বানাতে হয়, এসব করে আমার বিয়ে হচ্ছে না। আমার মা সব নষ্ট করে দিচ্ছে। ইয়া আল্লাহ কেন আমার মা এরকম করছে, আপনি তখন আল্লাহর কাছে দুয়া চান, আর আল্লাহ কি বলছেন? তিনি কখন সেটার জবাব দিবেন? সাথে সাথে।
ও আরেকটি কথা। এগুলো সব রামাদানের আয়াত, তাই না? তাই আপনি যদি সত্যি সত্যি চান আল্লাহ সাথে সাথে আপনার দুয়ার জবাব দিবেন, তাহলে কখন দুয়া করতে হবে? রামাদানে। আর আপনি যদি চান যে আল্লাহ আপনার কাছে আসবেন তাহলে আগে নিজে আল্লাহর কাছাকাছি হন, বেশি বেশি কুরআন পড়ুন, আর তারপর দুয়া করুন, কুরআন পড়ুন আর দুয়া করুন। কুরআন পড়ুন আর দুয়া করুন। রামাদানে আপনার এরকমটিই করা উচিত। যখন আপনি বেশি বেশি দুয়া করা শুরু করবেন, তখন রামাদান মাসটা উপভোগ করা শুরু করবেন। আর যদি আপনি বেশি দুয়া না করেন তাহলে আপনি রামাদান উপভোগ করবেন না। রামাদানের আনন্দটাই হচ্ছে দুয়ার মাঝে। অর্থাৎ উনি বলছেন উজিবু। আমি জবাব দিব। তারপর উনি বলেছেন دَعْوَةَ الدَّاعِ কি শক্তিশালী শব্দচয়ন!! পূর্বে বলেছিলাম কুরআন মাজিদে 'আমি' কখন ব্যবহার করা হয়? মনে আছে? অনেক বেশি ভালোবাসা এবং অনেক বেশি রাগ প্রকাশ করার সময়। এখানে কোনটা? অনেক বেশি ভালোবাসা। আমি জবাব দেই, আমি নিজে জবাব দেই, আর তা তাৎক্ষণিক ভাবেই দেই। এখন কার দোয়ার জবাব দেয়া হয়? আপনি ভাবতে পারেন যে অনেক বেশি দোয়া করে তার। আমি বছরে একবার দুইবার দোয়া করি। যখন আপনার পরীক্ষা থাকে তখন দোয়া করেন, ইয়া আল্লাহ আমার পরীক্ষা ...। আমিন। অথবা গাড়ি চালানোর সময় লালবাতি অতিক্রম করে গেলেন, আর বিশাল জরিমানা দিতে যাচ্ছেন, তখন দোয়া করেন এই বলে, ইয়া আল্লাহ ক্যামেরা এবং লাইসেন্স প্লেটের মাঝে কভার সৃষ্টি করে দাও। আমি যেন অথরিটি থেকে কোন মেসেজ না পাই, ইয়া আল্লাহ। তখন আপনার আল্লাহকে স্মরণ হয়। কেউ যদি অনেকবার দোয়া করে তাহলে 'দুয়া' শব্দটি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু কেউ যদি শুধু একবার দোয়া করে, সেটা প্রকাশ করতে ব্যবহার করা হয় ''দা'ওয়াতুন'' শব্দটি। دعوة শব্দটির শেষে তা মারবুতা নির্দেশ করে যে এটা মাত্র একবার ঘটে। যেমন ضرب এর অর্থ হলো প্রহার করা, কিন্তু ضربة মানে একবার প্রহার করা। أكل মানে খাবার, কিন্তু أكلة অর্থ একবারের খাবার। ة তা মারবুতা এটাকে একবারের জন্য বানিয়ে দেয়। আল্লাহ বলেছে, دَعْوَةَ الدَّاعِ প্রার্থনাকারীর একবারের প্রার্থনাতেও আমি সাড়া দেই। লোকটি মাত্র একবারই দোয়া করল, আল্লাহ বলেন না যে সারা বছর কোথায় ছিলে? তুমি জীবনে কখনো সালাত আদায় করনি, মাত্র একবার দোয়া করলে, ভুলে যাও যে তোমার ডাকে সাড়া দিব।
আপনি যদি কোন অফিসের কর্মচারী হোন আর বছরে মাত্র একবার অফিসে নিজের চেহারা দেখালেন, আপনার চাকরি থাকবে না। তারা বলবে, কে আপনি? আমি এখানে চাকরি করি। কখন? আমি গত বছর চাকরি পেয়েছি। তো এখানে কি করছেন? আমি অ্যাঁ...অ্যাঁ ... এখন তো আসলাম! আমি কি আবার শুরু করতে পারি? আপনার বস কি বলবে, হ্যাঁ, সিওর। হ্যাঁ, এক্ষুনি আপনি শুরু করতে পারেন। আপনার জন্য কি একটা প্রমোশনের ব্যবস্থা করবো? না এটা হবে না। دعوة শব্দের মাধ্যমে আল্লাহ বলছেন যে, জীবনে একবার দোয়া করা ব্যক্তির জন্যও তিনি সাড়া দিবেন। নিজেকে এটা বলে বোঝাবেন না যে, আমার তো দাঁড়ি নেই, আল্লাহ আমার ডাকে সাড়া দিবেন না। কেবল গোঁফ রয়েছে, আল্লাহ আমার দু'আ কবুল করবেন না'। রামাদানে মুভি দেখতে পারব না, তাই আগে থেকেই তিনটির মত মুভি দেখে ফেলেছি। এখন আমি দু'আ করব? আল্লাহ তারপরও সাড়া দিবেন আপনার ডাকে। এটা শুনে আবার কেউ মুভি দেখতে যাবেন না। কখনও মনে করবেন না যে আল্লাহ আপনার দু'আয় সাড়া দিবেন না। যে কিনা একটিও দু'আ করে, আল্লাহ তার ডাকেও সাড়া দেন। এবার আপনি বলতে পারেন, আচ্ছা, লোকটি একটি দু'আই করেছে কিন্তু হতে পারে যে সে একজন খুব ভাল মানুষ। হতে পারে সে একজন সালেহ, একজন মু'মিন, হতে পারে তার অনেক তাক্বওয়া আছে কিংবা তার ইলম বেশি। এও হতে পারে যে সে তওবা করেছে। 'উজিবুদ্‌ দা'ওয়াত্‌তায়িবি', আমি তার আহ্বানে সাড়া দেই যে তওবা করে। আল্লাহ তা বলেননি। তিনি বলেছেন, আমি সেই মানুষটিকে সাড়া দেই, 'দা'ওয়া', তার একটি দু'আতেই সাড়া দেই, 'আদ-দা'আ', যে ডেকেছে। এই মানুষটির উদাহারণ কীরূপ? সে কি করেছে? সে ডেকেছে। অন্যকথায়, আল্লাহ কি তার কাছ থেকে অন্য কোন গুণ আশা করেছেন? তিনি কি বলেছেন, দা'ওয়াতুল মুসল্লি? দা'ওয়াতুল মুত্তাক্বি? দা'ওয়াতুল মু'মিন? না! তিনি বলেননি যে আপনার তাক্ব্ওয়া থাকতে হবে, আপনার ইমান থাকতে হবে, বলেননি আপনার ইলম থাকতে হবে। এই দু'আয় বলেননি। কেন? কারণ, আল্লাহ এখানে সেইসব মানুষের সাথে কথা বলছেন যারা আল্লাহ-এর থেকে বহু দূরে চলে গেছে। এবং তিনি প্রথমেই তাদের বলছেন যে, দেখো আমি কাছেই, তুমি দূরে, আমি তোমার নিকটেই। এরপর তিনি তাদের বলেন, দেখো আমি জানি এই একটি দু'আ ছাড়া তোমাদের কাছে এই মুহুর্তে আর কিছুই নেই। ঠিক আছে। দাও, ঠিক আছে। দাও, আমাকে এই একটি দু'আই দাও। যদিও তুমি একজন দা'আ, শুধুই একজন আহ্বানকারী। তোমার জন্য আমার কাছে আর কোন বিবরণ নেই। আমি তোমাকে এখনো পর্যন্ত একজন সালেহ ডাকতে পারি না, মুসলিম ডাকতে পারি না, মু'মিন ডাকতে পারি না। আমি তোমাকে কিছুই ডাকতে পারি না। আমি শুধু তোমাকে ডাকছি একজন দা'আ, একজন আহ্বানকারী। সেটি কোন যোগ্যতাই নয়। শুধু তাই। তাই যথেষ্ট। শুধু আমাকে ডাকো। সুবানাল্লাহ! আল্লাহ এর পক্ষ থেকে কত বড় একটি আমন্ত্রণ!
আর এগোনোর আগে বলে রাখি, আমি বলেছিলাম, কখনো একজন বসের ৫০০ জন কর্মচারী থাকে। সে কি তাদের সকলের নাম জানে? না। বিশেষ করে সেই কর্মচারীকে যে তাকে পুরো জীবনে মাত্র কয়টি ই-মেইল পাঠিয়েছে? একটি ই-মেইল। কিভাবে সে তাকে মনে রাখবে? কর্মচারীটি যদি তাকে টেক্সট মেসেজ পাঠায়, তার তো ওর নাম সেইভ করা নেই। সে জানবে না নাম্বারটি কোথা থেকে এসেছে। আল্লাহ বলেননি, 'উজিবুদ্‌ দা'ওয়াতাদ্‌ দা'য়িন' তিনি বলেছেন, 'উজিবুদ্‌ দা'ওয়াতা আদ দা'য়ি'। এই শব্দটির মধ্যে থাকা আলিফ লাম, তাকে মা'রিফা বানিয়ে দেয়। অর্থাৎ,যথাযথ এবং নির্দিষ্ট করে দেয়। অন্যভাবে বলা যায়, যে কেউ আল্লাহকে ডাকে, আল্লাহ বলেননা যে কোন একজন শুধুই ডেকেছে। তিনি বলেন সেইজন আমাকে ডেকেছে, সেই নির্দিষ্ট মানুষটি। আপনি আল্লাহ এর কাছে নির্দিষ্ট। তিনি আপনাকে বিশেষভাবে, ব্যক্তিগতভাবে চিনেন। কোন ডাক্তার আপনার নাম মনে রাখতে পারবে না যদি তাকে দিনে ১০০টি রোগী দেখতে হয়। সে আপনার নাম জানবে না। সে এভাবে বলে চেষ্টা করবে, "মুহাম্মাদ, কেমন আছ? চলে এস।" হাহাহা। সবাই মুহাম্মাদ, অন্তত সম্ভাবনা তো রয়েছে। সে আপনাকে নামে চিনতে পারবে না, আপনি জানেন। আমি মানুষের সাথে মিশি, ওয়াল্লাহি, আমি তাদের সাথে মিশি। তখন আমি বোল্টামোরে ছিলাম। একজন বয়স্ক ব্যক্তি আমার কাছে এলেন। বললেন, "বেটা কেমন আছ? আমার মনে পড়ে, তুমি যখন খুব ছোট ছিলে, তখন মসজিদের ভিতর ছোটাছুটি করতে।" আমি তখন মনে মনে ভাবছি, হায় আমি তো টেক্সাস থেকে। কিন্তু মুখে বললাম, "জ্বী, আমারও মনে আছে।" আমি কথা চালিয়ে গেলাম। হাহাহা। তার আসলে মনে নাই। মানুষ মনে রাখে না। আল্লাহ আয্‌ওয়াজ্জাল নির্দিষ্টরূপে পর্যন্ত চিনেন। আপনি হয়তো বলবেন, কোম্পানির সি.ই.ও কিভাবে আমার নাম জানবে। আমি তো শুধুই একজন নিরাপত্তাকর্মী। তার অবস্থান কত উঁচুতে আর আমি কত নিচু পর্যায়ে। কিভাবে সে আমার নাম জানবে? কিভাবে একজন প্রেসিডেন্ট তার দেশের একজন অধিবাসীকে চিনবে? কিভাবে সেটি সম্ভব! আপনারা সবাই যদি আমার কাছে এসে নিজেদের নাম বলেন, আমার কি মনে থাকবে? আমি জানি না। আমি জানি না। কারো কাছে যদি আমার ফোন নাম্বার থাকে,(প্লিজ আমার ফোন নাম্বার নিবেন না), কিন্তু যদি থেকে থাকে যদি আমাকে একটি এস.এম.এস পাঠান। আমার কাছে নাম্বারটি সেইভ করা নেই। আমি কি জানবো কে এটি পাঠিয়েছে? আমি জানব না কে পাঠিয়েছে। আমার কাছে শুধু একটি নামার রয়েছে। কোন নাম নেই। আমার কাছে কিছুই নেই। যখন আপনি আল্লাহকে ডাকেন, আল্লাহ বিশেষভাবে জানেন যে এক্স্যাক্টলি আপনি কে। এবং তিনি তৎক্ষণাৎ আপনাকে সাড়া দিতে চান। তিনি আপনার সাথে তখনই নতুন সম্পর্ক শুরু করতে চান। গতকাল যা হয়েছে, তা হয়ে গেছে। আজ থেকে শুরু করুন। আপনি আজই মুসলিম হয়ে উঠুন। আজ থেকেই আল্লাহকে ডাকতে থাকুন। 'উজিবুদ দা'ওয়াতাদ্‌দা'য়ি।'

0 comments
Labels: , , ,

কাব বিন আশরাফসহ যাদের অশ্লিল কবিতা লেখার অপরাধে মৃত্যুদন্ড হয়েছিল


কোপাকুপি নিয়ে কিছু প্রমানসহ একটা লেখা লিখলাম। প্রতিটা প্রমান দিলাম কার জীবনী থেকে? হযরত মুহাম্মদ (সঃ), দি আল্টিমেট মুসলিম/ইসলামিক স্কলার অন আর্থ। দিনের আলোর মতই বুঝিয়ে দিলাম ইসলামের নামে আর যাই হোক কোপাকুপি নিষিদ্ধ। কিন্তু অনেকেই আমার কথা মানতে নারাজ।
কেউ কেউ বলছেন, ওদের অশ্লীলতা এত প্রকট যে মেজাজ ঠিক রাখাটাই দায়।


সহিহ বাত। অবশ্যই মেজাজ খারাপ হবে। আমার মা বাপকে নিয়ে কেউ ফালতু কথা বললে ঘুষায়ে দাঁত ফেলে দিতে ইচ্ছে করে। আমার দেশকে নিয়ে কেউ উল্টাপাল্টা কথা বললে আমি মুখ দিয়ে মেশিন গান ছোটাই। ক্রিকেটারদের অপমান করাটাই যা আমরা মেনে নিতে পারিনা সেখানে আল্লাহ এবং নবীর (সঃ) স্থানতো আরও অনেক অনেক উপরে। অবশ্যই রাগ করা উচিৎ। আমরাতো রোবট না - আমাদের ইমোশন আছে। তবে সেই আল্লাহ এবং নবীই (সঃ) শিক্ষা দিয়েছেন রাগকে কন্ট্রোল করতে। ঠিক যেমনটা সুন্দরী মেয়ে দেখে আমার মনে প্রেম জাগে, কিন্তু তার মানে এই না যে আমি গিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করে ফেলবো। নিজের মনকে কন্ট্রোল করাটাই ইসলাম। নাহলেতো আমার আর জংলি জানোয়ারের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকেনা। 


অনেকেই আমাকে কিছু নাম দিয়ে বলছেন "এর সাথে তাহলে এমনটা হয়েছে কেন?"
তাঁদের আলাদা আলাদা করে বারবার একই প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে আজকের দিনটাই শেষ হয়ে গেল। এরচেয়ে ভাল একটা আস্ত পোস্ট দিয়ে দেই। কারও উত্তরের প্রয়োজন হলে সরাসরি আস্ত পোস্ট কপি পেস্ট করে দিবেন। যদি তাঁদের সামর্থ্য থাকে, তাহলে আমার উল্লেখ করা ঘটনাগুলো মিথ্যা প্রমান করে দেখাক। ঘটনাগুলো ডক্টর ইয়াসির ক্বাদী এবং ওস্তাদ নোমান আলী খানের মুখ থেকে শোনা। এই মুহূর্তে বিশ্বখ্যাত দুই ইসলামিক স্কলার।
তাহলে শুরু করি? 


বিসমিল্লাহ। 

এক নম্বর নাম: কাব বিন আশরাফ। লোকটাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছিল। বিজ্ঞ জনের অভিমত এই কবি (তখনকার যুগের ব্লগার) ইসলাম, নবীজি (সঃ) ও মুসলিমদের বিশেষ করে মুসলিম নারীদের জড়িয়ে অশ্লীল থেকে অশ্লীলতম কবিতা (ব্লগ) রচনা করতো। একারনেই তাকে হত্যা করা হয়েছে।
এই কাব বিন আশরাফ নিয়ে কথা তোলার আগে আমাকে বলুন সে কে ছিল? মানে তার গোত্র কী? বনু নাদির। জ্বী, এই সেই খন্দকের যুদ্ধের বিশ্বাস ঘাতক (আধুনিক টার্ম হবে "রাজাকার," মদিনাবাসী হয়েও মদিনা সনদ ভঙ্গ করে হানাদার কুরাইশদের সাহায্য করেছে যুদ্ধে - যদি সফল হতো মুসলিমরা এক ঝটকাতেই সব নিঃশেষ হয়ে যেত) বনু নাদির গোত্র। কাবকে শুধু একাই নয়, ওদের আস্ত গোত্রের যুদ্ধ করতে সমর্থ্য সব পুরুষদের মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছিল। আমাদের রাজাকার, আল বদর, আল শামসকেও সময় মতন এইভাবেই ঝুলিয়ে দিলে আজকে দেশটা অনেক সুন্দর হতো। নবীজির (সঃ) জীবনী থেকে আমরা কোন শিক্ষাই নিতে পারিনা, আফসোস।


যাই হোক, তা এই কাব বিন আশরাফ অশ্লীল, উস্কানিমূলক কবিতা লিখতো ঠিকই, কিন্তু স্রেফ কবিতা ছাড়াও এই একই লোক নবীজির (সঃ) খাবারে বিষ মিশিয়ে দিয়েছিল। বদর যুদ্ধের পর আবু সুফিয়ানের (রাঃ) বাড়িতে গিয়ে ষড়যন্ত্র করেছিল তাঁকে হত্যার ব্যপারে। এখন আপনিই বলেন, যেকোন রাষ্ট্রে, যদি কেউ তার প্রধাণমন্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা করে, attempt নিতে গিয়ে ধরা পড়ে - তবে তার শাস্তি কী হওয়া উচিৎ?


ঐতিহাসিক উদাহরণ আমাদের দেশেই আছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা চলছে জেনেও চুপ করে ছিলেন, হত্যাকারীরা এর আগেও অভ্যুন্থান ঘটাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছিল এবং তিনি তাদের মাফও করে দিয়েছিলেন, বলেছিলেন "বাংলার মানুষ আমাকে মারবে না।"
- ফলাফল "অগাস্ট ট্রাজেডি।" 


রাষ্ট্র পরিচালনার কিছু রুলস আছে। কখনও কখনও শাসককে কঠোর হতেই হয়, নাহলে কিছুই লাইনে থাকেনা।
এখন আসি আরেকটা নামে। 


এই লোকটার নাম অনেকেই জানেনা, কিন্তু ঘটনা ঠিকই জানেন। চলুন আগে ঘটনা জেনে নেই।
মক্কা বিজয়ের দিন ছয় মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামির (দুইজন বাদে যাদের সবাইকেই ক্ষমা করে দেয়া হয়) একজন কাবার গিলাফ জড়িয়ে ধরে মুসলমানদের কাছে ক্ষমা চাইছিল। সাহাবীরা এই নাটকীয় ঘটনায় দ্বিধান্বিত হয়ে পড়েন। তাঁরা নবীজির (সঃ) কাছে যান, ঘটনা খুলে বলেন, এবং নবীজি (সঃ) তারপরেও মৃত্যুদন্ড ক্ষমা করেন না। 


লোকটা কী করেছিল? সে অশ্লীল কবিতা লিখতো (ব্লগিং) এবং সে দুইজন দাসী নিয়োগ করেছিল যারা ইসলাম, নবীজি (সঃ) ও তাঁদের সাহাবীদের নিয়ে অশ্লীল কবিতা লিখতো।
ব্যস, এই পর্যন্তই সবাই পড়েন। আর বেশি পড়তে চান না। আরেকটু পেছনে যাবার ধৈর্য্য কই?


যাই হোক, যাকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তার নাম আবদাল্লাহ ইবন খাতাল (কোথাও কোথাও বলা হয়েছে আবদাল্লাহ ইবনে আখতাল, যেই নামেই ডাকা হোক সে একই ব্যক্তি)। কবিতা রচনার আগে এই লোকটা প্রথমে মক্কা থেকে মদিনায় গিয়ে হিজরত করে মুসলিম হয়েছিল। নবীজি (সঃ) তাকে এবং আরেকজন সাহাবীকে একটি সফরে পাঠান। এই বিশ্বাসঘাতক সেই সাহাবীকে হত্যা করে তাঁর মালপত্র লুট করে মক্কা পালিয়ে এসে ইসলামের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা চালায়। তারপর দুইটা দাসী কিনে ওদের দিয়ে মুসলিমদের ব্যঙ্গ করে কবিতা লেখায়। মাথায় রাখুন, সেই লোকটা কবিতা লিখার চেয়েও বড় অপরাধ করেছিল, সাহাবী হত্যা। একটা মানুষ হত্যা সহজ অপরাধ না।


 কুরআন বলে, "যে একজন নিরপরাধ মানুষ হত্যা করলো, সে যেন সমস্ত মানব জাতিকে হত্যা করলো।"
এবং লিস্টের তৃতীয় নাম তার দুই দাসীর (ফারতানা এবং সারা), যাদেরকেও মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। তবে কেবল একজনের বিরুদ্ধে সেটা কার্যকর করা হয় (ফারতানা)। দ্বিতীয়জনকে (সারা) ছেড়ে দেয়া হলো কেন? কেন? সে শুধু বলল "Sorry."
তারমানে প্রথমজনও যদি দুঃখিত হতো তাকেও মাফ করা হতো।


তারমানে আবদাল্লাহকেও মাফ করা হতো যদি না সে মানব হত্যার মতন জঘন্য পাপে পাপী হতো।
লজিক মিলছে? বাকি সত্য আল্লাহ জানেন। ভুল হলে তিনি মাফ করুন। আর সত্য হলে তিনি সবাইকে জ্ঞানী করুন। জোরে বলেন আমীন!


শেষ করি, কা'ব বিন আশরাফ থেকে শুরু করে দাসী ফারতানা পর্যন্ত উদাহরণগুলো যারা বারবার ব্যবহার করছেন, তাঁদের জ্ঞাতার্থে হযরত আয়েশার (রাঃ) একটি সহিহ হাদিস বয়ান করে, নবীজির (সঃ) জীবন সঙ্গিনী এবং সবচেয়ে বেশি হাদিস বয়ানকারী মা আয়েশা (রাঃ) বলেছেন, "নবীজি (সঃ) জীবনেও নিজের ব্যক্তিগত প্রতিশোধ নিতে কাউকে শাস্তি দেননি।"
শুনেছেন? আবার শোনেন, তিনি, কখনও, নিজের ব্যক্তিগত প্রতিশোধ নিতে, কাউকে, শাস্তি দেননি। জীবনেও না।
এমনি এমনি কাউকে রাহমাতাল্লিল আলামিন ডাকা হয়না। 


এখন কথাটা মাথায় ভাল মতন ঢুকিয়ে নিয়ে বাড়িতে গিয়ে ঘুমান। কোন অশ্লীল ব্লগারের মাথা কাঁটার আগে ভাল করে নবীজির(সঃ) জীবনী, সাহাবীদের জীবনী, এবং অবশ্যই অবশ্যই আল কুরআনের বাণীগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ুন। 


তারপরে আপনার যদি কাউকে (যেকোন আল্লাহর বান্দা, হিন্দু হোক, মুসলিম হোক কিংবা নাস্তিক) গালি দিয়ে মনে মনে অনুতাপ না হয়, ভয় না হয় যে "আমি গালিটা না দিয়ে আরেকটু ভালভাবে বুঝালেও পারতাম, গালির জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে" তাহলেও বুঝবেন আপনার ঈমান পোক্ত হয়নি।
খাঁটি মুসলিম গলা চড়িয়েও কথা বলেনা। এটাই ইসলামের শিক্ষা।


(সবচেয়ে বড় কন্ডিশনটাই মূল পোস্টে বলতে ভুলে গিয়েছিলাম, যে কারনে অনেক কনফিউশন তৈরী হচ্ছে। "ফারতানাকে কী তাহলে 'অশ্লীল কবিতা' লেখার অপরাধে মৃত্যুদন্ড দেয়া হলো? তাহলেতো ঠিকই আছে।"


ব্যপারটা মাথায় রাখতে হবে, তখনকার "কবিতা" মানে আজকের যুগের ফুল লতা পাতা ভালবাসা নিয়ে লেখা কবিতা না। তখনকার প্রোপাগান্ডাই হতো কবিতার মাধ্যমে। এবং ইসলামের বিরুদ্ধে কবিতা মানে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কবিতা। তার মানে "ইসলামের বিরুদ্ধে অশ্লীল কবিতা" লেখার শাস্তি দেয়ার আগে প্রধান কন্ডিশন হচ্ছে রাষ্ট্রকে ইসলামী রাষ্ট্র হতে হবে। কেবল রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম হলেই হবেনা, আইনও শরিয়া আইন হবে। 


কাবকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছিল মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম হবার পর। মক্কা বিজয়ের পরেই বাকিদেরও শাস্তি দেয়া হয়েছিল। আগে কিন্তু নয়। যেকোন আধুনিক রাষ্ট্রেও স্পাইদের ডেথ পেনাল্টি দেয়া হয়। মাসুদ রানা যারা জীবনে একবারও পড়েছেন, তাঁরা নিশ্চই বুঝেন। 


এখানেই কথা থেকে যায় - বাংলাদেশতো ইসলামী রাষ্ট্র না। শেখ হাসিনাতো খলিফা না। আমরা শরিয়া আইনে সংবিধান গঠন করিনাই।
কাজেই এই কোপাকুপিগুলো "খুন।" এদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনেই ব্যবস্থা নিতে হবে। )




Written by: মঞ্জুর চৌধুরী 

1 comments
Labels: , , ,

সন্তানকে কীভাবে ইসলামের শিক্ষা দিবেন (১ম পর্ব)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। ‘কেমন আছেন?’ 

(২ঃ১৩২) وَوَصَّىٰ بِهَا إِبْرَاهِيمُ بَنِيهِ وَيَعْقُوبُ يَا بَنِيَّ إِنَّ اللَّهَ اصْطَفَىٰ لَكُمُ الدِّينَ فَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُسْلِم ইনশাআল্লাহ আজকের সংক্ষিপ্ত আলোচনার শুরুতে আমি প্রথমেই ধন্যবাদ জানাতে চাই আমাকে এখানে আমন্ত্রণ জানানোর জন্যে। এখানে আসতে পেরে আমার বেশ ভালো লাগছে।আল্লাহ আযযা ওয়াজাল এই কমিউনিটি কে বরকত দান করুন...এখানকার মসজিদটিতে সব সময় মানুষের উপস্থিতি বজায় থাকুক...বিশেষ করে ফজর এবং ইশার সময়টিতে...এবং আল্লাহ যেন মসজিদটিতে তরুণদের উপস্থিতি দিয়ে ভরে তুলুক...সকাল আর সন্ধ্যায় । আমীন ইয়া রব! আমি আজকে আপনাদেরকে যা বলতে চাই তা হল আমি কিছু আয়াত সম্পর্কে ব্যাখ্যা করতে চাই যার উপর আমি আগেও দুরুস দিয়েছি কিন্তু আজকে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে তা আপনাদের কাছে উপস্থাপন করার চেষ্টা করব। এছাড়াও আমি আসলে শুরুতে... কুরআনের প্রেক্ষাপটের বাইরে থেকে কথা বলব।আর তা হলো...

আমাদের সন্তানদের প্রতি যে সচেতনতা কাজ করে এটা আসলে আমাদের দ্বীনের ভিত্তি। ব্যাপারটা কোনো নতুন কিছু না যা আমরা মাত্র উপলব্ধি করতে শুরু করেছি, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যে যে চিন্তা কাজ করে এটা আমরা পেয়েছি আমাদের পিতা ইব্রাহীম (আ) এর কাছ থেকে। আসলে তাঁরও আগে আমরা প্রথম যেই সচেতন বাবার কথা জানতে পেরেছি তিনি ছিলেন নুহ (আ)। নুহ (আ) তাঁর সন্তানের ব্যাপারে বেশ উদ্বিগ্ন ছিলেন।তিনি আল্লাহ আযযা ওয়াজাল এর কাছে তাঁর সন্তানকে উদ্ধারের জন্যে প্রার্থনা করেছিলেন। তো আমাদের সন্তানের দ্বীনি বিষয়ে আমাদের সচেতনতা এই ধর্মের বহু পুরানো ভিত্তি। এই ধর্মের এটি একটি মৌলিক অংশ। আর আল্লাহ আযযা ওয়াজাল আমাদের একটা বিষয় শিখাতে চেয়েছেন, আমাদের বেশ কয়েকবার এমন নবীদের ব্যাপারে জানিয়ে যাঁদের নিজ সন্তানেরা সমস্যাগ্রস্ত ছিল। অনেকবার! ইব্রাহীম (আ) কে আল্লাহ অত্যন্ত নেককার দুজন সন্তান দিয়েছিলেন… তাঁকে দিয়েছিলেন ইসমাঈল এবং ইসহাক। তিনি দুজন অপূর্ব সন্তান পেয়েছিলেন...কিন্তু নুহ (আ) ...তেমন পাননি।


 ইয়াকূব (আ) … কয়েকজন অনুগত সন্তান আবার কয়েকজন সমস্যাগ্রস্ত। তবে বেশিরভাগই অবাধ্য ছিলেন, তাই না? তার মানে আমাদের নবীদের মধ্যেই এমন কয়েকজন আছেন যাঁরা সন্তানের ব্যাপারে দুশ্চিন্তায় ছিলেন। আর এ কথাটা মাথায় রাখা জরুরি কারণ যদি নবীদের তাঁদের সন্তানের ব্যাপারে সমস্যায় পড়তে হয়, তাহলে আপনি, আমি... আমরা যতই চেষ্টা করি না কেন… আমরা সন্তানের ব্যাপারে আমাদের সমস্যা কে এড়িয়ে যেতে পারব না! এটা আল্লাহর ক্বদরেরই অংশ।আল্লাহ আমাদের কয়েকজনকে অনুগত সন্তান দান করবেন, কিংবা আমাদের কিছু সন্তান হবে অনুগত আবার কিছু সন্তান আমাদের জন্যে পরীক্ষাস্বরূপ হবে।আর আমাদের সব ধরনের সন্তানকেই বড় করে তুলতে হবে।এটা আমাদের দ্বীনেরই একটা অংশ, আমাদের জীবনের অংশ।

দুটি বাচ্চা কখনোই একই রকমের হবে না।কেবল একটা সূত্র প্রয়োগ করে আপনার সব বাচ্চাকে বড় করতে পারবেন না।উদাহরণস্বরূপ ইয়াকূব (আ) এর কথাই ধরুন, আমরা এটা বিশ্বাস করি না যে তিনি ইউসূফ (আ) কে বেশি স্নেহ করেছিলেন এবং অন্যদের প্রতি কম যত্ন নিয়েছিলেন তাই তারা অমন আচরণ করেছিলো।তিনি একজন নবী ছিলেন।অবশ্যই একজন নবীর অন্যতম প্রধান কাজ হল ন্যায়নিষ্ঠ ভাবে জীবনযাপন করা।আর আপনি যদি আপনার এক সন্তানের প্রতি স্নেহশীল হন আর অন্য সন্তানের প্রতি তা না হন তাহলে তাতে সুবিচার করা হল না।আমরা ইয়াকূব (আ) এর কাছে এমনটা আশা করি না।অর্থাৎ বাবা হিসেবে যতটুকু করা সম্ভব ছিল তিনি করেছিলেন কিন্তু তারপরেও তাঁর সন্তানেরা তাঁকে পরীক্ষায় ফেলেছিলেন।আলহামদুলিল্লাহ! শেষে তারাও তাওবা করেছিলেন...আর এটা তাঁর প্রতি আল্লাহর উপহার। কিন্তু যেমনটা আমি বলেছিলাম নূহ (আ) এর ক্ষেত্রে তাঁর ছেলে শেষ পর্যন্ত তাওবা করেনি।আবার তাঁরা নবী ছিলেন দেখে আপনি হয়ত ভাবতে পারেন যে…কারও খুব ভাল চাকরি থাকলে তাতে বাড়তি সুযোগ সুবিধা থাকে।যেমন আপনাদের কেউ কেউ খুব ভালো চাকরি করেন তাই আপনার পুরো পরিবারের জন্যে আপনি হেলথ ইন্স্যুরেন্স পাচ্ছেন!তাই না? একজন নবীর চাকরি তো বেশ ভালো পদের...তিনি আল্লাহর কর্মচারী!এখানে তো তিনি কিছু সুযোগ সুবিধা পেতে পারেন… ‘


আমি অন্তত আমার পরিবারের ব্যাপারে নিশ্চিন্ত থাকতে পারি।’ কোন নবীকেই তাঁর পরিবারের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি...না তাঁর স্ত্রী...না তাঁর সন্তান।এমনকি আমাদের নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ক্ষেত্রে...একটা অভাবনীয় হাদীসে আপনারা দেখবেন যে তিনি যখন তাঁর সন্তানের সঙ্গে কথা বলছেন...কথা বলছেন উম্মুল মু’মিনীন ফাতিমা (রা)...ফাতিমা তুয যাহ্‌রা (রা) এর সঙ্গে, তিনি বলছেনঃ “ ফাতিমা, মুহাম্মাদের কন্যা! আল্লাহর ব্যাপারে সতর্ক হও, আল্লাহর ব্যাপারে সাবধান থাকো।কারণ আল্লাহর সামনে আমি তোমাকে কোন সাহায্য করতে পারব না, তোমার উপরেও আমার কোন অধিকার থাকবে না!” তিনি এই কথা বলছেন নিজের মেয়েকে! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অন্য কথায় তিনি আমাদের খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিছু শিখাতে চাইছেন।কেবল আমরা মুসলিম হয়েছি বলে, আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করছি বলে...আমরা এমন সন্দেহ পোষণ করতে পারিনা যে আমাদের নবীজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার চেয়ে কোন অংশে কম করেছেন। তিনি ভবিষ্যতের সকল বাবাদের জন্যে আদর্শ।বিশেষ করে কন্যা সন্তানের বাবাদের জন্যে।

আমরা যারা এখানে বসে আছি এবং আমাদের মধ্যে যাদের মেয়ে আছে আমরা তো অনুগৃহীত… আমরা সম্মানিত নবীজীর (স) সুন্নাহকে বহাল রাখতে পেরে।কারণ তিনিও ছিলেন কন্যা সন্তানের বাবা।তাঁর ছেলেও হয়েছিল কিন্তু তারা খুব অল্প বয়সেই মারা গিয়েছিল।আল্লাহ তাঁকে একাধিক মেয়ে সন্তান উপহার দিয়েছিলেন এবং তাঁদের লালন পালনের দায়িত্ব উপভোগ করতে দিয়েছেন।এটা এমন একটা দায়িত্ব যার জন্যে আমাদের সম্মানিত বোধ করা উচিত।এ কারণে মেয়ে সন্তান হওয়ার ব্যাপারে আমাদের চিন্তা ধারণা বদলে গিয়েছে।ইসলামের পূর্বে...উদাহরণস্বরূপ ইণ্ডিয়াতে মেয়ে সন্তান হওয়ার যে কালচার...ইসলামের পূর্বে... এমনকি আরব দেশেও যখন আপনার মেয়ে সন্তান হত আপনি আপনার চেহারা বিকৃত করতেনঃ এহ! এখন আমি সমাজকে মুখ দেখাব কিভাবে। 


এই যুগে এসেও মুসলিম সমাজে...আপনাদের কারও কারও পরিবারেই… আপনি আপনার স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে আছেন।সে প্রায় মরেই যাচ্ছিলো সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে। কিন্তু সন্তান জন্মের সঙ্গে সঙ্গে আপনার মা আপনাকে টেক্সট করলেনঃ ‘ভালো খবর তো?’ এ কথার মানে কি?তিনি আসলে জিজ্ঞেস করেছেন ছেলে হয়েছে কিনা।এরপর আপনি কোনো উত্তর না দিলে তিনি আপনাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেনঃ অসুবিধা নেই, এর পরের বার হবে ইনশাআল্লাহ।যেন মেয়ে হওয়ার ব্যাপারটা খুবই দুঃখজনক। সুবহানাল্লাহ।কত নিচে নেমে গিয়েছি আমরা।আল্লাহ আসলে সেসব মানুষের ব্যাপারে কুরআনে অভিযোগ করেছেন যারা তাদের কন্যা সন্তানকে মর্যাদা দেয় না।যখন মেয়ে জন্ম নেয়... তার মুখ কালো হয়ে যায়।যেন কালোমেঘ তার মুখকে ঢেকে রেখেছে আর সে হতাশায় ডুবে ভাবছে আমার এই মাত্র একটা মেয়ে হয়েছে। সুবহানাল্লাহ। তো আমাদের সন্তানদের ব্যাপারে দুশ্চিন্তা করা নিয়ে কথা বলার আগে আমাদের প্রথমে ভাবা উচিত বাবা-মা হিসেবে আমরা কতটা যোগ্য।এ বিষয়টা প্রথমে খেয়ালে আনতে হবে।আর এটা আসলে বেশ বড় একটা সমস্যা।তবে এটা আমার সূচনা নয়।আমি যা বলে শুরু করতে চাচ্ছিলাম যা আমি আগে বলছিলাম যে,সন্তানের প্রতি সচেতনতা আমাদের দ্বীনেরই ভিত্তি।এই দ্বীনের একটা মৌলিক অংশ।আর এটা এমন একটা বিষয় যাতে প্রজন্মান্তরে আমরা যথেষ্ট সফল।আলহামদুলিল্লাহ।সন্তান বড় করার কাজে আমরা বেশ ভালো... যুগ যুগ ধরে।অবশ্যই পৃথিবী অনেক বদলে গিয়েছে নবীজীর (স) এর যুগের পরে।কিন্তু সন্তান লালন পালনে মুসলিমদের সফলতা অন্য কিছুর তুলনায় অনেক ভালো ছিল...বর্তমান সময়ের আগ পর্যন্ত।

আজকের দুনিয়া এতটা আকস্মিকভাবে ভাবে বদলে যাচ্ছে যে, এটা শুধু সরকার কিভাবে পরিচালিত হবে তাতে প্রভাব রাখছে না, এটা আমাদের অর্থনীতিতে, কিভাবে এক দেশ অন্য দেশের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখছে, কিভাবে ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠছে শুধু তাতেই প্রভাব বিস্তার করছে না বরং এটা আমাদের পরিবারগুলোকেও প্রভাবিত করছে।শুধু মুসলিম পরিবার নয়...সকল পরিবার।বর্তমান বিশ্ব নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে।আমাদের পরিবারের এখন যেমন অবস্থা দেখতে পাচ্ছি এর আগে কখনো এমনটা ছিলো না।সন্তানদের এখন যেভাবে বড় করা হচ্ছে ইতিহাসের আর কোন যুগে কিংবা অন্য কোন সংস্কৃতিতে এমন আকার ধারণ করেনি।শুধু মুসলিম সংস্কৃতির ক্ষেত্রে নয়, সবার ক্ষেত্রেই।বিশ্বায়ন আর যোগাযোগ ব্যবস্থার বৃহৎ উন্নয়নের কারণে...তার উপর ভোগবাদের চরম পর্যায় সৃষ্টি হওয়ায়...আমি একে পুঁজিবাদ বলি না বরং বলি ভোগবাদ...আমরা পণ্যের আসক্ত ভোক্তায় পরিণত হয়েছি। আর এই মানসিকতা আমাদের ঘরের ভিতরেও প্রবেশ করে ফেলেছে।আমি একটা ছোট্ট উদাহরণ দিচ্ছি আমি যা বলছি সে ব্যাপারে।আপনাদের বাচ্চারা…যেহেতু আপনারা অনেকেই এখানে অভিভাবক...আপনাদের কাছে কি নিয়ে সবচেয়ে বেশি আবদার করে বলুন তো? তারা কিসের জন্যে সব সময় বায়না ধরে বসে থাকে?



(ক্যান্ডি!)
ক্যান্ডি? মা শা আল্লাহ, সত্যিই আপনার তো বেশ সরলমনা বাচ্চাকাচ্চা আছে, তারা আপনার কাছে কেবল ক্যান্ডি চেয়েছে!
(Nintendo!)
আচ্ছা...আরও বলতে থাকুন।
(আইপড!)
আইপড, প্লে স্টেশন…
(গাড়ি!)
গাড়ি? তারা বড় হয়ে গিয়েছে?
খেলনা… অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা এসব আইপডের খবর কোথায় পায়? তারা কি স্বপ্নে দেখতে পায়, যেমন ইউসূফ (আ) দেখেছিলেন, এগারো টা তারা আর চাঁদ।তো তারা কি স্বপ্নে দেখে ফেলেছে অ্যাপেল প্রোডাক্ট? যেন, ‘আব্বু, আমি দেখেছি যে একটা আপেল একটা ফোনের উপরে...এই স্বপ্নের মানে কি?’ না, না! তারা কোথায় দেখেছে আইফোন?হয় তাদের বন্ধুর কাছে এসব আছে অথবা টিভিতে দেখেছে...তারা যখন দেখল তার অন্য বন্ধুদের এসব আছে তারা আপনাদের বলে ‘আমি ওরকম স্নিকার চাই’ ‘আমি ওরকম শার্ট চাই’ ‘আমি ওরকম খেলনা চাই’।এসমস্ত খেলনার আইডিয়া তারা কোথায় পায়?এসবের ইলহাম কোথা থেকে আসে? এগুলো এসেছে মিডিয়া থেকে।আমরা আমাদের বাচ্চাদের সামনে মিডিয়ার জগতটা উন্মুক্ত করে দেই, আর এই মিডিয়া, বাচ্চাদেরকে তারা মূলত এসব খেলনার জন্যে করজোড় বায়না করতে শিখায় যেন আমরা তাদের এসমস্ত খেলনা কিনে দেই...আর তখন আমরা এগুলো কিনি।তাছাড়া বাচ্চারাই যে এসবের একমাত্র শিকার তা কিন্তু নয়, আমরাও এর অন্তর্ভূক্ত।

আমরা যেসব ব্র্যান্ড এর জামা কাপড় পরি...আপনি আসলে নিজেকে খুব high class মানুষ ভাবতে শুরু করেন হঠাৎ করেই, যখন আপনি একটা দামি ঘড়ি পরেন।হঠাৎ যেন আপনার মনে হতে থাকে সব মানুষের ভিড়ে আপনার মান-মর্যাদা বেশি।যেই মুহূর্তে আপনি অ্যাপেল স্টোর থেকে একটা আইফোন হাতে নিয়ে বেরিয়ে আসেন হঠাৎ যেন আপনার নিজেকে খুব handsome লাগে!...কিছু একটা তো হয়েছে...আমি বুঝতে পারছি না আমি কিভাবে এত cool হয়ে গেলাম, এটা just হয়ে গেলো! আমরা আসলে ভেবে নিই মানুষ হিসেবে আমাদের মর্যাদা বেড়ে গিয়েছে...এসব পণ্যের ক্রেতা হয়েছি বলে। আর আপনি যদি কোনো ব্র্যান্ড এর কাপড় না পরেন, অথবা ওই ফোনটা যদি আপনার না থাকে কিংবা আপনার এই খেলনাটা নেই অথবা ওই খেলনা টা নেই...তাহলে আপনি মূল্যহীন।কোনো কারণে আপনি অন্যদের সমমান সম্পন্ন নন।অন্যেরা আপনার চেয়ে ভালো।শুধু এই কারণে যে তাদের হাতে যেটা আছে সেটা আপনারটার থেকে ভালো।তো আমরা, মুসলিমরা, আমারা কেমন যেন অচেতন ভোক্তায় পরিণত হয়ে গিয়েছি...এমনটাই আমাদের অবস্থা।

আমরা এই সমাজে সন্তান লালনের কথা বলার আগে আমাদের এটা বুঝতে হবে যে আমাদের চারপাশের দুনিয়াতে কি হচ্ছে।আমাদের সকলের সঙ্গে কি হচ্ছে আর সারা দুনিয়াতে কি হচ্ছে।কার্যকর উপায়ে সন্তান লালনের কথা ভাবার আগে আমাদের এসব ব্যাপার ভেবে দেখতে হবে।এটা বেশ বড় একটা সমস্যা।দ্বিতীয় বড় সমস্যাটা হল আপনার কাছে সাফল্যের মানে কি, কিসে আপনার মর্যাদা বাড়ায়। এখন তো বাচ্চাদের এই মানসিকতা দিয়ে বড় করা হচ্ছে যে তাদের মূল্য এসব প্রোডাক্ট দ্বারা নির্ধারিত হয়...যে ব্র্যান্ডের কাপড় পরছেন, যে বাসায় থাকছেন, যেই গাড়িটা চালিয়ে তাকে স্কুলে দিয়ে আসছেন, যে ব্র্যান্ডের ব্যাগ কাঁধে নিচ্ছেন...এসব ব্যাপার।এগুলোই আপনার মূল্য যাচাই করছে।আর এর সাথে যোগ হয়েছে আরও একটা সমস্যাঃ ‘জীবনে সফল হওয়া বলতে কী বুঝায়?’

(ইনশা আল্লাহ চলবে...)

0 comments
Labels: , ,

আল্লাহর আদেশ নিষেধের ব্যাপারে একজন মুসলিমের দৃষ্টিভঙ্গি

মুনাফিকেরা ইসলাম থেকে এই দুই ভাবে সরে যাবে।একটি হল একেবারেই পরিপূর্ণভাবে ইসলাম ত্যাগ করা । একবার মুসলিম হবার পর আবার কাফির হয়ে গেল। কিন্তু আরও একভাবে ইসলাম ত্যাগ করা যায়। সেটা হল মুখে মুখে তারা ঠিকই বলল যে তারা ইসলামেই আছে। কারণ ইসলাম একেবারেই ত্যাগ করার কিছু সামাজিক প্রভাব আছে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে আর মনের ভিতরে কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। এখন সে এমন একজন হয়ে যায় যে নিজে নিজেই বেছে নেয় দ্বীনের কোন কোন জিনিস সে মেনে নিবে আর কোনটা সে নিবে না। আর এটাই এই সুরার কেন্দ্রীয় বাণী। যে তুমি দরাদরি করার মত অবস্থানে নেই। যে কিছু ব্যাপার তুমি মেনে নিবে আর কিছু তুমি মেনে নিবে না। আমার ভালো লাগছে না, তাই এটা আমি মানবো না। এই ধারনাটি দ্বীনের একটি কেন্দ্রীয় বিষয়।

এই তো গতকাল আমি ওয়াশিংটনের একটি ইয়ুথ গ্রুপের সঙ্গে কথা বলছিলাম, একটা প্রশ্ন চলে আসে যে, এক বোন প্রশ্ন করে যে, আমি ইসলামের সব কিছুই পছন্দ করি, হিজাব বাদে। আমার মনে হয় এটা ছেলেরা যাতে আমাদের দিকে না তাকায় এই জন্যে। তো আমি এটার মাঝে আমার জন্য কোন যুক্তি দেখিনা। এখন হিজাবের সামাজিক উপকারিতা, বা এটা কিভাবে মেয়েদের সম্মান করছে এই যুক্তিতে না যাই প্রথমেই। তাহলে ইতিমধ্যেই আমরা ভুল দিকে আগাচ্ছি। আমাদের একটু থেমে আরও মৌলিক প্রশ্ন করতে হবে। ইব্রাহীম (আ) কে জিজ্ঞেস করা যাক, উনিও ইসলামকে ভালবাসতেন। কিন্তু আল্লাহ পাক একটি ছোট আদেশ দেন তাকে যে তুমি একটি মরুভূমিতে যাও আর সেখানে তোমার পরিবারকে রেখে আসো। তিনি তো বলেননি, আমি তো ইসলামকে ভালোবাসি কিন্তু এই মরুভূমিতে আমার পরিবারকে রেখে আসা, এটা ঠিক ভালো লাগছে না। এরপর তুমি আগুনে ঝাপ দাও। তিনি তো বলেননি আমি ইসলামের সবই ভালোবাসি কিন্তু এই আগুনে ঝাপ দেয়াটা !! আমার কাছ থেকে অনেক বেশি আশা করা হচ্ছে। তা তিনি করেননি। এরপর আল্লাহ পাক বলছেন নিজের ছেলের গলায় ছুরি বসাও। যাও। তিনি তো বলেননি আমি ইসলাম ভালোবাসি, কিন্তু আমি আমার ছেলেকেও ভালোবাসি। আপনি কি আমাকে কোন যুক্তি দেখাতে পারবেন এই ব্যাপারে? আপনি কি আমাকে এর সামাজিক উপকারিতা বা আরও কোনও যুক্তি দেখাতে পারেন কেন আমার এটা করা উচিত।

اذ قال له ربه اسلم قال اسلمت لرب العالمين
স্মরণ কর, যখন তাকে তার পালনকর্তা বললেনঃ অনুগত হও। সে বললঃ আমি বিশ্বপালকের অনুগত হলাম। (বাকারা; ১৩১)


এই শিক্ষা আমাদের আল্লাহ পাক দিয়েছেন তার যথেষ্ট কারণ আছে। যখনই আল্লাহ পাক বলেছেন, নিজেকে আত্ম সমর্পণ কর, তিনি বলেছেন আমি নিজেকে সমর্পণ করলাম সবকিছুর ও সবার মালিকের কাছে। রাব্বুল আলামীন। তো আমরা যখনই কোনও আদেশের যুক্তি জানার চেষ্টা করবো, আমাদের পুরো ব্যাপারটা আগে বুঝতে হবে। আল্লাহ পাক তার দ্বীন বানিয়েছেন তার কাছে আত্ম সমর্পণের, আপনার আমার যদি এটা করতে সমস্যা হয়, তাহলে বুঝতে হবে ইসলামকে নিয়েই আমাদের সমস্যা হচ্ছে। দ্বীনের কেন্দ্রীয় বানীকে নিয়েই। এর মানে এটা নয় যে , আপনি আল্লাহ পাকের আদেশ-নিষেধের মানে বুঝার চেষ্টা করবেন না। যখন আমরা গ্রহন করছি, তখন আমরা এটা বুঝতে পারলাম কিনা বা যুক্তি খুজে পেলাম কিনা সেটা পরে দেখতে হবে। আমার এর যুক্তি বুঝি বা না বুঝি প্রথমে নিজেকে আত্ম সমর্পণ করতে হবে।

ইয়া আয়্যু হাল্লাজিনা আমানু, (আয়াতটি আমাদের সাথে কথা বলছে) মান ইয়ার তাদ্দা মিনকুম আন দিনি।

তোমাদের মাঝে যারা বিশ্বাস করো, যারা দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। আল্লাহ পাক বলেননি, আমাদের সবাই মুখ ফিরিয়ে নিবে। আমাদের মাঝে কিছু লোক। আর ‘মান’ শব্দটা বেশ ইন্টারেস্টিং। এটা বহুবচনও হতে পারে, আবার একবচনও হতে পারে। তো একজনও হতে পারে, যে এই দ্বীন ছেড়ে চলে যাচ্ছে। আমি আগেই বলেছি এটা দুইভাবে হতে পারে। একেবারেই ত্যাগ করলো, আর আরেকভাবে হল কার্যকর অর্থে, মনের ভিতরে ত্যাগ করা, মনের ভিতরে তারা আল্লাহ পাকের কাছে নিজেকে সমর্পণ করেনা। আল্লাহ পাকের আদেশ অনুযায়ী চলার কোন কারণ তারা খুঁজে পায়না। তারাও দ্বীন ত্যাগ করেছে। যদিও মানুষের মাঝে আমরা কেউ দেখতে পাইনা, তবে আল্লাহ জানেন। আমরা একজন মুসলিমকে দেখলে বলবো আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। তার মনে কি আছে এটা নিয়ে সমালোচনা করবোনা। কিন্তু আল্লাহ পাক ঠিকই জানেন। তিনি ভিতরটাও দেখছেন।

এর মাঝে যেই দ্বীন ছেড়ে চলে গেল, - তো ‘ফা সাওফা’ শীঘ্রই , আর ফা সাওফা অর্থ খুব শীঘ্রই খুব বেশি সময় আল্লাহ পাক নিবেন না - আল্লাহ পাক পুরো এক জাতিকে নিয়ে আসবেন। বেশ ইন্টারেস্টিং। আল্লাহ বলছেন, তোমাদের মাঝে একজন চলে গেলেও, তিনি এর বদলে এক জাতিকে নিয়ে আসবেন। তো আল্লাহ বলতে চাইছেন যে তুমি নিজেকে বেশ অসাধারন কিছু মনে করছ? মনে করছ আল্লাহ পাকের তোমাকে দরকার? ইসলামে তোমার অনেক অবদান? যে তোমাকে ছাড়া ইসলামের চলবেই না? তুমি কেন তোমার বদলে পুরো জাতিকে আমি নিয়ে আসব। তুমি এমন কোন আহামরি সম্পদ নও। নিজেকে অত উচু কিছু মনে করো না। ইতিমধ্যেই আমাদেরকে আমাদের সঠিক জায়গায় বসিয়ে দেয়া হচ্ছে। এই আয়াতের মুল শিক্ষা হল বিনম্রতা।

আমাদেরকে নিজেদের অবস্থান বুঝতে হবে। আমাদের এই দ্বীনে আমাদেরকে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলার সম্মান দেয়া হচ্ছে। মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলার সম্মান দেয়া হচ্ছে। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে একটা পুরস্কার। তুমি যদি এটার মুল্যায়ন না করো, তো তোমাকে কেন দরকার? আরও অনেকে আছে যে এটা অনেক বেশি মুল্যায়ন করবে।

https://youtu.be/tQWQVBjvcyM

0 comments
Labels: , , ,

কোরআন কেন মানুষের সৃষ্টি হতে পারে না - ১ম পর্ব

কোরআন কেন মানুষের সৃষ্টি হতে পারে না - ১ম পর্ব
পি.এইচ.ডি ছাত্রদের প্রধান উপদেষ্টাঃ সন্দেহ থেকে একনিষ্ঠ দৃঢ় বিশ্বাসের পথে যাত্রা


তিনি প্রচন্ড মেধাবী ও ধীশক্তিসম্পন্ন সৃষ্টিশীল ছিলেন। যুবক বয়সে দর্শন (ফিলোসফি) পড়ে প্রভাবিত হন এবং "সকল ধর্ম মনুষ্য-সৃষ্টি" - এই উপসংহারে প্রতিজ্ঞ হন। তার ভাবনা ছিল কেবল কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষরাই স্বর্গ ও নরকে বিশ্বাস করে আর এভাবে তিনি ধর্মে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন। তিনি মনে করতে থাকেন তার আশেপাশের অনেক লোকই ধর্মে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে কিন্তু উচ্চারণ করতে ভয় পাচ্ছে। তিনি মনে করেন তারা ধর্মকে চর্চা করে, কারণ এটা পরিবারে চর্চিত হয় এবং তারা এটা নিয়ে চিন্তাও করে না।

পরবর্তীতে তিনি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে যান সেখানে সেকুলার পরিবেশ থাকার কারণে তার অবিশ্বাসের কথা প্রকাশ করেন। ইরাক মুসলিম দেশ হলেও সেখানকার ভার্সিটিগুলো খুবই লিবারেল এবং সেকুলার প্রকৃতির আর সেকারণে সবাই স্বাধীনচেতা হিসেবে থাকত। কিন্তু তিনি চিন্তাশীল ব্যক্তি ছিলেন আর সেজন্য ধর্ম সত্য হতে পারে এরকম একটা “সম্ভাবনা” রাখতেন। "কমপক্ষে সম্ভাবনা থাকতে পারে যে ধর্ম সত্য হতে পারে", 'সম্ভাবনা'-কে তো আর প্রত্যাখ্যান করা যায় না। আর সেজন্য তিনি কিছু নোট লিখতে শুরু করেন যেগুলো “ধর্মের পক্ষে” এবং “ধর্মের বিপক্ষে” ছিল।

তার সম্মুখে প্রাথমিকভাবে দু’টি উপায়ন্তর রাখেনঃ
১. এটা কি সত্য?
২. নাকি সত্য নয়?
কিন্তু দ্বিতীয় ধরণের প্রশ্নও ছিল তার কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ
৩. যদি এটা সত্য হয় তবে কী? (তাহলে আমার জীবন কেমন হবে?)
৪. আর যদি সত্য না হয় তবে কী? (তাহলে আমার জীবন কেমন হবে?)

বেশিরভাগ মানুষের জন্য প্রথম ধরণের প্রশ্নের কোন প্রধানতম কারণ থাকে না। তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায় আমি যদি ধর্মগ্রহণ করি অথবা না করি তবে “আমার জীবন কেমন হবে?”
বেশিরভাগ মানুষ ধর্মে থাকে কারণ তার পরিবার কষ্ট পাবে যদি ধর্মত্যাগের কথা শুনে। তাই তারা এটা প্রকাশ করে না। তারা ভাবে ধর্ম না মানলে প্রচূর স্বাধীনতা পাওয়া যাবে। তারা ঈদে যায়, নামাজ পড়ে। তাদের ধর্মত্যাগ প্রকাশ না করার একটাই কারণ থাকে তাদের পিতামাতার ‘অনুভূতি’-কে কষ্ট দিতে চায় না। কিন্তু তাদের মন-মগজে মুসলিম হবার কোন যৌক্তিকতা নেই।

আমি একজন যুবক, আমার সম্মুখে সমস্ত পৃথিবী, আমি যদি ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করি তবে আমি যা খুশি খেতে পারব, যা খুশি তাই করতে পারব, যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে চলতে পারব, যেকোন চাকরি করতে পারব। আমার ভেতরের স্বভাবগত প্রকৃতিকে পূরণ করতে পারব, আমার আবেগকে যথেচ্ছা ব্যবহার করতে পারব, কেউ আমাকে এগুলো করতে বাধা দেবে না। আমি পূর্ণাংগ স্বাধীনতা পাবো, আমার উপর কোন সীমাবদ্ধতা থাকবে না - মোটকথায় আমার উপর কোন নিষিদ্ধতা নেই - যা খুশি তাই করতে পারব।

কিন্তু আমি যদি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করি (সত্য হোক বা না হোক) তবে বাস্তবিকপক্ষে এটা আমার উপর কিছু সীমারেখা তৈরি করবে আর আমি "কিছু নির্দিষ্ট জিনিস করতে পারবো না"। তাহলে আমি যদি ধর্মে বিশ্বাস করি সেক্ষেত্রে আমার জীবন কেমন হবে? এর সমস্যাটা রাসূল (সাঃ) একটি হাদীসে তুলে ধরেছেন। নবী (সাঃ) পর্যন্ত বলেছেন, “দুনিয়া একজন মুমিনের জন্য কয়েদলখানা এবং কাফিরের জন্য স্বর্গ।"

জান্নাত কী? সেখানে যা খুশি তাই পাবে, যা করতে চাবে তাই পারবে। আর এই দিকটাই অবিশ্বাসীদের ইচ্ছার পথ আকড়ে ধরে যেন পৃথিবীকে সে জান্নাত মনে করে আর তাই সে চায় যা খুশি তাই করবে (তার ইচ্ছাই তার গাইডলাইন হয়ে যায়)।

তিনি বলেন, একজন যুবক হিসেবে আমাকে 'স্বাধীনতা এবং সীমাবদ্ধতা'র মধ্যে একটিকে বেছে নিতে হচ্ছে। কে বাদ-বিচার (Restriction) থেকে স্বাধীনতাকে (Freedom) পছন্দ করবে না এই যুবক বয়সে? কারণ আমি যা খুশি তাই করতে পারব। আমি স্বাধীনতাকে গ্রহণ করব কিন্তু আমার মাথার ভেতরে কী যেন হচ্ছে, আমাকে এদিকে যেতে দিচ্ছে না।

তিনি পরবর্তী বছরগুলোতে আরবী পড়েন ব্যাপকভাবে। আরববাসী হিসেবে তিনি গর্ববোধ করতেন। ইসলামের জন্য গর্ব করা এক জিনিস আর আরব হিসেবে গর্ব করা আরেক জিনিস। আরবীয় লোক হিসেবে তিনি গর্ব করতেন এবং সেকারণে তিনি "প্রাচীন আরবী" নিয়ে পড়াশোনা করেছিলনে যেন তিনি তার ঐতিহ্যকে (Heritage) রক্ষা করতে পারেন। যদিও তিনি প্রচুর আরবী এবং দর্শনের বই পড়েছিলেন, তিনি শেক্সপিয়ার পড়েন এমনকি তিনি আরবী ভাষা ও সাহিত্যের একজন লিডিং স্পেশিয়ালিস্ট হন। কিন্তু তিনি সর্বদা কুর'আন থেকে দূরে সরে থাকতেন যেন তিনি তার স্বাধীনতা বজায় রাখতে পারেন। তিনি এতটাই জ্ঞানী ছিলেন যে বাগদাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের (University of Baghdad) আরবীর পি.এইচ.ডি ছাত্রদের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন। এতকিছুর পরেও তিনি কুর'আন পড়তেও প্রত্যাখ্যান করেন, এমনকি কুর'আনকে স্বীকৃতি দিতেও অসম্মতি জানান, আমি এটা পড়বো না।

যারা আরবী পড়েন তাদের মধ্যে ৯৯.৯৯% পড়ে কুর'আনকে বুঝার জন্য কিন্তু এই ভদ্রলোক পড়েছেন নিজের ভাষার ঐতিহ্যকে রক্ষা করার জন্য। আরব হিসেবে এরকমই গর্ব করতেন তিনি। কিন্তু তিনি কুর'আন পড়তে অস্বীকৃতি জানান কারণ এটা তাকে স্বীমাবদ্ধতা, নিষিদ্ধতা, স্বর্গ-নরক ইত্যাদির কথা স্মরণ করিয়ে দেবে। কিন্তু তিনি স্বাধীন জীবন চান।

একদিন তার পি.এইচ.ডি লেভেলের এক ছাত্র তাকে বলেন তিনি যেন কুর'আন পড়েন এবং এর ভাষায় কোথায় সমস্যা আছে তা নিয়ে সমালোচনা করে একটা বই লেখেন এবং তার ঐ থিসিসে কুর'আনের ভুলগুলো তুলে ধরে সমালোচনা করেন (লিটারারী ক্রিটিসিজম)। আপনি হয়তো জানেন কুর'আনের ভুলের উপর প্রচুর বই লেখা হয়েছে কিন্তু এখন এটাই হবে প্রথম যা এমন এক ব্যক্তির কাছ থেকে আসবে যিনি
১. নিজে একজন আরব,
২. মুসলিম হিসেবে যার জন্ম,
৩. মুসলিম বিশ্বে বসবাস করেন,
৪. এবং আরবীর উপর স্পেশিয়ালিস্ট (এক্সপার্ট)

সুতরাং তিনি ভাবলেন আমি কেন কুর'আনের ভুল ধরে থিসিস লিখছি না এবং বই আকারে প্রকাশ করছি না। তিনি পরবর্তীতে বই লিখতে শুরু করেন। তিনি লিখেন "The Prophethood of Muhammad (saws): My Journey from Doubt to Conviction" (মুহাম্মদ (সাঃ) এর নবুয়্যাতঃ সন্দেহ থেকে দৃঢ় বিশ্বাসের পথে যাত্রা)।

তিনি কুর'আনের ভুল ধরার জন্য কুর'আন পড়েন কিন্তু তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে এটা মানবরচিত কোন বই হতে পারে না, কোন মানুষের পক্ষ এটা রচনা করা সম্ভব নয়।

তিনি পরবর্তীতে একটার পর একটা বই লিখতেই থাকেন, লিখতেই থাকেন এবং এভাবে কুর'আনের উপর ১৮টি বই লিখেন যেন তিনি Fact বা সত্য তুলে ধরেন যে "কুর'আন মানবিক শব্দ" হতে পারে না, এটা অসম্ভব, মানুষের পক্ষে এভাবে বর্ণনা করা কখনই সম্ভব নয়। তিনি পরবর্তীতে এভাবেই বিখ্যাত হন এবং নিজেই টিভি-শো করা শুরু করেন।
তিনি হলেন Dr. Fadel Saleh Sameraee (ড. ফাদেল সালেহ সামেরাঈ)। উস্তাদ নুমান আলী খান তাঁর বই এর একজন ছাত্র। তিনি তাঁর বই পড়ে প্রচুর অভিভুত হন। তাঁর বই থেকে কুর'আনের কিছু কিছু মিরাকল বর্ণনা করেন উস্তাদ নুমান। উস্তাদ নুমান বলেন আমি তাঁর বই পড়ার আগে ভাবতাম আমি কুর'আন সম্পর্কে কিছু জানি কিন্তু তাঁর বই পড়ার পর থেকে মনে হচ্ছে আমি কিছুই জানি না। তাঁর কী অসাধারণ কুর'আনের স্টাডি!!!

আপনি হয়তো জানেন কুর'আন পড়ে অনেকেই পথভ্রষ্ট হয়, এর কারণও কিন্তু কোরআনই বলে দিয়েছে। মূল কারণ হল “গভীরভাবে চিন্তা না করা”।

কুর'আনকে বুঝতে হলে আপনাকে 'গভীরভাবেই' পড়তে হবে, এটাই চিন্তার শর্ত। আপনি একটা আয়াত দেখলেন, খন্ড খন্ড কয়েকটা আয়াত নিলেন, গোলমাল লাগল, খটকা শুরু হল, প্রসংগ জানলেন না ---এভাবে ভাসাভাসা পড়লে কখনই কুর'আন বুঝতে পারবেন না। কুর'আনেই বলা আছে কারা কুর'আন পড়ে হেদায়েত পাবে আর কারা পাবে না।
নেওয়া হয়েছে "Quran for Young Adults", Day 11, Session 1 (Bayyinah.tv) থেকে।

0 comments
Labels: , , ,

কোরআন কেন মানুষের সৃষ্টি হতে পারে না - ২য় পর্ব

কোরআন কেন মানুষের সৃষ্টি হতে পারে না - ২য় পর্ব  -আমরা কেন কোর’আনে বিশ্বাস করি
কোরআনের চ্যালেঞ্জ বলতে কী বুঝায়?

কোরআনের চ্যালেঞ্জ ছিল ‘কোরআনের অনুরুপ কিছু নিয়ে আস’। আর এই ‘চ্যালেঞ্জ’ বলতে অনেক কিছু বুঝায়, কেবল কিছু শব্দের সমষ্টিযুক্ত বাক্য নয় যা অনেক সমালোচনাকারীরা মনে করে-এটা নিতান্তই সরল ও অবুঝ উপলব্ধি।
এই চ্যালেঞ্জ অনেক কিছুই হতে পারে যেমন

১। কোরআনের সৌন্দর্যের মত সৌন্দর্যময় কিছু তৈরি করা।
২। কোরআনের মত শক্তিশালী জিনিস তৈরি করা।
৩। কোন ব্যক্তির উপর কোরআনের যে প্রভাব সেটা তৈরি করা।
৪। একটা সমাজের উপর কোরআনের যে প্রভাব পরিলক্ষিত হয়, সেরূপ প্রভাব সৃষ্টি করা।
অর্থাৎ এই চ্যালেঞ্জ এক ধরণের নয়, অনেক কিছুর হতে পারে।

এর মধ্যে একটি চ্যালেঞ্জ হল--
কোরআন কত বছরে অবতীর্ণ হয়েছিল? দীর্ঘ ২৩ বছরে।
আর এই ২৩ বছরে কোরআন কী করেছিল আরব সমাজে? কোন ধরণের পরিবর্তন এনেছিল তাদের মাঝে?
ঐতিহাসিক দৃষ্টি...

কোরআন নাযিল হয়েছিল দীর্ঘ ২৩ বছরে। আর এই কোরআনের প্রভাবে কি হল সেই সমাজ ও তার মানুষের উপর, তা একবার দেখুন...
• ঐ সমাজ বহু ঈশ্বরবাদী সমাজ থেকে পরিবর্তিত হয়ে এক আল্লাহতে ইবাদাতকারী সমাজে পরিণত হল। একটা সমাজ পূর্ণরুপে পাল্টে গেল, একেবারে পূর্ণরুপে।
• তাদের মধ্যে মানুষের মর্যাদায় কোন বৈষম্য রইল না ...কালো, সাদা, আফ্রিকান, আরবী, অনারবী সবাই একই কাতারে নামাজ পড়তে শুরু করল।
• তারা ভাবত নারীরা কিছুই না, কিন্তু সেই পরিবর্তিত সমাজের নারীরাই হল সর্বাপেক্ষা সম্মানিত।
• আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ক্ষেত্রে ‘তাকওয়া’(সদা আল্লাহর উপস্থিতির চিন্তা) শব্দটা ব্যবহৃত হয়নি একমাত্র মায়ে’দের ছাড়া। আল্লাহ মায়েদের এত মর্যাদা দিলেন!
• সকল গোত্র সমান হয়ে গেল।
• তাদের ব্যবসা, খাওয়া-পান করার মধ্যে সীমাবদ্ধতা আসল। তারা হালাল ব্যবসা ছাড়া অন্য কিছু ত্যাগ করল।
• পিতা-মাতার সম্পর্ক কেমন হবে, সন্তানদের সাথে কেমন সম্পর্ক হবে, আত্মীয়দের সাথে কেমন সম্পর্ক হবে, বন্ধুদের সাথে কেমন হবে সম্পর্ক, অমুসলিমদের সাথে কেমন সম্পর্ক ও ব্যবহার হবে, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক কেমন হবে---এসবই ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী হতে থাকে।
• সরকার ব্যবস্থা কিভাবে চলবে, গভর্নরের সাথে মানুষের সম্পর্ক কি, সরকার-জনগন কিভাবে একে অপরের প্রতি আচরণ করবে- এর সবই পরিবর্তিত হল।

• ইসলাম আসার পরে নারীদের পোশাক-আশাকে আমূল পরিবর্তন আসল, তারাই হল সর্বাপেক্ষা লজ্জাশীলা।
-- আরও যেসব পরিবর্তন আসল...
• তাদের ব্যক্তিগত খাওয়ার পদ্ধতি সেটা পরিবর্তিত হয়ে গেল,
• স্পিরিচুয়াল দিক পরিবর্তিত হল,
• আবেগ পরিবর্তিত হল,
• কি ভালোবাসে সেটা পরিবর্তিত হল,
• কি ঘৃনা করে সেটাও পরিবর্তি হল,
• কথাবার্তার ধরণ পরিবর্তিত হল,
• কিভাবে চলাফেরা করে সেটা পরিবর্তি হল,
• বিবাহের সিস্টেমে পরিবর্তন আসল,
• অন্যের সাথে কিভাবে কথা বলে সেটাতেও পরিবর্তন আসল,
• মৃত্যুকে কিভাবে দেখবে সেক্ষেত্রে পরিবর্তন আসল,
• কিভাবে সম্পদ বন্টন করবে সেটাও পরিবর্তন হল,
• জীবনের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস কি, সেটা পরিবর্তিত হয়ে গেল,
• ব্যবসা, অর্থনীতিতে পরিবর্তন আসল,
• সমাজের সবার সাথে ব্যবহার ও ইন্টারাকশনের পরিবর্তন আসল,
• রাজনৈতিক জীবনে পরিবর্তন আনল।

অর্থাৎ,
জীবন, ভালোবাসা, ঘৃণা, চরিত্র, ব্যবহার, তাদের কথাবার্তা, রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজবিদ্যা সবই পরিবর্তিত হল !!! সবই। আর গোটা পরিবর্তনটাই হয়েছে মাত্র ২৩ বছরে।
একটা পূর্ণ সমাজের এসব কিছুই মাত্র ২৩ বছরে পরিবর্তিত হয়েছিল। আপনি পারলে পৃথিবীর ইতিহাসে দেখান যেখানে, একটি বই, একটি মেসেজ, সে সমাজের মানুষ যারা এটা পড়েছিল, যারা এটা অনুভব করত—সবাইকে ২৩ বছরে পরিবর্তন করেছিল তাদের ‪#‎সমস্ত_জীবনকে‬!! কোন সমাজ এত দ্রুত পরিবর্তিত হয় না। পৃথিবীর কোন সমাজ এভাবে ‪#‎পূর্ণরুপে‬ পরিবর্তিত হয় নি। কোরআনের পূর্বেও না, পরেও না।
আপনি পৃথিবীর ইতিহাসে এরকম দেখাতে পারবেন না, এটা হয় নি।

কেউ বলতে পারে এরকম ‘ঘটতে পারে’ ভবিষ্যতে। আপনি “ঘটতে পারে” এরকম দর্শনে বাস করতে চান?!,চালিয়ে যান, কিন্তু ইসলাম “ঘটতে পারে” বা “ঘটবে না” এরকম দর্শনে বিশ্বাস করে না। ইসলাম যেটা প্রমোট করে সেটা হল “বাস্তবতা কী”, “কী ঘটেছে”। আমাদের বিচারিক দৃষ্টি ‘যদি হয়’ (what if) এর উপর নয়, বরং ‘এখন বাস্তবতা কি’ (what is) এবং সমস্ত বিশ্বে কি হচ্ছে, কি ঘটছে তার উপর। পৃথিবীর ইতিহাসে এরকম পরিবর্তন কখনও হয় নি।
অন্যান্য রেভুলেশনে পরিবর্তন আসতে অনেক অনেক সময় লাগে, অনেক। আর সে পরিবর্তন আসে কেবল একটা বা দুইটা ক্ষেত্রে...পূর্ণ সমাজের পরিবর্তন নয়। হয়ত সেটা ধর্মীয় পরিবর্তন (রাশিয়ান রেভুলেশন), বা প্রযুক্তিগত পরিবর্তন (ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভুলেশন) বা দার্শনিক রেভুলেশন (ফ্রেঞ্চ রেভুলেশন)...কিন্তু পূর্ণ সমাজের পরিবর্তন হয় না...এমনকি একটা দিক পরিবর্তিত হতেই অনেক অনেক সময় লাগে...সময়ের গতিতে অনেক দীর্ঘ সময়ের সাথে অন্যান্য জিনিস পরিবর্তিত হতে পারে কিন্তু এক সাথে তাদের একটা বা দুইটা জিনিসের পরিবর্তন আসে...হয়ত অর্থনৈতিক, ধর্মীয় বা রাজনৈতিক আর দিন শেষে অন্যান্য জিনিস আগের মতই অপরিবর্তিত থাকে (ভালোবাসা, জীবন দর্শন, চিন্তা, জীবন-মৃত্যু ভাবনা, ঘৃণা, অভ্যাস)।

আপনি যদি বৈশ্বিক রেভুলেশনগুলো পড়েন তবে দেখবেন কেবল আইডিয়াই সমাজে প্রবেশ করতে অনেক দীর্ঘ সময় লাগে। এমনকি সাধারণত যারা আইডিয়ার প্রবক্তা-দার্শনিক বা লেখক, তারা কেউ যুদ্ধের ময়দানে থাকে না। আইডিয়ার প্রবক্তা ও পরিবর্তন আনয়নকারীরা ভিন্ন থাকে।

কিন্তু কোরআনের ক্ষেত্রে কি দেখেন?
যিনি ওহী মানুষের কাছে দেন সেই নবী (সা) বা পশ্চিমারা যাকে দার্শনিক বলেন, সেই একই মানুষ ৪০ বছরে নবুয়াত পান এবং তাঁর জীবদ্দশায়ই একটা সমাজের পূর্ণ পরিবর্তন আনেন, যিনি আইডিয়া বিচ্ছুরণকারী এবং আইডিয়াকে বাস্তবায়নকারী। পৃথিবীর ইতিহাসে এটা আর কখনই ঘটেনি। অন্যান্য যেসব রেভুলেশন হয়েছে, সেখানে আইডিয়াদাতারা হয়ত দার্শনিক, সাহিত্যিক বা লেখক ছিলেন, কিন্তু তারা ময়দানে ছিলেন না। তাদের চিন্তার দ্বারা পরিবর্তন এসেছে অনেক বছর পরে, তাও একটা বা দুইটা ক্ষেত্রে...পূর্ণ সমাজের পূর্ণাংগ সব জিনিসের পরিবর্তন নয়। কিন্তু ইসলামের ক্ষেত্রে এটা সম্পূর্ণ ভিন্নচিত্র...কারণ মানবিক দিক থেকে এই পরিবর্তন অসম্ভব। এত ক্ষুদ্র সময়ে মানুষ এধরণের সামগ্রিক পরিবর্তন আনতে পারে না, মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়, এমনকি এর কাছাকাছিও না।

আর কোরআনের চ্যালেঞ্জ মানে- এর সব কিছুই ঐ চ্যালেঞ্জের অন্তর্ভূক্ত!! কেবল আক্ষরিক সূরা নয়, একটা সমাজের এসব কিছুর পরিবর্তনই ওই চ্যালেঞ্জের অন্তর্ভুক্ত। আর সেটা হয়েছে কোরআনের মাধ্যমেই।
আরেকটি বিষয় হল মানব রচিত কোন কিছুই পারফেক্ট নয়। সুইডিশ ডেমক্রেসি, আমেরিকান ডেমক্রেসি, কানাডিয়ান ডেমক্রেসি ইত্যাদির রকমফের রয়েছে। কোন পূর্ণাংগ গনতন্ত্র নেই। একেকজনের একেক ধরণের সিস্টেম চালু রয়েছে। যেমন পূর্ণাংগ ধনতন্ত্র বা ক্যাপিটালিজমে মার্কেট সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু আদৌ কি তা করে? করে না। সরকারের নিয়ন্ত্রনকারী সংস্থা, কপিরাইট ল, মার্কেট নির্ধারিত করে দেওয়া ইত্যাদি রয়েছে অর্থাৎ পূর্ণাংগ আইডিয়ার বাস্তবায়ন নেই। অন্যভাবে বলতে গেলে এদের পিউর সিস্টম বাস্তবে নেই।

কিছু মানুষ বলাবলি করে যে ইসলাম যদি এতটাই নিখুঁত হয় তবে এত স্বল্প সময় স্থায়ী হল কেন(খুলাফায়ে রাশিদিন পর্যন্ত) এবং এটার অবনতি ঘটল কেন?। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিপরীত আর্গুমেন্ট হল পৃথিবীর ইতিহাসে ইসলাম ই একমাত্র একসেট আইডিয়া যা ১০০% কার্যকরী হয়েছিল যা তাঁর নির্ধারিত সব দিক...আংশিক বা অল্প নয়। কিন্তু অন্যান্য মানবরচিত মতবাদ কখনই পূর্ণাংগ বাস্তবায়িত হয়নি এত স্বল্প সময়ে।

এবার দেখুন সেই কোরআনে অসাধারণ মু’জিযা। কোরআন রাসূল (সা) কে দেয়া হয়েছিল।
• তিনি পড়তে বা লিখতে জানতেন না। কোরআন বই আকারে ছিল না। সাহাবারা যখন কোরআনের কথা ভাবতেন, তারা রাসূল সা কে ছাড়া এটা কল্পনা করতে পারতেন না। তারা কোরআন বলতে কেবল রাসূল সা এবং তাঁর ভয়েস বা শব্দোচ্চারণকে বুঝতেন...কোন বই নয়- বই জিনিস্টা আমরা এখন ভাবি রাসূল সা কে ছাড়াই...কিন্তু এটা সাহাবাদের কল্পনায়ও ছিল না। তাদের কাছে মেসেজ বা বার্তা এবং বার্তাবাহক অভিন্ন ছিল, পার্থক্য করার মত ছিল না।

• কোরআন ছোট্ট ছোট্ট করে নাযিল হয়, তাও আবার ২৩ বছরব্যাপী,
• তা কোন ডাটাবেইজে ছিল না,
• কোন সার্চ ইঞ্জিনে ছিল না,
• আমরা না হয় কম্পিউটার, ইন্টারনেট, রিডার আসার পর শব্দতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করতে পারি এবং কোন জিনিস কোরআনে কতবার এসেছে তা সার্চ করে বের করতে পারি...কিন্তু ঐসময় একজন হাফেজ কি এটা বলতে পারত সম্পূর্ণ কোরআন মুখস্ত পড়ে?...এভাবে সম্পূর্ণ কোরআন কতবার পড়ে কতবার কি এসেছে সেটা বলা কি আদৌ সম্ভব ছিল?...না, এটা সম্ভব নয়। কারণ কেউ একজন দীর্ঘ ২৩ বছর বকৃতা দিয়েছে এবং তাঁকে যদি জিজ্ঞেস করেন সে এই শব্দ তাঁর ২৩ বছরে কতবার বলেছে তা কি কখনও বলা সম্ভব? না, এটা কোন মানবের পক্ষে বলা অসম্ভব।

• আর ঐ সময় কোন শব্দ কতবার এসেছে এরকম কোন গেইম বা সাহিত্যিক মাপ ছিল না।
এখন কোরআন নাযিলের কয়েকশ বছর পর, যখন এটা আমাদের কাছে বই আকারে রয়েছে, কম্পিউটারাইজড করা আছে তখন আমরা নীচের কিছু জিনিস পাই...
কোরআনে
‘দুনিয়া’ শব্দটা এসেছে ১১৫ বার
‘আখিরাত’ শব্দটা এসেছে ১১৫ বার
‘ফেরেশতা’ শব্দটা এসেছে ৮৮ বার
‘শয়তান’ শব্দটা এসেছে ৮৮ বার
‘জীবন’শব্দটা এসেছে ১৪৫ বার
‘মরণ’ শব্দটা এসেছে ১৪৫ বার
‘ভালো কাজ’ এসেছে ১৬৭ বার
‘মন্দ কাজ’ এসেছে ১৬৭ বার
‘অবিশ্বাস’ এসেছে ১৭ বার
‘বিশ্বাস’ এসেছে ১৭ বার
‘ইবলিস’ নাম এসেছে ১১ বার
ইবলিস থেকে ‘আশ্রয় চাওয়া’ এসেছে ১১ বার(অথচ নামের পাশে সর্বাবস্থায় আসে নি!!!!)
“তারা বলে” এসেছে ৩৩২ বার
“বল” এসেছে ৩৩২ বার
“মাস” এসেছে ১২ বার
“দিন” এসেছে ৩৬৫ বার
“নামাজ” এসেছে ৫ বার!!!!
আপনি একবার একটা মিলে গেলে বলতে পারেন কাকতালীয়ভাবে মিলে গেছে, দুইবার হলেও বলতে পারেন কোনভাবে মিলে গেছে কিন্তু এতবার কিভাবে সম্ভব দীর্ঘ ২৩ বছরের বক্তৃতায়?! এটাই প্রমান করে এটা মানবরচিত কোন বই নয়, কোন মানবের পক্ষে এভাবে রচনা করা অসম্ভব, তাও আবার দীর্ঘ ২৩ বছরে !!!

এটা কোন মানবের পক্ষে অসম্ভব !!! কারণ
- কোরআন কোন বই আকারে ছিল না
- দীর্ঘ ২৩ বছরের বক্তব্যে (লেখায় নয়) কোন শব্দ কতবার বলা হয়েছে তা পূর্ণটা মুখস্ত রাখা অসম্ভব!!
- আরবদের মাঝে কোন শব্দ কতবার এসেছে এরকম কোন গেম ছিল না...আর মুখস্ত বা বক্তব্যে, তাও দীর্ঘ ২৩ বছরের বক্তব্যে, ৬০০০ এর উপর আয়াতে, এটা গনণা করা অসম্ভব (এমনকি কম্পিউটারে পড়ার উপযোগি করার আগে এটা কল্পনাতেও ছিল না)।

- একশব্দ এসেছে সমস্ত জীবনে ৫ বার (৫ ওয়াক্ত সালাত-যা প্রতিদিন পড়া হয়!), আবার দীর্ঘ ২৩ বছরের জীবনে মাস কেন মাত্র ১২ বার আসবে অথচ অন্যান্য জিনিস অনেক বেশিও এসেছে!!! অথচ কোনটাই অমিল নয়!!
এটাই প্রমান করে কোরআন কোন মানবের রচিত গ্রন্থ নয়!!! এটা কোন মানুষের পক্ষে রচনা করা অসম্ভব।
- কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয় দীর্ঘ ২৩ বছরে কোন শব্দ কতবার বলেছে এটা মনে রাখা! তাও এমন মানবের পক্ষে যিনি নিজেই লিখতে জানতেন না বা নিরক্ষর থাকার কারণে পড়তেও জানতেন না!!!

এছাড়া কোরআনের অধিকাংশ নাম অনারবী (৫০টির মত), এর মাঝে অনেক ভাষা মৃত ছিল (মিশরীয় বা গ্রিক ইত্যাদি ) কিন্তু সেসব শব্দের অর্থও কোরআন নিখুতভাবে করেছে। অথচ সে সব শব্দের অর্থ তখন কেউ জানত না ঐসব ভাষা মৃত থাকার কারণে...আর মুহাম্মাদ (সা) এর তো জানার কথাই ছিল না, কারন তিনি পড়তে বা লিখতে কোনটাই জানতেন না !!!!!

নেওয়া হয়েছে "Quran for Young Adults", Day 11, Session ২ (Bayyinah.tv) থেকে।

0 comments
Labels: , ,

কোরআনে কেন মানব রচিত হতে পারে না - ৩য় পর্ব

কোরআনে কেন মানব রচিত হতে পারে না - ৩য় পর্ব
আমরা কেন কোরআনে বিশ্বাস করি 


আরবরা ছিল ট্রেডিশনাল মানুষ, তারা যাযাবরদের মত ভ্রমন করত। যেহেতু তাদের ভূমি ছিল অনুর্বর এবং মরুভূমি আর সেকারণে ভূ-রাজনৈকিত ও অর্থনৈতিকভাবে কেউ তাদের উপর আক্রমন করত না-কারণে সেখানে কোন লাভ নেই।

আরব ছিল রুমান ও ইরানিয়ান সাম্রাজ্যের মধ্যভাগে আর সেকারণে কেউ তাদের সাথে কোন সমস্যা তৈরি করত না এই ভয়ে যে এতে এই দুই সাম্রাজ্যের মধ্যে ভয়াভহ যুদ্ধ লেগে যেতে পারে। তারা অন্যান্য সাম্রাজ্যের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হতো, কারণ সেখানে সম্পদ ছিল আর এসব আরবে অনুপস্থিত ছিল অনুর্বর, মরুভূমি ও উন্নত সম্পদ না থাকায়। এভাবে আরবদেরকে ততকালীন উন্নত সাম্রাজ্য শত শত বছর বিচ্ছিন্ন রেখেছিল তাদের প্রভাব থেকে। আর এইসব বিচ্ছন্নতার কারণে আরবরা ছিল তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ, বাহিরের কোন প্রভাবও ছিল না। আর কেউ যখন বিচ্ছিন্ন থাকে তখন কিন্তু নিজের সাথেই কথা বলে। আর এভাবেই তাদের ভাষায় অন্যদের প্রভাব না থাকার কারণে বিশুদ্ধ থেকে বিশুদ্ধতম হতে থাকে এবং বিশুদ্ধই থাকে। আর অন্যরাও এ ভাষা শিক্ষায় আগ্রহী ছিল না কারণ এতে পার্থিব-সম্পদগত কোন লাভ নেই!

আপনারা জেনে থাকবেন যে যখন অনেকগুলো কালচার বা শক্তিশালী ক্ষমতা অন্যকে দখল করে নেয় তখন সেই স্বদেশীয় ভাষা কলুষিত হয়(যেমন বাংলা—কত ভাষার সমষ্টি ও বিকৃতি এসেছে এ ভাষায়-সেই ওলন্দাজ থেকে ইংরেজ সাম্রাজ্য পর্যন্ত) অথবা যে কোন দেশ বা অঞ্চল বৈশ্বিক বাজারে বা কসমোপলিটানে রুপান্তরিত হয় সেখানেও ভাষার ভিন্নতা দেখা যায় যেমন প্রাচীনকালের চিটাগাং(সামুদ্রিক ব্যবসায়ী কেন্দ্র ছিল) বা নিউইয়র্কে বিভিন্ন দেশের লোকেদের ইংরেজির বেহাল অবস্থা! এভাবে একটি ভাষা যখন কোন প্রভাব ব্যতিত টিকে থাকে, সেটা বিশুদ্ধ থাকে-সেরকম ছিল আরবী ভাষা। আরবের চতুর্পার্শে কিছুই ছিল না, কেবল মরুভূমি ছাড়া। আর এজন্য তাদের কাল্পনিক চিন্তাশিলতা ছিল প্রখর(যেহেতে চতুর্পাশ্বে কিছু ছিল না তাই কল্পনার চিন্তাশক্তিই তাদের শৈল্পিক দিক ছিল)। যখন কারো চতুর্পাশ্বে কিছুই থাকে না, তখন মগজই একমাত্র চিন্তার খোরাক হিসেবে থাকে আর আরবরটা এরকমই মরুভূমির মধ্যে প্রিজনার বা বন্ধির মত ছিল আর সেকারণে তাদের চিন্তার প্রখরতাও উন্নত ছিল। পৃথিবীর অনেক উল্লেখযোগ্য লেখাই জেলখানার ভেতরে হয়েছে। কারণ এখানে চিন্তাশিলতার সময় ও সুযোগ দুটোই থাকে---তেমনি ছিল আরবদের চিন্তাশিলতার প্রখরতা।

পৃথিবীর সকল দেশের গর্বের কিছু বিষয় থাকে। যেহেতু আরবদের গর্ব করার মত অন্য কোন জিনিস ছিল না আর সেজন্য ভাষাই ছিল তাদের উচ্চমার্গের গর্বের বিষয়। তাদের ভাষার তুলনায় অন্য ভাষাকে তুচ্ছ মনে হত-এরকম উচ্চ, শক্তিশালী, এবং চিন্তাশীল গ্রাফিক ভিজুয়াল ছিল তাদের ভাষায়। আর কেউ যখন কোন কিছুর প্রতি গর্ব করে তারা সেটার পরিচর্যা করে আর আরবরাও ভাষার ভালো পরিচর্যা করত। তারা কবিদের মন্ত্রীর মর্যাদা দিত। গোত্রেরা কবিতার প্রতিযোগিতা ও যুদ্ধ করত। তারা এতটাই ক্রুদ্ধ থাকত যে অন্য গোত্রের কবিদের পরাজিত করতে না পারলে নিজেদের কবিকে হত্যা পর্যন্ত করে ফেলত- এরকম গর্বের ছিল তাদের ভাষা।

যখন কোরআন তাদের কাছে আসল এটা তাদেরকে কোরআনের মত কিছু তৈরি করতে চ্যালেঞ্জ করল। যখন আরবরা জানত না যে এটা কোরআন এবং রাসূল সা এটাকে কোরআনের আয়াত না বলে এটা চ্যালেঞ্জে আকারে দিল। আরবের সবাই হেরে গিয়ে তারা এর আয়াতকে কাবা শরিফের ঝুলিয়ে রেখেছিল এবং বলেছিল এটা মানব সৃষ্ট হতে পারে না।(সর্বাপেক্ষা সেরা সাহিত্যগুলোকে তারা সম্মানার্থে কাবার দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখত)। পরে অবশ্য এটা কোরআনের আয়াত জানার পর তারা সরিয়ে নিয়েছিল !!

আরেকটি ঘটনা ছিল এরকম যে ওয়ালিদ বিন মুগিরা ছিল আরবের সর্বশ্রেষ্ট কবি। তিনি খুবই কনফিডেন্ট ছিলেন। সে রাসূল (সা) কে নারী, সম্পদ এবং শাসকের লোভ দেখায় যাতে এগুলো থামিয়ে দেয়। রাসুল (সা) কোরআন পাঠ করতে লাগলেন এবং এটা শুনে মুগিরা প্রচন্ডভাবে কাঁদতে লাগল। আর রাসূল (সা) এর মুখ চেপে ধরে বলল আমি আর নিতে পারছি না এটা!! সে তার দলের লোকের নিকট ফেরত এসে বলল – আমি কবিতা জানি, কিন্তু এটা কবিতা নয়। আমি যাদু চিনি কিন্তু এটা যাদু নয়। আমি পাগলামো বুঝি কিন্তু এটা পাগলামো কোন কথা নয়।

এমনকি রাসূল সা এর একজন কবি ছিল হাসসান(রা)। সে একটা কবিতা রচনা করেছিল তার গোত্র নিয়ে, সে আরবের সর্বশ্রেষ্ট কবি ছিল । কিন্তু একজন মহিলা কবি, একজন মহিলা!! সে হাসসানের সেই কবিতাকে আরবী সাহিত্যিক সমালোচনা দিয়ে একেবারে পচিয়ে দিয়েছিল!! একজন মহিলা এভাবে পচিয়েছিল আরেকজন কবিকে!! তারা সমালোচনা করতে ভালোবাসত, এটা তাদের রক্তের সাথে মিশে ছিল, এভাবে অন্যকে তারা শুদ্রে দিত এবং নিজেদের মর্যাদা নিত।

কিন্তু কোরআন আসার পর কি হল???

কোরআন তো তাদের চ্যালেঞ্জ দিয়েছিল এর অনুরুপ কিছু নিয়ে আসতে...সেটা না করে তারা মুসলিমদেরকে মারতে আসল কেন?!!! অথচ তারা কোরআনের ভুলগুলোকে শুদ্রে দিতে পারত খুবই সহজে, বাকপটুতা এবং সাহিত্যিক দিক থেকে তারা তো শ্রেষ্টই ছিল!! তাদের ভাষা তো ছিল পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে উন্নত ভাষা। তারা তো কিছু বাক্য নিয়ে আসলেই পারত, কারণ কোরআন তো কিছু শব্দের সমষ্টিই...মাত্র ৪০০ পেইজের বই ছিল এটি...কিন্তু তারা তিন আয়াতের মত কিছু নিয়ে এসে কোরআনের চ্যালেঞ্জকে ছুড়ে ফেলে দিত...তাহলেই তো ইসলামের চ্যালেঞ্জ শেষ, ইসলামের খেল সেই অংকুরেই মাঠে মারা যেত...কিন্তু তারা একেবারে হতবুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল।!! তবুও আল্লাহ বলেছিল তোমরা তোমাদের সবাইকে নিয়ে এসে পারলে এর মত কিছু বানাও!!. এটাই ছিল মুসলিমদের কোরআনের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসের ভিত্তি। কোরআন কোন অন্ধ বিশ্বাস নয়, এতে রয়েছে যুক্তি, বিজ্ঞান, রয়েছে দৃঢ় বিশ্বাসের শক্ত ভিত্তি।

-------------------------------------------------
একটি মু’জিযা এবং বর্তমান জিওগ্রাফি
-------------------------------------------------
আল্লাহ রোমান এবং পার্সিয়ানদের(তৎকালীন ইরানিয়ান সভ্যতা)কথা বলেছে। রোমানরা পরাজিত হয়েছিল আর পার্সিয়ানরা বিজয়ী হয়েছিল। আর এটা হয়েছিল ফিলিস্তিন-ইজরাইলীয় উপকূলীয় এলাকাসমূহের দিকে, Dead Sea এলাকায়। আর কোরআনে এখানে বলেছে “রুমানরা পরাজিত হয়েছিল সর্ব নিম্নাঞ্চলে”(সূরা রুম -৩)। আশ্চর্যের বিষয় হল কোরআন কিন্তু বলেনি ‘নিম্নাঞ্চল’(Low Earth) বা ‘তুলনামূলক নিম্নাঞ্চল’(Lower Earth) যেরুপ উপত্যকায় দেখা যায়। বরং বলেছে Lowest of the Entire Earth পৃথিবীর সর্বনিন্মাঞ্চল। আর জিওগ্রাফি অনুযায়ী ডেড সি বা মৃত সাগরের অঞ্চল হল পৃথিবীর সর্বনিম্নাঞ্চল এলাকা !! পানির নিচে সর্বনিম্ন এলাকা অন্যটি কিন্তু জমিন বা অঞ্চলগত দিক থেকে মৃতসাগর এলাকাই পৃথিবীর সর্বনিম্নাঞ্চল। আর কোরআন ঠিক এটাই বলেছে সেই কত শত বছর আগে যখন এটা আবিষ্কৃত হয়নি জিওগ্রাফিক্যালি !!

অথচ যখন এই বিষয়টি নাযিল হয়েছিল কোন লোকজন জিজ্ঞেসো করেনি এটি কোথায়?!
এভাবেই কোরআনের অসংখ্য চ্যালেঞ্জ দেখিয়েছে যে এটি কোন মানবরচিত গ্রন্থ নয়, এর বিভিন্ন ধরণের চ্যালেঞ্জ(যা ২য় পর্বে দেখিয়েছি) কেউ মোকাবিলা করার সাহস পায় নি। এভাবেই যুগে যুগে কোরআন টিকে আছে তাঁর ঐশি মর্যাদা নিয়ে, বিভিন্ন ধরণের চ্যালেঞ্জ, পার্থিব জীবনের পবিত্রতা, সুখ এবং পরকালীন জীবনের নিশ্চিত প্রশান্তি ও নিরাপত্তার পয়গাম নিয়ে।
নেয়া হয়েছে "Quran For Young Adults, Day 11, Session 2 (Bayyinah.tv) থেকে।

0 comments
Labels: , ,

কুর'আনে বর্ণিত ভারসাম্যপূর্ণ বর্ণনার উদাহরণ - আয়াতুল কুরসী

কুর'আনে বর্ণিত  ভারসাম্যপূর্ণ বর্ণনার উদাহরণ -  আয়াতুল কুরসী

আয়াতুল কুরসীতে সর্বমোট নয়টি বাক্য রয়েছে।

১। اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ ‘‘আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক।’’ সুতরাং প্রথম বাক্যটি আল্লাহ সম্পর্কে আর এ বাক্যে তিনি তাঁর দু’টি নাম উল্লেখ করেছেন। আল হাইয়ু, আল কাইয়ুম । 

২। لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ ۚ ‘‘তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়।’’ অর্থাৎ , এই বাক্যে বলা হল- তাঁর ঝিমুনিও আসে না, ঘুমও পায় না। 

৩। لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ‘‘আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর।’’ আর এই বাক্যে বলা হল- আসমান এবং জমিনের সবকিছুই তাঁর। 

৪। مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِندَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ ۚ ‘‘কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ব্যতীত? ’’ এই বাক্যে বলা হল- তাঁর অনুমতি ব্যতীত কেউ কারো জন্য সুপারিশ করতে পারবে না । 

৫। يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ ‘‘দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন।’’ আর এই বাক্যের বক্তব্য হল- তিনি সামনের এবং পিছনের সবই জানেন।

৬। وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ ‘‘তিনি নিজে যে জিনিসের জ্ঞান মানুষকে দিতে চান সেটুকু ছাড়া তাঁর জ্ঞানের কিছুই তারা আয়ত্ব করতে পারে না।’’ অথর্াৎ, তিনি যা জানাতে চান তা ব্যতীত তারা কিছুই জানে না । 

৭ । وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ ‘‘তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে।’’ 

৮। وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا ‘‘এগুলোর রক্ষণাবেক্ষন তাঁকে ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত করে না।’’ 

৯। وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ ‘‘তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।’’ এ বাক্যে আল্লাহর দু’টি নাম রয়েছে – আল আলিয়ু, আল আজিম । 

এখন খেয়াল করুন, এখানে মোট বাক্য সংখ্যা ৯ টি।

**এক নাম্বার বাক্যে আল্লাহর দু’টি নাম রয়েছে(আল হাইয়ু, আল কাইয়ুম) আর নয় নাম্বার বাক্যেও আল্লাহর দু’টি নাম রয়েছে।(আল আলিয়ু, আল আজিম)

**দুই নাম্বার বাক্যে বলা হল তাঁর ঝিমুনিও আসে না, ঘুমও পায় না। এ বাক্যের সাথে আট নাম্বার বাক্যের কি কোন মিল খুঁজে পান? কারো ঘুম আসে কখন? যখন সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। আর আট নাম্বার বাক্যে আল্লাহ বলছেন তিনি ক্লান্ত হন না। তাহলে আমরা দুই এবং আট নাম্বার বাক্যের মিল খুঁজে পেলাম।

**তিন এবং সাত নাম্বার বাক্যের সম্পর্ক বর্ণনা করার আগে কিছু বিষয়ে পরিস্কার ধারনা নেয়া যাক। একজন রাজা এবং কোন জিনিসের একজন মালিকের মাঝে পার্থক্য কী ? আমার হাতে যে কলমটি আছে আমি কি এটার রাজা না মালিক? এটা বলাটা বোকার মত শোনাবে যদি আমি বলি – আমি এই কলমটির সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী, এই কলমটির উপর আমার সর্বময় ক্ষমতা এবং রাজত্ব রয়েছে। এই কথাগুলো অযৌক্তিক শোনায়, কারণ এটি একটি কলম মাত্র।

তাই আমি বলতে পারি যে আমি এই কলমটির মালিক, কিন্তু আমি বলতে পারি না যে আমি কলমটির রাজা।রাজা শব্দটি যে সব ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায় যেমন – একটি দ্বীপ, একটি দেশ, বা একটি মহাদেশের রাজা। তাহলে রাজা শব্দটি ব্যবহৃত হয় বড় কিছুর ক্ষেত্রে। আর মালিক শব্দটি ব্যবহৃত হয় ছোট কিছুর ক্ষেত্রে । মালিক হওয়ার যেমন সুবিধা-অসুবিধা রয়েছে তেমনি রাজা হওয়ারও সুবিধা- অসুবিধা রয়েছে। যদি আমি কোন কিছুর মালিক হই, আমি এ সম্পর্কে সবকিছু জানি, সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।

কিন্তু একজন রাজার পক্ষে তাঁর রাজ্যের ছোট ছোট বিষয়গুলো সম্পর্কে জানা বা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। আপনি যদি একটি দেশের রাজা হন আপনি কি সেই দেশে যত ফুল জন্মে সবগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন? না। সংক্ষেপে বলতে গেলে- একজন মালিক ছোট ছোট বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারে আর রাজা বড় বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আপনি যখন ছোট বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করেন, তখন বড় বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। আবার যখন বড় বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন তখন ছোট বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করা আপনার সাধ্যের বাইরে।

এখন তিন নাম্বার বাক্যে আল্লাহ বলছেন- ‘‘আসমান এবং জমিনের সবকিছুই তাঁর।’’ এখানে আল্লাহ নিজেকে আসমান এবং জমিনের মালিক হিসেবে বর্ণনা করছেন।

আর সাত নাম্বার বাক্যে বলা হল- ‘‘তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে।’’ অর্থাৎ আসমান এবং জমিনের রাজত্ব তাঁর।

সুতরাং তিন নাম্বার বাক্য হল তাঁর মালিকানা নিয়ে আর সাত নাম্বার বাক্য হল তাঁর রাজত্ব নিয়ে। একই সাথে তিনি মালিক এবং রাজা, আর এটা একমাত্র তাঁর পক্ষেই সম্ভব। রাজা হিসেবে তিনি যেমন বড় বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করেন তেমনি মালিক হিসেবে আসমান এবং জমিনের ছোট ছোট বিষয়গুলোর নিয়ন্ত্রণও তাঁরই হাতে।

**দেখুন, চার নাম্বার এবং ছয় নাম্বার উভয় বাক্যে ‘ব্যতীত’ শব্দটি এসেছে।চার নাম্বার বাক্যে বলা হল- কেউ কোন সুপারিশ করতে পারবে না তাঁর অনুমতি ব্যতীত। অর্থাৎ কেউ কারো জন্য কিছু করতে পারবে না তাঁর অনুমতি ব্যতীত। আর ছয় নাম্বার বাক্যে বলা হল- কেউ কিছু জানতে পারবে না একমাত্র তিনি যা জানাতে চান তা ব্যতীত। সুতরাং চার এবং ছয় নাম্বার বাক্য দ্বারা বলা হল- আমরা কিছুই করতে সক্ষম নই আল্লাহর হস্তক্ষেপ ব্যতীত। চার নাম্বার বাক্যে ব্যতিক্রমের কথা বলা হল আবার ছয় নাম্বার বাক্যেও ব্যতিক্রমের কথা বলা হল।

এখন দেখুন, ১ নাম্বার বাক্য ৯ নাম্বার বাক্যের সাথে, ২ নাম্বার ৮ নাম্বার এর সাথে, ৩ নাম্বার ৭ নাম্বার এর সাথে, ৪ নাম্বার ৬ নাম্বার এর সাথে সম্পর্কযুক্ত। এখন বাকি আছে ৫ নাম্বার বাক্যটি। পাঁচ নাম্বার বাক্যটি অসাধারণ। পাঁচ নাম্বার বাক্যে তিনি বলছেন- তিনি সামনের এবং পিছনের সবই জানেন। তিনি আয়াতের সামনে পিছনে যা আছে জানেন। সুবহানাল্লাহ।
উস্তাদের "Quran for Young Adults" (Day 12) থেকে অনুপ্রাণিত।

0 comments
Labels: , , ,

যখন আপনি নিজেকে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন

●|● যখন আপনি নিজেকে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন ●|●

হয়তো আপনি একজন খুব বেশী ধার্মিক মানুষ নন এবং আপনি আপনার পরিবারের বাকি সদস্যদের মতই জীবন যাপন করছেন এবং আপনার হৃদয়ে হঠাৎ এমন কিছু একটা অনুভূত হয়েছে এবং আপনি বলছেন, আমি এই পরামর্শ টি গুরুত্বপূর্ণ ভাবে নিবো , আমি জানি না এটি কিভাবে হয়েছে , হয়তো আল্লাহপাক এটি একটি YouTube ভিডিওর মাধ্যমে করেছেন নয়তো একজন বন্ধুর মাধ্যমে করেছেন অথবা অন্য কোন ভাবে করেছেন ।

কিন্তু আপনি জীবনে ভালো কিছু করার জন্যই আপনার জীবনকে পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং যখন আপনি আপনার জীবনের আচরণগুলো পরিবর্তন করতে শুরু করবেন, প্রথম যেই মানুষ গুলো আপনার এই পরিবর্তন গুলো লক্ষ্য করবে তারা হচ্ছে আপনার নিজের পরিবার। তারা এটি লক্ষ্য করবেন যে আপনি আর আগের মানুষ টির মতো নেই। আপনি আগের মত কথা বলেন না, আগের মত আচরণ করেন না, আপনি পূর্বের জায়গা গুলোতেও আর যান না। আপনার আগের বন্ধু গুলোও আর নেই, এবং ঘটবেই। যখন আপনি ইসলামের দিকে ধাবিত হবেন তখন আপনি বন্ধুদের হারাতে শুরু করবেন । কারণ আপনার পূর্বের বন্ধুরা অনেক খারাপ কাজ করে এবং এখন আপনি তাদের সাথে এইসব খারাপ কাজে আর অংশ নিবেন না। সুতরাং আপনাকে বন্ধু হারানোর এই ব্যাপারটি সহ্য করতে হবে এবং এই একি সময়ে আপনার পরিবার ও বলবে যে আপনি কিছুটা অদ্ভুত আচরণ করছেন।

যুবক ছেলেদের প্রতি পরিবারের সদস্যরা এটিও বলে থাকেন যে, “তোমার মুখে এইগুলো কি? তুমি কি শেভ করতে ভুলে গিয়েছো? তোমার কি হয়েছে?”

এবং মেয়েরা যখন হিজাব পড়া শুরু করেন তখন পরিবারে সদস্যরা আকস্মিক ধাক্কা খায়, এবং এটি একটি মুসলিম পরিবার আপনি মনে করেন, তারা আপনাকে মাথা থেকে এই জিনিষটি খুলে ফেলতে বলবেন, “তোমাকে এখন যেমন লাগছে তুমি কি বিয়ের অনুষ্ঠানে এভাবেই যেতে চাও ? তুমি এভাবে গেলে আমি তোমার সাথে গাড়ীতে বসতে পারবো না । তুমি আমাদের কে কী মনে করো? হঠাৎ করে কি তোমাকে ইসলামের প্রধান মডেল মনে করছো ? কে মারা গিয়েছে এবং তোমাকে শেইখ বানালো ? মনে আছে তুমি গত বছর কেমন ছিলে ? তুমি পার্টি পশু গুলোর মত ছিলা । এখন তুমি নামায পড়তে যাবা?! সত্যিই! আমরা জানি যে তুমি সত্যিকার ভাবে কি রকম ছিলে ”।

অন্য কথায় , আপনি শুধু আপনার বন্ধুদের কেই হারাবেন না, আপনি আপনার পরিবার থেকেই সবচেয়ে কুৎসিত ধরনের টিটকারি ও সমালোচনার স্বীকার হবেন। প্রতিটি মুহূর্তে , সব সময় , যখনই তারা সুযোগ পাবে তখনই তারা আপনাকে কিছু না কিছু বলবেই । তারা আপনার দাড়ি সম্পর্কে কিছু বলবে , তারা আপনার নামায পড়ার অভ্যাস সম্পর্কে কিছু বলবে , আপনার সন্তানদের কে ইসলামিক স্কুল এ ভর্তি করানোর ব্যাপারে ও তারা কিছু বলবে । তারা আপনার ছেলে মেয়েদেরকে মক্তবে এ পাঠানোর ব্যাপারেও কিছু না কিছু বলবে । অথবা আপনি ফজর অথবা এশার নামাযের জন্য উঠবেন এবং মসজিদে যাবেন তারা এই সম্পর্কেও কিছু বলবে । তারা আপনার জন্য কিছু কমেন্ট করবেন এবং এইসব যন্ত্রণা দায়ক । এইগুলো অনেক জ্বালা (যন্ত্রণা) দায়ক । এই পরিবর্তন গুলো যদি যুবকদের মধ্যে হয়ে থাকে তখন তাদের বাবা মায়েরা বলেন তুমি তোমার মুসলিম বন্ধুদের সাথে মেলা মেশা বন্ধ করে দাও , মসজিদ এ যেয়ো না , তোমার সময় নষ্ট করো না ।

আমি , ওআল্লাহী , আমি এরকম গল্প জানি যখন বাবা তার ছেলে ব্যাপারটি ধরে ফেলছে। তার ক্লাস গুলো ৩-৪ ঘণ্টা ব্যবধানে । ক্লাসের মধ্যবর্তী সময়ে সে যোহর নামায পড়তে যায় এবং সে লাইব্রেরী তে পড়ালেখা না করে মসজিদ এই পড়ালেখা করতে শুরু করে দেয় । কারণ লাইব্রেরীতে দেখার মতন অনেক কিছু রয়েছে আর মসজিদের পরিবেশ ভাল।
“ ছেলে তুমি একজন চরমপন্থীতে পরিণত হচ্ছো ” !


এবং বাবার চোখে এখানে কোন ব্যাপার টি চরমপন্থা , যে ছেলেটি মসজিদে গিয়ে নামায পরছে , এটি তার জন্য চরম পন্থা , সুবহানআল্লাহ ! মুসলিমরা নিজেরাই ! আপনি কি মনে করেন অমুসলিমরা ইসলামের প্রতি বিমুখ ,
“তুমি কি দেখছো মুসলিম পরিবারের লোকজনরা কি করে? বাবা মায়েরা তাদের সন্তানদের কি করেন ? ” ।
আমি আমার নিজের ঘটনা জানি যেখানে বাবা মা সন্তানকে বলেছে যে তারা তার কলেজ এর বেতন দিতে পারবে না । আমারা তোমার জন্য একজন বর / কনে খুঁজবো না , যতক্ষণ না তুমি এই হিজাব খুলে ফেলছও , আমরা এটি করবো না ,তুমি যতক্ষণ পর্যন্ত না এই হিজাব খুলে ফেলছ আমরা ততক্ষণ পর্যন্ত তোমাকে আমাদের মেয়ে হিসেবে মেনে নেবো না । আমরা জনসম্মুখে তোমার সাথে একসাথে আর মুখ দেখাবো না , তুমি আমাদের সাথে আর কোথাও যেতে পারবে না । এই কথা গুলো একজন মা বলছিলেন , এবং আপনারা জানেন যে তারা কি বলবে , এখানে আশ্চর্য জনক কি আছে ? তারা আপনাকে নিজের সম্পর্কে খারাপ অনুভব করতে বাধ্য করবে। 


তারা আপনাকে বলবে ,তুমি কোন ধরনের মেয়ে ? তোমার নিজের সম্পর্কে লজ্জা করা উচিত । তুমি তোমার বাবা মাকে বিব্রত করছো । আমরা মুসলিম কিন্তু আমরা মুসলিম মুসলিম নয় । আমরা ঐ ধরনের মুসলিম নয় । আমরা আমাদের পরিবারে এইভাবে কাজ কর্ম করি না , এরা হচ্ছে ঐসকল মসজিদী লোকজন , ঐ ধরনের মসজিদী মানুষদের মতো হইও না । তারা এই ধরনের কথাই বলবে , এবং আপনি জেনে থাকবেন এখানে আশ্চর্য জনক ব্যাপারটি কী ? আপনি যদি আগের দিনের আপনার একজন পিতামহের ছবি দেখেন , ভালো ও বৃদ্ধ দাদার অনেক সুন্দর দাড়ি ছিলো এবং আপনি আপনার দাদীর ছবি দেখতে পারছেন না (ঘোমটার কারণে ) সুতরাং কে পরিবারের জন্য গর্বের ? এবং কে পরিবারের জন্য বিব্রতকর ( লজ্জাকর )? দেখুন এগুলোই এই সময়কার মুসলিম পরিবার , এবং আপনি এইসবের মধ্যেই রয়েছেন ।

এবং আপনি জানেন কি হবে ? কারণ আপনি ইসলামের দিকে পথচলা শুরু করেছেন যদি ইসলামের একজন শত্রু আপনার কাছে আসে এবং বলে তোমার ধর্ম কে পরিত্যাগ করো , আপনি বলবেন , ও তাই ? ! ! আমি আরো অনেক বেশী প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হবো ,আপনি আরও কর্মোদ্যম হবেন আপনার ধর্মের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যাবে যখন শত্রুরা ইসলামের উপর আঘাত হানবে , আমরা তখন আরও বেশী প্রজ্বলিত হয়ে উঠি , মুসলিমরা প্রতিবাদী হয়ে উঠে বিকারগ্র্রস্ত ভাবে । কেউ একজন নবী (সঃ) এবং মুসলিম দের নিয়ে কার্টুন আঁকলে তারা উন্মত্ত হয়ে যায় এবং বিকারগ্রস্ত ভাবে অপর এক লোকের কার গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় অথবা অন্য কিছু ভেঙ্গে ফেলে , , , কারণ তারা প্রকৃতপক্ষে রাগান্বিত , কিন্তু যখন কোন কিছু ঘটে তখন আমাদের বহিষ্কার করা হয় , একটা-কিছু আমাদের ধর্মের সম্মান নিয়ে প্রশ্ন করে , এমন কি এটি বোধগম্য হোক অথবা নাই হোক ।

কিন্তু যখন আপনার নিজ পরিবারের লোকজন এসে বলে , দেখো আমি তোমাকে ভালোবাসি , আমি তোমার সম্পর্কে উদ্বিগ্ন । আমি তোমাকে এরকম হতে দিতে চাই না । এটি ঐ ধরনের লোকের কাজ যারা কলেজ হতে বেরিয়ে আসে , যাদের একটি পেশা (চাকরী) নেই , যারা দুর্দশাগ্রস্ত জীবন যাপন করে , আমি তোমাকে এসব চরমপন্থা অবলম্বন করতে দিবো না । কেউ তোমাকে প্রভাবিত করছে , তোমার তাদের কাছ থেকে দূরে থাকা প্রয়োজন । তারা টেলিভিশনে কিছু দেখে ভয় পেয়ে যায় , এবং তুমি এই সকল জিনিষের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে যাও । এবং এইসকল কিছুর মধ্যে তোমার নিজের ধর্মকে ধরে রাখা কষ্ট কর হয়ে যায় , এটি কষ্টকর হয়ে যায় । কারণ এরা ইসলামের শত্রু নয় যারা আপনাকে ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে , আপনার নিজের পরিবার , আপনার নিজের বাবা মা আপনার নিজের স্বামী , আপনার নিজের স্ত্রী , আপনার নিজের ভাই , আপনার নিজের কাজিন , আপনার নিজের আত্মীয় স্বজন রা , যারা আপনাকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছে তাদের মধ্যে তারা একজন ।

আপনি এই ব্যাপার টি কিভাবে সামলাবেন? এইসব চাপের ক্ষেত্রে রেগে যাওয়া টা হচ্ছে সবচেয়ে অনুপযুক্ত প্রতিক্রিয়া । আর আপনি জানেন কি , এটিই সবচেয়ে প্রচলিত প্রতিক্রিয়া । আপনার নিজের বাবা মাই আপনার সাথে চীৎকার (রাগ) করবেন আপনার দাড়ি বড় করার জন্য এবং আপনি একজন গরম মাথার যুবক , এবং আপনি কি করবেন , আপনি বলেন
“ ও আচ্ছা ! এটি সুন্নত , তুমি আমাকে বলতে পারো না যে আমি কি করবো , তুমি সমাজকে অনুসরণ করছো আর আমি ইসলামকে অনুসরণ করার চেষ্টা করছি !! ”
এবং এভাবে আপনি তাদের মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিলেন , এভাবে যেতে বললেন । কারণ এটি আপনি করবেন এবং আল্লাহ চাচ্ছিলেন আপনি এটিই করুন , আপনার বাবা মায়ের কাছে ফিরে চীৎকার করুন , এবং তারা আপনার দাড়ি নিয়ে কথা বলছেন , এবং এটি নিয়ে ইব্রাহীম (আঃ) এর পিতাও প্রশ্ন করেছিলেন , সে কি ছোট কোন ব্যাপার নিয়ে কথা বলছিলো নাকি বড় কোন বিষয় নিয়ে কথা বলছিলো , যাও মূর্তি গুলোকে সিজদাহ করো, এবং সে কি তার শীতলতা ( শান্ত ) ধরে রাখতে পারবে ? সে কি রাগান্বিত হবে ? আমাদের শিখতে হবে যে আমরা আমাদের বাবা মায়ের সাথে কি রকম ব্যাবহার করবো এমনকি যখন তারা আমাদের কে দীন থেকে সরে আসতে বলবে তখনও , তারা মুসলিম হোক অথবা অমুসলিম হোক এটি কোন ব্যাপার নয়।

“পিতা-মাতা যদি তোমাকে আমার সাথে এমন বিষয়কে শরীক স্থির করতে পীড়াপীড়ি করে, যার জ্ঞান তোমার নেই; তবে তুমি তাদের কথা মানবে না এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে সহঅবস্থান করবে। যে আমার অভিমুখী হয়, তার পথ অনুসরণ করবে। অতঃপর তোমাদের প্রত্যাবর্তন আমারই দিকে এবং তোমরা যা করতে, আমি সে বিষয়ে তোমাদেরকে জ্ঞাত করবো।" (৩১:১৫)

আল্লাহ আজ ওয়াজাল আমাদের কে বলেছেন, যদি তারা তোমার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে , তারা যার অনুসরণ করে তোমাকে যদি তা করতে বাধ্য করে, তাদের কে মান্য করো না, একি সময়ে তাদের সাথে সহযোগিতা করো সবচেয়ে ভালো আচরণের মাধ্যমে, তাদের কে মান্য করা আলাদা ব্যাপার, তাদের সম্মান করা ও আলাদা, কারণ আপনি তাদের কে মান্য করেন নি শুধু মাত্র আল্লাহর জন্য যখন এটি হালাল ও হারাম এর ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে! অথবা যখন এটি ইমান ও শিরক (কুফর) এর ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে! আপনি তাদের কে মান্য করেন নি শুধুমাত্র এই জন্যই আপনাকে তাদের উপর রাগ করার অধিকার দেয়া হয় নি, আপনি পারেন না।


ইউটিউব লিংক: https://youtu.be/IvpbSF_X1Gc
 

0 comments
Labels: , , , ,

দোয়া-- সব কিছু চাওয়ার মাধ্যম

তারপর তিনি বলেন, "দা'ওয়াতাদ্‌দা'য়ী", এমন জোরাল শব্দ! তিনি বলেন "আমি", আচ্ছা প্রসঙ্গক্রমে বলি, "আমি" কখন ব্যবহার করা হয়? কখন বলেছিলাম? "আমি", "আমরা" আর "তিনি"। কখন "আমি" ব্যবহৃত হয়? খুব বেশি ভালবাসায়, অথবা খুব বেশি ক্রোধে? এখানে কোনটি? খুব বেশিই ভালাবাসায়! আমি সাড়া দেই, আমি নিজে সাড়া দেই, অবিলম্বে সাড়া দেই। কিন্তু কাকে তিনি সাড়া দেন? আপনি হয়তো ভাবতে পারেন আল্লাহ তাকেই সাড়া দেন যে প্রচুর দু'আ করে। বছরে ধরুন আমি একবারই দু'আ করি। যখন আপনার পরীক্ষা থাকে তখনঃ"ইয়া আল্লাহ! আমার পরীক্ষা আছে। আমীন।" অথবা লাল বাতি অতিক্রম করায় আপনি যখন পাঁচ হাজার রিয়ালের টিকেট পেতে যাচ্ছেন, তখন আপনার অবস্থা এরূপঃ "ইয়া আল্লাহ! আমার আর ক্যামেরায় দেখানো লাইসেন্সের মধ্যে একজন ফেরেশতা পাঠিয়ে দিন, আমি যেন এসএমএসটি না পাই, আর যাই পাই এসএমএসটি ছাড়া"। তখন আপনার আল্লাহকে স্মরণ হয়।

'দু'আ' শব্দটি ব্যবহার করা হয় যখন কেউ প্রচুর পরিমাণে দু'আ করে। কিন্তু কেউ যদি একবার দু'আ করে, মাত্র একবার, তখন সেটিকে বলা হয় 'দা'ওয়াতুন'। দা'ওয়াহ-এর শেষে আছে "তা মারবুতা", এই তা মারবুতা যেটি মাসতার মাররায় ব্যবহৃত হয় সেটি সেইসব অ্যারাবিক শব্দগুলোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যেগুলো একবার করে হয়। যেমনঃ 'দারব' মানে আঘাত করা কিন্তু 'দারবাতুন' মানে একবার আঘাত করা। আবার 'আকাল' মানে খাদ্য কিন্তু 'আকলাতুন' মানে একবারের খাবার। এই তামার মুতা তাকে 'একবার' করে দেয়। আল্লাহ বলেন, "দা'ওয়াতাদ্‌দা'য়ী", আমি একটি ডাকেও সাড়া দেই। সেই মানুষটি মাত্র কয়বার দু'আ করেছে? একবার। আল্লাহ তাকে জিজ্ঞেস করেন না, কোথায় ছিলে তুমি সারা বছর? কখনো কোন নামাযে আসোনি অথচ পুরো জীবনে কিনা একবার মাত্র দু'আ করলে আমার কাছে? ভুলে যাব তোমাকে। তুমি কিনা একবারই আমাকে স্মরণ করলে! ধরেন আপনি একজন চাকুরীজীবী। 


গোটা বছরে আপনি মাত্র একবার কাজে উপস্থিত হলেন। আপনার চাকরিটা থাকবে না! বস বলবেন, "আপনি কে?" "আমি এখানে কাজ করি"। "কখন?" "আমি গত বছর এই চাকরি পেয়েছি"। "এখানে কি করছেন?" "অ্যা, আমি জানি না কিন্তু এখন তো অন্তত এসেছি। আমরা কি আবার সব শুরু করতে পারি?" আপনার বস কি বলবেন, "অবশ্যই, এক্ষুনি স্যার! প্লিজ! আপনাকে একটি প্রোমোশন দেই না কেন!" না। তিনি আপনাকে সেই অফার দিবেন না। আল্লাহ আপনাকে দিচ্ছেন। 'দা'ওয়াহ' শব্দে, তিনি বলছেন, আমি তার আহ্বানেও সাড়া দিব যে কখনো দু'আ করেনি, মাত্র একবারই দু'আ করেছে। তাদেরও বলা উচিত, ইয়া আল্লাহ। তিনি জবাব দিবেন। নিজেকে বলবেন না, 'আহ! আমার তো দাড়িও নেই, কেবল গোঁফ রয়েছে, আল্লাহ আমার দু'আ কবুল করবেন না'।

আল্লাহ করবেন। অথবা রামাদানে মুভি দেখতে পারব না, তাই আগে থেকেই তিনটির মত মুভি দেখে ফেলেছি। এখন আমি দু'আ করব? আল্লাহ তারপরও সাড়া দিবেন আপনার ডাকে। এটা শুনে আবার কেউ মুভি দেখতে যাবেন না। কখনও মনে করবেন না যে আল্লাহ আপনার দু'আয় সাড়া দিবেন না। যে কিনা একটিও দু'আ করে, আল্লাহ তার ডাকেও সাড়া দেন। এবার আপনি বলতে পারেন, আচ্ছা, লোকটি একটি দু'আই করেছে কিন্তু হতে পারে যে সে একজন খুব ভাল মানুষ। হতে পারে সে একজন সালেহ, একজন মু'মিন, হতে পারে তার অনেক তাক্বওয়া আছে কিংবা তার ইলম বেশি। এও হতে পারে যে সে তওবা করেছে। 'উজিবুদ্‌ দা'ওয়াত্‌তায়িবি', আমি তার আহ্বানে সাড়া দেই যে তওবা করে। আল্লাহ তা বলেননি। তিনি বলেছেন, আমি সেই মানুষটিকে সাড়া দেই, 'দা'ওয়া', তার একটি দু'আতেই সাড়া দেই, 'আদ-দা'আ', যে ডেকেছে। এই মানুষটির উদাহারণ কীরূপ? সে কি করেছে? সে ডেকেছে। অন্যকথায়, আল্লাহ কি তার কাছ থেকে অন্য কোন গুণ আশা করেছেন? তিনি কি বলেছেন, দা'ওয়াতুল মুসল্লি? দা'ওয়াতুল মুত্তাক্বি? দা'ওয়াতুল মু'মিন? না! তিনি বলেননি যে আপনার তাক্ব্ওয়া থাকতে হবে, আপনার ইমান থাকতে হবে, বলেননি আপনার ইলম থাকতে হবে। এই দু'আয় বলেননি। কেন? 


কারণ, আল্লাহ এখানে সেইসব মানুষের সাথে কথা বলছেন যারা আল্লাহ-এর থেকে বহু দূরে চলে গেছে। এবং তিনি প্রথমেই তাদের বলছেন যে, দেখো আমি কাছেই, তুমি দূরে, আমি তোমার নিকটেই। এরপর তিনি তাদের বলেন, দেখো আমি জানি এই একটি দু'আ ছাড়া তোমাদের কাছে এই মুহুর্তে আর কিছুই নেই। ঠিক আছে। দাও, আমাকে এই একটি দু'আই দাও। যদিও তুমি একজন দা'আ, শুধুই একজন আহ্বানকারী। তোমার জন্য আমার কাছে আর কোন বিবরণ নেই। আমি তোমাকে এখনো পর্যন্ত একজন সালেহ ডাকতে পারি না, মুসলিম ডাকতে পারি না, মু'মিন ডাকতে পারি না। আমি তোমাকে কিছুই ডাকতে পারি না। আমি শুধু তোমাকে ডাকছি একজন দা'আ, একজন আহ্বানকারী। সেটি কোন যোগ্যতাই নয়। শুধু তাই। তাই যথেষ্ট।শুধু আমাকে ডাকো। সুবানাল্লাহ!

আল্লাহ এর পক্ষ থেকে কত বড় একটি আমন্ত্রণ! আর এগোনোর আগে বলে রাখি, আমি বলেছিলাম, কখনো একজন বসের ৫০০ জন কর্মচারী থাকে। সে কি তাদের সকলের নাম জানে? না। বিশেষ করে সেই কর্মচারীকে যে তাকে পুরো জীবনে মাত্র কয়টি ই-মেইল পাঠিয়েছে? একটি ই-মেইল। কিভাবে সে তাকে মনে রাখবে? কর্মচারীটি যদি তাকে টেক্সট মেসেজ পাঠায়, তার তো ওর নাম সেইভ করা নেই। সে জানবে না নাম্বারটি কোথা থেকে এসেছে। আল্লাহ বলেননি, 'উজিবুদ্‌ দা'ওয়াতাদ্‌ দা'য়িন' তিনি বলেছেন, 'উজিবুদ্‌ দা'ওয়াতা আদ দা'য়ি'। এই শব্দটির মধ্যে থাকা আলিফ লাম, তাকে মা'রিফা বানিয়ে দেয়। অর্থাৎ,যথাযথ এবং নির্দিষ্ট করে দেয়। অন্যভাবে বলা যায়, যে কেউ আল্লাহকে ডাকে, আল্লাহ বলেননা যে কোন একজন শুধুই ডেকেছে। তিনি বলেন সেইজন আমাকে ডেকেছে, সেই নির্দিষ্ট মানুষটি। আপনি আল্লাহ এর কাছে নির্দিষ্ট। তিনি আপনাকে বিশেষভাবে, ব্যক্তিগতভাবে চিনেন। 


কোন ডাক্তার আপনার নাম মনে রাখতে পারবে না যদি তাকে দিনে ১০০টি রোগী দেখতে হয়। সে আপনার নাম জানবে না। সে এভাবে বলে চেষ্টা করবে, "মুহাম্মাদ, কেমন আছ? চলে এস।" হাহাহা। সবাই মুহাম্মাদ, অন্তত সম্ভাবনা তো রয়েছে। সে আপনাকে নামে চিনতে পারবে না, আপনি জানেন। আমি মানুষের সাথে মিশি, ওয়াল্লাহি, আমি তাদের সাথে মিশি। তখন আমি বোল্টামোরে ছিলাম। একজন বয়স্ক ব্যক্তি আমার কাছে এলেন। বললেন, "বেটা কেমন আছ? আমার মনে পড়ে,তুমি যখন খুব ছোট ছিলে, তখন মসজিদের ভিতর ছোটাছুটি করতে।" আমি তখন মনে মনে ভাবছি, হায় আমি তো টেক্সাস থেকে। কিন্তু মুখে বললাম, "জ্বী, আমারও মনে আছে।" আমি কথা চালিয়ে গেলাম। হাহাহা। তার আসলে মনে নাই। মানুষ মনে রাখে না। আল্লাহ আয্‌ওয়াজ্জাল নির্দিষ্টরূপে পর্যন্ত চিনেন।

 আপনি হয়তো বলবেন, কোম্পানির সি.ই.ও কিভাবে আমার নাম জানবে। আমি তো শুধুই একজন নিরাপত্তাকর্মী। তার অবস্থান কত উঁচুতে আর আমি কত নিচু পর্যায়ে। কিভাবে সে আমার নাম জানবে? কিভাবে একজন প্রেসিডেন্ট তার দেশের একজন অধিবাসীকে চিনবে? কিভাবে সেটি সম্ভব! আপনারা সবাই যদি আমার কাছে এসে নিজেদের নাম বলেন, আমার কি মনে থাকবে? আমি জানি না। আমি জানি না। এখানে কারো কাছে যদি আমার ফোন নাম্বার থাকে,(প্লিজ আমার ফোন নাম্বার নিবেন না), কিন্তু যদি থেকে থাকে আর আপনি যদি আমাকে একটি এস.এম.এস পাঠান। আমার কাছে তো আপনার নাম্বারটি সেইভ করা নেই। আমি কি জানবো কে এটি পাঠিয়েছে? আমি জানব না কে পাঠিয়েছে। আমার কাছে শুধু একটি নামার রয়েছে। কোন নাম নেই। আমার কাছে কিছুই নেই। যখন আপনি আল্লাহকে ডাকেন, আল্লাহ বিশেষভাবে জানেন যে এক্স্যাক্টলি আপনি কে। এবং তিনি তৎক্ষণাৎ আপনাকে সাড়া দিতে চান। তিনি আপনার সাথে তখনই নতুন সম্পর্ক শুরু করতে চান। গতকাল যা হয়েছে, তা হয়ে গেছে। আজ থেকে শুরু করুন। আপনি আজই মুসলিম হয়ে উঠুন।

আজ থেকেই আল্লাহকে ডাকতে থাকুন। 'উজিবুদ দা'ওয়াতাদ্‌দা'য়ি।' এবার, যে প্রশ্নটি আপনাদের আগে করেছিলাম, যে প্রবলেমটি আপনাদের দিয়েছিলাম, সেটা ছিল যে ধরুন আপনি একজন গুরুত্বপূর্ণ মানুষের সাথে দেখা করতে চান। সেটি কার শিডিউলে হয়? আপনার না গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির? গুরুত্বপূর্ণ মানুষটির শিডিউলে। শিক্ষা মন্ত্রীর সাথে দেখা করতে চাইলে আপনি তার মন্ত্রণালয়ে হেঁটে গিয়ে তাকে বলবেন না যে "এহ, চলুন, আপনার সাথে আমার এক মিনিট কথা আছে।" আমি ডিসিতে গিয়ে বলব না যে ওবামার সাথে আমার পিজা স্লাইস খাওয়া প্রয়োজন। আপনি এমনি এমনি প্রেসিডেন্টের কাছে যেতে পারবেন না। আমিও পারব না। আপনি যদি একজন কর্মচারী হন যেমন কেউ যদি আগে মাইক্রোসফটে কাজ করত যখন বিল গেইটস সেখানে ছিলেন। আপনি বলবেন না, "হেই বিল, আমার সাথে পিজা খাবে?" আপনি সেটা করবেন না। আপনার জন্য তার সময় নেই। আল্লাহকে ডাকার ভাল সময় কোনটি? মানুষ বলে কোন সময়টি আল্লাহ এর কাছে দু'আ করার জন্যে উত্তম। মানুষ তাই বলে। আর অবশ্যই আমরা রামাদান নিয়ে কথা বলছি। সে যাই হোক, তিনি কি বলেন এই ব্যপারে। তিনি বলেন, 'উজিবুদ দা'ওয়াতাদ্‌দা'য়ি ইযা' যে কোন সময়ে। যে কোন সময়, দা'আনি, যখনই সে ডেকেছে। যখনই তুমি আমাকে ডাকবে, তখনই আমি তোমাকে সাড়া দিব। সকালে ডাকো, আমি সাড়া দিব। অপরাহ্নে ডাকো, আমি সাড়া দিব। ঘুমোতে যাবার আগে ডাকো, আমি সাড়া দিব।

সুবানাল্লাহ! এটি সম্পূর্ণ আয়াত নয়। এটি আয়াতের প্রথম অংশ। আমি তোমাকে সাড়া দিব যখনই তুমি আমাকে ডাকবে। এটি আল্লাহ এর আহ্বান। এটা কিভাবে হয় যে আমরা এই আহ্বানকে উপেক্ষা করে যাই? কিভাবে একজন মানুষ আল্লাহের বাণী শুনেও দু'আ না করে থাকতে পারে? আমি বুঝতে পারি না। তারপর তিনি বলেন, এতক্ষণে আমি তোমাকে আহ্বান করলাম। আমার আহ্বান হল, আমি তোমার কাছেই আছি, আমি যেকোন সময় তোমার ডাক শুনতে প্রস্তুত, যদিও তুমি একবার দু'আ কর, তারপরও আমি তোমার কথা শুনব। দু'আ ছাড়া তোমার আর কোন ইসলামিক গুণ না থাকলেও আমি তা শুনব। তবে তোমার কি করা উচিৎ? আল্লাহ আপনার জন্যে এতসব করছেন। আপনি তাঁর জন্যে কি করবেন? তিনি বলেন 'ফাল ইয়াসতাজিবুলি'। অন্যান্য শব্দের ছিল আজাবা আর ইসতিজা, মনে আছে? ইসতিজাবা মানেও হল উত্তর দেয়ার চেষ্টা করা। কেউ আমাকে বলল, "ভাই, আপনার সাথে লাঞ্চ করতে চাই।" আমি বলব, "আমি সময় বের করার চেষ্টা করব। আমি জানি না আমি এইটা পারব কিনা। তবে আমি চেষ্টা করব।" চেষ্টা করা মানে, হয়ত আপনি সফল হবেন, অথবা হয়তো বিফলতা লাভ করবেন।

আল্লাহ বলেন 'ফাল ইয়াসতাজিবুলি', তাদের অন্তত আমাকে সাড়া দেয়া উচিত। তোমরা আমার কাছে কিছু জিনিষ চাইছ, আল্লাহ বলেন। তোমরা আমার কাছে ভাল চাকরি চাইছ, স্বাস্থ্য কামনা করছ, তোমাদের সন্তানদের নিরাপদে রাখতে বলছ, তোমাদের বাবা মায়ের জন্যে আমার কাছে চাইছ, একটি বাড়ি চাইছ। তোমরা আমার কাছে সবকিছু চাইছ, আমিও তোমাদের কাছে কিছু আশা করছি। আমি তোমাদের কাছে কি চাইছি? 'ফাল ইয়াসতাজিবুলি', তাদের উচিত আমার ডাকে সাড়া দেয়া। তাদের উচিত আমাকে সাড়া দেয়া। এখন ব্যপারটি হল, ফাতিহায়, সুরাতুল ফাতিহায়, আমরা আল্লাহ এর কাছ কি চাই? কেউ জানেন? আমরা চাই পথপ্রদর্শন। কিন্তু আল্লাহ আমাদের কাছে কি চান? ইবাদাহ। 'ইয়্যাকা না'বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাসতা'য়িন'। 'নাসতা'য়িন' মানে আমরা সাহায্য চাই। কিন্তু আল্লাহের কাছে কিছু চাইবার আগে, আমরা আল্লাহকে বলি যে আমরা তাঁর জন্যে কি করব। আমরা তাঁর জন্যে কি করব? 'ইয়্যাকা না'বুদু'। তিনি আমাদের জন্যে কি করবেন? 'ইস্‌তি'আনা ' তিনি আমাদের সাহায্য করবেন। তাহলে আপনি আল্লাহের জন্যে কি করবেন সেটি প্রথমে আসা উচিত। আর দ্বিতীয়ত আসবে আপনি নিজের জন্যে যা চান।


 কিন্তু রামাদানের এই সকল আয়াতে, তিনি বলেন, আমি তোমাকে সাড়া দিব যখনই তুমি আমাকে ডাকবে। এরপর তিনি বলেন , তোমার উচিত আমাকে সাড়া দেয়া। তিনি বলেননি, আমাকে সাড়া দিলে পরে আমি তোমাকে সাড়া দিব। সুবাহানাল্লাহ! এমন কি তিনি নিজেকে দ্বিতীয় পজিশনে রেখেছেন! এবং এই আয়াতে প্রথমে রেখেছেন আপনাকে আর আমাকে। তিনি নিজেকে দ্বিতীয় পজিশনে রেখেছেন। 'ফাল ইয়াসতাজিবুলি ওয়া ইউ'মিনুবি' তাদের উচিত আমার প্রতি সাড়া দেয়া, খাঁটি ঈমান আনা। আমাকে প্রকৃতরুপে বিশ্বাস করা তাদের উচিত।'লা'আল্লাহুম ইয়াসহুদুন'(?) যাতে তারা সরল পথে পরিচালিত হতে পারে। যাতে তারা ভাল মানুষ হতে পারে। তারা যেন নিজেদের বদলে নিতে পারে। সুবাহানাল্লাহ! রামাদানের এই কিছু আয়াত রূপান্তরে ভূমিকা রাখে, একেবারে বদলে দেয় এই মাস সম্পর্কে আপনি যেভাবে ভাবতেন। আমরা যদি এই কয়েকটি আয়াতই শুধু অনুধাবন করি, এদের প্রতিফলন ঘটাই, তবে কোর'আনের সাথে, দু'আর সাথে, আল্লাহ-এর সাথে, আপনার যে সম্পর্ক তৈরী হবে, তা রামাদান পরবর্তীকালীন সময়ের জন্যেও সম্পন্ন হয়ে যাবে। এই সকল জিনিষ আপনাকে অন্তরে গেঁথে নিতে হবে।


ইউটিউব লিংকঃ http://youtu.be/zhuXilGRG5M

0 comments
Labels: , , , , ,

নারীদের ঘরে নামায পড়ার হাদিসটির ব্যাখ্যা

●|● নারীদের ঘরে নামায পড়ার হাদিসটির ব্যাখ্যা ●|●

আপনারা জানেন, ধর্ম তাদের কাছে বেশ কঠোর। আমার অনেক ছাত্র/ছাত্রীরা আমার কাছে দ্বীন শিখতে আসেন। আরবি শিখতে আসেন। শায়খ আব্দুল নাসের এর কাছ থেকে ইসলামিক শরীয়াহ শিখতে আসেন। সারা আমেরিকা থেকে তারা টেক্সাসে আসেন। যখন আমি তাদেরকে শিখাই এবং তারা কিছু শিখেন, তারা বলে্ন, অনেক বোনই আছেন যারা হিজাব পরেন এবং শিক্ষার জন্য নানা জায়গায় ঘুড়ে বেড়ান। তারা কুর'আন মুখস্ত করেন। উস্তাদ, একটা হাদিস আছে যেটা আমাকে খুব কষ্ট দেয়। এটি বলতে আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে, এটাকে অন্যও বলতে পারছি না। এটি আমাকে অত্যন্ত কষ্ট দিচ্ছে। আমি বললাম, বলুন আমাকে।

যখন তিনি আমাকে হাদিসটি বললেন, আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, এটি আপনি কার কাছে শুনেছেন? কারণ, এটি কোন সামঞ্জস্যপূর্ণ হাদিস নয়। এটি কোন সামঞ্জস্যপূর্ণ আয়াতও নয়। যে ব্যক্তি এটি ব্যাখ্যা করেছেন তিনি অসামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যাখ্যা শিখাচ্ছেন। যে ব্যক্তির নিজের মধ্যে সামঞ্জস্যতা নেই, তিনি পুরো ধর্মকে একটি কলুষিত উপায়ে বর্ণনা করছেন শুধুমাত্র তার নিজস্ব মনস্তাত্ত্বিক সমস্যার কারনে। আর এর ফলে যা হয়েছে তা হল, ইসলামের এই পুরো প্রজন্মকে ইসলামের পথ থেকে ভীতির মুখে ঠেলে দিয়েছে।

যদি আপনার নিজের মধ্যে সামঞ্জস্যতা না থাকে, তখন ধর্মের মধ্যে সামঞ্জস্যতা আনার চেষ্টা করা মানে তারা ধর্মের মধ্যে তিক্ততা দেখতে পান। তারা দেখেন মানুষ ধর্ম থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।

উমাইমা (রাঃ) এর বর্ণিত যে হাদিসটি আছে, তিনি রাসূল (সঃ) এর কাছে এসে অভিযোগ করেছিলেন আসলে এটি একটি বিখ্যাত হাদিস। আমি আপনাদেরকে এর একটি অংশ বলছি। আসলে আমি শায়খ আব্দুল্লাহ আতহামীর সাথে এই হাদিসটি নিয়ে বসেছিলাম যিনি এখানেই আছেন। তিনি আমার কাছে এটি বিষদভাবে বর্ণনা করেছিলেন। আমি তাঁকে বলেছিলাম যে, আপনাকে আমাদের ক্যাম্পাসে আসতে হবে এবং আমাদের ছাত্র/ছাত্রীদেরকে এটি বুঝিয়ে বলতে হবে। তিনি কোথাও যেতে পারেন না। কাজেই আপনারা খুব ভাগ্যবান, তিনি কোথাও যেতে পারেন না। কারণ তিনি এখন এখানেই আছেন, আপনারা সত্যিই খুবই ভাগ্যবান।

যাই হোক, আমি এই হাদিসটি সম্পর্কে বলছিলাম।

এই হাদিসটি আমাদেরকে বলে যে, মহিলাদের উচিত বাড়ির একেবারে ভেতরের অংশে নামাজ আদায় করে। এবং এই হাদিসটি দিয়েই ফাতোয়া দেয়া হয় যে, মহিলাদের মসজিদে নামাজ পড়তে আসা উচিত না। তাদের নামাজ পড়া উচিত একেবারে বাড়ির ভেতরে।

পুরো হাদিসটি সম্পর্কে পড়াশোনা করার পর প্রথমত, আরও হাদিস আছে। আরও যে হাদিস আছে, সেটিতে মহিলারা রাসূল (সঃ) এর কাছে এসে অভিযোগ করেছিলেন যে, আমরা সালাতুল ফজরের জন্য মসজিদে আসি। তারা কোথা থেকে আসতেন? বাসা থেকে আল মসজিদে নববী তারা সালাতুল ফজরের জন্য আসতেন। কিন্তু আমাদের রাস্তায় নর্দমা/খাল পড়ে। তাই আমাদের কাপড় উঠিয়ে এটি পার হতে হয়। আমরা কি বাড়ীতে নামাজ পড়তে পারি? তিনি বলেছিলেন, না। বাকি পথ আসতে আসতে তোমাদের কাপড় থেকে তা ধুয়ে যাবে। তোমাদেরকে তারপরেও আসতে হবে। এবং সেটি ছিল সালাতুল ফজর। মহিলাদের হাঁটু পানি পার হয়ে মসজিদে যেতে হোত। আপনারা কেউ তো এটির উল্লেখ করেন না!

প্রসঙ্গক্রমে উমাইমা (রাঃ) এর গল্পে ফিরে যাই। এই মহিলা যাকে রাসূল (সঃ) বাড়ির একেবারে ভেতরে জায়গায় নামাজ পড়তে বলেছিলেন। যদিও তিনি মসজিদে নামাজ পড়তে চাইতেন। যখন আপনারা পুরো গল্পটি পড়বেন তখন আপনারা অনেক মজার ব্যাপার খুঁজে পাবেন গল্পটিতে। তার বৈবাহিক সম্পর্কে কিছু সমস্যা ছিল। তার স্বামী তাকে খুবই খুবই হিংসা করতেন। তার ব্যাপারে মাত্রাতিরিক্ত রক্ষণমূলক ছিলেন তিনি। উমাইমা (রাঃ) যখন নামাজ পড়তেন তখন তাঁর স্বামী তাঁকে বিরক্ত করতেন।

হ্যাঁ। রাসূল (সঃ) তাঁকে বললেন, কেননা উমাইমা (রাঃ) রাসূল (সঃ) এর কাছে অভিযোগ করেছিলেন যে, আমার স্বামী আমাকে নামাজ পড়ার সময় বিরক্ত করে। রাসূল (সঃ) তার স্বামীকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এটা কেন করছো? উত্তরে তার স্বামী বললেন, আমার স্ত্রী আমার সূরাগুলো চুরি করেছে! অন্যভাবে, তিনি যখন নামাজ পড়তেন তখন তার স্ত্রী তার কুর'আন তিলাওয়াত শুনে তা মুখস্ত করতেন। তিনি যখন এই মুখস্ত করা কুর'আনের আয়াতগুলো তিলাওয়াত করে নামাজ পড়া শুরু করলেন নিজে নিজে তখন তার স্বামী বললেন, সে নিজেই নামাজ পড়তে শুরু করেছে। আমি আর তার ইমামতী করতে পারছি না!

আসলে উমাইমা (রাঃ) যখন নিজে নিজে নামাজ পড়তে শুরু করেছিলেন, তখন তার স্বামী সেটিকে সহজভাবে নিতে পারেননি। সে নামাজে তাকে বিরক্ত করতেন। এরপর যখন উমাইমা (রাঃ) মসজিদে আসতেন, তখন সে অত্যন্ত রাগান্বিত হত। তিনি তার স্ত্রীর প্রতি এতোটাই আচ্ছন্ন ছিলেন যে, তিনি তাকে ছেড়ে কয়েক মিনিটও থাকতে পারতেন না। ব্যাপারটি হচ্ছে যখন উমাইমা (রাঃ) মসজিদে নামাজ পড়তেন, কাজেই রাসূল (সঃ) উমাইমা (রাঃ) কে বলেছিলেন, দেখো! সবার আগে তোমার উচিত তোমার বৈবাহিক সম্পর্ক রক্ষা করা। তোমাদের বৈবাহিক সম্পর্ক এই মুহূর্তে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। কাজেই তোমার উচিত বাড়িতে বেশি সময় ব্যয় করা। তোমার জন্য ভালো হবে যদি তুমি মসজিদে না আসো। প্রসঙ্গক্রমে, যেন সে তোমাকে বিরক্ত করতে না পারে, বাড়ির একেবারে ভেতরের স্থানে নামাজ পড়ো। যেন নিদেনপক্ষে তুমি শান্তি সহকারে নামাজ আদায় করতে পার। কারণ সে তোমাকে পাগল করে ছাড়ছে।

এখন আপনি যদি পেছনের ঘটনা না জানেন আর বলেন, মহিলাদের উচিত বাড়ির ভেতরে নামাজ আদায় করা। যদি কারও মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা থাকে মহিলাদের প্রতি, যখন সে বিয়ে করে এবং তার স্ত্রীকে এই হাদিসটি দেখায় কারণ সে বাড়ির ভেতরের অংশে নামাজ পড়েনি! তার কাছে দলিল আছে। তার কাছে প্রমাণ আছে। অথচ সামঞ্জস্যতা নেই!

এটি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আপনারা দেখেছেন, ব্যাপারটি মজার কিন্তু দুঃখজনকও! মানুষের জীবন দ্বীনের নামে তিক্তকর হয়ে যাচ্ছে! যে দ্বীন কিনা দুঃখ দূর করার জন্য এসেছে। এই দ্বীন যে কোন বিষয়ে মানুষকে সামঞ্জস্যপূর্ণ জীবন লাভের শিক্ষা দেয়।

ভিডিওটির ইউটিউব লিঙ্কঃ https://youtu.be/WfHaldTQPkY

0 comments