Labels: ,

জ্যোতিষ বাবাদের কাহিনী- নারী পুরুষ সবাই সবাধান



মার এক বন্ধুর দোকানে গিয়েছিলাম একটা কাজে। কিন্তু সে দোকানে না থাকায় সময় কাটানোর জন্য দোকানে রাখা ম্যাগাজিন পড়তে লাগলাম। ম্যাগাজিনের নাম "মৌচাকে ঢিল"। সংখ্যা জুলাই ২০১২। ওটা একটা বিশেষ সংখ্যা ছিলো যার নাম ছিলো "প্রতারণা ২"। পৃষ্ঠা উল্টাতে গিয়ে একটি লেখায় গিয়ে চোখ আটকে গেলো। লেখাটির শিরোনাম ছিলো “সাইকী”। কৌতুহলবশত লেখাটি পড়তে শুরু করি।

এটা একজন মহিলার কাহিনী যিনি বিবাহিত জীবনে তার স্বামী ও শ্বশুড় বাড়ির লোকজনের মানসিক নির্যাতনের শিকার । তিনি এর থেকে মুক্তি পেতে চাইছিলেন। একবার এক ডেন্টিস্টের চেম্বারে বসে বসে অপেক্ষা করার সময় এক ম্যাগাজিনের একটা বিজ্ঞাপণ তাকে আকর্ষণ করে। যেখানে কোনো এক জ্যোতিষীর ঠিকানা দেয়া ছিলো এবং বলা হয়েছিলো যে ঐ জ্যোতিষী স্বামীকে বশ করা, পারিবারিক অশান্তি দূর করা ইত্যাদি সমস্যা দূর করতে পারেন। মহিলা বিজ্ঞাপনে দেয়া নম্বরে ফোন করলে তাকে আশ্বস্ত করা হয় এবং ঢাকার শান্তিনগরের “সাইকী” ভবনে আসতে বলা হয়। তো মহিলা একদিন ওখানে গেলেন। বেশ পবিষ্কার ঝকঝকে সাজানো গোছনো ঘর।

শেলফে অনেকগুলো বই চমৎকারভাবে সাজানো। দেখে মনে হচ্ছিলো কোনো বড় লেখক কিংবা আইনজীবির বাসায় তিনি এসেছেন। ওখানে একটা বিশেষ ধরনের সোফা ছিলো যেটার সুইচে টিপ দিলে সেটি সাথে সাথে বিছনায় রুপান্তরিত হয়। ঐ জ্যেতিষী ভদ্রমহিলাকে নাস্তা খেতে দিলো, তাদের কথাবার্তা শুরু হলো। কিন্তু দেখা গেলো ঐ লোকটা সমস্যা শোনার চাইতে মহিলার শরীর, যৌনতা এসব নিয়ে কথা বলতে বেশী আগ্রহী! এক পর্যায়ে ঐ মহিলা অজ্ঞান হয়ে পড়েন এবং জ্ঞান ফেরার পর নিজেকে সম্পূর্ণ বিবস্ত্র অবস্থায় ঐ বিশেষ ধরনের সোফায় (বিছানায়) আবিষ্কার করেন। তিনি চিৎকার করে কান্নাকাটি শুরূ করেন এবং পুলিশকে সবকিছু বলবেন বলে চিৎকার করতে থাকেন। কিন্তু লোকটার গায়ে লাগছিলোনা। সে মহিলাকে দেখালো যে অজ্ঞান অবস্থায় সে ঐ মহিলার সাথে যা কিছুই করেছে তার সবটুকু সিলিং ফ্যানের কাছে রাখা ক্যামেরায় ভিডিও করা হয়েছে। তাই সে যা বলবে মহিলা তা করতে বাধ্য থাকবেন নইলে সে ঐ ভিডিও গুলো ইন্টারনেটে ছেড়ে দেবে। এভাবে ব্ল্যাকমেইল করায় মহিলা ঐ লোকটির কথা শুনতে বাধ্য হন এবং লোকটি নানাভাবে উনার উপর যৌন নির্যাতন চালাতে থাকে। তিনি নিরুপায় হয়ে ঐ লোককে টাকা পয়সা, বিয়ের গহনা দিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন! এই ঘটনা ২০০৯ সালের। কিন্তু পরে এসব জানাজানি হয়। তার স্বামী তাকে চরিত্রহীনা উপাধি দিয়ে অনত্র ঘর বেধেছে। একটি কন্যা সন্তান সহ সমাজ সংসার তাকে ত্যাগ করেছে। এখন ২০১২ সাল।

কিন্তু যে অংশটি পড়ে আমার গা শিউরে উঠলো তা হলো ঐ লোকটি এখনও উনার উপর সমানতালে যৌন নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে! উনি আত্নহত্যা করতে চান কিন্তু সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে সেটা সম্ভব হচেছ না! লেখাটির নিচে লেখা ছিলো ”নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক” এবং তাতে কোনো ঠিকানা ছিলো না। লেখাটি পড়ে এতোটাই অসস্তিতে পড়েছিলাম যে ঐ দিন আর ভাতই খেতে পারিনি! আমি যেনো মনে মনে ঐ মহিলার সাথে কথা বলছিলাম--- আপনি চুপ করে আছেন কেনো? কেনো আপনি কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না? যে লোকটা আপনার জীবন ধ্বংস করে দিলো! আপনাকে গৃহহারা স্বামীহারা করলো! নিজে নিকৃষ্ট কাজ করে তার দায়ভার আপনার উপর চাপিয়ে দিয়ে সমাজের সামনে আপনাকে নিকৃষ্ট হিসেবে উপস্থাপন করলো! তাকে আপনি এমনি এমনি ছেড়ে দিবেন! এই দেশের নারীরা কি এতোই অসহায়??

এ ব্যপারে আরো জানার জন্য আমি “সাইকি ভবন” লিখে গুগোল সার্চ দিই। আমার সামনে অনেকগুলো লিংক আসে যার থেকে আমি জানতে পারি যে সাইকি ভবনের ঐ জ্যেতিষীর নাম জীবন চৌধুরী। প্রতারণার অভিযোগে র‌্যাব জীবন চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে ২০০৮ সালের ৩০শে জুন। জীবনের আখড়া সাইকি ভবন থেকে উদ্ধার করা হয় নানা ধরনের গোলক, বিভিন্ন রঙের পাথর, ছদ্মবেশ ধরার কাজে ব্যবহৃত বিশেষ ধরনের আলখাল্লা, মাদকদ্রব্য। সেই সঙ্গে জীবন চৌধুরীর ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন থেকে উদ্ধার করা হয় অর্ধশতাধিক পর্নো ভিডিও। যেগুলোতে বিভিন্ন নারীর সঙ্গে যৌনকাজে লিপ্ত দেখা যায় জীবন চৌধুরীকে। পরে র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে জীবন স্বীকার করে তার সব অপরাধ। জীবন চৌধুরীকে সোপর্দ করা হয় পল্টন থানায়। পরে ১ মাস জেল খেটে জামিনে বেরিয়ে আসে। এখন সে আবারও ওই ব্যবসা শুরু করেছে। একবার চিন্তা করে দেখেন এইসব জীবন চৌধুরিদের হাত কত লম্বা যে এত জঘন্য অপরাধ করেও মাত্র ১ মাস জেল খাটতে হয় এবং জেল থেকে বের হয়েও তারা ঐ একই জায়গায় বসে একই ধান্দাবাজির কাজ করে! তাদের পালানোর বা ভয় পাবার প্রয়োজনই পরে না! শুধু নারী নয়, পুরুষরাও নানাভাবে এদের দ্বারা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।

আমার মতে, সাধারণ মানুষের সচেতনতার জন্য এসব ঘটনা হাইলাইট হওয়া উচিত। এদের কাছ থেকে সাবধান হউন। কোনো মানুষ কখনও অন্য মানুষের ভাগ্য বদলাতে পারে না! একইভাবে গোলক, বিভিন্ন রঙের পাথর এগুলোও মানুষের ভাগ্যের পেছনে কোনো ভূমিকা রাখে না! আপনি যদি আস্তিক হন তবে সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা রাখুন এবং নিজের সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে যান। অনেক বড় বড় কথা বললাম। জানিনা ঐ মহিলার জায়গায় আমি হলে কি করতাম। আসল পরিস্থিতি কেমন ছিলো বোঝা কষ্টকর। তবুও সবশেষে ঐ ক্ষতিগ্রস্থ মহিলা ও তার সন্তানের মঙ্গল কামনা করছি। (লিখেছেনঃ- অভিনন্দা ইসলাম সারা)

এবার দেখি ইসলাম এবং রাশিচক্রের ভবিষ্যদ্বাণী: বাংলাদেশ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র। এ দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ লোক মুসলিম। ইসলাম ধর্মের মূল বা সারবস্তু হলো আকিদা বা বিশ্বাস। এর ওপরই গোটা দীন বা জীবনব্যবস্থার ভিত্তি রচিত। আকিদা বা বিশ্বাসের মধ্যে ত্রুটি থেকে গেলে যাবতীয় কাজের মধ্যে তার ক্ষতিকর প্রভাব প্রতিফলিত হতে বাধ্য। আকিদার মধ্যে ত্রুটি থাকলে মুসলিমরা কখনোই সমীহ আমল করতে সক্ষম হবেন না, আমলের ক্ষেত্রে যতই শ্রম দেন না কেন, সমীহ আকিদার অভাবেই আজকের মুসলিমরা ইসলামী সংস্কৃতি বর্জন করে বিজাতীয় বা পশ্চিমা সংস্কৃতির দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ছে।

আকিদার ত্রুটির কারণেই মুসলিমদের মাঝে বিচিত্র ধরনের শিরক ও বিদআত ছড়িয়ে পড়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হলো রাশিচক্রে বিশ্বাস। ‘পার্থিব বিষয়াদি জ্যোতিষ্কমণ্ডলী দ্বারা প্রভাবান্বিত এবং এদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে ভবিষ্যত্ ঘটনাবলী আগাম বলা সম্ভব।’ এই বিশ্বাসই জ্যোতিষশাস্ত্র নামে পরিচিত। যতদূর জানা যায়, ঈসা (আ.)-এর জন্মের তিন হাজার বছর আগে মেসোপটেমিয়ায় এর সূচনা হয় এবং গ্রিস সভ্যতাবলয়ে তা পূর্ণতা লাভ করে। ইসলামে জ্যোতিষশাস্ত্র চর্চা ও বিশ্বাস হারাম। বিশ্বাস নিয়ে জ্যোতিষীর কাছে যাওয়া, তার ভবিষ্যদ্বাণী শোনা, জ্যোতিষশাস্ত্রের বই কেনা—সবকিছুই নিষেধ। কারণ এর মাধ্যমে জ্যোতিষবিদ দাবি করেন, ভবিষ্যত্ জ্ঞান তার কাছে রয়েছে। অথচ কোরআন মাজিদে আল্লাহ বলেছেন :

‘অদৃশ্যের কুঞ্জি তাঁরই কাছে রয়েছে, তিনি ছাড়া অন্য কেউ তা জানে না’ (সূরা আন’আম : ৫৯)।

‘বল আল্লাহ ছাড়া আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে কেউই অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান রাখে না’ (সূরা আন-নামল : ৬৫)।

জ্যোতিষের কথায় বা জ্যোতিষশাস্ত্রের বইয়ে বিধৃত রাশিচক্রে প্রদত্ত ভবিষ্যদ্বাণী বিশ্বাস করা কোনোভাবেই সঠিক নয়। কারণ রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : ‘যে জ্যোতিষশাস্ত্রের একটি শাখা সম্পর্কে শিক্ষা গ্রহণ করল সে জাদুবিদ্যার একটি শাখার শিক্ষা গ্রহণ করল’ (আবু দাউদ ও ইবন মাযাহ)।

উম্মুল মুমিনীন হজরত হাফসা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন : ‘যে গণকের কাছে যায় এবং কোনো বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে, তার ৪০ দিন ও রাতের সালাত গ্রহণযোগ্য হবে না’ (সহীহ মুসলিম)।

সুতরাং ইসলামে জ্যোতিষশাস্ত্র চর্চা করা, বিশ্বাস করা ও প্রচার করার সুযোগ নেই। রাশিচক্র বা রাশিফলে বিশ্বাস করা পরিষ্কারভাবে ইসলামের শিক্ষা ও বিশ্বাসবিরোধী। অজ্ঞ লোকেরা মনে করে, তারা যদি জানে ভবিষ্যতে তাদের ভাগ্যে কী রয়েছে তাহলে তারা পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে তার অমঙ্গল এড়াতে সক্ষম হতে পারে এবং মঙ্গল নিশ্চিত করতে পারে। অথচ আল্লাহ তাঁর রাসুলকে বলেছেন :

‘বল, আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা ছাড়া আমার নিজের ভালোমন্দের ওপরও আমার কোনো অধিকার নেই। আমি যদি অদৃশ্যের খবর জানতাম, তবে তো আমি প্রভূত কল্যাণই লাভ করতাম এবং কোনো অকল্যাণই আমাকে স্পর্শ করত না’ (সূরা আল-আ’রাফ:১৮৮)।

অতএব, যারা নিজেদের সত্যিকার মুসলিম বলে দাবি করে তারা যেন রাশিচক্রে বিশ্বাস না করে এবং নিজের রাশি জানার জন্য জ্যোতিষের কাছে না যায়। এগুলোতে বিশ্বাস করা শিরক। কেননা এতে আল্লাহর পাশাপাশি অন্যরাও ভবিষ্যত্ জানে বলে বিশ্বাস করা হয়। যে জ্যোতিষীর ভবিষ্যদ্বাণী ব্যবহার করে তার ভবিষ্যত্ কার্যপরিকল্পনা গ্রহণ করে, তার উচিত আল্লাহর নিকট তওবা করা, ভবিষ্যতে তা না করার দৃঢ়সংকল্প করে ঈমানকে নবায়ন করা।

ফেসবুক হতে অপ্রিয় যত সত্য সহ্য করার ক্ষমতা আছে কি ? পেইজ হতে প্রাপ্ত। সবার সচেতনতার জন্

No comments:

Post a Comment