Labels: ,

নারী জাগরন: গণমাধ্যমের ভুমিকা


 বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

পরিবার হল মানব-সমাজকে টিকিয়ে রাখার মাধ্যম এবং সমাজের মৌলিকতম ও পবিত্র ইউনিট। সমাজকে শুদ্ধ বা কলুষিত করারও প্রথম ও প্রধান ধাপ হল এই পরিবার। একটি সুশৃঙ্খল পরিবারের ভিত্তি হল এর সদস্যদের মায়া-মমতার বন্ধন। এই পরিবারিক বন্ধনকে ক্ষতিগ্রস্ত করার অনেক উপাদান বা চালিকা-শক্তির মধ্যে পশ্চিমা গণমাধ্যমের অসুস্থ কিছু অনুষ্ঠান অন্যতম।

কোনো জাতির সভ্যতা ও সংস্কৃতির উত্থান-পতনে নারীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। পরিবারের ভেতরে নারীর সাজ-সজ্জা বা সৌন্দর্য্য-প্রীতি একটি স্বাভাবিক ও পছন্দনীয় বিষয় হলেও এই স্বভাব লাগামহীন হয়ে উঠলে তা সমাজের মূল ভিত্তিকে ধ্বসিয়ে দিতে পারে। এভাবে নারী একদিকে হতে পারে পরিবারের উন্নতির মাধ্যম, আবার তারা হতে পারে সন্তানদের অধঃপতনের উৎস। 

ইরানের সংসদ সদস্য মিসেস লায়লা ইফতেখারীর মতে, একজন আদর্শ স্বভাবের নারী গড়ে তুলতে পারে আদর্শ সন্তান। আবার নারীর উদাসীনতার ফলে গড়ে উঠবে এমন অযোগ্য সন্তান-সন্ততি যারা হবে বিকারগ্রস্ত এবং নিজ সম্মান ও সংস্কৃতি সম্পর্কে শ্রদ্ধাহীন। তিনি বলেছেন, পশ্চিমা গণমাধ্যমে নারীকে বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপন ও পুঁজিবাদীদের মুনাফাকামী স্বার্থে ব্যবহার করা হয়। এর ফলে নারী তার প্রকৃত ও মানবিক মর্যাদা হারাচ্ছে। তিনি আরো জানিয়েছেন, ধর্মীয় শিক্ষার আলোকে পরিবার ও সমাজে নারীর উপস্থিতির আইনগত ভিত্তি সম্পর্কে ইসলামী ইরানে বিশেষ নীতি বা সনদ প্রণীত হয়েছে এবং তা আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ মহলে সমাদৃত হয়েছে। 

পরিবারের অর্থনীতিতে নারীর ভূমিকা এবং ব্যয়ের মানদন্ড নির্ধারণ গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত বিষয়। সংস্কৃতিগুলোকে সমধর্মী করার বা সংস্কৃতির বিশ্বায়নে সচেষ্ট গণমাধ্যমগুলো নারীর মধ্যে ভোগবাদী প্রবণতা জোরদার করছে। 


অধ্যাপিকা মেহেরশাদ শাবাবীর মতে এই ভোগবাদী সংস্কৃতিকে ঠেকাতে এবং এ ব্যাপারে জনসচেনতা সৃষ্টির জন্য গণমাধ্যমকেই ব্যবহার করা জরুরী। গণমাধ্যম একদিকে ছড়িয়ে দিতে পারে পবিত্রতা ও হিযাবের সংস্কৃতি। অন্যদিকে গণমাধ্যমই ছড়িয়ে দিতে পারে বল্গাহীনতা ও অশ্লীলতা। বর্তমানে অনেক গণমাধ্যম বিভিন্ন অশালীন ও অশ্লীল ছায়াছবির মাধ্যমে নারীর লজ্জাশীলতা ও পবিত্রতাকে টার্গেট করেছে। কাতারের রিলিজিয়াস কলেজের অধ্যাপিকা ডক্টর হায়া সমেরের মতে, পবিত্রতা ও সতীত্ব সমাজকে সুস্থ রাখে। কিন্তু মানুষ ধর্ম থেকে দূরে সরে যাচ্ছে এবং পরিবারের প্রশিক্ষণ ও দিক-নির্দেশক ভূমিকা ম্লান হবার পাশাপাশি প্রচারিত হচ্ছে চাকচিক্যময় পণ্যের প্রচার-প্রসার। গণমাধ্যম অশ্লীলতা ও পর্দাহীনতার বিস্তারে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। সমাজকে পুনরায় পবিত্র ও নৈতিক দিক থেকে কাংখিত মানে ফিরিয়ে আনার জন্য এসব বিষয় প্রতিরোধ করতে হবে।

বাহরাইনের লেখিকা ও সাংবাদিক শায়লা শাকিবের মতে পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোর কিছু কিছু বিষাক্ত অনুষ্ঠান দেশগুলোর নিরাপত্তাকে বিপন্ন করছে ও যুব সমাজের মধ্যে লজ্জাহীনতার বিস্তার ঘটাচ্ছে। নারী স্বাধীনতার নামে এসব গণমাধ্যম নারীকে ভোগবাদী পুরুষের কাছে ভোগ্য পণ্যের মত বিকিয়ে দিচ্ছে। তার মতে পবিত্রতা প্রতিষ্ঠা ছাড়া সমাজের নিরাপত্তা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।


সুদানের মহিলা চিন্তাবিদা হাসানাত অওজ সতির মতে অসংখ্য পশ্চিমা গণমাধ্যম যুব সমাজের চরিত্র ধ্বংসের জন্য মরিয়া হয়ে প্রচার-প্রচারণায় নেমেছে। এদের থাবা থেকে যুব সমাজকে মুক্ত রাখতে হবে এবং যুবক-যুবতীদেরকে এ ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। তিনি এ জন্য ইসলামী মূল্যবোধ-ভিত্তিক অনুষ্ঠান প্রচারের জন্য গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। লেবাননের মুসলিম মহিলা চিন্তাবিদও এইসব মতের সাথে ঐক্যমত্য প্রকাশ করেছেন। তিনি সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পাশ্চাত্যের গণমাধ্যমগুলোর আগ্রাসন ঠেকানোর জন্য মুসলিম বিশ্বের নারী সমাজকে ইসলামের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হবার আহ্বান জানিয়েছেন।


পাকিস্তানের বিশিষ্ট অধ্যাপিকা বুশরা রহমান ইন্টারনেট মাধ্যমের অপব্যবহারের বিষাক্ত ভূমিকার কথা তুলে ধরে বলেছেন, এইসব সাইট বিশ্বের ভয়াবহ ক্ষতি করছে। পশ্চিমা গণমাধ্যমের এইসব হামলাকে তিনি কোমল যুদ্ধ বা সফট ওয়ার বলে অভিহিতি করেছেন। অন্য জাতিগুলোর ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পাশ্চাত্য এই যুদ্ধে নিজ ভাষাকেও সাংস্কৃতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে বলে বুশরা রহমান মন্তব্য করেছেন।


অধ্যাপিকা বুশরা রহমানের মতে, "পাশ্চাত্য একবিংশ শতকে নতুন প্রজন্মগুলোর ওপর পশ্চিমা সংস্কৃতি চাপিয়ে দিতে চায়। তাই মুসলমানদেরকে উদাসীনতার ঘুম থেকে জেগে উঠতে হবে। পশ্চিমা গণমাধ্যম মুসলমানদেরকে হিংস্র ও সন্ত্রাসী বলে প্রচার করছে। ওরা পবিত্র প্রতিরোধ বা জিহাদকে সহিংসতা বা সন্ত্রাস হিসেবে তুলে ধরছে।"


এভাবে পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো সত্য বা বাস্তবতাকে গোপন রাখার চেষ্টা করছে বলে মিসেস বুশরা মন্তব্য করেছেন। তিনি এসব বিষয়ে মুসলিম মা-বোনদের সচেতন হবার পাশাপাশি তাদের সন্তানদেরকেও নিজস্ব ধর্ম, সংস্কৃতি ও জাতীয় পরিচিতি সম্পর্কে শিক্ষিত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। ভবিষ্যত প্রজন্মের সাথে আরো ভালো বা উন্নত সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য মুসলিম নারী সমাজকে জ্ঞানের দিক থেকে আরো শক্তিশালী হতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।


মুসলিম মহিলা চিন্তাবিদদের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সেমিনারের সমাপনী ঘোষণায় গণ-মাধ্যমে মুসলমানদের আরো শক্তিশালী ভূমিকা রাখা এবং পারিবারিক ঐতিহ্য ও পরিচিতি রক্ষাসহ বিজাতীয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসন প্রতিরোধে নারীর কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। 

No comments:

Post a Comment