Labels: , , ,

যখন আপনি নিজেকে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন

●|● যখন আপনি নিজেকে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন ●|●

হয়তো আপনি একজন খুব বেশী ধার্মিক মানুষ নন এবং আপনি আপনার পরিবারের বাকি সদস্যদের মতই জীবন যাপন করছেন এবং আপনার হৃদয়ে হঠাৎ এমন কিছু একটা অনুভূত হয়েছে এবং আপনি বলছেন, আমি এই পরামর্শ টি গুরুত্বপূর্ণ ভাবে নিবো , আমি জানি না এটি কিভাবে হয়েছে , হয়তো আল্লাহপাক এটি একটি YouTube ভিডিওর মাধ্যমে করেছেন নয়তো একজন বন্ধুর মাধ্যমে করেছেন অথবা অন্য কোন ভাবে করেছেন ।

কিন্তু আপনি জীবনে ভালো কিছু করার জন্যই আপনার জীবনকে পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং যখন আপনি আপনার জীবনের আচরণগুলো পরিবর্তন করতে শুরু করবেন, প্রথম যেই মানুষ গুলো আপনার এই পরিবর্তন গুলো লক্ষ্য করবে তারা হচ্ছে আপনার নিজের পরিবার। তারা এটি লক্ষ্য করবেন যে আপনি আর আগের মানুষ টির মতো নেই। আপনি আগের মত কথা বলেন না, আগের মত আচরণ করেন না, আপনি পূর্বের জায়গা গুলোতেও আর যান না। আপনার আগের বন্ধু গুলোও আর নেই, এবং ঘটবেই। যখন আপনি ইসলামের দিকে ধাবিত হবেন তখন আপনি বন্ধুদের হারাতে শুরু করবেন । কারণ আপনার পূর্বের বন্ধুরা অনেক খারাপ কাজ করে এবং এখন আপনি তাদের সাথে এইসব খারাপ কাজে আর অংশ নিবেন না। সুতরাং আপনাকে বন্ধু হারানোর এই ব্যাপারটি সহ্য করতে হবে এবং এই একি সময়ে আপনার পরিবার ও বলবে যে আপনি কিছুটা অদ্ভুত আচরণ করছেন।

যুবক ছেলেদের প্রতি পরিবারের সদস্যরা এটিও বলে থাকেন যে, “তোমার মুখে এইগুলো কি? তুমি কি শেভ করতে ভুলে গিয়েছো? তোমার কি হয়েছে?”

এবং মেয়েরা যখন হিজাব পড়া শুরু করেন তখন পরিবারে সদস্যরা আকস্মিক ধাক্কা খায়, এবং এটি একটি মুসলিম পরিবার আপনি মনে করেন, তারা আপনাকে মাথা থেকে এই জিনিষটি খুলে ফেলতে বলবেন, “তোমাকে এখন যেমন লাগছে তুমি কি বিয়ের অনুষ্ঠানে এভাবেই যেতে চাও ? তুমি এভাবে গেলে আমি তোমার সাথে গাড়ীতে বসতে পারবো না । তুমি আমাদের কে কী মনে করো? হঠাৎ করে কি তোমাকে ইসলামের প্রধান মডেল মনে করছো ? কে মারা গিয়েছে এবং তোমাকে শেইখ বানালো ? মনে আছে তুমি গত বছর কেমন ছিলে ? তুমি পার্টি পশু গুলোর মত ছিলা । এখন তুমি নামায পড়তে যাবা?! সত্যিই! আমরা জানি যে তুমি সত্যিকার ভাবে কি রকম ছিলে ”।

অন্য কথায় , আপনি শুধু আপনার বন্ধুদের কেই হারাবেন না, আপনি আপনার পরিবার থেকেই সবচেয়ে কুৎসিত ধরনের টিটকারি ও সমালোচনার স্বীকার হবেন। প্রতিটি মুহূর্তে , সব সময় , যখনই তারা সুযোগ পাবে তখনই তারা আপনাকে কিছু না কিছু বলবেই । তারা আপনার দাড়ি সম্পর্কে কিছু বলবে , তারা আপনার নামায পড়ার অভ্যাস সম্পর্কে কিছু বলবে , আপনার সন্তানদের কে ইসলামিক স্কুল এ ভর্তি করানোর ব্যাপারে ও তারা কিছু বলবে । তারা আপনার ছেলে মেয়েদেরকে মক্তবে এ পাঠানোর ব্যাপারেও কিছু না কিছু বলবে । অথবা আপনি ফজর অথবা এশার নামাযের জন্য উঠবেন এবং মসজিদে যাবেন তারা এই সম্পর্কেও কিছু বলবে । তারা আপনার জন্য কিছু কমেন্ট করবেন এবং এইসব যন্ত্রণা দায়ক । এইগুলো অনেক জ্বালা (যন্ত্রণা) দায়ক । এই পরিবর্তন গুলো যদি যুবকদের মধ্যে হয়ে থাকে তখন তাদের বাবা মায়েরা বলেন তুমি তোমার মুসলিম বন্ধুদের সাথে মেলা মেশা বন্ধ করে দাও , মসজিদ এ যেয়ো না , তোমার সময় নষ্ট করো না ।

আমি , ওআল্লাহী , আমি এরকম গল্প জানি যখন বাবা তার ছেলে ব্যাপারটি ধরে ফেলছে। তার ক্লাস গুলো ৩-৪ ঘণ্টা ব্যবধানে । ক্লাসের মধ্যবর্তী সময়ে সে যোহর নামায পড়তে যায় এবং সে লাইব্রেরী তে পড়ালেখা না করে মসজিদ এই পড়ালেখা করতে শুরু করে দেয় । কারণ লাইব্রেরীতে দেখার মতন অনেক কিছু রয়েছে আর মসজিদের পরিবেশ ভাল।
“ ছেলে তুমি একজন চরমপন্থীতে পরিণত হচ্ছো ” !


এবং বাবার চোখে এখানে কোন ব্যাপার টি চরমপন্থা , যে ছেলেটি মসজিদে গিয়ে নামায পরছে , এটি তার জন্য চরম পন্থা , সুবহানআল্লাহ ! মুসলিমরা নিজেরাই ! আপনি কি মনে করেন অমুসলিমরা ইসলামের প্রতি বিমুখ ,
“তুমি কি দেখছো মুসলিম পরিবারের লোকজনরা কি করে? বাবা মায়েরা তাদের সন্তানদের কি করেন ? ” ।
আমি আমার নিজের ঘটনা জানি যেখানে বাবা মা সন্তানকে বলেছে যে তারা তার কলেজ এর বেতন দিতে পারবে না । আমারা তোমার জন্য একজন বর / কনে খুঁজবো না , যতক্ষণ না তুমি এই হিজাব খুলে ফেলছও , আমরা এটি করবো না ,তুমি যতক্ষণ পর্যন্ত না এই হিজাব খুলে ফেলছ আমরা ততক্ষণ পর্যন্ত তোমাকে আমাদের মেয়ে হিসেবে মেনে নেবো না । আমরা জনসম্মুখে তোমার সাথে একসাথে আর মুখ দেখাবো না , তুমি আমাদের সাথে আর কোথাও যেতে পারবে না । এই কথা গুলো একজন মা বলছিলেন , এবং আপনারা জানেন যে তারা কি বলবে , এখানে আশ্চর্য জনক কি আছে ? তারা আপনাকে নিজের সম্পর্কে খারাপ অনুভব করতে বাধ্য করবে। 


তারা আপনাকে বলবে ,তুমি কোন ধরনের মেয়ে ? তোমার নিজের সম্পর্কে লজ্জা করা উচিত । তুমি তোমার বাবা মাকে বিব্রত করছো । আমরা মুসলিম কিন্তু আমরা মুসলিম মুসলিম নয় । আমরা ঐ ধরনের মুসলিম নয় । আমরা আমাদের পরিবারে এইভাবে কাজ কর্ম করি না , এরা হচ্ছে ঐসকল মসজিদী লোকজন , ঐ ধরনের মসজিদী মানুষদের মতো হইও না । তারা এই ধরনের কথাই বলবে , এবং আপনি জেনে থাকবেন এখানে আশ্চর্য জনক ব্যাপারটি কী ? আপনি যদি আগের দিনের আপনার একজন পিতামহের ছবি দেখেন , ভালো ও বৃদ্ধ দাদার অনেক সুন্দর দাড়ি ছিলো এবং আপনি আপনার দাদীর ছবি দেখতে পারছেন না (ঘোমটার কারণে ) সুতরাং কে পরিবারের জন্য গর্বের ? এবং কে পরিবারের জন্য বিব্রতকর ( লজ্জাকর )? দেখুন এগুলোই এই সময়কার মুসলিম পরিবার , এবং আপনি এইসবের মধ্যেই রয়েছেন ।

এবং আপনি জানেন কি হবে ? কারণ আপনি ইসলামের দিকে পথচলা শুরু করেছেন যদি ইসলামের একজন শত্রু আপনার কাছে আসে এবং বলে তোমার ধর্ম কে পরিত্যাগ করো , আপনি বলবেন , ও তাই ? ! ! আমি আরো অনেক বেশী প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হবো ,আপনি আরও কর্মোদ্যম হবেন আপনার ধর্মের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যাবে যখন শত্রুরা ইসলামের উপর আঘাত হানবে , আমরা তখন আরও বেশী প্রজ্বলিত হয়ে উঠি , মুসলিমরা প্রতিবাদী হয়ে উঠে বিকারগ্র্রস্ত ভাবে । কেউ একজন নবী (সঃ) এবং মুসলিম দের নিয়ে কার্টুন আঁকলে তারা উন্মত্ত হয়ে যায় এবং বিকারগ্রস্ত ভাবে অপর এক লোকের কার গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় অথবা অন্য কিছু ভেঙ্গে ফেলে , , , কারণ তারা প্রকৃতপক্ষে রাগান্বিত , কিন্তু যখন কোন কিছু ঘটে তখন আমাদের বহিষ্কার করা হয় , একটা-কিছু আমাদের ধর্মের সম্মান নিয়ে প্রশ্ন করে , এমন কি এটি বোধগম্য হোক অথবা নাই হোক ।

কিন্তু যখন আপনার নিজ পরিবারের লোকজন এসে বলে , দেখো আমি তোমাকে ভালোবাসি , আমি তোমার সম্পর্কে উদ্বিগ্ন । আমি তোমাকে এরকম হতে দিতে চাই না । এটি ঐ ধরনের লোকের কাজ যারা কলেজ হতে বেরিয়ে আসে , যাদের একটি পেশা (চাকরী) নেই , যারা দুর্দশাগ্রস্ত জীবন যাপন করে , আমি তোমাকে এসব চরমপন্থা অবলম্বন করতে দিবো না । কেউ তোমাকে প্রভাবিত করছে , তোমার তাদের কাছ থেকে দূরে থাকা প্রয়োজন । তারা টেলিভিশনে কিছু দেখে ভয় পেয়ে যায় , এবং তুমি এই সকল জিনিষের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে যাও । এবং এইসকল কিছুর মধ্যে তোমার নিজের ধর্মকে ধরে রাখা কষ্ট কর হয়ে যায় , এটি কষ্টকর হয়ে যায় । কারণ এরা ইসলামের শত্রু নয় যারা আপনাকে ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে , আপনার নিজের পরিবার , আপনার নিজের বাবা মা আপনার নিজের স্বামী , আপনার নিজের স্ত্রী , আপনার নিজের ভাই , আপনার নিজের কাজিন , আপনার নিজের আত্মীয় স্বজন রা , যারা আপনাকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছে তাদের মধ্যে তারা একজন ।

আপনি এই ব্যাপার টি কিভাবে সামলাবেন? এইসব চাপের ক্ষেত্রে রেগে যাওয়া টা হচ্ছে সবচেয়ে অনুপযুক্ত প্রতিক্রিয়া । আর আপনি জানেন কি , এটিই সবচেয়ে প্রচলিত প্রতিক্রিয়া । আপনার নিজের বাবা মাই আপনার সাথে চীৎকার (রাগ) করবেন আপনার দাড়ি বড় করার জন্য এবং আপনি একজন গরম মাথার যুবক , এবং আপনি কি করবেন , আপনি বলেন
“ ও আচ্ছা ! এটি সুন্নত , তুমি আমাকে বলতে পারো না যে আমি কি করবো , তুমি সমাজকে অনুসরণ করছো আর আমি ইসলামকে অনুসরণ করার চেষ্টা করছি !! ”
এবং এভাবে আপনি তাদের মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিলেন , এভাবে যেতে বললেন । কারণ এটি আপনি করবেন এবং আল্লাহ চাচ্ছিলেন আপনি এটিই করুন , আপনার বাবা মায়ের কাছে ফিরে চীৎকার করুন , এবং তারা আপনার দাড়ি নিয়ে কথা বলছেন , এবং এটি নিয়ে ইব্রাহীম (আঃ) এর পিতাও প্রশ্ন করেছিলেন , সে কি ছোট কোন ব্যাপার নিয়ে কথা বলছিলো নাকি বড় কোন বিষয় নিয়ে কথা বলছিলো , যাও মূর্তি গুলোকে সিজদাহ করো, এবং সে কি তার শীতলতা ( শান্ত ) ধরে রাখতে পারবে ? সে কি রাগান্বিত হবে ? আমাদের শিখতে হবে যে আমরা আমাদের বাবা মায়ের সাথে কি রকম ব্যাবহার করবো এমনকি যখন তারা আমাদের কে দীন থেকে সরে আসতে বলবে তখনও , তারা মুসলিম হোক অথবা অমুসলিম হোক এটি কোন ব্যাপার নয়।

“পিতা-মাতা যদি তোমাকে আমার সাথে এমন বিষয়কে শরীক স্থির করতে পীড়াপীড়ি করে, যার জ্ঞান তোমার নেই; তবে তুমি তাদের কথা মানবে না এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে সহঅবস্থান করবে। যে আমার অভিমুখী হয়, তার পথ অনুসরণ করবে। অতঃপর তোমাদের প্রত্যাবর্তন আমারই দিকে এবং তোমরা যা করতে, আমি সে বিষয়ে তোমাদেরকে জ্ঞাত করবো।" (৩১:১৫)

আল্লাহ আজ ওয়াজাল আমাদের কে বলেছেন, যদি তারা তোমার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে , তারা যার অনুসরণ করে তোমাকে যদি তা করতে বাধ্য করে, তাদের কে মান্য করো না, একি সময়ে তাদের সাথে সহযোগিতা করো সবচেয়ে ভালো আচরণের মাধ্যমে, তাদের কে মান্য করা আলাদা ব্যাপার, তাদের সম্মান করা ও আলাদা, কারণ আপনি তাদের কে মান্য করেন নি শুধু মাত্র আল্লাহর জন্য যখন এটি হালাল ও হারাম এর ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে! অথবা যখন এটি ইমান ও শিরক (কুফর) এর ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে! আপনি তাদের কে মান্য করেন নি শুধুমাত্র এই জন্যই আপনাকে তাদের উপর রাগ করার অধিকার দেয়া হয় নি, আপনি পারেন না।


ইউটিউব লিংক: https://youtu.be/IvpbSF_X1Gc
 

No comments:

Post a Comment