Labels: ,

লাইলাতুল কদর মহিমান্বিত শ্রেষ্ঠ রাত, ঐশ্বর্যময় রাত, কোরআনের রাত কেন? জানেন কি?

শবে-কদর হল এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ রাত কেন? জানেন কি?


‘লাইলাতুল কদর’ আরবি শব্দ। এর অর্থ অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত বা পবিত্র রজনী। আরবি ভাষায় ‘লাইলাতুন’ অর্থ হলো রাত্রি বা রজনী এবং ‘কদর’ শব্দের অর্থ সম্মান, মর্যাদা। । এ রাত্রিকে লাইলাতুল কদর হিসেবে নামকরণ করার কারণ হলো, এ রজনীর মাধ্যমে উম্মতে মুহাম্মদীর সম্মান বৃদ্ধি করা হয়েছে বা এ রাতে মানবজাতির তাকদির পুনর্নির্ধারণ করা হয়। তাই এই রজনী অত্যন্ত পুণ্যময় ও মহাসম্মানিত। আল্লাহ তাআলা যে মহিমাময় রাত্রিকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন, যে একটি মাত্র রজনীর ইবাদত-বন্দেগিতে হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও অধিক সওয়াব অর্জিত হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, [কারন একদিনের বোধোদয়/জ্ঞান হাজার মাস অজ্ঞ বা নিরক্ষর থাকা হতে উত্তম]
The Night of Majesty is better than a thousand months. [A day of enlightenment is better than a life-time of ignorance]

কদরের রাত কে কেন কোরআন বোঝার ও পড়ার রাত বলাহয় তার কারন সুরা কদর এর সাথে পুর্বের সুরার সম্পক যেমন:
১। সুরা আলাক শুরু হয়েছিল কিভাবে আল্লাহ কোরআন নাযিল শুরু করেন ,আর এই সুরা কদর কখন কোরআন নাযিল হয় সেটা নিয়ে আলোচনা করে।

২। সুরা আলাক শুরু হয় " اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ
পাঠ করুন আপনার পালনকর্তার নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন
আর সুরা কদর শুরু হয়েছে "إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ
আমি একে নাযিল করেছি শবে-কদরে। "

আরো দেখুন সুরা কদরের ২ নং আয়াতে বলা হয়েছে
وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ শবে-কদর সমন্ধে আপনি কি জানেন?
অথ যা বুঝাচ্ছে যে: আপনি জানতেন না কদরের রাত কি। আপনি শুধুমাত্র জানতে পেরেছেন কারন আল্লাহ আপনাকে এ বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছেন / বলেছেন।

৩। সুরা আলাকের শেষ আয়াত ১৯ নং :"كَلَّا لَا تُطِعْهُ وَاسْجُدْ وَاقْتَرِبْ
কখনই নয়, আপনি তার আনুগত্য করবেন না। আপনি সেজদা করুন ও আমার নৈকট্য অর্জন করুন।[ সেজদাহ্ ]"

সুরা কদরে বলা হয়েছে- সারাবছরের মধ্যে সবচেয়ে ভাল সময় হলো আল্লাহর কাছাকাছি যাবার - কদরের রাতে (যা রমজানের শেষ দশ রাত্রিতে)

আর কাছাকাছি যাবার মাধ্যম হল সেজদাহ্ তাই দেখুন সুরা আলাক শেষ হয়েছে সেজদাহ্ দিয়ে।

৪। সুরা আলাকে বলা হয়েছে ইকরা-পড়ুন(কোরআন)
আর সুরা কদরে বলা হয়েছে কোরআন নিয়ে মানে কোরআন পড়তে বলা হয়েছে।

এবার দেখি কদরের রাত কোনটি হতে পারে?
আমরা মোটামুটি শিওর যে এটা রোজার/রমজানের শেষ দশ রাতের মধ্যে যে কোন বেজোর একরাত (২১,২৩,২৫,২৭ অথবা ২৯ তম রাতে হতে পারে)

সুরা কদরের আয়াত সংখ্যা ৫ টি ঠিক যেমন রমজানের শেষের বেজোর রাতও ৫ টি।

ইবনে আব্বাসের একটি মতামত রয়েছে যে লাইলাতুল কদর ২৩তম রাত্রিতে (উনার ইজতিহাদ বা রিসার্চের উপর নির্ভর করে উনি বলেছিলেন)
পরবর্তীতে উনি মতামত দেন লাইলাতুল কদর ২৭তম রাত্রিতে।

সবচেয়ে বেশি আলোচিত মতামত বেশির ভাগ আলেম/বিদ্বানেরা ২৭ তম রাত্রিকেই লাইলাতুল কদর বলে মতামত দিয়েছেন।

এটা খুবই কৈতুহলপুর্ন/আকর্ষনীয় যে কিভাবে ইবনে আব্বাস হজরত উমর ইবনে খাত্তাব (রঃ)কে ব্যখ্যা করেন কেন তিনি ২৭তম রাত্রিকে কদরের রাত বলে মতামত দেন তিনি বলেন: লাইলাতুল কদর ৯টি অক্ষর নিয়ে গঠিত [লাম, ইয়া, লাম, তা,আলিফ, লাম, কাফ, দাল, রা=৯টি অক্ষর]

এবং তিনি আরো বলেন লাইলাতুল কদর সুরা কদরে তিন বার উল্লেখ করা হয়ছে তাই ৯ x৩ =২৭ তাই তিনি মতামত দেন যে লাইলাতুল কদর ২৭শে রমজান।

এই পদ্ধতিকে দলিল বা প্রমান হিসেবে নেয়া হয়নি তবে এটা খুবই ইন্টারেস্টিং যে কিভাবে তিনি তার মতামত দেয়ার পিছনে যুক্তি দাড় করিয়ে ছিলেন।

তিনি আরো বলেন এই সুরা কদরে ৩০ টি শব্দ আছে (ঠিক যেমন ৩০টি রোজা) কিন্তু ২৭ মত শব্দ হলো هِيَ হিয়া [যার অর্থ এটি] আয়াত নং ৫ এ।

তিনি তারপর বলেন হিয়াবা যার অর্থ এটি দ্বারা বোঝায় যে- এই শব্দটা ৩০টি শব্দের মধ্যে ২৭ তম, ঠিক যেমনি ২৭ তম রাত কদরের রাত ৩০টি রমজানের রাতের মধ্য হতে।

তাই দেখুন সাহাবারা কোরআনকে নিয়ে কত রকম ভাবে ও কত গভীরে চিন্তা করতেন।

সবচেয়ে নিরাপদ পদ্ধতি হলো এটা শেষের যে কোন বেজোর রাতে আর আমরা ঠিক জানিনা কোন রাতটা আর আলেমরা মতামত দেন যে আপনি শেষের ১১ টি রাতকে গুরুত্ব সহকারে নিন কারন ভিন্ন মতামত ও কনফিউসনের জন্য যাতে আপনি শবে কদর মিস না করেন। তাই শেষের ১১ টি রাতকে গুরুত্ব সহকারে নিলে আপনি একদিন না একদিন কদরের রাত পাচ্ছেনই।


লাইলাতুল কদরের অপার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে অন্যত্র ইরশাদ করেছেন, ‘হা-মীম! শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের, নিশ্চয়ই আমি তা (কোরআন) এক মুবারকময় রজনীতে অবতীর্ণ করেছি, নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়।’ (সূরা আদ-দুখান, আয়াত: ১-৪) কদরের রাতে অজস্র ধারায় আল্লাহর খাস রহমত বর্ষিত হয়।

আমরা যাতে আমাদের এনার্জি জমা রাখি প্রথম ২০ রোজায় কারন অনেক মুসলিম দেখবেন প্রথম দিকে খুব উৎসাহ উদ্দিপনার মধ্যেদিয়ে রোজা রাখে সকল নামাজ পড়ে এমনি ২০ রাকাত তারাবি নামাজও কিন্তু শেষ দশ দিন মানুষ কমতে থাকে যখন কি শেষ ১০ দিনেই আছে সেই মহিমান্বিত ঐশ্বর্যময় শবে কদর।

আমরা যেন নামাজ পড়ি শুধু মাত্র আল্লাহকে স্বরনের উদ্দেশ্যে কারন আল্লাহ বলেন (২০) সূরা ত্বোয়া-হা ( মক্কায় অবতীর্ণ ), আয়াত ১৪:
إِنَّنِي أَنَا اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدْنِي وَأَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِي
আমিই আল্লাহ আমি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। অতএব আমার এবাদত কর এবং আমার স্মরণার্থে নামায কায়েম কর।

তাই সবার কাছে অনুরোধ এই রমজান মাসে শুধু নয় যখনই পারবেন কোরআন পড়ার চেস্টা করবেন শুধু মাত্র বোকার মত তিলাওয়াত নয় অর্থ সহ জেনে বুঝে পড়ার চেস্টা করবেন কারন একদিনের বোধোদয়/ জ্ঞান হাজার মাস অজ্ঞ বা নিরক্ষর থাকা হতে উত্তম।

আল্লাহ আমাদের সঠিক পথে পরিচালিত করুন। আমিন
অনুবাদ করে লিখেছেন-  ফয়সাল হাসান

In Depth Analysis & Tafseer of Surah 97 al-Qadr by Nouman Ali Khan


No comments:

Post a Comment