Labels: , ,

আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী জীবন যাপন

"আর যদি তারা তাওরাত, ইঞ্জিল এবং যা তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে, পুরোপুরি পালন করত, তবে তারা উপর থেকে এবং পায়ের নীচ থেকে (অর্থাৎ আসমানী বরকত এবং ভূ-গর্ভের নেয়ামত) ভক্ষণ করতো। তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক লোক মধ্যপন্থা অবলম্বনকারী এবং অবশিষ্ট বেশিরভাগ লোকই মন্দ কাজ করে যাচ্ছে।"

আজকের আলোচনায় সূরা মায়িদাহ এর ৬৬ নং আয়াতে আল্লাহ বলছেন, "ওয়া লাও আন্নাহুম আক্বামুত তাওরাতা ওয়াল ইঞ্জিল" - যদি ঐ লোকেরা তাওরাত এবং ইঞ্জিল প্রতিষ্ঠা করত (পুরোপুরি মেনে চলত)... আল্লাহ এখানে সেই সময়ের ইহুদি এবং খ্রীস্টানদের কথা বলছেন।

তাদের উপর তাওরাত এবং ইঞ্জিল নাজিল হয়েছিলো... যদি তারা সেই কিতাব মেনে চলত, "ওয়া মা উনঝিলা ইলাইহিম মিন রাব্বিহিম" - এবং অন্যান্য যেসব কিতাব তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে নাজিল করা হয়েছিলো সেগুলো মেনে চলত, "লাআকালু মিন ফাউক্বিহিম ওয়া মিন তাহতিহিম" - তাহলে তারা তাদের উপর থেকে আর তাদের নিচ থেকে আহার পেতো।

আল্লাহ বলছেন, যদি তুমি কিতাব প্রতিষ্টা কর, তাহলে শুধু জান্নাতেই সুখী জীবন পাবে না...যে বিষয়ে আগের আয়াতে ৬৫ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে, বরং এখানেও সুখী জীবন পাবে। তুমি উপর থেকে আর নীচ থেকে আহার পাবে। বিষয়টা এমন না যে আল্লাহর কিতাব মেনে চললে সবকিছু হারাতে হবে।

অনেক মানুষ মনে করে যদি তারা আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী জীবন ধারণ করে তাহলে সে জীবন হবে দুর্বিষহ। জীবনে অনেক কিছু তাদের হারাতে হবে। আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা বলেন, হায় যদি তোমরা জানতে! আমি আসমানের রিযিকের দরজা খুলে দিতাম, জমিনের রিযিকের দরজা খুলে দিতাম। তোমরা শুধু সেসব ভোগ করতে, তোমরা বিলাসী জীবন পেতে... শুধু কী করতে হবে?

মাত্র একটা জিনিসই করতে হবে - আল্লাহ'র কিতাব মেনে চলতে হবে। সুবহানাল্লাহ! "মিনহুম উম্মাতুন মুক্বতাসিদাহ ওয়া কাছিরুন মিনহুম সাআ মা ইয়া'মালুন" -কিতাবী লোকদের অনেকেই ছিলো মোটামুটি ধরণের লোক। তারা খুব বেশি ধার্মিক ছিলো না। 'মুক্বতাসিদাহ' বলতে বোঝাচ্ছে যে তারা ঠিক আছে, তারা মধ্যমপন্থী। তারা ক্লাসের খুব ভালো ছাত্রও না আবার ফেল করা ছাত্রও না। মাঝামাঝি পর্যায়ের।

তার মানে আল্লাহ বলছেন যদি তোমরা মাঝামাঝি অবস্থানেও থাকতে পার তাহলেও আল্লাহ তোমাদের দেবেন। এরপর তিনি বলছেন,"ওয়া কাছিরুম মিনহুম" -তাদের অধিকাংশই- "সাআ মা ইয়া'মালুন" - তারা কতইনা খারাপ কাজ করেছে! কতইনা ভয়ানক সব কাজ করেছে। তুমি এমন কিছু লোক দেখবে যাদেরকে দেখে কখনোই মনে হবে না যে তারা কিতাবে বিশ্বাস করে। কখনোই মনে হবে না যে তারা ওহীর উপর বিশ্বাস রাখে। আমি এখানে কেবল ইহুদি আর খ্রীস্টানদের কথা বলছিনা, মুসলিমদের কথা বলছি।

আমরা কি ঐ লোকদের মত হয়ে গেছি? আমি কি ওদের মত হয়ে গেছি? আপনি কি ওদের মত হয়ে গেছেন? আমরা এমন কিছু কাজ করি যা দেখে মনেই হয় না এই লোকটা কিতাবে বিশ্বাস করে, এই লোকটা ওহীতে বিশ্বাস করে, আকাশ থেকে নাযিল হওয়া কোন গ্রন্থে বিশ্বাস করে, কোন কর্তৃপক্ষের আদেশ মেনে চলে। মাঝে মাঝে আমরা আল্লাহর বিধানের সাথে আপোস করে বসি, এরকম কিছু কথা বলার মাধ্যমে- দেখ ভাই আমাদের কাজ করে খেতে হয়... তোমারও তো কাজ করতে হয়।

আর এই আয়াতে আল্লাহ বলছেন যদি তুমি আমার কিতাব অনুযায়ী জীবন পরিচালনা কর তাহলে খুব-খুব ভালোভাবে থাকতে পারবে। ভালো জীবিকার তুমি কী বা দেখেছ? আমি তোমাকে জীবিকার এমন সব দরজা খুলে দেব যে তুমি জানতেই না যে তার অস্তিত্ব আছে। শুধু জান্নাতেই না-এখানেও! "লাআকালু মিন ফাউক্বিহিম ওয়া মিন তাহতিহিম"...আজ আমরা বলি মুসলিমরা মার খাচ্ছে। আমাদের সম্পদ ছিনতাই হয়ে যাচ্ছে।

আমরা দুর্নীতিতে আসক্ত, দৈনন্দিন জীবনের মৌলিক প্রয়োজনগুলো ও আমরা সঠিকভাবে পূরণ করতে পারি না। এই পৃথিবী মুসলমানদের দুর্দশায় জর্জরিত। সুবহানাল্লাহ।

কিন্তু আল্লাহ তায়ালা বলছেন যে , তোমাদেরকে যা করতে হবে তা হল – আমার দেয়া বই অনুযায়ী জীবন পরিচালনা কর। তাহলে আমি বাকি সব কিছুর যত্ন নেব। তোমার অর্থনীতি ভাল হবে। সবকিছুই ঠিক হয়ে যাবে, চাকরি হবে, টাকা আসবে, খাবার আসবে, তোমার সন্তানের শিক্ষার ব্যবস্থা করা হবে...।

সুতরাং এটা এমন কিছু যা আমাদের মেনে চলতে হবে। আমাদেরকে দুনিয়ার নেয়ামত প্রদান করা আল্লাহর কাছে কিছুই না। যদি আমরা জান্নাতের মানুষ হতে পারি তাহলে আল্লাহ দুনিয়াকে আমাদের পায়ের নিচে নিক্ষেপ করবেন। আর আমরা যদি এই দুনিয়ার পিছনে দৌড়াতে থাকি , এবং বস্তুগত বিষয়ের প্রতি, আমরা শুধু এই বিষয়গুলো নিয়েই পড়ে থাকি - যতক্ষণ এটা ঘটতে থাকবে আল্লাহ এই সমস্ত বিষয়গুলো ও আমাদের থেকে দূরে সরিয়ে রাখবেন। আর আপনি যদি পার্থিব এই সব অর্জন ও করেন, এটা আপনার জন্য কোন সুখ বয়ে আনবে না। এটা আপনাকে কোন প্রশান্তি দেবে না।

আর যখনি আমি-আপনি সিদ্ধান্ত নেই যে, আমাদেরকে হতে হবে পরকাল কেন্দ্রিক মানুষ, আমাদেরকে এই পৃথিবী তে পাঠানো হয়েছে মহত্তর উদ্দেশ্যে। এখানে থাকার চেয়ে ও বড় কোন উদ্দেশ্য রয়েছে আমাদের জীবনের। যখনি আমাদের এই উপলব্ধি হবে এবং আমরা আল্লাহর দেয়া বই অনুযায়ী জীবন যাপন করব, আমরা দেখতে পাব- আগে যে সব বিষয় অর্জন করা আমাদের কাছে বিশাল কিছু মনে হত তাই এখন সহজেই আমাদের কোলে এসে পড়ছে। একটার পর একটা, একটার পর একটা, সুবহানাল্লাহ।

মহান আল্লাহ তায়ালা তার রিযিকের দরজা আমাদের সবার জন্য উন্মুক্ত করুক, এমন রিযিক যা আমাদেরকে তার কাছাকাছি নিয়ে যায়, এবং জান্নাতে আমাদের বাসস্থান তৈরিতে সাহায্য করে শুধু এই দুনিয়াতে নয়।

আল্লাহ আমাকে এবং আপনাদেরকে বরকত দান করুক। আসসালামুয়ালাইকুম ও রাহমাতুল্লাহি ও বারাকাতুহ ।


 Video link:
http://youtu.be/TJXH90tpRX4

No comments:

Post a Comment