Labels: ,

অর্থপূর্ন ও বরকতময় নামাজ পর্ব ১১/ নামাজে মনোসংযোগ বৃদ্ধির কিছু উপায়:

নামাজে মনোসংযোগ বৃদ্ধির কিছু উপায়:

আপনি কি জানেন, আপনি যখন নামাজে দাঁড়ান, শয়তান তখন প্রচণ্ড রকম হিংসা বোধ করতে থাকে। একারনেই সে নামাজে দাঁড়ানো ব্যক্তির মনকে ভিন্নমুখী করে তাকে নামাজের এই সুউচ্চ সম্মানিত অবস্থান থেকে সরিয়ে ফেলার সমস্ত রকম চেষ্টা চালায়। এবং দুর্ভাগ্যজনক ভাবে, বেশির ভাগ সময়ই আমরা শয়তানের এই প্ররোচনায় পড়ে যাই। শয়তানের সাদৃশ্য কিছুটা মাছির মত, যতবার দূরে তাড়ান, ঘুরে ফিরে আবার চলে আসে।

নামাজে মনসংযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আমরা অনেকে নামাজ পড়ি ঠিকই কিন্তু নামাজে কী পড়ছি, কেন পড়ছি সেসব সম্পর্কে অবগত থাকিনা। কেবল উঠাবসা করলেই নামাজ হয়না, নামাজে আত্মার সংযোগ থাকতে হয়। তাই নামাজে মনসংযোগের কিছু উপায় সম্পর্কে আলোচনা করলাম (নেট ঘেটে পাওয়া):

মানসিক প্রস্তুতি:  
১.সারাদিনের কর্মপরিকল্পনা নামাজকে কেন্দ্র করে তৈরি করুন। অর্থাৎ দিনের কাজ-কর্মের ফাঁকে ফাঁকে নামাজকে না ঢুকিয়ে আগে থেকেই প্ল্যান করে নিন যেন নামাজের সময়সূচিকে ঘিরে কাজ-কর্ম সেরে ফেলতে পারেন। কারণ মহান আল্লাহতায়ালার স্মরণ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

২. নামাজে সময়ানুবর্তিতা মেনে চলুন। ওয়াক্ত অনুযায়ী নামাজ পড়ে ফেলুন। অহেতুক নামাজ পড়তে দেরি করবেন না।
৩.পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে জামাতের সাথে পড়ার চেষ্টা করুন। কারণ আল্লাহ কোরানে সূরা বাকারা’র ৪৩ নং আয়াতে বলেছেন, “তোমরা রূকুকারীদের সাথে রুকু দাও”। এর দ্বারা জামাতে নামাজ পড়ার গুরুত্ব বুঝা যায়।
৪. শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তিতে থাকাকালে নামাজ পড়বেন না।
৫. নামাজে দাঁড়ানোর পূর্বে সকল অবসাদ, দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলুন।
৬. নামাজে কোন কোন সূরা পড়বেন তা নামাজে দাঁড়ানোর আগেই ঠিক করে নিন।
৭.চেষ্টা করুন নামাজে কী আয়াত পড়ছেন তা অনুধাবন করার। কারণ আয়াতের অর্থ বুঝে পড়লে তা মনসংযোগ বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। সেজন্য কিছু বহুল পঠিত সূরা এবং দোয়ার বাংলা অনুবাদ মুখস্থ করে নিন। কারণ আমি আল্লাহর কাছে নামাজে কী চাইছি তা যদি জানতেই না পারলাম তবে লাভ কী হল? নামাজে মনসংযোগের জন্য এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

শারীরিক প্রস্তুতি:  
১. নামাজে দাঁড়ানোর পূর্বে ক্ষুধা, তৃষ্ণা, প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়া প্রভৃতি জৈবিক কাজ সেরে নিন।
২.পরিচ্ছন্ন অবস্থায় নামাজ আদায় করুন। সেজন্য সঠিকভাবে ওযু বা গোসল সম্পন্ন করুন।
৩.পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জায়গায় শান্ত, কোলাহলমুক্ত পরিবেশে নামাজ আদায় করুন।মনসংযোগে বিঘ্ন ঘটায় এমন কোন কিছু সামনে রাখবেন না।

নামাজ পড়ার সময়:
১.নামাজে তাড়াহুড়া করবেন না। মনে রাখবেন আপনি বিশ্বজগতের প্রভু সর্বশক্তিমান আল্লাহর সামনে দন্ডায়মান। অতএব ধীর-স্থিরভাবে নামাজ সম্পন্ন করুন।
২.নামাজের প্রতিটি ধাপ যেমন রূকু, সিজদা সঠিকভাবে আদায় করুন।
৩.নামাজে আপনার মস্তক অবনত রাখুন এবং দৃষ্টিকে সিজদার স্থানের দিকে নিবদ্ধ রাখুন।
৪.নামাজ পড়ার সময় মাথায় রাখুন যে এই নামাজই হয়তোবা আপনার শেষ নামাজ। অতএব জীবনের শেষ নামাজ কি মনোযোগের সাথে পড়তে চাইবেন না?
৫.নামাজে দন্ডায়মান অবস্থায় মনোযোগ ছুটে যেতে চাইলে কল্পনা করুন যে আপনি পুল সিরাতের উপর দাঁড়িয়ে আছেন। আপনার নীচে জাহান্নামের গনগনে আগুন, সামনে জান্নাত আর উপরে মহান আল্লাহ আপনাকে দেখছেন। কল্পনা করুন আপনার পিছনে মৃত্যুদূত হযরত আযরাইল (আ) দাঁড়িয়ে আছেন আপনার জান কবয্ করার জন্য। এ অবস্থায় কি মনোযোগ ছুটে যাওয়া সম্ভব?

নামাজে এই পন্থা প্রয়োগ করে দেখুন:
নিজের মন থেকে সম্পূর্ণ বিশ্বাস করুন যে আল্লাহতায়ালা আপনাকে ক্ষমা করে দিতে চান, মার্জনা করে দিতে চান এবং আপনার প্রতি করুনা বর্ষণ করতে চান|বিশ্বাস করুন এবং মনপ্রাণ দিয়ে আল্লাহর কাছে প্রত্যাশা করুন যেনো তিনি
আপনাকে জান্নাতুল ফিরদাউস করেন, এবং শুধু তাইই না, আপনি যেনো জান্নাতে সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর প্রতিবেশী হোন| এগুলো আকাশচুম্বী কল্পনাপ্রসূত কোন গল্প নয়| বরং আল্লাহ
তায়ালা বলেন:

وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ
তোমাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি সাড়া দেব। [সুরা গাফির ৪০:৬০]

নবী(সা:) বলেন: “আল্লাহর কাছ থেকে নিশ্চয়তার সাথে প্রার্থনা করো|”

একাগ্র চিত্তে ওপরিশ্রমের মাধ্যমে; একবারে না হলে পুনরায় চেষ্টা করতে হবে, চাইতে হবে আল্লাহর কাছে তিনি যেনো আপনার জন্য ‘রযা’ পাওয়াকে সহজ করে দেন, যদি তা না করি তাহলে সেটা হল ‘আমানি’..সঠিক একাগ্রতা আর অধ্যাবসায় ছাড়া এমনি এমনি আল্লাহর করুনা প্রার্থনা করা- তিনি(আল্লাহ) তা করা পছন্দ করেন না|

আল্লাহতায়ালা বলেন:

وَإِنِّي لَغَفَّارٌ لِّمَن تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا ثُمَّ اهْتَدَىٰ

আর যে তওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে অতঃপর সৎপথে অটল থাকে, আমি তার প্রতি অবশ্যই ক্ষমাশীল। [সুরা তাহা ২০:৮২]

আর এমন করলেই তিনি আপনাকে আপনার প্রতাশার চাইতেও বেশী কিছু দান করবেন|

আল্লাহর করুনা:আল্লাহ তাঁর করুণাকে ৯৯ ভাগে ভাগ করেছেন, এবং তার মাত্র একটি ভাগ তিনি সমগ্র পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন| এই এক ভাগই এত শক্তিশালী যে তা সৃষ্টির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মায়েদের, বাবাদের, সন্তানদের, স্বামীদের, স্ত্রীদের এমনকি সকল পশু প্রানীদের মাঝে এমন ভাবে বিদ্যমান- যে সন্তান যতই যা করুক মা তাঁর
সন্তানের একটু কষ্ট দেখলে কী যন্ত্রনাই না পায়; কোন বাবা তার সন্তানের জন্য কত কী না করেন; জন্ম দেয়ার পর মা কিভাবে আগলে রাখে তার সন্তান দের....আরো কত...|

আরেকটি উদাহরন দেই-নিজের জন্মের আগের অবস্থা কল্পনা করুন – কিছুই ছিলেন না আপনি, নয় মাস মায়ের পেটে থেকে মাকে ব্যথা দিয়েছেন, এত কষ্ট দিয়েও ক্ষান্ত হননি, পৃথিবীতে আসার মুহূর্তেও মাকে দিয়েছেন কী অসম্ভব কষ্ট, কী পরিমান কষ্ট সয্য আপনার মা আপনাকে জন্ম দিলেন অথচ জন্মের পরপরই আপনিই হয়ে গেলেন তার নয়নমনি, আদরের ধন ...একবার কী চিন্তা করেছেন আপনি কী এমন করেছিলেন যে আপনি আপনার মার এত ভালোবাসা, দয়া, করুনার পাত্র হয়ে গেলেন? এসবি যদি সেই একটি ভাগেরই অংশ হয়ে থাকে তবে বাকি ৯৯ ভাগের কথা কী কল্পনা করা সম্ভব? কখনই না ..

তার করুনা অসীম; শেষ বিচারের দিন তিনি যখন এই সমগ্র করুনা নিয়ে আমাদের বিচার করবেন তখন কী অবস্থা হতে পারে? এটা কী আমাদের আবৃত না করে পারবে? আমাদের চেয়ে অনেক পাপী মানুষ যাদের আল্লাহ তাঁর স্বীয় করুনায় ক্ষমা করে দিয়েছেন, যেমন সেই মানুষটি যে ৯৯জনকে হত্যা করেছিলো তারপর আরও একজন কে হত্যা করে ১০০ পুরো করছিলো আর আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিলেন | তাহলে কিভাবে তিনি আমাদের ক্ষমা ও করুনা না করে থাকতে পারেন?





তাহলে আপনি আমি কী তাঁর অসীম করুনার ভাগিদার হতে পারিনা? অবশ্যই পারি| চলুন তাহলে আজ থেকেই এভাবে নামাজ পড়ি ও প্রার্থনা করি|

প্রিয় মুসলিম ভাই-বোনেরা, আসুন আমরা সহীহ ভাবে পূর্ণ মনোযোগের সাথে মহান আল্লাহর সামনে দন্ডায়মান হয়ে নামাজ আদায় করি। মহান আল্লাহ আমাদের সেই তওফিক দান করুন। আমিন।


অর্থপূর্ন ও বরকতময় নামাজ বই আকারে পিডিএফ ফাইল পড়তে ও ডাউনলোড করতে
Click here

Meaningful Prayer in English PDF Document Read or Download

No comments:

Post a Comment