শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু

যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তা' আলার যিনি সকল সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা।

মুহাম্মদ (সাঃ)-আল্লাহর রাসূল

মুহাম্মদ (সাঃ)-সকল মানুষের জন্য উদাহরন, সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ, ও আল্লাহর রাসুল

আল কোরআন - মহান আল্লাহ প্রদত্ত কিতাব

এ সেই কিতাব যাতে কোনই সন্দেহ নেই। পথ প্রদর্শনকারী পরহেযগারদের জন্য,

আমাদেরকে সরল পথ দেখাও

আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।

আল্লাহ নিতান্ত মেহেরবান ও দয়ালু

সে সমস্ত লোকের পথ, যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ। তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।

Labels: , ,

কখনও হতাশ হবেন না

আমি আপনাদের শয়তানের একটা চালাকির কথা বলছি শুনুন। মনে করুন আপনার অফিসে যেতে দেরী হয়েছে এবং দেরী করার জন্য আপনার বস রাগ হয়ে আছেন। অফিসে আরও অনেক মানুষ আছে। আপনি এরকম সময় কী করেন? আপনি সকলের নজর এড়িয়ে নিজের কিউবিকলে গিয়ে চুপচাপ বসে পড়েন।আপনি তখন বসের সাথে দেখা করতে চান না।

অথবা মনে করুন একটা বাজে রিপোর্ট কার্ড নিয়ে আপনি বাড়ি ফিরলেন।যখন আপনি ক্লাস ৬ বা ৭ এ আর খারাপ রিপোর্ট কার্ড নিয়ে আসেন তখন আপনি চুপিসারে ঘরে ঢুকবেন। কোন “আসসালামু আলাইকুম” নেই কিছু না ... চুপিসারে ঢুকে আপনি ঘুমের ভান করে পড়ে রইলেন।মা যদি জিজ্ঞেস করেন, “আজকে স্কুলে কী হোল?” আপনি বলবেন, “তেমন কিছু না।”

আপনি যখন কাউকে হতাশ করেন তখন তার থেকে দূরে দূরে থাকেন। এটাই স্বাভাবিক।
এই ক্ষেত্রে, যখন আমরা অশ্লীল কাজ করি, নিজেদের উপর যুলম করি, তখন আমরা কাকে হতাশ করি? আল্লাহ আযযা ওয়াযালকে! আপনি আল্লাহ্‌কে অসুন্তষ্টি করেন। শয়তান তখন এর সুযোগ নেয়। আপনার কাছে এসে সে বলে যে তুমি এখন আবার সালাহ পড়তে যাবে?ভন্ড! তুমি এতসব অশ্লীল কাজ করে এখন আবার একটা ক্লাস করতে যাবে?এখন তুমি ইবাদত করতে যাবে? তুমি তো দু’মুখো মানুষ!

তখন সে বলে হ্যাঁ আমি তো দু’মুখো মানুষ; আমার সালাহ পড়া উচিত না।শয়তান আপনার গুনাহের সুযোগ নিয়ে আল্লাহর কাছ থেকে আপনাকে দূরে সরিয়ে রাখে। আপনি তখন আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে বিব্রত বোধ করেন।

কিন্তু একজন সত্যিকারের মুত্তাকী যখন ভুল কিছু করে তৎক্ষণাৎ সে কী করে?
সে আল্লাহকে স্মরণ করে! যাকারুল্লাহ। ফা বা সুম্মাও আসেনি এখানে! “ফাসতাগফারু লিযুনুবিহিম।” তারপর তারা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়। (৩:১৩৫)
এখানে যুনুব শব্দটা দিয়ে পাপ বোঝান হচ্ছে যা এসেছে যানাব থেকে। যানাব দিয়ে মূলত বোঝান হয় এমন একটা পাপ যার কারণে আপনি অসম্মানিত বোধ করেন।এমন কোন কাজ যার কারণে আপনি লজ্জিত। বিব্রত।

আর তারা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে তাদের কৃত লজ্জাজনক কাজ থেকে। “ওয়া মান ইয়াগফিরুযযুনুবা ইল্লাল্লাহ।” আল্লাহ ছাড়া আর কে গুনাহ ক্ষমা করতে পারে?(৩:১৩৫) আপনি আর কার কাছে যাবেন?আর কোথায় যাবেন? আল্লাহ ছাড়া আর কে জানে আপনি আর আমি কী কী ভুল করেছি? আমাদের গুনাহের খাতায় বহু জিনিস আছে যা আল্লাহ প্রকাশ করেননি।শুধু আল্লাহই সেসব জানেন। সেসবের জন্য আল্লাহর কাছে আমাদের ক্ষমা চাইতে হবে।

জান্নাতে যারা যাবে তাদের বর্ণনায় যেসব বৈশিষ্ট এসেছে তার মাঝে এটাই প্রধান বৈশিষ্ট।
“উলাইকা জাযাউহুম মাগফিরাতুম মিররাব্বিহিম ওয়া জান্নাতুন তাযরী মিন তাহতিহাল আনহারু খালিদীনা ফীহা ওয়া নি’মাল আযরুল আলামীন।”তাদেরই জন্য প্রতিদান হলো তাদের পালনকর্তার ক্ষমা ও জান্নাত, যার তলদেশে প্রবাহিত হচ্ছে প্রস্রবণ যেখানে তারা থাকবে অনন্তকাল। যারা কাজ করে তাদের জন্য কতইনা চমৎকার প্রতিদান।(৩:১৩৬)

এখনে যে শেষ কথাটি আপনাদের বলব, আমি আমার ফ্যামিলির সাথে একবার শপিং মলে গিয়েছিলাম।সেখানে এক মা তার ছেলেকে ভীষণ বকা দিচ্ছিল আর ছেলেটা চিৎকার করে কাঁদছিল।মা ছেলেকে কষে একটা চড়ও বসিয়ে দিল। কিন্তু আপনি জানেন বাচ্চাটা তারপরও কার কাছে গেল? এর পরও বাচ্চাটা মাকেই ধরে রইল।তার মাকে ছাড়ছে না
চারপাশে সব কিম্ভূতকিমাকার বিশাল বিশাল অচেনা মানুষ। সে তাদের কাছে যেতে চায় না।যদিও তার মা তার উপর রাগ হয়েছে, হতাশ হয়েছে, তাকে বকা দিচ্ছে কিন্তু তার আশ্রয়, সুরক্ষা সে কার কাছে পাবে? তার মায়ের কাছেই!

এই দৃশ্য আমাকে ভাবিয়েছে সুবহানাল্লাহ, যখন আপনি আমি গুনাহ করি যখন আমরা আল্লাহকে হতাশ করি, তাঁর অবাধ্য হই, আমরা কার কাছে যাব? আমাদের আর কোথায় যাওয়ার আছে! তাই আমরা আল্লাহকে অসুন্তষ্টি করলেও, আর আল্লাহ আমাদের যেমন দেখতে চান তেমন আমরা হতে না পারলেও সত্যিকারের মুত্তাকী কখনোই আল্লাহর উপর আশা হারায় না।আল্লাহর উপর আশা হারানোর অনুমতি তিনি আমাদের দেননি।
এই আচরণ আমাদের রপ্ত করতে হবে।

অনুবাদ করেছেনঃ রাবেয়া রাওশিন

.https://www.youtube.com/watch?v=PA6-3S_KUGk&feature=youtu.be
 

0 comments
Labels: , ,

শয়তানের কৌশল

فَدَلَّاهُمَا بِغُرُورٍ
অতঃপর প্রতারণাপূর্বক তাদেরকে সম্মত করে ফেলল।

আসসালামু আলায়কুম, Quran Weekly. সূরা আল আরাফ এর ২২ নম্বর আয়াতটি দীর্ঘ একটি আয়াত, কিন্তু এই সংক্ষিপ্ত আলোচনায়, আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই এর প্রথম অংশ, যার মধ্যে আছে জীবনের জন্য অবিশ্বাস্য রকমের প্রজ্ঞা। আমরা কিভাবে শয়তানের মোকাবিলা করব, আল্লাহ বর্ণনা করছেন, শয়তান কিভাবে আমাদের আদি পিতামাতা আদম (আঃ) ও হাওয়া (আঃ) কে ভুল করার জন্য প্ররোচিত করেছিল। তার কি এমন পদ্ধতি ছিল, যাতে তারা তার কথা মত কাজ করেছিল? এটা শুধু তার কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, আমরা সবাই জানি যে সে তাদেরকে প্ররোচিত করেছিল, আমরা জানি যে সে তাদের কে অনন্ত জীবনের লোভ দেখিয়েছিল এবং বলেছিল যে তারা জান্নাতে থক্তা পারবে। এটা আমরা সবাই জানি, কিন্তু সে আসলে কিভাবে তা করেছিল, তার পদ্ধতি কি ছিল? এই পদ্ধতিটি বুঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এবং এটাই তুলে ধরা হয়েছে আয়াতটির প্রথম অংশে – ফাদাল্লাহুম্মা বি গুরুরিন।
 
“দাল্লা” ব্যবহার করা হয় যখন আপনি বালতি টেনে তুলেন। আরবিতে “দাল্লু” বলতে বালতি বুঝান হয় আর “আদলা” মানে হল বালতি নীচে ফেলে আবার টেনে উপরে উঠানো। যেমন পুরনো দিনে কুয়াতে বালতি ফেলে পানি টেনে উপরে উঠানো হত, মানে বালতি টেনে টেনে তুলতে হত, এটাই হল “আদলা”। কিন্তু “দাল্লা” হল খুব ধীরে ধীরে বালতি নামানো, যেমন খুব পুরনো পশু শিকার করার পদ্ধতি। যেমন আপনার কাছে একটি গাজর বা কিছু খাবার আছে, আপনি তা বালতিতে রেখে দিলেন, এবং বালতিটা দড়িতে বাঁধা। যখন কোন প্রাণী তাতে আকৃষ্ট হয়, আপনি ধীরে ধীরে বালতিটি নিজের দিকে টেনে নিয়ে আসেন, আর প্রাণীটি পিছু পিছু আসে। এটাই হল “দাল্লা”। আক্ষরিক ভাবেই, শয়তান তাদের কে বলেনি, “আল্লাহকে অমান্য কর”। সে তাদেরকে অল্প অল্প করে আপস করতে বলল আর তারা তা শুনল। তারপর সে তাদেরকে আরেকটু আপস করার প্রস্তাব দিল- “এটাতে কোন ক্ষতি নেই, আমি যা বলছি তা হারাম নয়, আমি শুধু বলছি একটু ছাড় দিতে, তোমাকে এই গাছের ফল খেতে হবেনা, (আমাদের আদি পিতামাতার ক্ষেত্রে), আমি বলছিনা যে তোমাদের এই গাছের ফল খেতে হবে, আমি শুধু বলছি যে গাছটিকে একবার ভাল মত পর্যবেক্ষণ কর, গাছটির দিকে তাকানোর মাঝে তো কোন দোষ নেই, তাইনা?”।
 
 আপনারা জানেন আল্লাহ্‌র হুকুম ছিলঃ “ওয়ালা তাক্রাবা হাজিহি আস-শাজারা”, গাছটির কাছে তোমরা যেওনা। তাই শয়তান প্রথমে তাদের বলল “দেখ, তোমরা তো গাছটিকে স্পর্শ করছনা, ঠিক আছে? শুধু গাছটির কাছে যাও, এতে এমন আর কি ক্ষতি হবে?” যখন তারা এর কাছে গেল, তখন সে বলল “এমন কোন নিয়ম নেই যে তোমরা গাছটির উপর চড়তে পারবেনা, তোমাদেরকে শুধু এর ফল খেতে নিষেধ করা হয়েছে। একটু চড়েই দেখ, এতে কোন ক্ষতি হবেনা। আর এটা সে একবার মাত্র বলেনি, “দাল্লা” এটাই বুঝায় যে সে এসব কুপরামর্শ দিনের পর দিন দিয়ে আসছিল। এটাই ছিল তার পদ্ধতি। এটা এমন নয় যে সে আদম (আঃ) কে একবার বলল আর আদম (আঃ) তৎক্ষণাৎ গাছটির কাছে যেয়ে এর ফল খেয়ে ফেলল। এখানে সত্যিকার অর্থেই খুব সূক্ষ্ম পরিকল্পনা ছিল তাকে প্ররোচিত করার -“ফাদাল্লাহুম্মা বি গুরুরিন” । আর এটাই সে বর্তমানে প্রয়োগ করে আমাদের উপর। এই কারনেই কুরানে এর উল্লেখ করা হয়েছে। যে সে তাদেরকে টেনে আনল – “বি গুরুরিন”। আমি এখনও এর অর্থ বলিনি – এর মানে হল প্ররোচিত করা, এটা একধরনের ধোঁকা দেয়া। অন্যভাবে বলতে গেলে, কিছু জিনিষ আছে যা পরিস্কারভাবেই খারাপ। আপনি আর আমি উভয়েই জানি যে, কিছু জিনিস পরিষ্কারভাবেই মন্দ। 
 
কিন্তু এমন অনেক জিনিষ আসে যেটা সম্বন্ধে পরিষ্কার ভাবে খারাপ বলা যায়না, কিন্তু এদের সম্বন্ধে আপনার এতটুকু সচেতনতা থাকা দরকার যে, আমি যদি এই ছোট ধাপটি পার হই, কালকে আমি আরও একধাপ বেশি করব, আর এইভাবে দিনে দিনে আমার অজান্তেই আমি খারাপ কাজ করে বসব। তাই আপনাকে আত্মরক্ষার ব্যাবস্থা নিতে হবে। আর যখন আপনি এমন প্রস্তুতি নিবেন, তখন আপনি নিজেকে বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারবেন। যখন শয়তান আপনার কাছে আসে, তখন সে আপনাকে সরাসরি হারাম কে হালাল বলতে বলেনা। এটা খুবই সরাসরি আর যেকোনো মুসলিম বলবে, “না, এটা অবশ্যই হারাম, আমি কখনই এটা করবনা”। তাই সে যখন আসে, তখন বলে- শোন, এই ছোট যে কাজটি করতে বলছি তা স্পষ্টতই হারাম না, এটা খারাপ না, তুমি এতটুকু করতেই পার, কেউ তোমাকে এর জন্য দোষ দিবেনা”। তারপর মানুষজন শেখ, আলিম, দায়ি বা খাতিব দের কাছে যেয়ে বলে, আমি জানি যে মদ্যপান হারাম, কিন্তু আমি কি এমন বন্ধুদের সাথে মিশতে পারব যারা মদ্যপান করে? আমি বারে যাবনা, কিন্তু তারা কখনও অফিস এ মদ্যপান করে, আমি কি তখন তাদের সাথে থাকতে পারব? মানে, তারা আমার বন্ধু। আমি কি শুধু এতটুকু করতে পারিনা? এটা করা কি সত্যি সত্যি হারাম? তো সেই শেখ তাকে এমন বলবে যে “আমার পরামর্শ হল এমন করা ঠিক না, এটা ভাল নয়, তোমার এমন বন্ধুদের সাথে মেশা ঠিক নয়”। 
 
কিন্তু এটা কি হারাম? এটা কি সত্যি সত্যি হারাম? তারা বলবে, “আসলে আমি জানিনা এতকে হারাম বলা যায় কিনা”। “আচ্ছা, ধন্যবাদ। আমার জবাব পেয়ে গেছি, এটা সত্যিকার হারাম নয়, তার মানে আমি এটা করতে পারব।” আর এভাবেই শয়তান আপনাকে প্ররোচিত করে এমন বন্ধুদের সাথে মিশার জন্য। তারপর তারা একদিন বলবে “আমরা বারে যাচ্ছি, তুমি কি আসবে?” তারপর আপনি বারে গিয়ে কোক বা অন্নকিছু খান, আর তারা বিয়ার খায়। তারপর কোন এক গভীর রাতে, এমন কিছু ঘটে- “আমাকে অল্প একটু দিতে পার?” কেউ একজন আপনাকে এগিয়ে দিল, বা আপনার অজান্তেই আপনার কোকের সাথে মিশিয়ে দিল। আপনি নিজেকে বললেন “আমি তো এটা ইচ্ছা করে করিনি”। আর এভাবেই একটার পর আরেকটা তারপর আরেকটা সুবহানআল্লাহ। এটাই হল - ফাদাল্লাহুম্মা বি গুরুরিন। এটাই সেই সূরা যেখানে আল্লাহ বারসিসার কাহিনি বর্ণনা করেছেন, যে অল্প অল্প করে পাপের পথে এগিয়ে গিয়েছিল। এই মুহুরতে পুরো গল্পটি বলা সম্ভব নয়, কিন্তু মূল শিক্ষা একই। শয়তান আপনাকে সরাসরি খারাপ কাজ করতে বলবেনা। শয়তান আপনাকে অল্প অল্প করে আপস করতে বলবে, অথবা আপনাকে শুধু পাপের পথ ধরিয়ে দিবে। আর যখন আপনি এই রাস্তায় আসেন, যতক্ষণ আপনি খারাপ কাজটি না করছেন, ততক্ষণ কেউ এসে আপনাকে সরাসরি বলতে পারবেনা যে, “শোন, তুমি যা করছ, এটা খারাপ”। কারন এটা খারাপ না, কিন্তু এটা আপনাকে খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। 
 
যদি আপনি বুঝতে না পারেন যে আপনাকে ধীরে ধীরে কিন্তু নিশ্চিত ভাবেই টেনে নেয়া হচ্ছে, তাহলে আপনি একমাত্র নিজেকেই দোষ দিতে পারেন। এই জন্যই আদম (আঃ) এর প্রতি আল্লাহ্‌র নির্দেশ এটা ছিলনা যে, গাছটির ফল খেয়না, বরং বলা ছিল এর কাছেও যেওনা। এই দুইয়ের মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে, আর তাই আপনাকে আমাকে বুঝতে হবে যে, কিছু জিনিস পরিষ্কারভাবেই হারাম, আর কিছু রাস্তা আমাদেরকে এদের দিকে নিয়ে যায়। তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যেন আমরা সেই রাস্তায় না যাই যেদিকে শয়তান আমাদের টেনে নিতে চাচ্ছে।
 
 

0 comments
Labels: , , ,

সূরা ফাতিহার যে লুকায়িত সৌন্দর্য আমরা পাই নি...


জ্ঞান ও কর্মের সমন্বয়সাধন...

সূরাটি শুরু হয়েছে আল্লাহর পরিচিতি দিয়ে(প্রথম ৩ আয়াত)। তাই বলা যায় ‘আল্লাহ’ সম্পর্কে ‘জ্ঞান’ দিয়ে শুরু এই সূরার। এ থেকে বোঝা যায় যে-আমাদের যদি ‘জ্ঞান’ থাকে তবেই এই ‘জ্ঞান’ কর্মের পথপ্রদর্শন করতে পারে(কোন বিষয়ে জ্ঞান না থাকলে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো কিভাবে?!)।

‘আল্লাহ সম্পর্কে জ্ঞান’ আমাদেরকে কর্মের দিকে ধাবিত করে আর সেই কর্ম হল আল্লাহর দাস হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং প্রচেষ্টা করা(মাঝখানের আয়াত-৪ নং আয়াত-ই’ইয়াকানা’অবুদু ওয়া ই’ইয়াকানাসতা’ইন)।

আমরা যদি এই জ্ঞানের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিই আর কাজ করে এ’দুটোর মাঝে সমন্বয়সাধন করতে পারি তবেই আমরা সরলপথে থাকব-সিরাতাল মুসতাকিম- এমন একটি পথ যে পথে পূর্ববর্তীরাও চলেছে-যেসব মানুষেরা জ্ঞানকে কর্মে রুপান্তরিত করেছিল(হেদায়েত-শেষ ৩ আয়াত)। সুতরাং হিদায়াত বা সৎপথ হল জ্ঞানকে কর্মের মাধ্যমে সমন্বয় করা।

এভাবে সরলপথের বিরপীত ভ্রষ্টপথ এর দুটি অবস্থার যে কোন একটি হতে পারে-(এক)যখন আমাদের জ্ঞান আছে কিন্তু আমল নেই এবং (দুই)যখন আমাদের আমল আছে কিন্তু জ্ঞান নেই।

এরপরেই সূরাটিতে বলা হচ্ছে-আমরা যেন তাদের মত না হই যাদের জ্ঞান ছিল কিন্তু আমল ছিল না(মাগজুব-অভিশপ্ত- সৎপথের আমলহীনলোকেরা তো মন্দই করে-তারা তো মানুষের প্রতি মন্দ করার কারণে অভিশাপে অভিশপ্তই হবেই), এবং এরপরে বলছে- তাদের মতও যেন না হই যাদের আমল ছিল কিন্তু জ্ঞান ছিল না(ওয়ালাজ্জাল্লিন-যারা নিজেরাই পথভ্রষ্ট হয়েছিল-জ্ঞান না থাকার কারণে)।

সংক্ষেপে এভাবে দেখানো যায়...

আল্লাহ সম্পর্কে ‘জ্ঞান’- প্রথম ৩ আয়াত(-এ জ্ঞান যখন পথপ্রদর্শনের দিকে নিয়ে যায় তখন)

আমাল- মধ্যখানের ১টি আয়াত(এখন জ্ঞান+আমাল-এর সমন্বয় হল...তাহলে এটা নিয়ে যাবে)

হেদায়েত-এ - শেষের ৩টি আয়াতে(অর্থাৎ হেদায়েতের জন্য ‘জ্ঞান ও কর্ম’-দুটির সমন্বয় লাগবে...একটি হলে হবে না- একটি হলে হেদায়েত না হয়ে ‘মাগজুব-অভিশপ্ত’ বা ‘নিজেরাই পথহারা’ হয়ে যাবে)

সূরাটির চমৎকারিত্ব লক্ষ্য করেছেন?...

সূরাটি শুরু হয়েছে জ্ঞান দিয়ে, এরপর এসেছে আমালের(কর্ম)কথা এবং এরপরে যখন জ্ঞান ও আমালের সমন্বয় হয়েছে-তখনই হেদায়েত এর কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা যেমনি সূরাটিকে সূচারুরুপে সমন্বয় করেছেন আয়াত সংখ্যা দিয়ে(৩+১+৩) তেমনি এর বিষয়কেও সমন্বয় করেছেন অপূর্বভাবে(৩ আয়াত জ্ঞান+১ আয়াত কর্ম+৩ আয়াত হেদায়াত-সম্পর্কে)!!

কত উত্তমভাবেই না আল্লাহ আমাদের জ্ঞান ও আমালের সমন্বয়ের মাধ্যমে হেদায়েতের কথা বলেছেন সূরা ফাতিহার অন্তর্দৃষ্টির মাধ্যমে !!

(Help Taken From Bayyinah.Tv এর সূরা ফাতিহার তাফসীর থেকে)

0 comments
Labels: , , ,

ধারণা বা অনুমান করা -- সূরা হুজুরাত এর ১২ নম্বর আয়াত

কুর'আন শরীফের ৪৯ নং সূরা আল হুজুরাতে আল্লাহ মূল্যবান উপদেশ দিয়েছেন যা একটি সুন্দর, সুস্হ, মুসলিম সমাজ গঠনে সহায়ক। উপদেশগুলো শুধু মুসলমানদের জন্য নয় বরং গোটা মানব জাতির প্রতি একজন মুসলমানের ব্যবহার কিরূপ হবে তার নির্দেশ এই সূরাতে দেয়া হয়েছে। এই সূরার প্রত্যেকটি উপদেশ নিয়ে অনেক খুতবা দেয়া যাবে। তাই আজ আমি এই আয়াতের প্রথম অংশ ও এর গভীরতা নিয়ে আলোচনা করব। যদিও আমি সব মুসলমান ভাইকে উৎসাহিত করব এই সূরা পুরাটা পড়তে এবং এর মাহাত্ব্য বুঝে তা পালনের চেষ্টা করতে।

প্রথমে বলতে চাই, এই আয়াতের পূর্বের অংশে আল্লাহ সবাইকে একে অন্যকে বিদ্রুপ না করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমাদের সমাজে একে অন্যকে উপহাস করার প্রবণতা রয়েছে। যেমনঃ কমেডি শো, কার্টুন এমনকি কমিক বইগুলোতেও একটি নির্দিষ্ট দল বা গোত্রকে উপহাস করতে দেখা যায়। আরও বলা যায়, এরাবিয়ান, মেক্সিকান, কালোবর্ণ, সাদাবর্ণের প্রভৃতি মানুষদের নিয়ে কতগুলো উপহাসমূলক বুলি প্রচলিত আছে। এসব বুলি মূলতঃ তাঁদের পোশাক-আশাক, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি নিয়ে ব্যাঙ্গাত্বক।

এসব উপস্হাপন করে মানুষকে হাসানো হয় এবং মানুষ এতে মজা পায়। কিন্তু এটা মোটেও উচিত নয়। এই আয়াতে তাই এসব ভাড়ামো বারণ করা হয়েছে। কারণ এসব ঠাট্টা-বিদ্রুপ মানুষের মাঝে সম্পর্কের অবনতি ঘটায়, ভেদাভেদের সৃষ্টি করে।

কিন্তু আজ আমার বয়ান করার বিষয় এটা নয়, বলে রাখি এইসব ঠাট্টা-বিদ্রুপ আসে অনুমান বা ধারণা থেকে। আমি হয়তো বলছি, “মজা করার জন্য আমি ঠাট্টা-মশকরা করছি, মন থেকে বলছি না’। কিন্তু এসব মশকরা একদিন সত্যি বলে মনে হয় এবং তা মনের ভিতর গেঁথে যায়। মানে যাদের নিয়ে মশকরা করছি একসময় মনে হয় সত্যি, তারা এইরকম। দেখা যাচ্ছে এই সব ঠাট্টা-বিদ্রুপ শুধুমাত্র জাতিগত ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নয় ধর্মগত বা বর্ণগত হয়ে থাকে।

যেমন হিন্দু, শিখদের নিয়ে বাজে ভাঁড়ামো করা হয়। আবার দেখা যায়,পাকিস্তানি ও বাঙালিরা একে অপরকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে। এসব মজার জন্য করা হলেও ভাল না। কারণ একসময় তা সত্যি বলে সমাজে প্রচলিত হয়ে যায়। কারণ এসব ঠাট্টা-বিদ্রপ যাকে নিয়ে করা হয় তখন তার চরিত্র তেমন মনে হয় এবং তাকে সামনাসামনি দেখলে ঐ সব কথাই মনে আসে। ব্যাঙ্গাত্বক কথা মনে আনাই পাপ। আপনারা একটি বিস্ময়কর বিষয় খেয়াল করবেন কুর'আন এবং এই আয়াতের কোথাও আমাদের চিন্তা ভাবনার জন্য তিরস্কার করা হয়নি।

আপনারা জানেন আমরা আমাদের কর্মের জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য। যদি মনে কোন খারাপ ধারণা আসে কিন্তু বাস্তবে কাজটা করা হয়নি, তাহলে আল্লাহর কাছে তার জবাব দিতে হবে না। আবার ব্যতিক্রম হচ্ছে,আপনি খারাপ কিছু করার জন্যই কাজটি করলেন কিন্তু কাজটি মঙ্গলজনক হয়ে গেছে তাহলে কাজের ফল নির্ভর করবে চিন্তার উপর। আরেকটি বিস্ময়কর ব্যতিক্রম হচ্ছে এই আয়াতের কথা, ”তোমরা বেশি বেশি ধারণা থেকে বিরত থাক, কারণ তা পাপ”। যদিও আপনি কিছু না করেন কিংবা না বলেন অতিরিক্ত ধারণা ভাল না। এটি আয়াতের মাহাত্ব। পূর্বের আয়াতে মানুষের উপহাস করতে বারণ করা হয়েছে, এটি নিষিদ্ধ কর্ম, আবার এই আয়াতের পরবর্তী আয়াতে গীবত আর নজরদারিকে কঠোরভাবে মানা করা হয়েছে। এগুলো চরম নিষিদ্ধ কর্ম, এর শাস্তি অনেক কঠিন।

আমাদের চিন্তা করার পন্থা পরিবর্তন করতে এই আয়াতে বলা হয়েছে। খেয়াল করুন, এই আয়াত পর্যালোচনা করতে গিয়ে আমরা অনেক মূল্যবান বিষয় শিখছি। আমরা যদি আমাদের চিন্তা ভাবনার উন্নতি না করি তবে আমাদের চরম ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। কারণ এই চিন্তা ভাবনা থেকে চরম গুনাহের কাজ যেমন গীবত,অন্যের দোষ খুঁজে বেড়ানো,অবিশ্বাস প্রভৃতি উদ্ভুত হয়। তাই আল্লাহ আমাদের এই চিন্তা ভাবনা করতে বারণ করছেন। এই কথাগুলো হচ্ছে   اجْتَنِبُوا كَثِيرً   (ইযতানিবু কাসিরান) এর পটভূমি। এখন   اجْتَنِبُوا   শব্দটি কোথা হতে এসেছে তা জানব। এইশব্দটির উৎপত্তি আরবি শব্দ   جنب   “জানব” থেকে যার অর্থ কোনকিছুর পাশে। “ওয়া আলা জুনুবিহিম” মানে যখন একজন তার পাসে শয়ন করে বা বসে। উদাহরণস্বরূপ যাত্রায় দুইজন যাত্রী পাশাপাশি বসে, অফিসে বা হসপিটালে পাসাপাসি বসে বা শয়ন করে। এখানে ইযতিনাব শব্দের অর্থ হচ্ছে পাশের কোন কিছু থেকে নিজেকে বিরত রাখা। এই আয়াতে শব্দটির অর্থ বলা হচ্ছে নিজেকে নিজের কাছ থেকে বিরত রাখা। তার মানে আমার আপনার ভিতরের কূ-ধারনা প্রবৃত্তি থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা। কারণ ধারণা জিনিসটি নিজের কাছেই।

আপনি হয়তো বলতে পারেন আমি মানুষ সম্বন্ধে খারাপ ধারণা মনে আনি না, আনবো না। কিন্তু এইসব মনে আসতে পারে। আর আল্লাহ যেহেতু আমাদের বিরত থাকতে বলেছেন তাই আমাদের সবসময় সচেতনের জন্য সচেষ্ট থাকতে হবে, এই খারাপ প্রবৃত্তি থেকে বেঁচে থাকতে হবে। কারণ আপনি সবসময় এই পাপে লিপ্ত হবার আশঙ্কায় আছেন। কেউ দোষের বাইরে নয়। এই আশঙ্কা যদি না থাকতো তাহলে আল্লাহ নির্দেশ দিতেন ধারণা করো না; বরং তিনি বলেছেন বেশি বেশি ধারণা থেকে বিরত থাকো, কারণ এটি তোমার হাতেই। আল্লাহ এই আয়াতে বেশি বেশি শব্দটি ব্যবহার করেছেন, বলেছেন তোমরা বেশি বেশি ধারণা থেকে বিরত থাকো কারণ তা তোমাদেরকে পাপের কাছে নিয়ে যাবে। অন্য আয়াতে বেশি বেশি শব্দটি ব্যবহার করেননি। তাই আমরা সব সময় প্রাণপন চেষ্টা করব আমাদের কথা বা কাজে খারাপ ধারণার অনুপ্রবেশ না ঘটে।

এই কু-প্রবৃত্তি থেকে বাঁচার উপায় বলার আগে আমরা জানব 'জান্ন' শব্দটি কোথা থেকে এসেছে। এর অর্থ হচ্ছে কোন কিছু নিয়ে অনুমান করা। এর মধ্যেও কথা আছে, অনুমান হল যে জিনিস আপনি নিশ্চিত জানেন না, তা নিয়ে চিন্তা করা। কিন্তু এই শব্দটির আরেকটি অর্থ হচ্ছে আপনি কোন জিনিস নিশ্চিত হয়েই ধারনা করছেন। কুর'আনের এক আয়াতে আছে, তারা নিশ্চিত তাঁদের মালিকের সাথে দেখা হবেই। এটি এক ধরনের ধারনা। ঈমান আনার আগে তারা অনিশ্চিত দোদুল্যমান ছিল আল্লাহর সাথে দেখা হবে কিনা। ঈমান আনার পর তারা নিশ্চিত আল্লাহর সাথে দেখা হবেই। অন্যদিকে আর এক আয়াতে বলা হয়েছে, তারা বলে তাদেরকে মৃত্যুর পর আর উত্থান করা হবে না। আল্লাহ প্রতি উত্তরে বলেছেন, তারা এই বিষয়ে শুধুমাত্র ধারণা করছে। তাই বলা যায়, একই শব্দ কুর'আনের ভিন্ন যায়গায় ভিন্ন অর্থে ব্যবহার হয়ছে। এই শব্দটির অর্থ এই আয়াতে বলা হয়েছে “মনে গেঁথে আছে”। যেমনঃ দাঁড়িবিহীন চেহারার একজনের পরিধানেরর কাপড় দেখে তার প্রতি খারাপ ধারণা এনে ফেললেন। আবার আরেকজনকে বললেন তুমি তুর্কিশ, বাংলাদেশি এদেরকে চিননা, এরা এমনি! অর্থাৎ তাঁদের উপর খারাপ ধারণা আপনার আগে থেকে গেঁথে আছে। এটি হল জান্।যার মানে আপনি আপনার ধারণার উপর নিশ্চিত। আল্লাহ এই ধরনের চর্চা আমাদের সংসার জীবনেও করতে নিষেধ করেছেন।

দেখা যায়, স্বামী-স্ত্রী একে অপরের প্রতি খারাপ ধারনা পোষণ করেন। যেমন স্বামী প্রশংসা করলেও স্ত্রী তা বিশ্বাস করে না। এতি জান্ন, আপনি আপনি নন, আপনি অন্যের চিন্তা বলতে পারবেন না। জান এর প্রভাব এত খারাপ একজন আরেকজনের সালামের উত্তর দেওয়ার সময় চিন্তা করে সে কোন উদ্দেশ্যে আমাক সালাম দিচ্ছে। একটি ঘটনা বলি, আমি এক জায়গায় “ভালোভাবে কথা বলা” এই বিষয় নিয়ে খুৎবা দিয়েছিলাম। খুৎবা শেষে এক লোক আমাকে এসে বলল তোমাকে “ক” টাকা দিয়েছে আমার বিরুদ্ধে বলার জন্য। অবাক হলাম তার এই ধারণা দেখে। এইটি 'জান্ন'। ভালো কথা বললে আপনি এই ধারণা মনে আনতে পারবেন না যে , এটি আপনার বিরুদ্ধে বলা হচ্ছে। কথাগুলো আপনার ভালোর জন্যই বলা হয়েছে। যদি খারাপ ধারণা মনে গেঁথে যায়,তাহলে আপনি কোন ভালো কথা মানতে পারবেন না, আপনি মনে করবেন কথাগুলো খারাপ উদ্দেশ্যেই বলা হচ্ছে। এই রূপ প্রবৃত্তির শিকার শুধু সাধারণ মুসল্লিরা না বরং বড় বড় আলেম ওলামারাও এর শিকার হন। মনে রাখবেন আলেম ওলামারা নবী নন, তারা রক্ত-মাংসের মানুষ। ভুল তাঁদের হতেই পারে। তাঁদের এক ভুল কথা বা কাজের জন্য তাঁদের সারাজীবনের কথা কিংবা কাজের উপর বিরূপ ধারণা এনে তাঁদেরকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা ঠিক না। আমার কথাই চিন্তা করেন, আমি যদি ৫ বছর আগে কোন ভুল কথা বলি তার জন্য এই ধারণা মনে আনা উচিত না যে আমি সবসময় ভুল কথা বলি। আবার অনেকে আছে, যার প্রতি তাঁদের খারাপ ধারণা আছে তার লেকচারে গিয়ে তার বক্তৃতার মধ্যে, দোষ-ত্রুটি বের করার চেষ্টায় লিপ্ত থাকে তাঁকে ভুল প্রমানিত করার জন্য। আমরা এই কাজে এত ব্যস্ত থাকি যে ভালো কিছু জানি না কিংবা জানতেও চাই না। আবার এমন মানুষ আছে যারা কুর'আনের ব্যাখাকে ভুল বলছে, কে ঠিক বলছে সেই কাজে ব্যস্ত থাকে। কেন এত সময় নষ্ট, এত কষ্ট? কুর'আন শরীফের কথা মানুষের কাছে পৌঁছে না দিয়ে অন্যের ব্যাখার ভুল ধরা ঠিক নয়।

আয়াতের পরবর্তী অংশে বলা হয়েছে, কোন সন্দেহ নাই খারাপ ধারণা পাপ। আয়াতের প্রথম অংশে বলা হয়েছে বেশি ধারণা থেকে বিরত থাক আর পরবর্তীতে বলা হয়েছে সন্দেহাতিতভাবে খারাপ ধারণাসমূহ পাপ বয়ে আনে।   إِثْمٌ   “ইস্ম” আরবি শব্দ,অর্থ পাপ। আল্লাহ কুর'আনে পাপের অনেক সমার্থক শব্দ ব্যবহার করেছেন। এই আয়াতে إِثْمٌ  “ইস্ম” শব্দটি কঠিন পাপ, যেমনঃ মদ খাওয়া, জুয়া খেলা ইত্যাদির মতো ব্যবহার করেছেন। অন্যভাবে বলা যায়, “ইস্ম” হল চরম পাপ এবং এর পরিণতি মারাত্মক। ইস্ম হল এমন এক পাপ যার পরিণাম দুনিয়াতেই ভোগ করতে হয়, শুধুমাত্র হাশরের ময়দানে নয়।

খারাপ ধারণা একটা পরিবার, জাতি এমনকি একটা পুরো দেশ ধ্বংস করে দেয়। শুধুমাত্র অনুমান এর উপর ভিত্তি করে একটা দেশ গৃহযুদ্ধের দিকে ধাবিত হয়, মানুষ মারা যায়, এমন অনেক উদাহরণ আছে। আপনারা কি বিশ্বাস করবেন পূর্বে যুদ্ধগুলো সংঘটিত হয়েছে শুধুমাত্র অনুমানের উপর ভিত্তি করে? লক্ষ লক্ষ মানুষ এই ভুল অনুমানের জন্য জীবন দিয়েছে। আল্লাহ তাই বেশি বেশি ধারণা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন, এই উপদেশ শুধুমাত্র মুসলমানদের জন্য না বরং গোটা মানাবজাতির জন্য। আল্লাহ বলেছেন আমি মানবজাতিকে ভিন্ন গোত্র,ভিন্ন জাতি হিসাবে সৃষ্টি করেছি কিন্তু একে অপরকে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করার জন্য নয়। আল্লাহ পুরো মানবজাতিকে বলার আগে মুসালমানদেরকে উদ্দেশ্য করেছেন।

কারণ মুসালমানরা আদর্শ হবে অন্যদের, তারা কোন ঠাট্টা-বিদ্রুপে অংশ নিবে না, উপহাস করবে না, স্বচ্ছ ধারণা না থাকলে সেটি সম্পর্কে মন্তব্য করবেনা। সবার সাথে মিলেমিশে থাকবে। যেমন কারো সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞেস করলে আপনি জানি না বলবেন, যদি তার সম্পর্কে ধারনা না থাকে। আপনি বলতে পারবেন না এই, আমার মনে হয় তিনি খারাপ। এই মনে হয় শব্দটি আমাদের রাসূল (সাঃ) এর শিক্ষা নয়। আপনার এই এক মন্তব্য অনেক ভুল ও ভ্রান্ত ধারনার উৎপত্তি করবে। কোন কিছু সম্পর্কে নিশ্চিত না হলে কোন মন্তব্য করবেন না, এই কথাটি ব্যক্তিগত, সামাজিক, কর্মস্থল, জাতিগত সব জায়গায় প্রযোজ্য। কোন জাতি সম্পর্কে সংবাদ প্রকাশ হলে তা যাচাই বাছাই করে সেই জাতি সম্পর্কে ধারনা পরিষ্কার করতে হবে। কারণ সংবাদ অনুমানের উপর ভিত্তি করে দেয়া হয়। আল্লাহ বলেছেন, কোন খবর যাচাই করে প্রকাশ করতে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই সব নীতি আমাদের ব্যক্তিগত সামাজিক জীবনে পালনের তাওফিক দেন। এতে আমাদের জীবন আরো সুন্দর ও সফল হবে। আল্লাহ আমাদের মনমানসিকতা এমন করে দেন যেন আমরা একজন আরেকজনের দোষ-ত্রুটি খুঁজে না বেড়িয়ে সহমর্মিতার, সহযোগিতার, মনোভাব গড়ে তুলি; ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হই। আল্লাহ আমাদের মাঝে ভিন্নতা মনোভাব দূর করে এই সুন্দর পৃথিবীতে আরও সুন্দরভাবে মিলেমিশে থাকার তওফিক দিন। আমীন।


বাংলা রূপান্তর – সুমাইয়া বিনতে খুরশিদ

0 comments
Labels: , , ,

জিহ্বার সংরক্ষণ

জিহ্বার সংরক্ষণ
---
“হে মুমিনগণ, কোন পুরুষ যেন অপর কোন পুরুষকে বিদ্রুপ না করে; কেননা তারা তাদের চেয়ে উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী যেন অপর কোন নারীকেও বিদ্রুপ না করে; কেননা সে তাদের অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। তোমরা একেক অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং তোমরা একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না; ঈমানের পর মন্দ নামে ডাকা গর্হিত কাজ। যারা এ ধরণের আচরণ পরিত্যাগ করে তাওবা না করে, তারাই অত্যাচারী” (সূরা হুজুরাত-১১)

আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের একটি উল্লেখযোগ্য গিফট হল আমাদের জিহ্বা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর দেওয়া চূড়ান্ত কিছু গিফটের একটা হল এই জিহ্বার মাধ্যমে কথা বলার যোগ্যতা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সূরা আর-রাহমানে বলেন – “চূড়ান্ত দয়াময়, যিনি তোমাকে কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন”। খেয়াল করেছেন তো ভালোভাবে? আল্লাহ, এই বিশাল জগতের সৃষ্টিকর্তা, আমাদের রব, আমাদের লালন-পালনকর্তা, হাশরের মাঠে একচ্ছত্র অধিপতি---তিনি আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন আল-কোর’আন। আবার তিনি বলেন “তিনি তোমাকে ভাষা শিক্ষা দিয়েছেন” – অর্থাৎ তিনি শুধু কোরআন ই শিক্ষা দেননি বরং এর পাশাপাশি তোমাকে ভাষাও শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি দুটি জিনিস শিক্ষা দিয়েছেন- কোরআন এবং ভাষা। এর মাধ্যমেই বুঝতে পারি ভাষা আল্লাহর একটি অন্যতম দান। তাই আল্লাহ যা আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন তা দিয়ে যেন আমরা অন্যের হৃদয়কে ভেংগে না দেই, তাদের হৃদয়ে ক্ষত সৃষ্টি না করি।

এই দুটি জিনিস শিক্ষা দেওয়ায় এটা বুঝায় যে আল্লাহ তোমাকে যে কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন সেটা যেন তোমার ভাষার মাধ্যমে ব্যবহার করতে পারো। তোমার প্রত্যেকটা কথা যেন আল্লাহর কোরআনের আয়াত দ্বারা অনুপ্রাণিত হয় যা আল্লাহ তোমাকে শিক্ষা দিয়েছেন।

আমরা প্রায়শ ভুল করে ফেলি। এমন ভুল করি যে সেটার মূল্য ও পরিমাণও বুঝতে অসমর্থ হই। আমরা আমাদের বন্ধু, পরিবার বা সামাজিক যোগাযোগের সাইটে এমন সব কমেন্ট করি যা আল্লাহর দেওয়া শিক্ষার সীমা ছাড়িয়ে যায়-অথচ আমরা এটা উপলবব্ধিটুকুও করি না। অথচ আমাদের এটা উপলব্ধি করা দরকার যে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন একটা সমস্যার কথা কোরআনে বলেছেন যা সামান্য ব্যাপার নয়-অবশ্যই বড় ব্যাপার বলেই এটা আল্লাহ হাইলাইট করেছেন।

আয়াতটি লক্ষ্য করে থাকবেন, আল্লাহ মুমিনদেরকে সম্বোধন করেন ...এবং বলেন “কোন গোত্র(দল,গ্রুপ,আন্দোলন,সেক্ট)যেন অপর কোন গোত্রকে বিদ্রুপ না করে”। এখানে আরবী শব্দ ‘সাকিরা’ শব্দ কেবল ফান, ব্যঙ্গ বা কৌতুক বুঝায় না বরং এর সাথে-কারো বিরুদ্ধে তীব্র তিক্ত মন্তব্য, কাউকে আঘাত করে শ্লেষোক্তি বুঝায়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের এটা করতে নিষেধ করেছেন। অথচ আজকাল কাউকে ফান করে, ব্যঙ্গ করে বা অতি তিক্ত সমালোচনা করে কিছু বললে বা ফেইসবুকে লিখলে আমরা সেটাকে ‘বুদ্ধিজীবী’ হওয়ার আলামত মনে করি! আমরা এদেরকে অনেকেই বলি ‘আহ, সেতো ভারী ফানি লোক’, ‘সে অনেক মজা করে কথা বলে’, ‘তার ফেইসবুক ওয়াল তো মজাতে ভরা’,‘আরেহহহ, সেতো মানুষকে পচাতে ভালোই সিদ্ধহস্থ’ ইত্যাদি ইত্যাদি। অন্য মানুষরা যখন এগুলোকে সায় দিয়ে হাসির ইমো দেয়, তাকে স্বাগত জানায়, ধন্যবাদ দেয়-এগুলোর প্রত্যেকটাই ঐ ব্যক্তির ইগো-অহংকারকে আরো উগড়ে দেয় এবং এর ফলে পরবর্তীতে আরো বেশি করে হাসির কৌতুক, ফান, শ্লেষাত্মক বা ঘৃণাত্মক বিষয় নিয়ে উপস্থিত হয় যা আগেরগুলোর চাইতে আরো বাজে, নগ্ন এবং অপ্রত্যাশিত এবং আমরা এগুলোর সাথেও মিশে যায়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আয়াতে এটাই বুঝাতে চাচ্ছেন যে-এগুলো তোমাদের মধ্যকার ভার্তৃত্বের মধুর বন্ধনকে কেড়ে নেবে। ঈমানদাররা কখনই তাদের মাঝে শত্রুতা কামনা করে না বরং মিত্রতা ও মীমাংসা ব্যতীত অন্য কিছুই তারা চায় না। তাই আল্লাহর তাকওয়া ধারণ করো নিজের মাঝে যাতে আল্লাহর দয়া তোমার উপর আসে।

এই আয়াতের পূর্বের আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা নিজেদের মাঝে মীমাংসার কথা বলেছেন এবং এই আয়াতে বলেছেন কিভাবে কথা বলতে হয় এবং কি ধরণের কথা বলা যাবে না। অপমানকর কোন কমেন্ট বা ফান করা যাবে না অন্যের বিপক্ষে-তার কাজ, স্কুল, আন্দোলন, পড়া, গায়ের চামরা, খাটো-লম্বা ইত্যাদি নিয়ে(গঠনমূলক সমালোচনা তো হয় ভালোবাসা দিয়ে, উপদেশের ভাষাই সেটা বুঝাবে তা ভালবাসা নাকি বিদ্বেষ)।

এরপর দেখেন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কি চমৎকার দিক নিয়ে বলেছেন ‘হতে পারো তোমরা যাকে নিয়ে ঠাট্টা করেছ, ফান করেছ, বিদ্রুপ করেছ’ সে তোমাদের চাইতেও উত্তম।! আমরা কাউকে যখন ফান করি, বা বিদ্রুপ করি এবং এটা করি এই ভেবে যে আমরা তার থেকে উত্তম-এটা আমাদের অবচেতন,সচেতন মনে বা ধারনার মাঝে গেথেই থাকে আর একারণেই তাকে নিয়ে বিদ্রুপ করছে, তাকে বিদ্রুপের বস্তুতে পরিণত করেছ। তোমার চাইতে কেউ উত্তম, অধিক সম্মানের অধিকারী-এরকম কাউকে নিয়ে অবশ্যই তুমি বিদ্রুপাত্মক কিছু করবে না-এটাই প্রমাণ করে যে তুমি নিজের মাঝে একটা ‘শ্রেষ্টত্বের অনুভূতি’ নিয়ে আছো। অথচ আল্লাহ এই অনুভূতি নিয়ে কাউকে বিদ্রুপ করতে নিষেধ করেছেন।

আজকাল এরকম বিদ্রুপ যেন কমেডি আর বিনোদনের পর্যায়ে চলে গেছে-কারো আঞ্চলিক ভাষা নিয়ে, ড্রেসকোড নিয়ে, খাবার নিয়ে, ফেইসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে, একজন বিক্রেতা অন্য বিক্রেতার প্রডাক্টের বিদ্রুপ করে – অথচ তারাও উত্তম হতে পারে-আমাদের চাইতে-আল্লাহর কথা অনুযায়ী(কোন গোত্র যেন অপর গোত্রকে বিদ্রুপ না করে)।
এখানে আল্লাহ রাব্বুল আলামী বিশেষ করে নারীদের উল্লেখ করেছেন(কোন নারী যেন অপর কোন নারীকেও বিদ্রুপ না করে)। এর কারণ হল নারীদের বিদ্রুপ করাটা পুরুষদের থেকে ভিন্ন হয়। নারীদের সম্পর্কে যে শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে সেটা হল ‘লামজ’ তা কেবল শারীরিক চলাচলেই নির্দেশ করে না বরং চোখ ঘোড়ানো, চাহনির বিশেষ সাইন(মুখ কালো করা, ঠোট বাকা করা,) দীর্ঘশ্বাস নেওয়া, চাপা হাসি, বা দীর্ঘশ্বাসের আড়ালে ছোট্ট কমেন্ট যা তুমি নিজে শুনতে পাও কিন্তু যাকে বিদ্রুপ করছে সে শুনতে পায় না-এবং যখন সে প্রশ্ন করে তোমাকে কি বললে?– তুমি উত্তরে বল-‘আমি কিছুই না’-এসবি ‘লামজ’ এর অন্তর্ভূক্ত। কথার মধ্যে প্রকাশ পায় না কিন্তু ঘৃণার প্রকাশ করে এরকম সবই এর অন্তর্ভূক্ত।

কাউকে কিছু না বলেও তুমি তাকে অপমানিত করতে পারো আর আল্লাহ এটাও জানেন(ওয়ালা তালমিজু আনফুসাক

0 comments
Labels: , , ,

ধৈর্যশীল ও বুদ্ধিবৃত্তিক শয়তানের পথভ্রষ্টতার পলিসি...এবং আমরা।

ধৈর্যশীল ও বুদ্ধিবৃত্তিক শয়তানের পথভ্রষ্টতার পলিসি...এবং আমরা।

“শয়তান বলল(আল্লাহর উপর অভিযোগ দিয়ে)যেহেতু আপনি আমাকে পথভ্রষ্ট করলেন, একারণে আমি অবশ্যই, অবশ্যই, অবশ্যই তাদের(পথভ্রষ্ট করার)জন্য আপনার সরল পথে বসে থাকব”...

এখানে শয়তান এরাবিক যে শব্দ ব্যবহার করেছে -তা খুবই গভীর, তা কোন সাধারণ শব্দ নয়। এই একটি শব্দ ভালো করে উপলব্ধি করতে পারলে আমরা শয়তানের পথভ্রষ্টতার পলিসি ধরতে পারব...এবং আমরা এ থেকে বেঁচে থাকব কি না সেটা আমাদের ইচ্ছা আর আল্লাহর রহমতের উপর নির্ভর করবে। আরবীতে জুলুস অর্থ বসে থাকা, কিন্তু কুয়ুদ অর্থ শুধু বসে থাকা নয়, বরং দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা, চিন্তাশিলতা নিয়ে বসে থাকা(সূরা আলে ইমরান-১৯১ দেখুন)। এখানে শয়তান শিকার ধরার জন্য বিস্তারিত ও বড়সড় পরিকল্পনা নিয়ে বসে থাকে...কিভাবে? আসুন তবে বসে থাকা(কুয়ুদ) এর একটি উদাহরণ দেখি...

একটি বক কিভাবে মাছ ধরার জন্য বসে থাকে(কুয়ুদ)? –

সে দেখে তাঁর শিকারের সময় ছায়া পড়বে কি না...যাতে মাছ টের পায়,

সে দেখে কখন তীব্র রোধ উঠবে ও মাছ উপরে উঠে আসবে,

সে চিন্তা করে এই খাবার এখন না পেলে সে অভূক্ত থাকবে, কষ্টে থাকবে,

সে চিন্তা করে কোন এংগেলে গেলে মাছ তাকে দেখবে না,

মাছ কোন দিকে মাথা দিয়ে রাখবে এবং সেখানে থাবা দিবে যাতে শক্তি করতে না পারে,

---এভাবে বহু চিন্তার পর সে মাছ শিকার
করে। এটা কি শুধু বসে থাকলে হবে? ...না, কক্ষনই না...বরং দীর্ঘক্ষণ বসে, চিন্তা করে, পরিকল্পনা করে, এর পরেই না তার কাজ সমাধা করতে হয়। তাহলে চিন্তা করুন কত দীর্ঘ সময় তাকে বসে থাকতে হয় একটি শিকার ধরার জন্য।

যারা ক্রিমিনলজি পড়েছেন তারা হয়ত জানেন একটি ক্রিমিনালকে ধরতে বা কোন অপারেশন চালাতে কত প্রস্তুতি নিতে হয়, কত মাস, কত দিন ধরে সময় নিয়ে অবস্থান ঠিক করে, লোকজন ঠিক করে, অপরাধীর অবস্থান ভাল মত পর্যবেক্ষণ করে, কোথায়, কিভাবে, কোন পদ্ধতিতে, কত সময় ধরে, কোন অস্ত্র দিয়ে তাকে ঘায়েল করবে-সবই পূর্ব পরিকল্পিত হয়। এটাই শিকার ধরার জন্য বসে থাকা...এটাই শয়তানের বসে থাকার উদাহরণ যা শয়তান নিজেই দুইবার কসম করেও আবার সৎ বান্দাদের কথা উল্লেখ করেছে যে সে ‘সরল পথে বসে থাকবে, ওঁত পেতে থাকবে, কতশত সময় লাগুক, এক মাস লাগুক, পাচ মাস লাগুক, সারা দিন-রাত লাগুক, যতই কষ্ট হোক বসে থাকতে, তাও সে থাকবে ঐভাবে, তবুও পথভ্রষ্ট করেই ছাড়ব আদম সন্তানদেরকে’- এটাই শয়তানের বসে থাকা-কুয়ুদ।

---এখন উদাহরণটি ভালো করে বুঝুন ফেইসবুকের বা অনলাইনের বাস্তব উদাহরণ দিয়ে...

আপনার বিপরীতধর্মী ছেলে বা মেয়েকে ফেইসবুকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দিলেন আর এক্সেপ্ট করলেন বা হল, ভাবলেন আর তেমন ক্ষতি কি? ...ফ্রেন্ড ই তো জাস্ট, তাও আবার অনলাইনে, পরিচিত তো আর নাহহ। এরপর লাইক,একটা কমেন্ট...একটা কমেন্ট ই তো, তাই না, তেমন কিছু নাহহ, এরপর প্রশংসার ইচ্ছা হল, যদি ঐ ছেলে বা মেয়ের নজরে আসা যায়-প্রশংসা কে না চায়?!, প্রশংসা করতে লাগলেন, আপনাকেও ধন্যবাদ দিতে লাগল, এর কিছু দিন পর মেনশন করে প্রশংসা বা কমেন্ট করতে লাগলেন, আরো ফ্রি হলেন দিন দিন, ধীরে ধীরে একটু অনলাইনে পরিচিত হলেন বাক্য বিনিময়ের মাধ্যমে--- এত প্রশংসা করল আমার অথচ একটু পরিচয় ই তো জানতে চেয়েছে...না দিলে কি মনে করবে আবার, লজ্জার বিষয় আছে না?, এর পর ধীরে ধীরে কিছু ব্যক্তিগত জিনিসও শেয়ার হয় ফেইসবুকে, কিছুটা ফান হতে লাগল...আরে নাহহহহহ, ফান কি ইসলামে হারাম নাকি?! এরপর ফিল করতে লাগলেন তাকে, চিন্তা করেন তাকে নিয়ে, ফেইসবুকে বারবার তার ওয়াল ঘুরে আসেন-কখন সে স্ট্যাটাস দিবে, লাইক দিয়ে প্রশংসা করব, সেও মেনশন করে ধন্যবাদ দিবে- ভালো লাগার তীব্র অনুভূতি জেগে উঠতে লাগল, এভাবে হয়ত কোন দিন তাকে ভাল ফ্রেন্ড (ইসলামী!)বলে উল্লেখ করে স্ট্যাটাসাও দিতে পারেন- এরা অনেককক ভালো লেখে...চলতে থাকল...এভাবে চলতেই থাকল...শয়তান আপনার জ্ঞানহীন ইসলাম দিয়েই আপনাকে ধ্বংসের প্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে...

--এখন এই ধীর প্রক্রিয়ার সাথে শয়তানের বসে থাকার উদাহরণ দেখুন মিলিয়ে...কত দীর্ঘ সময় নিয়ে শয়তান কাজ করে, কিভাবে, কত পন্থায়, কোন সময়, কোন সাইকোলজি ব্যবহার করে আজ ফেইসবুক বা অনলাইন বা অফলাইনে শয়তান সফল হচ্ছে্‌--এভাবে ধীরে ধীরে আপনিও শয়তানের বসে থাকার শিকারে সাইকো হচ্ছেন, এখন যেই ইসলামের কথা ভেবে একজন ছেলে/মেয়েকে ফ্রেন্ড করেছিলেন “জাস্ট ফ্রেন্ড ই তো”- এই কথা ভেবে, এই যৌক্তিকতা দেখিয়ে,শয়তানের বসার জায়গাগে ধীরে ধীরে শিকার বাঘে আনিয়ে দিয়ে দিলেন। এখন আর ইসলামী স্ট্যাটাসে মন নেই, মন এখন শুধু প্রশংসা, মেনশন, ফান, বা দুংখ-সুখের কাহিনী...সালাতে এখন আর আল্লাহকে সামনে থাকলেও মনে হয় না, মনের কোনে সালাতেও আল্লাহর পরিবর্তে ফেইসবুকে বা ক্লাসের সেই নির্দিষ্ট ব্যক্তিটির কথা মনে হতে থাকে, দুজনের নিয়ত কলুষিত হয়, রিয়ার প্রকাশ ঘটতে থাকে ইসলামী স্ট্যাটাসের আরালে, স্ট্যাটাসে ভিন্ন লিংগের লোকের সমাগম বাড়তে থাকে, তাদের ইসলামী স্ট্যাটাসও বাড়তে থাকে, অনেক সময় ট্যাগ করেই বাড়তে থাকে এ গতি, অনলাইনে ইসলামী স্কলারদের শত শত দলীলভিত্তিক সাইট থাকতেও আপনার কাছে মেসেজ করে ইসলামী সাজেশনের জন্য আর আপনিও ভাবেন বাহহহহ ছেলে/মেয়েটা তো ইসলাম নিয়ে দারুন পড়াশুনা করে...চলতে থাকল মেসেজে...এভাবে শয়তান তার বসে থাকাকেও সফল করে ফেলে এতদিনের পরিকল্পনাকে...ফলে ইসলামী জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তার ভিক্ষারীরা আজ ধ্বংসের পথে, তাদের আল্লাহর সাথে সম্পর্কের পরিবর্তে রয়েছে শয়তানের পরিকল্পনার বাস্তবায়নের মুখোমুখী...অথৎ তারা চলছেই এ পথে...এখানেই ইসলামী জ্ঞানের চরম ঘাটতি, আল্লাহর সাথে সম্পর্কেও ঘাটতি তৈরি হয়েছে ইসলামী জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তা না থাকার অভাবে, ইসলাম নিয়ে বেশি পড়াশুনার অভাবে।

শয়তান আমাদের কিভাবে পথভ্রষ্ট করবে তা নিয়ে তার পড়ালেখা পিএইডি লেভেলের আর আমরা শয়তানের ধোঁকা থেকে কিভাবে বাঁচব তা নিয়ে আমাদের পড়াশুনা প্রাইমারি লেভেলের। তো কিভাবে আমরা আশা করি আমরা শয়তানের সাথে পেড়ে উঠব?। ইসলামী একটা স্ট্যাটাস বা নোট একটু বড় হলেই আমরা এড়িয়ে যাই, আর্টিকেল বড় বলে আর ঠো মারি না, ইসলামী বই এর কথা আর নাই বলি।

আমাদের ইসলাম নিয়ে পড়াশুনা করাটা চড়ম ঘাটতির মধ্যেই রয়েছে। আমি যখন দেখি একজন ইসলামী ভাই বা বোন পথভ্রষ্ট হচ্ছে-তখন আর অবাক হই না। আমাদের অনার্স পর্যন্ত হয়ত ১৫০ টা বড় বড় বই পড়ি অথচ আখিরাতের জীবনের জন্য, অনন্তকালের সুখের জন্য বই পড়তে অনীহা লাগে...তো শয়তানের পথভ্রষ্টতার পিএইচডি লেভেলের জ্ঞানের সাথে ইসলাম নিয়ে আপনার সর্বনিম্ন পড়াশুনা দিয়ে কিভাবে ইসলামে টিকে থাকতে চান? ঝড়ের সাথে বালির ঘর দিয়ে কিভাবে টিকে থাকতে চান? বড় নোট দেখলেই পলায়ন করেন, তো কিভাবে শয়তানের মোকাবেলা করবেন? ৪ ঘন্টার লেকচার দেখতে বললে- বড় করে ‘হা’ করে বলেন...কয়য়য়য়য়য়য় ঘন্টার লেকচার????...আমার অত ধৈর্য নেই। আপনার ধৈর্য না থাকলেও শয়তানের ঠিকই ধৈর্য আছে আপনাকে পথভ্রষ্ট করে জাহান্নামের গভীরের প্রবেশ করাতে...ধৈর্যের ফল আপনি নিতে না চাইলেও শয়তান ঠিকই আপনাকে জাহান্নামে পাঠিয়ে এর ফল নিবে।

আপনি হিজাবের আধুনিক ডাইমেনশন জানেন না(ফেইবুক ও ক্লাসে), রিয়া(লোক দেখানো ইবাদাহ)কিভাবে হয় জানেন না, ইসলামী স্কলাদের হাজার হাজার রিসোর্স থাকতেও যখন আপনি বিপরীতধর্মী একজন ছেলে/মেয়ের কাছে ইসলামের সাজেশন চান-এবং আপনি প্রটেকটিভ পদ্ধতি না নিয়ে বরং মেসেজ চালিয়েও যান, কিভাবে ও কতভাবে শয়তান পথভ্রষ্ট করে তা জানেন না, তা নিয়ে স্কলারদের লেখা বই পড়েন না, অথচ শয়তান থেকে বেঁচে থাকার ইচ্ছা করেন...যেন পা ভেংগে গেলেও ডাক্তারের কাছে না গিয়েও সুস্থ হওয়ার প্রবল ইচ্ছা পোষণ করেন!!!

শয়তান ভালো করেই জানে আপনাকে একবারে টুপে ফেলতে পারবে না...তাই সে ধীরে ধীরে ধৈর্য এবং বুদ্ধিমত্তার সাথেই আপনাকে এমনভাবে পথভ্রষ্টের দিকে নিয়ে যাবে যে তখন আপনি শয়তানের সাপোর্ট দিতে থাকবেন...আপনি তখন বাহানা দিতে থাকবেন- আরেহহহ মেয়েটা তো ইসলামিক মাইন্ডের, অনেক ভালো লেখে। ঐ ছেলেটা তো ইসলাম নিয়ে অনেক ভালো লেখে...শয়তান আপনাকে এই টোপ-ই কাজে লাগাবে...আপনার বুদ্ধিহীন ইসলামী জ্ঞান দিয়েই আপনার ইসলামকে ধংস করে দিবে শয়তান...কারণ আপনার ইসলাম নিয়ে জ্ঞান আছে কম কিন্তু শয়তানের রয়েছে অনেক বেশি...তাই শয়তান জানে কোন পদ্ধতিতে গেলে আপনাকে পথভ্রষ্ট করা যাবে। শয়তান খুজে আপনার ইসলামী জ্ঞানের নগন্যতা, আপনার জ্ঞানহীন ইসলামের সুযোগ সে নেয়...এবং এই জ্ঞানহীন দিক দিয়েই আপনাকে এমনভাবে এটাক করে যে আপনি ধরতেও পারেন না...এটা অনৈসলামিক, শয়তান আপনাকে পথভ্রষ্ট করতেছে...কারণ আপনার জ্ঞান কম ইসলাম নিয়ে এবং দ্বিতীয় হল এটা সে এমন ধীরে ধীরে করেছে(কুয়ুদ)যে আপনি টেরই পান নি(ইসলাম নিয়ে আপনার জ্ঞানের ঘাটতির কারণে)

আমাদের ইসলামী জ্ঞানের ঘাটতি রয়েছে অনেক বেশি, আমালেরও ঘাটতি রয়েছে। অনেকের আবার ইসলামী জ্ঞান প্রচূর কিন্তু আমল নেই, অনেকের আবার উল্টো...ইসলামী জ্ঞান কম কিন্তু আমল ভাল...অনেকের আধ্যাতিক জ্ঞান বেশি অন্যদিকে বুদ্ধিবৃত্তিক জ্ঞান কম, বা উল্টোটাও হয়---এসব ধরণের লোকেরাই শয়তানের বসে থাকার রাস্তায় চলছে...আমাদের আধ্যাতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক জ্ঞানের সমন্বয় করতে হবে, জ্ঞান ও আমাল সমভাবে চালাতে হবে---তবেই শয়তানকে পরাজিত করতে পারব, তার পথভ্রষ্ট করার পরিকল্পনা ধরতে পারো জ্ঞানের মাধ্যমে এবং আধ্যাতিকতার মাধ্যমে তাকে ছাড়িয়ে আল্লাহর অধিক নিকটে যেতে পারব...শয়তানের ধোঁকা থেকে বেঁচে থাকতে পারব...আমাদের আদি-নিবাস সেই জান্নাত-ই হবে আমাদের বাসস্থান।



Help Taken From The Resources of Ustadh Nouman Ali Khan

1. The Strategy of Satan
2. Hijab Series(Bayyinah.Tv- 4 hours long Lecture)
3. Opposite Sex Interaction
4. Foundation of Faith
5. Three Points Action Plan That Will Change Your Life
6. Sura Araf Tafseer(Bayyinah.Tv)

0 comments
Labels: , , ,

সন্তান প্রতিপালন

টিনেজারদের বাবা-মারা প্রায় সময়ই আমার কাছে আসেন। "জানেন, আমার ছেলেটা না, আমার কথা শোনেই না আজকাল। আপনি ওর সাথে একটু কথা বলবেন?" যেন আমি কোনো মহৌষধ সাথে নিয়ে ঘুরি! যেন সেই ছেলেটা আমার কাছে আসলে আমি ওর গায়ে ফু দিয়ে দেব এভাবে। .. আর সাথে সাথেই সে দারুন লক্ষী ছেলে হয়ে যাবে! "একটু যদি কথা বলতেন। ..." না, বরং আপনি আপনার ছেলের সাথে কথা বলছেন না কেন? কোথায় ছিলেন আপনি যখন তার সাথে কথা বলার প্রকৃত সময় ছিল?

আজকে আমি আপনাদের সাথে বাবা-মাদের নিয়ে একটু কথা বলব, তারপর বলব স্বামী-স্ত্রীদের নিয়ে। আজকে এই দু'টো জিনিস নিয়ে বলারই সময় আছে। দু'টো খুবই মৌলিক সম্পর্ক: একটা আপনার সন্তানদের সাথে, আরেকটা আপনার জীবনসঙ্গীর সাথে। এই দু'টো সম্পর্কের ব্যপারেই আমরা খুব বেসিক কিছু ব্যপার নিয়ে আলোচনা করব।

আপনার সন্তান যখন ছোট, খুবই ছোট, ধরুন যখন তাদের বয়স পাঁচ, ছয়, সাত, দুই, তিন, চার, তখন তাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোন জিনিসটা বলুন তো? আমার নিজের পাঁচটা বাচ্চা আছে, তাই আমি খুব ভালো বলতে পারব এ ব্যপারে। তাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনার সমর্থন। তারা আপনাকে গর্বিত করতে চায়। তারা যা যা করেছে সব আপনাকে দেখাতে চায়। ধরুন, আমি জরুরী কোনো কাজের আলাপ করছি ফোনে, জরুরী একটা ফোন, আর এ সময় আমার দুই বছরের ছেলে এসে বলবে, "আব্বা আব্বা আব্বা আব্বা আব্বা।" ..."ভাই, একটু লাইনে থাকেন" ... "কি হয়েছে?" ... "হে হে হে" ব্যস! আমি আবার ফোনালাপে ফিরে গেলাম, সে আবার আমাকে ডাকা শুরু করল। আমি বললাম, "আচ্ছা ঠিক আছে, কি হয়েছে বলো" ... "আমি তোমাকে একটা জিনিস দেখাবো" ... "কি দেখাতে চাও বাবা?" ... ব্যস এটাই! কিন্তু আমার এ ক্ষেত্রে কি করা উচিত বলুন তো? "আল্লাহ! দারুন তো! আবার করো দেখি" ... "আমি আপনাকে পরে ফোন দিচ্ছি" ... আপনার সন্তানরা যা করে আপনার উচিত তার কদর করা। এটা তাদের পরম আরাধ্য। অন্য যে কোনো কিছুর চেয়ে বেশি তারা এটাই চায় আপনার কাছে।

আমার তিনটি মেয়ে আছে। আর ছেলে আর মেয়েদের মধ্যে পার্থক্য কি জানেন তো? ছেলেরা এক জায়গায় বসে থাকতে পারেনা, আর মেয়েরা কথা বলা থামাতে পারে না। তো আমি আমার মেয়েদের স্কুল থেকে যখন নিয়ে আসি - একজন ক্লাস ওয়ানে আরেক জন ক্লাস থ্রিতে পড়ে - আমি ওদের স্কুল থেকে বাসায় নিয়ে আসি ২৫ মিনিট গাড়ি চালিয়ে। আর এই পুরোটা সময় তারা কি করে জানেন? "জানো আজকে ক্লাসে কি হয়েছে? আমরা একটা ডাইনোসর রং করেছি, এটা করেছি, ওটা করেছি, প্রথমে আমি বেগুনী রং করলাম, তারপর ভাবলাম একটু সবুজ রং-ও দেই" - এভাবে বলতে থাকলো তো বলতেই থাকলো। থামার কোনো নামই নেই। থামা সম্ভবই না ওদের পক্ষে। আর আমাকেও মনযোগ দিয়ে সেটা শুনতে হবে। শুনতে হবে আমাকে। আমি বললাম, "ও তাই? নীল রং দাও নি?" .."না অল্প একটু নীল দিয়েছি"। আমাকে মনোযোগ দিতে হবে। আর আমি এগুলো কেন বলছি জানেন? আচ্ছা দাঁড়ান, আগে অন্য একটা গল্প বলে নেই। তাতে আপনাদের ঘুমটাও একটু কাটবে।

এই গল্পটা আমি প্রায়ই বলি। আমার বড় মেয়েটা, হুসনা, যখন ছোট ছিল তখন আঙ্গুল দিয়ে ছবি আঁকতে খুব পছন্দ করত। সে তার আঙ্গুলগুলো রঙের মধ্যে চুবিয়ে তারপর সেগুলো দিয়ে হাবিজাবি আঁকত। তো একদিন এক বিশাল কার্ডবোর্ড নিয়ে সে আমার কাছে হাজির! সেখানে নীল রং দিয়ে বিশাল কি যেন আঁকা, আগামাথা কিছুই বুঝলাম না। সে বলল, "আব্বা, দেখো আমি কি এঁকেছি?" আর আমি বললাম, "বাহ, দারুন! একটা পাহাড়!" আর সে বলল, "না, এটা তো আম্মু!" আমি বললাম, "খাইছে!" "আম্মুকে এই কথা বোলো না কিন্তু"

তবে যে কথাটা আমি বলতে চাচ্ছি তা হলো ওরা আপনার সমর্থন পাওয়ার জন্য ব্যাকুল। ব্যাকুল তারা এর জন্য। কিন্তু আপনাদের মধ্যে যাদের সন্তানরা টিনেজার, তাদের যখন স্কুল থেকে আনতে যান, এমন কি হয় যে তারা গাড়িতে উঠে কথা বলা থামাতে পারছে না? হয় এমন? "জানো আজকে স্কুলে কি হয়েছে? টিচার এটা বলেছে, ওটা করেছে, পরীক্ষায় 'এ' পেয়েছি"। না! তারা একদম চুপ! বরং আপনিই বলার চেষ্টা করবেন, "কেমন গেল দিন?" .."মোটামুটি".."কি করলে সারাদিন?" .. "কিছু একটা".. "আজকে কোথায় যাবে?" .. "যাব কোথাও"। কথা বলেই না তারা! তাদের কথা বলানো অনেকটা পুলিশের আসামীকে জেরা করার মত ব্যপার। আপনাকে তারা কিছুই বলে না। আর যখন আপনি তাকে প্রশ্ন করছেন, তখন হয়ত সে তার বন্ধুকে এস,এম,এস পাঠাচ্ছে, "আব্বা আজকে বেশি প্রশ্ন করছে! ঘটনা কি? তুমি ওনাকে কিছু বলেছ নাকি?" ... যা আমি বলতে চাচ্ছি, তা খুবই সহজ। ছোট বয়সে আপনার বাচ্চারা আপনার মনোযোগ পাওয়ার জন্য পাগল থাকে। আর যখন তারা বড় হবে, আপনি তাদের মনোযোগ পাওয়ার জন্য পাগল হবেন।

কিন্তু তারা যখন ছোট থাকে তখন যদি আপনি তাদের মনোযোগ না দেন - তারা খেলনা নিয়ে আপনার কাছে আসলে যদি বলেন, "ঘরে যাও! আমি সংবাদ দেখছি", "খেলা চলছে। এই, তুমি ওকে একটু সরাও তো!", "সারাদিন অনেক কাজ করেছি, এখন ওকে সামলাতে পারব না", "বাসায় আমার বন্ধুরা এসেছে, কি বলবে ওরা? যাও ঘুমাতে যাও। যাও এখান থেকে" - আপনি যখন ওদের সাথে এমন আচরণ করবেন, যেন তারা আপনার জন্য প্রতিবন্ধকতা, আপনার কাজ হচ্ছে চাকরি করা, আর বাসায় এসেছেন শুধু বিশ্রাম নিতে। না রে ভাই! আপনার কাজ শুরু হয়েছে তখনই যখন আপনি ঘরে ফিরেছেন। সেটাই আপনার আসল কাজ। চাকরিতে যে কাজ করেছেন সেটা শুধুমাত্র এজন্য যেন ঘরের আসল কাজটা ঠিকমত করতে পারেন।

একজন প্রকৃত বাবা হন। উপস্থিত পুরুষদেরকে বলছি। একজন প্রকৃত বাবা হন। আপনার সন্তানদের সাথে সময় কাটান। তারা শুধু এ জন্য নেই যে আপনি তাদের স্কুলে ছেড়ে আসবেন, আর বাসায় ফিরে শুধু ঘুমাতে যাবেন, কোনো ঝামেলায় যাবেন না, তাদের সাথে কথা বলবেন না। এবং তাদের সাথে কথা না বলার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে তাদের একটা আইপড টাচ অথবা আইফোন ধরিয়ে দিন, তাদের নিজস্ব রুমে একটা কম্পিউটার বা ল্যাপটপ দিয়ে দিন হাই-স্পিড ইন্টারনেট সহ। তাহলে আপনাকে তাদের চেহারাও দেখা লাগবে না। তারা সারাদিন তাদের ঘরে থেকেই ফেসবুকিং করতে থাকবে, অনলাইনেই নিজেদের জন্য নতুন বাবা-মা খুঁজে নিবে না হয়।

সিরিয়াস্লি বলছি। প্রকৃত বাবা হন। প্রকৃত মা হন। আপনার মাতৃত্ব বা পিতৃত্বের বদলি হিসেবে এইসব জিনিসকে আসতে দিয়েন না। কারণ যদি তা দেন, তাহলে ওরা যখন স্বাবলম্বী হয়ে যাবে তখন বেশির ভাগ বাবা-মার কি হয় জানেন? আপনাদের বেশিরভাগের ছেলেমেয়েরা আপনাদেরকে দেখে কতগুলো টাকার মেশিন হিসেবে। শুধুমাত্র কখন তারা আপনাদের কাছে আসে? - "বাবা, আমাকে ৫ ডলার দাও তো" জানি আজকাল কেউ আর ৫ ডলার চায় না, কমপক্ষে ২০ ডলার। কিচ্ছু বাচ্চাদের চিনি যারা এত কম টাকা দেখেইনি, ৫ ডলারের নোট্ চিনেই না তারা। "আমাকে ২০ ডলার দাও তো", "শপিং মলে যেতে চাই, আমাকে একটু পৌঁছিয়ে দাও তো", "বন্ধুদের বাসায় যাই?" "এটা করতে পারি?" "ওটা কিনতে পারি?" যখন তাদের কোনো কিছুর দরকার তখন তারা আপনার কাছে আসে। এর বাইরে আপনি তাদের খুঁজে পাবেন না। আর যখন তারা বড় হবে, নিজেরাই একটু আধটু কামাই করতে পারবে, তখন কি হবে? তাদের দেখাই পাবেন না আর। কারণ আপনার টাকার মেশিনও এখন আর দরকার নেই। এর প্রয়োজন শেষ। আপনি যদি এই ধরনের সম্পর্ক তৈরী করেন, তাহলে নিশ্চিত বিপর্যয়ের দিকে এগোচ্ছেন। আপনাকে এখনই পরিবর্তন আনতে হবে। আর পরিবর্তনের উপায় হলো - জানি এটা অনেকের জন্যই করাটা কঠিন হবে - কিন্তু আমাদেরকে আমাদের সন্তানদের সাথে বন্ধুত্ব করতে হবে। আমাদেরকে তাদের সবচেয়ে কাছের বন্ধু হতে হবে। আমাদের সাথে সময় কাটানোটা তাদের কাছে উপভোগ্য হতে হবে।

অনুবাদ করেছেনঃ আহমেদুল কবির


https://www.youtube.com/watch?v=JL9SDIi3zAk&feature=youtu.be

0 comments
Labels: , ,

একটি জিনিসের মাধ্যমে তিনটি জিনিসের সাদাকায়ে জারিয়াহর সাওয়াব

যে একটি জিনিসের মাধ্যমে আমরা তিনটি জিনিসের সাদাকায়ে জারিয়াহর সাওয়াব পাবো(জীবিত ও মৃত্যুর পরে ক্রমাগত সাওয়াব পেতেই থাকব)

আবু হুরাইরা (রা) বলেন – রাসূল (সা) বলেছেনঃ একজন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায় কিন্তু তিনটি আমাল এর ব্যতিক্রম। ১। সাদাকায়ে জারিয়াহ ২। এমন জ্ঞান যা মানুষের উপকারে করে। ৩। নেক সন্তান যে পিতামাতার জন্য দোয়া করবে। (মুসলিম শরীফ-৪০৭৭, তিরমিযী-১৩৮০)

স্কলাররা বলেছেন এর মাঝে জ্ঞানই এমন উপাদান যা তিনটি ক্ষেত্রেই অবদান রাখে এবং সাদাকায়ের জারিয়াহর সওয়াব পেতে পারে!! চিন্তা করতে পারেন জ্ঞান এত বড়, হাশরের কঠিন ময়দানে এই জ্ঞান আমাদের কত উপকার করতে পারে, সেই মহান স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভে এটা কতবড় মাধ্যম হতে পারে !! সুবহানাল্লাহ।

আপনি সাদাকায়ে জারিয়াহ করলে তার সওয়াব জীবিতাবস্থায় এবং মৃত্যুবরণ করার পরও পেতে থাকবেন। এবং নেক সন্তান যে আপনার জন্য দোয়া করবে এবং হাদীস অনুযায়ী আপনাদের জন্য অন্যান্ন কাজও সে করবে এবং এসবের সওয়াব পেতে থাকবেন।

কিন্তু “জ্ঞান’ এক্ষেত্রে ভিন্নতর এবং অনেক বেশি কার্যকরী। কেন?

১। আপনি নিজে ‘জ্ঞান’ অর্জন করে তা আমাল করলেন এবং
২। অন্যকে শেখালেন(যা তারাও আমল করতে থাকবে এবং এর সওয়াব আপনি পেতেই থাকবেন), জ্ঞানের মাধ্যমে অন্যকে উৎসাহিত করলেন ভালো কাজ করার জন্য,
সদকা করার জন্য উৎসাহিত করলেন,
৩। ছোট ছোট বাচ্ছাদের শিক্ষা দিলেন, মাহফিলে ওয়াজ করলেন, দারসে আলোচনা করলেন, বাবা-মাকে সেবা করার জন্য বললেন, তাদের জন্য দোয়া করার জন্য বললেন – এসবই আপনার আমলনামায় সাদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আসবে।

তাহলে জ্ঞানের ক্ষেত্রে অন্তত আমাদের কখনই পিছপা হওয়া উচিৎ নয়। এক্ষেত্রে ইন্টানেটের যুগে তো আরো সহজ হয়ে গেছে আমাদের এই ধারাটা- সাদাকায়ে জারিয়াহ অর্জনের পথ। আমরাও চাইলেই পারি এই সাদাকায়ে জারিয়াহর প্রচুর সুযোগ নিতে-কাউকে ভালো বই এর সাজেশন দিয়ে, একটি ভালো লেকচার দেখার জন্য বলে, কোন ভালো ইসলামী সাইট বা পেইজ সাজেশন করে, অমুক স্কলার ভালো-তাঁর রিসোর্সগুলো দেখতে পারো এভাবে বলে। মোটাদাগে আমাদের একটা ক্লিক, একটা মেসেজ একটা শেয়ার হতে পারে জান্নাতে যাওয়ার বিরাট সুযোগ, সাদাকায়ে জারিয়াহর আশান্বিত পথ।

উস্তাদ নুমান আলী খান বর্তমান বিশ্বে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একজন মানুষ, যার কথা আমরা বাংলা ভাষায় আপনাদের জানাতে চেষ্টা করি। বিশেষত ইংরেজিতে যাদের দক্ষতা নেই, তাদের জন্য এগুলো অনেক বেশি গুরত্বপূর্ণ। আধ্যাত্বিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক জ্ঞানের সমন্বয়ে উস্তাদ নোমান আলী খান যেভাবে কোরআনের ভাষাতাত্ত্বিক ও আধুনিক বাস্তবতাকে তুলে ধরেন গভীরভাবে, এখানেই উস্তাদ নুমান আলী খান আমাদের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। এগুলোর কিছুটা কাজ উস্তাদ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে “কোরআনের কথা”র সংকলণ যা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্ব বহন করে।(আমাদের আগের একটি নোট যা উস্তাদের প্রাসংগিকতা অনেক ভালো করে তুলে ধরেছেন লেখক - নুমান আলী খান: লক্ষ তরুণের অনুপ্রেরণা - http://tinyurl.com/k6jcgc5 )

আমরা চাইলেই এটার মাধ্যমে তিন ধরণের সাদাকায়ে জারিয়াহ অর্জন করতে পারি। মনে আছে তো জ্ঞানের মাধ্যম হতে পারে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের একটি বড় উপায়। আমরা এই একটি লিংক(কোরআনের কথা) দিয়েও সেটার একটা বড় সুযোগ নিতে পারি ইন শাআ আল্লাহ।

কিভাবে?

1. আমরা নিজেরা পড়ব,

2. আমাদের পাশের লোকদের পড়তে দেবো,

3. প্রত্যেকেই অন্তত পাঁচজন করে নোটে গিয়ে ৫ জনকে ট্যাগ করে মেনশন করুন যাতে তারাও সুযোগ পায় এটা দেখতে, ডাউনলোড করতে এবং আপনার সাদাকায়ে জারিয়াহকে বৃদ্ধি করতে,

4. প্রত্যেকেই ৫ জনকে ইনবক্স করে এই নোটের লিংক দিতে পারে- কারণ ইনবক্স মেসেজ খুবই গুরত্বসহকারে দেখে সবাই

5. আপনাদের ওয়ালে নোট শেয়ার করতে পারে- নোটের আগে অবশ্যই কিছুটা উল্লখ করবেন নোট থেকে – কারণ নোটের ভ্যালুএবল অংশই মানুষকে সাহায্য করে ভেতরে প্রবেশ করতে

কোরআনের কথার নোট, সংক্ষিপ্ত ঠিকানা - http://tinyurl.com/obakf9y
আমরা কি পারবো সাদাকায়ে জারিয়াহর এই সুযোগ নিতে? আমরা কি আল্লাহর সান্নিধ্যে পাওয়ার জন্য প্রস্তুত? – তবে চলুন শুরু করি সাদাকায়ে জারিয়াহর কাজ...আমার জান্নাতের পথের কাজ, আল্লাহর সান্নিধ্যের কাজ...

যারা ইংরেজী বুঝতে পারেন তারা Ustadh Nouman Ali Khan এর এই তিনটি অসাধারণ লেকচার দেখার ও ভালো করে উপলব্ধি করার অনুরোধ রইল।

1. Importance of seeking knowledge from the Quran-http://www.youtube.com/watch?v=gbwPImkxtmE

2. Seeking Islamic Knowledge-http://www.youtube.com/watch?v=6le_I7Qho2I

3. The Quran - The Book of Timeless Guidance - http://www.youtube.com/watch?v=3R3uXMfw4z8

আসুন সর্বশেষ তিনটি হাদীস দেখি...সংক্ষিপ্ত কিন্তু এগুলোর গভীরতা অনেক বেশি, অনেক বেশি ।

“তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি #উত্তম যে নিজে কোরআন শিক্ষা করে এবং অপরকে শিক্ষা দেয়।”

“যে ব্যক্তি কাউকে সৎ পথের রাস্তা দেখিয়ে দেয়, সে ঐ আমলকারীর অনুরুপ সওয়াব পাবে অথচ আমলকারী কোন কম করা হবে না ”

“যে ব্যক্তি কাউকে সৎ পথ দেখিয়ে দেয়, সে যেন উহার আমলকারী(অর্থাৎ আমলকারীর অনুরুপ সওয়াব পাবে)”

0 comments
Labels: , ,

কোরআনের কথা বাংলা ভাষায় আধুনিক, প্রাসঙ্গিক, যৌক্তিক, যুক্তিখন্ডন, যুগোপযোগী, গভীর ও বাস্তবিক আলোচনা

বিসমিল্লাহির রাহমানীররাহীম

বাংলা ভাষায়  কোরআন-এরএই অসাধারণ  আলোচনাসমূহ  আপনার জীবনকে নতুনভাবে উজ্জীবিত করবে , কোরআনেরউপলব্ধির এক নতুন দ্বার উন্মোচিত  করবে আপনার সম্মুখে,  কোরআনের প্রতি মমত্ববোধ বাড়িয়ে দিবে অকল্পনীয়ভাবে ইন শাআল্লাহ।

কোরআনের উপর সর্ব প্রথমবাংলা ভাষায় এরকম চাতুর্মুখিক বুদ্ধিমত্ত্বা ও প্রাসঙ্গিক আলোচিত হয়েছে। ইংরেজী ওআরবীতে অনেক থাকা সত্বেও বাংলা ভাষায় এর আলোচনার প্রাসংগিকতা, বাংলা ভাষাভাষীদেরজন্য এক বিরাট রাহমা ও বারাকা হিসেবে আসবে!

আমরা আল্লাহকে আল-আলিম(সর্বজ্ঞানী),আল-হাকিম(সর্বজ্ঞ) ইত্যাদি গুনবাচক নামে বিশেষায়িত করি...এটা আমাদের বিশ্বাসেরমধ্যেই থাকে। এটার মাধ্যমে আমরা কতটুকু যে নিজেদেরকে ধোঁকায় ফেলতেছি  তার প্রমান আমরা বাস্তবে কোরআনকে কোরআনেরগভীরতা খুব অল্পই চিন্তা করি এবং এর মাঝে যে অকল্পনীয় জ্ঞানের ঝর্ণা প্রবাহিতহয়েছে আল্লাহর বিশাল ও অসীম জ্ঞান থেকে তাঁর- তা খুবই কম জানি। এর আয়াত নিয়েগভীরভাবে ভাবি না, আল্লাহর জ্ঞানের বিশালতা ও অসীমতা নিয়ে পড়ার প্রতি মনোযোগ দেইনা-কারণ কোরআনকে একেবারেই নিরস মনে হয় !!!

এটুকুই উপলব্ধি যথেষ্ট যেআমরা কোরআন পড়ি না...কারণ আল্লাহ কোরআনকে যেভাবে দেখতে বলেছে, পড়তে বলেছে, চিন্তাকরতে বলেছে, রাসূল সা. যেভাবে পড়েছেন, শিক্ষা দিয়েছেন, সাহাবা রা. ও আমাদের সৎপূর্ববর্তীগন পড়েছেন, শিখেছেন ও শিক্ষা দিয়েছেন এবং কোরআনের উপর, আরবী ভাষার উপরআধুনিক ইসলামী স্কলারদের লেখার প্রতি সম্পর্ক নেই যার মাধ্যমে আমরা কোরআনকে আরোগভীরভাবে ও চিন্তাশিলতার সাথে উপলব্ধি করব

বিশেষত কোরআনকে আমাদেরপড়তে অনীহা লাগার অনেকগুলো কারণ রয়েছে- এর   মাঝে রয়েছে কোরআনের প্রাসঙ্গিকতা, এটিকে সুশৃঙ্খল মনে না হওয়া এবং পাশাপাশিকোরআনকে বুঝতে হলে শুধু কোরআনই নয় বরং অন্যান্ন জ্ঞানের শাখাও যে সমানভাবে লাগেসেগুলোর জ্ঞান না থাকায় আমরা একে হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করতে পারে না এবং এটা পড়তেওইচ্ছা করে না। এসব কিছুই মধ্য দিয়েই কোরআনের এই অসাধারণ আলোচনাসমূহ-যার কারণেআপনার কাছে কোরআনকে আর নিরস মনে হবে না, কোরআনের আবেদন নতুনভাবে উন্মোচিত হবে,নতুনভাবে পরিচিত পাবে কোরআনের সাথে।

বাংলা ভাষায় কোরআনের উপর অসাধারণ চমকারিত্ত্বেরচৌম্বকীয় শক্তির ধারা প্রবাহিত হয়েছে এইসব আলোচনায়। কোরআনকে যেখানে নিরস মনে হতএতদিনে, মনে হতে আরবের ইতিহাসের একটা অংশ পাঠ করছি, যেখানে আমাদের প্রাসংগিকতাখুবই কম পাওয়া যেতো...সেখানে এই আলোচনা আসলেই বাংলা ভাষাভাষীদের এক বিরাট নিয়ামতহিসেবে আবির্ভুত হবে ইন শাআ আল্লাহ।


আধুনিক মানুষের জন্য সমসাময়িক প্রশ্ন, দ্বন্দ্ব এবং ঘটনাগুলোকে কুরআনের আলোকে দেখা এবংকুরআনের আয়াতে লুকিয়ে থাকা বৈজ্ঞানিক তথ্য এবং যুক্তির উপর আলোচনা হয়েছে এইসব প্রাসঙ্গিক লেখায়

কু’রআনের আয়াতগুলোর সরাসরি বাংলা অনুবাদ পড়ে আয়াতের বাণীর খুব কমই বোঝা যায়,  কারণআরবি থেকে বাংলা অনুবাদ করার সময় অনেক আরবি শব্দের প্রকৃত  অর্থ,  অর্থের ব্যাপকতা এবংপ্রেক্ষাপট হারিয়ে যায়। অন্যদিকে তাফসীরগুলো হচ্ছেচরম পর্যায়ের ভাব সম্প্রসারণ, যা পড়ার ধৈর্য অনেকেরই হয় না। একারণে আমাদের দরকার মাঝামাঝি এমন একটা কিছু, যেটা কুরআনের অনুবাদের মতো সংক্ষিপ্ত, অপর্যাপ্ত নয় এবং একই সাথে তাফসীরের মতো এত দীর্ঘএবং  খুঁটিনাটিতে ভরা নয়; যেটা কুরআনের প্রতিটি আয়াতেরবাণীকে অল্প কথায়, যুগোপযোগী উদাহরণ দিয়ে, বৈজ্ঞানিক যুক্তি এবং প্রমাণ দিয়ে প্রাঞ্জল বাংলায় তুলে ধরে , যা পড়ে আধুনিক যুগের মানুষ তাদের জীবনের ঘটনারসাথে  মিলাতে পারবেন। এটিকোনো তাফসীর নয়, বরং প্রসিদ্ধ তাফসীরগুলো থেকে  উল্লেখযোগ্য এবং আজকের যুগের জন্য প্রাসঙ্গিক আলোচনারসংকলন।

মাত্র ৬ মেগাবাইটেরকোরানের উপর বাংলা ভাষায় অসাধারণ অনেকগুলো আলোচনা স্থান পেয়েছে ।
সত্যি  এটি আপনার জীবনে কোরানেরপ্রতি দৃষ্টিভংগি বদলে দিবে। এতদিনে যেই কোরানকে নিরস মনে হত আজথেকে  সেটাপ্রাণোজ্জল মনে হবে, মনে হবে এতো আমাদের কথাই বলা হচ্ছে, এটা চৌদ্দশত বছরের সেইপ্রাচীন কোরআন আজকের কোর’আননই  মনে হবে। যেই কোরআনকে পড়তে আমাদের এত অনীহা ছিল, সেই কোরআন ইআজকে আত্মার বাধনে আধ্যাত্বিকতায় মিলিয়ে যাবে, হবে আপনার সাথে এক অমূল্য বন্ধনেআবদ্ধ।

এখানে বিশেষত সেইসবরেফারেন্স ব্যবহার করা হয়েছে তারা সবাই কোরানের উপর অনেক বিস্তৃত, গভীর ও আধুনিক কাজকরেছে। উস্তাদ নোমান আলি খান থেকে মূল  প্রেরণা নেওয়াহয়েছে এবং সেই সাথে উস্তাদের উল্লেখ করা অন্যান্ন অনেক স্কলারদের তাফসীর থেকেওসাহায্য নেওয়া হয়েছে।
আরো যেসব লেখক থেকে সাহায্য নেওয়া হয়ছে তাদের মধ্যে মুহাম্মাদ আসাদ(তাঁরব্যাখ্যা আধুনিক ধারার মনে করা হয়), মুহাম্মাদ মোহার আলি(কোরআনের শাব্দিক অনুবাদেরজন্য বিখ্যাতগ্রন্থ), আমিন আহসান ইসলাহি(ফারাহির উত্তরসূরী যিনি কোরআনের নাজম-Coherence(সংগতি, ঐক্যতান, মিল)এর উপর তাঁর তাদাব্বুরে কোরআন-যারা উস্তাদ নোমান আলী খানে ড্রিম তাফসীর শুনেছেন তারা বুঝতে পেরেছেন উস্তাদ কতবেশি সাহায্য নিয়েছেন এটার), ড: ইসরার আহমেদ(পাকিস্তানের বিখ্যাত ও গভীর তাফসীরকারক যিনি ২০টি কোরআনের তাফসীর থেকে তাফসীর করেছিলেন-নোমান আলী খান সেখান থেকেতাঁর তাফসীরে প্রচুর সহায়তা নিয়ে থাকেন, বিশষত যেখানে উস্তাদ নিজেও সমস্যার মধ্যেথাকেন বা বুঝতে অসুবিধায় পতিত হন), আব্দুল হালিম(কোরআনের সর্বাধুনিক অনুবাদক)সহঅনেকগুলো তাফসীরের বাংলা ভাষায় প্রাসংগিকতা, গভীরতা, ও কোরআনের অসাধারণ মুজিজাসমূহতুলে ধরেছেন। সুবহানাল্লাহ!
সম্ভব হলে প্রিন্ট করে বইআকারে বাধাই করে পড়তে পারেন...এটা পড়ার ক্ষেত্রে আরো বেশী মনোযোগ আনবে...সাথেঅসাধারণ কোরআনের উপর অনেকগুলো চমৎকার লেখা পাচ্ছেন।

ডাউনলোড করুন এখান থেকে -


http://quranerkotha.com/Quraner%20Kotha%20upto%20June%2030.pdf

-----------

মূল সাইট - http://quranerkotha.com/
উস্তাদ নোমান আলী খানের ড্রিম তাফসীর - http://www.nakcollection.com/download-tafsir.html
Coherence এর জন্য একটি উদাহরণ দেখুন শাইখ আব্দুন নাসির জাংদার - http://www.youtube.com/watch?v=dWFdF44opPg (Salah and Marriage)
দেখুন - আমার কু’রআন পড়তে ভালো লাগে না - http://tinyurl.com/p558voo

0 comments
Labels: , , ,

মুসলিমদের দায়িত্ব

সূরা আন-নিসা আয়াত ১৬৫: “রাসুলরা ছিলেন জান্নাতের সুসংবাদবাহী ও জাহান্নামের ভয় প্রদর্শনকারী,তাদের এজন্যই পাঠানো হয়েছিল যাতে করে রাসুলদের আগমনের পর আল্লাহ্‌ তায়ালার নিকট মানবজাতির কোন অজুহাত পেশ করার সুযোগ না থাকে; সত্যিই আল্লাহ্‌ তায়ালা মহাপরাক্রমশালি ও প্রজ্ঞাময়।"

আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতাল্লাহি ওয়াবারকাতুহু।

আজকের সংক্ষিপ্ত অনুস্মারক বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ্‌ সুবহানাহুওয়াতায়ালা সূরা নিসা আয়াত ১৬৫ তে আমাদের যা বলেছেন তা অনেক শক্তিশালী। “রাসুলরা ছিলেন জান্নাতের সুসংবাদবাহী ও জাহান্নামের ভয় প্রদর্শনকারী”। অবশ্যয় আমরা জানি তাঁরা তা করেছেন। কিন্তু তারপর আল্লাহ্‌ বললেন আমাদের যে কেন তিনি তাঁদের পাঠিয়েছিলেন “যাতে করে রাসুলদের আগমনের পর আল্লাহ্‌ তায়ালার ওপর মানবজাতির কোন অজুহাত খাড়া করার সুযোগ না থাকে”।অন্যভাবে বলা যায় রাসুলদের পাঠানোই হয়েছে যাতে মানবজাতির কোন অজুহাত না চলে আল্লাহ্‌ সুবাহানাহুওয়াতালার পথ থেকে সরে যাওয়ার। এই কারণে রাসুলদের পাঠানো হয়েছে।এটা আসলেই অনেক কঠিন। এটা এই রুপ যেন আল্লাহ্‌ সুবাহানাহুওয়াতায়ালা বলছেন “ ইনিই সেই রাসুলুল্লাহ , শেষ নবীকে পাঠানো হয়েছে মানবজাতির আর কোন অজুহাত চলবেনা। ইনিই শেষ নবী"।

আপনি কি জানেন এটার মানে একজন মুসলিমের জন্য কি দাড়ায়?এটার মানে এই দুনিয়াতে যদি কেউ মোহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে না চিনেন উনি আসলেই কেমন তা না জানেন , তিনি তেমন নয় যারা তাকে ঘৃণা করে তারা যেভাবে উপস্থাপন করেন, তেমন ও নয় মিডিয়া অন্যের সামনে তাঁকে যেভাবে তুলে ধরে বরং তারা তো জানেনই না উনি সত্যিকারে কেমন, কিন্তু তিনি আসলেই কেমন তা যদি আমরা না জানি এটা আমাদের বহন করতে হবে কারন আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মিশনের বাহক।

কিন্তু এখন মানবজাতির কোন বিকল্প পথ নেই। কোন অজুহাত ও নেই। এই কারনেই রাসুলদের পাঠানো হয়েছিল। যদি রাসুলদের শুধু মাত্র তাঁদের জাতির জন্য প্রেরন করা হত তখন তাঁদের কাজ হত তাঁদের জাতির প্রত্যেকে সংবাদটি পেয়েছে এটি নিশ্চিত করা। এবং যেহেতু রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পাঠানো হয়েছে সব মানুষের জন্য, পুরু মানবজাতির জন্য, তিনি সব মানুষের কাছে সংবাদ পৌঁছাতে পারেন নি, তিনি কখনো চায়নার লোকদের সাথে কথা বলেন নি,তিনি কখনো ইন্ডিয়ার লোকদের সাথে কথা বলেন নি,তিনি কখনো ইউরোপের লোকদের সাথে কথা বলেন নি। উনার মিশন এরাবিয়ান পেনিনসুলাতে সীমাবদ্ধ ছিল, এবং সামান্য সংখ্যক যোগাযোগ তিনি অন্য জাতির সাথে করতে পেরেছিলেন চিঠির মাধ্যমে। এই টুকুই। তার সেই দায়িত্ব যেহেতু তিনি মানবজাতির শেষ রাসুল তার বার্তা গুলো আল্লাহ্‌ সংরক্ষণ করে রেখেছেন এবং এটি সংরক্ষিত থাকবে শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত। তিনি কুরআন ঠিক সেভাবেই সংরক্ষন করে রেখেছেন যেভাবে তিনি রেখে গিয়েছিলেন। তিনি এটা এভাবে সংরক্ষন করে রেখেছেন যাতে আপনি এবং আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সংবাদ বাহক হতে পারি। মানবজাতির কোন অজুহাত থাকা উচিত না। এই কারণে আল্লাহ্‌ সুবাহানাহুওয়াতায়ালা রাসুলদের নির্বাচন করেছেন। এবং এই আয়াতে আল্লাহ্‌ সুবাহানাহু ওয়া তায়ালা সরাসরি আমাদের সংযোগ স্থাপন করছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মিশনের সাথে। এটা খুব খুব খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি আয়াত। তাই আমি চায় আপনারা ভাবুন, মুসলমানেরা, রাসুলদের সময়ের লোকেরা এবং বাকি মানবজাতি, শেষ বিচারের দিন আল্লাহ্‌ সুবাহানাহু ওয়াতায়ালা জিজ্ঞেস করবেন তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে “ তুমি কি তাদের সংবাদ পৌঁছে দিয়েছিলে”? এবং তিনি বলবেন “হ্যাঁ”। এবং কেয়ামতের দিন আল্লাহ্‌ সুবাহানাহু ওয়াতায়ালা মানুষকে জিজ্ঞেস করবেন “ তোমরা কি সংবাদ গ্রহন করেছিলে”? তারা হয়ত বলবে “না”।

এদের মাঝে কারা আছি? আমরা। তারপর আল্লাহ্‌ সুবাহানুহুওয়াতায়ালা আমাদের দিকে মানে মুসলিমদের দিকে ফিরবেন এবং জিজ্ঞেস করবেন “তোমরা কি রাসুলের বানীগুলো পৌঁছে দাওনি”? এবং আমরা তখন তাঁকে বলবো “আসলে আমরা ব্যস্ত ছিলাম, আমাদের এত সময় ছিলনা”, অথবা আমরা মুখে বলেছি কিন্তু আমাদের চরিত্রে তা প্রকাশ পায়নি। এটাই পরীক্ষা। আমাদের অবস্থা স্যন্ডউইচের মত হয়ে যাবে। একদিকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলবেন “আমি আমার কাজ করেছি তারা দায়ী” । অন্য দিকে মানবজাতি বলবে “ আমরা কোন সংবাদ পাইনি। এই লোক গুলো! আপনি চান আমরা তাদের অনুসরণ করি?আপনি কি দেখেছেন মুসলিমরা কিরকম আচরণ করত? কারন আমরা জানি তারা কিরকম আচরণ করত। আমরা জানি তারা কিরকম ব্যবসা করত।আমরা কেন তাদের মত মুসলিম হতে চাইবো”?যদি তারা আমাদের উপর এই মামলা ঠুকে দেয় এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনি উনার দায়িত্ব পালন করায় মুক্তি পেয়ে যাবেন তখন আমাদের কি হবে? আমরা তখন উভয় দিক দিয়ে স্যান্ডউইচে পরিনত হব। এটাকে “শাহাদা আলা আন্নাস” বলে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন আপনার বিপক্ষে সাক্ষী দিবেন যদি আপনি আপনার দায়িত্ব পালন না করেন এবং আপনি হয়ত তখন মানুষের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিবেন। আপনি হয়ত বলবেন “ আমরা সংবাদ পৌঁছে দিয়েছি”। মানুষ জানত ইসলাম কি যদিও আমরা মুখে কিছু বলিনি।মুসলিমদের সন্নিকটে থেকেই তারা জানত ইসলাম কি এবং এর বৈশিষ্ট কি,এর নৈতিকতা ও ভিন্নতা কি, মুসলিমদের নীতি সমুহ কি। এবং যদি তারা না জানে আমরা ফাঁদে আটকে যাব। আমরা ফাঁদে আটকে যাব। আল্লাহ্‌ সুবাহানুহু ওয়াতায়ালা বলবেন তাই মানুষের কোন অজুহাতই থাকবেনা রাসুলদের আগমনের পর। এবং আল্লাহ্‌ তায়ালা মহাপরাক্রমশালি ও প্রজ্ঞাময়। আল্লাহ্‌ তায়ালা সবসময় মহাপরাক্রমশালি এবং আল্লাহ্‌ তায়ালা সবসময় প্রজ্ঞাময়। 


আল্লাহ্‌ জানতেন যে রাসুলরা মানুব জাতির জন্য যথেষ্ট হবে।

তাই এখন যখন লোকেরা বলেন “ এই ধর্মকে নির্বাচন করার মত যথেষ্ট পরিমান যুক্তি আমাদের কাছে ছিল না”। এই দোষের কিছু অংশ তাদের উপর বর্তায় আর কিছু অংশ মুসলিম জাতির উপর বর্তায় যারা তাদের কাজ ঠিক মত করে নি। এটা আমাদের জন্য চিন্তা করার মত খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । আমরা যদি সংবাদ বহন না করি, আমি বলছিনা আমাদের সবারই বাইরে বের হতে হবে এবং প্রচারক হতে হবে, আমি এটা বলছিনা, আমি যেটা বলছি তা হল যদি আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ইসলামের আলোকিত বৈশিষ্টগুলো ধারন না করি, আমরা যদি এটাই না জানি আমাদের বইতে প্রথমে কি আছে, এখনকার সময়ে আপনার কাউকে গিয়ে দাওয়া দিতে হয়না, মানুষ নিজ থেকে এসেই জিজ্ঞেস করে “ তোমরা মুসলিম? তোমরা নামায পড়? তোমরা কিভাবে নামায পড়? তোমরা কি কি করো”?
আমার বাড়িতে কিছু কাজ ছিল এবং এক লোক সে পেইন্টিং করে সে জিজ্ঞেস করলো “এটা কিসের পেইন্টিং”। আমি তাকে বললাম “এটা প্রার্থনার পেইন্টিং”।

তারপর আমরা নামায নিয়ে আলোচনা শুরু করলাম। আমি তাকে দাওয়া দি নি। সেই নিজ থেকে আমার কাছে দাওয়া চেয়েছে। এটাই আমি বলছি। সুযোগটা এখানেই। আমাদের এভাবেই এগুতে হবে, তাই আমি প্রার্থনা করি যে আমরা এভাবে এগুতে সক্ষম কারন মানবজাতির যদি কোন অজুহাত না থাকে তাহলে অবশ্যই এটার পিছে কারন আপনি আমি এবং যারা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলেন, যারা মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন তাদের প্রচারনার কারণেই।
চূড়ান্ত কথা।

এটা খুবই সুন্দর। আল্লাহ্‌ সুবাহানাহু ওয়াতায়ালা সব রাসুলদের পাঠিয়েছেন এবং তিনি তাদের ধারা ও বর্ণনা করেছেন, তারা সুসংবাদ দিয়েছেন এবং সতর্ক ও করেছেন। তিনি আগে কোনটা উল্লেখ করেছেন? তারা সুসংবাদ দিয়েছেন। আমাদের ভালো সংবাদের বাহক হতে হবে। আমাদের কাউকে এটা বলতে হবেনা যে তারা জাহান্নামে যাচ্ছে, আমাদের কাউকে এটা বলতে হবেনা যে তারা দণ্ডপ্রাপ্ত। এভাবে আপনি ইসলামের সংবাদ পৌঁছাতে পারবেন না। এটা আশার সংবাদ। এটা আশাবাদের সংবাদ। এবং এখন যদি মুসলিমরা নিজেদের নিয়ে আশাবাদী না হন, আশা পূর্ণ না হন, অনেক মুসলিম যাদের সাথে আমি কথা বলেছি তারা সত্যি বিশ্বাস করে তারা জাহান্নামে যাবে, তারা জান্নাতে যাওয়ার মত নিজেদের যোগ্য মনে করেনা। “ জান্নাত হল খুব খুব ভালো মানুষদের জন্য। এটা আমাদের জন্য না”। আপনি যদি নিজেকেই বিশ্বাস না করেন তাহলে অন্যদের কি করে বুঝাবেন?অন্যদের কে কিভাবে পথ দেখাবেন? রাসুলরা এসেছিলেন সুসংবাদ দেয়ার জন্য। প্রথমে সুসংবাদগুলো নিজেদের মধ্যে ধারন করুন তাহলে আপনি অন্যদের সাথে শেয়ার করতে পারবেন।

বারাকাল্লাহু লি ওয়ালাকুম, ওয়া-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।


.https://www.youtube.com/watch?v=elZWWknsrtA...
ভিডিওটি অনুবাদ করে দিয়েছেনঃ তাসনিম সুসান আযাদ 

0 comments
Labels: , , ,

কিভাবে আমার চরিত্রের উন্নতি করবো?

প্রথম কথা হল হারাম কাজ পরিত্যাগ করা। মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকা। মন্দ কাজ থেকে বিরত হবার আগ পর্যন্ত ভালো কথা বলতে যেও না। কারণ তুমি শরীরের ক্ষতস্থানে রক্ত প্রবাহিত অবস্থায় ঔষধ দিলে সেটা ফলপ্রসু হবে না আর মন্দ কাজ বা পাপ থেকে বিরত না হয়ে ভালো কথা বললেও সেটা ফলপ্রসু বা দীর্ঘস্থায়ী হবে না।

এক্ষেত্রে সর্বপ্রথম তোমাকে আনন্দের মধ্য দিয়ে যে বদ অভ্যাস গড়ে তুলেছ তা থেকে বিরত থাকতে হবে। মুভি দেখা বাদ দিতে হবে, রাস্তায় চলমান অবস্থায় চক্ষুকে অবণত করতে হবে-কারণ নারীর প্রতি তোমার প্রত্যেকটা চাহনির সাথে তোমার মানবিক গুনকে নষ্ট করে ফেলছ। তুমি একজন নারীর দিকে এমনভাবে তাকাও যেন সে একটা খাবারের টুকরা, যেন সে একটা প্রাণী- আর এটাই প্রমাণ করে যে তুমি একজন মানুষকে তাঁর মানবিক অবস্থানমূলক সম্মানের জায়গাকে অপমানিত করছ। এটাই প্রমাণিত করে যে তুমি নিজেই এক প্রাণীতে পরিণত হয়েছ।

সুতরাং চারিত্রিক উন্নতি করতে হলে তোমাকে অবশ্যই প্রথমে সেই মানবিকতা ফিরিয়ে আনতে হবে এবং তারপর তোমার জীবনকে ভালো কাজ দিয়ে সুশোভিত কর, তাকে সৌন্দর্যমন্ডিত কর।
নিজেকে ভালো করে গড়ে তুলার ক্ষেত্রে ছোট ছোট পদক্ষেপ নিতে থাকো – যেমন , সুন্দর ও পারফেকটভাবে সালাত আদায় কর, কিছু প্রয়োজনীয় দোয়া মুখস্ত করা, কাজের ক্ষেত্রে সততা বজায় রাখা, পিতা-মাতার প্রতি সদয় হওয়া। আর এগুলো তেমন কিন্তু তেমন কঠিন কাজ নয় - চাইলেই পারো।

আল্লাহ আমাদের কাছ থেকে এইগুলোই প্রত্যাশা করেন।

কেউ প্রশ্ন করতে পারে আল্লাহ কেন আমাদের কাছে এগুলো প্রত্যাশা করেন, এগুলো কি তাঁর কোন উপকারে আসে?

এর উত্তরে বলা যায়- আমরা জানি আল্লাহর একটি নাম হল “গনী” যার অর্থ যিনি ধনী, এমন ধনী যে যার আর কোন কিছুরই দরকার নেই কারো কাছে। অর্থাৎ চূড়্রান্ত ধনী। তাহলে কি আমরা বলতে পারি যে আল্লাহর আমাদের কাজ দরকার? নাহহহহ।

তাহলে?

বরং একাজগুলো আমাদেরই দরকার, কারণ আমরাই কিন্তু দূর্নীতিগ্রস্থ, আমরাই পাপী, আমরাই মন্দ কাজ করে আমাদের চরিত্রকে ধ্বংস করে ফেলেছি। এ কারণেই আল্লাহ এসব ভালো কাজ করতে বলেছেন যাতে তুমি উত্তম হতে পারো, হতে পারো ধনী-তিনি তোমার চাহিদা পূরণ করে দিবেন, তোমার উপর রহমত ও দয়া বর্ষণ করবেন।

ভালো কাজ আমাদের শুধু উপকারই করে না বরং এগুলো আমাদের জন্য ঔষধস্বরুপ; কিন্তু এর অধিক উপকারিতা হল এই যে - ভালো কাজ আমাদের দুনিয়াতেও উপকার করে আবার আখিরাতেও বোনাস হিসেবে উপকার করবে। সুবহানাল্লাহ !!

যেমন তুমি তোমার মায়ের প্রতি অসত ছিলে, মন্দ ছিলে কিন্তু যখনই তুমি সৎ ব্যবহার করতে শুরু করলে তোমারও জীবনে কল্যাণ আসতে শুরু করল। এটা তোমার মায়ের প্রতি ভালো ব্যবহারের একটা প্রতিদান দিয়েছেন আল্লাহ।

এভাবে তুমি যতই তুমি ভাল কাজ করবে, সেই ভালো কাজগুলো তোমার আরো বেশি কল্যাণের পথ দেখিয়ে দিবে। এভাবেই আল্লাহ তোমার প্রতি এই দুনিয়ার সদয় হন। যে ব্যক্তি আল্লাহর ব্যাপারে সদা-সচেতন হয়, আল্লাহ তার জন্য অবারিত ধারায় উত্তম পথের সন্ধান দিয়ে দেন, তার কল্যাণের জন্য। আল্লাহ তার জন্য এমন জায়গা থেকে প্রতিদান দেন যা সে কল্পনাও করতে পারত না- এর কারণ সে আল্লাহর ব্যাপারে সচেতন হয়েছে, আর আল্লাহও তার প্রতি সর্বদা খেয়াল রাখেন। আল্লাহ আমাদের কাছে এই ভালো কাজগুলো চান এবং এর বিনিময়ে তিনি আমাদের জীবনকে আরো উত্তম করে দেন, আরো সহজ করে দেন।

আল্লাহ তোমাদের বোঝাকে হালকা করতে চান, যেহেতু মানুষকে দূর্বল(রুপে)করে সৃষ্টি করা হয়েছে।(সূরা নিসা - ২৮)

তুমি কি মনে করো আড্ডা দিয়ে, গীবত করে , মিথ্যা বলে, ফেইসবুকে মেয়েদের সাথে চ্যাট করে জীবন সহজ হবে ? বরং তুমি তোমার জীবনকে আরো অধিক কষ্টদায়ক করছ, জীবনকে অধিক ভারী করে তুলছ।। আল্লাহ তোমার জীবনকে সহজ করতে চান, তোমার বোঝাকে নামিয়ে নিতে চান, কিন্তু তুম বুঝতে পারছ না,- কারণ তুমি খুবই দূর্বল; কিন্তু আল্লাহ ‘গানী’ বা ধনী – আর তাই ঐ ধনীর(আল্লাহর)কাছে যাও এবং তাঁর নির্দেশনা মেনে নিয়ে নিজের অভাব পূরণ কর।

# Help Taken From The Lecture - Tips To Improve Your Character by Ustadh Nouman Ali Khan

# সম্পূরক লেকচার হিসেবে শাইখ সালেম আল-আমরী এর Effects of Sins লেকচারটি অবশ্যই দেখার অনুরোধ করব। এখানে পাপের কেন করি-কারণ, পাপের বিভিন্ন ধরণ এবং বিশেষত ইবনুল কাইয়্যুম(র) এর একটি চমৎকার বই থেকে পাপ থেকে কিভাবে বেঁচে থাকা যায় সেগুলো বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে প্র্যাক্টিক্যাল উদাহরণসহ।

http://www.youtube.com/watch?v=cTM8cKGme-8

0 comments
Labels: , , ,

আপনার চরিত্রই আপনার সর্বশ্রেষ্ট দাওয়াহ।

ভাবতে পারেন কথাটুকুর গুরুত্ব কতটুকু?...কি বুঝতে পারছেন না?- এতটুকুই জেনে রাখুন যে মানুষের এই চারিত্রিক ব্যবহারের কারণেই কেউ জান্নাতে যাবে আবার কেউ বা জাহান্নামে যাবে--- এবার কিছুটা উপলব্ধি করতে পারছেন তো।

রাসূল (সা) এর ঐ হাদীসটা মনে আছে না – এক ব্যক্তি রাসূল (সা)কে প্রশ্ন করল হে আল্লাহর রাসূল(সা)- একনারী সালাত আদায় করে প্রচূর, যাকাতও দেয় এবং অন্যান্ন নফল আমলও করে প্রচূর কিন্তু সাথে প্রতিবেশির সাথে দূর্ব্যবহারও করে- তার ব্যাপারে আপনার মত কি? – রাসূল (সা) বললেন – সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।

আবার জিজ্ঞেস করলেন – একনারী ফরজ সালাত আদায় করে, ফরজ যাকাত দেয় এবং অন্যান্ন ফরজগুলোও ঠিকমত আদায় করে কিন্তু নফল তেমন করে না এবং প্রতিবেশির সাথে উত্তম ব্যবহার করে, তার ব্যাপারে আপনার মত কি? – রাসূল (সা) বললেন সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

রাসূল (সা) এর মাঝেই আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ রয়েছে তাই না? – সেই আদর্শ কি?

--চারিত্রিক সৌন্দর্য ও গুনাবলীর পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনের জন্যই আমি প্রেরিত হয়েছি। – মুয়াত্তা ইমাম মালেক

--নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত। (সূরা কালাম-৪)

--নিঃসন্দেহে কিয়ামতের দিন মু’মিনের পাল্লায় যে জিনিসটি অধিক ভারী হবে তা হলো উত্তম চরিত্র। আর নিঃসন্দেহে আল্লাহ অশ্লীলভাষী ও নির্লজ্জ ব্যক্তির প্রতি শত্রুতা পোষণ করেন। – তিরমিযী

--মুমিনদের মধ্যে পরিপূর্ণ ঈমানদার হচ্ছে সে ব্যক্তি, যে তাদের মধ্যে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। (আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিযী)

এখন আমরা যারা ফেইসবুক ব্যবহার করি, বা কাউকে পছন্দ করি না --- এইসব ব্যবহারের দিকটা কি লক্ষ করেছি? – ফেইসবুকে কেউ কারো সাথে দ্বিমত করলেই কাফির ফতোয়া দেই, ইহুদিদের দালাল বলে ঘোষণা দেই, মন্দ ব্যবহার করি, গালি দেই... আপনি কি রাসূল (সা) কে দেখেছেন কখনো কারো সাথে মন্দ ব্যবহার করতে? – নাহহহহ। তাহলে তিনি যদি আদর্শ হন আমাদের- তাহলে ফেইসবুকে গালি দেই কেন?, দ্বিমত পোষণ করলে তার সাথে মন্দ ব্যবহার করি কেন? অথচ আপনি জানেন মন্দ ব্যবহারের কারণে মানুষ জাহান্নামে যাবে...

আরবীতে তথ্যের কোন উপকার নেই জানেন? একারণে আপনি ঈমান আনার সাথে সাথে আমালের কথা বলা হয়েছে কোরআনের অনেক আয়াতে। আপনি ঈমান আনলেন, আপনার কাছে প্রচূর ইসলামী জ্ঞান আছে ...আপনার কোন লাভ নেই যদি তা পালন না করেন।

সর্বশেষ আরো একটি হাদীস মনে রাখুন – রাসূল (সা) বলেছেন ; কিয়ামাতের দিন সর্বনিকৃষ্ট হবে ঐ ব্যক্তি যার কর্কশভাষার জন্য(মন্দ ব্যবহারের কারণে) লোকেরা তাকে এড়িয়ে চলবে।

(অথচ আপনি এখান থেকে দুটি জিনিস অর্জন করতে পারেন – কেউ আপনার প্রতি মন্দ ব্যবহার করলেও তার প্রতি মন্দ ব্যবহার না করে উত্তম চরিত্র অর্জন করা এবং সবর শিক্ষা করা – দুটী সাওয়াব পাচ্ছেন)।

আল্লাহ আমাদের উত্তম চরিত্র অর্জন করার তাওফিক দিন।

0 comments
Labels: , ,

মিউজিক \ গান কি এতই খারাপ...?

আমার মতে, বর্তমান সময়ে মিউজিক হল নৈতিক অবক্ষয়ের অন্যতম সহজ উপায়। বর্তমানে মিউজিক হল অডিও পর্ণগ্রাফি। এটা সত্যিই তাই। এটা স্পষ্টতই অশালীন এবং অভদ্র। এটা আপনার মধ্য থেকে মনুষ্যত্ব দূর করে দেয়, এটা আপনাকে নারীকে ভোগ্যপণ্য ভাবতে শিখায়, এমনকি ভোগ্যপণ্য থেকেও নিকৃষ্ট ভাবতে শিখায়। পশুর চেয়েও খারাপ ভাবতে শিখায়। এরা নারী সম্পর্কে এমন ভাবে কথা বলে যেন নারীরা পশু। সত্যি। এটা নারীকে ভোগ্যবস্তু রূপে পেশ করে, আমি বিশেষ ভাবে লক্ষ্য করেছি যে, আমার পরিচিতদের মাঝে অনেকেই এমন যারা মুসলিম, কিন্তু তারা “হিপ হপ” সংস্কৃতিতে আকৃষ্ট। তাদের অনেকেই গানগুলো হিফয বা মুখস্ত করে ফেলে, তাইনা? তারা গানগুলো মুখস্ত করে এবং পূর্ণ তাজ্বীদ এর সাথে গানগুলো গাইতেও পারে, তাইনা? এবং তাই তারা এটা করে এবং গান গুলোর ভাষা খুবই কদর্য, খুবই ভয়াল, ভয়াল, ভয়াল নিম্নমানের ভাষা। 

আপনাদের কি আর বলব, আমার একমাত্র মতামত এটাই যে, আপনার যদি আল্লাহের কিতাবের প্রতি বিন্দুমাত্রও শ্রধা থাকে, যদি আপনি সত্যি বিশ্বাস করেন যে এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিল হয়েছে, “বি সালিস্মুল ফুসুকু বা’দাল ঈমান”, এমন কি খারাপ জিনিষ এর নাম, এর উল্লেখ, এ শব্দ ব্যবহার করাও ভয়াবহ, যদি আপনার বিশ্বাস থেকে থাকে। এমনকি কোন ভয়ানক খারাপ জিনিষ এর উল্লেখ করাও আপনার জন্য ক্ষতিকর, যদি আপনার বিশ্বাস থেকে থাকে। আপনার জিহব্বা/ভাষা অবশ্যই পরিষ্কার রাখতে হবে। আপনাকে বলতে হবে- “কুল্লি ইবাদুল ইয়াকুলুললাতি হিয়া আহসান” – আমার বান্দাদেরকে বলুন তাই বলতে যা সবচেয়ে ভাল। সবচেয়ে ভাল কথা বলুন। আপনার জিহবা দিয়ে ভাল কথা বলুন। এটাই হল প্রথম ধাপ। যখন আপনি কদর্য কথা বলেন এবং এমন কথা বলেন যা আমাদের জন্য আল্লাহের নির্ধারিত নৈতিক মাপকাঠির সরাসরি বিপরীতে, তখন খুব স্পষ্টতই আপনি আপনার স্বাভাবিক বিশ্বাস থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন, আল্লাহের পথে চলার প্রবণতা থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। আপনি যখন বিরতিহিন ভাবে এসব আবর্জনা শুনতে থাকেন, তখন আপনি পথভ্রষ্ট হয়ে যান, তখন আল্লাহ কে অমান্য না করলে আপনার ভাল লাগেনা, আর এটাই হল হৃদয়ের অসুখের লক্ষণ। তাই অবশ্যই তাকে এর থেকে দূরে আস্তে হবে। এটাই প্রথম পদক্ষেপ। 

আমি আপনাদের কে বলব, যদিও এটা আমার ব্যক্তিগত বিবেচনা, এটা কোন ফতওয়া নয়, এটা আমার ব্যক্তিগত বিশ্লেষণ, আপনাকে এটা মানতেই হবে এমন নয়, কিন্তু যদি কোন মানুষের দীর্ঘদিন “হিপ হপ ” মিউজিক আর এটা ওটা শোনার পর তার কাছে কুরআন শুনাকে বিরক্তিকর মনে হয়, যখনই কেউ গাড়িতে কুরআন তেলাওয়াত চালু করে, জানেন তারা কি বলে? “ওহ এটা বন্ধ কর, আমি শুধু কথা বলতে চাই”। আর কুরআন শোনা মাত্রই তারা তাৎক্ষনিকভাবে বিরক্ত হয়ে উঠে, এর আসল মানে হল তারা শয়তানের কব্জায় চলে গেছে, এবং তারা বিরতিহীন ভাবে এই মানুষটিকে কুবুদ্ধি দিচ্ছে। শয়তান কন জিনিষটিকে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করে? তারা কুরআন কে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করে। তারা আল্লাহের বানীকে ঘৃণা করে। তারা পালিয়ে যায়- কারন এটা তাদের জন্য ক্ষতিকর। তাই তারা কি করে জানেন? যেহেতু মানুষটি এদের কব্জায় আছে, এর হৃদয় তাদের কব্জায় আছে, তারা তার হৃদয়ে খোঁচা দিতে শুরু করে যখন সে কুরানের বানী শুনে, আর সে বলে “আহহ আমি এটা শুনতে চাইনা”। এটা সার্জারি করার মত, এটা যেন দাঁত তোলার মত যন্ত্রণাদায়ক মনে হয়। এটা সত্যিই ঘটে। আপনি যখন এরকম মানুষকে আল্লাহের বানীর কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন, তারা বিরক্ত হবে, উত্তেজিত হবে, যেন তাদের এটাতে এলারজি আছে। এর কারন? কারন তারা শয়তান কে তাদেরকে কব্জা করার সুযোগ দিয়েছে। তাদেরকে বিতাড়িত করতে হলে, প্রথমে যে কাজটি করতে হবে তা হল, তাদেরকে জ্বালানি সরবরাহ করা থেকে বিরত হওয়া। মিউজিক এর জ্বালানী। এভাবে উদ্দেশ্যহীন সময় নষ্ট করাটাই, শয়তান এর জ্বালানী। 

তারা এটাই পছন্দ করে যে, আপনি যেন সময় নষ্ট করেন। তারা এটাই ভালবাসে। কারন, আল্লাহ সমগ্র মানবজাতিকে একটি মাত্র সম্পদ, শুধু একটি মাত্র সম্পত্তি প্রত্যেককে দিয়েছেন, আর তা হল সময়। আর মিউজিক, টিভি, ইউটিউব, ফেসবুক, মাই স্পেস, টুইটার এসব কি? আপনি যদি এগুলোর পিছনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নষ্ট করেন, এটা আপনার সময় নষ্ট করা ছারা আর কি হতে পারে? এটা আপনার সম্পদকে নষ্ট করে দিচ্ছে, আর শয়তান এর থেকে অন্য কোনকিছুই বেশি ভালবাসেনা। আল্লাহ’তালা আপনাদেরকে এই ধরনের প্রবৃত্তি থেকে বিরত থাকার শক্তি দান করুন। আমার পরামর্শ হল, আমি বার বার এই পরামর্শই দেই, তা হল- ভাল বন্ধু জোগাড় করুন। এমন বন্ধু জোগাড় করুন যারা এসবে আসক্ত নয়, এবং তাদের সাথে বেশি বেশি সময় কাটান। ইনশাল্লাহ আপনি নিজেকে এ ধরনের অভ্যাস থেকে মুক্ত করতে পারবেন।

0 comments
Labels: , , ,

সালাতঃ ব্যক্তিত্ব পরিবর্তনকারী এক ইবাদাত

হে মুমিনগণ! তোমরা রুকু কর, সেজদা কর, তোমাদের পালনকর্তার ইবাদাত কর এবং সৎকাজ সম্পাদন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা আল-হাজ্জঃ আয়াত ৭৭)

(এ আয়াতে আল্লাহ তা'আলা বলছেন) আমি তোমাদের শিখিয়ে দেই কিভাবে আল্লাহকে যথাযথ স্বীকৃতি দিতে হয়। ঠিক এভাবেই আল্লাহর মর্যাদার যথাযথ মূল্যায়ন করতে হয়। রুকূ’ কর এবং সিজদাহ কর। এই দুটি কাজই কিসের প্রতি ইঙ্গিত করছে? সালাত।

(আল্লাহ বলছেন) তোমার উচিত আমাকে যথোপযুক্ত স্বীকৃতি দেওয়া। আর এর জন্যে প্রথম পদক্ষেপ হল সালাত আদায় করা

আমরা আমাদের নামাযকে কতটা গুরত্ব দেই তা থেকে বুঝা যায় আমরা আল্লাহকে কতটা মর্যাদা দেই। আমরা কতটা সক্রিয় এবং সতর্ক ঘুম থেকে উঠে নামায পড়ার ব্যাপারে, মসজিদে যেতে কতটা আলসেমি লাগে, কুর'আনের তিলাওয়াত আকর্ষণীয় না হলে আমরা কতটা বিরক্ত অনুভব করি... এসব ব্যাপারই বলে দেয় আল্লাহর কাছে আমাদের অবস্থান কোথায়।

যে আসলে নামায সম্পর্কে জানে না, মুসলিমদের প্রার্থনার ব্যাপারে যার কোন ধারণা নেই... একজন Non-Muslim, সে যদি হঠাৎ করে কিছু মুসলিমদের নামায পড়তে দেখে তবে সে খেয়াল করবে এই মানুষগুলো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে অর্থাৎ তারা কারও প্রতি তাদের হীনাবস্থা প্রকাশ করছে। এরপর তারা মাথাসহ অর্ধেক শরীর ঝুঁকিয়ে ফেলে। ওয়াও! তারা আরও বিনয়ী হয়ে উঠেছে। তারপর যখন তারা দাঁড়িয়ে পড়ে এরপর কী হয়? সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে! তারা সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করছে! অন্য কথায় সে খেয়াল করবে আল্লাহর প্রতি সম্মান প্রদর্শনে তারা প্রতিনিয়ত অগ্রসর হচ্ছে... তারা যার ইবাদত করছে তাঁর প্রতি তারা আরও বেশি আজ্ঞাবহ হচ্ছে।দেখে মনে হবে তারা তাদের প্রভুকে সম্মান প্রদর্শন করছে...আরও সম্মান প্রদর্শন করছে... আরও বেশি সম্মান প্রদর্শন করছে। সালাতের এই অগ্রসরতা আমাদের শিক্ষা দেয় যে আল্লাহর প্রতি আমাদের বিনয়াবনত অবস্থা বেড়ে উঠা উচিত, বিকশিত হওয়া উচিত।

মূল ধারণাটি হল, আমরা আল্লাহর যত ইবাদত করবো ততোই বিনয়ী হয়ে উঠবো। আর বিনয়ের সর্বোচ্চ অবস্থা ছিল সিজদাহ।এরপর যা করা উচিত... কারণ এই দুটি জিনিস (রুকূ ও সিজদাহ) মূলত সালাতের প্রতিই নির্দেশ করে। কিন্তু নামাযের মধ্যবর্তী অবস্থা গুলোতে কী করা উচিত? “নিজেদের আল্লাহর দাস হিসেবে দায়বদ্ধ কর এবং তোমাদের রবের ইবাদত কর” - অন্য কথায় রুকূ’ এবং সিজদাহ করা তো হল এখন নামায তো একমাত্র ইবাদত নয়। আপনারা জানেন ইবাদতের মানে এর চেয়ে অনেক বেশি।

ইবাদত এক ধরনের জীবনাচরণ। আমি একজন দাস। আমি এখানে দাসত্বের জন্যে এসেছি। আমি যেভাবে হাঁটি, যেভাবে কথা বলি, যেভাবে নিজের ব্যাপারে চিন্তা করি, অন্যের ব্যাপারে চিন্তা করি - এসবই ইবাদত। আপনার সম্পূর্ণ আচার-আচরণ পরিবর্তন হয়ে যায় নামাযের কারণে। নামায একজন মুসলিমের ব্যক্তিত্বের বড় একটা অংশ, কেবল তার আচরণের নয়। আমরা নামাযকে মুসলিমদের আচরণ হিসেবে দেখি। কিন্তু আসলে, দৈনন্দিন নামায আদায়ের কারণে এর সরাসরি প্রভাব থাকা উচিত আমাদের চিন্তাধারায়, আচার-আচরণে, আমাদের মানসিকতায়।

জোহর এবং আসর নামাযের মধ্যবর্তী সময়টা তে আমার চিন্তা প্রভাবিত হয়ে থাকবে জোহর নামাযকে ঘিরে। আসর এবং মাগরিব নামাযের মধ্যবর্তী সময়ে আমার চিন্তাধারা অগ্রাধিকার পাবে আসর নামাযকে ঘিরে। এই পথেই একজন মুসলিম নিজেকে ইবাদতকারী হিসেবে পরিচিত করে। ইবাদতের মনোভাব গড়ে তোলা - নামাযের কাজ হল এটাই।

আপনারা দেখেছেন স্তম্ভগুলো একটা দালানকে কিভাবে ধরে রাখে? নামায আমাদের দিনকে সেভাবে ধরে রাখে। আর নামাযের মধ্যবর্তী সময়টা বলে দেয় আমাদের নামাযের মান কেমন ছিল। সালাত যদি অনুভবশূন্য হয়ে পড়ে, নামায যদি কেবল হৃদযন্ত্রের ব্যয়াম হয়ে পড়ে, নামায যদি কেবল সূরা ইখলাস আর সূরা কাওসার (সবচেয়ে ছোট সূরা) এর রিভিউ সেশন হয় কারণ আপনার হাতে এর চেয়ে বেশি সময় নেই।নামায যদি কেবল এতেই সীমাবদ্ধ থাকে তবে আপনি আপনার ব্যাক্তিত্বে কোন পরিবর্তন দেখতে পাবেন না।

0 comments
Labels: , ,

আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী জীবন যাপন

"আর যদি তারা তাওরাত, ইঞ্জিল এবং যা তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে, পুরোপুরি পালন করত, তবে তারা উপর থেকে এবং পায়ের নীচ থেকে (অর্থাৎ আসমানী বরকত এবং ভূ-গর্ভের নেয়ামত) ভক্ষণ করতো। তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক লোক মধ্যপন্থা অবলম্বনকারী এবং অবশিষ্ট বেশিরভাগ লোকই মন্দ কাজ করে যাচ্ছে।"

আজকের আলোচনায় সূরা মায়িদাহ এর ৬৬ নং আয়াতে আল্লাহ বলছেন, "ওয়া লাও আন্নাহুম আক্বামুত তাওরাতা ওয়াল ইঞ্জিল" - যদি ঐ লোকেরা তাওরাত এবং ইঞ্জিল প্রতিষ্ঠা করত (পুরোপুরি মেনে চলত)... আল্লাহ এখানে সেই সময়ের ইহুদি এবং খ্রীস্টানদের কথা বলছেন।

তাদের উপর তাওরাত এবং ইঞ্জিল নাজিল হয়েছিলো... যদি তারা সেই কিতাব মেনে চলত, "ওয়া মা উনঝিলা ইলাইহিম মিন রাব্বিহিম" - এবং অন্যান্য যেসব কিতাব তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে নাজিল করা হয়েছিলো সেগুলো মেনে চলত, "লাআকালু মিন ফাউক্বিহিম ওয়া মিন তাহতিহিম" - তাহলে তারা তাদের উপর থেকে আর তাদের নিচ থেকে আহার পেতো।

আল্লাহ বলছেন, যদি তুমি কিতাব প্রতিষ্টা কর, তাহলে শুধু জান্নাতেই সুখী জীবন পাবে না...যে বিষয়ে আগের আয়াতে ৬৫ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে, বরং এখানেও সুখী জীবন পাবে। তুমি উপর থেকে আর নীচ থেকে আহার পাবে। বিষয়টা এমন না যে আল্লাহর কিতাব মেনে চললে সবকিছু হারাতে হবে।

অনেক মানুষ মনে করে যদি তারা আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী জীবন ধারণ করে তাহলে সে জীবন হবে দুর্বিষহ। জীবনে অনেক কিছু তাদের হারাতে হবে। আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা বলেন, হায় যদি তোমরা জানতে! আমি আসমানের রিযিকের দরজা খুলে দিতাম, জমিনের রিযিকের দরজা খুলে দিতাম। তোমরা শুধু সেসব ভোগ করতে, তোমরা বিলাসী জীবন পেতে... শুধু কী করতে হবে?

মাত্র একটা জিনিসই করতে হবে - আল্লাহ'র কিতাব মেনে চলতে হবে। সুবহানাল্লাহ! "মিনহুম উম্মাতুন মুক্বতাসিদাহ ওয়া কাছিরুন মিনহুম সাআ মা ইয়া'মালুন" -কিতাবী লোকদের অনেকেই ছিলো মোটামুটি ধরণের লোক। তারা খুব বেশি ধার্মিক ছিলো না। 'মুক্বতাসিদাহ' বলতে বোঝাচ্ছে যে তারা ঠিক আছে, তারা মধ্যমপন্থী। তারা ক্লাসের খুব ভালো ছাত্রও না আবার ফেল করা ছাত্রও না। মাঝামাঝি পর্যায়ের।

তার মানে আল্লাহ বলছেন যদি তোমরা মাঝামাঝি অবস্থানেও থাকতে পার তাহলেও আল্লাহ তোমাদের দেবেন। এরপর তিনি বলছেন,"ওয়া কাছিরুম মিনহুম" -তাদের অধিকাংশই- "সাআ মা ইয়া'মালুন" - তারা কতইনা খারাপ কাজ করেছে! কতইনা ভয়ানক সব কাজ করেছে। তুমি এমন কিছু লোক দেখবে যাদেরকে দেখে কখনোই মনে হবে না যে তারা কিতাবে বিশ্বাস করে। কখনোই মনে হবে না যে তারা ওহীর উপর বিশ্বাস রাখে। আমি এখানে কেবল ইহুদি আর খ্রীস্টানদের কথা বলছিনা, মুসলিমদের কথা বলছি।

আমরা কি ঐ লোকদের মত হয়ে গেছি? আমি কি ওদের মত হয়ে গেছি? আপনি কি ওদের মত হয়ে গেছেন? আমরা এমন কিছু কাজ করি যা দেখে মনেই হয় না এই লোকটা কিতাবে বিশ্বাস করে, এই লোকটা ওহীতে বিশ্বাস করে, আকাশ থেকে নাযিল হওয়া কোন গ্রন্থে বিশ্বাস করে, কোন কর্তৃপক্ষের আদেশ মেনে চলে। মাঝে মাঝে আমরা আল্লাহর বিধানের সাথে আপোস করে বসি, এরকম কিছু কথা বলার মাধ্যমে- দেখ ভাই আমাদের কাজ করে খেতে হয়... তোমারও তো কাজ করতে হয়।

আর এই আয়াতে আল্লাহ বলছেন যদি তুমি আমার কিতাব অনুযায়ী জীবন পরিচালনা কর তাহলে খুব-খুব ভালোভাবে থাকতে পারবে। ভালো জীবিকার তুমি কী বা দেখেছ? আমি তোমাকে জীবিকার এমন সব দরজা খুলে দেব যে তুমি জানতেই না যে তার অস্তিত্ব আছে। শুধু জান্নাতেই না-এখানেও! "লাআকালু মিন ফাউক্বিহিম ওয়া মিন তাহতিহিম"...আজ আমরা বলি মুসলিমরা মার খাচ্ছে। আমাদের সম্পদ ছিনতাই হয়ে যাচ্ছে।

আমরা দুর্নীতিতে আসক্ত, দৈনন্দিন জীবনের মৌলিক প্রয়োজনগুলো ও আমরা সঠিকভাবে পূরণ করতে পারি না। এই পৃথিবী মুসলমানদের দুর্দশায় জর্জরিত। সুবহানাল্লাহ।

কিন্তু আল্লাহ তায়ালা বলছেন যে , তোমাদেরকে যা করতে হবে তা হল – আমার দেয়া বই অনুযায়ী জীবন পরিচালনা কর। তাহলে আমি বাকি সব কিছুর যত্ন নেব। তোমার অর্থনীতি ভাল হবে। সবকিছুই ঠিক হয়ে যাবে, চাকরি হবে, টাকা আসবে, খাবার আসবে, তোমার সন্তানের শিক্ষার ব্যবস্থা করা হবে...।

সুতরাং এটা এমন কিছু যা আমাদের মেনে চলতে হবে। আমাদেরকে দুনিয়ার নেয়ামত প্রদান করা আল্লাহর কাছে কিছুই না। যদি আমরা জান্নাতের মানুষ হতে পারি তাহলে আল্লাহ দুনিয়াকে আমাদের পায়ের নিচে নিক্ষেপ করবেন। আর আমরা যদি এই দুনিয়ার পিছনে দৌড়াতে থাকি , এবং বস্তুগত বিষয়ের প্রতি, আমরা শুধু এই বিষয়গুলো নিয়েই পড়ে থাকি - যতক্ষণ এটা ঘটতে থাকবে আল্লাহ এই সমস্ত বিষয়গুলো ও আমাদের থেকে দূরে সরিয়ে রাখবেন। আর আপনি যদি পার্থিব এই সব অর্জন ও করেন, এটা আপনার জন্য কোন সুখ বয়ে আনবে না। এটা আপনাকে কোন প্রশান্তি দেবে না।

আর যখনি আমি-আপনি সিদ্ধান্ত নেই যে, আমাদেরকে হতে হবে পরকাল কেন্দ্রিক মানুষ, আমাদেরকে এই পৃথিবী তে পাঠানো হয়েছে মহত্তর উদ্দেশ্যে। এখানে থাকার চেয়ে ও বড় কোন উদ্দেশ্য রয়েছে আমাদের জীবনের। যখনি আমাদের এই উপলব্ধি হবে এবং আমরা আল্লাহর দেয়া বই অনুযায়ী জীবন যাপন করব, আমরা দেখতে পাব- আগে যে সব বিষয় অর্জন করা আমাদের কাছে বিশাল কিছু মনে হত তাই এখন সহজেই আমাদের কোলে এসে পড়ছে। একটার পর একটা, একটার পর একটা, সুবহানাল্লাহ।

মহান আল্লাহ তায়ালা তার রিযিকের দরজা আমাদের সবার জন্য উন্মুক্ত করুক, এমন রিযিক যা আমাদেরকে তার কাছাকাছি নিয়ে যায়, এবং জান্নাতে আমাদের বাসস্থান তৈরিতে সাহায্য করে শুধু এই দুনিয়াতে নয়।

আল্লাহ আমাকে এবং আপনাদেরকে বরকত দান করুক। আসসালামুয়ালাইকুম ও রাহমাতুল্লাহি ও বারাকাতুহ ।


 Video link:
http://youtu.be/TJXH90tpRX4

0 comments