Labels: , ,

আল্লাহর আদেশ নিষেধের ব্যাপারে একজন মুসলিমের দৃষ্টিভঙ্গি

মুনাফিকেরা ইসলাম থেকে এই দুই ভাবে সরে যাবে।একটি হল একেবারেই পরিপূর্ণভাবে ইসলাম ত্যাগ করা । একবার মুসলিম হবার পর আবার কাফির হয়ে গেল। কিন্তু আরও একভাবে ইসলাম ত্যাগ করা যায়। সেটা হল মুখে মুখে তারা ঠিকই বলল যে তারা ইসলামেই আছে। কারণ ইসলাম একেবারেই ত্যাগ করার কিছু সামাজিক প্রভাব আছে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে আর মনের ভিতরে কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। এখন সে এমন একজন হয়ে যায় যে নিজে নিজেই বেছে নেয় দ্বীনের কোন কোন জিনিস সে মেনে নিবে আর কোনটা সে নিবে না। আর এটাই এই সুরার কেন্দ্রীয় বাণী। যে তুমি দরাদরি করার মত অবস্থানে নেই। যে কিছু ব্যাপার তুমি মেনে নিবে আর কিছু তুমি মেনে নিবে না। আমার ভালো লাগছে না, তাই এটা আমি মানবো না। এই ধারনাটি দ্বীনের একটি কেন্দ্রীয় বিষয়।

এই তো গতকাল আমি ওয়াশিংটনের একটি ইয়ুথ গ্রুপের সঙ্গে কথা বলছিলাম, একটা প্রশ্ন চলে আসে যে, এক বোন প্রশ্ন করে যে, আমি ইসলামের সব কিছুই পছন্দ করি, হিজাব বাদে। আমার মনে হয় এটা ছেলেরা যাতে আমাদের দিকে না তাকায় এই জন্যে। তো আমি এটার মাঝে আমার জন্য কোন যুক্তি দেখিনা। এখন হিজাবের সামাজিক উপকারিতা, বা এটা কিভাবে মেয়েদের সম্মান করছে এই যুক্তিতে না যাই প্রথমেই। তাহলে ইতিমধ্যেই আমরা ভুল দিকে আগাচ্ছি। আমাদের একটু থেমে আরও মৌলিক প্রশ্ন করতে হবে। ইব্রাহীম (আ) কে জিজ্ঞেস করা যাক, উনিও ইসলামকে ভালবাসতেন। কিন্তু আল্লাহ পাক একটি ছোট আদেশ দেন তাকে যে তুমি একটি মরুভূমিতে যাও আর সেখানে তোমার পরিবারকে রেখে আসো। তিনি তো বলেননি, আমি তো ইসলামকে ভালোবাসি কিন্তু এই মরুভূমিতে আমার পরিবারকে রেখে আসা, এটা ঠিক ভালো লাগছে না। এরপর তুমি আগুনে ঝাপ দাও। তিনি তো বলেননি আমি ইসলামের সবই ভালোবাসি কিন্তু এই আগুনে ঝাপ দেয়াটা !! আমার কাছ থেকে অনেক বেশি আশা করা হচ্ছে। তা তিনি করেননি। এরপর আল্লাহ পাক বলছেন নিজের ছেলের গলায় ছুরি বসাও। যাও। তিনি তো বলেননি আমি ইসলাম ভালোবাসি, কিন্তু আমি আমার ছেলেকেও ভালোবাসি। আপনি কি আমাকে কোন যুক্তি দেখাতে পারবেন এই ব্যাপারে? আপনি কি আমাকে এর সামাজিক উপকারিতা বা আরও কোনও যুক্তি দেখাতে পারেন কেন আমার এটা করা উচিত।

اذ قال له ربه اسلم قال اسلمت لرب العالمين
স্মরণ কর, যখন তাকে তার পালনকর্তা বললেনঃ অনুগত হও। সে বললঃ আমি বিশ্বপালকের অনুগত হলাম। (বাকারা; ১৩১)


এই শিক্ষা আমাদের আল্লাহ পাক দিয়েছেন তার যথেষ্ট কারণ আছে। যখনই আল্লাহ পাক বলেছেন, নিজেকে আত্ম সমর্পণ কর, তিনি বলেছেন আমি নিজেকে সমর্পণ করলাম সবকিছুর ও সবার মালিকের কাছে। রাব্বুল আলামীন। তো আমরা যখনই কোনও আদেশের যুক্তি জানার চেষ্টা করবো, আমাদের পুরো ব্যাপারটা আগে বুঝতে হবে। আল্লাহ পাক তার দ্বীন বানিয়েছেন তার কাছে আত্ম সমর্পণের, আপনার আমার যদি এটা করতে সমস্যা হয়, তাহলে বুঝতে হবে ইসলামকে নিয়েই আমাদের সমস্যা হচ্ছে। দ্বীনের কেন্দ্রীয় বানীকে নিয়েই। এর মানে এটা নয় যে , আপনি আল্লাহ পাকের আদেশ-নিষেধের মানে বুঝার চেষ্টা করবেন না। যখন আমরা গ্রহন করছি, তখন আমরা এটা বুঝতে পারলাম কিনা বা যুক্তি খুজে পেলাম কিনা সেটা পরে দেখতে হবে। আমার এর যুক্তি বুঝি বা না বুঝি প্রথমে নিজেকে আত্ম সমর্পণ করতে হবে।

ইয়া আয়্যু হাল্লাজিনা আমানু, (আয়াতটি আমাদের সাথে কথা বলছে) মান ইয়ার তাদ্দা মিনকুম আন দিনি।

তোমাদের মাঝে যারা বিশ্বাস করো, যারা দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। আল্লাহ পাক বলেননি, আমাদের সবাই মুখ ফিরিয়ে নিবে। আমাদের মাঝে কিছু লোক। আর ‘মান’ শব্দটা বেশ ইন্টারেস্টিং। এটা বহুবচনও হতে পারে, আবার একবচনও হতে পারে। তো একজনও হতে পারে, যে এই দ্বীন ছেড়ে চলে যাচ্ছে। আমি আগেই বলেছি এটা দুইভাবে হতে পারে। একেবারেই ত্যাগ করলো, আর আরেকভাবে হল কার্যকর অর্থে, মনের ভিতরে ত্যাগ করা, মনের ভিতরে তারা আল্লাহ পাকের কাছে নিজেকে সমর্পণ করেনা। আল্লাহ পাকের আদেশ অনুযায়ী চলার কোন কারণ তারা খুঁজে পায়না। তারাও দ্বীন ত্যাগ করেছে। যদিও মানুষের মাঝে আমরা কেউ দেখতে পাইনা, তবে আল্লাহ জানেন। আমরা একজন মুসলিমকে দেখলে বলবো আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। তার মনে কি আছে এটা নিয়ে সমালোচনা করবোনা। কিন্তু আল্লাহ পাক ঠিকই জানেন। তিনি ভিতরটাও দেখছেন।

এর মাঝে যেই দ্বীন ছেড়ে চলে গেল, - তো ‘ফা সাওফা’ শীঘ্রই , আর ফা সাওফা অর্থ খুব শীঘ্রই খুব বেশি সময় আল্লাহ পাক নিবেন না - আল্লাহ পাক পুরো এক জাতিকে নিয়ে আসবেন। বেশ ইন্টারেস্টিং। আল্লাহ বলছেন, তোমাদের মাঝে একজন চলে গেলেও, তিনি এর বদলে এক জাতিকে নিয়ে আসবেন। তো আল্লাহ বলতে চাইছেন যে তুমি নিজেকে বেশ অসাধারন কিছু মনে করছ? মনে করছ আল্লাহ পাকের তোমাকে দরকার? ইসলামে তোমার অনেক অবদান? যে তোমাকে ছাড়া ইসলামের চলবেই না? তুমি কেন তোমার বদলে পুরো জাতিকে আমি নিয়ে আসব। তুমি এমন কোন আহামরি সম্পদ নও। নিজেকে অত উচু কিছু মনে করো না। ইতিমধ্যেই আমাদেরকে আমাদের সঠিক জায়গায় বসিয়ে দেয়া হচ্ছে। এই আয়াতের মুল শিক্ষা হল বিনম্রতা।

আমাদেরকে নিজেদের অবস্থান বুঝতে হবে। আমাদের এই দ্বীনে আমাদেরকে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলার সম্মান দেয়া হচ্ছে। মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলার সম্মান দেয়া হচ্ছে। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে একটা পুরস্কার। তুমি যদি এটার মুল্যায়ন না করো, তো তোমাকে কেন দরকার? আরও অনেকে আছে যে এটা অনেক বেশি মুল্যায়ন করবে।

https://youtu.be/tQWQVBjvcyM

No comments:

Post a Comment