সূরা ইখলাস হতে শিক্ষামূলক উপদেশ
"আহাদ" এই ধারণাটি তথা একক সত্ত্বার এই ধারণাটি। পাকিস্থানে ইসলামিক ধর্মতত্ত্বের বিশিষ্ট একজন লেখক ডঃ রফী’ উদ্দীন এই সুরাহ সম্বন্ধে মন্তব্য করতে গিয়ে অতি আশ্চর্য্যজনক কিছু তত্ত্ব প্রদান করেন। আমি আসলেই এর প্রশংসা করি, এবং আমি মনে করি আধুনিক শ্রোতাদের মনে এই তত্ত্বগুলো গেঁথে দেওয়া প্রয়োজন। আল্লাহ মানব জাতির মধ্যে তাঁর সম্পর্কে জ্ঞান প্রদান করে তৈরী করেছেন। মানব জাতি শুরু থেকেই জানত যে, সর্বোচ্চ সত্ত্বা আল্লাহ বিদ্যমান। এরকম নয় যে, একজন উপাস্য আছেন, তিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন, এখন আমরা যা ইচ্ছা তাই করতে পারি। না, সেটা নয়। বরঞ্চ তিনিই রব, তিনিই প্রভু। আমার জীবনের মূল লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে তিনি যা চান তা করা।এটা আমার সর্বোচ্চ আদর্শ। তাঁর দাসে পরিণত হওয়াই হচ্ছে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। এটাই হবে আমার জন্য সবচেয়ে বড় সম্মানের বিষয়। আল্লাহর নবী (সাঃ), তাঁর বড় সম্মান ছিল তিনি আল্লাহর ‘‘عبد’’ হয়েছিলেন। আল্লাহর দাস হওয়া সবচেয়ে সম্মানের বিষয়। এটাই হচ্ছে জীবনের মূল লক্ষ্যবস্তু এবং আল্লাহ সেই লক্ষ্যবস্তুটি সকল মানবজাতির অন্তরে খোদাই করে দিয়েছেন।
"আহাদ" এই ধারণাটি তথা একক সত্ত্বার এই ধারণাটি। পাকিস্থানে ইসলামিক ধর্মতত্ত্বের বিশিষ্ট একজন লেখক ডঃ রফী’ উদ্দীন এই সুরাহ সম্বন্ধে মন্তব্য করতে গিয়ে অতি আশ্চর্য্যজনক কিছু তত্ত্ব প্রদান করেন। আমি আসলেই এর প্রশংসা করি, এবং আমি মনে করি আধুনিক শ্রোতাদের মনে এই তত্ত্বগুলো গেঁথে দেওয়া প্রয়োজন। আল্লাহ মানব জাতির মধ্যে তাঁর সম্পর্কে জ্ঞান প্রদান করে তৈরী করেছেন। মানব জাতি শুরু থেকেই জানত যে, সর্বোচ্চ সত্ত্বা আল্লাহ বিদ্যমান। এরকম নয় যে, একজন উপাস্য আছেন, তিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন, এখন আমরা যা ইচ্ছা তাই করতে পারি। না, সেটা নয়। বরঞ্চ তিনিই রব, তিনিই প্রভু। আমার জীবনের মূল লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে তিনি যা চান তা করা।এটা আমার সর্বোচ্চ আদর্শ। তাঁর দাসে পরিণত হওয়াই হচ্ছে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। এটাই হবে আমার জন্য সবচেয়ে বড় সম্মানের বিষয়। আল্লাহর নবী (সাঃ), তাঁর বড় সম্মান ছিল তিনি আল্লাহর ‘‘عبد’’ হয়েছিলেন। আল্লাহর দাস হওয়া সবচেয়ে সম্মানের বিষয়। এটাই হচ্ছে জীবনের মূল লক্ষ্যবস্তু এবং আল্লাহ সেই লক্ষ্যবস্তুটি সকল মানবজাতির অন্তরে খোদাই করে দিয়েছেন।
কিন্তু যদি আপনি
সেই লক্ষ্যবস্তুর দিশা হারিয়ে ফেলেন তখন যেটা হয়... সেই লক্ষ্যবস্তু
পরিপূর্ণতার পিপাসা বা ক্ষুধা আপনার মধ্যে বিরাজ করে, যদ্বারা আল্লাহ
আপনাকে সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু আপনার ক্ষুধা যখন স্বাস্থ্যকর খাবার দ্বারা
নিবারিত হয় না, তখন কি দিয়ে নিবারণ করেন? আপনি যদি সঠিক খাবার না পান, আপনি
কি তাহলে বলবেন যে, আমি খাবই না। না। যখন কোন ব্যক্তি ক্ষুধায় কাতর
থাকে এবং তার পছন্দের কোন খাবার যদি তখন সে না পায় অথবা কোন
স্বাস্থ্যকর খাবারও নেই, শুধু আছে ময়লা আবর্জনা, গাছের ছাল-পালা মানুষ কি
তা নিয়েই চোষাচুষি শুরু করবে না, যখন সে এরকম পরিিস্থতির স্বীকার হবে?
অবশ্যই করবে। যখন আপনি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যকে ভুলে
যান, সেটা যখন আর আপনার লক্ষ্যবস্তু হয় না, তখন অবশ্যই আপনি এর একটি
পরিপূরক খুঁজে বের করবেন। কোন কিছু থেকে অনুপ্রাণিত হওয়া অবশ্যই জরুরী,
এটাই হচ্ছে আপনার জীবনের উদ্দেশ্য।
যে ব্যক্তি আল্লাহকে পেয়েছে, তাঁদের কি হয়? নিশ্চয়ই আমার নামায, আমার কোরবানী এবং আমার জীবন ও মরণ বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহরই জন্য (সুরা আনআমঃ ১৬২)। এটা তাঁদের জন্য খুবই সহজ যে ব্যক্তি সত্যিকারভাবে আল্লাহকে খুঁজে পায়, তাদের সালাত আল্লাহর জন্য, তাদের ত্যাগ-তিতিক্ষা আল্লাহর জন্য, তাদের জীবন এবং মৃত্যু এখন আল্লাহর জন্য। যে পদ্ধতিতে তারা জীবনযাপন করে, খাওয়া-দাওয়া করে, ঘুমায়, তারা তাদের জীবনে কি করতে চান, তাদের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা, তাদের স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা, তারা তাদের সন্তান-সন্ততিদের নিয়ে কি করবেন, তারা কেন পড়ালেখা করছেন, কোথায় চাকরী করবেন, সবকিছুই এখন আল্লাহর জন্য, এটাই তাদের মূল লক্ষ্যবস্তু। কিন্তু যে ব্যক্তির লক্ষ্যবস্তু সেটা নয়, তাদের অন্য একটি লক্ষবস্তু খঁুজে নিতে হয়। আর অতীতে সেটা হত হয়তো কোন মূর্তি বা অন্য কোন ধর্ম, তারা খুঁজে নিত অন্য কোন উপাস্য।
কিন্তু আমাদের সময়ে সেটা অনেক করুণ উদ্রেককর এবং হতাশাজনক। এখন আমাদের অনেকেই শরীর নিয়ে চিন্তায় মগ্ন এবং তারা দৈনিক ১৮ ঘণ্টা ব্যায়াম সাধন করছে। তাদের জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে, নিজেকে দিনের পর দিন পেশীসম্পন্ন এবং শক্তিশালী করে তোলা। এটাই তাদের জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য- নিজেকে সবসময় উর্দ্ধে রাখা, নিজের আকৃতিকে ধরে রাখা ।অথবা তারা তাদের প্রশিক্ষকদেরকে সাথে নিয়ে লক্ষ্য ঠিক করে বলে,‘‘আমাকে আরো বেশী রেপস (Reps এক ধরনের ব্যায়াম) করতে হবে, বা আরো বেশী পুশআপস (Pushups এক ধরনের ব্যায়াম) করতে হবে, বা আমি চাই আমার ভারোত্তলনে (Bench Press) আরো বেশী ওজন যোগ হোক ইত্যাদিই তাদের লক্ষ্য, এটাই তাদের ইলাহ (উপাসনার বস্তু) হয়ে বসে।
একজন ব্যক্তি যার জীবনটাই ছিল টাকা-পয়সার জন্য এমন কোন মানুষের দেখা পেয়েছেন কি? যারা তাদের কাজের কথা ছাড়া আর অন্য কোন কিছুই বলতে পারে না। তারা পারেই না। হ্যাঁ, আমি এই কোম্পানীতে কাজ করেছি, আমি এটা করেছি, ওটা করেছি এবং যে মুহুর্তেই তাদের কাজ চলে যায়, তারা আত্মঘাতী হয়ে ওঠে, কারন তাদের সকল চিন্তা-ভাবনা শুধু কাজ নিয়েই ছিল। সারাজীবন তারা শুধু এটাই করেছে শুধুই এটা করেছে তারা, এটা তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিল।
কারো কারো জন্য সেটা হয় তাদের সন্তান-সন্ততিরা। তারা বাঁচে তাদের সন্তান-সন্ততিদের জন্য, তারা তাদের সন্তান-সন্ততির জন্য সব কিছুই করে থাকে, দিবারাত্রি তাদের সন্তান-সন্ততিদের নিয়ে ভাবে। তাদের মস্তিষ্কে আর কোন চিন্তাভাবনা স্থান পায় না, তাদের সামনে আর কোন লক্ষ্য থাকে না তাদের সন্তান-সন্ততিদের ছাড়া এর পেছনেই তারা দৌড়ে থাকে।
যখন আপনি তাঁকে (আল্লাহকে) খুঁজে পাবেন না, তখন আপনি অন্য কিছু খঁুজে নেবেন এবং তার পেছনেই দৌড়াতে থাকবেন এবং তার জন্য আপনি আপনার জীবন বিসর্জন দিয়ে দেবেন এ ব্যাপারে মানুষের মধে্য কোনই ব্যতিক্রম হয় না। আজকাল এমনকি এটা হতে পারে একটি অলস ব্যক্তির ক্ষেত্রে এবং আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করতে পারেন অলস ব্যক্তিদের বেলায় কি হবে?
জানেন তো, ঐ বাচ্চা ছেলেমেয়েরা যারা দৈনিক ২০ ঘণ্টা ভিডিও গেমস খেলে এবং তাদের সোফা থেকে নামেই না তাদের লক্ষ্য কি ? সেটা হচ্ছে তাদের নিজেদেরকে বিনোদিত করা। পর্দার পেছনে বসে তাদের মস্তিষ্কের কোষ ক্ষয় করা। এটাই তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য এখানেই তারা পৌঁছাতে চায় তা অর্জন করার লক্ষ্যে তারা কঠোর পরিশ্রমে ব্যস্ত। এগুলোই হচ্ছে তাওহীদকে বোঝার মনস্তাত্বিক তাৎপর্য।
‘‘আল্লাহ এক’’ এটা বলা অনেক সহজ কিন্তু আমার জীবনে তিনিই (আল্লাহ) কি একমাত্র বিষয়? শুধু তিনিই কি আমার জীবনের এমাত্র কেন্দ্রবিন্দু? নাকি আমার অন্য অনেক কিছু আছে যার পেছনে আমি দৌড়াচ্ছি বা অন্য অনেক বস্তু যার সামনে আমি নিজেকে সমর্পণ করি? আল্লাহ আড়ম্বরপূর্ণ ভাষায় আমাদের এই প্রশ্নটি করেন - তিনি বলেন,....হে মানুষ, কিসে তোমাকে তোমার মহামহিম পালনকর্তা সম্পর্কে বিভ্রান্ত করল? (৮২: ০৬) তোমার কাছে এত গুরুত্বপূর্ন কি ছিল যে, তুমি তার পেছনে দৌড়াচ্ছিলে? আর তুমি এর জন্য প্রচেষ্টা চালাতে পারনি? সুবহানাল্লাহ ।
তাই যখন তিনি (আল্লাহ) "হুয়াল্লাহু আহাদ" শব্দটি ব্যবহার করেন, তখন এর মনস্তাত্বিক তাৎপর্য, আল্লাহর প্রতি আমাদের দৃষ্টভঙ্গির তাৎপর্য, এবং আমাদের জীবন নিয়ে আমরা কিভাবে চিন্তা করি তা সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তিত হয়ে যায়। এখন আমার কাছে আর কিছুই গুরুত্ব পোষন করে না তাঁকে (আল্লাহ) খুশি করা ছাড়া, আমার কাছে আর কিছুই গুরুত্ব পেতে পারে না তাঁর আমার প্রতি সন্তুষ্ট হওয়া থেকে, আমার কাছে আর কিছুই গুরুত্বপূর্ণ নয় তাঁর ক্ষমা পাওয়া থেকে। আমার কাছে আর কিছুই গুরুত্ব পোষন করে না এই বিষয়ের চেয়ে যে তিনি শেষ বিচারের দিন আমার সাথে কথা বলবেন এবং বলবেন যে আমি সাফল্যমণ্ডিত। তিনি আমার দিকে তাকাবেন।
আর আমি তাদের মধ্যকার কেউ হব না যাদের দিক থেকে তিনি মুখ ফিরিয়ে নেবেন। "শেষ বিচারের দিন আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না (২: ১৭৪)” আল্লাহ আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভূক্ত না করুন । এগুলোই হচ্ছে শুধু ‘‘আহাদ’’ কে বোঝার কয়েকটি মনস্তাত্বিক তাৎপর্য। শুধু এই আহাদ শব্দটি। আল্লাহ যা বলছেন তা এরকমই, সুবহানাল্লাহ। আমাদের এটাই করা উচিৎ এবং আমি পরবর্তী কথা দিয়ে শেষ করতে চাই, কারন নামাজের সময় হয়ে গেছে।
আর সেটা হলো আল্লামা ইকবালের একটি কবিতা। আমি ইকবালের কবিতা আবৃতি করতে পারব না, কারন আমার উর্দূ খুবই খারাপ। কিন্তু আমি আপনাদের তাঁর একটি লাইনের অর্থ বলব যদিও আমি িনজে লাইনটি খুবই পছন্দ করি। এটা তাওহীদ সম্পর্কিত একটি কবিতা। এবং তিনি বলেন, "আগে যা (তাওহীদ) মানুষের হৃদয়কে প্রজ্বলিত করত, এখন তা বিমূর্ত দার্শনিক বিতর্কের বিষয়বস্তু" তিনি এটাই বলেন। এখন আমাদের কাছে তাওহীদ কি? বিতর্ক, আলোচনা, ধর্মতত্ত্বের উপর বিমূর্ত আলোচনা, যার কোন অন্ত নেই। কিন্তু এটা আগে যা ছিল তা হচ্ছে এমন কিছু যা হৃদয়সমূহকে প্রজ্বলিত করত। আমি কি এখনও সেই "আহাদ" এর অধিকার পরিপূর্ন করছি? আমি কি এখনও সেই "আহাদ" এর প্রতি ন্যায় বিচার করছি? আল্লাহ আমাদের তাওহীদের লোকদের অন্তর্ভুক্ত করুন আল্লাহ আমাদের হৃদয়ে সে আলো প্রজ্বলিত করুক যা জ্বলিত হয়েছিল ইব্রাহিম (আঃ), রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এবং সাহাবা (রাঃ) দের হৃদয়ে।
যে ব্যক্তি আল্লাহকে পেয়েছে, তাঁদের কি হয়? নিশ্চয়ই আমার নামায, আমার কোরবানী এবং আমার জীবন ও মরণ বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহরই জন্য (সুরা আনআমঃ ১৬২)। এটা তাঁদের জন্য খুবই সহজ যে ব্যক্তি সত্যিকারভাবে আল্লাহকে খুঁজে পায়, তাদের সালাত আল্লাহর জন্য, তাদের ত্যাগ-তিতিক্ষা আল্লাহর জন্য, তাদের জীবন এবং মৃত্যু এখন আল্লাহর জন্য। যে পদ্ধতিতে তারা জীবনযাপন করে, খাওয়া-দাওয়া করে, ঘুমায়, তারা তাদের জীবনে কি করতে চান, তাদের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা, তাদের স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা, তারা তাদের সন্তান-সন্ততিদের নিয়ে কি করবেন, তারা কেন পড়ালেখা করছেন, কোথায় চাকরী করবেন, সবকিছুই এখন আল্লাহর জন্য, এটাই তাদের মূল লক্ষ্যবস্তু। কিন্তু যে ব্যক্তির লক্ষ্যবস্তু সেটা নয়, তাদের অন্য একটি লক্ষবস্তু খঁুজে নিতে হয়। আর অতীতে সেটা হত হয়তো কোন মূর্তি বা অন্য কোন ধর্ম, তারা খুঁজে নিত অন্য কোন উপাস্য।
কিন্তু আমাদের সময়ে সেটা অনেক করুণ উদ্রেককর এবং হতাশাজনক। এখন আমাদের অনেকেই শরীর নিয়ে চিন্তায় মগ্ন এবং তারা দৈনিক ১৮ ঘণ্টা ব্যায়াম সাধন করছে। তাদের জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে, নিজেকে দিনের পর দিন পেশীসম্পন্ন এবং শক্তিশালী করে তোলা। এটাই তাদের জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য- নিজেকে সবসময় উর্দ্ধে রাখা, নিজের আকৃতিকে ধরে রাখা ।অথবা তারা তাদের প্রশিক্ষকদেরকে সাথে নিয়ে লক্ষ্য ঠিক করে বলে,‘‘আমাকে আরো বেশী রেপস (Reps এক ধরনের ব্যায়াম) করতে হবে, বা আরো বেশী পুশআপস (Pushups এক ধরনের ব্যায়াম) করতে হবে, বা আমি চাই আমার ভারোত্তলনে (Bench Press) আরো বেশী ওজন যোগ হোক ইত্যাদিই তাদের লক্ষ্য, এটাই তাদের ইলাহ (উপাসনার বস্তু) হয়ে বসে।
একজন ব্যক্তি যার জীবনটাই ছিল টাকা-পয়সার জন্য এমন কোন মানুষের দেখা পেয়েছেন কি? যারা তাদের কাজের কথা ছাড়া আর অন্য কোন কিছুই বলতে পারে না। তারা পারেই না। হ্যাঁ, আমি এই কোম্পানীতে কাজ করেছি, আমি এটা করেছি, ওটা করেছি এবং যে মুহুর্তেই তাদের কাজ চলে যায়, তারা আত্মঘাতী হয়ে ওঠে, কারন তাদের সকল চিন্তা-ভাবনা শুধু কাজ নিয়েই ছিল। সারাজীবন তারা শুধু এটাই করেছে শুধুই এটা করেছে তারা, এটা তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিল।
কারো কারো জন্য সেটা হয় তাদের সন্তান-সন্ততিরা। তারা বাঁচে তাদের সন্তান-সন্ততিদের জন্য, তারা তাদের সন্তান-সন্ততির জন্য সব কিছুই করে থাকে, দিবারাত্রি তাদের সন্তান-সন্ততিদের নিয়ে ভাবে। তাদের মস্তিষ্কে আর কোন চিন্তাভাবনা স্থান পায় না, তাদের সামনে আর কোন লক্ষ্য থাকে না তাদের সন্তান-সন্ততিদের ছাড়া এর পেছনেই তারা দৌড়ে থাকে।
যখন আপনি তাঁকে (আল্লাহকে) খুঁজে পাবেন না, তখন আপনি অন্য কিছু খঁুজে নেবেন এবং তার পেছনেই দৌড়াতে থাকবেন এবং তার জন্য আপনি আপনার জীবন বিসর্জন দিয়ে দেবেন এ ব্যাপারে মানুষের মধে্য কোনই ব্যতিক্রম হয় না। আজকাল এমনকি এটা হতে পারে একটি অলস ব্যক্তির ক্ষেত্রে এবং আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করতে পারেন অলস ব্যক্তিদের বেলায় কি হবে?
জানেন তো, ঐ বাচ্চা ছেলেমেয়েরা যারা দৈনিক ২০ ঘণ্টা ভিডিও গেমস খেলে এবং তাদের সোফা থেকে নামেই না তাদের লক্ষ্য কি ? সেটা হচ্ছে তাদের নিজেদেরকে বিনোদিত করা। পর্দার পেছনে বসে তাদের মস্তিষ্কের কোষ ক্ষয় করা। এটাই তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য এখানেই তারা পৌঁছাতে চায় তা অর্জন করার লক্ষ্যে তারা কঠোর পরিশ্রমে ব্যস্ত। এগুলোই হচ্ছে তাওহীদকে বোঝার মনস্তাত্বিক তাৎপর্য।
‘‘আল্লাহ এক’’ এটা বলা অনেক সহজ কিন্তু আমার জীবনে তিনিই (আল্লাহ) কি একমাত্র বিষয়? শুধু তিনিই কি আমার জীবনের এমাত্র কেন্দ্রবিন্দু? নাকি আমার অন্য অনেক কিছু আছে যার পেছনে আমি দৌড়াচ্ছি বা অন্য অনেক বস্তু যার সামনে আমি নিজেকে সমর্পণ করি? আল্লাহ আড়ম্বরপূর্ণ ভাষায় আমাদের এই প্রশ্নটি করেন - তিনি বলেন,....হে মানুষ, কিসে তোমাকে তোমার মহামহিম পালনকর্তা সম্পর্কে বিভ্রান্ত করল? (৮২: ০৬) তোমার কাছে এত গুরুত্বপূর্ন কি ছিল যে, তুমি তার পেছনে দৌড়াচ্ছিলে? আর তুমি এর জন্য প্রচেষ্টা চালাতে পারনি? সুবহানাল্লাহ ।
তাই যখন তিনি (আল্লাহ) "হুয়াল্লাহু আহাদ" শব্দটি ব্যবহার করেন, তখন এর মনস্তাত্বিক তাৎপর্য, আল্লাহর প্রতি আমাদের দৃষ্টভঙ্গির তাৎপর্য, এবং আমাদের জীবন নিয়ে আমরা কিভাবে চিন্তা করি তা সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তিত হয়ে যায়। এখন আমার কাছে আর কিছুই গুরুত্ব পোষন করে না তাঁকে (আল্লাহ) খুশি করা ছাড়া, আমার কাছে আর কিছুই গুরুত্ব পেতে পারে না তাঁর আমার প্রতি সন্তুষ্ট হওয়া থেকে, আমার কাছে আর কিছুই গুরুত্বপূর্ণ নয় তাঁর ক্ষমা পাওয়া থেকে। আমার কাছে আর কিছুই গুরুত্ব পোষন করে না এই বিষয়ের চেয়ে যে তিনি শেষ বিচারের দিন আমার সাথে কথা বলবেন এবং বলবেন যে আমি সাফল্যমণ্ডিত। তিনি আমার দিকে তাকাবেন।
আর আমি তাদের মধ্যকার কেউ হব না যাদের দিক থেকে তিনি মুখ ফিরিয়ে নেবেন। "শেষ বিচারের দিন আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না (২: ১৭৪)” আল্লাহ আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভূক্ত না করুন । এগুলোই হচ্ছে শুধু ‘‘আহাদ’’ কে বোঝার কয়েকটি মনস্তাত্বিক তাৎপর্য। শুধু এই আহাদ শব্দটি। আল্লাহ যা বলছেন তা এরকমই, সুবহানাল্লাহ। আমাদের এটাই করা উচিৎ এবং আমি পরবর্তী কথা দিয়ে শেষ করতে চাই, কারন নামাজের সময় হয়ে গেছে।
আর সেটা হলো আল্লামা ইকবালের একটি কবিতা। আমি ইকবালের কবিতা আবৃতি করতে পারব না, কারন আমার উর্দূ খুবই খারাপ। কিন্তু আমি আপনাদের তাঁর একটি লাইনের অর্থ বলব যদিও আমি িনজে লাইনটি খুবই পছন্দ করি। এটা তাওহীদ সম্পর্কিত একটি কবিতা। এবং তিনি বলেন, "আগে যা (তাওহীদ) মানুষের হৃদয়কে প্রজ্বলিত করত, এখন তা বিমূর্ত দার্শনিক বিতর্কের বিষয়বস্তু" তিনি এটাই বলেন। এখন আমাদের কাছে তাওহীদ কি? বিতর্ক, আলোচনা, ধর্মতত্ত্বের উপর বিমূর্ত আলোচনা, যার কোন অন্ত নেই। কিন্তু এটা আগে যা ছিল তা হচ্ছে এমন কিছু যা হৃদয়সমূহকে প্রজ্বলিত করত। আমি কি এখনও সেই "আহাদ" এর অধিকার পরিপূর্ন করছি? আমি কি এখনও সেই "আহাদ" এর প্রতি ন্যায় বিচার করছি? আল্লাহ আমাদের তাওহীদের লোকদের অন্তর্ভুক্ত করুন আল্লাহ আমাদের হৃদয়ে সে আলো প্রজ্বলিত করুক যা জ্বলিত হয়েছিল ইব্রাহিম (আঃ), রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এবং সাহাবা (রাঃ) দের হৃদয়ে।
No comments:
Post a Comment