Labels: , ,

কুর’আন কী?

●|● কুর’আন কী?
অন্যের ধর্মের ভাই বোনেরা যদি জিজ্ঞাসা করেন কুর’আন কী? আমরা কী বলব?

— ঠিক এই প্রশ্নের উত্তর নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছেন উস্তাদ নুমান আলী খান অন্য ধর্মের মানুষদের সামনে।
আপনাদের তো বলেছিলাম এটা কি প্র্যাকটিস ছিল। মৌখিক নাকি লৈখিক? মৌখিক। তাহলে এটি একটি মৌখিকভাবে সংরক্ষিত টেক্সট। এখন আপনারাই আমাকে বলুন, কোনটা সংরক্ষন করা কঠিন? লৈখিক কিছু নাকি মৌখিক কিছু?মৌখিক। সবাই তাহলে স্বীকার করছেন, মৌখিক এমন কোন ঐতিহ্য সংরক্ষন করে রাখা বেশ কঠিন। উদাহরণ দেই একটি। যদি আমি চুপি চুপি এরিকার কানে কিছু বলি, তাকে বলি যে আপনি একইভাবে এটি পাশের জনকে বলুন, আপনি তার পাশে, সে তার পাশে, এভাবে পুরো ক্লাস। আমরা শেষ মানুষটির কাছে যদি যাই। আর আমি এরিকাকে বলেছিলাম, বব জোকে ধাক্কা দিয়েছে। এরপর এটি সে চুপি চুপি বলেছে, এরপর সে আরেকজনকে, এরপর সে আরেকজনকে, এভাবে চলছে। আসল কথাটি কি ছিল? বব জোকে ধাক্কা দিয়েছে। এবং শেষ মানুষটির কাছে যাওয়া পর্যন্ত হবে- বব জো’য়ের বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে, তার গাড়ি চুরি করেছে এবং গ্রামের সবাইকে মেরে ফেলেছে। মৌখিক প্রাকটিসে এমন কিছু হয়ে যায়, কেউ ইচ্ছা করে আসল কথাটিকে পরিবর্তন করেনা। কেউ ব্যাপারটাকে তার নিজের মত করে বলতে যায় আর অল্প একটু পরিবর্তন করে ফেলে। কেউ অর্ধেক ভাগ, কেউ আরও অর্ধেক ভাগ, কেউ এক ভাগ, কেউ দুই ভাগ করে পরিবর্তন করলো। দুই শতাংশ কোন ক্ষতি করার কথা না তাইনা? কিন্তু এটি যখন একটি বিপুল পরিমান লোকজনের মাঝ দিয়ে যায়, তখন আর এটাকে চেনাই যায়না। এই ধরনের পরীক্ষা যোগাযোগ মনোবিজ্ঞ্যানে সব সময়ই করা হয়।

মৌখিকভাবে এভাবে কিছু সংরক্ষন করা প্রায় অসম্ভব। আর যতই এটা ছড়াবে, ততই পরিবর্তিত হবে। এটাই যৌক্তিক, যত ছড়াবে ততই পরিবর্তন আসবে। তুলনা করলে দেখা যাবে, লিখিত কিছু সংরক্ষন করা নিরাপদ। একেবারেই যে নিরাপদ তা নয়, এমন না যেন তাদের ব্যাকআপ স্ক্যান কপি আছে, ক্লাউড ড্রাইভ আছে ঐ সময়ে। কিন্তু আপনার কাছে বই হিসেবে লেখা থাকলেও বই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, পৃষ্ঠা ছিঁড়ে হারিয়ে যেতে পারে, এরপর নিজের স্মৃতি থেকে হয়তো আবার লিখতে হতে পারে। তাহলে আপনার কাছে কিছু লেখা থাকলেও সেটি ১০০ ভাগ নিরাপদ নয়। এরপর এই লেখার সত্যতার ব্যাপারে কিছু সংশয় থাকতে পারে। আমার মতে যৌক্তিক। কোনও লেখার উৎস নিয়ে কারও সংশয় থাকতেই পারে। কুরআনের যে যুক্তি, আমাদের নবীর যে দাবি, এমনকি ঐ সময়ের কিছু সংশয়বাদীরা প্রশ্ন করছিলো যে তার উপর কি করে কোন বই নাযীল হবে, তিনি (স) তো পড়তেই পারেন না । তিনি যে কোন বই লিখতে পারবেন না, তা তো স্পষ্ট! কিন্তু তিনি তো পড়তেও পারেননা, তাহলে তিনি কিভাবে লিখবে্ন!এটি ছিল শুধুই মৌখিক। এরপরে বইটি যখন সংকলন করা হয়, তখন সেটি মৌখিক ছিলনা। এটি লিখিত ছিল। কিন্তু ঐ মৌখিক ক্রমে ছিলনা যেটা আমি বলেছি। যেটি আরেকটি জটিলতা বাড়িয়ে দেয়।

এখন মুগ্ধ করার ব্যাপার হল, তার এই ক্যারিয়ারের, রাসুল (সা) ২৩ বছর কাটিয়েছেন একজন রাসুল হিসেবে। এই সময়ের মাঝে প্রায় লক্ষের পর্যায়ে মানুষ মুসলমান হয়েছে। এর মাঝের অনেকেই, বেশ কিছু মানুষ পুরো কুরআনটা মুখস্ত করছে। পুরো আজকের ৬০০ পৃষ্ঠা। আজকেও মুসলিম বিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় ঐতিহ্য হল কুরআন মুখস্ত করা। এই মানুষগুলো শুধু কুরআন মুখস্ত করে বসে থাকেনি, বরং অনেক দুরের দেশে ভ্রমন করেছে। তারা মূল ভুমি থেকে তখন বিচ্ছিন্ন। এমন না যে ইমেইলের মাধ্যমে তারা নিজেদের মাঝে যোগাযোগ রাখত। প্রাচীন যুগের ব্যাপার এটি। একবার চলে আসলে যোগাযোগের ব্যাবস্থা নেই। যদি কোন বার্তা পাঠাতেই হয়, কয়েক মাস লেগে যেতে পারে। কারণ ঘোড়া তার মত করে সময় নেয়। এই মানুষগুলো ছড়িয়ে পড়লো, আর তারা তাদের নিজেদের গ্রামে কুরআন শিখানো শুরু করলো, নিজেদের শহরে। যদি আপনি যৌক্তিক ভাবে দেখেন, এরকম অনুমান করতে পারেন যে, এক বছরের মাঝে তাদের মধ্যে ১০০০ রকম কুরআন থাকার কথা। থাকা উচিত। এরকম একটি মৌখিক লিখনির অগনিত পরিবর্তিত রুপ থাকা উচিত। এমনটাই হওয়া উচিত।

আমরা সময় টেনে আজকের দিনে, ২০১৩ তে চলে আসি। আরভিং মসজিদে কুরআন মুখস্তের একটি প্রোগ্রাম আছে। ছেলেপেলেরা এখানে কুরআন মুখস্ত করে। আমার মেয়ে কুরআন মুখস্ত করে পার্ট টাইম, আমিও কুরআন মুখস্ত করি পার্ট টাইম। এইভাবে পার্ট টাইমে আমি প্রায় অর্ধেকটা মুখস্ত করেছি। বেশ অলস আমি, এতদিনে আমার এটা শেষ করে ফেলা উচিত ছিল। পার্ট টাইমে অর্ধেকটা মুখস্ত করেছি এইজন্য না যে আমার ফটোগ্রাফিক মেমোরি আছে, বরং কি যেন আছে এই বইটাতে, এটি মুখস্ত করা বেশ সহজ। বেশ অবাক করার ব্যাপার। আরও অবাক ব্যাপার হল, আমি কুরআনের কিছু অংশ মুখস্ত করেছি, আমি এরপর মালয়েশিয়ায় গেলাম, আমি মালয় ভাষা জানিনা। আমি এরপর নামাজে ইমাম দাঁড়ালাম। আর যখন আমরা নামাজে ইমামতি করি, আমরা নিজের স্মৃতি থেকে কুরআনের কিছু অংশ তিলাওয়াত করি, আমি ইমামতি করছি, কুরআন জোরে তিলাওয়াত করছি, আমার পিছনে কিছু ছোট বাচ্চারা আছে যারা কুরআন মুখস্ত করছে, আমি একটি শব্দ ভুল করলে তিন বাচ্চা সেটি সংশোধন করে দেয়। আমি তাদের ভাষা জানিনা। তাদের সাথে আগে দেখাও হয়নি। তারা আমাকে এয়ারপোর্টে নামাজ পড়তে দেখেছে, তাই তারাও যোগ দিল। মুসলিমরা এমনটাই করে।

তারা যদি আপনাকে নামজ পড়তে দেখে, আর তখন নামাজের সময়, তারাও আপনার সাথে যোগ দেয় ও পিছনে দাঁড়িয়ে একসাথে জামাতে নামাজ পড়ে, যদিও একে অপরকে তারা চিনেনা, তবুও। ঐভাবে ব্যাপারটা কাজ করে। আর আমাদের নামাজের দীর্ঘতম অংশ হল দাঁড়িয়ে থাকা, এবং দাঁড়িয়ে কুরআন তিলাওয়াত করা। আর যদি একজন এক শব্দে ভুল করে, বা শব্দেরও একটি অংশ ভুল করে, সঙ্গে সঙ্গে পিছনের কেউ তাকে সংশোধন করে দিবে, আর ইমাম তখন তা ঠিক করে নিবে, শব্দাংশ পর্যন্ত।

আরও অবাক করা ব্যাপার, আমরা আরভিংএ আছি, মনে করুন, কোন ইন্টারনেট নেই, কোন লাইব্রেরী নেই, কোন বই নেই, কোন সেল ফোন নেই, কম্পিউটার ও নেই। যত তথ্য আমাদের কাছে থাকে, কিছুই নেই। আমেরিকার সংবিধানের কোন কপি নেই, বাইবেলের কোন কপি নেই, কিছুই নেই। কোন বই নেই, কোন তথ্য নেই। আমি চ্যালেঞ্জ করতে পারি, ২৪ ঘন্টার মাঝে আমরা কুরআন পেয়ে যাব। আরভিং এই। আসলে পুরো আরভিং ও খোঁজার দরকার নেই। এখান থেকে পাঁচ ব্লকের মাঝেই চলবে। পুরো কুরআনটা আমরা পেয়ে যাব, কেন? স্মৃতি। কিন্তু ওটাকে আবার লিখনিতে রুপ দিতে হবে। কিছু ছেলে পেলেকে বসিয়ে দিতে হবে, সবাই এক পৃষ্ঠা করে লিখবে, হয়ে যাবে কিছুক্ষনের মাঝে। লেখার পর তারা যদি একটি লাইব্রেরি কপির সাথে তুলনা করে, কি হবে? একই জিনিস। এমনকি শব্দাংশ পর্যন্ত, দাড়ি, কমা পর্যন্ত। এটা আমাকে মন্ত্রমুগ্ধ করে। কিভাবে একটি বই এতটাই বদ্ধমুলভাবে মানুষের মনে গেঁথে থাকে। যাতে এত সহজেই এটা পুনরুদ্ধার করা যায়! আর এটা শধুমাত্র আরভিং এ নয়, আমি ইউলিস এ এটা করতে পারি, এটা ফোরট ওরথেও করতে পারি, এমনকি মিকেনিতেও! আমি এটা আর যেকোনো জায়গায়ই করতে পারি। এতেই আমি মুগ্ধ হচ্ছি যে একটি মৌখিক কিছু এতটাই দারুনভাবে সংরক্ষিত ও একীভুত। অথচ যুক্তিগত দিক দিয়ে এটির লাখ লাখ ভার্সন থাকা উচিত ছিল।

লিখে রাখার যে রীতি ছিল সেগুলোকে একত্রিত করা হয়েছিল অনেক পরে!মুখস্থ করার রীতি সেখানে অনেক কাল ধরেই চলে আসছিল।অনেক অনেক কাল আগে থেকে।যাই হোক,এটা মৌখিক ঐতিহ্য ছিল। আমি আপনাদের বলেছিলাম আমাদের নবীর একটি অপারগতার কথা…সেটি কি বলতে পারবেন?তিনি কি যেন করতে পারতেন না?ওহ্‌, মনে পড়েছে… তিনি লিখতে পারতেন না।তো এখন…একটি সূরা…কতগুলো যেন সূরা আছে কুরআনে? ১১৪ টি!এগুলো বড় কিংবা ছোট। সূরাগুলো বড়ও হতে পারে ছোটও তে পারে।সবচেয়ে বড় সূরাটিতে ২৮৬ টি স্তবক (আয়াত) আছে! আমি স্তবক বলছি আপনাদের জন্যে… আমি একে স্তবক বলি না। আপনাদের জন্যে ২৮৬ টি স্তবক।

স্তবক গুলি সব একসাথে নাযিল হয়নি বরং প্রথমে সূরাটির অল্প কিছু অংশ নাযিল হয়, আর ইতোমধ্যেই অন্য সূরার অন্য কিছু স্তবক ও নাযিল হতে থাকে।আবার আর এক সূরার আরও কিছু স্তবক নাযিল হতে থাকে।আমাদের নবী সেসব পড়তেন আর তার সঙ্গীদের বলে দিতেন… আসলে এই স্তবকগুলো এই সূরার অন্তর্ভুক্ত…আর ঐ স্তবক গুলো ঐ সূরার অন্তর্ভুক্ত…আর তিনি সব সময় এভাবে বলে দিতেন।তো তাঁর কাছে ধরুন ২০ টি সূয়া নাযিল হচ্ছে…সবগুলোই আংশিক ভাবে…সব গুলোই অল্প অল্প করে নাযিল হচ্ছে আর তিনি তাঁর সঙ্গীদের বলছেন কোন স্তবক কোথায় বসবে। তাঁর সামনে কোন কাগজে সেসব লিখাও ছিল না…থাকলেও কোন লাভ হত না কারণ তিনি পড়তে জানতেন না।এসব কিছুই ঘটছিল মুখে মুখে।একটা সময়ে সম্পূর্ণটা বলা ও সাজানো শেষ হয়ে গেল।আর আমরা একে একটা বই হিসেবে পেলাম যা কালানুক্রমিক নয়, যার আকারের বা বিষয়ের কোন ধারাবাহিকতা নেই।

মনে আছে আমি যে বলেছিলাম?তো কুরআনের যেটি সবচেয়ে বড় সূরা… ইতিহাসবেত্তা গণের মতে এটি নাযিল হতে ১০-১২ বছর সময় লেগেছিল।এই সূরাটি যখন নাযিল হচ্ছিল তখনই কুরআনের অনেক বড় একটা অংশও নাযিল হচ্ছিল…যেগুলো ছিল অন্য সূরার অন্তর্ভূক্ত।সূরাটি নাযিল হল…মানুষ তা মুখস্থও করে ফেলল।কিন্তু সে সময় তারা স্তবকে নম্বর দিত না! আমি যেমন বললাম সূরাটিতে ২৮৬ টি স্তবক আছে…এটা আমি বলতে পেরেছি কারণ কুরআনের একটা ছাপানো কপিতে স্তবকের সংখ্যা দেওয়া থাকে।কিন্তু প্রকৃত কুরআনে কি তা ছিল?না!আর তারা এমন ভাবে নিজেদের সাথে কথাও বলতে পারত না যে,”তুমি কি স্তবক নম্বর ৪৩ শুনেছ?”… তারা এভাবে কথা বলতেন না।সে সময় এমন ক্রমবিন্যাস ছিল না। তারা কেবলই পড়ে যেতেন।

সূরা বাকারাহ যেটি কুরআনের ২য় সূরা…সবচেয়ে বড় সূরা। একদিন আমি পড়ছিলাম আর কুরআনের literary nuance(সুক্ষ্ম তারতম্য) গুলো খেয়াল করছিলাম।২৮৬ এর অর্ধেক কত হয়?১৪৩! বেশ ভাল…সবাই দেখি ম্যাথ মেজর! এই সূরার ১৪৩ নম্বর স্তবকে বলা হচ্ছে “এভাবে আমি তোমাদের মধ্যম জাতিতে পরিণত করলাম”। ‘মধ্যম’ কথাটি সূরাটির আর অন্য কোথাও উল্লেখ নেই এই মধ্যম স্তবকটিতে ছাড়া। যেটা কেবল মানুষের মুখে মুখেই প্রচলিত ছিল এবং ১০-১২ বছর সময় নিয়ে নাযিল হয়েছিল, যার কোন স্তবক সংখ্যা দেওয়া ছিল না।

বিস্তারিত দেখুন ভিডিও এর সাবটাইটেল ও ভিডিও এর ট্রাকস্ক্রিপ্ট অনুবাদে।
সাথে আরেকটি বোনাস আর্টিকেল দেখতে পারেন প্রাসঙ্গিক -
মধ্যমপন্থী জাতি ও অলৌকিক মু’জিযা
- http://tinyurl.com/qzcdoko

No comments:

Post a Comment