Labels: , ,

কুর'আনে বর্ণিত ভারসাম্যপূর্ণ বর্ণনার উদাহরণ - আয়াতুল কুরসী

কুর'আনে বর্ণিত  ভারসাম্যপূর্ণ বর্ণনার উদাহরণ -  আয়াতুল কুরসী

আয়াতুল কুরসীতে সর্বমোট নয়টি বাক্য রয়েছে।

১। اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ ‘‘আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক।’’ সুতরাং প্রথম বাক্যটি আল্লাহ সম্পর্কে আর এ বাক্যে তিনি তাঁর দু’টি নাম উল্লেখ করেছেন। আল হাইয়ু, আল কাইয়ুম । 

২। لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ ۚ ‘‘তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়।’’ অর্থাৎ , এই বাক্যে বলা হল- তাঁর ঝিমুনিও আসে না, ঘুমও পায় না। 

৩। لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ‘‘আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর।’’ আর এই বাক্যে বলা হল- আসমান এবং জমিনের সবকিছুই তাঁর। 

৪। مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِندَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ ۚ ‘‘কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ব্যতীত? ’’ এই বাক্যে বলা হল- তাঁর অনুমতি ব্যতীত কেউ কারো জন্য সুপারিশ করতে পারবে না । 

৫। يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ ‘‘দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন।’’ আর এই বাক্যের বক্তব্য হল- তিনি সামনের এবং পিছনের সবই জানেন।

৬। وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ ‘‘তিনি নিজে যে জিনিসের জ্ঞান মানুষকে দিতে চান সেটুকু ছাড়া তাঁর জ্ঞানের কিছুই তারা আয়ত্ব করতে পারে না।’’ অথর্াৎ, তিনি যা জানাতে চান তা ব্যতীত তারা কিছুই জানে না । 

৭ । وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ ‘‘তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে।’’ 

৮। وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا ‘‘এগুলোর রক্ষণাবেক্ষন তাঁকে ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত করে না।’’ 

৯। وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ ‘‘তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।’’ এ বাক্যে আল্লাহর দু’টি নাম রয়েছে – আল আলিয়ু, আল আজিম । 

এখন খেয়াল করুন, এখানে মোট বাক্য সংখ্যা ৯ টি।

**এক নাম্বার বাক্যে আল্লাহর দু’টি নাম রয়েছে(আল হাইয়ু, আল কাইয়ুম) আর নয় নাম্বার বাক্যেও আল্লাহর দু’টি নাম রয়েছে।(আল আলিয়ু, আল আজিম)

**দুই নাম্বার বাক্যে বলা হল তাঁর ঝিমুনিও আসে না, ঘুমও পায় না। এ বাক্যের সাথে আট নাম্বার বাক্যের কি কোন মিল খুঁজে পান? কারো ঘুম আসে কখন? যখন সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। আর আট নাম্বার বাক্যে আল্লাহ বলছেন তিনি ক্লান্ত হন না। তাহলে আমরা দুই এবং আট নাম্বার বাক্যের মিল খুঁজে পেলাম।

**তিন এবং সাত নাম্বার বাক্যের সম্পর্ক বর্ণনা করার আগে কিছু বিষয়ে পরিস্কার ধারনা নেয়া যাক। একজন রাজা এবং কোন জিনিসের একজন মালিকের মাঝে পার্থক্য কী ? আমার হাতে যে কলমটি আছে আমি কি এটার রাজা না মালিক? এটা বলাটা বোকার মত শোনাবে যদি আমি বলি – আমি এই কলমটির সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী, এই কলমটির উপর আমার সর্বময় ক্ষমতা এবং রাজত্ব রয়েছে। এই কথাগুলো অযৌক্তিক শোনায়, কারণ এটি একটি কলম মাত্র।

তাই আমি বলতে পারি যে আমি এই কলমটির মালিক, কিন্তু আমি বলতে পারি না যে আমি কলমটির রাজা।রাজা শব্দটি যে সব ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায় যেমন – একটি দ্বীপ, একটি দেশ, বা একটি মহাদেশের রাজা। তাহলে রাজা শব্দটি ব্যবহৃত হয় বড় কিছুর ক্ষেত্রে। আর মালিক শব্দটি ব্যবহৃত হয় ছোট কিছুর ক্ষেত্রে । মালিক হওয়ার যেমন সুবিধা-অসুবিধা রয়েছে তেমনি রাজা হওয়ারও সুবিধা- অসুবিধা রয়েছে। যদি আমি কোন কিছুর মালিক হই, আমি এ সম্পর্কে সবকিছু জানি, সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।

কিন্তু একজন রাজার পক্ষে তাঁর রাজ্যের ছোট ছোট বিষয়গুলো সম্পর্কে জানা বা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। আপনি যদি একটি দেশের রাজা হন আপনি কি সেই দেশে যত ফুল জন্মে সবগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন? না। সংক্ষেপে বলতে গেলে- একজন মালিক ছোট ছোট বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারে আর রাজা বড় বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আপনি যখন ছোট বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করেন, তখন বড় বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। আবার যখন বড় বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন তখন ছোট বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করা আপনার সাধ্যের বাইরে।

এখন তিন নাম্বার বাক্যে আল্লাহ বলছেন- ‘‘আসমান এবং জমিনের সবকিছুই তাঁর।’’ এখানে আল্লাহ নিজেকে আসমান এবং জমিনের মালিক হিসেবে বর্ণনা করছেন।

আর সাত নাম্বার বাক্যে বলা হল- ‘‘তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে।’’ অর্থাৎ আসমান এবং জমিনের রাজত্ব তাঁর।

সুতরাং তিন নাম্বার বাক্য হল তাঁর মালিকানা নিয়ে আর সাত নাম্বার বাক্য হল তাঁর রাজত্ব নিয়ে। একই সাথে তিনি মালিক এবং রাজা, আর এটা একমাত্র তাঁর পক্ষেই সম্ভব। রাজা হিসেবে তিনি যেমন বড় বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করেন তেমনি মালিক হিসেবে আসমান এবং জমিনের ছোট ছোট বিষয়গুলোর নিয়ন্ত্রণও তাঁরই হাতে।

**দেখুন, চার নাম্বার এবং ছয় নাম্বার উভয় বাক্যে ‘ব্যতীত’ শব্দটি এসেছে।চার নাম্বার বাক্যে বলা হল- কেউ কোন সুপারিশ করতে পারবে না তাঁর অনুমতি ব্যতীত। অর্থাৎ কেউ কারো জন্য কিছু করতে পারবে না তাঁর অনুমতি ব্যতীত। আর ছয় নাম্বার বাক্যে বলা হল- কেউ কিছু জানতে পারবে না একমাত্র তিনি যা জানাতে চান তা ব্যতীত। সুতরাং চার এবং ছয় নাম্বার বাক্য দ্বারা বলা হল- আমরা কিছুই করতে সক্ষম নই আল্লাহর হস্তক্ষেপ ব্যতীত। চার নাম্বার বাক্যে ব্যতিক্রমের কথা বলা হল আবার ছয় নাম্বার বাক্যেও ব্যতিক্রমের কথা বলা হল।

এখন দেখুন, ১ নাম্বার বাক্য ৯ নাম্বার বাক্যের সাথে, ২ নাম্বার ৮ নাম্বার এর সাথে, ৩ নাম্বার ৭ নাম্বার এর সাথে, ৪ নাম্বার ৬ নাম্বার এর সাথে সম্পর্কযুক্ত। এখন বাকি আছে ৫ নাম্বার বাক্যটি। পাঁচ নাম্বার বাক্যটি অসাধারণ। পাঁচ নাম্বার বাক্যে তিনি বলছেন- তিনি সামনের এবং পিছনের সবই জানেন। তিনি আয়াতের সামনে পিছনে যা আছে জানেন। সুবহানাল্লাহ।
উস্তাদের "Quran for Young Adults" (Day 12) থেকে অনুপ্রাণিত।

No comments:

Post a Comment